#ইট_পাটকেল
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_৫
অন্ধকার ছাদের এক কোনে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে নূর। বিষন্নতার মরণবান বার বার আঘাত করছে তার বুকের ভিতর। মনে পরছে ছয় বছর আগের কথা।
বাড়ির সবছেয়ে শান্তশিষ্ট মেয়ে নূর।রাফসান শিকদারের একমাত্র আদরের মেয়ে।নূরের পাচ বছর বয়সে তার মা মারা যায়। তখন থেকে নূরের বাবা নূর কে আদর ভালবাসা দিয়ে বড় করেছে।মেয়ের অবহেলা হবে ভেবে নিজে দ্বিতীয় বিয়ের কথা কখনো চিন্তা করে নি। স্ত্রীর প্রতি ভালবাসা টা ও ছিল অমলিন। কামিনী চৌধুরী অবশ্য অনেকবার চেষ্টা করেছে ভাই কে বিয়ে করাতে। কিন্তু রাফসান শিকদার কখনো তার কথা পাত্তা দেয়নি।তার একটাই কথা, আমি বিয়ে করে নতুন সংসার করবো আর আমার নূর একা হয়ে যাবে তা আমি কখনো মানতে পারবো না। এই সংসার তারার ছিল আর তারার ই থাকবে।বিয়ে নিয়ে এটাই যেন এবাড়িতে তোমার শেষ কথা হয়।নূরের সামনে কখনো এব্যাপারে কোনো কথা বলবে না কামিনী।
তখন থেকেই নূরের উপর ক্ষোভ তৈরি হয় কামিনী চৌধুরীর।নূরের মা মিসেস তারা মারা যাওয়ার পর কামিনী চৌধুরী কানাডা থেকে তার পরিবার নিয়ে ভাইয়ের কাছে চলে আসে। আমজাদ চৌধুরী আলাদা বাড়ি করতে চাইলে বাদ সাধেন রাফসান শিকদার।তার এতো বড় বাড়ি থাকতে বোন বাইরে থাকবে তা সে কোন ভাবেই মানতে পারেন নি।তাই আমজাদ চৌধুরীর বাধ্য হয়েই নূর মঞ্জিলে থেকে যান।আশমিন তার বাবা মায়ের সাথে বাংলাদেশ আসে নি।সে কানাডায় হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করতো।ওখান থেকেই গ্রেজুয়েশন শেষ করে আসবে জানায় সে। নূর যখন দশম শ্রেণির ছাত্রী তখন আশমিন প্রথম বাংলাদেশে আসে। সবাই তাকে রিসিভ করতে এয়ারপোর্টে গেলেও নূর যায়নি। আশমিনের তা নিয়ে খুব একটা মাথাব্যথা ও ছিল না।কামিনী চৌধুরী নূরকে আশমিনের থেকে দূরে থাকতে বলেছে। তাই নূর আশমিনের থেকে যতটা সম্ভব দূরত্ব রেখে চলতো।ব্যবসা আর রাজনীতিতে সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকায় নূর কে খুব একটা সময় দিতে পারতো না রাফসান শিকদার।বাবার সাথে দূরত্ব তখন থেকেই।রাফসান শিকদার নিজের বোনের কাছে নূরের দায়িত্ব তুলে দিয়ে অনেকটা চিন্তা মুক্ত হয়েছিলেন। কিন্তু এটাই তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল তা সে ঘুনাক্ষরে ও টের পায়নি। কামিনী চৌধুরী নূর কে সারাক্ষণ লাঞ্চনা গঞ্জনা করতেই থাকতো। সারাক্ষণ চুপচাপ থাকা আরো বেশি চুপ হয়ে গেলো। বাবার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকলো অভিমান।আশমিন দেশে আসার পরে রাফসান শিকদারের সাথেই বেশির ভাগ সময় কাটাতো।রাজনীতির উপর ছিল তার অপার আগ্রহ। রাফসান শিকদারও হাসিমুখে হাতে কলমে আশমিন কে সবকিছু শিখাচ্ছিলেন।
আশমিন বাংলাদেশে আসার দুই মাসের মধ্যে নূর একদিন ও তার সামনে আসে নি।প্রথম প্রথম অবাক লাগলেও আশমিন অতটা পাত্তা দেয়নি।
আশমিন বাংলাদেশে আসার ঠিক দুই মাস আট দিনের দিন রাতে অনাকাঙ্ক্ষিত সাক্ষাৎ হয় নূরের সাথে।
