#এক_আকাশ_ভালোবাসি
#পার্ট_১৯
#নিশাত_জাহান_নিশি
—-“ওকে ডান। তোরা আসলেই মিশন শুরু হবে।”
কথাটা বলেই মৃন্ময় কলটা কেটে দিলো। গাড়ি থেকে নেমে মৃন্ময় জোরে এক্টা জাম্প মেরে গাড়ির ডিক্কির উপর বসে পড়ল। পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে লাইটার দিয়ে সিগারেট টা জ্বালিয়ে সমানে সিগারেট ফুঁকছে সে। নাক দিয়ে ধোঁয়া বের করে মৃন্ময় আপন মনে বিড়বিড় করে বলছে,,,,,,
—-“মারু তুমি শুধু আমার হবে। আর কারো না। যেকোনো মূল্যেই হোক আমি তোমাকে সম্পূর্ণ নিজের করে নিবো। তোমাকে নিয়ে আমি এই শহর ছেড়ে পালাবো। তোমার হাত দুটো ধরে তোমাকে আমার শহরে নিয়ে যাবো।”
মৃন্ময় কথা গুলো বলছে আর সিগারেট ফুঁকছে।
মুহিত গাড়ি নিয়ে ছুটল খুব স্পিডে। রূপসা মনে মনে ভীষন ভয় পাচ্ছে। কখন সে কোম্পানীগঞ্জ গিয়ে পৌঁছাবে ঐ চিন্তায় আছে। যদি এর আগেই কোনো অনর্থ হয়ে যায়? মারুকে যদি ওরা আজকের মধ্যেই জোর করে বিয়ে দিয়ে দেয় তাহলে কি হবে? রূপসা টেনশান করছে আর ঘামছে। মুহিত ব্যাপারটা আঁচ করতে পেরে রূপসাকে হেচকা এক্টা টান দিয়ে ওর বুকের সাথে মিশিয়ে মিনমিনিয়ে বলল,,,,,,,
—-“বি কুল রূপ। তুমি এতো টেনশান করছ কেনো? তোমার শরীরটা এমনিতেই ভালো না। এর উপর আবার সেই কখন থেকে টেনশান করেই যাচ্ছ। কিচ্ছু হবে না মারুর। আমি তো আছি নাকি? যে করেই হোক আমি ভাবীকে ঐ বাড়ি থেকে বের করে আনব। তুমি জাস্ট প্ল্যান অনুযায়ী কাজ করবে। বাকিটা আমি আর মৃন্ময় ভাইয়া বুঝে নিবো। তুমি টেনশান ছেড়ে চুপ করে বসে থাকো। উটকো টেনশানের জন্য যদি তোমার শরীর খারাপ হয়ে যায় না তাহলে কিন্তু আমি তোমাকে ছেড়ে কথা বলব না। খুব বকব, প্রয়োজনে মারব।”
রূপসা মুহিতের বুক থেকে মাথা তুলে মুখটা ফুলিয়ে মুহিতকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,
—-“টেনশান করব না হয়েছে? বকবক না করে তাড়াতাড়ি গাড়িটা চালাও। দেরি হয়ে যাচ্ছে আমাদের।”
মুহিত মৃদ্যু হেসে রূপসার হাত ধরে খুব স্পীডে গাড়ি ছেড়ে দিলো।
অন্যদিকে,,,,,,
মারু কেঁদে কেটে সব সাজ নষ্ট করে দিয়েছে। মারুর বড় বোন মিনা আর মেঝো বোন মেঘা মিলে মারুকে আবার সাজাচ্ছে। মারু নির্বিকার হয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ থেকে শ্রাবনের মেঘ গড়িয়ে পড়ছে। টায়রা মুখটা কালো করে ক্ষনে ক্ষনে মারুর দিকে তাকাচ্ছে। মাঝে মাঝে আবার মারুর চোখের জল গুলো ও মুছে দিচ্ছে। মারু কাউকে কিছু বলছে না। শুধু থম মেরে বসে আছে। এর মাঝেই মারুর আম্মু মিসেস মাইমুনা আহমেদ পিছন থেকে চেঁচিয়ে মিনা আর মেঘাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,
—-“এই তোরা তাড়াতাড়ি মারুকে নিয়ে আয়। বর পক্ষ চলে এসেছে। অনিক তো এসেই পাগল হয়ে গেছে মারুকে দেখতে। আয় আয় তোরা তাড়াতাড়ি আয়।”
মিনা মারুর ঠোঁটে লিপস্টিক লাগাচ্ছে আর বেশ ব্যস্ত স্বরে মাইমুনা আহমেদকে উদ্দেশ্য করে বলছে,,,,,,
—-“আম্মু তুমি যাও তো। পাঁচ মিনিটের মধ্যেই আমরা মারুকে নিয়ে আসছি।”
মিসেস মাইমুনা আহমেদ আর দাঁড়ালো না। হাসি মুখে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। উনাদের কাউকে দেখে মনে হচ্ছে না যে, কিছুক্ষন আগে কিছু আপওিকর ঘটনা এই বাড়িতে ঘটেছে। খুব চনমনে লাগেছে সবাইকে। মিনা মারুর ঠোঁটে লিপস্টিক লাগানো কমপ্লিট করে এক গাল হেসে মারুর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,
—–“ব্যাস কমপ্লিট। হয়ে গেলো সাজ। এবার শুধু অনিককে দেখানোর পালা। মারু প্লিজ আর ন্যাকা কান্না করিস না। তোর এসব ন্যাকা কান্নার চোটে সাজটা বার বার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এক কাজ আমার বার বার করতে ভালো লাগছে না। বিরক্ত হচ্ছি আমি।”
মারু চোখের জল গুলো মুছে মিনার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,
—-“তুই এসব কান্নার মানে কি বুঝবি আপু? কখনো তো কাউকে ভালোবাসিস নি। জিজুকে আদৌ ভালোবাসিস কি না তা ও জানি না। তোর প্রতি জিজুর ও কোনো ভালোবাসা নেই। কখনো দেখিই নি। হয়তো কখনো দেখব ও না। ভালোবাসতে মন লাগে আপু। যা তোদের কারো মধ্যেই নেই।”
মিনা দাঁত গিজগিজ করে যেই না মারুর গালে চড় বসাতে যাবে অমনি মেঘা চোখের জল ছেড়ে মিনার হাত ধরে মিনাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,,,,,,
—-“আপু প্লিজ তুই মারুর গাঁয়ে এক্টা হাত ও তুলবি না। মারু যা বলেছে একদম ঠিক বলেছে। তোরা একেকটা পিশাচ। মন বলতে কিছুই নেই তোদের মধ্যে। খালি পারিস জোর করতে। দুটো ভালোবাসার মানুষকে আলাদা করতে। যেমন আমাকে আর জুবানকে ও করেছিলি। স্বাদ মিটে নি তাই না? এখন মারুর জীবন নিয়ে ও পড়েছিস। আমার তো সর্বনাশ করেই ছাড়লি। এখন পড়েছিস মারুর সর্বনাশ করতে।”
