এক চিলতে রোদ ২ পর্ব -২৪+২৫

#এক_চিলতে_রোদ-২
#Writer_Nondini_Nila
(কপি করা নিষেধ)

২৪.

লিনা চলে গেছে কাল। আমি ওর সাথে খুব একটা কথা বলিনি। ওর এই বিহেভিয়ার আমার খুব অপছন্দ ওর জন্য আমি আম্মুকে কাছে খুব বকা খেয়েছি। এতো বড় বিপদে পরেছিলাম। আম্মুর কাছে সেদিন মিথ্যা বলে ধরা খেয়ে গেছিলাম। কি একটা পরিস্থিতিতে পরেছিলাম আমি। ধরা খেয়ে ভয়ে লিনা কেঁদেই দিয়েছিলো। বকা খাওয়ার আগেই ও কেঁদে উঠে। আর আমি চোরের মত মুখ করে এদিক ওদিক তাকাতে ব্যস্ত হয়ে পরি। কোন দিক দিয়ে পালাবো ভাবছিলাম। আমি ইহানের দিকে তাকিয়ে দেখি মুখ টিপে হাসছে। আমি ভয়ার্ত চোখে একবার তাকিয়ে আম্মুর দিকে তাকায়,

‘ আমার মেয়ে তো কখনো আমাকে মিথ্যা বলেনা আজ কেন বললি? এটা আমি তোর থেকে আশা করিনি।’

আমি ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘ সরি আম্মু। তোমাকে মিথ্যা বলার কোন ইচ্ছা আমার ছিলো না। কিন্তু লিনার জন্য আমি বলতে চেয়েছিলাম। ওতো চলেই যাবে তার আগেই তোমার চোখে ওকে খারাপ করতে চাইনি। তাই আমি…

আম্মুর ধমক খেয়ে কথা বন্ধ হয়ে যায়। আমি কাচুমাচু মুখ করে দাঁড়িয়ে আছি। লিনা আম্মুর পায়ে পরে কান্না করে দিলো।

‘ ফুপি বাবাকে কিছু বলো না। আমি আর জীবনে ওই ছেলের সাথে কথা বলবো না। এই তোমায় ছুঁয়ে কথা দিচ্ছি। বাবা এসব জানলে আমাকে মেরেই ফেলবে। বাবা কতো রাগি তুমি তো জানো বলো।’

কাকুতি মিনতি করতে লাগলো। আমি ওর অসহায় মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। আম্মু লিনাকে কঠিন কিছু কথা বলছে লিনা মাথা নিচু করে হ্যা বলছে।

ইহান এই সুযোগে আমার পাশে দাড়িয়ে ফিসফিস করে বলল, ‘ বাব্বারে কি সুন্দর একটা কাহিনী বানিয়ে ফেলেছিলে। তোমাকে ধরা কারো সাধ্য হতো না। যদি না এখানে আমি থাকতাম। জানতেই পারতাম না এতো সুন্দর গুছিয়ে গল্প বানাতে পারো। তুমি কিন্তু লেখক হতে পারবে।’

ইহানের টিটকারি মারা কথা শুনে আমি কড়া চোখে তাকালাম। তারপর মুখটা অসহায় করে বললাম,

‘ আপনি এই ভাবে আমাকে ফাঁসিয়ে দিলেন।’

‘আগে যদি জানতাম তুমি এমন সুন্দর একটা বানানো কাহিনী বলার প্লান করেছেন তাহলে…

‘তাহলে কি?’

‘থাক তাহলে আর শুনতে হবে না।বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে কতবার যে ঘুরতে গেছো। আর মাকে এমন কাহিনী শুনিয়ে বোকা বানিয়েছো সেটাই ভাবছি!’