সেদিন পার্টি ক্লাব থেকে আসতে অনেকটা রাত হয়ে যায় আশমিনের।বাসায় কেউ জেগে নেই ভেবে সে কলিং বেল না চেপে নিজের কাছে থাকা ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে ভিতরে ঢোকে।ক্লান্ত পায়ে দুইতালায় উঠতেই কারো মোহনীয় গলা শুনে পা থমকে গেলো আশমিনের।কান খারা করে শুনতেই বুঝতে পারলো কন্ঠটা ছাদ থেকে আসছে।আশমিন এগিয়ে গেলো ছাদের দিকে। নূর ছাদের চিকন রেলিঙের উপর বসে একমনে গাইছিল,
জানি একদিন আমি চলে যাবো সবই ছেড়ে
যত বুক ভরা দুঃখ কষ্ট নিয়ে, হো
জানি একদিন আমি চলে যাবো সবই ছেড়ে
যত বুক ভরা দুঃখ কষ্ট নিয়ে
ফিরবো না কোন দিন এই পৃথিবীতে
কোন কিছুর বিনিময় এই পৃথিবীতে
একদিন চলে যাবো
জানি একদিন আমি চলে যাবো সবই ছেড়ে
যত বুক ভরা দুঃখ কষ্ট নিয়ে, হো
জানি একদিন ভুলে যাবে সবাই
আমায়, আমার স্মৃতি মুছে যাবে ধরায়
ও, জানি একদিন এক মুহুর্ত
আরো মনে পড়বেনা আমার কথা
ফিরবনা কোনো দিন এই পৃথিবীতে
কোন কিছুর বিনিময় এই পৃথিবীতে
একদিন চলে যাবো
জানি একদিন আমি চলে যাব সবই ছেড়ে
যত বুক ভরা দুঃখ কষ্ট নিয়ে, হো
ছাদে আসতেই আশমিমের হৃদযন্ত্র কাজ করা বন্ধ করে দিল।কয়েকটা শুকনো ঢোক গিলে শান্ত করার চেষ্টা করলো নিজেকে। মনে হচ্ছে কোন বিষাদ নগরের রাজকুমারী ছাদের রেলিঙে পা ঝুলিয়ে বসে আছে।আশমিনের মনে হলো এটা একটা বার্বিডল।কুকরানো কোমর পর্যন্ত চুল গুলো বাতাসের তালে তালে সেই পুতুলের মুখের উপর উড়ে আসছে বারবার। তাতে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই তার।নূরের চোখ গুলো ঠিক বার্বি ডলের মতো। হালকা পাতলা গড়নের মেয়েটিকে আশমিনের কাছে একটা আদুরে বাচ্চা মনে হলো।
জানি একদিন দূর থেকে
দেখব সবার এই ভুলে যাওয়া
ও, জানি একদিন চোখ থেকে
পড়বে শুধু অশ্রুরি ধারা
ফিরবো না কোন দিন এই পৃথিবীতে
কোন কিছুর বিনিময় এই পৃথিবীতে
একদিন চলে যাবো
জানি একদিন আমি চলে যাবো সবই ছেড়ে
যত বুক ভরা দুঃখ কষ্ট নিয়ে
ফিরবো না কোনো দিন এই পৃথিবীতে
কোনো কিছুর বিনিময় এই পৃথিবীতে
একদিন চলে যাবো
জানি একদিন আমি চলে যাবো সবই ছেড়ে
যত বুক ভরা দুঃখ কষ্ট নিয়ে, হো
নূরের কন্ঠে এমন বিষাদ শুনে কপাল কুচকে গেলো আশমিনের । মেয়েটা কে তা নিয়ে সে যথেষ্ট সন্দিহান। হঠাৎ করেই নিজের ঘোর থেকে বেড়িয়ে এলো আশমিন। দ্রুতপায়ে এগিয়ে গেলো নূরের দিকে।নূর তখনো আশমিনের উপস্থিতি টের পায়নি। আশমিন এক ঝটকায় নূর কে নামিয়ে আনলো রেলিং থেকে। তাল।সামলাতে না পেরে নূর ধাক্কা খেল আশমিনের শক্ত বুকে।
— কে তুমি? এতো রাতে এখানে কি করছো?
আশমিনের কঠোর কণ্ঠস্বর মোটেও বিচলিত করলো না নূর কে। আশমিন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে শান্ত গলায় জবাব দিলো,
— আমি নূর মঞ্জিলের নূর।
শক্ত দৃষ্টি নরম হলো আশমিনের।অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো নূরের দিকে।
নূর পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিয়েও দাঁড়িয়ে পরলো।পিছনে না তাকিয়েই শান্ত অথচ শক্ত গলায় বলল,
— এর পর থেকে এভাবে আমার কাছে আসবেন না মি. আশমিন জায়িন।আর ছোয়ার ভুল তো একেবারেই নয়।আই হেইট আনএক্সপেক্টেড টাচ।
আশমিন হা করে তাকিয়ে রইলো নূরের যাওয়ার দিকে।কি বলে গেলো মেয়েটা।আনএক্সপেক্টেড টাচ!
