এক ঝাক জোনাকির আলো পর্ব ৩৮

#একঝাঁক~জোনাকির~আলো🍁
#writer~হাফসা~আলম 🍂
.
.
৩৮.
______________________
সম্পূর্ন বাড়ি হলুদ সাদায় সাজানো হয়েছে।বাড়ির সামনে বিশাল খালি জায়গা।দু’পাশ ভাগ করা মাঝে পিছঢালা রাস্তা।নিশানদের গায়ে হলুদ একপাশে করার জন্য বলা হয়েছিলো কিন্তু তা পরে ক্যান্সেল হয়ে তারা আলাদা ভাবে করবে বলে ঠিক করে।আগে মেয়েদেরটা হবে পড়ে ছেলেদের।এটা অবশ্য নিভ্রর ফ্রেন্ডদের আইডিয়া। তারা দুটোতেই যোগ দিতে চায়। বাড়ির ভিতরে যেমন হলুদ আর সাদায় সোজ্জাইত করা হয়েছে একুই ভাবে বাহিরেও হদুল সাদার পর্দা ঝুলানো হয়েছে।বাড়িময় মানুষের গিজগিজ শব্দ।মানুষের অভাব যেনো নেই।সব হাই সোসাইটির উচ্চবিত্ত এমন নয়।অনেক মধ্যবিত্ত বন্ধুও মাহবুবদের আছে।সবাই একসাথে একুই শ্রেণীতে মিলিত হয়েছে।চারপাশে আনন্দের ঢেউ।

মেয়েরা হলুদ শাড়ি সাথে সাদা ফুলের জুয়েলারি আর ছেলেরা হলুদ পাঞ্জাবী সাথে সাদা উড়না পড়েছে।সাফার শাড়ি নিভ্র নিজে পছন্দ করে কিনেছে আরিফের সাথে শপিং মলে গিয়ে।সেই সময় আরিফ একটা ভয়ংকর কান্ড করে ফেলে।তারও একটা হলুদ শাড়ি পছন্দ হয়। সেটা কিনে আরিফ অনেকসময় ভাবে এটা কাকে দিবে।নিভ্র বুঝতে পেরে বলে,
—” নীলাকে দিতে পারো।হতে পারে তোমার উপড় আর রাগ করে থাকবে না।এমনেও তুমি ফাউলল কথা বলে বেচারির মেজাজ খারাপ করে রেখেছ।এখন এটা দিলে ভালোই হবে।”
আরিফ চট করেই হেঁসে বলে,
—” স্যার একদম ঠিক কথা বলেছেন।ওকেই দিবো।
নিভ্র হেঁসে একটু উচ্চশব্দে বলে,
—” ওওওওওও”
আরিফ নিজের কথায় লজ্জা পেয়ে মাথা নামিয়ে নেয়।

সাফার জন্য নিভ্র হলুদের মাঝে সবুজ পাড়ের শাড়ি নিয়েছে।আঁচল সবুজ।আর সবুজের মাঝে হালকা শোনালি কাজ করা।রাফা গোমড়া মুখ করে বলে,
—” ভাইয়া আমার জন্য একটা কেনো আনলেনা।তোমার পছন্দ কত বেস্ট।এই সিম্পল কাজের শাড়ি এত সুন্দর যে আমার এই কাতানের হলুদ শাড়ি ভালোই লাগছে না।”
নিভ্র মুখ কাচুমাচু করে বলে,
—” তোকে পড়ে অনেক গুলো কিনে দিবে।”
বলেই রুম থেকে বেড়িয়ে পড়ে।রাফা সহ মেয়েরা সবাই হেঁসে উঠে।সাফা লজ্জায় জড়োশর হয়ে বসে থাকে।মাহির সারা শরীর যেনো জ্বলে যাচ্ছে। কালকের রাতটা আসুক সে বুঝাবে সে কি।মনে কথাটা ভেবে মাহিও হাঁসে সবার সাথে।