মিনা দাঁত কিড়মিড় করে মেঘার গালে ঠাস করে এক চড় বসিয়ে মৃদ্যু চিৎকার দিয়ে বলল,,,,,,,
—-“জোর করে অন্য কোথাও বিয়ে দিয়েছি বলেই তো রাজরানীর মতো সংসার করছিস। আরাম, আয়েসের জীবন পেয়েছিস। নাঈমের মতো একজন ভালো স্বামী পেয়েছিস। ঐ জুবানের কি ছিলো? একতলা বাড়িটা ছাড়া আর কিছুই ছিলো না। মারু ও রাজরানী হয়ে থাকবে। ভালো স্বামী পাবে। ভালো পরিবার পাবে। আমরা তোদের ভালো চাই খারাপ চাই না। তা বুঝার ক্ষমতা যদি তোদের থাকত তবে আমি এবং আমার আম্মু, আব্বুর উপর আঙ্গুল তুলতি না। যা হওয়ার হয়েছে এখন চুপচাপ মারুকে নিয়ে ড্রইং রুমে চলে আয়। আমি টায়রাকে নিয়ে ড্রইং রুমে যাচ্ছি।”
মিনা আর দেরি করল না। টায়রার হাত ধরে ড্রইং রুমে চলে গেলো। টায়রা কাঁদো কাঁদো মুখ করে পিছু ফিরে মিনা আর মারুর দিকে তাকাচ্ছে। মিনা রুম থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর মারু মেঘাকে ঝাপটে ধরে হেচকি তুলে কাঁদছে আর বলছে,,,,,,
—–“আপু বল না কেনো আমাদের সাথে এমন হলো? কেনো ওরা আমাদের জীবনটাকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে? ওদের কি মনে হচ্ছে না ওরা আমাদের সাথে অন্যায় করছে? লোভের বশে ওরা নিজেদের মনুষ্যত্বকে জলান্জলি দিচ্ছে। ওদের কাছে কেবল ক্ষমতা, প্রতিপওি আর টাকা টাই বড়। ভালোবাসার কোনো দাম নেই। ফিলিংসের কোনো দাম নেই।”
মেঘা চোখের পানি ছেড়ে মারুর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,,,,,,
—–“আমি তোকে হারতে দিবো না মারু। ভালোবাসা হারানোর কষ্ট আমি বুঝি। তোর ভালোবাসার মানুষকে আমি তোর হাতে তুলে দিবো। আজকের ঝামেলাটা শেষ হয়ে নিক। দেখি কি করা যায়। ছেলেটা যদি সত্যিই তোকে ভালোবেসে থাকে তবে সে আবারো তোর কাছে ফিরে আসবে। তোকে এই জন্জ্ঞাল থেকে বাঁচাতে আসবে। তখন আমি তোকে হেল্প করব। যে করেই হোক তোকে ঐ ছেলেটার হাতে তুলে দিবো। তুই কাঁদিস না বোন। চল আমার সাথে। আর এক্টু দেরি করলেই……
মেঘা আর কিছু বলতে পারল না এর আগেই পেছন থেকে পুরুষালী কন্ঠে কেউ চেঁচিয়ে বলে উঠল,,,,
—–“মারু বেবি তোমার সাজতে এতো সময় লাগছে কেনো? দশ মিনিট ধরে তোমার জন্য ওয়েট করছি। আমি আর পারছি না বেবি। প্লিজ তাড়াতাড়ি সাজ শেষ করে ড্রইং রুমে চলে এসো।”
মেঘা পিছু ফিরে ছেলেটাকে দেখে মলিন হেসে বলল,,,,,
—–“এইতো অনিক। আমরা আসছি। সাজ শেষ। তুমি এখন যাও কেমন?”
—-“নো আপু আমি একা যাবো না। মারুকে সাথে নিয়ে যাবো। আমার এক্টা মুহূর্ত ও মারুকে ছাড়া ভালো লাগে না।”
কথাটা বলেই অনিক বাঁকা হেসে মারুর হাতটা খপ করে ধরে ফেলল। মারু চোখ লাল করে অনিকের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,
—–“হাত ছাড়ুন বলছি। আমি ড্রইং রুমটা চিনি।”
অনিক মারুর কথায় পাওা না দিয়ে মারুকে বসা থেকে উঠিয়ে টানতে টানতে ড্রইং রুমে নিয়ে গেলো। মারু মোচড়ামোচড়ি করছে অনিকের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর। তবে অনিক কিছুতেই মারুর হাতটা ছাড়ছে না। উল্টে আরো টাইট করে আঁকড়ে ধরেছে। মারু খুব ব্যাথা পাচ্ছে। ব্যাথায় কুঁকিয়ে উঠছে এরপরে অনিকের মনে মায়া হচ্ছে না। সে তার অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে।
মারুকে দেখতে অনিকের পরিবার থেকে অনিকের বাবা, মা আর বড় বোন এসেছে। ওরা সবাই বাঁকা হেসে মারুর দিকে তাকিয়ে আছে। ড্রইং রুমে উপস্থিত সবার মাঝখানে দাঁড়িয়ে অনিক এক গাল হেসে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,,
—–“হ্যালো এভরিওয়ান। সবাই আমার কথা মনযোগ দিয়ে শুনো। এখনই আমার আর মারুর এনগেইজমেন্ট হবে। আমার হাতে বেশি সময় নেই। এখান থেকে আবার ঢাকা যেতে হবে। তাই খুব তাড়াহুড়োয় আছি। আশা করি কারো আপওি নেই।”
কথাগুলো বলেই অনিক পকেট থেকে এক্টা ডায়মন্ড রিং বের করে ফটাফট মারুর বা হাতের তর্জনী আঙ্গুলে পড়িয়ে দিলো। মারু নিচের দিকে তাকিয়ে চোখের জল ছাড়ছে। কিছু বলতে পারছে না সে। কেবল সহ্য করে যাচ্ছে। পরিস্থিতি ওর কন্ট্রোলের বাইরে চলে গেছে। বাড়ির সবাই ওর বিপরীতে। তাই এখানে টু শব্দ করাটা ও বেমানান।
অনিকের আব্বু আজমীর চৌধুরী এক গাল হেসে আব্বাস আহমেদকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,
—–“এনগেইজমেন্ট তো হয়েই গেলো আব্বাস। এবার চলো বিয়ের ডেইট টা ফিক্সড করে নেই। কিছুদিন পরেই ইলেকশান বুঝতেই তো পারছ কতোটা ব্যস্ত থাকতে হবে।”
আব্বাস আহমেদ মুখ খুলে কিছু বলার আগেই অনিক চেঁচিয়ে বলে উঠল,,,,,,,,
—-“উনি আবার কি বলবে ড্যাড? যা বলার আমি বলব। বিয়েটা আমার। আমি যা ফিক্সড করব তাই হবে। তাহলে শুনো সবাই, কাল আমাদের গাঁয়ে হলুদ। পরের দিন বিয়ে। এর পরের দিন রিসিপশান। ব্যাস এর উপর আর কোনো কথা হবে না। আমার কথাই শেষ কথা। আজকের মধ্যেই সবাই এরেন্জ্ঞমেন্টে লেগে পড়ো। আজকের দিনটাই সময় আছে।”
