একজোড়া পায়রা পর্ব -০৩

#একজোড়া_পায়রা
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
#পার্ট৩

বাবা জানালো অনুর নাকি বিয়ে।তাই বাড়িতে যেতে হবে।মন টানছেনা আমার।গেলেই ঐ শান্তের মুখোমুখি হতে হবে।কেন যেন লোকটার চোখের চাহনীই আমার কাছে সুবিধার মনে হয় না।মেস থেকে ক্যাম্পাস দূরে হওয়ায় হলে শিফট করি আমরা।কিন্তু আবার এখান থেকে হল দূরে হয়ে যায়।বাসে করে যেতে হয়।শিশিরকে পড়িয়ে আন্টির কাছ থেকে ছুটি নিয়ে আসি।দুদিন হলো তালগাছটাকে দেখি না।বাসায় থাকেন না বোধহয় বেশি। রাজনীতির মানুষ ব্যস্ত থাকাই স্বাভাবিক। কিভাবে টাকা মেরে খাওয়া যায় পাব্লিকের থেকে এই তো ধান্দা।পাব্লিকের টাকা মেরেই এরা বড়লোক হয়। বাসস্টপে দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলাম।হঠাৎ দেখি একটা কুকুর আমার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।কি মায়াবী চাহনী।পাশে একটা দোকান থেকে পাউরুটি কিনে কুকুরটাকে খেতে দেই।এরই মধ্যে বাস আসে।উঠে দেখি সীট একটাও খালি নেই।আজ দাঁড়িয়েই যেতে হবে দেখছি।কিছুদুর যাওয়ার পর গায়ে কারও খারাপ স্পর্শ অনুভব করি।পেছন ঘুরে আমার বাবার বয়সী এক লোককে দেখতে পাই।কিছু না বলে একটু সামনে আগাই।পরে দেখি লোকটাও আমার পেছন আসছে।আবার সেই বাজে স্পর্শ!বেশিক্ষণ চুপ করে থাকতে পারলাম না।প্রশ্ন ছুড়ে মারি লোকটার দিকে,,,

-আমার জায়গায় আপনার মেয়ে হলে ঠিক এই কাজটাই করতেন আংকেল?

আমার আকষ্মিক প্রশ্নে লোকটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়।ঢোক গিলে বলে,,,,

-মা..মা..মানে?
-পাব্লিক বাসে মেয়ের বয়সী একটা মেয়েকে এভাবে না হ্যারাস করলেও পারতেন।
-কী বলছো তুমি এসব বেয়াদব মেয়ে?

আমি কিছু বলতে যাবো ঠিক তার আগেই পাশের সীট থেকে একটা মধ্যবয়সী মহিলা বলে ওঠে,,,,

-চুপ থাকেন আপনি।অপরাধ করেছেন আবার স্বীকার না করে মেয়েটাকে ছোট করছেন।লজ্জা লাগা দরকার আপনার।অনেকক্ষণ ধরেই দেখছি আপনি মেয়েটাকে বিরক্ত করছেন।মেয়েটা সামনে এগিয়ে এলো আপনিও পিছু পিছু এলেন এগিয়ে।আবার উঁচু গলায় মেয়েটাকে বেয়াদব বলেন!

মহিলাটার সাথে সাথে বাসের আরও কিছু যাত্রী লোকটার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।যা নয় তাই বলে লোকটাকে অপমান করতে লাগে।শেষে কন্ডাক্টরকে বলে লোকটাকে বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়।