সবাই রেডি হয়ে নিচে যায়।খোলা আকাশের নিচে হলুদ জামার মানুষ গুলোকে দারুন লাগছে।চারপাশের সবুজ গাছ, উপড়ে নীল আকাশ, আর মাঝে একঝাঁক হলুদ সাদায় আবৃত তরুণতরুণী। অসাধারণ একটা জায়গায় রূপ নিয়েছে সব।তবে সবার থেকে আলাদা নিভ্র।যেখানে সবাই হলুদ পাঞ্জাবি আর সাদা উড়না গলায় ঝুলিয়েছে সেখানে নিভ্র সাদা পাঞ্জাবি আর হলুদ উড়না পড়েছে।সব মেয়েদের আকর্ষন সে।এমন কি ছেলেদের চোখও তার দিকে।সবচাইতে আলাদা তার পার্সোনালিটি। ডান হাতে ঝুলে থাকা লম্বা উড়নাটা বাম দিকের কাধে ছুঁড়ে দিয়ে পিছনে ঝুলিয়ে নিভ্র হেঁটে স্টেজের দিকে যায়।ডান দিকের চুলগুলো হাত দিয়ে ঠেলে দেয়।বডির সাথে ফিট হয়ে আছে পাঞ্জাবি। হাতা উপড়ে তুলে রেখেছে।সাদা হাতে কালো বেল্টের ঘড়ি চিকচিক করছে।নিভ্রকে এভাবে আসতে দেখে ছেলেমেয়ে সবাই চেঁচিয়ে উঠে।বিশাল আয়োজন চারদিকে।রাফাকে হলুদ কাতানে হলুদ পরীর মত লাগছে।নিশান বেচারা অনেক বার ভিডিও কল করেছে একটু দেখার জন্য কিন্তু রাফা কল রিসিভা করলো না।হাতাশ নিশান বাবা মায়ের উপড় বিরক্ত। ওখানে করলে কি হতো।এত ইমেজ ইমেজ করে তারই বারোটা। আর বন্ধু গুলো আর এক হারামির দল।কয়েকটা ছবি দেতে বলেছে তাও দিলো না।দুঃখ কারে বলে কত প্রকার ও কি কি সব নিশানের দিকে তাকালেই বুঝা যাবে।আহ নিশান আহ।😔