অনিক এবার মারুর দিকে তাকিয়ে এক গাল হেসে বলল,,,,,,
—-“যাও বউ রুমে যাও। আর একদিন বাদেই তুমি সম্পূর্ণ আমার হয়ে যাবে। ঢাকা থেকে ফিরেই রাতে তোমার সাথে দেখা করতে আসব কেমন? লাভ ইউ বউ।”
অনিকের এসব গাঁ জ্বলা কথা মারুর একদম সহ্য হচ্ছে না। তাই অনিকের থেকে হাত ছাড়িয়ে মারু সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে নিজের রুমে চলে গেলো। রুমে ঢুকেই মারু হাতে থাকা আংটি টা হাত থেকে খুলে ফ্লোরে ছুড়ে মেরে জোরে চিৎকার দিয়ে বলল,,,,,,,
—-“মৃন্ময় আপনি কোথায়? আমি আপনার জায়গায় কাউকে মানতে পারছি না। প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে আমার। প্লিজ মৃন্ময় আপনি ফিরে আসুন। এইবার আমি আপনার হাত ধরে পালাবো। বাড়ির কারো কথাই ভাবব না। আপনাকে ছাড়া আমি ভালো থাকব না মৃন্ময়। প্লিজ ফিরে আসুন মৃন্ময়, প্লিজ।”
কথাগুলো বলেই মারু ধপ করে ফ্লোরে বসে হেচকি তুলে কান্না জুড়ে দিলো।
আব্বাস আহমেদ গলাটা ঝাঁকিয়ে অনিককে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,
—-“বাবা এতো তাড়া কিসের? আমরা না হয় আগামী সপ্তাহে বিয়ের ডেইটটা ফিক্সড করি? এতে উভয় পক্ষের ই ভালো হবে।”
অনিক কঠোর কন্ঠে আব্বাস আহমেদকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,
—-“আর কোনো কথা শুনতে চাই না। এটাই ফাইনাল।”
অনিক এবার ওর আম্মু, আব্বু আর বোনকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,
—-“বিয়ের ডেইট ফিক্সড হয়ে গেছে এবার সবাই বাড়ি চলো। বাড়ি ফিরেই আমাকে ঢাকা যেতে হবে। সো তাড়াতাড়ি চলো।”
অনিক আর দাঁড়ালো না। বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো। সামনে সাজানো রকমারী নাস্তা রেখেই অনিকের আস্মু, আব্বু, বড় বোন মারুর পরিবারের থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো। আব্বাস আহমেদ আর উনার মেয়ের জামাইরা ছুটাছুটি শুরু করেছে বিয়ের এরেন্জ্ঞমেন্ট করতে। মারুর খালু আর ফুফারা ও কাজে লেগে পড়েছে। আব্বাস আহমেদ জোর গলায় মাইমুনা আহমেদকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,
—–“মারু যেনো কোনো মতেই বাড়ি থেকে বের হতে না পারে। শুধু বাড়ি কেনো রুম থেকে ও যেনো বের হতে না পারে সে দিকে তোমরা সবাই খেয়াল রাখবে। চব্বিশ ঘন্টা ওকে চোখে চোখে রাখবে। ইজ দ্যাট ক্লিয়ার?”
মাইমুনা আহমেদ মাথা নাঁড়িয়ে হ্যাঁ বুঝালো। সবাই এবার নিজ নিজ কাজে লেগে পড়ল। মিনা রাগে ফুসফুস করতে করতে উপরে উঠে মারুর রুমের দরজায় বাহির থেকে খিল লাগিয়ে দিলো। মারু যেনো রুম থেকে বের হতে না পারে সেজন্য। মারু কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে ফ্লোরেই চিৎ হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।
অন্যদিকে,,,,,,,
রূপসা আর মুহিত কোম্পানিগন্জ্ঞ পৌঁছে গেছে। মারুর বাড়ির কাছাকাছি আছে ওরা। মেইন রাস্তায় গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মুহিত। মারুদের বাড়ির রাস্তায় গাড়ি ঢুকাবে কিনা কনফিউশনে আছে। রূপসা কিছু এক্টা ভেবে মুহিতকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,
—–“মুহিত এক কাজ করো। গাড়িটা ঘুড়িয়ে পিছনের রাস্তায় মোড় নাও। মারুর বাড়ির সামনে গাড়ি নিয়ে গেলে মারুর পরিবারের কেউ যদি আমাদের দেখে ফেলে? তাহলে তো প্ল্যানটাই মাঠে মারা যাবে।”
এর মাঝেই মৃন্ময় ওর গাড়ি নিয়ে মুহিতের গাড়ির মুখোমুখি দাঁড়ালো। মুহিত আর রূপসা মৃদ্যু হেসে গাড়ি থেকে নেমে পড়ল। মৃন্ময় গাড়ি থেকে নেমে মুহিত আর রূপসার মুখো মুখি দাঁড়ালো। রূপসা কিছু বলার আগেই মুহিত বলে উঠল,,,,,
—-“ভাইয়া আমাদের হাতে বেশি সময় নেই। আমার মনে হয় না ভাবীর পরিবার ভাবীবে বেশিদিন এই বাড়িতে রাখবে। যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব উনারা ভাবীকে বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগবে। এর মূল কারনটাই হচ্ছিস তুই। ওরা ভাববে দেরি করলে হয়তো তুই কোনো অনর্থ করে বসবি। তাই ওরা রিস্ক নিতে চাইবে না। সো চল এবার আমরা প্ল্যানে যাই।”
১.ফার্স্টে যা করতে হবে তা হলো, রূপকে ভাবীর বাড়িতে পাঠাতে হবে। রূপ ওর নিজের মতো করে ভাবীর পরিবারের সাথে মিশে যাবে। রূপকে উনারা সবাই ভালো করে চিনে। ফ্রেন্ডের বিয়েতে বেস্ট ফ্রেন্ড আসতেই পারে এতে সন্দেহ করার কিছুই নেই। আর যদি ও সন্দেহ করে রূপ সেটা ম্যানেজ করে নিবে।
২.দ্বিতীয়ত, বিয়ের আগ পর্যন্ত আমরা কোনো প্ল্যান করব না আই মিন ভাবীকে বাড়ি থেকে বের করার কোনো চেষ্টাই করব না। এতে হীতে বিপরীত হতে পারে। যা প্ল্যান করার বিয়ের দিনই করতে হবে। কজ ঐদিন বাড়ি ভর্তি মেহমান, আত্নীয় স্বজন, বাড়ির লোকরা থাকবে। ভীড়ের মাঝে অনায়াসে বাড়ির ভিতর ঢুকা এবং বের হওয়া যাবে। এতে ধরা পড়ার চান্স টেন পার্সেন্ট থাকবে।
