#একগুচ্ছ_জারবেরা
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৩
ক্লাস ঢু’কতেই নতুন স্যারের কথা শুনতে শুনতে বোরিং হয়ে গেলাম।এর মাঝেই একটা লোক ক্লাসে ঢুকলো।মুখ দেখা যাচ্ছে না মাস্ক পরার কারণে।লোকটা মাস্ক খুলতেই আমার মা*থা ঘু’রতে লাগলো।হাত পা অ’বশ হয়ে আসছে।আমি কাকে দেখছি।চো’খ ঝা’পসা হয়ে আসছে।মুখ থেকে শুধু একটা শব্দই বের হলো।
❝আরাদ ভাইয়া❞
আর কিছু ম’নে নেই আমার।যখন চো’খ খুললাম তখন দেখি আরাদ ভাইয়া আমার সামনে বসা।মানুষটা আগের থেকেও সুন্দর হয়ে গিয়েছে।আমি বললাম,,,
“আরাদ ভাইয়া আপনি দেশে কবে আসলেন?আর আমাদের ভার্সিটির প্রফেসরই হলেন কবে?খালামনি তো আমাকে বললই না আপনি এসেছেন”
“আস্তে প্রেয়শী!এতোগুলো প্রশ্ন কেউ একসাথে করে বলতো আমি কিভাবে উত্তর দিবো!”
মা*থা চু’লকে হেসে বললাম,,,”সরি আরাদ ভাইয়া।একটা একটা করেই উত্তর দিন”
আরাদ ভাইয়া মুচকি হেসে বলল,,,
“আমি আজ ১৫ দিন বিডিতে।আর তোকে সারপ্রাইজ দিবো বলেই আম্মুকে নি*ষে*ধ করেছি।”
‘”ওহ”
“এইগুলো বাদ দে অ’জ্ঞা’ন হলি কেনো তাই বল!”
“আসলে সকালে খাইনি আর আপনাকে দেখে অবাক হয়েই উ’ত্তে’জ’নার জন্য”
“পা*গ*লি প্রিয়!শোন দুই মিনিট ওয়েট করে আমি একজনকে ফোন করে বলি তোর জন্য খাবার আনতে”
“না না ভাইয়া আমি বাসায় গিয়ে খেয়ে নেবো”
“আচ্ছা চল আমি তোকে দিয়ে আসি”
আমি মা*থা ঝাঁ!কা’লাম। আরাদ ভাইয়া আমায় উঠতে সাহায্য করলেন।আমি দাঁড়ালাম।হিয়াকে বললাম,,,
“হিয়ু তুই কি ক্লাস করবি আমি তো চলে যাচ্ছি।”
“আমি আজকে ক্লাস করবো প্রেয়শী তুই চলে যা স্যারের সাথে।”
আমি কিছুদূর হাঁটার পর পরে যেতে নিলাম।আরাদ ভাইয়া আমায় ধরে ফেললেন।কোলে তুলে নিলেন।আমি নামার চে’ষ্টা করে বললাম,,,
“আরাদ ভাইয়া কি করছেন এইটা পাবলিক প্লেস।তার উপর আপনি স্যার আমি স্টুডেন্ট সবাই খা’রাপ ভাববে”
“তুই খুব ভালো করেই জানিস প্রিয় আমি কে কি বলল তা কেয়ার করি নাহ!”
“কিন্তু আমি করি আরাদ ভাইয়া”
আরাদ ভাইয়া ধ*ম*ক দিয়ে বললেন,,,,
“চুপ থাক তো তুই”
আমি আর কথা বাড়ালাম না।কারণ এনাকে এখন আমি হাজার বললেও উনি আমায় নামাবেন না।তাই মু’খ ব্যা’থা করে লাভ নেই।তার থেকে চুপ থাকি বরং। কিন্তু এখন থেকে যে আমার দুঃখের দিন শুরু তা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি।আরাদ ভাইয়া যে কি করবেন তা শুধু উনি আর আল্লাহ জানেন।বাসায় সামনে গাড়ি থামিয়ে আরাদ ভাইয়া আবার আমায় কোলে তুলে নিলেন।দরজার সামনে এসে কলিংবেলে দিলেন।আম্মু গেট খুলে আরাদ ভাইয়াকে দেখে অবাক বললেন,,,
“তুই কবে আসলি আরাদ বাবা বাংলাদেশে। আর ওই কেনো তোর কোলে”
আরাদ ভাইয়া আমাকে এনে সোফায় বসিয়ে দিয়ে বলল,,,
“এইতো খালামনি ১৫ দিন হবে হয়তো। কেমন আছো তুমি”
আম্মু অ’ভি’মান করে বলল,,,
“তুই ১৫ দিন বাংলাদেশে এসেছিস তাও আপা বা তুই একবারও বললি না।ভু*লে গেছিস এই খালামনিকে তাই তো”
আরাদ ভাইয়া হেসে আম্মুকে জড়িয়ে ধরে বলল,,,
“একদমই না খালামনি।তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু তোমার মেয়ে যা করলো”
“কি করেছে প্রেয়শী”
