#ওগো_বধু_সুন্দরী
পর্ব—-০৯
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।
—-আমি ধরে ফেলেছি তোমায়,তুমিই আমার শ্রেষ্ঠা!!(শ্রেষ্ঠাকে উদ্দেশ্য করে আমি বললাম)
—কে আপনি,আপনার কন্ঠস্বর পরিচিত লাগছে আমার!(শ্রেষ্ঠা বিষ্ময়ের সুরে)
—আমি কে, দেখতে চাও।তবে দেখে নাও।
এই বলে মুখ থেকে মাস্ক আর চশমটা খুলে ফেললাম।নিজের সামনে আমাকে দেখতে চমকে উঠে শ্রেষ্ঠা।আমায় এভাবে এখন দেখতে পাওয়া ওর কাছে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো!
শ্রেষ্ঠা বেড়িয়ে যাবার জন্য পা বাড়ালো ঠিক তখন আমি ওকে নিজের দিকে টেনে নেই।তারপর ওকে মুখোমুখিভাবে জড়িয়ে ধরি।
—কি হচ্ছে এগুলো,ছাড়ুন আমায়।আর আমি শ্রেষ্ঠা নই।
—তুমি আর আমাকে ফাঁকি দিতে পারবে না।আমি জানি তুমিই শ্রেষ্ঠা।
–না আমি শ্রেষ্ঠা নই,,,
—তাহলে কে তুমি?
—আমি…. আমি প্রকৃতি!(আমতা আমতা করে নামটা উচ্চারণ করলো)
আমি বুঝতে পারলাম শ্রেষ্ঠা আবারো মিথ্যে বলছে।
—মিথ্যে কথা,তুমি প্রকৃতি নও।তুমি শ্রেষ্ঠা।আমার শ্রেষ্ঠা।যাকে আমি নিজের প্রানের থেকেও ভালোবাসতাম এক সময়ে।এখনো বাসি।
—মাথা খারাপ হয়ে গেছে আপনার, কি বলছেন এগুলো?
–আমার মাথা এখনো ঠিক আছে।আমি তোমায় এখনো ভালোবাসি শ্রেষ্ঠা,আমার সেই সহজ সরল বোকা শান্তশিষ্ট শ্রেষ্ঠাকে আজো ভালোবাসি।কিন্তু একটা কথা বলো তুমি হঠাৎ এরকম হিংস্র হয়ে গেলে কিকরে?তুমি তো এমন ছিলে না।আমার বাবার সাথে কি এমন সম্পর্ক তোমার!?আর একটা কথা,আমার মাকে কে খুন করেছে তুমি জানো নিশ্চয়ই।
—আপনার অযথা প্রলাপ শোনার সময় আমার কাছে নেই,ছাড়ুন বলছি।
—না ছাড়বো না,আজ তোমাকে সত্যিটা বলতেই হবে।
—বললাম তো আমি আপনার শ্রেষ্ঠা নই।
—তাই নাকি,আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলো তো!
শ্রেষ্ঠা আমার চোখের দিকে তাকাতে সাহস পাচ্ছে না,আমি এগিয়ে যাই ওর দিকে।ওর ঠোঁটের কাছে নিজের ঠোঁটজোড়া এগিয়ে নিয়ে যাই।শ্রেষ্ঠা ভীষণ ইতস্তত করছে।
—কি হলো,এখন আমার স্পর্শ ভীষণ খারাপ লাগছে তোমার তাই না, অথচ এক সময়ে আমায় চোখে দেখতে না পেলে বাচ্চাদের মতো কান্না করতে তুমি।ভুলে গেলে সব।তোমার তো বিয়ে ঠিক হয়েছিলো আমার সাথে,তাহলে তারপরে কি এমন হলো,তুমি আমার থেকে আলাদা হয়ে গেলে কিকরে?তুমি আমার ক্ষতি কেন করতে চাচ্ছো,আমার ওপর কিসের এতো রাগ তোমার।
আমি স্পষ্ট লক্ষ্য করছি শ্রেষ্ঠার চোখ জলে ছলছল করছে,একটু পরেই জলের ধারা গড়িয়ে পড়বে চোখ বেয়ে।কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার একটা ধাক্কা মেরে ফেলে দিলো শ্রেষ্ঠা।তারপর এগিয়ে আসে আমার দিকে।
—ক্ষতি,কিসের ক্ষতি।আমি তো শেষ করে দেবো তোমায়।প্রান নিয়ে নেবো তোমার থেকে?
