#ওগো_বধু_সুন্দরী
পর্ব—-০৪
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।
মহিলার কথা শুনে যেন,হাত থেকে ফোনটা মেঝেতে পড়ে গেলো আমার।যেন একটা প্রচন্ড ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো শরীরটা!মা কি সত্যিই বেঁচে আছে,আর সেটা কিনা এতোগুলো দিন পরে জানতে পারছি আমি..,,নাকি আমাকে ফাঁদে ফেলার ষড়যন্ত্র করছে কেউ??এই মূহুর্তে কি করা উচিত আমার?
নাহ!এই বিষয়ে আগে বাবার সাথে কথা বলতে হবে।তারপর যা করার করবো!ফোনটা রেখে ড্রয়িং রুমের দিকে ছুটে গেলাম আমি।
আমার মুখ থেকে সবটা শুনে অবাক হয়ে গেলো বাবা।
—কি বলিস কি…. তোর মা বেঁচে আছে।কিন্তু কিকরে সম্ভব হলো সেটা?
—হ্যাঁ,বাবা।আমিও তো অবাক হলাম এটা শুনে।প্রথমে তো বিশ্বাসই করতে পারি নি।
—আচ্ছা,ফোন যে করেছিলো,তার কোনো পরিচয় জানতে পেরেছিস কি?
—নাহ!উনি তো নিজের বিষয়ে কিছুই বললেন না আমায়।
—কিন্তু জায়গাটা কোথায়,কোন জায়গা থেকে ফোনকলটা এসেছিলো?
—উনি লোকেশনটা পাঠিয়ে দিয়েছেন আমায়।খুব একটা দূরেও নয় এখান থেকে।এই ধরো যেতে এক ঘন্টার মতো সময় লাগবে।
—আমাদের কি পুলিশের সাথে এই বিষয়ে আলোচনা করা উচিত?
—আমিও একই কথা ভাবছি।আমরা পুলিশকেই বরং আগে জানাই।একটা উড়ো কলের ওপর পুরোপুরি বিশ্বাস করা ঠিক হবে না।
—একদম ঠিক বলেছিস,কিন্তু আমার কি মনে হয় জানিস,
—কি?
—আমার মনে হয়,কেউ মিথ্যে বলছে না আমাদের। আর দেখ তোর মাকে নিয়ে কেউ কেন এমন একটা মিথ্যাচার কেন করবে আমাদের সাথে। কি লাভ তাদের?
—সেটাও ঠিক।তাহলে কি করা উচিত আমাদের?
—চল,আমরা বরং বেরিয়ে পড়ি।সেইরকম পরিস্থিতি হলে আমরা ওখান থেকেই পুলিশকে ইনফর্ম করতে পারবো।
—তাহলে এখন কাউকে কিছু জানাবো না?
—না থাক,,,
—ঠিক আছে, তুমি যেটা ভালো মনে করো।
বাবার সাথে কথা সেরে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালাম।ঠিক তখন দেখতে পাই,শ্রেষ্ঠা দাঁড়িয়ে আছে আমার সামনে।তার মানে ও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবটা শুনেছিলো এতোক্ষন।
—একি,তুমি এখানে?
—আপনারা কি আলোচনা করছিলেন দুজন মিলে,?
—কেন, তুমি কিছু শুনতে পাও নি।
—নাহ!আমি তো এইমাত্র এলাম।
—আমাদের মা,সবার জানামতে এক বছর আগে যার খুন হয়েছিলো।আজকে হঠাৎ করেই কেউ ফোন করে আমাদের ইনফর্ম করলো মা মারা যায়নি,এখনো বেঁচে আছে সে।
—কি বলছেন আপনি এটা,তবে এতোগুলো দিন কোথায় ছিলেন উনি?
(আমি লক্ষ্য করছি,শ্রেষ্ঠার মুখমন্ডল জুড়ে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট, এমন মনে হচ্ছে মা ফিরে আসার খবর শুনে ভয় পেয়ে গিয়েছে ও)
—এতোগুলো দিন নাকি মা কোমায় ছিলো,আজকেই জ্ঞান ফিরেছে তার।
—তো এখন কি করবেন আপনি?
—কি আর করবো,আমি আর বাবা মায়ের কাছেই যাচ্ছি, তাকে ফিরিয়ে আনতে।
—নাহ!যাবেন না। যাবেন না আপনি!!
