এক_বাক্স_ভালোবাসা পর্ব ৯+১০

#এক_বাক্স_ভালোবাসা
#পর্ব_৯
#লেখিকা_বন্যা_মৃধা

আমরা জিসানকে পাশ কাঁটিয়ে চলে যাচ্ছি তখন কেউ আমার হাত ধরে থামিয়ে দেয় পিছনে ফিরে দেখি অন্য কেউ নয় জিসানই আমার হাত ধরেছে।

~~ জিসান আমার হাত ছাড়ো।

জিসান: যদি না ছাড়ি তাহলে কি করবে?

~~ তোমায় আমি ভালোভাবে বলছি আমার হাত ছেড়ে দাও নাহলে কিন্তু খুব খারাপ হবে।

জিসান: না ছাড়লে কি তোমার বাবাকে আমার কথা বলে দেবা? বলে কোনো লাভ হবে না আমার বাবার কাছে তোমার বাবা কিছুই না আমি চাইলে তোমায় মূহুর্তেই আমার করতে পারি।

জিসানের কথা বলা শেষ হওয়া মাত্রই আদি জিসানের গালে থাপ্পর বসিয়ে দিল অঃতপর বলল..

আদি: হিমু আমার হবু স্ত্রী কারন আমরা আবার বিয়ে করতে যাচ্ছি আমি চাই তোর নজর হিমুর থেকে সরিয়ে নে সেটা তোর জন্যই ভালো হবে।

জিসান রাগে আগুন হয়ে যাচ্ছে মনে হচ্ছে এখুনি সেই আগুনে কলেজ ক্যাম্পাস সব পুরে শূন্য হয়ে যাবে। সব পুরলেও আমি আদি পুরব না কারন দুদিন পরে আমাদের বিয়ে জিসানের আগুনে পুরে গিয়ে আমাদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করতে চাই না তাই আদিকে নিয়ে সেখান থেকে কেঁটে পরি।

সোজা ক্লাসে এসে ক্লাসে মনোযোগ দেই। ক্লাসে সবই উপস্থিত হলেও জিসান উপস্থিত হয়নি হয়তো বেচারা কষ্ট পেয়ে বাসায় চলে গেছে অবশ্য তাকে যেতেই হতো কারন যে আগুন জ্বলছিল তাকে তো ফিরিজে ঢুকতেই হবে। ক্লাস শেষ করে আমরা কলেজের পাশে একটা রেস্টুরেন্ট আছে সেখানে চলে আসি তারপর খাবার অর্ডার করি। খাবার দিতেই দুজনে পাল্লা দিয়ে খেতে শুরু করি।

আদি: হিমু আমিনা বাসায় ওয়ালেট রেখে এসেছি তাই বলছি কি আজকের বিলটা তুই একটু পে করে দে আমি বাসায় পৌঁছেই ডাবল টাকা দিয়ে দেব।

~~ এক টাকাও দেব না। তুই এতো ছ্যাঁচড়া কেন রে হবু বউয়ের কাছে টাকা চাইতে লজ্জা করে না?

আদি: অন্য মেয়ে হলে ঠিকই লজ্জা লাগতো কিন্তু হবু বউ তো তাই লজ্জা লাগছে না বরং ভালো লাগছে। আমার মানে তো তোর আর তোর মানে তো আমারই তাই না।

~~ তোর কিডনি যদি তোর হয় তাহলে তো সেটা আমারও তাই ভাবছি তোর কিডনিটা বিক্রি করে বিল পে করব তারপর বাদাম ভাজা খেতে খেতে বাসায় চলে যাব আইডিয়াটা কেমন লাগল মি. আদি..

আদি: পুরোটাই তিতা এই হিমু এবারের মতো বিলটা দিয়ে দে না প্লীজ!

