#একই_সুতোয়_বাঁধা
পর্ব-৮
সপ্ত শীখা
— চলো না জান আজকে লাঞ্চ করতে যাই ! প্লিইইইইজ… কত্তদিন আমরা বাইরে খাইনা !
— আমি কি মানা করেছি জানু… চল কোথায় যাবে। তোমার কথা কখনো ফেলি ?
— সো কিউট ইউ আর !
মুখে মুখে যতই মিষ্টত্ব দেখাক… মেজাজ খুব খিচড়ে রয়েছে সায়নের। সাইকার এই ওভারলোডেড ভালবাসা আর নিতে পারছে না ও। সাইকার চটকদার চেহারা দেখে যে প্রেম শুরু করেছিল, আজ সে মোহ ভঙ্গ হয়েছে ওর। সাইকার মেকাপ আবৃত সুন্দর মুখ… মডার্ন গেট আপ আর স্টাইলিশ লুক এর দিওয়ানা হয়েছিল সায়ন। আজ বুঝতে পারছে কতটা ভুল ও। এইরকম মেয়েদের কেবল চটক ছাড়া আর কিচ্ছুই থাকে না।
আরো ঝামেলা আছে। সায়ন কোন প্রকার শাসনই করতে পারেনা সাইকা কে। একটা কিছু বললেই কেঁদেকেটে তুলকালাম করে। সায়ন বড়লোকের ছেলে হলেও শালীনতা আর ধার্মিকতা ও শিখে বড় হয়েছে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে। তাই সাইকা স্বেচ্ছাচারিতা গুলো একেবারে অসহ্য ঠেকছে। কিন্তু কিছু বলতে গেলেই তো সেই চিল্লাচিল্লি ! সায়নের ধারণা এ মেয়ে সাইকোপ্যাথ। নইলে একটুতে অমন কেউ করে !
কিন্তু আজ সহ্য হচ্ছেই না সায়নের। দুদিন পরপর বাইরে লাঞ্চ ডিনারের বায়না। সায়ন বাপের টাকায় চলে না। বাবা যা পাঠাতেন সব ও ব্যাঙ্কে জমা রাখছিল আর নিজে চলেছে টিউশনির টাকায়। এখন বাবার টাকায় হাত তো পড়েই… উল্টো আরো বেশি টাকা আনাতে হচ্ছে এর বায়না সামলাতে। কিছু বলতে গেলে এর সাথে তার সাথে তুলনা করতে শুরু করে যেটা সায়নের জন্য ভীষণ অপমানজনক। তাই মুখ কেন চোখ কান সবই বুজে রয়েছে ও। দু একবার ইংগিতে ব্রেক আপ এর আভাস দিলেও ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সামনে পড়তে হয়। মানসিক একটা যন্ত্রনার মাঝে আছে সায়ন এখন।
এই যাতনার মাঝে এক ঝলক শীতল হাওয়া মনে বয়ে যায় যখন পুষ্পর কথা মনে পড়ে। আজকাল কেন যেন বেশিই মনে পড়ছে ওকে। গত কয়েক মাসে… সাইকার সাথে প্রেম হবার পর থেকেই সায়নের অবচেতন মন সাইকাকে পুষ্পর সাথে তুলনা করার চেষ্টা করছে। সাইকার উগ্র রুপের সামনে পুষ্পর সরল শান্ত রুপের তুলনা। তাই পুষ্প মনের ভেতর গেড়ে বসেছে আরো।
আচ্ছা… পুষ্পটা কেমন হয়েছে দেখতে ! আগেই ত মিষ্টি ছিল। হয়ত আরো সুন্দর হয়েছে। বড় বেশি ভাল ছিল মেয়েটা। ও কি সায়ন কে মিস করে ? হুট করে যদি দেখা হয়ে যায়… কি বলবে সায়ন কে প্রথম ? আগের মত ছুটে এসে ধাক্কা দিয়ে পানিতে ফেলে দেবে না নিশ্চয়ই !
— জান ! এই ! একা একা হাসছ কেন ?
— কই…
— কার কথা ভাবছিলে ?
— কারো-
— আহ স্বীকার করলেই তো হয় আমাকে ভাবছ। তা জনাব… সামনে বসে থাকা আমাকে দেখ নাহয় !
সায়ন দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এ আরেক রোগ সাইকার… ইম্যাজিনেশন।
— আহহ জান আবার !
— সরি…
— আমার নিউ স্কার্ট টা দেখনাই তুমি। রাস্তা ঘাটে প্রত্যেকটা মানুষ তাকায় দেখতেসে আর তুমি দেখলা না!
— দেখেছি তো বাবা। ইটস গুড।
— জাস্ট গুড ?
— অসাম !
এমন রাগ লাগছে যে মুখ দিয়ে কথা বেরুচ্ছে না সায়নের। ছি ! এমন পোশাক ভদ্রঘরের মেয়েরা পরে ! ছোট্ট একটা কালো স্কার্ট। উরুর উপরের খানিকটা বাদে পুরো পা ই বের হয়ে আছে। রাস্তা কেন… রেস্টুরেন্টের ওয়েটার এমনকি গেস্ট রাও লালসার দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে ওর দিকে। এ মেয়ে তো জ্বলজ্যান্ত যন্ত্রণা হয়ে দাঁড়িয়েছে সায়নের জন্য। আর কত !
