একগুচ্ছ জারবেরা পর্ব -০৮ ও শেষ

#একগুচ্ছ_জারবেরা
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৮(শেষ)

“আনফি আর আরাদ দুজনই ফিরে এসেছে”

“কিহ কবে আসলো দুজন”

”এখন কি হবে বাবা প্রেয়শী ভালোবাসে আনফিকে আনফিও আবার আরাদও প্রেয়শীকে ভালোবাসে”

“তুমি চিন্তা করো না আম্মু আমি থাকতে আমার বোনের কিছুই হবে না আর আনফি আর প্রিয়কেও কেউ আ’লা’দা করতে পারবে না”

প্রিয়মের কথায়ও প্রেয়শীর মায়ের চি’ন্তা যায় না।সে বুঝতে পারছে না কি করবে!একদিকে মেয়ের ভালোবাসা আরেকদিকে বোনের ছেলে।

_________

“শোন তুই ওই আরাদের থেকে দূরে থাকবি বুঝলি”

“কেনো আনফি কি হয়েছে”

“আমার মনে হয় ও তোকে পছন্দ করে হয়তো ওর চো’খ দেখে তাই মনে হচ্ছিল আর তুই শুধু আমার বুঝেছিস”

আমি হেসে বললাম,,,
“এই প্রেয়শীও তুমি ছাড়া আর কারো হবে না কথা দিলাম”

আমার কথায় আনফি মুচকি হাসলেন।গাড়ি স্টার্ট দেন।আমাকে ভার্সিটির সামনে নামিয়ে দিয়ে বলেন,,,,
“শোন ক্লাস শে*ষ হলে ফোন করিস আমায় নিয়ে যাবো আমি”

আমি হেসে বললাম,,,
“ঠিক আছে”

হিয়া দূর থেকে দৌড়ে আমার কাছে আসলো।আমার কাছে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,,,,
“ওটটটটটা আনফি ভাইয়া ছিলো”

মুচকি হেসে বললাম,,,,
“হ্যা আমার আনফি ছিলো”

“কিহ কবে আসলো কিভাবে এতোদিন কোথায় ছিলো”

“এতোদিন লন্ডনে ছিলো”

“পুরো কাহিনী বল”

আমি হিয়াকে সব খুলে বললাম।মেয়েটা আমায় একটা কথায় বলল তোর সামনে প্র’চ’ন্ড বি’পদরে প্রেয়শী।আমি কারণ জিজ্ঞেস করতেই বলল আনফি ভাইয়ার মতো আরাদ ভাইয়াও তোকে পা*গ*লের মতো ভালোবাসে।আর আরাদ ভাইয়া কখনো চুপ থাকবে না তোকে তো আনফি ভাইয়ার থেকে দূরে সরাতে চাইবেই।
আমি ওর কথায় চিন্তায় পরে যাই।এ জীবনে আনফি ভাইয়া ছাড়া অন্য কারো হওয়া স’ম্ভ’ব নয় আমার পক্ষে।
দুইটা ক্লাস করে বাইরে আসতেই দেখলাম খালামনিকে দাঁড়িয়ে থাকতে।খালামনি আমার কাছে এসে আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে একটা ক্যাফেতে নিয়ে আসলেন।আমি ভ্রু কুচকে বললাম,,,
“কি হলো খালামনি তুমি আমাকে এখানে নিয়ে আসলে কেনো?”

“আমার তোর সাথে জরুরি কথা আছে”

“হুম বলো”

খালামনি আমার হাত ধরে বলল,,,
“প্রেয়শী আমার ছেলেটাকে বাঁ’চা আমার ছেলেটা তোকে অনেক ভালোবাসে।সেই ছোট থেকে। ও তোকে ছা’ড়া বাঁ’চতে পারবে না রে।তুই ওকে বাঁচা না।বিয়ে করবি আমার আরাদকে”

প্রেয়শী নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,,,
“দেখো খালামনি তোমরা সবাই জানো আমি আনফিকে ভালোবাসি তাই ওই সব কথা আর মা*থায় ও এনে না!আমি শুধু একজনের আর সেই একজনেরই থাকবো সে ছাড়া অন্যকারো হওয়া স’ম্ভ’ব নয় তাই বলছি এইসব কথা চি’ন্তা করা বাদ দিয়ে দেও”

“প্রেয়শী প্লিজ আরাদ তোকে সত্যি অনেক ভালোবাসে”

“আমি তোমাকে বলেছি আমি শুধু আনফিকে ভালোবাসি শুধু আনফিকে”

কথাটা বলেই চলে আসলাম ওখান থেকে।ক্যাফেটা ভার্সিটির পাশে হওয়ায় আমি ভার্সিটির সামনে গিয়ে আনফিকে কল করলাম।আনফি ৫ মিনিটের মধ্যে চলে আসলেন।আমি আনফিকে বললাম,,,
“আপনি যত দ্রুত পারেন বিয়ে করুন আমাকে প্লিজ নাহলে আরাদ ভাইয়া কিছু একটা করে ফেলবেন”