~~থাক আর ন্যাকা কান্না করতে হবে না শেষবারের মতো দিয়ে দিচ্ছি নেক্সট টাইম এমন ভুল করলে সত্ত্যি সত্ত্যি তোর কিডনি বিক্রি করে বাদাম ভাজা খাব।

আদি: আচ্ছা।

বিল পে করে আমরা পরবর্তী গন্তব্যে পা বাড়াই কারন আমাদের প্লান হলো কলেজ শেষ হওয়ার পর দুজনে মিলে ঘুরব। আমি আদিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছি
আর আদি ধীর গতিতে ওর মোটর বাইক চালাচ্ছে। রাস্তায় আমরা জ্যামে আটকে যাই তখন আমার চোখে জিসানের চোখ ধরা পরে সেদিকে আর না তাকিয়ে আমি আদিকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরি।

কিছুক্ষনের মধ্যে আমাদের গন্তব্যে পৌঁছে যাই। যায়গাটা বেশ নির্জন তেমন কোনো মানুষ এখানে আসে না তবে আমরা কলেজ শেষ করে মাঝে মাঝে এখানে ঘুরতে আসতাম। আমি আদির হাত জড়িয়ে ধরে মনের শান্তিতে হাঁটতেছি কিন্তু কোনো এক অজানা আগুনত্বকের সেটা সহ্য হয়নি।

সুভ সময়ে ফোনে মেসেজের সাউন্ড কানে পৌঁছাতেই আমার মনটা একদম নষ্ট বিনষ্ট করে দিল। ফোন চেক করে দেখি মেসেজটা কোনো গ্রামীণ বা বাংলালিংক অফিস থেকে আগত হয়নি আমার শত্রু মানে জিসান মেসেজ করেছে। “হিমু তুমি আমার সঙ্গে এসব করে একদম ঠিক করোনি যেভাবে হোক তোমাকে তো আমার করবই। এই জিসান একবার যেটা চায় সেটা নিজের করেই ছাড়ে।”

মেসেজটা আদিকে দেখাতেই আদি আমায় এক গাঁদা বকুনি দিতে শুরু করল..

আদি: যা ওই জিসানের সঙ্গে আর একটু হাত ধরে কলেজ চক্কর দিয়ে আয় আর আমি তোদের দেখে গোলাপ আর শিউলী ফুলের পাপড়ি নিক্ষেপ করবনে।

~~তুই জানিস না আমার গোলাপ পছন্দ না আর আমি তো জিসানের সঙ্গে একটু ফাজলামি করছি বুঝতে পারিনি যে ও এসব করবে।

আদি: এমনিতে তো সব বুঝনির রানী তুই। কান খুলে আমার কথা শুনে নে যদি জিসান আমার হিমুর দিকে হাত বাড়ায় তাহলে কিন্তু আমি ওকে মেরে ফেলব তারপর তোকে নিয়ে আমিও মরব।

~~আমায় তুই ভালোবাসিস এটা আগে বললে কি এসব আমি করতাম? কখনও করতাম না এসব তোর জন্য হয়ছে তাই প্রবলেম সলভও তুই করবি।

আদি: হুম বাসায় চল মা কল করতেছে বাসায় না গেলে হয়তো ভেবে নেবে আমরা আবার পালিয়েছি।

~~ আচ্ছা চল।

আর লেট না করে আমরা বাসায় চলে আসি আদি বার বার ওর বাসায় যাওয়ার জন্য রিকুয়েস্ট করছিল কিন্তু আমি যাইনি কারন আমি তো এখন হবু বউ তাই ভেবেছি বিয়ে করে আদির গলায় ঝুলে দেন যাব। যেই কথা সেই কাজ মানে আমি আমার বাসায় চলে আসি বাসার ভিতরে প্রবেশ করতেই আমার চোখ উপরে উঠে গেল কারন দুষ্ট অভি আমার বোনের পাশাপাশি বসে হাত ধরে কথা বলছে তাই উপর থেকে চোখটা এনে টুস করে চোখের স্থানে বসিয়ে তাদের দিকে এগিয়ে গেলাম।

~~ আদি ঐশী এখানে বসে কি করছিস তোরা?