হিরন নিভ্রর পাশে এসে হেঁসে হেঁসে দাঁড়ায়। নিভ্র অভ্রর সাথে কথা বলছে।তারা এদিক সেদিক কাজ বুঝাতে ব্যস্ত। অভ্র আজ হলুদ পাঞ্জাবী পড়েছে।নিভ্র অভ্রর দিকে মেয়েরা তাকিয়ে কনফিউজড। কাকে বেশি সুন্দর লাগছে এটাই ভেবে পাচ্ছেনা কেউ।নিভ্রর হাতা ভাজঁ করা পাঞ্জাবি গলায় হলুদ উড়না আর চশমা।যেনো তার সৌন্দর্য দিগুণ করে দিয়েছে।কথার ফাঁকে ফাঁকে অভ্র নিজের ডান হাত দিয়ে নাকের ডগায় চলে আশা চশমাটা উপড়ে তুলে ঠিক করে নিচ্ছে।আর নিভ্রর সাথে কথা বলছে।হিরন নিভ্রর গাঁ ঘেঁষে দাড়াঁতেই নিভ্র চমকে পাশ ফিড়ে তাকায়।হিরনকে দেখে তো তার ঠাটিয়ে চড় মারতে ইচ্ছে করছে।বেয়াদপ ছেলে😒।নিভ্র চোখ রাঙিয়ে তাকায়।তারপর ঝাঁঝালো গলায় বলে,
—” আবার ঝুলাতে হবে মনে হচ্ছে তোকে??”
হিরন ভয় পেয়ে সরে দাঁড়ায়। দাঁত কেলিয়ে হাঁসে। তারপর বলে,
—” আরে না।আমি তো এমনেই কথা বলতে এসেছি।তোমাকে আজ দারুন লাগছে।সেই লেভেলের ওয়াওওও।”
নিভ্র যেনো তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেছে।অভ্র মুখ টিপে হেসেঁ চশমা ঠিক করে।নিভ্র চোখমুখ লাল করে অভ্রর দিকে একবার তাকায়।অভ্র মুখে হাত দেয়🤭🤭।নিভ্র হিরনের দিকে তাকিয়ে তেড়ে যেতে হিরন দেয় এক দৌড়।অভ্র মুখে হাত রেখেই হেঁসে হেঁসে বললো,
—” তোমাকে আজ দারুন লাগছে। ওয়াওওও।”
নিভ্র ঝঙ্কার লাগা কন্ঠে চেঁচিয়ে বলে,
—” অভ্রইয়াাাা…..”
__________________________
সাফা হলুদ সবুজে আবৃত শাড়ি পড়েছে।সাফার মনে কেমন যানি উথালপাতাল হচ্ছে। নিভ্র তার জন্য শাড়ি এনেছে ভেবেই সে খুশিতে আত্নহারা হয়ে যাচ্ছে মনে মনে।সাথে লজ্জাও লাগছে বেশ।মাথায় সিঁথিকাটা খালি জায়গায় সাফা রজনীগন্ধার লম্বা লাইনের পরে কপালে একটা হলুদ গোলাপের টিকলি, কানে গোল করে তৈরি করা রজনীগন্ধার দুল আর এক’হাতে সাদা গোলাপের তৈরি চুড়ি পড়েছে সে।গলা খালি।সবার সাজই এমন শুধু রাফা ভিন্ন।তার মাথা ভর্তি ফুলের টিকলি,হাত ভর্তি রজনীগন্ধার চুড়ি গলা ভর্তি গহনা।সাফার আলাদা ব্যাপার শুধু সেই সাদা গোলাপের তৈরি চুড়ি পড়েছে।সবাই রজনীগন্ধার বানানো পড়েছে।সাফার চুড়ি টা নিভ্রর বলে দেওয়া ফুলে বানানো হয়েছে।সাফা রাফার পিছেই মাঠে এসে দাঁড়ায়। সবার চোখ মেয়েদের সাধারন সাজে আঁটকে আছে।আজ কেউই তেমন সাজে নি বললে ভুল হবে অনেকেই মেকাপ করেছে কিন্তু অনেকে করেনি।

নিভ্র চারপাশে চোখ বুলিয়ে সাফাকে খুঁজে।সাফা সামনে আসা চুল কানে গুঁজতে গুঁজতে নীলার সাথে কথা বলছে।এক কোনে দাঁড়িয়ে তারা।নিভ্র দূর থেকে শাড়ি দেখেই বুঝতে পারে এটা সাফা।শাড়িতে সাফাকে কেমন লাগছে এটা নিভ্র নিজের হা করে থাকা দেখেই প্রকাশ পায়।আকাশ এগিয়ে এসে বাহু দিয়ে ধাক্কা দিয়ে বলে,
—” মশা ডুকে যাবে ভাই!কন্ট্রোল কন্ট্রোল!”

নিভ্র বিরক্তি নিয়ে তাকায়।একবার তাকিয়ে আবার চোখ ঘুড়িয়ে সাফাকে দেখে।আর বলে,
—” কিসের কন্ট্রোল??আমি খারাপ কিছু করছি নাকি??
—” না না ঠিক কাজ করছ তুই।তা ভাই আমিও সিঙ্গেল একটু যদি দেখে টেখে দিতি।মেয়েরা তো তোরেই প্রান লাগাইয়া দেখে।আমাদের পাত্তাই নেই।”
—” তুইও দেখি আরিফের মত শুরু করলি।এখন দেখ নীলার সাথে প্রেম জমে গেছে ওর।তাই শুধুই প্যারা নেওয়ার কি আছে!প্রেম ভালোবাসা বলে আসে না।হুট করেই আসে।তোর জীবনে আসার হলে হুট করেই আসবে।সো তুই অপেক্ষায় থাক।আমি আসি।”