‘একদম বাজে কথা বলবেন না! আমি আম্মুকে কখনোই মিথ্যে কথা বলি না। আজকে বলতাম না কিন্তু লিনা মিথ্যে বলে দিয়েছে আগে। আর আমাকে অনুরোধ করেছে ওকে বাঁচিয়ে দেবার জন্য এবারের জন্য। এজন্য আমি এটা করেছিলাম। কিন্তু কিছুই হলো না। মাঝখান থেকে আমি মিথ্যেবাদী প্রমাণ হয়ে গেলাম। আপনাকে এখানে আনা টাই আমার ভুল হয়েছে।বাঁচানোর জন্য আনলাম উল্টা আপনি আমাকে আরো ফাঁসিয়ে দিয়েছেন। চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে আমাদের নাকানিচোবানি খাওয়া টা দেখছেন।’

এদিকে আম্মু মামাকে কল করার জন্য ফোন হাতে নিয়েছে। লিনা পারেনা অজ্ঞান হয়ে যায়। কেঁদে কেঁদে আম্মুকে কত কথাই না বলছে। আম্মু মানছে না। উল্টা বলে যাচ্ছে এখানে প্রেম করার জন্য এসেছি। ছেলেদের সাথে দেখা করছিস। এই বয়সে এতোসব। আবার আজকে তার সাথে দেখা করতে গেছিলি। ঊষার আজ কতো বড় বিপদ হয়েছিলো। সময় মত ইহান লক্ষী ছেলেটা না আসলে কি হতো আমার মেয়ের। তুই যে ছেলেটার সাথে কথা বলছিস সে ও তো খারাপ হতে পারে। তাহলে তোর ওতো বিপদ হতে পারে। আমার বাসাই এসে এসব করে বেড়াচ্ছি। এইসব জানার পর আমার ভাইয়ের সাথে আবার আমার সম্পর্ক খারাপ হোক সেটা আমি চাই না। এখন এই মুহূর্তে আমি সব জানিয়ে দেবো। যার মেয়ে সেই শাসন করুক।

লিনা দৌড়ে এসে আমাকে বললো,’ ঊষা ফুপিকে বলনা আব্বা কে জেনো এসব না জানায়। এইসবের একটা কথা যদি আব্বার কানে যায়। আমাকে আর পড়ালেখা করতে দেবে না রে‌। লিমা আপুর আগে আমাকে বিয়ে দিয়ে দিবে। আব্বু কত রাগী জানিস। আমাকে মেরে হাড্ডি ভেঙ্গে দেবে।আমি কথা দিচ্ছি জীবনে আর তুষারের সাথে কথা বলবা না‌। এক্ষুনি আমি ওর নাম্বার ব্লক করে দেবো। আর কোনদিন কোন ছেলের সাথে কথা বলব না। এবার মতো ক্ষমা করে দিতে বল না ফুপিকে। আমি আর কোনদিন কথা বলব না প্লিজ প্লিজ।’

কেঁদে-কেটে লিনার অবস্থা একদম নাজেহাল খুব ভয় পেয়েছে ভয় সারা শরীর কাঁপছে ওর। আমি ইহানের দিকে তাকালাম। আমি এখন কিছু বললে আম্মু আমাকে মেরে দেবে। আমার কথা তো শুনবে না তিনি ফুঁসছে।

‘এভাবে তাকিয়ে আছ কেন? আমার হেল্পের প্রয়োজন?’

‘হুম’ অসহায় মুখ করে বললাম।

‘ সরি আমি আর হেল্প করতে পারবো না। এমনিতেই আজ অনেক হেল্প করেছি। বিনিময়ে আমি তো কিছুই পেলাম না। আমার কাজ শেষ এবার গুড বাই। আমার লেট হয়ে গেছে।’

‘প্লিজ আম্মুকে একটু শান্ত করুন। মামাকে বললে সত্যিই খুব খারাপ হবে। লিনাকে ক্ষমা করে দেওয়াটা উচিত। ও ত ভুল করেছে আর এখন ভুল বুঝতে ও পারছে। এখন তোকে ক্ষমা করা উচিত তাই না।’

‘ অতো শত আমি বুঝিনা। আমি চলে যাচ্ছি।’

ইহান আমার কথা সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে চলে যাওয়া ধরলো। আমি ছুটে গিয়ে তার হাত ধরলাম। এদিকে আম্মুর মামার সাথে কথা বলছে এখন ও লিনার ব্যাপারটা বলে নাই। লিনা ফ্লোরে বসে কাঁদছে।

আমি ইহানের হাত ধরে অনুরোধ করলাম, ‘আপনার সব কথা আমি শুনবো প্লিজ আম্মুকে বলা থেকে বিরত করুন!’