৩.তৃতীয়ত, বিয়ের দিন যখন ভাবীকে সাজিয়ে গুজিয়ে রাখা হবে তখনই আমাদের প্ল্যানটা কাজে লাগাতে হবে। বিশেষ করে বর পক্ষ আসার সময়টাতে। ভাবীকে দেখে শুনে রাখার জন্য অভেয়েসলি ভাবীর বোন বা খালামনি, ফুফুরা রুমে থাকবে। উনারা ভাবীকে একা একা ছাড়বে না। রূপ তখন সবাইকে স্প্রে প্রেস করে অজ্ঞান করে দিবে। রুপের জানা মতে, মারুর রুমের পাশেই এক্টা স্টোর রুম আছে। ঐ স্টোর রুমের জানালাটা অনেক বড়। স্টোর রুমের জানালাটা বাড়ির পিছনের দিক বরাবর। পিছনের গেইট দিয়ে ওরা সহজেই বাড়ি থেকে বের হয়ে আমাদের গাড়িতে উঠে যেতে পারবে। আমরা আগে থেকেই গাড়ি নিয়ে বাড়ির পেছনের গেইট বরাবর দাঁড়িয়ে থাকব। ওরা গাড়িতে উঠার সাথে সাথেই আমরা গাড়ি নিয়ে ছুটব ঢাকা।”
৪.চতুর্থত, গাড়ি নিয়ে ঢাকার কাছাকাছি আসার সাথে সাথেই আমরা রেজিস্ট্রি অফিসে ঢুকে তোদের বিয়েটা সেরে ফেলব। কারণ, কখন কোন ঝড় চলে আসে বলা যায় না। ভাবীর পরিবার অবশ্য হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না।”
৫.পঞ্চমত, আমরা ভাবীকে নিয়ে ডিরেক্টলি বাড়ি যাবো না। বাড়িতে গেলেই বাঁধবে আরেক অশান্তি। আম্মু যদি জানে তুই এই কান্ড করে বিয়ে করেছিস তবে বাড়িতে রণযুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে। দোলা আপুকে কাল দেখতে আসবে। আমরা হয়তো এটেন্ড থাকতে পারব না। আই থিংক কিছুদিনের মধ্যেই দোলা আপুর বিয়ের ডেইট ফিক্সড হয়ে যাবে। আমি চাইছি দোলা আপুর বিয়েটা সুষ্ঠু মতো হওয়ার পর তোর আর ভাবীর ব্যাপারটা সবার সামনে আসুক। আপাতত এই কয়েকটা দিন ভাবী আমার ভাড়া করা ফ্ল্যাটটায় থাকবে। আমি আর রূপ তো তিন বাদেই ফ্ল্যাটে চলে যাচ্ছি। ভাবী না হয় আমাদের সাথে থাকবে। মাঝে মাঝে তুই ও যেতে পারিস।”
ব্যাস প্ল্যান এখানেই শেষ। মুহিত এবার রূপসার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,
—-“রূপ তুমি চেষ্টা করবে বিয়ের দিন ভাবীকে নিচ তলার স্টোর রুমের পাশের রুমটাকে রাখতে। এতে আমাদের সবার সুবিধা হবে। এমন ভাবে কাজ করবে যেনো কেউ সন্দেহ না করে ওকে?”
রূপসা মাথা নাঁড়িয়ে বলল,,,,,,
—-“এটা কোনো ব্যাপার ই না। আমি সবটা হ্যান্ডেল করতে পারব। তোমরা জাস্ট টাইমলি গাড়ি নিয়ে বাড়ির পেছনের গেইটে হাজির থেকো। তাহলেই হবে।”
মৃন্ময় বেকুব হয়ে ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,
—-“ওরেব্বাস তোরা ভিতরে ভিতরে এতো প্ল্যান করে এসেছিস? আমি অবাক না হয়ে পারছি না। সব তো বুঝলাম তবে স্প্রে কই? সাথে তো দেখছি না।”
মুহিত বাঁকা হেসে গাড়ির ডিক্কি খুলে এক্টা ল্যাকেজ বের করে রূপসার হাত ধরিয়ে মৃন্ময়কে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,
—–“স্প্রে থেকে শুরু করে রূপের জন্য চারটে শাড়ী, অরনামেন্টস, জুতো, অব্যবহৃত দুটো সিম সব এই ল্যাকেজটাতে আছে। হাতে যদি এক্টা ল্যাকেজ সহ সাজ গোজের জিনিস না থাকে তবে ভাবীর পরিবার বুঝবে কি করে রূপ ভাবীর বিয়ে খেতে এসেছে? মুহিত আট ঘাট বেঁধেই মাঠে নেমেছে বুঝলি?”
মৃন্ময় এক গাল হেসে বলল,,,,,
—-“ভাইটা কার দেখতে হবে তো!”
রূপসা বেশ তাড়াহুড়ো করে মৃন্ময় আর মুহিতকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,
—-“উফফফ তোমরা কথা বলো আমি বরং যাই। না জানি ঐ দিকে কি কি হচ্ছে। মারুকে না দেখা পর্যন্ত আমি শান্তি পাচ্ছি না।”
মুহিত বেশ সিরিয়াস হয়ে রূপসাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,
—-“রূপ তুমি পারবে তো প্ল্যান অনুযায়ী কাজ করতে?”
—-“আরে পারব পারব, খুব ভালো পারব। তুমি চিন্তা করো না তো।”
—-“কোনো দরকার লাগলে অবশ্যই আমাকে ফোন করবে। ল্যাকেজে যে সিম গুলো আছে ঐ গুলি ব্যবহার করবে। ফোনে লাগানো সিমটা ভুলে ও ইউজ করবে না ওকে?”
—-“আচ্ছা ওকে। আসছি আমি।”
—-“রূপ আমি ল্যাকেজটা এগিয়ে দিয়ে আসি? একলা পারবে না তুমি!”
—-“মাথা গেছে তোমার? ধরা পড়ার শখ আছে নাকি?”
মুহিত মুখটা ফুলিয়ে বলল,,,,
—-“তাও ঠিক। রূপ……নিজের খেয়াল রেখো।”
—-“ওকে ওকে রাখব। যাচ্ছি আমি। তোমরা দুজন ও নিজেদের খেয়াল রেখো।”
রূপসা ল্যাকেজ নিয়ে মারুর বাড়ির গলিতে ঢুকে গেলো। মৃন্ময় চেঁচিয়ে পিছন থেকে রূপসাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,
—–“রূপপপপ পারলে মারুর সাথে একবার কথা বলিয়ে দিস। আমি অপেক্ষায় থাকব।”
রূপসা ও চেঁচিয়ে বলল,,,,,,
—-“ওকে ভাইয়া। আমি চেষ্টা করব।”
#এক_আকাশ_ভালোবাসি
#পার্ট_২০
#নিশাত_জাহান_নিশি
—-“ওকে ভাইয়া আমি চেষ্টা করব।”
রূপসা আর দাঁড়ালো না। ছুটল মারুর বাড়ির উদ্দেশ্যে। মুহিত বার বার পিছু ফিরে রূপসার যাওয়ার পথে তাকিয়ে আছে। মৃন্ময় পিছন থেকে মুহিতের কাঁধে হাত রেখে বলল,,,,,,,
—-“মুহিত এবার কি করবি? কোথায় যাবি?”