হলে গিয়ে দেখি এশা নেই।বাকী রুমমেটদের থেকে শুনতে পাই নাবিল ভাইয়ার সাথে ঘুরতে গেছে।ক্যাম্পাসে বলতে গেলে ওরা হিট কাপল।কম বেশি সবাই জানে সেকেন্ড ইয়ারের নাবিল ভাইয়ার প্রেমিকা আমার বান্ধবী এশা।এদের সুবাদে আমিও ক্যাম্পাসে কিছুটা পরিচিতি পেয়েছি। খেয়ে কাপড় গুছিয়ে নিই।সকাল সাড়ে দশটার ট্রেনে যাবো।জামালপুর এক্সপ্রেস।গন্তব্য বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর পুর্ব পার।আমি এমনিতে বাসে যাতায়াত করি।এই প্রথম সিদ্ধান্ত নিলাম ট্রেনে বাড়ি যাবো।নতুন ট্রেন সে কারণে আগ্রহও পাচ্ছি।ভাবছি অনলাইনে টিকিট কিনবো।কিন্তু কিভাবে কেনে আমি জানি না।নাবিল ভাইয়া হয়তো পারবে।প্রায়ই চিটাগং যান ট্রেনে।এশাকে ফোন দিই।এইবার সাথে সাথেই কল রিসিভ করেন মহারাণী।

-হ্যাঁ বল।
-নাবিল ভাইয়া কই?
-পাশেই আছে।কেন?
-ফোন দে উনাকে।
-কি দরকার আমায় বল।
-তোকে বলে কোনো লাভ হবে না।উনাকে ফোন দিতে বলছি দে তুই ফোন উনাকে।

এশা আর কিছু বলে না।নাবিল ভাইয়াকে ফোনটা দিলে আমি উনাকে সালাম দিই।উনি সালানের জবাব দিয়ে কারণ জানতে চান যে হঠাৎ করে তাকে আমার কী দরকার হলো,,,

-ভাইয়া আমি বাড়ি যাবো।এই প্রথম ট্রেন জার্নি।জামালপুর এক্সপ্রেস।কাইন্ডলি যদি অনলাইনে টিকিট কেটে দিতেন!
-চাপ নিও না।পেয়ে যাবে টিকিট ।কালকে যাবে বাড়ি?
-হুম।বোনের বিয়ে…

আমার কথা শেষ হতে না হতেই এশা নাবিল ভাইয়ার থেকে ফোন নিয়ে নেয়।

-এই তুই বাড়ি যাবি মানে?আমি আর নাবিল না কাপল ফটোশুট করবো।তুই তো ভালো ছবি তুলিস।তুই না বলছিলি ছবি তুলে দিবি!
-হঠাৎ করে।টিউশনে যাচ্ছি।মাঝ রাস্তায় বাবা ফোন করে জানায় যে অনুর বিয়ে।আমারও মন টানছেনা বাড়িতে।কিন্তু কি করবো বল?

আমি জবাব দিই।


কমলাপুর স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছি।চারপাশটায় বেশ কোলাহল।নাবিল ভাইয়া আর এশা এসেছে আমার সাথে।ট্রেনে সীট খুঁজে দেন আমায় নাবিল ভাই।ট্রেন ছাড়তে এখনো মিনিট দশের মতো বাকি। যাত্রী চাপ নেই অত।অধিকাংশ সীটই খালি।আমি ব্যাগ থেকে টাকা বের করে নাবিল ভাইয়াকে সাধি।নাবিল ভাইয়া বেকুব হয়ে যান।প্রশ্ন করেন,,,

-কিসের টাকা?
-টিকিট কেটে দিলেন যে!
-তো কি টাকা দেওয়া লাগবে আমায়? তুমি আমার কাছে ছোট বোনের মতো।টাকা সেধে তুমি আমায় অপমান করলে মেঘ।

উনার কথা গুলো আমার কলিজায় লাগে।অনুতপ্ত কন্ঠে বলি,,,,

-সরি ভাইয়া।

এরই মধ্যে এনাউন্সমেন্ট দেওয়া হয় ট্রেন ছাড়ার।নাবিল ভাইয়া নেমে যায়।আমি টাকাটা ব্যাগে ঢোকাতে যাবো ঠিক তখনই চিলের মতো ছো মেরে এশা টাকা নিয়ে যায়।দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে,,,

-আমার টাকা নেওয়া আর নাবিলের টাকা নেওয়া একই হলো।চললাম।হ্যাভ আ সেইফ জার্নি।

গাল টেনে বলে এশা।আমি বেকুবের মতো তাকিয়ে বলি,,,

-ফি আমানিল্লাহ।

ট্রেন ছেড়ে দেয়।ধীর গতিতে চলায় এশা ট্রেন থেকে লাফ দিয়ে নামতে সক্ষম হয়।জানালা দিয়ে দেখি দুজন হাত নেড়ে আমায় বিদায় জানাচ্ছে।যাত্রার অলস সময় কাটাতে অনলাইনে আসি।দেখি শান্ত মেসেজ দিয়েছে।

