#একই_সুতোয়_বাঁধা
পর্ব-৯
সপ্ত শীখা
— হ্যালো ? হ্যালো ?
— সায়ন ?
— হ্যাঁ বলছি ?
— আমি সাইকার বাবা বলছি। তুমি একটু এপোলো হসপিটালে এসো জলদি।
— কিন্তু… ক্যান… হ্যালো ? হ্যালো ? ড্যাম ইট!
সায়ন আধা ঘন্টার মাঝে এপোলোতে পৌঁছল। খোঁজ নিয়ে নিয়ে একটা কেবিনে এসে দাঁড়াল। এটায় নাকি সাইকা আছে। কেবিনের বাইরে একজন দাঁড়িয়ে আছে। সম্পূর্ণ বোরখায় আবৃত। সায়ন কে দেখেই তার চোখ বড় হয়ে উঠল।
— এইখানে সাইকা আছে ?
— জ্বি
কণ্ঠটা খুব চেনা মনে হচ্ছে… কেন ?
— আচ্ছা… থ্যাঙ্কস
— আপনি ?
— আমি সাইকার বয়ফ্রেন্ড। আপনি কি ওর রিলেটিভ?
— ন…ন্না… আমি উনাকে নিয়ে এসেছি হসপিটালে। রাস্তায় আহত অবস্থায় পড়ে ছিল।
— ওহ… থ্যাঙ্কস আ লট। আমি যাই…
সায়ন কে দৌড়ে ভেতরে ঢুকতে দেখে বোরখাবৃতার চোখ যে লাল হয়ে উঠেছে সেটা কেউই লক্ষ্য করেনি। কতকাল পরে দেখা… আর সেই দেখাতেই মন ভাংল আজ পুষ্পর…
সায়ন ভিতরে ঢুকে পড়ল। সাইকা ঘুমাচ্ছে। সম্ভবত সিডেটিভ জাতীয় কিছু দেয়া হয়েছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে বাম পা টা ভেঙ্গে গেছে ওর। আর কপালে বেশ বড় একটা ব্যান্ডেজ।
সায়ন ঢুকতে সাইকার বাবা এগিয়ে এলেন।
— তুমি সায়ন ?
— জি… আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল।
— তুমি কি ভেবেছ বল ত ? আমার মেয়ে তোমার খেলার পুতুল ? যা খুশি তাই করবে ?
— আমি কি…
— শাট আপ ইউ রাস্কেল ! আজ তুমি আমার মেয়ের পোশাক নিয়ে কথা বলার সাহস করেছ কিকরে ? আবার ব্রেকাপ করার কথাও তুলেছ ?
— আঙ্কেল…
— শোনো ছেলে। সাইকা আমাদের একমাত্র মেয়ে। তোমার কোন ধারণাও নেই ও আমাদের কতটা আদরের। মুখের কথা না ফেলতেই সব পেয়ে যায় ও। আর সেখানে তুমি কোন ছার ! তোমাকে ও কত ভালবাসে জানো না তুমি ! ফার্দার ওকে ছেড়ে যেতে চেষ্টাও করবেনা।
— দেখেন আপনি-
— লেট মি ফিনিশ। আমার হাত কত লম্বা তুমি ভাবতেও পারবে না। সাইকাকে ছেড়ে যাবার চেষ্টাও করলে তোমাকে এক রাতে আমি হাপিশ করে ফেলতে পারি আর কেউ পাত্তাও পাবে না। আর তুমি চাইলে তোমার বাবাকে রাস্তার ফকির বানাতেও আমার দু মিনিট লাগবে না। বুঝেছ ছেলে ?
— ইউ-
— আহহা। মাথা গরম করেনা। এসব আমি সত্যিই করতে পারি। তা না চাইলে সাইকার সাথে যেমন সম্পর্ক সেটাই কন্টিনিউ করবে। ঝগড়া কর… বাধা দেব না। কিন্তু আমার মেয়ে ফার্দার এরকম এটেম্পট নিলে ওর প্রতি ফোঁটা রক্তের জন্য তোমার প্রিয়জনের জীবন যাবে।
— এ…এটেম্পট !
— ইয়েস। এটা নরমাল এক্সিডেন্ট না সুইসাইড এটেম্পট ছিল। আর এসব আমরা ওর লাস্ট আমাকে পাঠানো টেক্সট থেকে জেনেছি। এটা পাঠিয়েই ও রাস্তার মাঝ দিয়ে দৌড় লাগায়। ভাগ্যিস স্রেফ একটা গাড়ির ধাক্কা খেয়েছে তাই সিরিয়াস কিছু হয়নি। আর বাইরের অই মেয়েটাই ওকে নিয়ে এসেছে।
— আপনার মেয়ের মাথায়-
— মাইন্ড ইওর ল্যাঙ্গুয়েজ ম্যান ! সাইকার ব্যাপারে কথা বলছ ভুলো না। আমি তোমাকে এক্টা অফার দিচ্ছি। পড়াশুনা কমপ্লিট কর তারপর জব শুরু করে সাইকা কে বিয়ে করে নেবে। জব না করলেও হবে। সাইকাকে ছাড়ার কথা ভাববে না জাস্ট…
— আর ভাবলে ?
