#এটা_গল্প_হলেও_পারতো
পর্ব—-০৭(ধামাকা পর্ব🔥)
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।
পরেরদিন সকালবেলা।।
একটা অপরিচিত নম্বর থেকে কল আসলো রাত্রির মায়ের ফোনে।ফোন টা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে এক পুরুষ কন্ঠ ভেসে আসে।
—-হ্যাঁ বলুন!
—-আপনি আমান সাহেবের স্ত্রী অর্থাৎ রাত্রির মা তাইতো?
—-হ্যাঁ,আমি আমান সাহেবের স্ত্রী কোন দরকারে ফোন করেছেন বলুন?
—-দরকার তো অবশ্যই আছে,এমনি এমনি কেউ কাউকে স্মরণ করে!
—আচ্ছা বলুন,
—-আপনার সাথে একটা ডিল করতে চাই আমি,
—ডিল!কিসের ডিল?আর আমি আপনার নাম ধাম পরিচয় কিছু না জেনে ডিল করতে যাবো কেন?
—-আমি আপনার এক পুরাতন কাস্টমার,এখন আমাকে আপনার একজন শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবেই মনে করতে পারেন!
—-দেখুন আপনার কথার আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারছি না আমি,যা বলার পরিষ্কার করে বলুন।
—-আমি আপনার মেয়েকে নিতে চাই….!!!
—-কি বলছেন আপনি এগুলো,পাগল হয়ে গেছেন নাকি?
—-আরে ম্যাডাম,আগে আমার কথা শেষ করতে তো দিন।আপনার মেয়েকে আমি কিনতে চাই তার পরিবর্তে একটা মোটা অংকের অ্যামাউন্ট আপনার একাউন্টে জমা হবে।
টাকার কথা শুনে যেন জিহব্বাটা লোভে যেন লকলক করে উঠলো আমান সাহেবের স্ত্রীর।টাকার পরিমাণটা শুনে সে আরও বেশি অবাক হয়।
— একটু খুলে বলবেন যে আপনি আমার মেয়েকে কিনে ঠিক কি করতে চাইছেন?
—-সেটা জানা আপনার কাজ নয়,ধরে নিন আপনি এতদিন ধরে যা যা করে আসছেন সেগুলোই করব অথবা তার থেকেও ভয়ানক কিছু।কেন কোন সমস্যা আছে বুঝি?
—না! না! সমস্যা থাকবে কেন,
—-তাহলে আপনি রাজী?
—-আমি পরে ভেবে আপনাকে জানাচ্ছি,একটু সময় দিন আমায়।
—-আচ্ছা ঠিক আছে,আপনি সময় নিন!ভাবুন। এরপর যদি মনে হয় আমি যেটা বললাম সেটা আপনার জন্য লাভজনক তাহলে জানাবেন আমায়।
—-ঠিক আছে।
এই বলে লোকটা ফোনটা রেখে দিল।এদিকে রাত্রির মায়ের কপালে চিন্তার ভাঁজ।সে ঠিক কি করবে বুঝতে পারছে না।তবে এটা ঠিক রাত্রিকে এখন সরিয়ে দিতে পারলে তাকে নিত্যদিনের টেনশন বয়ে বেড়াতে হচ্ছে না তাকে।এদিকে রাত্রির অনুপস্থিতিতে আমান সাহেবের একটা ব্যবস্থা করা যাবে।ব্যাস দুটো পথের কাঁটাই দূর তাহলে।নিজের মেয়েকে দিয়ে অর্থ উপার্জন করা ছাড়া কোন উদ্দেশ্য নেই ভদ্রমহিলার, যদিও সে তাকে ছাড় দিতে চেয়েছিল কিছু সময়ের জন্য কিন্তু এখন এই সুযোগটা কাজে না লাগালে এতগুলো টাকা হাতছাড়া হয়ে যাবে। সেটা কিছুতেই হতে দিতে চায় না সে।তাই সে সিদ্ধান্ত নিল রাত্রিকে ওই লোকটার কাছে বিক্রি করে দেবে,এরপর রাত্রিকে নিয়ে যা খুশি ও করুক সে।অন্তত প্রতিদিন ঝামেলার থেকে একদিনে সব মিটে যাওয়াই ভালো।
কিন্তু এই ধূর্ত মহিলার এর পেছনে যে কোন ভয় বা আশঙ্কা কাজ করছে না এমনটাও নয়।তার ভয় রাজহাঁসের সব ডিম একসাথে পেতে গিয়ে আবার না পথে বসতে হয়,তবে তার ব্যবস্থাও করে রেখেছে সে।
এর দুইদিন পর…..