ইহান মুখে শয়তানী হাসি দিয়ে আম্মুর কাছে গিয়ে ফোনটা টেনে নিয়ে বন্ধ করে দিলো।

‘এটা কি করলে তুমি ছেলে।’ রেগে বললাম আম্মু।

‘ আন্টি আপনি একটু শান্ত হোন। রাগের মাথায় কিছু করবেন না। পড়ে না আপনার নিজের‌ই আফসোস করতে হয়। এমন কিছু করে অবশ্যই পরে আফসোস করতে চান না!’

‘কি বলতে চাইছো তুমি? আমার মেয়েকে দুই বার তুমি বাঁচিয়েছো বিপদ থেকে। আমি তোমার উপর অনেক কৃতজ্ঞ। তুমি সত্যিই খুব ভালো একটা ছেলে। আজ কালকার দিনে এমন ছেলে পাওয়া মুশকিল। তাই বলে তুমি আমার কোন কাজে বাধা দিতে পারো না।’

‘আন্টি আমার কথাটা শুনুন। আমি আপনার কোন কাজে বাধা দিয়ে বেয়াদবি করতে চাইনা।লিনা কাজটা খুবই খারাপ করেছে। এভাবে ওর ঊষাকে একা রেখে কোথায় যাওয়া উচিত হয় নাই। আবার অপেক্ষা করতে বলেছিলো। কোনটাই আমি ওকে সাপোর্ট করছি না। কিন্তু ও ভুল করে সেটা বুঝতে পারছে ভুল শুধরে নিতে চাচ্ছে। আমার মনে হয় আপনার লিনাকে ক্ষমা করা বিষয়টা আরেকটু ভাবা উচিত। ঠান্ডা মাথায় একটু ভাবুন তারপর না হয় সিদ্ধান্ত নেন কি করবেন। এভাবে রাগের মাথায় আরেকজনকে এসব বলে তাকে চিন্তায় ফেলা আমার মতে ঠিক হবে না।’

ইহান একদুমে তুমি কথাগুলো বলে থামল। আমি ভয়ার্ত চোখে আম্মুর দিকে তাকিয়ে আছি। আম্মু ইহানের কথা মেনে নেয় যেন।
চিন্তিত চোখের আম্মুর দিকে তাকিয়ে আছি। ইহান আরো কি কি যেন বলতে লাগলো। আম্মু মুখে রাগী ভাবটা কমতে লাগল। আম্মু ঠান্ডা হয়ে সোফায় বসে কি যেন ভাবছে। ইহান দিকে তাকিয়ে ইহানকে ও বসতে বললো।

এসব বিষয়ে আর কথা বললো না। আম্মু একবার আমার আর লিনার দিকে তাকিয়ে রুমে যেতে বললো। আমার সুরশুর করে রুমে চলে এলাম।
আমি দরজায় উঁকি মেরে দেখলাম ইহান আর আম্মু কি যেন বলছে। ইহান না না করে উঠে দাঁড়ালো তারপর চলে গেল।
আমি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ইহানের যাওয়া দেখছি। আজ এক অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করছে ইহানের জন্য। তার জন্য আমি এখন সুস্থ আছি। কত বড় বিপদ থেকেই না তিনি আমাকে বাঁচালো। আম্মুর সাথে কথা সুন্দর বিহেভ করল। ছেলেটা সত্যি খুব ভালো। আমার মনে অজানা এক ভালো লাগার অনুভূতি হতে লাগলো। আমি এক দৃষ্টিতে ইহানের দিকে তাকিয়ে আছি। হঠাৎ মনে পরলো ইহানের জ্যাকেটটা তো আমার কাছে। ইহানের পরনের একটা কালো টি শার্ট। হেলেদুলে হেঁটে যাচ্ছে। গেট ক্রস করার আগে একবার পেছন দিকে তাকালো। তাকিয়ে একটা হাসি দিলো। আমি নির্লজ্জের মতো তাকিয়ে ছিলাম। ইহান বাইকে চড়ে চলে গেল। আমি ওর চলে যাওয়া দেখে মুখ মলিন করে চলে এলাম। আমি চাইলে চিৎকার করে জ্যাকেটের কথা বলতে পারতাম কিন্তু বললাম না।