অভি: আদি ভাইয়া আর তুমি যা করতে আমরাও তাই করতেছি মানে প্রেম।

~~এখানে যে ইচিং বিচিং চলছে সেটা তোদের হাত ধরতে দেখেই বুঝেছি দাড়া এখনি মাকে ডাকছি।

অভি বসা উঠে আমার কাছে এসে বলল..

অভি: পূর্বের ভালোবাসা তুমি জানোনা অন্যের প্রেমে
বাঁধা দিলে নিজের প্রেমেও বাঁধা পরে তাই বলছি কি আন্টিকে ডেকে এই ভুলটা কখনও করো না।

~~ওই সয়তানের ডিব্বা তুই আমাকে প্রেম শেখাচ্ছিস?

অভি: একদমই না আমরা তোমার থেকে প্রেম ভালোবাসা শিখেছি তুমি রুলস ভুলে গিয়েছিলে আমি তো শুধু সেটা একটু মনে করিয়ে দিলাম।

~~তুই এখনি আমার বাসা থেকে বিদায় হ আমার বোনকে আমি প্রেম ভালোবাসা শিখিয়ে তোর কাছে পাঠিয়ে দিবনে।

অভি: আচ্ছা পূর্বের ভালোবাসা এজন্যই তো তোমায় এতোগুলা ভালোবাসি।

অভি বাসা থেকে প্রস্থান করার সঙ্গে সঙ্গে বাসায় বাবার প্রবেশ।

বাবা: কলেজ থেকে কোথায় গিয়েছিলি?

বাবার কথার সাউন্ড এতোটাই ত্রীব ছিল যে মা রান্না ঘর থেকে এক দৌড়ে আমার কাছে চলে এলো।

~~বাবা আমি আদির সঙ্গে ছিলাম। (মাথা নিচু করে)

বাবা: সেটা আমিও জানি। তুই আর আদি নাকি আবার পালানোর চেষ্টা করতেছিস?

~~না বাবা আমরা তো কলেজ শেষে একটু ঘুরতে গিয়েছিলাম। পালানোর কথা তোমায় কে বলল?

বাবা: অভি এসে তো বলল তোরা আবার পালানোর প্লান করতেছিস।

ওই অভির ডিম আমার জীবনটা বাঁশপাতা করে ছাড়বে এখনই আমার পিছনে পড়তেছে না জানি বউ হয়ে গেলে কি করবে.. ওকে তো আজ পানি ছাড়াই গিলে খাব।

মাকে বলে রওনা দিলাম হবু শশুরের বাসায়। বাসায় এসেই অভির রুমে আসলাম কিন্তু ছোট সয়তানকে রুমে পেলাম না। রুম থেকে বের হতে যাব তখনি ওয়াশ রুম থেকে সাউন্ড আসল। তার মানে অভি ওয়াশ রুমে আজ বের হ তারপর দেখিস আমি কি করি। একটা তোয়ালে নিয়ে ওয়াশ রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকি। ওয়াশ রুমের দরজা খুলতেই তোয়ালে দিয়ে অভির মুখ ঢেকে দেয়ালের সঙ্গে চেপে ধরি।

~~ ওই সয়তান তুই আমার পিছনে পড়েছিস কেন? তোকে বলেছি আমার বোনের পিছনে পরে থাকতে আর তুই কিনা আমায় বিপদে ফেলতেছিস তোকে আজ মেরেই ফেলব।
কি হলো কথা বলিছিস না কেন?