💚💚💚💚💚💚
পুষ্পের ফার্স্ট ইয়ার ফাইনাল শেষ। কিছুদিনের ছুটি পেয়েছে। বাবা এবার রাজি হওয়ায় সকলে মিলে ঘুরে এসেছে সাজেক ভ্যালি। অসম্ভব সুন্দর জায়গাটা থেকে আসতেই ইচ্ছে করছিল না পুষ্পর। ঠান্ডার মধ্যে এই পবিত্রতা দেখে বিধাতার প্রতি আপনা থেকেই শ্রদ্ধায় মাথা নুয়ে আসে। কি অসাধারণ।
দুদিন ছিল ওরা। ভোরে ঘুম ভাঙ্গায় সূর্যোদয় দেখতে কটেজের বারান্দায় দাঁড়িয়েছিল পুষ্প। অসম্ভব সুন্দর সে দৃশ্য দেখে হুট করেই কেঁদে ফেলেছিল ও। কেননা সায়ন কে মনে পড়ে যাচ্ছিল আবারো। আসলে সূর্যোদয় দেখতে গিয়ে মনের মধ্যে অকারনেই একটা বিষাদ অনুভূত হয়। খুব একা লাগছিল… তখনি সায়ন কে মনে পড়ে যায় ওর। মনের গহীনে সুপ্ত ইচ্ছা সেই কবে থেকে লুকিয়ে রেখেছে… সায়ন ওর স্বামী হবে… ওর কাঁধে মাথা রেখে সূর্যোদয় দেখবার জন্য আরেক বার এখানে আসবে পুষ্প।
💙💙💙💙💙
— সাইকা জান… একটা কথা বলি মাথা গরম কোরো না…
— বল জানু।
— তুমি এই ছোট ছোট কাপড় পরাটা বন্ধ করতে-
— শাট আপ ইউ ব্লাডি গাইঁয়া !!
— সাইকা আস্তে কথা বল-
— তুই আস্তে কথা বল। তোর মত একটা গাইঁয়ার সাথে রিলেশন করাটাই আমার ভুল হইসে। তোমার জন্য এখন আমি আমার স্টাইল ছাড়ব ! নেভার ! আমি যেমন ঠিক তেমন ই থাকব আর তোমারো ঠিক তাই করতে হবে। আন্ডারস্ট্যান্ড !! ইউ ব্লাডি-
— চুপ ! চুপ একেবারে। আর একটা কথা বলবা তো একদম খুন করে পুঁতে ফেলব কিন্তু। আমি গাইয়া ছেলে। খুন করতে কতক্ষন !
— সায়ন !
— চোপ অসভ্য ফাজিল একটা। তোর মত পাগলের লগে কেন যে প্রেম করতে গেসিলাম আল্লাহ মালুম। আর ছাড়াইতেও দেস না ! আজকের পরে কোনদিন আমার পিছে আসবি তো ঠ্যাং ভাইঙ্গা হাতে ধরাই দিমু তোর।
— সায়ন ! ইউ আর মাই বয়ফ্রেন্ড !
— জাহান্নামে যাক তোর বয়ফ্রেন্ড ! আমার কারো বয়ফ্রেন্ড না। জাস্ট গেট আউট !
— সায়ন !
— ওহ ওয়েইট ।
স্যন সাইকার পার্স টা ছিনিয়ে নিয়ে টাকা বের করল। সেই টাকায়ই বিল পে করে রাস্তায় নেমে এল একাই। সাইকা বজ্রাহতের মত বসে আছে ভেতরে।
সায়নের নিজেকে মুক্ত মনে হচ্ছে আজ। একটা রিক্সা ডেকে চড়ে বসল। ঘুরে আসবে খানিকটা। বসার একটু পরেই সাইকার বারংবার কলে বিরক্ত হয়ে রিসিভ করল সায়ন।
— কি সমস্যা ?
— আমার থেকে পিছু ছাড়াতে চাচ্ছিলা তাইনা ? এমন পিছু ছাড়াব যে সারাজীবন মনে রাখবা। তোমার মত গাইয়ার প্রেমে যে কেন পড়েছিলাম ! এজন্য আজকে জীবন শেষ করছি। ভাল থাকবা।
সাইকার কল কেটে দিয়ে হতভম্ব সায়ন ভাবছে এটা কি ! আবার সুইসাইড এটেম্পট নিবে নাকি ! আবছা আবছা শুনেছে সায়ন যে সাইকা ওর আগের বফের সাথে ব্রেকাপ হয়ে যাওয়ায় সুইসাইড এটেম্পট নিয়েছিল। ওর মা সময়মত দেখায় বাঁচানো হয় ওকে। আবার কি তেমন কিছু !
ধুর। যা খুশি করুক। এইরকম চিনেজোঁক মার্কা মেয়েরা কখনই মরেনা। সবাইকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে তবে মরবে এ। জাহান্নামে যাক !