একজোড়া পায়রা পর্ব -০২

#একজোড়া_পায়রা
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
#পার্ট২

-ভাবি আপনি কি ভাইয়াকে কিছু বলেছিলেন?

গতকালের মতো আজকেও আমি শিশিরের আচমকা ভাবি ডাকে চমকে যাই।কালই না বললাম সে যেন আমায় ভাবি না ডাকে।যেই না কড়া গলায় ধমক দিতে যাবো ঠিক সেই সময়ই শিশির আমার ঠোঁটজোড়ায় আঙুল ধরে চুপ করিয়ে দেয়।আস্তে করে বলে,

-শশশ!চুপ ম্যাম!ভাইয়া বাসায় আছে।পাশের ঘরে বসে আছে।আপনাকে ভাবি না ডাকলে আমায় ধুমধাম দেবে।

মানে?ঠিকই ভেবেছিলাম। লোকটা আমার কথা আমলে নেই নি।ইনি নাকি আবার রাজনীতি করেন!আমার কাছে শিখতে আসুক রাজনীতি কি,কাকে বলে, কত প্রকার।রাজনীতি করতে হলে জনগণের কথাকে প্রাধান্য দিতে হয়।কিন্তু এরা?এদের মতো মানুষ রাজনীতিতে আছে বলেই দেশটা আজ রসাতলে গেছে।মন চাচ্ছে গিয়ে ব্যাটার গলা টিপে ধরি।বাচ্চাদের কি সব শিখায়!আর একবার এমন করুক না!আমি টিউশনিইই ছেড়ে দেবো।বিরক্ত কর।নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে শিশিরকে পড়ানোয় মন দিই।পড়ানো হয়ে গেলে বাড়ির কাজ দিয়ে মেসের দিকে রওনা দিই।কিছুদুর যাবার পর আন্দাজ করি আমার পেছন পেছন কে যেন আসছে।চুলের আড়াল দিয়ে পাঞ্জাবী,মাস্ক পরা একটা লোককে দেখতে পাই যে হাতা ফোল্ডার করায় ব্যস্ত।আন্দাজ করি এ শুভ্র। আমি পা চালিয়ে হাঁটা লাগাই

-শুনছো?মিস নৌরিন আহমেদ মেঘ।

শুনছো মানে?উনি কোন আক্কেলে আমায় তুমি করে সম্বোধন করলেন?উনার ভেতর কি বিন্দুমাত্র কমনসেন্স নেই যে অপরিচিত একটা মেয়েকে আপনি বলে সম্বোধন করতে হয়!এর সাথে অহেতুক কথা বলার মুড বা ইচ্ছে কোনোটাই নেই আমার।হাঁটা লাগাই গন্তব্যের দিকে।

-আসসালামু আলাইকুম। সালামের জবাব দেওয়া ওয়াজিব।

লোকটা আমার ডায়লগ আমাকেই শুনাচ্ছে?উফফ!অসহ্যকর।

-ওয়ালাইকুম আস সালাম।
-দাঁড়াও না একটু তোমার সাথে কথা আছে।
-আমার নাই।সরি।আপনার অনুরোধ রাখতে পারলাম না।
-খুব ইম্পর্টেন্ট কথা আছে আপনার সাথে।ধরেন পরে যদি মরে যাই পরে আফসোস করবেন।

থেমে যাই আমি।লোকটা আমার সামনে আসে।আমার দিকে ঝুঁকে বলে,,,

-কেমন আছো?

লোকটার প্রশ্নে আমি বেকুব হয়ে যাই।এইটা উনার ইম্পোর্টেন্ট কথা?মানে কি?আমার কাছে কি সময়ের কোনো দাম নেই? যে উনার সাথে অহেতুক কথা বলে সময় নষ্ট করবো।কিন্তু এভাবে ছেড়ে দিলে পরে আরও লায় পেয়ে যাবে লোকটা।

-লিসেন মিস্টার।একে তো তুমি করে আমায় সম্বোধন করে নিজের অভদ্রতার পরিচয় দিয়েছেন তারওপর এমন অহেতুক প্রশ্ন করছেন।আর ছোট বোনকে যা শিখিয়েছেন তা তো বলার বাইরে।
-তুমি এইচএসসি দিয়েছো না?