মুহিত মৃন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বেশ সিরিয়াস হয়ে বলল,,,,,,
—-“আশে পাশে কোনো লজ আছে কিনা দেখতে হবে। গাড়িতে উঠে পড়। এখানে বেশিক্ষন দাঁড়িয়ে থাকাটা সেইফ না।”
মৃন্ময় আর দেরি না করে ওর গাড়িতে উঠে পড়ল। মুহিত ও ঘুড়ে ওর গাড়িতে বসে পড়ল। দুই ভাই দুই গাড়িতে উঠে একসাথে গাড়ি স্টার্ট করে দিলো। আশেপাশে গাড়ি থামিয়ে ওরা লজের খুঁজ করছে। কিছুক্ষন খুজাঁখুজির পর ওরা মেইন রাস্তার পাশেই এক্টা লজ খুঁজে পেলো। দুটো এডজাস্ট করা রুমে ওরা নিজেদের থাকার বন্দোবস্ত করে নিলো।
অন্যদিকে,,,,,,
রূপ এক বুক সাহস নিয়ে মারুর বাড়ির গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার পর রূপ সোজা গেইটের ভিতর ঢুকে গেলো। গেইটের ভিতর ঢুকতেই রূপ আব্বাস আহমেদের মুখোমুখি হয়ে গেলো। আব্বাস আহমেদ রূপকে দেখে এক ভ্রু উঁচু করে রেখেছে। রূপ মলিন হেসে পর পর কয়েকটা শুকনো ঢোক গিলে আব্বাস আহমেদকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,
—-“আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল।”
আব্বাস আহমেদ চোখে মুখে তিক্ততার ছাপ ফুটিয়ে বলল,,,,,,
—-“ওয়ালাইকুম আসসালাম। কে তুমি? তোমাকে তো চিনলাম না।”
রূপ আমতা আমতা করে বলল,,,,,,
—-“আমি রূপ আঙ্কেল। মারুর বেস্ট ফ্রেন্ড। রাজশাহী থাকি। মনে আছে, একবার আমি মারুর সাথে আপনাদের বাড়িতে এসেছিলাম? আপনি আমাকে আদর করে রূপ মা রূপ মা বলে ডাকতেন।”
আব্বাস আহমেদ কিছুক্ষন ভেবে চিন্তে মলিন হেসে বলল,,,,,,
—-“ওহ্ হ্যাঁ মনে পড়েছে। প্রায় দু বছর আগে এসেছিলে। এরপর তো আর আসো নি। তাই চেহারাটা ভুলে গেছি। তো কেমন আছো রূপ?”
রূপ দাঁত বের করে হেসে বলল,,,,,,
—-“ভালো আছি আঙ্কেল। আপনি কেমন আছেন?”
—-“আমি তো দারুন আছি। ছোট মেয়ের বিয়ে বলে কথা। মারু নিশ্চয়ই তোমাকে ফোন করে ওর বিয়ের কথা জানিয়েছে?”
—-“হুম আঙ্কেল জানিয়েছে। তাই তো বিয়ের একদিন আগেই চলে এলাম। বেস্ট ফ্রেন্ড বলে কথা। কি করে বিয়েটা মিস করি বলেন? অবশ্য মারু আমাকে দাওয়াত দেয় নি। জেচে চলে এসেছি। ফ্রেন্ডদের ব্যাপারে কোনো লজ্জা রাখতে নেই। নির্লজ্জ হতে হয়। আপনিই বলুন না আঙ্কেল আমি ঠিক করি নি?”
আব্বাস আহমেদ গম্ভীর ভাব নিয়ে বলল,,,,,
—-“হ্যাঁ রূপ খুব ভালো কাজ করেছ। মারু তোমাকে দেখলে খুব অবাক হয়ে যাবে। সাথে খুশি ও হবে। মেয়েটাকে ভালো করে বুঝাও। অনিককে যেনো মেনে নেয়। আমরা ওকে ভালো জায়গায় ই বিয়ে দিচ্ছি। ছেলের অনেক টাকা পয়সা। সুখে থাকবে মারু।”
আব্বাস আহমেদ কিছুটা থেমে আবারো কঠোর কন্ঠে বলল,,,,,,
—-“ফ্রেন্ডকে ভালো বুদ্ধি দিও কেমন? উল্টো পাল্টা বুদ্ধি মাথায় ঢুকিও না। না হয় বিপদে পড়ে যাবে! আমাকে তো ভালো করেই চিনো।”
রূপ বেশ বুঝতে পেরেছে আব্বাস আহমেদ কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছে। শেষের কয়েকটা লাইনে হুমকি বুঝিয়েছে। রূপ এ ও বুঝছে আব্বাস আহমেদ ওর আসাটা পছন্দ করে নি। সন্দেহের চোখে দেখছে। রূপ জোর পূর্বক হাসি টেনে আব্বাস আহমেদের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,
—-“আঙ্কেল আপনি চিন্তা করবেন না। মারুকে আমি ভালো বুদ্ধিই দিবো। যেখানে টাকা পয়সা বেশি থাকবে সেখানেই মারু খুশি থাকবে। মৃন্ময় নামের ছেলেটাকে আমার একদম পছন্দ না। মারু যে কি দেখে ছেলেটার প্রেমে পড়েছে আল্লাহ্ মালুম। আমি তো মারুকে বার বার ওয়ার্ন করেছি, মারু তুই মৃন্ময়কে ভুলে যা। আঙ্কেল তোর জন্য আরো ভালো কোনো ছেলেকে সিলেক্ট করবে। যার অনেক টাকা পয়সা থাকবে। কিন্তু না মারু শুনে নি। ঐ ছেলেটাকেই ভালোবেসে গেছে। শেষ মেষ খেলো তো এক্টা ছ্যাঁকা?”
—-“কথাটা যেনো পাঁচ কান না হয় কেমন? গ্রামের মানুষ জানাজানি হলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। ছেলেটাকে কিছুক্ষন আগে মেরে ধরে বাড়ি থেকে বের করেছি। আশা করছি আর ফেরত আসবে না। আর আসলে ও এই যাএায় বেঁচে ফিরবে না। আমার মেয়েকে ও মেরে দিবো। দুটো লাশ একসাথে ফেলব। এমন কুলাঙ্গার মেয়ে থাকার চেয়ে না থাকা ভালো। আমার মন কিন্তু পাথর। মেয়ে হারানোর শোক আমি অনায়াসে সহ্য করতে পারব।”
কথাগুলো বলেই আব্বাস আহমেদ রাগে গিজগিজ করতে করতে বাড়ির বাইরে চলে গেলো। রূপ বড় এক্টা স্বস্তির নিশ্বাস ছেড়ে বুকে হাত দিয়ে চোখ দুটো বুজে বিড়বিড় করে বলল,,,,,,
—-“উফফফ বাবা…. জোর বাঁচা বেঁচে গেলাম। বাঘের মুখ থেকে বেঁচে ফিরেছি। আ’ম সিউর আঙ্কেল আমাকে খানিকটা হলে ও সন্দেহ করছে। চব্বিশ ঘন্টা আমার উপর নজর রাখবে। খুব সাবধানে গুটি সাজাতে হবে।”
এর মাঝেই কেউ এসে পিছন থেকে রূপের কাঁধে হাত রেখে বলল,,,,,,
—–“এই কে তুমি?”