অবশ্য কথা বলার কোনো অপশন আমি রাখিনি আমি তো অভির মুখ চেঁপে ধরেছি তাই কথাও বলতে পারছে না শুধু হুম হুম করছে। আমার কোমরে কারোর হাতের স্পর্শ পেয়ে তাকিয়ে দেখি আমি যাকে তোয়ালে দিয়ে চেঁপে ধরেছি এটা তারাই হাত।

~~তোর সাহস তো কম না তুই আমার কোমরে হাত দিয়েছিস। এখনি হাত সরিয়ে নে নাহলে কিন্তু চিৎকার করে সবাইকে উপরে নিয়ে আসব আর এটা আদির কানে একবার পৌঁছালে তুই আর পৃথিবীতে স্থান পাবি না।

আমার কথা শেষ হতেই অসভ্য ছেলেটা আমায় তার সঙ্গে জড়িয়ে নিল। আমি ওর মুখ ছেড়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলাম।

~~হবু বরের ভাই, না না তুই আমার নিজের ভাই প্লীজ আমায় ছেড়ে দে।(কান্না জড়িত কন্ঠে)

না সয়তানের ডিব্বাটা আমায় ছাড়ছে না বরং আরো শক্ত করে আমায় জড়িয়ে ধরছে। হিমু তোকে এভাবে হার মানলে চলবে না আদির ছোট ভাই হোক অথবা বড় ভাই হোক প্রতিবাদ করতেই হবে প্রয়োজনে আজ সবাইকে বলে অভির একটা কঠিন ব্যবস্থা করতে হবে।

অভি আজ আমার সঙ্গে এমন জঘন্য ব্যবহার করবে তা আমি কল্পনাতেও ভাবিনি। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম ওকে এখনি থাপ্পর মেরে সব দাঁত ফেলে দেব। চোখ মেলে থাপ্পর দিতে গিয়ে আমি মনে মনে ১৯০ডিগ্রি শকড খেয়ে ২০ বার অজ্ঞান হয়ে গেলাম। কোনো মতে লাশ থেকে জীবিত হয়ে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি আমার সামনে এক চেনা অচেনা অদ্ভুত লোক জোকার মার্কা হাসি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
#এক_বাক্স_ভালোবাসা
#পর্ব_১০
#লেখিকা_বন্যা_মৃধা।

কোনো মতে লাশ থেকে জীবিতি হয়ে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি আমার সামনে এক চেনা অচেনা অদ্ভুত লোক জোকার মার্কা হাসি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

~~আদি তুই?

আদি: হ্যাঁ কেন আমার স্থানে অন্য কেউ থাকার কথা ছিল?

~~না আমি তো ভেবেছিলাম অভি আমায় জড়িয়ে ধরেছে তাই আমি থাপ্পর দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম।

আদি: তাই নাকি.. তো আমার হবু বউ এখন অভির রুমে কি মতলবে আসা নাকি ওর সঙ্গে প্রেম করতে আসা হয়েছে কোনটা?

~~একদম বাজে কথা বলবি না। তুই তোর রুমের ওয়াশ রুম ছেড়ে এখানে এসেছিস কেন?

~~তখন কলেজ থেকে ফেরার সময় বাইকে বসে আমি স্বপ্ন দেখেছিলাম যে তুই এখন অভির রুমে আসবি তাই আগে থেকে এখানে এসে বসে আসি তোর সঙ্গে প্রেম করব বলে।

~~একটুও ফাজলামি করবি না। সত্ত্যি করে বলতো এখানে কি করছিস?

আদি: উগান্ডার পেত্নী তোর হবু বরের তো দুদিন পরে বিয়ে তাই মা রুমে নতুন জিনিস বসাচ্ছে তাই আমি অভির রুমে।

~~ওহহ আচ্ছা আমায় ছাড় আমি বাসায় যাব।

আদি: ছাড়তে পারি কিন্তু একটা শর্তে।

~~মহারাজা কি শর্ত বলে ফেলুন..

