এটা গল্প হলেও পারতো পর্ব -১০

#এটা_গল্প_হলেও_পারতো
পর্ব—-১০
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।

পরের দিন সকালে তিয়াশ আর রাত্রি সেই হাসপাতালে যায় যেখানে রাত্রির জন্ম হয়েছিলো।হাসপাতালের ঠিকানা আমান সাহেবই দিয়েছে তিয়াশকে।রাত্রির মায়ের প্রসব বেদনা ওঠার পরে এই হাসপাতালেই ভর্তি করানো হয়েছিলো তাকে।তারপর সেখানে রাত্রির জন্ম হয়।এরপর নিজের সদ্যজাত সন্তান আর স্ত্রীকে নিয়ে বাড়িতে চলে আসেন আমান সাহেব।এছাড়া আর কিছু জানা নেই তার।তিয়াশ আজকে সেই হাসপাতালে যাচ্ছে,কারণ তার মনে অনেকগুলো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।সেগুলোর উত্তর জানাটা খুব জরুরী।

হাসপাতালে পৌঁছতে পৌঁছতে প্রায় বিকেল হয়ে গেলো।অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে এসেছে তারা।এই জায়গাতে তিয়াশ আর রাত্রি আগে আসেনি কখনো,এই প্রথমবার।বহু বছরের পুরনো হাসপাতাল,যদিও চারপাশটা ভালো করে রিপেয়ার করাতে সেইভাবে বোঝা যাচ্ছে না।হাসপাতালে ঢুকে প্রথমেই রিসেপশনে যোগাযোগ করলো ওরা।কিন্তু সে কাজের জন্য এসেছে ওরা সেটা রিসেপশনে বসে করা সম্ভব নয়।হাসপাতালের মালিকের সাথে কথা বলতে বলা হলো ওদের।উল্লেখ্য তিনিও একজন ডাক্তার,এবং এই হাসপাতালেই কর্মরত আছেন। তিয়াশ আর রাত্রি বেশ কাঠখড় পুড়িয়ে তার সাথে দেখা করার সুযোগ পেলো।

—হ্যাঁ,বলো।কি জানতে চাও তোমরা দুজন।(হাসপাতালের মালিক এবং ডাক্তার ইরান আহমেদের প্রশ্ন)

—আমরা মূলত একটা ডাটা সংগ্রহ করতে এসেছি আপনার এখানে।আর আপনাকে ধন্যবাদ আমাদেরকে আপনার মূল্যবান সময় দেবার জন্য।

—ডাটা,কিসের ডাটা?(ভ্রু কুঁচকে)

—বেশ পুরনো বলতে পারেন,আজ থেকে প্রায় বিশ একুশ বছর আগের,

—হোয়াট!!এতো পুরনো ডাটা দিয়ে তোমাদের কি কাজ??

—হ্যাঁ,স্যার শুনতে একটু অদ্ভুত লাগলেও সত্যি।২০০১ এর ২৬ শে ফেব্রুয়ারি এই হাসপাতালে রত্না জামান নামের একজনের ডেলিভারি হয়।

—তো,

—সেদিন যে বাচ্চাটার জন্ম হয় সে এই মুহূর্তে আপনার সামনেই বসে আছে।রাত্রি নাম ওর।

—বুঝলাম কিন্তু তোমরা ঠিক কি বলতে চাইছো সেটা বলো,

—সেইদিন রত্না জামান ছাড়াও আরো কোনো ডেলিভারি হয়েছিলো কিনা হাসপাতালে আমাদের এটা জানাটা খুব জরুরী,আর যদি হয়েই থাকে কে ছিলো সে,কি তার পরিচয়।

—এতো কিছু জেনে কি করবে তোমরা?

—বললাম না,আমাদের এটা জানা খুব জরুরী, অনেক সমস্যার সমাধান হতে পারে এটা জানার মাধ্যমে।কিন্তু সেটা তখনই সম্ভব হবে যখন আপনি চাইবেন।প্লিজ ফিরিয়ে দেবেন না আমায়।

ডাক্তার ইরান আহমেদ ভাবার জন্য কিছু সময় নিলেন,তারপর সে ওদের সাহায্য করার জন্য রাজি হয়।

—দেখো এইভাবে কারো ইনফরমেশন দেয়া কিন্তু বেআইনী কাজ।এর জন্য আমার আর আমার আমার হাসপাতালের বিরুদ্ধে মামলা পর্যন্ত হতে পারে।কিন্তু তোমাদের দুজনকে দেখে যেটা মনে হলো তোমরা কোনো বিপদে পড়ে এসেছো,তাই নিয়মের বাইরে গিয়ে হলেও তোমাদের আমি সাহায্য করবো ।

তিয়াশ আর রাত্রি ডাক্তার সাহেবের কথা শুনে ভীষণ খুশি হলো।

—২০০১ সালের ২৬ শে ফেব্রুয়ারির কথা বলছো তাই না,ঠিক আছে।আমি দেখে তোমাদের জানাচ্ছি।

—অনেক অনেক ধন্যবাদ স্যার,প্লিজ একটু দেখে জানান আমাদের।

বেশ অনেকক্ষণ পরে ডক্টর ইরান সাহেব একটা ফাইল নিয়ে রুমের ভেতরে ঢুকলেন।তিয়াশ আর রাত্রি তাকে দেখে উঠে দাঁড়ায়।

—কি হলো স্যার,কিছু জানতে পারলেন?