রূপ পিছু ফিরে মাইমুনা আহমেদকে দেখতে পেলো। রূপকে দেখা মাএই মাইমুনা আহমেদ এক গাল হেসে বলল,,,,,,
—-“আরে…..তুমি রূপ না?”
রূপ দাঁত বের করে হেসে বলল,,,,,,
—-“আমি ভাবতেই পারি নি আন্টি আপনি আমাকে এতো সহজে চিনে ফেলবেন।”
—-“চিনব না কেনো? অবশ্যই চিনবো। তুমি তো মারুর বেস্ট ফ্রেন্ড।”
—-“জ্বি আন্টি।”
—-“চলো চলো বাড়ির ভিতরে চলো। এখানে আর কতোক্ষন দাঁড়িয়ে থাকবে।”
রূপের হাত ধরে মাইমুনা আহমেদ রূপকে নিয়ে বাড়ির ভিতর ঢুকে গেলো। বাড়ির ড্রইং রুমে মিনা, মেঘা, মারুর দুই খালামনি, আরেকজন ফুফু বসে আছে। সাথে গ্রামের কয়েকজন মহিলা ও আছে। রূপকে দেখা মাএই মিনা সন্দেহের দৃষ্টিতে রূপের দিকে তাকিয়ে আছে। রূপকে দেখে মিনা মোটে ও খুশি না। মিনার সাথে সাথে মারুর খালামনি আর ফুফুরা রূপকে দেখে সন্তুষ্ট না। মুখটা বাঁকা করে রেখেছে ওরা। মেঘা মিষ্টি হেসে দৌঁড়ে এসে রূপের পাশে দাঁড়িয়ে রূপকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,
—-“হেই রূপ কেমন আছো?”
রূপ এক গাল হেসে বলল,,,,,,
—-“ভালো আছি মেঘা আপু। তুমি কেমন আছো?”
—-“এইতো আছি। নিশ্চয়ই মারুর বিয়েতে এসেছ?”
—-“জ্বি আপু। মারুর বিয়ের কথা শুনে চলে এলাম।”
—-“খুব ভালো করেছ। চলো চলো তোমাকে মারুর রুমে নিয়ে যাই।”
কথাগুলো বলেই মেঘা রূপের হাত টেনে সিঁড়ির অগ্রসর হচ্ছে। পিছন থেকে মিনা চেঁচিয়ে বলে উঠল,,,,,,
—-“আম্মুম্মুম্মু ওদের বলে দাও মারুকে যেনো কোনো কুবুদ্ধি না দেয়। বুঝিয়ে শুনিয়ে যেনো মারুকে বিয়েতে রাজি করায়। ওদের কোনো কুমতলব যদি আমার চোখে ধরা পড়ে তবে কিন্তু হীতে বিপরীত হয়ে যাবে।”
মাইমুনা আহমেদ কঠোর কন্ঠে বলল,,,,,,
—-“আশা করি ওরা এই ভুলটা করবে না। নিজেদের পায়ে নিজেরা কুড়োল মারবে না। পাগল ও কিন্তু নিজের ভালোটা বুঝে। সে জায়গায় ওরা তো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ। ছেড়ে দে ওদের। আমরা তো আছিই ওদের পাহারা দেওয়ার জন্য।”
রূপ আর মেঘা শুকনো ঢোক গিলে দুজন দুজনের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে। পিছনে বাড়ির বাকিরা রাগী দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। মাইমুনা আহমেদ জোর পূর্বক হাসি টেনে রূপ আর মেঘাকে উদ্দেশ্য করে জোরে চেঁচিয়ে বলল,,,,,,
—-“তোমরা থামলে কেনো? যাও উপরে যাও। মারুর সাথে কথা বলো। সময় কাটাও।”
রূপ আর মেঘা পিছু ফিরে মলিন হেসে আবারো সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগল। মিনা তেঁড়ে এসে মাইমুনা আহমেদের কানে ফিসফিসিয়ে বলল,,,,,,
—-“কি দরকার ছিলো আম্মু, মেয়েটাকে বাড়িতে ঢুকার পারমিশন দেওয়ার? মেয়েটা যদি কুমতলবে আসে তখন কি করবে? আমার মেয়েটাকে একদম সুবিধের লাগছে না।”
—-“আমার ও সুবিধের লাগছে না। মেয়েটা যেহেতু এতো দূর চলেই এসেছে। তাই ওকে তাড়াতে মন চাইছিলো না। মনুষ্যত্বের ও তো এক্টা ব্যাপার আছে। যাই হোক, মেয়েটাকে ২৪ ঘন্টা চোখে চোখে রাখতে হবে। ভালো করে নজর রাখিস মেয়েটার উপর। আমি আসছি। অন্য কাজ আছে।”
মাইমুনা আহমেদ কিচেন রুমের দিকে চলে গেলো। মিনা সোফায় বসে আবারো আড্ডায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল। তবে ওর দৃষ্টি মারুর রুমের দিকে। কিছুক্ষন পর পর সে শকুনের দৃষ্টিতে মারুর রুমের দিকে তাকাচ্ছে। মেঘা আর রূপ অলরেডি মারুর রুমে ঢুকে পড়েছে।
মারু ঘুমে কাত হয়ে আছে। শাড়ি, গয়না গাটি আর সাজ নিয়েই সে ঘুমিয়ে আছে। তাও আবার ফ্লোরে চিৎ হয়ে। রূপ আর মেঘা দৌঁড়ে গিয়ে মারুর পাশে বসল। মারুর চোখ, মুখের অবস্থা দেখে রূপের চোখে জল চলে এলো। মেঘা রূপের কাঁধে হাত রেখে শান্ত কন্ঠে বলল,,,,,,,,,
—-“কাল থেকেই মারু কাঁদছে। খাওয়া দাওয়া টোটালি অফ করে দিয়েছে। মৃন্ময় নামের ছেলেটা সম্পর্কে আশা করি তুমি সবই জানো। যেহেতু তোমরা বেস্ট ফ্রেন্ড জানার ই কথা। আজ ছেলেটা এসেছিলো। আব্বু ছেলেটাকে মেরে ধরে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। মারুকে ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমি এই জিনিসটা একদম পছন্দ করছি না। রূপ প্লিজ তুমি কি মারুকে হেল্প করবে এই বাড়ি থেকে পালাতে? মৃন্ময় নামের ছেলেটাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে। ছেলেটাকে দেখলেই বুঝা যায় ছেলেটা খুব ভালো। আমাদের মারুকে খুব ভালোবাসে। ছেলেটা নিসন্দেহে বিশ্বাসযোগ্য।”
রূপ ফিসফিসিয়ে মেঘার কানে কানে বলল,,,,,,,
—-“আপু আস্তে কথা বলো। দেয়ালের ও কান আছে। আমি মারুকে এই বাড়ি থেকে উদ্ধার করতেই এসেছি। মৃন্ময় আমার ফুফাতো ভাই প্লাস ভাসুড়। আমি ওদের সম্পর্কের আগা গোড়া সব জানি। মৃন্ময় ভাইয়া ই আমাকে এই বাড়িতে পাঠিয়েছে। মারুর বিয়েটা মৃন্ময় ভাইয়ার সাথেই হচ্ছে অন্য কারো সাথে না। তুমি জাস্ট টেনশান ফ্রি থাকো।”
মেঘা এক গাল হেসে বলল,,,,,,
—-“সত্যি বলছ রূপ?”