আদি: আমায় শক্ত করে জড়িয়ে ধরে একটা ৫ মিনিটের চুম্মা দে তারপর আমি ভদ্র ছেলের মতো তোকে ছেড়ে দেব প্রয়োজনে কোলে তুলে তোকে পৌঁছে দেব।

~~আমার দ্বারা হবে না। আমায় ছাড় নাহলে কিন্তু আমি চিৎকার করব তারপর সবাই এসে তোকে বকা দেবে।

আদি: তোর আইডিয়া পানিতে ডুবে মরে গেছে কারন এখন তো আমাদের মতেই বিয়ে হবে আর বিয়ের আগে আমরা প্রেম করতেই পারি আর প্রেমে আমার বাবা কেন তোর বাবাও বাঁধা দেবে না।

~~আমায় না ছাড়লে কিন্তু তোকে কামড় দিব।

আদি: তোর কামড় খেতে আমি সবসময় রাজি। কামরটা যদি ঠোঁটে দিস তাহলে তোকে নিয়ে ১৫ সমুদ্রও পাড়ি দিতে রাজি।

আদি কথাগুলো আমার মুখের খুব কাছে এসে বলল। আদির মুখে এসব কথা শুনে আমার কেমন যেন অনুভূতি হচ্ছে হয়তো এমন অনুভূতি হওয়ার কারন আদির কাছে আসা। মূহুর্তেই আমার হার্টবিট হাজার গুন বেড়ে গেল। আমার নাকের সঙ্গে আদির নাক স্পর্শ করতেই আমার সম্পূর্ন শরীর কেঁপে ওঠে। আদির চোখ নেশায় হাবুডাবু খাচ্ছে ধীরে ধীরে ওর ঠোঁট আমার ঠোঁটের দিকে এগোতে থাকে। আমার দিকে যত এগোতে থাকে ততই আমার শরীরের কম্পন বাড়তে থাকে। আজ কেন যেন আদিকে বাঁধা দিতে মন চাইছে না বরং মন চাচ্ছে আদির নেশায় ডুবতে। ভয়ে আমি চোখ করে নেই আদি আমার মুখের এতোটাই কাছে যে নিশ্বাস আমার মুখে এসে পরছে।

আমার ঠোঁটে আদির ঠোঁটের স্পর্শ পেতেই আমি এক ঝলক কেঁপে উঠি সঙ্গে সঙ্গে আদি আমায় ওর সঙ্গে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আদি আমার এতোটাই কাছে যে ওর নিশ্বাস আমার মুখে পরছে সঙ্গে হৃদ স্পন্দনও ত্রমেই বাড়তে থাকে। হঠাৎ ওয়াশ রুমের দরজা খোলার শব্দ পেতেই আদি আমায় ছেড়ে দেয় আর আমি ওর থেকে কিছুটা সরে দাঁড়াই। তাকিয়ে দেখি আমাদের শত্রু দাঁড়িয়ে আছে মানে অভি।

অভি: ভাইয়া এখানে কি কোনো রোমান্টিক মুভির শুটিং চলতেছিল আমি কি ভুল সময়ে প্রবেশ করে তোমাদের রোমান্সে বিঘ্ন ঘটিয়েছি।

আদি:কোথাও গেলে নক করে যেতে হয় তা শিখিসনি?

অভি: যা বাবা এখন আমার দোষ হয়ে গেল এদিকে তোমরা ওয়াশ রুমের দরজা খুলে রোমান্স করতছো আর আমি দেখলেই যত দোষ।

অভির কথায় উত্তর না দিয়ে আমরা ওয়াশ রুম থেকে রুমে আসি অঃতপর অভি বলে..

অভি: তোমাদের অনেকগুলো ধন্যবাদ।(হাসি দিয়ে)

~~ওই অকারনে ধন্যবাদ দিলি কেন? তোর মতলবটা একটু বল তো।

অভি: এই যে রোমান্সের নতুন ফর্মুলাটা আমায় শেখানোর জন্য আমিও তোমার বোনের সঙ্গে এভাবে রোমান্স করতে চাই।(সয়তানি হাসি দিয়ে)

~~কি বললি আমার নিরীহ বোনের সঙ্গে এসব করবি তোকে তো আজ চিবিয়ে খাব।(অভির কান ধরে)

অভি: আমি বলিনি মা বলে বড়দের অনুসরন করে চলতে তাই আমরা তোমাদের অনুসরন করে চলব এটা।