আকাশ গভীর ভাবে ভাবতে থাকে।নিভ্র সবাইকে পাশ কাটিয়ে সাফার পিছনে এসে দাঁড়ায়।সাফা সবাইকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে পিছনে ফিরে।নিভ্রকে দেখে লাজুক হাঁসে। নিভ্র তাকিয়ে থাকে কিছুসময় তারপর বললো,
—” এই শাড়িতে সাফারানীকে আমার আমার লাগছে।”
সাফা হাসলো।মুচকি হাসি দিয়ে বললো,
—” আপনার মানুষ তো আপনার আপনারই লাগবে।”
নিভ্র সাফার মুখে কথাটা শুনে চমকে যায় মুহূর্তেই।নিজেকে সামলেনিয়ে বলে,
—” তাই নাকি।তাহলে তো উত্তর পেয়ে গেলাম।তোমার উত্তর দেওয়ার ধরন কিন্তু মারাত্মক। ”
সাফা মাথা নিচু করে হাঁসে। সামনে পড়া চুলগুলো কানে গুঁজে দেয়।নিভ্র আবার বলে,
—” এভাবে চুল সরালেও মারাত্মক লাগে।এভাবে লাজু হাসলে আরো মারাত্মক, আর মুখ কুঁচকে গালে টোল দৃশ্যমান করলে আরো আরো মারাত্মক। আ..

সাফা থামিয়ে দিয়ে বলে,
—” আপনি দেখি মারাত্মক বলতে বলতেই শেষ হয়ে যাবেন।আমি কিন্তু এতটাও মারাত্মক নই।”
নিভ্র যেনো অবাক হলো এমন ভাব করে বললো,
—” কি বলো??তোমার সব মারাত্মকে ভেসে আমি মরতে বসেছি আর তুমি বলো কিনা তুমি মারাত্মক না।
সাফা চট করে বলে,
—” অবশ্যই আমি মারাত্মক না।”
নিভ্র শান্ত চোখে তাকায়।তারপর বললো,
—” তুমি শুধু মারাত্মক না ভয়ংকর মায়াবী। ভয়ংকর তোমার রূপের ঝঙ্কার।আর এই নীলাভ চোখ তো ঘায়েল করে মনের সব কুল।এত কেনো ভয়ংকর সুন্দরী বলবে??”
সাফা লজ্জায় নত হয়ে যায়।এভাবে বলার কি হল সে বুঝতে পাড়ছেনা। কিছুক্ষণ চুপ থেকে সে বলে,
—” এভাবে দেখবেন না।এগুলো জমানো কারো জন্য??তাই আপনি দেখে শেষ করবেন না।”
নিভ্র চোখ বিচলিত হয়ে পরে।হঠাৎ ধুক করে উঠে বুক।ভয় জড়ানো কন্ঠে বললো,
—” কার জন্য??”
সাফা নিভ্রর চোখে চোখ রেখে বলে,
—” আমি যার হবো।যে আমিময় সম্পূর্নের অধীকারি। তার জন্য।”