— অইতো ! তোমার মা… বাবা… অবশ্য দয়া করে নাও মারতে পারি। খেতে না পেলে এম্নিই… আরে যাচ্ছ কোথায় !
অসহ্য রাগে পাগল সায়ন একপ্রকার দৌড়েই বের হল হসপিটাল থেকে। পিছনে সাইকার বাবা হাসিমুখে তাকিয়ে আছেন। সাইকার কপালে হাত বুলিয়ে বললেন
— আমি থাকতে তোকে কষ্ট পেতে দেবনা মা। আমি না থাকলেও যেন ভাল থাকিস সে ব্যবস্থাও করব।
— বাপি… ও ছেড়ে যাবেনা তো আমাকে ?
— সাহস ই পাবেনা ! বি হ্যাপি। সারাজীবনের জন্য সায়ন তোর।
— লাভ ইউ বাপি
— লাভ ইউ টু মা। কিন্তু এমন কাজ কক্ষনো করবেনা কেমন ? তোমার বাপি আছে কেন ? সব আমাকে বলবে। ওকে ?
— ওকে বাপি।
— নাসরিন… আমার সুইট লিটল ডটার কে সুপ টা খাইয়ে দাও। আমি আসছি।
নাসরিন দীর্ঘশ্বাস ফেলে সাইকাকে সুপ খাইয়ে দিতে বসলেন। সায়নের মলিন মুখখানি তার মনে দাগ কেটে গেছে। নিজের কথা মনে পড়ছে তার।
গ্রামের শান্ত কিশোরী ছিলেন নাসরিন। অত্যন্ত রুপবতী। তাদের গাঁয়েরই জমিদার পরিবারের ছেলে আলম। একদিন গ্রামে এসে নাসরিন কে পছন্দ হয়ে যায় তার। বিয়ের প্রস্তাব করলেও নাসরিনের বাবা না করে দিয়েছিলেন। এর ফল ভুগতে হয়েছে তাকে। দিনে দুপুরে অপহরণ করে আলম নাসরিন কে। নাসরিনের বাপ মায়ের কপালে পিস্তল ধরে তাদের মত নেয় বিয়েতে… আর বিয়ে করে নেয় পনের বছরের নাসরিন কে।
সেই থেকে চলছে। কখনই স্বামীর উপরে কিছু বলতে পারেননি নাসরিন। কেবলমাত্র মুখ বুজে সয়েছেন তার রাগ… জেদ… প্রতিহিংসা। একটিই দুর্বল জায়গা আলমের… তা হল সাইকা।
বাপের পুরোপুরি প্রতিফলন সাইকা। একই রকম স্বেচ্ছাচারী। একই রকম জেদি। এবং নাসরিনের ধারণা কিছুটা মানসিক বৈকল্য ও আছে তার। কিছুই বলতে পারেন না মেয়েকেও। কিছু বলার চেষ্টা করলে কপালে জোটে স্বামীর অপমান আর অত্যাচার… সেই সাথে মেয়ের হাসি। লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে হয় তার।
— সাইকা ?
— ইয়েস মাম্মা
— সায়ন কে তুই অনেক ভালবাসিস ?
— হুম অন্নেক।
— তবে কেন শুনিস না ওর কথা ? ও তো ভাল কথাই বলে !
— কি ভাল বলে শুনি ?
— এই… তোকে শালীন কাপড় পরতে বলে… নামাজ রোজা করতে বলে…
— আমি ওর চাকর ? ভালবাসি বলে চাকর হয়ে গেসি যে ও যা বলবে তা করব ? আমার ড্রেস নিয়ে বলার ও কে ?
— আস্তে মা… আচ্ছা যা খুশি করিস।
পুষ্প এতক্ষন দরজার বাইরে ছিল। কেবিনের দরজা ভেদ করে সব শুনা যায়। সব শুনেছে… আর গা হিম হয়ে এসেছে ওর। এ কিসের মাঝে ফেঁসে গেছে সায়ন !! সাইকা মেয়েটা দেখি আস্ত ডাইনি ! আর ওর বাপ টা আস্ত শয়তান। সায়নের কি হবে !
ভাল হয়েছে। বেশ হয়েছে। একেবারে উচিত শিক্ষা ! ঢাকা এসছ আর প্রেম করে বেড়াচ্ছ না ? পুষ্প নামে একজন যে দিন রাত মনে করে সে খবর নেই… এসব নাক উঁচু মেয়েকে দেখেই পটে গেছে। বেশ হয়েছে ঠিক হয়েছে !