(এই বলে যেন আঁতকে উঠলো শ্রেষ্ঠা)
—যাবোনা,কিন্তু কেন?আর তুমি আমাকে নিষেধ করছো কেন সেটাই তো বুঝতে পারছি না।
—নাহ!কিছু না।
—ভারী অদ্ভুত তুমি,এতোদিন বাদে মাকে ফিরে পেয়েছি আমরা। সেটা জেনেও কিনা হাত পা গুটিয়ে ঘরে বসে থাকবো।এটা হয় কখনো।
শ্রেষ্ঠা আর কিছু না বলে বেরিয়ে গেলো।আমি অবাক হচ্ছি ওর এই আচরণে,এমন মনে হচ্ছে শ্রেষ্ঠা কিছুতেই চাইছে না মা বাড়িতে ফিরে আসুক।একটা ভয় বাসা বেঁধে আছে ওর মনে।
মা আসাতে হয়তো রহস্যের জট অনেকটাই খুলবে,আর সেদিন রাতের সেই অজ্ঞাতনামা নারীকে খুঁজে বের করতে পারবো আমি।তাই মায়ের ফিরে আসাটা যেমন আমাদের পরিবারের জন্য মঙ্গল ততটা আমার জন্যও।নয়তো এভাবে মনের ভেতরে একটা সন্দেহর বীজ বপন করে,শ্রেষ্ঠার সাথে সংসার করাটা অসম্ভব হয়ে পড়বে আমার জন্য।
–
–
–
রাত আটটার দিকে আমি আর বাবা বেরিয়ে পড়লাম।ঐ মহিলা যে লোকেশনের কথা বলছে কাজেরসূত্রে কয়েকবার সেখানে যাওয়া হয়েছে আমার।তাই পথ চিনতে খুব একটা অসুবিধে হলো না।রাস্তায় জ্যাম থাকার কারনে আমাদের গন্তব্যে পৌঁছতে একটু দেরি হলো।
—এইতো,এইজায়গাটা,এখান থেকে ভেতরে যেতে হবে আমাদের??
(আমি বাবাকে উদ্দেশ্য করে বললাম)
—-আচ্ছা, একটা কাজ কর। তুই ভেতরে গিয়ে আমাকে ফোন করে কনফার্ম কর,যদি উল্টোপাল্টা কিছু দেখিস তবেও জানাবি। আমি পুলিশকে ইনফর্ম করবো।
—কিন্তু বাবা আমরা তো এখনও জানাতে পারি পুলিশকে,,
—দেখ সৌহার্দ্য, তোর মা এতোদিন পরে সুস্থ হয়ে ফিরছে। আমি চাই না পুলিশ তাকে নিয়ে টানাটানি শুরু করুক।সেটা ওর জন্য ভালো হবে না।
—আচ্ছা বুঝতে পেরেছি,আমি তাহলে ভেতরেই যাচ্ছি।
বাবাকে রেখে ভেতরের দিকে পা বাড়ালাম আমি।একটা পুরনো গোডাউন এর ভেতরে ঢুকলাম আমি।কিন্তু মা এটার ভেতরে কেন, মাথায় ঢুকছে না আমার!হিসেব অনুসারে তার হাসপাতালে থাকার কথা।না জানি ঐ মহিলা ঠিক কি চাইছে?
আমি ধীরে ধীরে পা বাড়াতে লাগলাম,বেশ সুনসান একটা জায়গা।একটু ভয় ভয়ও লাগছে।মাঝে মাঝে এমন মনে হচ্ছে কেউ একটা ফলো করছে আমায় পেছন থেকে,কিন্তু পেছনে ঘুরতেই কেবল অন্ধকার আর শুন্যতা ছাড়া কিছুই দেখতে পেলাম না।যাই হোক,গা ছমছমে পরিবেশের ভেতরে দিয়ে সামনের দিকে যেতে লাগলাম।
হঠাৎ বুঝতে পারলাম কেউ একটা ছুটে আসছে আমার দিকে,সে আমাকে পেছনে ফেরার সুযোগ না দিয়েই মাথায় সজোরে আঘাত করলো।আঁতকে উঠলাম আমি,মাথাটা চেপে ধরে মাটিতে বসে পড়লাম।চারপাশটা ক্রমশ অন্ধকার হয়ে আসতে লাগলো,,বুঝতে পারলাম জ্ঞান হারাচ্ছি আমি, অথবা মারা যাচ্ছি। নিজের সর্বশক্তি দিয়ে চোখ মেলার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হই।
মাটিতে লুটিয়ে পড়ে কোনক্রমে ওপরের দিকে একটা চোখ মেলে তাকালাম তারপর যা দেখতে পাই আমি দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারি নি কোনোদিন,,
দেখতে পেলাম বাবা হাতে একটা লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন!!!!তার সেই লাঠিতে আমার রক্ত লেগে আছে।উনি হয়তো ভাবছেন আমি জ্ঞান হারিয়েছি,তাই দেখতে পাই নি তাকে….
–
–
–
চলবে,,,