“কেনো কি হয়েছে আরাদ কি করবে”

আজকের সব কথা উনাকে খুলে বললাম।উনার আমার কথা শুনে চো’খ মু’খ লা*ল হয়ে গিছে। আমি ভ*য় পেলাম।আনফি বলল,,,,
“আমি কালকেই তোকে বিয়ে করবো সমস্যা নেই”

আনফি ভাইয়া আমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে চলে গেলেন।আমি বাসায় এসে আম্মু ভাইয়াকে সব বললাম।আম্মু ভাইয়াও রাজি হলেন।আব্বুও রাজি।ওদিকে আনফি ও আমায় ফোন দিয়ে বললেন ফুফা ফুফিও রাজি।আজকে বিকালে এসে আমাকে নিয়ে শপিং এ যাবেন।বিকাল হতেই রেডি হতে লাগলাম।আনফি এসেই আমাকে নিয়ে শপিংমলে চলে আসলেন।
আমরা ঘুরে ঘুরে শপিং করতে লাগলাম।আনফি আমার সাথে দুষ্টমি করেই যাচ্ছে।আমি ও হাসছি।একটা লা*ল লহেঙ্গা কিনলম।আর আনফির জন্য লা*ল শেরওয়ানি।আরো তো কতো কিছু কিনলেন আনফি।
শপিংকরে বাসায় আসতে আসতে অনেক লেট হয়ে গেলো।আনফি আমায় বাসায় পৌছে দিয়ে চলে গেলেন।
কালকে সকালের জন্য অপেক্ষা করছি।কালকের দিনটা আমার জীবনের সবথেকে সেরা দিন হতে চলেছে।

___________

সকালে উঠে আমি খেয়ে নিলাম তাড়াতাড়ি। একটু পর হয়তো পার্লার থেকে সাজাতে লোক চলে আসবে।চলেও আসলো।সাজতে সাজতে ১টা বেজে গেলো।এর ভে’তর আমি আনফির সাথে অবশ্য একবার কথা বলেছি।উনারা হয়তো ৩টার দিকে আসবেন।
হুট করে দরজা খোলার শব্দে ভ*য় পেয়ে গেলাম।পেছনে তাকিয়ে দেখি আরাদ ভাইয়া। আমি হেসে বললাম,,
“আরে আরাদ ভাইয়া আপনি। এসেছেন যখন আমাদের বিয়েটা খেয়ে যাবেন”

কথাটা বলতেও গ’লা কাঁ’পছিলো।এই লোকটাকে দিয়ে বিশ্বাস নেই যখন তখন যা খুশি করতে পারে।তাও এসেছে যখন বলার কথা তাই বললাম।হুট করে এসেই আমার মুখে রুমাল চেপে ধরল আর কিছু মনে নেই।

প্রেয়শীকে অ’জ্ঞা’ন করে কাঁ’ধে তু’লে নিলো আরাদ।তারপর সিড়ি দিয়ে নিচে নামতে লাগলো।প্রিয়ম দেখে চি’ল্লি’য়ে বলে,,,
“কি হচ্ছে কি আরাদ তুমি প্রেয়শীকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছো আর বাড়িতে ঢু’কলেই বা কি করে”

আরাদ কোনো কথা না বলে বাড়ি থেকে বের হতে নিচ্ছিল আর তখনই প্রিয়ম সামনে চলে আসে।প্রিয়ম প্রেয়শীকে নিজের কাছে আনতে চায় কিন্তু আরাদের গার্ডরা তাকে নিয়ে যায়।আরাদ গাড়িতে উঠে বসে প্রেয়শীকে নিয়ে।প্রেয়শীর মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,
“তুই শুধু আমার শুধুই আমার কেউ আমার কাছ থেকে আ’লা’দা করতে পারবে না তোকে”

____________

চো’খ খুলে নিজেকে একটা অন্ধকার রুমে আবিষ্কার করলাম।শোয়া থেকে দাঁড়িয়ে রুমের লাইট জ্বালালাম।কোথায় বোঝার চে’ষ্টা করলাম কিন্তু বুঝতে পারলাম নাহ।এখান বের হওয়ার রাস্তা খুঁ’জতে লাগলাম।পেয়েও গেলাম।বারান্দায় গিয়ে দেখালাম আমি বেশি না দোতালায় আছি।আলমারি ঘাটতে লাগলাম। অনেকগুলো শাড়ি পেলাম হয়তো আরাদ কিনে রেখেছিলো।আমি শাড়িগুলো একসাথে বে’ধে নিচে নামলাম।আমি কখনোই আনফি ভাইয়া ছাড়া আর কারো হতে চাই না।আর এই পা*গ*লের তো মোটেও না।আমি দৌড়াতে লাগলাম দৌড়াতে দৌড়াতে মেন রোডে এসে পরলাম।রাস্তার ওপারে দেখলাম আনফি দাড়িয়ে আছে সেই লা*ল শেরওয়ানি পরে।আমি ডাক দিলাম কিন্তু এতো দূর থেকে শুনতে পেলো না।
রাস্তা পার হতে লাগলাম।হুট করে একটা ট্রাক এর সাথে ধা*ক্কা লাগলো আসলে বুঝতেই পারিনি কখন ট্রাকটা এসে পরেছিলো।ছি’টকে দূরে পরলাম আমি হয়তো আর বাঁচবো না।