-কী গো বউ আসছো শুনলাম।

আমি রিপ্লাই দেওয়ার প্রয়োজন অনুভব করি না।সীন করে রেখে দিই।বিমানবন্দর স্টেশনে থামে ট্রেন।এবার বেশ ভালোই যাত্রী উঠে। পপকর্ণ ওয়ালার কাছ থেকে পপকর্ণ কিনেছিলাম।প্যাকেট ছিড়ে যেই না একটা মুখে দিতে যাবো ঠিক তখনই একটা ছেলে মুচকী করে হেসে বলে ওঠে,,

-স্কিউজমি ম্যাম।আপনি যদি একটু সরে বসতেন!এটা আমার সীট।

আমি আর কোনো কথা বলি না।জানালার পাশের সীটটায় সরে যাই।ট্রেন চলেছে আপন গতিতে।আমি জানালার ধারে বসে হাওয়া আর পপকর্ণ খাচ্ছি।ছেলেটা কানে ইয়ারফোন গুজে গান শুনছে আর ফোন চালাচ্ছে।সামনের ছোট ছোট অবাধ্য চুল গুলো বড্ড জ্বালাচ্ছে।খোঁপা খুলে আবার বেঁধে নিই।খোঁপা করা শেষে খেয়াল করি ছেলেটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি আর কিছু বললাম না।চোখ আছে তাকাতেই পারে।হঠাৎ করে মুচকী হেসে বলে উঠে,,

-আপনার চুলগুলো সুন্দর।
-ধন্যবাদ।

চুপচাপ নিজের মতো বসে ছিলাম।খেয়াল করলাম ছেলেটা কেমন ছটফট করছে।কথা বলতে চাইছে মনে হয়!চাপা না রেখে জানিয়েই দিলো ভেতরের কথা।

-হাই আমি নিহান।
-আসসালামু আলাইকুম আমি মেঘ।

অনিচ্ছা থামা সত্ত্বেও ভদ্রতার খাতিরে ছেলেটার কথার জবাব দিই।

-আমি টাংগাইল যাচ্ছি আপনি?
-যমুনা সেতুর পুর্ব পাড়।
-স্টুডেন্ট?
-হু।
-কলেজ ওর ভার্সিটি?
-ভার্সিটি।
-কোন ভার্সিটি?
-জগন্নাথ।
-কোন ইয়ার?
-অনার্স্ট ফার্স্ট।
-কোন ডিপার্টমেন্ট?
-ক্যামিস্ট্রি।

ছেলেটা নিজের মতো প্রশ্ন করে যাচ্ছে।আমি ভদ্রতার খাতিরে প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাচ্ছি।ছেলেটা মুচকী হেসে বলে,,,

-আমি বোটানির ফাইলান ইয়ারের।

আমি আর কিছু বলি না।ছেলেদের সাথে কথা বলতে কেমন যেন অসস্থি লাগে।নিহান যে চে আমার সাথে কথা বলতে এসেছে।বুঝেছে বোধহয় আমি অসস্থি বোধ করছি।লাজুক হাসি দিয়ে বলে,,,

-আপনার হয়তো অসস্থি লাগছে।আমি একটু বাচাল টাইপের ছেলে। কথা না বলে থাকতে পারি না।ভাবলাম বোরিং জার্নিতে আপনার সাথে কথা বলে সময় কাটবে।তাই আর কী…

নিহান থেমে যায়।আমারও বিরক্ত লাগছে।তাই উনার সাথে তাল মেলাই।বেশ মিশুক ছেলেটা।বেশ ভালোই লাগছে কথা বলে।ভালো ভদ্র ছেলে মনে হওয়ায় আমরা ফেসবুকে পরস্পরকে লিস্টে এড করি।

চলবে,,,ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here