রাত্রি বারান্দায় বসে আছে।ওর মা তখন হাতে দুটো চায়ের কাপ নিয়ে উপস্থিত হল।তখন প্রায় সন্ধ্যা।আমান সাহেব বাসায় নেই।তাকে একটা কাজের অজুহাত দেখিয়ে দূরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে অগত্যা ভদ্রলোক অসুস্থ শরীর নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে স্ত্রীর আদেশ পূরণ করতে।রাত্রির মা এসে ওর পাশে বসল।এরপর রাত্রিকেও বসতে বলে।
—-আমার পাশে বস মা,
রাত্রি শুকনো মুখে ওর মায়ের বিপরীত পাশের বেতের সোফাটায় বসল।
—কি হয়েছে তোর মা,কদিন ধরে বেশ মনমরা লাগছে তোকে!
এই কথা শুনে রাত্রি ওর মায়ের দিকে হা করে তাকিয়ে রইল।মা এমন উদারতা দেখাচ্ছে এটা দেখে অবাক না হয়ে পারল না সে।
—না আমি ঠিক আছি মা,তোমার আমাকে নিয়ে অযথা চিন্তা করতে হবে না।আচ্ছা বাবা কোথায় গেছে?
— এই তো একটু বাইরে গেছে কাজে,ফিরতে একটু রাত হবে মনে হয়।
রাত্রি আর কোন কথা না বলে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো।
—কি হল কোনো কথা বলছিস না যে,এভাবে মুখ ভার করে আছিস কেন?
—কি বলবো তুমিই বলো মা,তোমার সাথে কি এমন কথা থাকতে পারে আমার।
—দেখ,তোর জন্য ভালো করে চা বানিয়ে নিয়ে এসেছি।চল দুই মা মেয়ে মিলে চা খেতে খেতে একটু গল্প করি।
—আমার এখন চা খেতে ইচ্ছে করছে না!
—আরে খা না,মা বললে না করতে নেই।তুই না খেলে আমারও খাওয়া হবেনা।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাত্রি চায়ের কাপটা হাতে নিল তারপর আস্তে আস্তে চায়ের কাপে চুমুক দেয়।
মাও মেয়ের দেখাদেখি চায়ের কাপে চুমুক দিলো।মনটা তার পৈচাশিক আনন্দে নেচে উঠছে।কারণ এই চায়েই মেশানো আছে অজ্ঞান হবার কড়া ওষুধ।যা পেটে যাওয়ার সাথে সাথে জ্ঞান হারাবে রাত্রি।তারপর ওকে সেই ক্লাইন্টের কাছে হস্তান্তর করা হবে।ক্লাইন্ট অবশ্য এতোক্ষণে বাড়ির কাছাকাছি চলেও এসেছে হয়তো।সে আসতে আসতে এদিকের কাজ হয়ে যাবে।ভদ্রমহিলা রাত্রির দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে এই কথাগুলো ভাবছে আর অপেক্ষা করছে রাত্রি কখন তার চোখের সামনে অজ্ঞান হয়ে পড়ে।
কিন্তু একটা অদ্ভুত ব্যপার লক্ষ্য করছে সে,হিসেব অনুসারে এতোক্ষণে ওষুধে কাজ করার কথা।কিন্তু রাত্রির ভেতরে তার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছিলো না।
‘একটু পরে রাত্রির মা তার মাথায় ভীষণ যন্ত্রনা অনুভব করতে লাগলো,সারা শরীর থরথর করে কাঁপতে লাগলো তার।হাঁত থেকে চায়ের কাপটা পড়ে যায়।সোফোর ওপরে ঢলে পড়লো সে।যদিও ততক্ষনে জ্ঞান হারায়নি সে।রাত্রি চায়ের কাপটা টেবিলের ওপরে রাখলো।এরপর তাকে অবাক করে দিয়ে ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো।কানের কাছে এসে অত্যন্ত নিচু স্বরে ফিসফিস করে বলতে লাগলো :
—কি ভেবেছিলে আমাকে চায়ের সাথে ওষুধ খাইয়ে অজ্ঞান করে দেবে,দেখলে তো আমার কিন্তু কিছু হয়নি,আমি ঠিক আছি।কিন্তু তুমি আর এখন ঠিক থাকবে না।কারণ ওষুধ দেয়া কাপটা আমি না তুমি নিয়েছো,
আমাকে ফাঁসাতে গিয়ে তুমিই ফেঁসে গেলে মা!!
চলবে…..