—আমি কি ক্ষতি করেছি তোমার শ্রেষ্ঠা?
—আমায় একবারো ঐ নামে ডাকবে না।এই নাম মুখে নেবার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছো তুমি!
–ঠিক আছে,তুমি আমায় মারতে চাও তো। মারো,যা খুশি করো।দয়া করে তার আগে এইটুকু বলো তুমি কেন করছো এগুলো,আমার ওপর কিসের প্রতিশোধ নিতে চাইছো তুমি?এটা না জেনে আমি যে মরেও শান্তি পাবো না।আর আমার মা,আমার মাকে কে খুন করেছে?
—আমি বাধ্য নই তোমার এতো প্রশ্নের উত্তর দিতে। তাছাড়া আমি এটাও ভালো জানি নাটক করছো তুমি আমার সাথে,আমায় বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছো।তুমি মানুষকে ধোঁকা দেওয়া আর প্রতারনা করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারো না।
আমি নির্বিক হয়ে যাচ্ছি শ্রেষ্ঠার কথা শুনে,ওর কথা শুনে এটা বুঝতে পারলাম আমার ওপর প্রচন্ড রাগ ওর।আর শুধু রাগ নয়,সেই রাগের সাথে মিশে আছে একরাশ ঘৃনা।শ্রেষ্ঠা আমাকে এতোটাই ঘৃনা করে আমার কোনো কথাই ভালোভাবে নিতে পারছে না।ওর মুখ থেকে এই ঘৃনার কারণ আর আমার প্রতি জমে থাকা ঘৃনা সরাতে না পারলে ওকে নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব।পুরো ভয়ংকর একটা রুপ ধারণ করেছে শ্রেষ্ঠা, আমার ভাবতেও অবাক লাগছে এই সেই শ্রেষ্ঠা, যে কিনা একদিন একটা সামান্য বাঘের পুতুল দেখে কেঁদে দিয়েছিলো,আজ সে নিজেই বাঘের থেকেও ভয়ংকর হয়ে উঠেছে।
শ্রেষ্ঠা আবারো ওড়ানাটা জড়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো,আমি বাঁধা দিলাম না ওকে।কারণ সেটা একদম ঠিক কাজ হতো না।
একবার ভাবলাম রুম থেকে বেরিয়ে শ্রেষ্ঠাকে ফলো করবো,ও ঠিক কোথায় যাচ্ছে।কিন্তু আমাকে সেই সুযোগ না দিয়েই ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে গেলো শ্রেষ্ঠা।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত এগারোটা বেজে গেছে।এখন বাড়ি ফিরতে হবে।যদিও ওটা এখন আর বাড়ি মনে হয় না নিজের কাছে,ঐ বাড়িতে একজন আমায় প্রতিনিয়ত খুন করার চেষ্টা করে যাচ্ছে, আরেকজন দিনের পর দিন একটা ভিন্ন মানুষের মুখোশ পড়ে ঠকিয়ে যাচ্ছে আমায়।মিছিল নেহাত বাচ্চা মানুষ,ও এসবের কিছুই বোঝে না। না হলে হয়তো ও অন্য কোনো নতুন ষড়যন্ত্রের সামিল হতো।এটা ভাবতেও এতটুকু কষ্ট বা দ্বিধা হচ্ছে না আমার।
একটা ট্যাক্সি করে বাসার উদ্দেশ্য রওয়ানা হলাম,রাস্তায় তেমন একঠা জ্যাম নেই।যেতে খুব একটা সময় লাগার কথা নয়।কিন্তু আজকে মনে মনে একটা ভীষণ প্রতিজ্ঞা করে ফেললাম আমি।আর সেটা হলো,যেকরেই হোক নকল শ্রেষ্ঠার আসল পরিচয় খুঁজে বের করতে হবে আমায়।আর সেটা ওর মুখ থেকেই।ও এমনিতে স্বীকার করতে চাইবে না আমি জানি,কিন্তু এমন কিছু করতে হবে যাতে ও নিজের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হয়।প্রয়োজন পড়লে জোর করতে হবে ওকে,বল প্রয়োগ করতে হবে।আমার আসল উদ্দেশ্য ওর মুখ থেকে সত্যটা স্বীকার করানো।
–
–
–
–
–
পরেরদিন সকালবেলা!আমার স্ত্রী অর্থাৎ নকল শ্রেষ্ঠা বেলকনিতে বসে আছে।আমি পেছন থেকে লক্ষ্য করছি তাকে।বাইরের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা মনোযোগ দিয়ে দেখছে।হাতে একটা চায়ের কাপ।
রাতেই শ্রেষ্ঠার মুখ থেকে আসল সত্যটা বের করার জন্য একটা প্লান রেডি করে রেখেছিলাম আমি।আজকে সেটাই অ্যাপ্লাই করতে হবে।এমনিতে বাসায় বাবা নেই,সকাল সকাল মিছিলকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছে সে।এই সময়টা আমার জন্য সবথেকে বেশী উপযুক্ত।
ধীরে ধীরে এগিয়ে যাই আমার স্ত্রীর দিকে।তারপর ওর পাশে গিয়ে বসলাম,
—বাইরের দিকে তাকিয়ে কি দেখছো?