আম্মু লিনাকে কড়া করে শাসন করেছে। এমন কাজ আবার করলে তখন আর ক্ষমা করবে না। লিনা মাথা ছুঁয়ে কথা দিয়েছে আর কখনও কোন ছেদের সাথে কথা বলবে না। আমার সাথে আম্মু কথাই বলেনা দুইদিন ধরে। কাল লিনা চলে গেছে। এখন আমি বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে আছি। আম্মুকে দেখলাম কাথা হাতে সোফায় বসে আছে। আমি সেদিকে এগিয়ে গিয়ে পেছন থেকে আম্মুকে জড়িয়ে ধরলাম।

আম্মু কোন রিয়েক্ট করলো না। আমি আহ্লাদ গলায় বললাম,

‘আম্মু প্লিজ তুমি আমার সাথে কথা বল! তুমি কথা না বললে আমার একটু ভালো লাগে না। কিচ্ছু করে শান্তি পায় না!তুমি তো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড বলো সবার আগে তুমি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। তোমার সাথে আমি এমন কোন কথা আছে যা অস্বীকার করেছি। বল! যত প্রপোজ পেয়েছি।সব তোমার কাছে বলেছি। আমি কখনো কোনো বিষয় তোমার কাছে গোপন করেনি। কিন্তু লিনার বিষয়টা বলে শুধুমাত্র তোমাকে চিন্তায় ফেলতে চাইনি। আর তুমি লিনা কে বকা দিবে। দুই দিন পর ও চলে যাবে। এজন্য ওকে তোমার চোখে খারাপ করতে চাইনি। ও ভয় পেয়ে অনেক অনুরোধ করেছিল। আমি ফেলতে পারিনি।না হলে তোমাকে মিথ্যে বলার কথা ভাবতামও না। আর কখনো কোন কিছুর বিনিময় তোমাকে মিথ্যে বলব না । এবারের মত ক্ষমা করে দাও। প্রমিস করছি।’

.
লিনা যাওয়ার তিনদিন কেটে গেছে। বাসায় বসে বসে থেকে বা কার ভালো লাগে আমারও ভালো লাগেনা। ফেসবুক এ রিমা তুলি ওদের সাথে কথা হয়েছে। ওরা সবাই ওদের নানু বাড়ি আছে। আমি নানু বাড়ি যেতে চাইছিলাম কিন্তু আম্মু যেতে দেয় নি। আম্মু এখন যেতে পারবেনা এজন্য আমাকে একটা ছাড়বে না। আমিও আর জোর করিনি। আমার মনটা খারাপ হয়ে আছে। কেন জানি না। ইহানকে মিস করেছি। কেন করেছি তাও জানি না। সেদিনের পর থেকে অদ্ভুত ভাবেই ইহানকে মনে পরে। তাই তো বেহায়ার মত ফোন করে বসেছিলাম। কিন্তু ইহান পাত্তা দেয়নি। উল্টা ভাব দেখিয়েছে।

সেদিন ফোন দিয়ে সালাম দিলাম। আমার বুকের ভেতর ধুকপুক করছিলো। ইহান সালামের উত্তর দিয়ে বললো,

‘ কি দরকারে কল করেছো?’

আমি বললাম, ‘ না এমনি দিলাম। কেন আপনি কি বিজি?’

সাথে সাথে ওপাশ থেকে ইহান ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলল, ‘ হ্যাঁ আমি খুব বিজি আছি দরকার না থাকলে ফোনটা রাখি।’

আমার মুখটা অপমানে লাল হয়ে গেছিলো। দরকার ছাড়া কি কল করা যায় না।কি মনে করে উনি নিজেকে আমার সমস্ত দরকারে উনি এছাড়া কি সাহায্য করার মত আর কেউ নাই? ভাব দেখলে বাঁচি না। উনাকে নিয়ে ভাবাটাই আমার উচিত হয়নি।এইভাবে কল কেটে দিলো। রাগে ছুঁড়ে ফোন বিছানায় ফেলে দিয়েছিলাম।