কথাটা বলেই সাফা উল্টা ঘুড়ে হাটা দেয়।এখানে দাড়িয়ে থাকা মানেই বিপদ।সে যা কান্ড করছে ইদানীং দেখা যাবে এই ও কিছু করে বসবে।সবার সামনে মান ইজ্জত সব যাবে তাই এখন জায়গা ত্যাগ অতি উত্তম।নিভ্র সাফার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ।তারপর ঠোঁট বাঁকিয়ে এক হাতে সামনের চুল ঠেলে দিয়ে হাঁসে।
_________________
হলুদে মাখামাখি সারা বাড়ির মানুষ।সাফা এটা দেখে বেশ অবাক।সে আগে তেমন কোনো বিয়েতে যায় নি।মা মারা যাওয়ার পর থেকে তার বাবাও তেমন করে নিয়ে যায়নি কোনো আত্নিয়ের বিয়েতে আর তারও যাওয়া হয় নি।তাই এভাবে হলুদ খেলা সে আগে কখনোই দেখেনি।কিন্তু দুঃখের বিষয় তার গায়ে হলুদের বাতাসও লাগলো না।কেউ লাগায়ইনি।এতে সাফার মনে বড্ড দুঃখ জমা হয়েছে।তবে নিভ্রও হলুদ লাগায়নি এটা তার ভালো লাগছে।তারা দুজন বাদে সবাই হলুদে টইটুম্বুর হয়ে আছে।বেচারা অভ্রর অবস্থা তেমন ভালো না।তার গালেও হলুদ লাগিয়ে দিয়েছে রাফা।তবে অল্প।নিভ্রর ধারে কাছে কেউ যায় না।নিভ্রকে অভ্র বাদে দুনিয়ার সবাই ভয় পায়।আর অভ্র এমন কোনো কাজই করে না যা নিভ্রকে রাগাতে পারে বা বিরক্ত করতে পারে।তাই সবাই অভ্রকে বাদ দিয়ে সাফার কাছে এসে হাজির।সাফাকে এক ভয়ংকর গুরুদায়িত্ব দেওয়া হলো।দায়িত্বে কোনো কমতি যাতে না হয় তাও বলা হলো।মানে সাফা যেনো নিভ্রর দু খানা গাল হলুদে ভাসিয়ে দেয়।সাফা প্রথমে নিতে না চাইলেও পরে সে দায়িত্ব নিয়েই হয়।তার দারুন লাগছে।নিভ্র যাকে কিনা সবাই ভয় পায় তাকে সাফা একটুও ভয় পায়না।ইশশ!কি মজার ব্যাপার।সাফা দুহাত ভর্তি হলুদ নিয়ে বাড়ির পিছনের দিকে চলে যায়।নিভ্র ফোনে কথা বলছে সেদিকে।পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে কঠোর গলায় নির্দেশ জারি করছে কার উপর যেনো।সাফা গুটিগুটি পায়ে নিভ্রর পিছনে দাঁড়িয়ে পরে।আর নিভ্রর বন্ধু মহল বাড়ির চারপাশে গোয়েন্দার মত উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে।তাদের ভয় লাগছে যদি বেচারির গাল লাল হয়।মানে নিভ্র যদি ঠাটিয়ে একটা দেয়।তাদের এক ফ্রেন্ডের বিয়েতে নিভ্রকে হলুদ লাগানোর দায়ে একটা মেয়ের গাল বাঁকা করে দিয়েছে নিভ্র।ঠাসস করে সবার সময়েই চড় বসিয়েছে।তাই সবাই এটা যেনেও যে সাফা নিভ্রর কলিজা তবুও ভয়ে আছে।

সাফা নিভ্রর পিছনে দাঁড়িয়ে আছে।কিন্তু দুঃখের বিষয় সাফার হাত তার গাল অবধি যাবে না পিছন থেকে।তা দাঁড়িয়ে আছে। না হলে এভাবেই লাগিয়ে দৌড় লাগাতো।এখন নিভ্রর এদিকে ফিরার অপেক্ষা।নিভ্র কথা বলতে বলতেই পিছনে ফিরে ধাক্কা খায়। সাফা ধুরুম করে বাড়ি খায় নিভ্রর বুকে।নিভ্র অবাক।কল কেটেঁ ভ্রুজোড়া কিঞ্চিত বাঁকিয়ে সাফার দিকে তাকায়।তারপর বলে,
—” কি হলো তুমি এখানে কি করছো??”
সাফা নাকমুখ খিঁচে চারদিকে তাকায়।নিভ্র ভ্রু নাচিয়ে কি জিজ্ঞেস করে।সাফা জোড় পূর্বক হাঁসে। এটা দেখে নিভ্র বললো,
—” কি হলো আবার নিজে নিজে হাসছো কেনো??এখানে কি করছো??সবাই তো ওই দিকে??যাও! আমি না হয়ে অন্য কেউ হলে কি করতে??একা একা এদিকে আসবে না আর।যাও এখন!!”
সাফা নিভ্রর ঝাঁঝালো কথা শুনে একটু দমে।আবার সাহস নিয়ে বলে,
—” আরে আপনি ছিলেন দেখেইত এলাম।তা না হলে আমি এদিকে কেনো আসবো??”
নিভ্র ভ্রুতে আঙুল দিয়ে উঁচিয়ে বলে,
—” আমার জন্য??”
—” হুম তো।”
—” বাহ্ বউ দেখি জামাই পাগলি হয়েগেছে। পিছনে পিছনে ঘুড়ে। জামাইকে চোখে হারায়।বাহ কি কপাল তোর নিভ্র।লাকি কপাল।”