—-“হ্যাঁ আপু সত্যি বলছি। এখন মারুকে জাগাতে হবে। পানি নিয়ে এসো। চোখে, মুখে পানি ছিটা দিলেই উঠে যাবে।”
মেঘা কিছুটা ভাবুক ভঙ্গিতে বলল,,,,,
—-“আগে বলো তুমি কবে বিয়ে করলে? কই মারু তো আমাদের এই বিষয়ে কিছু বলে নি!”
—-“সে অনেক কথা আপু। পরে সময় করে বলব। তবে মারু কাউকে কিছু না জানিয়ে ভালোই করেছে। এখন যাও তাড়াতাড়ি পানি নিয়ে এসো।”
মেঘা জলদি করে ডেস্কের উপর থেকে পানির জগটা এনে রূপের হাতে ধরিয়ে দিলো। রূপ হাতের মুঠিতে এক্টু পানি নিয়ে মারুর চোখে, মুখে ছিটাতে লাগল। সাথে সাথেই মারু কপাল কুঁচকে পিটপিট করে চোখ খুলল। চোখ খুলেই মারু রূপকে আগে দেখল। রূপকে দেখার সাথে সাথে মারু চোখের জল ছেড়ে শোয়া থেকে উঠে রূপকে ঝাপটে ধরে বলল,,,,,,,
—-“রূপ তুই এসেছিস? আমি জানতাম তুই আসবি। আমি বিপদে পড়েছি শুনলে তুই ছুটে আসবি।”
—-“আমাকে তো আসতেই হতো মারু। না হয় আমার মৃন্ময় ভাইয়া তিলে তিলে শেষ হয়ে যেতো। এই প্রথম আমার ভাইটা কারো প্রেমে পড়েছে। কাউকে ভালোবেসেছে। প্রথম প্রেমটা হারাতে দেওয়া একদমই উচিত হবে না। তাই ছুটে এলাম। তোকে এবার নিজের জা বানিয়েই ছাড়ব।”
আচমকাই রুমের দরজা ঠেলে মিনা রুমে ঢুকে পড়ল। কেউ এখনো মিনাকে খেয়াল করে নি। মিনা চোখ, মুখ লাল করে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,
—-“কি হচ্ছে এখানে? কার প্রেম, ভালোবাসার কথা হচ্ছে?
রূপ, মারু আর মেঘা থতমত খেয়ে গেলো। রূপ তাড়াতাড়ি মারুকে ছেড়ে মিনার দিকে তাকিয়ে মলিন হেসে বলল,,,,,,,
—-“না আপু আমি তো মারুকে বুঝাচ্ছি যে, প্রেম ভালোবাসা করে কি লাভ? বিয়ে তো ফ্যামিলির পছন্দ অনুযায়ী ই করতে হয়। যার টাকা বেশি তাকেই বিয়ে করবি। অসব ঠুনকো প্রেম, ভালোবাসার কোনো ভ্যালু নেই। আমি ও তো প্রেম ভালোবাসা করি না। যদি কখনো টাকা ওয়ালা কাউকে খুঁজে পাই তবে তাকেই বিয়ে করব। বিয়ের পর জামাইয়ের সাথে প্রেম, ভালোবাসা করব। ব্যাস এটুকুই।”
মিনা কিছুটা শান্ত হয়ে নরম স্বরে বলল,,,,,,,
—-“যা বুঝাচ্ছ ভালোই বুঝাচ্ছ। এর বাইরে যেনো অন্য কিছু না শুনি। আর শুনো….. রুমের দরজা ভেতর থেকে লক করবে না। হালকা ভেজিয়ে রাখবে। বাহির থেকে ভিতরে আসতে যেনো সুবিধা হয়।”
রূপ মাথা নাঁড়িয়ে হ্যাঁ বুঝালো। মিনা এবার মেঘাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,
—-“মেঘা তুই আমার সাথে চল। নিচে অনেক কাজ পড়ে আছে।”
মেঘা বসা থেকে উঠে রূপ আর মারুর দিকে একবার তাকিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। মিনা কিছুক্ষন মারু আর রূপের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
মারু আর রূপ বুকে হাত দিয়ে বড় এক্টা স্বস্তির শ্বাস ফেলে দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে হু হা করে হেসে দিলো। কিছুক্ষন হাসার পর রূপ মারুকে উদ্দেশ্য করে মিনমিনিয়ে বলল,,,,,,
—-“উঠ ফ্রেশ হয়ে নে। জলদি কর।”
মারু মুখটা কালো করে বেশ সিরিয়াস হয়ে বলল,,,,,,,
—-“রূপ এই বাড়ি থেকে আমরা কি করে পালাবো? দেখছিস তো সবাই কেমন শকুনের মতো আমাদের দিকে নজর রাখছে। মিনা আপু আর আব্বুর চোখে ধূলো দেওয়া যাবে না। আমার বেশ টেনশান হচ্ছে।”
—-“শুন মারু তোর টেনশান করতে হবে না। যা করার আমি, মুহিত আর মৃন্ময় ভাইয়া করব। প্ল্যান সাজানোই আছে। এবার শুধু বিয়ের দিনের অপেক্ষা। আচ্ছা….. তোর বিয়ের ডেইট ফিক্সড করা হয়েছে?”
—-“কাল হলুদ। পরের দিন বিয়ে।”
রূপ কিছুক্ষন ভেবে চিন্তে বলল,,,,,
—-“মুহিতের আন্দাজ ই তাহলে ঠিক হলো।”
রূপ এবার মারুর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,
—-“এক কাজ কর তুই তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নে। আমি মুহিতকে বিয়ের ডেইটটা জানিয়ে দিচ্ছি।”
—-“মুহিত ভাইয়া ও এসেছে?”
—-“হুম এসেছে। সব প্ল্যান তো মুহিত ভাইয়ার ই।”
—-“কোথায় ওরা?”
—-“আশেপাশের কোনো এক্টা লজে উঠবে বলেছে। তুই তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নে। মৃন্ময় ভাইয়া তোর সাথে কথা বলবে।”
—-“সত্যি বলছিস মৃন্ময় আমার সাথে কথা বলবে?”
—-“হ্যাঁ গো বলবে। এবার যাও।”
মারু তাড়াতাড়ি বসা থেকে উঠে কাবার্ড থেকে সালোয়ার স্যুট বের করে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। রূপ বসা থেকে উঠে ল্যাকেজ থেকে ফোন বের করে ফোনের সেট করা সিমটা বের করে অব্যবহৃত সিমটা ফোনে পুড়ে নিলো। ফোনটা অন করে রূপ খুব সাবধানে মুহিতের নাম্বারে ডায়াল করল। মুহিত আর মৃন্ময় লজের বারান্দায় বসে আড্ডা দিচ্ছিলো। রূপের কল বাজার সাথে সাথেই মুহিত কলটা পিক করে ফেলল। ঐ পাশ থেকে রূপ মিনমিন করে বলল,,,,,,,,
—-“মুহিত শুনছ?”