মনটা ভালো করার জন্য চলে এলাম ছাদে। রেলিং এ দাড়িয়ে আশেপাশে তাকিয়ে আছি। হঠাৎ পাশের ছাদে চোখ গেল মুনিয়া আপু আর একটা ছেলে খুব ক্লোজ হয়ে বসে কি যেন কথা বলছে। আমাদের পাশের বিল্ডিং তাদের আমি চোখ ছোট ছোট করে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে দুজনের হাত আবদ্ধ করা। মুনিয়া আপু খুব পর্দাশীল মেয়ে। অনার্সে পড়ে। সব সময় হাত-পায়ে মোজা ও মুখ ঢাকা থাকে। তিনিও যে প্রেম করে আর এইভাবে বয়ফ্রেন্ডের সাথে গল্প করতে পারে জানা ছিলনা। মাথায় হাত দিয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
আমার দৃষ্টি ঘুরে নিচের দিকে গেলো একটা কাগজ আলাদা গায়ে কেউ ছুড়ে মারতেই..
আমি চমকে কাগজ হাতে নিচের দিকে তাকালাম। কে এন অসভ্যের মত কাগজ ছুড়ে মারল??
#এক_চিলতে_রোদ-২
#Writer_Nondini_Nila
(কপি করা নিষেধ)

২৫.

কুচকানো কাগজের বলটার হাতে নিয়ে নিচের দিকে উঁকি ঝুঁকি মারছি আমি। এই কাগজ কে ছুঁড়ল আমার দিকে? কাউকে দেখছি না। ছুড়ে মেরে লুকিয়ে পড়েছে। চিন্তিত চোখে কাগজ টার দিকে তাকিয়ে আছি। আদিম যুগের মত কি কাগজে প্রেমপত্র লিখে ছুড়ে মারল নাকি? আঙ্গুল চালিয়ে বল কাগজটা মেলে ধরলাম। খুব বড় না ছোট‌ই কিন্তু তার মাঝখানে দুইটা শব্দই লেখা আছে। আমি ভ্রু কুঁচকে লেখাটার দিকে তাকিয়ে আছি।
কাগজে লেখা আছে,

‘ নিচে আসো ‘

লেখাটা দেখে আমি আরো হতবিহ্বল হয়ে গেলাম। নিচে আসো মানেটা কি? এটা কে লিখে পাঠালো আমাকে! আর নিচেই বা যেতে বলল কেন? আর আসেপাশে তো তেমন কাউকে দেখতে পাচ্ছি না। কি অদ্ভুত!
এমন অদ্ভুত কান্ড কি করলো! গিয়ে কি দেখব!সন্ধ্যা হয়ে আসছে এদিকে। এখন আবার নিচে যাব! যেতেও মন চাচ্ছে! কে এমন কান্ড করলো দেখার জন্য! আবার আম্মু কিছু যদি বলে! আগের মত আম্মু আর আমাকে স্বাধীনতার দেয়নি। কয়েক দিন ধরে বলে দিয়েছে বাসা থেকে বের হওয়া নিষেধ। সেদিনের জন্য আম্মু তো আমার উপর খুব রাগ ছিল। এখন মনটা ভালো হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে খুব কঠিন। আমাকে নিয়ে কোন রিক্স নিতে রাজি না তিনি।
কিন্তু নিচে যাওয়ার ইচ্ছাকে ধমাতে পারলাম না। নিচে এসে দেখলাম আম্মু বাইরে না রুমে বসে কি যেন করছে এই সুযোগ আম্মু মাগরিবের নামাজের আগে বের হবে না মনে হচ্ছে আমি। তারাতাড়ি মেইন দরজা খুলে দরজা চাপিয়ে বেরিয়ে এলাম বাসা থেকে। দারোয়ান চাচার সাথে হাসি বিনিময় আর কেমন আছেন চাচা বলে গেটের বাইরে পা রাখতেই কেউ ছুটে এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে হাঁপাতে লাগলো। তাকিয়ে দেখি ইহান! ইরানের কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছে। খয়রি শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত গোটানো। ফর্সা হাতে লোমগুলো লেপ্টে আছে শরীরে ঘামের জন্য। মনে হচ্ছে যুদ্ধ করে এসেছে কোথাও থেকে। আমি হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে আছি ওর দিকে। ঘামা ত্বক ভাবে যে কাউকে এত সুন্দর লিখতে পারি হ্যাঁ কি না দেখলে জানতে পারতাম না।
রুমাল বের করে ইহান কপালের ঘাম মুছে আমার হাত টেনে ধরলো। আমি চমকে উঠে হাতের দিকে তাকালাম। কিছু বলতে ভুলে গেছিলাম। এতোক্ষণ হা করে ইহানের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। স্পর্শ পেতেই চমকে উঠলাম।