সাফা দু’হাতে পিছনে দিয়ে রেখেছে।কথাটা বলেই নিভ্র সাফার কোমড় জড়িয়ে ধরে।আশেপাশের সবাই কাশি দিয়েই সরে পারে।আকাশ ভায়াবহ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
—” ভাইরে ভাই আমি যা দেখলাম তোরাও তাই দেখলি নি??”
নীলা পিঠ চাপড়ে বলে,
—” হ ভাই আমিও তাই দেখলাম সাথে বাকি সবাই।নিভ্র কি রোম্যান্টিক এয়ার…..”
আকাশ হা করে তাকিয়ে থেকে বলে,
—” তাই ত দেখছি।ঘুমন্ত বাঘ ঘুমিয়ে থাকলে যেমন শান্ত থাকে আর জেগে গেলে তান্ডব করে নিভ্রনীলও তাই করছে।সব দিকে শালা বেস্ট।চল এখান থেকে তা না হলে যদি যানতে পারে আমরা লুকিয়ে ওর রোম্যান্টিক সিন দিখছি হাড্ডিও থাকবে না গায়ে।চল”

নিভ্র সাফার দিকে হালকা ঝুঁকে। সাফা যেনো এটাই চেয়েছে।হাত বের করেই নিভ্রর দুগাল লেপ্টে দিয়েছে।নিভ্র হতভম্ভ হয়ে সাফাকে ছেড়ে দাঁড়িয়ে পরে।আর এই সুযোগে সাফা পিছের দরজা দিয়ে ঘরের ভিতরে দৌড়। নিভ্র চরম অবাক।তার গালে হলুদ লাগাতেই সাফা এসেছে।কথাটা মাথায় আসতেই নিভ্র হাঁসে।তার চাঞ্চল্যলতার কার্য কলাপ তাকে প্রচন্ড ভাবে ভাবায়।নিভ্র সাফার পিছনে আসে।সাফা দৌড়াতেই কারো বুকে ঠাসসস্ করে ধাক্কা খায়।হাত তুলেই চোখমুখ খিঁচে দাঁড়িয়ে থাকে।অভ্র আকর্ষীক ভাবে শক্ট হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তার পাঞ্জাবীতে সাফার দু’হাতের দাগ স্পষ্ট লেগে আছে।সাফা পিছন ফিরে নিভ্রকে আসতে দেখেই চেঁচিয়ে বলে,
—” স্যরি স্যারররর।”
অভ্রর কানে আর কিছু গেলো না।সে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।নিভ্র সামনে এগিয়ে আবার পিছনে এসে অভ্রর বুকের দিকে তাকিয়ে বলে,
—” সাফা করেছে না??স্যরি ভাই।তোর পাঞ্জাবীটাও নষ্ট করে দিয়েছে। পাগলি একটা।”
অভ্র চাপা হেঁসে বলে,
—” আরে সমস্যা নাই।যা তুই লাফিয়ে লাফিয়ে উপড়ে উঠেছে পা ভাঙবে আবার।”
—” ঠিক কথা।এই মেয়ে জীবনেও সিরিয়েস হবে না।”
—” কিন্তু তোকে সিরিয়েস করে দিয়েছে।”
নিভ্র ভ্রুকুঁচকে তাকায়।অভ্র হাঁসতে হাঁসতে নিভ্রর পাঞ্জাবীর কলারের হলুদের দাগ মুছতে মুছতে বলে,
—” এভাবে তাকানোর মানে কি??সত্যি বলছি।সাফা তোকে দায়িত্ববান, কেয়ারিং, জীবন নিয়ে সিরিয়েসনেস সব শিখিয়ে দিয়েছে।তাই ওকে ধন্যবাদ বল।যা ভাগ এবার।”
নিভ্র হাঁসে অভ্র আবার বলে,
—” তোকে হাঁসতেও শিখাইছে।তাই ওর সিরিয়েস হওয়ার প্রয়োজন নাই।সব তুই পালন করে দিস।”