মুহিত বেশ সিরিয়াস হয়ে বলল,,,,,,
—-“হুম রূপ শুনছি। কি খবর ঐখানের? তুমি ঠিকঠাক ভাবে পৌঁছেছো তো?”
—-“হুম পৌঁছেছি। খবর তেমন ভালো না। বাড়ির সবাই আমাকে সন্দেহ করছে। আমার মনে হচ্ছে না খুব সহজে প্ল্যানটা সাকসেসফুল হবে। সবাই আমাকে নজরে নজরে রাখছে।”
—-“আল্লাহ্ ভরসা রূপ। আমার মন বলছে আমরা পারব।”
—-“হুম আল্লাহ্ ই আমাদের শেষ ভরসা। শুনো…. যে কারনে তোমাকে ফোন করেছি, কাল মারুর হলুদ, এর পরের দিন বিয়ে……
রূপ আরো কিছু বলতে গিয়ে ও থেমে গেলো। আচমকাই হু হা করে হেসে রূপ গড়গড় করে বলতে লাগল,,,,,,
—-“রুবাইয়া তুমি পারো ও বটে। মারু তো আমাকে ইনভাইট ই করে নি। আমি জেচে চলে এসেছি। বেস্ট ফ্রেন্ডের বিয়ে বলে মিস করতে চাই নি। মারুর হাজবেন্ডকে তো এখনো দেখলাম ই না। শুনেছি উনার নাম নাকি অনিক। নামের মতো আমাদের জিজু দেখতে ও দারুন হবে। বিয়েতে জিজুর সাথে সেল্ফি তুলে তোমার হোয়াট এ্যাপে সেন্ড করব কেমন? তখন না হয় তুমি আমাদের চোখ ভরে দেখে নিও। এখন রাখছি কেমন? ফ্রেশ হতে হবে। তোমাকে আমি পরে কল করে নিবো।”
রূপ তাড়াতাড়ি করে কলটা কেটে দিলো। সাথে সাথেই দরজা ঠেলে মিনা রুমে প্রবেশ করল। হাতে এক্টা নাস্তার ট্রে নিয়ে। রূপ জোর পূর্বক হাসি টেনে মিনার দিকে তাকিয়ে আছে। মিনা নাস্তার ট্রে টা ডেস্কের উপর রেখে গম্ভীর কন্ঠে রূপের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,
—-“মারু ফ্রেশ হয়ে বের হলে দুজন মিলে নাস্তা করে নিও। সন্ধ্যা হতে বেশি দেরি নেই।”
—-“ওকে আপু।”
মিনা দরজার কাছে গিয়ে আবারো পিছু ফিরে বলল,,,,,,,
—-“দরজা কিন্তু ভুলে ও ভিতর থেকে লক করবে না।”
রূপ দাঁত বের করে হেসে বলল,,,,,
—-“ওকে আপু করব না। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন।”
মিনা রুম থেকে বের হয়ে গেলো। রূপ যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচল। মুহিত বেশ বুঝতে পেরেছে রুমে কেউ এসেছিলো এজন্যই রূপ উল্টো পাল্টা বকে কলটা কেটে দিয়েছে। মৃন্ময় এখনো অপেক্ষায় আছে মারুর ভয়েসটা শোনার জন্য।
এর মাঝেই মারু ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এলো। রূপ মারুকে টেনে ব্যালকনিতে নিয়ে দাঁড় করালো। মৃন্ময়ের নাম্বারে কল লাগিয়ে রূপ মারুর কানে ফোনটা ধরে বলল,,,,,,
—-“শর্ট কাটে কথা শেষ করবি। আর খুব আস্তে আস্তে কথা বলবি। আমি দরজার কাছে আছি। সিগন্যাল দিলেই কলটা কেটে দিবি।”
মারু মুচকি হেসে মাথা নাঁড়ালো। রূপ দেরি না করে দৌঁড়ে দরজার কাছে এসে দাঁড়ালো। মৃন্ময়ের নাম্বারে কল ঢুকার সাথে সাথেই মৃন্ময় কলটা পিক করে বেশ উওেজিত কন্ঠে বলে উঠল,,,,,,
—-“মারু?”
মারু লজ্জা মাখা কন্ঠে বলল,,,,,
—-“হুম মৃন্ময়।”
—-“তুমি ঠিক আছো তো মারু? আমি চলে আসার পর কেউ তোমাকে মার ধর করে নি তো?”
—-“না মৃন্ময়। কেউ আমার গাঁয়ে হাত তুলে নি।”
—-“আমার এটা কথা ভেবে অবাক লাগছে যে, তোমার মতো এক্টা ধূর্ত মেয়ে কেনো এতো টর্চার সহ্য করছ? কেনো নিজের পক্ষে প্রটেস্ট করছ না?”
মারু তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,,,,,,
—-“আপনি তো মেয়ে না মৃন্ময়। মেয়ে হলে বুঝতেন। পৃথিবীতে সবার সাথেই ধূর্ত গিরি দেখানো যায়। তবে ফ্যামিলির সাথে দেখানো যায় না। এক্টা মেয়ের দুর্বলতাই হলো তার ফ্যামিলি। ফ্যামিলির বিরুদ্ধে গিয়ে মুখ খোলার সাহস আমাদের নেই। বিশেষ করে গ্রামীণ মেয়েদের। গ্রামীণ মেয়েদের সমাজ মেনে চলতে হয়। ফ্যামিলির কথা চিন্তা করে নিজেদের দমিয়ে দিতে হয়। তবে আমি নিজেকে আর দমিয়ে রাখব না। ভালোবাসা কোনো অন্যায় না। আমি ভালোবেসেছি অন্যায় করি নি। ভালোবাসার মানুষকে জীবন সঙ্গি হিসেবে চাওয়াটা অন্যায় না। বরং এটা অন্যায়, মনে একজনকে রেখে আরেকজনের সাথে সংসার করাটা।”
—-“দেরিতে হলে ও বুঝেছ আমি এতেই শান্তি। এই মৃন্ময় ই হবে তোমার জীবন সঙ্গী।”
—-“ভালোবাসি মৃন্ময়। খুব খুব খুব ভালোবাসি।”
—-“ছোট ভাই সামনে আছে। উওর দেওয়াটা কি ঠিক হবে?”
—-“তাহলে চুমো দিন। উওর দিতে হবে না।”
—-“এ্যাঁ।”
—-“এ্যাঁ না হ্যাঁ। তাড়াতাড়ি দিন। হাতে বেশি সময় নেই।”
#চলবে,,,,,,,,,,,,,
(ধামাকা পর্বের জন্য কে কে ওয়েট করছেন? হাত-পা তুলুন।)
#চলবে,,,,,,,,,,,