কিছু বলার আগেই ইহান আমাকে নিয়ে হাঁটতে লাগলো। আমি অনেক কথা বলতে চাইছি। এসব কি হচ্ছে আমাকে ইহান টেনে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? কেন নিয়ে যাচ্ছে? উনি এখানেই বা কেন? আর চিঠি ওয়ালা ক‌ই? আচ্ছা চিঠি কি ইহান দিয়েছে? এতো এতো প্রশ্ন আমার মস্তিষ্কে ঘুরপাক খাচ্ছে কিন্তু কিছুই মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না। আমি রোবটের ন্যায় ইহানের সাথে হেঁটে যাচ্ছি। কতোদিন পর দেখলাম। এই কয়দিন তাকে আমি অসম্ভব মিস করেছি। আর এত্ত মিস করার পর আচমকা চোখের সামনে দেখে আমি স্তব্ধ হয়ে গেছি। অতিরিক্ত উত্তেজনায় আমি কথা বলতে ভুলে গেছি।

ইহান আমাকে নিয়ে জামাল কাকার চেয়ার ছোট্ট দোকানে এসে থামলো। আর আমাকে টেনে নিয়ে বসিয়ে দিলো ব্রেঞ্চে। আর নিজেও আয়েশ করে বসে কাকার কাছে চা চাইলো দুই কাপ। আমি ইহানের দিকে দৃষ্টি রেখেই বললাম,

‘ এসব কি হচ্ছে বলুনতো??’

ইহান উওর দিলো না কাকার কাজ থেকে পানি নিয়ে মুখ ধুয়ে দিলো‌। আর বললো,

‘ কি হচ্ছে?’ ইহান মুখ মুছতে মুছতে আমার দিকে তাকিয়ে বললো।

আমি বোকা চোখে তাকিয়ে বললাম, ‘ কি হচ্ছে বুঝছেন না আপনি? আপনি এখানে কি করছেন? আর আমাকে এখানে নিয়ে এলেন কেন? কিছু তো বুঝতে পারছি না আমি। সব আমার মাথা উপর দিয়ে যাচ্ছে।’

ইহান আমার কথা শুনে বললো, ‘কত হেল্প তোমার বিনিময়ে একটা ধন্যবাদও দিলিনা। তাই নিজেই ধন্যবাদ ও চা খেতে চলে এলাম।’

‘ এ্যা..

ইহান আমার মুখের এক্সপ্রেশন দেখে হো হো করে হেসে উঠলো। আর বললো, ‘ কি হলো হা করে আছো কেন?’

আমি মুখ বন্ধ করে কটমট করে তাকিয়ে আছি।

‘ ওই কাগজ টা আপনার ছিলো?’

ইহান উত্তর দিল না। চা দিতেই তা হাতে নিয়ে আয়েশি ভঙ্গিতে বসে চুমুক দিতে লাগল। আমি উত্তরের আশায় তার দিকে তাকিয়ে আছি কিন্তু আমাকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে নিজের কাজে মগ্ন হয়ে আছে।

‘ আমার দিকে তাকিয়ে না থেকে ‘চা’ খাও! শরবত হয়ে গেল তো!!’

‘আপনি আমার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন না কেন?’

‘আমি খুব ক্লান্ত! আমাকে দেখে বুঝতে পেয়েছ নিশ্চয়ই।তাই এখন শান্তিমতো একটু চাও খেতে দাও।’

‘ আপনি এতো টায়ার্ড কেনো? কোন রাজকার্য করে এসেছিলেন শুনি?

‘আমি তোমার থেকে ধন্যবাদ ট্রিট হিসেবে চা খেতে এসেছি! তুমি নিজে থেকে আর ট্রিট দিবে না। তাই এইভাবে নিয়ে আসতে হলো।’

‘আপনি আমাকে কৃপণ বলছেন? আপনিই তো লাপাত্তা হয়ে গেছিলেন। কোন খোঁজ খবর নাই। এখন হঠাৎ করে এসে আমাকে কৃপণ বলেছেন?’ নাক ফুলিয়ে বললাম।

আমার কথা শুনে ইহান হো হো করে হেসে দিলো। আমি গাল ফুলিয়ে ইহানের দিকে তাকিয়ে আছি। ফট করেই হাসতে হাসতে ইহান আমার গাল টেনে দিলো। আর বললো,

‘ গাল ফুলিয়েছ কেন?’