~~একদম চুপ সয়তান ছেলে।

আর বগ বগ না করে আমি বাসায় চলে আসি কারন মা বলে হবু শশুরের বাড়িতে বেশিক্ষন থাকতে নেই আমি খুব ভদ্র মেয়ে তো তাই আমি বেশিক্ষন না থেকে টুস করে নিজ বাসায় চলে আসি।

বিয়ের দুদিন বাকি আগের মতো আমাদের পালানোর ধান্দা নেই কারন আমরা এখন নিজেদের ইচ্ছেতেই বিয়ে করব। ফাজলামি আর শপিং এ আমাদের এই দুদিন কেঁটে যচ্ছিল তবে এদুদিনে বিকেলটা শুধু আমাদের দুজনের জন্যই ছিল কারন আমাদের পছন্দের যায়গায় যাওয়া মিস হয়নি।

অবশেষে বিয়ের দিন চলে আসে আবার নতুন করে নতুন সাজে আমাদের বাসা সেজে ওঠে। সবার মুখে আলাদা একটা খুশির ছাপ দেখা যাচ্ছে কিন্তু আমার কেন যেন সবার খুশিটা সহ্য হচ্ছে না তবুও সহ্য করে নিলাম। গায়ে হলুদ থেকে বিয়ের আগ পর্যন্ত আদির সঙ্গে আমার ফোনে কথা চলতে থাকে। এক ঘন্টা যাবৎ আমাকে আটা ময়দা দিয়ে সাজানো হচ্ছে তবু এদের সাজানো হচ্ছে না মনে হচ্ছে সাজাতে সাজাতে এরা আমায় পত্নী বানিয়ে দেবে। মাকে বলেছি আদির সঙ্গে আমার বিয়ে হচ্ছে কোনো অচেনা ছেলের সঙ্গে নয় তাও আমাকে পেত্নীর মতো সাজতেই হবে।

কিছুক্ষন পর আমাদের বিয়ে আমি নতুন বউয়ের মতো রুমে একা একা বসে আছি হঠাৎ আমার ফোনে রিং বাজতেই ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখি অচেনা একটা নম্বর থেকে কল আসছে। ভেবেছিলাম আদি কল করেছে কিন্তু অন্য নম্বর দেখে মনটাই খারাপ হয়ে গেল তাই আর রিসিভ করলাম না। বার বার সেই নম্বর থেকে কল আসল তবুও রিসিভ করলাম না। হঠাৎ ফোনে একটা মেসেজ এলো। চেক করে দেখি ” অভিনন্দন মিস হিমু। তবে তোমার মুখের হাসি শুধু কিছু মূহুর্তের জন্য।” আমি মেসেজটা দেখে কিছুটা অবাক হই তবু মাথা নষ্ট না করে আমার বিয়েতে মনোযোগ বসাই।

খুব ধুমধাম করে আমাদের বিয়েটা সম্পন্ন হয়। বিয়ের পর আমাদের দুজনে একটা রুমে বসানো হয় আমরা তখন চোখে চোখে প্রেম করছিলাম কিন্তু কতগুলা ভূত পেত্নী আমাদের প্রেমে ব্যাঘাত ঘটাল মানে অভি আর ঐশীর মতো কিছু সয়তান আমাদের পাশে এসে বসল। এদিকে আমার পেটে, মাথায় ঘুরতেছিল সয়তানি বুদ্ধি আর চেঁপে রাখতে না পেরে আদিকে জানানোর সিদ্ধান্ত নিলাম।

কিন্ত তার আগে এই সয়তানের হাড্ডিগুলোকে রুম থেকে বিদায় করতে হবে তাই অভিকে আর বোনকে উদ্দেশ্য করে বললাম..