—আরে বসো বসো,এতো অধৈর্য হলে চলে।আমি সব বলছি তোমাদের।

ইরান সাহেব ফাইলের পৃষ্ঠা উল্টাতে উল্টাতে বলতে লাগলেন।

—-২৬ শে ফেব্রুয়ারি রত্না জামান একজনের ডেলিভারি হয়েছিলো ঠিক।কিন্তু শুধু তার নয়,ঐ দিন হাসপাতালে আরো একটা ডেলিভারি হয়েছিলো।

—আরো একটা ডেলিভারি হয়েছিলো!!হ্যাঁ,তার ব্যপারেই জানতে চাচ্ছি আমরা।

—সেদিন রাত এগারোটায় কান্না রহমান নামে একজনের ডেলিভারি হয়েছিলো।কিন্তু দুঃখের খবর হলো তিনি সেইরাতে মৃত বাচ্চা প্রসব করেছিলেন।

—মৃত বাচ্চা!!আচ্ছা তার এড্রেসটা তো নোট করা আছে নিশ্চই।

—কেন থাকবে না অবশ্যই আছে।কিন্তু কথা হলো শহরের বাড়িতে এতো পুরনো এড্রেস কি কাজে লাগবে।

—-হুমম,সেটা ঠিক।কিন্তু আমাদের একবার তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা তো করতেই হবে।যখন একটা ক্লু পেয়ে গেছি।

—আশা করি আর কিছু জানার নেই তোমাদের।এবার এড্রেস টা নোট করে নাও।

—আপনাকে আর ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না স্যার,আমাদের এতো কষ্ট করে আসাটা সার্থক হলো শুধু আপনার জন্য।

ভদ্রলোক প্রতুত্ত্যরে মুচকি হাসলেন।তারপর রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।সত্যি লোকটা বড্ড পরোপকারী।তিয়াশ ভাবতে পারেনি এতো সহজে সবকিছু জানতে পারবে।এখন তার প্রথম কাজ হলো কান্না রহমানকে খুঁজে বের করা।তাকে খুঁজে পাওয়া গেলো আরো অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তর মিলবে তার।

—কান্না রহমানের বাসার ঠিকানা তো পেলাম, এবার আমাদের কি করা উচিত?
(রাত্রিকে প্রশ্ন তিয়াশের)

—কি আর করবো,তার বাসায় যাবো।কথা বলবো তার সাথে,

—রাইট।কিন্তু কথা হলো তাকে এতো পুরনো ঠিকানায় পাওয়া যাবে তো,আমার কিন্তু যথেষ্ট সন্দেহ হচ্ছে।

—হ্যাঁ,একই ভয় আমিও পাচ্ছি।চলো আগে গিয়ে তো দেখি।যদি না পাই তবে তারপরে কি করতে হবে ভেবে দেখবো।

—হুম।

তিয়াশ আর লোকটা কান্না রহমানের ঠিকানা ধরে এগোতে থাকে‌।একটা ট্যাক্সি বুক
করে তারা।তারপর ড্রাইভারের সাহায্য নিয়ে ভদ্রমহিলার বাসার অনুসন্ধান করতে লাগলো।অবশেষে খুঁজতে খুঁজতে তারা ভদ্রমহিলার বাসা পর্যন্ত পৌঁছে গেলো,কিন্তু কথা হলো বাড়ির ভেতরে সে আছে কিনা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।
তিয়াশ বাড়ির সামনে একটা চায়ের দোকানের মালিকের সাথে যোগাযোগ করলো।

—আচ্ছা,দাদা এটা কান্না রহমানের বাড়ি তো?

—হ্যাঁ,ওনারই বাড়ি।

—উনি কি বাড়িতে আছেন এখন,বা ওনার ছেলেমেয়েরা?কিছু জানেন কি!

—হ্যাঁ,উনি তো এই বাড়িতেই থাকেন।আর কি বললেন ছেলে মেয়ে,তার কোনো ছেলেমেয়ে নেই।

—কোনো ছেলেমেয়ে নেই!!

—না,সেই শোকেই তো ভদ্রমহিলা পাগলপ্রায় ।তার স্বামী পর্যন্ত তার পাগলামী সহ্য করতে না পেরে দেশের বাইরে চলে গেছে।

দোকানদারের কথা শুনে তিয়াশ আর রাত্রি বেশ অবাক হয়।একে অপরের দিকে তাকাতে লাগলো তারা।

—ঠিক বুঝলাম না আপনার কথা,আপনি বললেন ছেলেমেয়ে নেই,আবার ছেলেমেয়ের শোকে পাগল প্রায়।কেনো তারা কি আর কেউ বেঁচে নেই?

—-সে এক লম্বা কাহিনী,অনেক বছর আগে একটা হাসপাতালে ডেলিভারি হয় ওনার। সেখানেই উনি এক মৃত বাচ্চার জন্ম দেন।কিন্তু তার দাবি সে নাকি কোনো মৃত বাচ্চার জন্ম দেয় নি।কেউ তার বাচ্চা চুরি করে মৃত বাচ্চা রেখে গেছে।সেই একই প্রলাপ এখনো উনি বকে চলছেন।সবাই এতো বুঝানোর চেষ্টা করেছে কিন্ত সে কারোর কথা মানতে রাজি নয়।সন্তান হারানোর সেই দুঃখ পাগল বানিয়ে ছেড়েছে তাকে।যদিও এর কতোটুকু সত্যি বা মিথ্যা আমরা কেউ জানি না।

দোকানদারের কথা শুনে টনক নড়ে গেলো তিয়াশ আর রাত্রির।দোকানদারের সাথে কথা শেষ করে যতদ্রুত সম্ভব বাড়ির ভেতরে পা বাড়ালো তারা…..

চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here