আনফি মাত্র সব খেয়াল এলো।প্রিয়মের ফোন করে বলার পর থেকে পা*গ*লের মতো খুঁজে চলেছে প্রেয়শীকে কোথাও পেলো না।

“প্রিয়য়য়য়য়য়য়য়য়য়য়য়য়য়”

প্রিয় বলে ডেকেই দৌড়ে প্রেয়শীর কাছে গেলো।তখনও প্রেয়শীর জ্ঞা’ন আছে।আনফি বুকের সাথে জড়িয়ে বলল,,,
“এটা কি হলো প্রিয় তুই আমায় কথা দিয়ে ছিলি আমায় ছেড়ে যাবি না তাহলে কেনো ছে’ড়ে যাচ্ছিস না না আমি তোর কিছুই হতে দেবো না।”

আনফির কথার মাঝেই আরাদ উপস্থিত হলো।আরাদ প্রেয়শীর দিকে আসতে যাবে তখনই প্রেয়শী বলল,,,,
“আমিও তোমায় খুব ভালোবাসি আনফি। ভালো থেকো তুমি আর হা নিজের খেয়াল রেখো আমার হাতে বেশি সময় নেই। আর আরাদ ভাইয়া আপনাকে বলি আমি আমার জীবনে শুধু একজনকেই ভলোবেসেছি এবং বাসি সে হলো আনফি।উনি ছাড়া অন্যকারো হওয়া সম্ভব ছিলো না আমার আপনারা ভলো থাকবেন”

প্রেয়শী আর কথা বলল না।আনফি কাঁধ ঝাঁ’কাতে ঝাঁ’কাতে বলল,,,
“প্রিয় কথা বল ও প্রিয় কথা বল না তোকে ছাড়া যে আমি থাকতে পারবো বিশ্বাস কর দ’ম ব’ন্ধ হয়ে যাচ্ছে আমার মনে হচ্ছে ম’রে যাবো আমি। আমি তোকে ছা’ড়া ভালো থাকতে পারবো না ওঠ না”

_______________

“প্রিয় দেখ আমি তোর জন্য #একগুচ্ছ_জারবেরা ফুল নিয়ে এসেছি তোর না জারবেরা খুব পছন্দ।জানিস প্রিয় আমি বেশ আছি তোর স্মৃতি আগলে কিন্তু তোর শূন্যতা টা যে আমায় কু’ড়ে কু’ড়ে খা’য়।”

আনফি প্রেয়শীর কবরের সামনে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছিলো।সেদিন প্রেয়শী আনফির ডাকে উঠেনি।ডক্টরের কাছে নিয়ে গেলে বলে সে অনেক আগেই মারা গিয়েছে।সেদিন থেকেই আনফি আর আরাদের অবস্থা করুন হতে থাকে।আরাদ তো পা*গ*লই হয়ে গেছিলো।এই তো সুস্থ হলো ১বছর হবে।

কিছুক্ষণ পর আরাদ ও #একগুচ্ছ_জারবেরা হাতে আসে প্রেয়শীর কবরের সামনে।আনফির দিকে একবার তাকিয়ে আবার প্রেয়শীর কবরের দিকে তাকিয়ে বলল,,,
“জানিস প্রিয় আমি যদি জানতাম তোকে বিয়ের আসর থেকে নিয়ে আসলে তুই আমাদের সবাইকে ছেড়ে যাবি তাহলে বিশ্বাস কর কখনো আনতাম না।দেখতাম অন্যকারো হতে তাহলে তো তুই বেঁচে তো থাকতি।এই ভেবে নিজেকে শান্তনা দিতাম যে আমার ভালোবাসা বেঁচে তো আছে।এই পাঁচটা বছর কিভাবে কেটেছে তা কাউকে বলে বোঝাতে পারবো নারে।ক্ষমা করে দিস। ”

আনফির দিকে তাকিয়ে বলে,,,
“আমাকে ক্ষমা করে দিও।”

আনফি মলিন হেসে বলে,,,
“আমাদের ভা*গ্যে যা লিখা ছিলো তাই হয়েছে।তাই ক্ষ’মার কথা বাদ দাও। আল্লাহ না চাইলে এগুলো কিছুই হতো না।”

ওরা দু’জন প্রেয়শীর জন্য আনা #একগুচ্ছ_জারবেরা ফুল প্রেয়শীর কবরের উপর রেখে চলে যেতে লাগলো।আনফি অপেক্ষা করছে তার মৃত্যুর কবে সে তার প্রেয়শীর কাছে যাবে।এ জীবনে হয়তো আর কাউকে ভালোবাসতে পারবে না।

“সমাপ্ত”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here