অভ্র হাটাঁ ধরে।নিভ্র কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সে দিকে।
__________________
সাফা নিভ্রর রুমে এসে পরেছে।নিজের রুমে নিভ্র তাকে খুজে পাবে সহজেই তাই এই রুমে আসা।নিভ্র তো আর নিজের রুমে আসবে না!!সাফা নিভ্রর টেবিলের উপরে ডায়েরী দেখেই সেটা হাতে নেয়।অদ্ভুত দেখতে ডায়েরীটা।কভারটা একদম কাঠের।সাফার আগ্রহ বাড়ে।কারো পার্সোনাল ডায়রী কখনোই পড়া উঁচিত না।এটা যেনেও সাফার আগ্রহ আরো বারে।সাফার মতে চোখে পড়লো কেনো??এতে তার দোষ কি??নিষিদ্ধ জিনিসে আগ্রহ বেশি এটাই স্বাভাবিক। এতে তার কি করার আছে??কথা গুলো ভেবেই পৃষ্টা উল্টায় সাফা। প্রথম পৃষ্টায়ই তাকে নিয়ে লেখা।লেখাটা পড়ার আগ্রহ নিয়ে যেই পড়তে যাবে নিভ্র এসে খপ করে ডায়রী নিয়ে নেয়।নিভ্র রাগী চোখে তাকায়।সাফা ভয় পায়।হাত কচলায়।নিভ্র কঠিন গলায় বলে,
—” কারো পার্সনাল ডায়রী পড়া উঁচিত না এটা যানো না??”
সাফা কথা বলেনা।চোখ টলমল করছে তার।নিভ্র এভাবে রেগে যাবে এটা সাফা বুঝতে পারেনি।সাফা অনুশোচনা ভরা গলায় বলে,
—” স্যরি।আমি ভেবেছি আপনার তাইত..স্যরি।

সাফার চোখ পানিতে টলমল করছে।নিভ্র হেঁসে ফেলে।একটু মজা করতে গিয়ে কাঁদিয়ে ফেলবে ভাবেনি সে।সাফার গাল বেয়ে পানি পড়ে।নিভ্রর হাসির দিকে তাকিয়ে আছে সাফা।নিভ্র চোখের পানি মুখে দিতে দিতে বলে,
—” তুমি কথায় কথায় কান্না করো কেনো??এটা মোটেও উচিতনা।সবাই ভাববে তুমি দুর্বল। আর মানুষকে কখনোই দূর্বল জায়গা দেখাতে নেই।তাহলে বেশি বেশি আঘাত করে।আর একটু অধীকার খাটালে কি হয়??”
সাফা কিছু না বুঝে বলে,
—” মানে।”
—” আমি ভেবেছি তুমি একটু অধীকার খাটিয়ে বলবে আমার জিনিস মানেই তোমার।দুজনের মাঝে পার্সনাল বলে কোনো শব্দ নেই।তা না করে ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিলে।কাজল লেপ্টে গেছে তোমার। কান্না করবে না আর।তুমি কাঁদলে কিন্তু আরো মারাত্মক লাগে।সাথে প্রচন্ড ব্যাথা হয় হৃৎপিন্ড নামক যন্ত্রে।তাই কাঁদবে না আমার সামনে।এটাই ফাস্ট এন্ড লাস্ট ওয়ার্নিং। গট ইট।”
সাফা হেঁসে দেয় নিভ্রর চোখ নাচানো দেখে।তারপর বলে,
—” আপনি কি মনে করেন অনেক গার্লফ্রেন্ডের ইতিহাস ডায়রীতে লুকিয়ে রেখে আমাকে দেখতে দিতে চান না তাই না।থাক আমিও আমার অনেক অনেক বয়ফ্রেন্ডদের কথা বলবো না।”