“আর বলো না মামনি আমি ওদের ভার্সিটিতির ইংরেজি স্যার হিসাবে জয়েন করেছি।আজকে ফার্স্ট ক্লাস ছিলো ওদের আর ও আমাকে দেখেই অ*জ্ঞা*ন হয়ে গিছে”
“থাক আর বলতে হবে না তোর ও যে এই কয়েক বছরে কি হয়েছে”
শে’ষের কথাটা বলই আম্মু দীর্ঘশ্বাস ফেলল।তারপর আরাদ ভাইয়া কিছুসময় আমাদের বাসায় থাকলেন।আম্মু থাকতে বললে উত্তরে বলেন অন্য একদিন থাকবেন এসে।আমি রুমে এসে ভাবতে লাগলাম ছোট বেলায় করা উনার পা*গ*লা*মি গুলো।আসলে সকালে আমি এমনি এমনি অ*জ্ঞান হয়নি!উনাকে দেখে ভয় পেয়েই অ’জ্ঞা’ন হয়ে গিছি।তাও পরে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করেছি।সারাটা দিন রুমেই কাটলো আমার।আম্মু দুপুরে শুধু খাইয়ে দিয়ে গেছে।সন্ধ্যার দিকে খবর আসলো ফুফি অ’সু’স্থ হয়ে পরেছে।তাড়াহুড়ো করে রেডি হয়ে ফুফিদের বাসার উদ্দেশ্য রওনা হলাম।
ফুফিদের বাসায় আসতেই দেখি ফুফা সোফায় বসে আছেন চি’ন্তি’ত তা তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে।আমি সোজা ফুফির রুমে চলে আসলাম।ফুফি ঘুমিয়ে আছেন।আমি ফুফির পাশে বসলাম।ফুফি হুট করে চো’খ খুলল।আমাকে দেখে উঠে বসার চে’ষ্টা করলো।আমি ফুফিকে ঠিক করে বসিয়ে দলাম।ফুফি আমাকে বলল,,,,
“কেমন আছিস প্রেয়শী মা”
ম’লি’ন হেসে বললাম,,,,
“ভালো আছি ফুফি তুমি কেমন আছো আছো?”
ফুফি ম!লি’ন হাসলো।তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে ভালো নেই।
“আমি ভালো আছি রে মা”
“কেমন ভালো আছো তা তো দেখতেই পারছি না খেয়ে খেয়ে নিজের কি হাল করেছো দেখেছো তুমি।”
“তুই নিজের কি হাল করেছিস প্রেয়শী আবার আমার কথা বলছিস নিজের চেহারার কি অব’স্থা আয়নায় দেখেছিস”
মলিন হেসে বললাম,,,
“চেহারা দিয়ে কি করবো ফুফি যাকে দেখাবো সেই তো নেই!”
ফুফি এবার আমার হাত ধরে কেঁদে দিয়ে বলল,,,
❝আমার জন্যই তোর আর আমার আনফির জীবনটা ন*ষ্ট হলো রে মা ক্ষ*মা করে দিস প্রেয়শী আমার ছেলেটাও যদি একবার তোর কথা বলতো তাহলে আর এমন কিছুই হতো না❞
“না না ফুফি ভাগ্য যা ছিলো তাই হয়েছে এর থেকে বেশি কিছু না”
ফুফির সাথে অনেক সময় কথা বললাম। মাত্রকিছু সময় হলো ফুফি ঘুমালো।আজকে এখানেই থাকবো আমি। ফুফির রুম থেকে বের হতেই চো’খে পরলো আনফি ভাইয়ার রুমটা।ধী’রে ধী’রে রুমে প্রবেশ করলাম।রুমটা ঠিক আগের মতোই আছে।কিন্তু মানুষটা নেই!টেবিলের পরে একটা ডাইরি চো’খে পরলো।আমি কৌ’তু’হ’ল ব’শ’ত ডাইরিটা খুললাম।প্রথম পৃষ্ঠায় চোখ দিতেই দেখলাম গো’টা গো’টা অ’ক্ষ!রে লিখা,,,
❝আমার প্রেয়শী❞
ডাইরির পরের পৃষ্ঠা গুলোতে আমাকে নিয়ে লেখা তার অ’নুভূ’তির প্রকা’শ।গাল বেয়ে পানি পরতে রাখলো।শেষের পৃষ্ঠায় যেতেই থ’মকে গেলাম।চি’ৎ’কা’র করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে।উনি যেদিন ছে*ড়ে চলে গেলেন সেদিনের লেখা।
প্রিয়,,,
আজকে আমি তোর থেকে হাজার গুন দূরে চলে যাবো।যেখান থেকে আর আসবো কিনা জানি না।জানি খুব ভালোবাসিস আমায় কিন্তু আল্লাহ হয়তো আমার সাথে তোর ভা*গ্য লিখেনি তাই হয়তো আমরা আ’লা’দা আমরা।কালকে যখন তোর কাছে গেলাম তখন জানিস ম*নে হচ্ছিল তোকে নিয়ে দূরে কোথাও চলে যাই যেখানে কেউ থাকবে না।কিন্তু তা তো স’ম্ভ’ব নয়।…….
চলবে,,,,,,?
[