আমি চমকে পিছিয়ে গালে হাত দিয়ে বললাম, ‘ এটা কি হলো আপনি আমার গাল টানলেন কেন?’

‘ পিচ্চি রা গাল ফুলিয়ে অভিমান করলে। দেখতে খুব ইনোসেন্ট কিউট লাগে‌ দেখতেই। তখন গাল না টেনে থাকতে পারিনা গো।’

আমি ইহানের কথা শুনে হতবিহ্বল হয়ে গেলাম। আমাকে পিচ্চি বললো। আমাকে কোন দিক দিয়ে পিচ্চি লাগে। আমি তো যথেষ্ট বড়। আর কয়েকদিন পরে কলেজের স্টুডেন্ট হয়ে যাব‌। আর উনি আমাকে পিচ্চি বলছে! নিজের দিকে তাকিয়ে আছি আজকে আমি পড়ে আছি নীল প্লাজু, গোলাপি টপস ও ছোট জর্জেট গোলাপি ওরনা। পেছনে থেকে সামনে ঝুলিয়ে রেখেছি।
চুল গুলো খোলায় আছে বাসায় বেশির ভাগ সময় চুল খোলা রাখা হয় আজকে চুল খোলা রেখে ছাদে গিয়েছিলাম। সেখান থেকেই তো ছুটে বাইরে এসেছি তাই চুল বাধা হয়নি। কোমর পর্যন্ত চুল আমার পিঠে ছরিয়ে আছে আচ্ছা এই এলোমেলো চুলের জন্য কি আমাকে পাগল লাগছে দেখতে? আমি চায়ের কাপ পাশে রেখে দুই হাতে এলোমেলো চুল ঠিক করতে লাগলাম। না পেরে হাত খোপা করার চেষ্টা করছি তখন ইহান বলে উঠলো,

‘অগোছালো চুলে পিচ্চি তোমায় লাগছে বড়‌ই সুন্দরী। এইভাবেই থাকতে দাও না খারাপ লাগছে না তো পিচ্চি!!’

আমার হাত থেমে গেলো আমি কটমট করে ইহানের দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘বারবার আমাকে পিচ্চি বলছেন কেন? আমাকে কোন দিক দিয়ে আপনার পিচ্চি লাগে!’

‘ সব দিক দিয়েই তো লাগছে!’ বলেই পা থেকে মাথা পর্যন্ত পরোক্ষ করতে লাগলো।

ইহানকে এভাবে তাকাতেই দেখে আমার খুব অস্বস্তি হতে লাগলো।

ইহান উঠে দাঁড়িয়ে বললো, ‘ চলো সন্ধ্যা হয়ে গেল।’

সন্ধ্যা হয়ে গেল শুনতেই ধরফরিয়ে উঠে দাঁড়ালাম।আমার কথা তো মনেই ছিল না কখন বেরিয়ে এসেছিস অন্ধকার হয়ে এসেছে আমি এখানেই বসে নিজের ভাবনায় বিভোর হয়ে আছি।

হাঁটতে হাঁটতে আমি ইহানের সাথে বাসায় চলে এলাম। ইহানের পাশে হাটতে কেন যেন খুব ভালো লাগছিলো।মনে হচ্ছিল সময়টা যদি এখানেই থেমে যেতো। এভাবেই শত শত জনম ইহানের পাশে হাঁটতে পারতাম খুব ভালো হতো। আমি একটু পরপরই আড়চোখে অনেক দিকে তাকাচ্ছিলাম। কিন্তু ইহান একবার ও আমার দিকে তাকালো না। তার দৃষ্টি শুধু ফোনে নিবদ্ধ ছিলো।

গেটের ভেতরে ঢোকার আগে ইহান আমাকে ডেকে বলেছে,
‘বাই নেক্স টিট খুব তারাতারিই নেব।’

আমি কিছু বলবো তার আগে একটা বাইক এলো। বাইকে তার বন্ধু কে বসে থাকতে দেখলাম‌। আমার চোখের সামনে ইহান বাইকে উঠে চলে গেল। আমি কিছু বলার সুযোগই পেলাম না। আমি হতভম্ব হয়ে কতক্ষণ ঐখানেই দাঁড়িয়ে রইলাম আবার ট্রিট নেবে মানেটা কি!!

#চলবে……
#চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here