এতো তেজ?বাকা হাসলো আশমিন।নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে হাসি বিস্তর হলো তার।
পরের ঘটনা গুলো খুব দ্রুত ঘটে গেলো নূর আর আশমিনের জীবনে। আশমিন নূর কে মনে মনে ভালবাসলেও কখনো তা প্রকাশ করে নি। তবে রাফসান শিকদার ঠিকই বুঝতে পারলেন ভাগিনার মনের কথা।আশমিন তার মেয়ের অমর্যাদা কখনো করবে না এটা তার দৃঢ় বিশ্বাস। আশমিন কে জিজ্ঞেস করতেই আশমিন অকপটে স্বীকারও করে নিল।রাফসান শিকদার ভাবলো তার এই ঝুকিপূর্ণ জীবনে মেয়েকে আশমিনের মতো কারোর কাছে মেয়েকে দিয়ে যেতে পারলে মরে ও শান্তি পাবেন।ততদিনে নূরের এস এস সি দেয়া হয়ে গেছে। তবে আঠারো বছর হওয়ার আগে বিয়ে দেওয়া টা সম্মতি দিলেন না সে।কামিনী বেগম ভাইয়ের দেয়া প্রস্তাব সাথে সাথেই লুফে নিলেন। ছেলে একবার মন্ত্রী হয়ে গেলে ভাইয়ের এই অঢেল সসম্পত্তির মালিক তার ছেলেই হবে।নূর কে সরানো চুটকির ব্যপার। ছেলের মনের খবর সম্পর্কে না জেনেই ভয়ংকর পরিকল্পনা করে ফেললেন কামিনী চৌধুরী। আপাতত সিদ্ধান্ত হলো মাওলানা দিয়ে বিয়ে পড়িয়ে রাখবে।নূরের আঠারো বছর হলে রেজিস্ট্রি করে ফেলবে।সবাই সায় দিলেও আশমিনের কপালে ছিল চিন্তার ভাজ।বিয়েটা নূর কিভাবে নিবে য়া নিয়েও সে যথেষ্ট চিন্তায় আছে।নূরের সেফটির জন্য বিয়ের কথাটা পাচকান হতে দেয়া যাবে না। তার দুর্বলতা ভেবে সবাই নূর কে টার্গেট করে ফেলবে।
#ইট_পাটকেল
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_৬
আকাশে মেঘ জমেছে। যেকোনো সময় আকাশ ভেঙে বৃষ্টি হবে।দমকা বাতাসে চারিদিকের গাছপালা দুলে দুলে উঠছে। বারান্দায় বসে একমনে সামনের কৃষ্ণচুরা গাছের দিকে তাকিয়ে আছে নূর।কৃষ্ণচুরা ফুলে গাছটি নতুন সাজে সেজেছে। সেদিকেই মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে নূর।মেয়ে কে এক ধ্যানে বাইরে তাকিয়ে থাকতে দেখে দরজায় দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল রাফসান শিকদার। দরজায় নক করতেই নূর সেদিকে তাকালো।বাবা কে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মলিন হাসলো সে।
— বাইরে দাঁড়িয়ে কেন আব্বু।ভিতরে এসো।
— কি করছিলে মা?এভাবে বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল্র কেন?
(মুচকি হেসে ভিতরে আসতে আসতে)
নূর বাবার কথায় প্রতিউত্তর করলো না।রুমে এসে সোফায় বসলো। রাফসান শিকদার ও মেয়ের পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।মেয়েটা কতো বড় হয়ে গেছে। অথচ সে খেয়াল।করার ই সময় পায়নি। মেয়ে ও যে তার কাছে আগের মতো বায়নার ঝুড়ি নিয়ে বসে না।কেমন যেন দূরত্ব চলে এসেছে বাবা মেয়ের মধ্যে। দীর্ঘশ্বাস গোপন করে নূরের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো রাফসান শিকদার । মেয়েটা আগের থেকে আরো বেশি চুপচাপ হয়ে গেছে।
— তুমি কি কিছু বলতে চাও আব্বু?