শান্ত গলায় বলেন উনি।আমি প্রশ্নটাকে উড়িয়ে দিয়ে বলি,,,

-হ্যাঁ তো?
-সেই হিসাবে তুমি আমার ছোট।তাই আমি তোমাকে তুমি করে বলতেই পারি।
-তুমি করে বলতেই পারি।আমার পছন্দ না এটা।বুঝছেন?নেক্সট টাইম যেন আমায় তুমি করে বলতে শুনি না।

ভেংচি কেটে বলি। তারপর রিক্সা ধরে মেসের দিকে রওনা দিই।হুডের আড়াল থেকে পেছন দিকে তাকিয়ে দেখি লোকটা রিক্সার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।তবে যে যাই ই বলুক।লোকটার চোখ দুটো কিন্তু মাশাআল্লাহ।ঐ ছোটখাটো ক্রাশ খাওয়ার মতো।মাস্ক পড়লে অধিকাংশ ছেলেদের চোখই সুন্দর লাগে।যে সৌন্দর্য অবর্ণনীয়।অধিকাংশ মেয়েরাই ছেলেদের কন্ঠস্বরের প্রেমে পড়ে।অস্বীকার করবো না। আমিও লোকটার কন্ঠস্বর আর অমায়িক চোখের প্রেমে পড়েছি।কিন্তু চেহারা কি হবে আল্লাহই জানেন।শুনেছি যে সব ছেলেদের চোখ সুন্দর তাদের বলে চেহারা অত ভালো না।


রাতে খেয়ে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ি।যেহেতু কালকে ক্যাম্পাসে প্রথম দিন একটু তাড়াতাড়িই বের হতে হবে।আর রাস্তায় জ্যাম থাকলে তো কথাই নেই!আমার মনে হয় ঢাকা শহরের মানুষের জীবনের অর্ধেক সময় চলে যায় জ্যামে বসে অলস সময় কাটাতেই।ঘুমানোর আগে অনলাইনে একটু ঢু মারি।ওয়াইফাই অন করতেই দেখি ওই বজ্জাতটা দশ বারোটার মতো মেসেজ দিয়েছে।বলে রাখি এর নাম শান্ত।নামের সাথে কাজ বলো,বিহেভিয়ার বলো কোনো কিছুর মিল নেই।চৌদ্দটা প্রেম করে এই ছেলে কিভাবে আশা করে যে এই ছেলেকে আমি বিয়ে করবো?ব্লক করে দিয়েছিলাম দাদির বকা খেয়ে ব্লক ছাড়াতে হয়েছে।ইগ্নোরে ফেলে রেখেছিলাম।সেই দাদির কাছে নালিশ দিয়েছে।আমি নাকি শহরে এসে ছেলেদের সাথে ফুর্তি করি তাই নাকি তার মেসেজ সীন করি না এবং রিপ্লাই দিই না এমন ভাবে এই লোক আমার সাথে কথা বলে যেন আমি তার বিয়ে করা বউ।তো একে ইগ্নোর করবো না তো কি করবো?আর দুর্নাম করবি ভালো কথা আমার ক্যারেক্টার নিয়ে কথা বলবি কেন?সবাইকে নিজের মতো ভাবিস?যে সবাই তোর মতো চৌদ্দ পনেরোটা করে প্রেম করবে।বাপের টাকা আছে বলে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়ে BBA করেছিস।লাভটা হলো কী এত টাকা খরচা করে?সেই তো বাপের হোটেলে বসেই গিলছিস।নেশাও করিস আবার।এই ছেলের সাথে নিজের জীবনকে জড়িয়ে আমার জীবন আমি শেষ করতে পারবো না।কোনো ভালো ছেলে দেখে পালিয়ে হলেও বিয়ে করে আমি এর থেকে মুক্তি পেতে চাই।

-কিরে বউ রিপ্লাই দিস না কেন?

সীন করে রেখে দিয়েছিলাম মেসেজ।হঠাৎ করে হারামজাদার এমন লুচু মার্কা মেসেজে মেজাজ হাই লেভেলে গরম হয়ে যায়।পারিবারিক শিক্ষা বলতে কিচ্ছু নেই এর দেখা যায়।মানুষকে নুন্যতম সম্মান টুকু দিতে পারে না দেখা যায়।

-ভদ্রতা বজায় রেখে কথা বলুন।

রিপ্লাই দিই আমি।উনি এংরি দেন আমার মেসেজে।

-ভদ্রতা মানে?তুই আমার বউ।তোর সাথে আমি যেভাবে মন চায় সেভাবে কথা বলবো।ব্যাবহার করবো।তোর কি তাতে?