নিভ্র ভ্রুকুঁচকে বলে,
—” তোমার বুঝি অনেক অনেক বয়ফ্রেন্ড আছে??”
—” তা নয় তো কি!!তবে আপনাকে কেনো বলবো??”
—” প্রথম কথা আমার কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই বা ছিলো না।তুমিই প্রথমে এবং শেষ।আর তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে এটা শুনে আমার হাসি পাচ্ছে।আর থাকলেও আমার সমস্যা ছিলো না।
সাফা ভারী অবাক হওয়া গলায় বলে,
—” আমার বয়ফ্রেন্ড থাকতে পারেনা কেনো??আর আমি কি এতটাই বাজে দেখতে যে আমাকে কোনো ছেলে গার্লফ্রেন্ড বানাবে না??!”
নিভ্র সাফার কোমড় পেঁচিয়ে দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাড়ায়।তারপর বলে,
—” বোকা পেয়েছ আমাকে??বয়ফ্রেন্ড থাকলে তোমার চোখে দুনিয়ার ঘুম থাকতো না।বয়ফ্রেন্ডর সাথে বকবক করার আলাদা টাইমের প্রয়োজন হতো।তা না করে তুমি সকাল বিকাল যখন তখন ঘুমিয়ে পড়ো।আবার তো আমার সামনেই হুমড়ি খেয়ে ঘুমাও।এত ঘুম নিয়ে বয়ফ্রেন্ড থাকবে তোমার!!আর সবচাইতে বড় কথা তোমার বাবার অনুপস্থিতে তুমি নানা জায়গায় ঘুড়তে যেতে এমন কিছুই তোমার মাঝে নেই।এটা বুঝা সহজ।এবার আসল কথায় আসা যাক।”
—” আসল কথা কি??”
—” ওয়েট দেখাচ্ছি। ”
কথাটা বলেই সাফার দুই গালে নিজের গাল ঘোঁষে দিলো।সাফা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।নিভ্র এবার মুখ তুলে বলে,
—” এবার হলো শোধবোধ। ”
সাফা লজ্জা পেয়ে হাঁসে। এই কথাটা সেও নিভ্রকে একদিন বলেছে।তাও মেরে।নিভ্রর এখনো এ কথা মনে আছে ভেবেই সাফা হাঁসে।দুজনের মাঝে কিছুসময় নিরবতা বিরাজ করে।নিভ্র হলুদে আবৃত সাফাকে একদৃষ্টিতে দেখেই চলেছে।সে যেনো সারা জীবন এভাবে দেখেই যেতে পারবে।সাফা বলে উঠে,
—” আমার কিন্তু সত্যি বয়ফ্রেন্ড আছে।”
নিভ্র এবার একটু অন্যভাবে আগ্রহের সাথে তাকায়।সাফা বলে,
—” আপনি আমার বয়ফ্রেন্ড। ”
নিভ্র হেঁসে দেয়।সাফার সামনের চুল সরিয়ে দিয়ে বলে,
—” আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড কে বলেছে??আমি তোমার কোনো বয়ফ্রেন্ড টয়ফ্রন্ড না।”
—” তা হলে আপনি আমার কে??”
সাফার অবাক হওয়া প্রশ্নে নিভ্র বলে,
—” আমি তো তোমার ভিলেন, মডেল-ফডেল,আর ডাক্তার সাহেব।”
সাফা মুচকি হেঁসে নিভ্রর বুকে মাথা রাখে।গাল ঘঁষে পাঞ্জাবীতে।নিভ্র মাথার চুল ঠিক করে দেয় সাফার।চুলের উপড় একটা চুমু খায় গভীর ভাবে।
______________

#চলবে________________

ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন _______🍂

®হাফসা_________________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here