—কিছু না,এমনিই তাকিয়ে আছি।
—আচ্ছা, তুমি আমাকে খুব ভালোবাসো তাই না?
আমার কথা শুনে ও হিহি করে হেসে উঠলো।
—আপনি কি যে বলেন না,কেন সকাল সকাল লজ্জা দিচ্ছেন আমায়।
—তার মানে ভালোবাসো,
—জানি না (লজ্জিত স্বরে উত্তর)
আচ্ছা, আপনিও আমাকে ভালোবাসেন তাই না?
—হ্যাঁ, আমিও তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি।আর দেখো তোমায় ভালোবেসে কি করেছি আজ আমি।
—কি ,,
—এই যে দেখো ব্লাক কফি। তোমার জন্য তৈরী করে আনলাম। তুমি তো পছন্দ করো এটা।
—হ্যাঁ, খুব পছন্দ করি।কিন্তু আপনি এটা কখন বানালেন?
—এইতো একটু আগে।চলো,এটা দুজনে শেয়ার করে খাই।আগে তুমি এক চুমুক নাও তারপর আমি।
শ্রেষ্ঠার হাতে কফির কাপটা দিলাম,ও একটা চুমুক দিয়ে কিছুটা কফি নিয়ে নিলো,তারপর আমার দিকে কাপটা এগিয়ে দেয়।আমি বললাম :
—আচ্ছা,একটা কাজ করি তুমি অর্ধেকটা নাও, বাকি অর্ধেকটা আমার।তাছাড়া ব্লাক কফি তো তোমার প্রিয়,আমার নয়।
—ঠিক আছে, তবে কিন্তু আপনাকেও খেতে হবে।
—আচ্ছা।
নকল শ্রেষ্ঠা আমার সামনে পরম তৃপ্তিসহকারে কফি খেতে লাগলো। এবার আমার মোক্ষম চাল দেবার সময়ে। ওকে আজ এমন ভয় দেখাবো ,বাধ্য হবে আসল সত্যটা স্বীকার করতে।
—আচ্ছা শ্রেষ্ঠা শোনো,
—বলুন,
–কফিটা খেতে ভালো লাগছে তো?
—হ্যাঁ, খুব ভালো লাগছে।
—অস্বাভাবিক কিছু কি লক্ষ্য করেছো,
—নাতো,কি !?
—কফিটা কি একটু অন্যরকম লাগছে না খেতে?
—উফফফফ, কি যে বলেন না আপনি। কেমন লাগবে আর খেতে!?
—বিষের গন্ধ পাচ্ছো কোথাও?
—বিষ, কিসের বিষ!?কি বলছেন আপনি?
আমি ওর কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলি!
—কেন কফির ভেতরে বিষের গন্ধ পাচ্ছো না তুমি, আমি যে বিষ মিশিয়ে দিয়েছি এই কফিতে!
আমার কথা শুনে ও হাত থেকে কফির কাপটা ফেলে দিলো….ভয়ে যেন চোখজোড়া বড়ো হয়ে যেতে লাগলো তার।।
চলবে,,