দাদির সামনে মনে হয় ভাজা মাছ উলটে খেতে পারে না।আর আমার সাথে কেমন কুকুরের মতো ব্যবহার করে।কুকুরের মতো মানে।উনার সাথে কুকুরকে তুলনা করে আমি কুকুর জাতকে অপমান করতে পারবো না।জানোয়ারের থেকেই নিচের লেভেলে নেমে গেছে এই লোকটা।এই লোকটার সাথে তর্কে জড়ানো মুর্খতার কাজ হবে।বাধ্য হয়ে ওয়াইফাই অফ করে চোখ বুজি।


ক্যাম্পাসের প্রথম দিন।আমি যেমন খুব এক্সাইটেড ঠিক তেমন নার্ভাস।নতুন পরিবেশ না জানি কেমন হবে!আমি আর এশা আলাদা ডিপার্টমেন্টের হওয়ায় যে যার মতো ক্লাসরুম খুঁজতে লাগি।মিনিট পনেরো খোঁজার পর ক্লাসরুম খুঁজে পাই।ভাবতেও অবাক লাগে।মফস্বলের হাভাগোভা মেয়েটাও আজ শহরে এসে চালু হয়ে গেছে।একাই ক্লাসরুম খুঁজে বের করে সে।নিজেকে খুব বড় বড় লাগছে।ক্লাসে গিয়ে মাঝের একটা ব্রেঞ্চে বসি।হ্যাঁ আমি মিডেল ব্রেঞ্চার!যেহেতু আজকে ক্যাম্পাসের প্রথম দিন তাই ক্লাসে পড়া খুব একটা হলো ন।সবাই সবার সাথে পরিচিত হয়ে নিলো।আমার পাশে একটা মেয়ে বসেছে।নাম বুশরা।মেয়ের গেটাপে মনে হচ্ছে মেয়ে পড়তে নয় ছেলে পটাতে এসেছে।যদিও কম বেশি সব মেয়েই সেজে এসেছে।সবাই কি আর আমার মতো যে ফেসওয়াশ দিয়ে কোনো রকমে মুখ ধুয়ে কাজের মেয়ে ছকিনার মতো বের হবে বাইরে?যে চে একটু কথা বলতে গিয়েছিলাম মেয়েটার সাথে।ভাবের থেকে ভঙ্গি বেশি।শিরায় শিরায় ভাব। যা তোর সাথে কথাই বলবো না।তোর ভাব দেখার জন্য ক্যাম্পাসে আসি নাই।এশাকে ছাড়া কেমন এতিম এতিম লাগছে।আচ্ছা মেয়েটা কি আমায় মিস করছে?ক্লাস শেষ হতে না হতেই মেয়েটাকে কল দেই।প্রথম দু-তিনবার কলে ওয়েটিং পাই।নিশ্চয়ই বফের সাথে কথা বলছে মেয়ে!আজ একটা বফ থাকলে….!কথাটা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলি।এরই মধ্যে এশা কল ব্যাক করে।কল রিসিভ করে আমি ঝাড়তে যাবো ঠিক তখনই এশা বলে,,

-নাবিলের সাথে ক্যান্টিনে আছি।ক্যান্টিনে আয় তুই।

কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কল কেটে দেয় এশা।ক্যান্টিনে গিয়ে দেখি দুই কপোত-কপোতী হাত ধরে বসে প্রেমালাপ করছে।গিয়ে বসি ওদের সামনে মুখোমুখি সীটটায়।টিটকারি মেরে এশাকে বলি,,,

-তুই না বলছিলি ব্রেকাপ।
-ক..ক..কী করবো বল।একই ভার্সিটিতে।চোখে চোখে রাখতে পারবো তাই ভাবলাম আরেকটা চান্স দিই।
-আবার জোড়া লেগেছে তোর রিলেশন। নে এবার ট্রিট দে।
-ফকিন্নি।

এশা বলে।পাশ থেকে নাবিল ভাইয়া মুচকী হেসে বলে,,,

-কী খাবে বলো।
-ছোটবোনকে ভাইয়া ভালোবেসে যা খাওয়াবে তাই খাবে ছোট বোন।

নাবিল ভাইয়া আমার জন্য কোল্ড কফি অর্ডার করেন।নাবিল ভাইয়া আমাদের এক ইয়ার সিনিয়র। এশা আর নাবিল ভাইয়ার তিন বছরের রিলেশন।সিনিয়র জুনিয়র রিলেশন হলেও ওদের আচার আচরণ পরস্পরের প্রতি ব্যবহার সেইম এইজ রিলেশনের মতো।সিঙ্গেল থাকলেও ওদের দেখে খারাপ লাগে না!সত্যি বলতে ভালোবাসা দেখতেও ভাল্লাগে।

চলবে,, ইনশাআল্লাহ 💜

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here