~~তোরা সবাইকে নিয়ে রুম থেকে বের হয় আদির সঙ্গে আমার কিছু কথা আছে।

অভি: মায়ের বারন আছে তাই আমরা তোমাদের সঙ্গেই থাকব।

~~ওই একদম ন্যাকামি করবি না। আমরা তো তোদের থেকে বড় তাই যা বলেছি তাই শুনবি আর যদি না শুনিস আমি নিজেই তোদের প্রেমে রাক্ষুসী রুপে আক্রমন করব।

অভি: আচ্ছা যাচ্ছি কিন্তু এটা বলো তো আমরা চলে যাওয়ার পরে তোমরা দুজনে কি করবা?

~~প্রেম করব তবু তোরা এখান থেকে এখন বিদায় হ।

আমার আর আদির ধমকে সবাই রুম থেকে প্রস্থান করল অঃতপর আমি আদির কাছে এসে বলি..

~~চল এখন আমরা পালিয়ে যাই।

আদি: কি?? তোর মাথা ঠিক আছে তো?

~~সম্পূর্ন ঠিক আছে আর মাথার ব্যাটারিতে ফুল চার্চও। আমার সেই ছোটবেলা থেকে ইচ্ছে বিয়ের পর বরের সঙ্গে পালাব প্লীজ চল না আমরা পালিয়ে যাই।

আদি: আমরা তো এখন আমাদের ইচ্ছেতেই বিয়ে
করেছি তাহলে কেন পালাব.. এখন এসব করলে সবার সম্মান নষ্ট হবে।

~~তার মানে তুই আমায় নিয়ে পালাবি না এটাই তো?

আদি: আরে উগান্ডার পেত্নী শুধু শুধু আমরা কেন পালাব?

~~ধুর তোকে বিয়ে করাই আমার ভুল ছিল এর থেকে জিসানকে বিয়ে করলে আমায় নিয়ে এতোক্ষনে আকাশে নিয়ে যেত চাঁদ দেখানোর জন্য।

আদি: কি বললি তুই??(চোখ রাঙিয়ে)

~~এই আদি চল না আমরা তোর বিএম ডব্লিউতে পালিয়ে আকাশে ঘুরতে যাই প্লীজ প্লীজ..

আদি: ওকে কিন্তু নেক্সট টাইম জিসানের নাম তোর মুখে শুনলে তোকে মেরে আমিও মরে যাব।

~~আচ্ছা প্রমিজ আর কখনও বলব না হ্যাপি?

আদি: হুম এখন চল।

~~না না আমরা পালাচ্ছি তাই আলাদা আলাদা চুপিচুপি সবার আড়ালে যাব আমি আগে যাচ্ছি তারপর তুই।

আদি: ওকে।

আমার প্লান অনুযায়ী নিজেকে একটা কালো কাপড় দিয়ে মুড়ে সবার চোখের আড়ালে বাসা থেকে বের হই। আমি সেই রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছি আদিও কিছুক্ষন পর এলো। আমি সেখানে একা দাঁড়িয়ে থাকি আর আদি ওর মোটরগাড়ি আনতে চলে গেল।

(পাগলী একটা বউ জুটছে আমার কপালে বিয়ের পর যে ওকে নিয়ে এভাবে পালাতে হবে তা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি। বাইক নিতে এসে বাবাকে কল করে সবটা জানিয়ে দিলাম শুধু শুধু তারা আমাদের জন্য টেনশন করবে তা তো হতে পারে না।
বাইক নিয়ে সেখানে পৌঁছে দেখি হিমু নেই। হিমু তো এখানেই দাঁড়িয়ে ছিল এটুকু সময়ের মধ্যে কোথায় যেতে পারে, বাসায় চলে যায়নি তো.. বাইক রেখে আশেপাশে খুঁজে দেখলাম কিন্তু হিমুকে কোথাও দেখতে পাচ্ছি না। ফোন হাত নিয়ে হিমুকে কল দিলাম.. হিমুর ফোনের রিংটন আমার কানে বেঁজে ওঠে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখি রাস্তার সাইডে ওর ফোনটা পরে আছে…)

চলবে…

(ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)
চলবে…

(ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here