মেয়ের নির্লিপ্ত গলা শুনে হালকা কেপে উঠলো রাফসান শিকদার। মেয়ে তার মন পড়তে শিখে গেছে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। নূর মলিন হাসলো। ক্লান্ত গলায় বলল,
— দরকার ছাড়া তুমি আমার রুমে আসো না আব্বু।তাই এটা বোঝা খুব একটা কঠিন বিষয় নয়।নির্দিধায় বলতে পারো কি বলতে চাও।
রাফসান শিকদারের বুকে কিঞ্চিৎ ব্যথা হলো। প্রয়োজন ছাড়া কি আসলেই মেয়ের কাছে আসে না! অন্যের উপর দায়িত্ব দিয়ে কি সে মেয়ে কে সত্যি সত্যি একা করে দিয়েছে!
— এভাবে বলো না মা।তুমি আমার জীবনের সবচেয়ে মুল্যবান সম্পদ।যাকে আমি আমার বুকের লকারে নিয়ে ঘুরি।তোমার কাছে গল্প করতে আসতে পারি না আমি!
— আসতেই পারো আব্বু।তবে গল্পের পাট আমাদের অনেক আগেই চুকে গেছে। আচ্ছা বাদ দাও,কফি খাবে?
— নাহ মা।তুমি বলো, তোমার দিনকাল কেমন চলছে?
— আলহামদুলিল্লাহ ভালো আব্বু।
রাফসান শিকদার মেয়েকে বিয়ের কথা বলতে ইতস্তত করছে।মেয়ে এখনো ছোট। তার উপর আশমিন কে মেনে নিবে কিনা তারও একটা ব্যপার আছে। নূর তার দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে বললো,
— যা বলতে চাইছো বলে ফেলো আব্বু।
— আমি তোমার বিয়ে ঠিক করেছি মা।আমি যে পেশায় আছি তাতে আমার জীবনের কোন নিশ্চয়তা নেই। তাই আমি চাই যোগ্য কারোর হাতে তোমাকে তুলে দিয়ে যেতে। নাহলে যে আমি মরেও শান্তি পাবো না।আমাকে ভুল বুঝো না মা।
নূর এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে তার বাবার দিকে।বাবার ইতস্ততা বুঝতে পারছে সে।মলিন হেসে বাবা কে আস্বস্ত করা গলায় বলল,
— আমি জানি তুমি আমার জন্য বেষ্ট ডিসিশন ই নিবে আব্বু।সমস্যা নেই।কবে বিয়ে করতে হবে বলে দিও।আমি রেডি থাকবো।
— তোমাকে কিছু কথা বলি মা।মনযোগ দিয়ে শুনবে।পৃথিবী খুব কঠিন যায়গা। এখানে প্রত্যেক টা পদক্ষেপ আমাদের জন্য একেকটা পরিক্ষা। তাই নিজেকে সেভাবেই তৈরি করবে। তুমি যদি দুর্বল হও মানুষ তোমাকে বার বার আঘাত করবে।তাই নিজেকে শক্ত করো। নিজেকে ঠিক এতটা কঠোর করো যায়ে কেউ শত আঘাতেও তোমাকে ভাঙতে না পারে। সম্পর্কের দোহাই দিয়ে ও ছাড় দেয়া যাবে না। বুঝতে পেরেছো আমার কথা?
নূর তার বাবার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। রাফসান শিকদার মুচকি হাসলেন। কিছু কাগজ পাঞ্জাবির পকেট থেকে বের করে নূরের হাতে দিলেন।
— এখানে আমাদের সমস্ত প্রোপার্টির দলিল রাখা আছে।তোমার বাইশ বছর বয়সে তুমি সব নিজের কাছে পাবে।এই জায়গায় হদিস তুমি বাদে আর একজন শুধু জানে।সে আমার কাছে ঠিক তোমার মতোই বিশ্বস্ত। তুমি হয়তো জানো না,আমি তোমার বিয়ে আশমিনের সাথে ঠিক করেছি।
রাফসান শিকদারের কথা শুনে চমকে উঠলো নূর। মেয়ের মুখ দেখে হেসে উঠলেন রাফসান শিকদার। মাথায় হাত বুলিয়ে আদুরে গলায় বলল,
— আশমিন খুব ভালো ছেলে। তোমাকে ভালবেসে আগলে রাখবে দেখো।তোমরা আমার ঠিক দুটো হাতের মতো। আশমিন আমার রাজনীতির দিকটা সামলাবে আর তুমি বিজনেস।তুমি নিজেকে তৈরি করার আগ পর্যন্ত সবকিছু আশমিন দেখবে।সময় হলে বুঝে নিও তুমি।বাবার উপর একটু ভরসা রেখো মা।ঠকবে না।
মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলেন তিনি। এদিকে নূর ভাবনায় পরে গেলো। কামিনী চৌধুরী বিষয় টা স্বাভাবিক ভাবে নিবেন না।
এক সপ্তাহের মাথায় হুজুর ডেকে আশমিন আর নূরের বিয়েটা হয়ে গেলো। কামিনী চৌধুরী হাসি মুখেই ছিল সারাটা সময়।নূরের প্রতি মেকি ভালবাসা ও দেখিয়েছে খুব।নূর শুধু তাচ্ছিল্যের হাসি হেসেছে।নূরের মতো আশমিন ও ছিল নির্লিপ্ত। তার কথা মতোই বাইরের কাউকে তাদের বিয়ে নিয়ে কিছু জানানো হয় নি। নূরের ও এতে কোন মাথা ব্যথা নেই। ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ না করেই কেউ বিয়ের আসরে বসতে পারে তা নূর কে না দেখলে বুঝতেই পারতো না আশমিন।সে ও ট্রেডমিল থেকে নেমেই এখানে এসেছে।অবশেষে হুজুরের কথায় অজু করে এসে কবুল বলেছে দুজন।তাদের বিয়েতে না ছিল কোন সাজসজ্জা আর না ছিল কোন আয়োজন।
বিয়ে পড়ানো শেষ হতেই নূর নিজের রুমে গিয়ে আবার শুয়ে পরেছে।আজ সে সারাদিন ঘুমাবে।আশমিন নিজের রুমে গিয়ে শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়ে সোজা নূরের রুমে গেলো। নূর ততক্ষণে গভীর ঘুমে।ঘুমন্ত নূর কে কোলে করে নিজের রুমে নিয়ে এলো আশমিন।নূরের ঘুম ভেঙে গেছে নড়াচড়ায়।চোখ খুলে অবাক হয়ে বললো,
— কি করছেন এসব? কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে?নামান বলছি।
— পালকি করে নেয়ার অপশন নেই আপাতত। তাই কোলে করেই তোমাকে তোমার স্বামীর রুমে নিয়ে যাচ্ছি। বাই দ্যা ওয়ে,ইটস টোটালি এক্সপেক্টেড টাচ।সো বি কোমফোর্ট ডিয়ার।
আশমিনের কথা শুনে নূর লজ্জা পেয়ে গেলো। চোখ নামিয়ে চুপ করে রইলো আশমিনের বাহুতে। আশমিন তা দেখে বাকা হাসলো। নিজের রুমে ঢুকে নূর কে বেডে নামিয়ে দিয়ে নূরের রক্তিম মুখের দিকে তাকিয়ে অবাক হওয়ার ভান করে বললো,
— ও মাই আল্লাহ! তুমি লজ্জা পাচ্ছো?এ ও সম্ভব!
নূর কোন উত্তর না দিয়ে উল্টো ঘুরে শুয়ে পরলো। আশমিন ও মুচকি হেসে নূরের পাশে শুয়ে নূরের কানে ফিসফিস করে বললো,
— আমার শূন্য বুক অনেকদিন তোমার অপেক্ষায়। এখানে একটু মাথা রাখবে নূর?ভয় পেয় না।তোমার অনুমতি ছাড়া কিছুই করবো না। সম্পর্কের পূর্ণতা তুমি তখনই পাবে যখন আমার মনে হবে তুমি আমার ভালবাসা সহ্য করার জন্য তৈরি। ততদিন না হয় আমরা প্রেম টা আয়েশ করে করি।কি বলো?
নূর চোখ শক্ত করে বন্ধ করে ফেললো। এই লোক এখন প্রেমের কথা বলছে!অথচ সে কবেই তার প্রেমে বরফের মতো জমে বসে আছে। এই প্রেমে প্রকাশ হওয়ার ভয়েই তো তার থেকে নিজেকে এতো দূরে রাখা।আশমিন একহাতে নূরের কোমড় টেনে নিজের কাছে নিয়ে এলো। নূরের মাথা নিজের বুকে চেপে ধরে আস্তে করে বললো,
— ঘুমাও।আজ সারাদিন ঘুমিয়ে নাহয় আমরা বাসর দিন উৎযাপন করবো। তুমি চাইলে আমি কয়েকটা চুমু ও খেতে পারি।আমাকে কিপটে ভেবো না।বর হিসেবে আমার মন অনেক বড়।
বলতে বলতেই নূরের সারা মুখে চুমু খেয়ে ফেললো আশমিন।
— নাও প্রমাণ দিয়ে দিলাম।
নূর হা করে তাকিয়ে রইলো আশমিনের দিকে।মনে মনে বিরবির করলো,
— অসভ্য।
চলবে,,,
।)