ওয়েডিং_স্টোরি পর্ব ২৫+২৬

#ওয়েডিং_স্টোরি
#পর্ব_২৫
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

সন্ধ্যা নেমেছে শহরে। সূর্য চাঁদের কাছে পরাজয় স্বীকার করে উধাও হয়েছে। আকাশের বুকে বিশাল এক চাঁদ সগৌরবে হাসছে। তবে, চাঁদের হাসি দেখে আভার তুমুল মন খারাপ হলো। কোনো বিষয় নিয়ে তুমুল মন খারাপের অনুভূতি’টা খুবই বিশ্রী! আভা জানালার মাথা ঠেকিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুই ভালো লাগছে না তার। বারবার চোখের সামনে আহনাফের মলিন মুখখানা ভাসছে। আভা নিজের কল্পনায় আহনাফের সেই মলিন মুখখানা কেটেকুটে একটা অতীব হাস্যোজ্বল মুখ তৈরি করতে চাচ্ছে। তবে, বারবার ব্যর্থ হচ্ছে ও। আহনাফকে মন খারাপ দেখতে ওর মোটেও ভালো লাগে না। কিন্তু, ও নিজেই তো আহনাফের মন খারাপের কারণ! তবে?
আভার কল্পনার জগৎ থমকে গেলো কলিংবেলের আওয়াজে। টিওশনের ম্যাম আসছেন। আভা বাথরুম থেকে হাত-মুখ ধুয়ে পড়তে বসলো। তবে, আজকে পড়ায় বিন্দুমাত্র মন বসছে না। বারবার মন চাচ্ছে, কোনো এক ম্যাজিক হোক! আহনাফ নামক মানুষটা সেই ম্যাজিকের কারণে আবার হেসে উঠুক!
_______________________
আজকে আভার অ্যাডমিশন পরীক্ষা। সকাল থেকে পড়ার টেবিলের উপর একপ্রকার মুখিয়ে আছে ও। একবার এ বই খুলছে , তো আরেকবার অন্য বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছে। অ্যাডমিশন নিয়ে নার্ভাস নিউরন তার মস্তিষ্কে ভোঁতা এক যন্ত্রণা দিচ্ছে। এই মুহূর্তে আভার নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে।
হঠাৎ’ই রুমে আগমন ঘটলো আভার মায়ের। তিনি রুমে এসেই আভার বইটা ঠাস করে বন্ধ করে দিলেন। যার কারণে, আভার এতক্ষণ ধরে পুঁজি করে রাখা মনোযোগ ব্যর্থ হলো। সে বই ছেড়ে মায়ের দিকে তাকালো। তার চোখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে, মায়ের এ কাজে সে যথেষ্ট বিরক্ত। রেহেনা আভার বই খাতা টেবিলের একপাশে রেখে ধমকের সুরে বললেন,
— ” সারাবছর কি পড়াশোনা করেছিস? এখন, পরীক্ষার দুই ঘন্টা আগে পড়াশোনা করে উল্টাইয়া দিবি? এক্ষুনি উঠ, বলছি !”
আভা ঠোঁট উল্টে মায়ের দিকে তাকালো। কন্ঠ অসহায় থেকে অসহায়তর করে বললো,
— ” আমার মনে হচ্ছে, আমি সব ভুলে যাচ্ছি। কিছু মনে করতে চাইলে, মনে পড়ছে না। ”
— ” অ্যাডমিশনের আগে এসবই মনে হয়। চিন্তা নেই। সব ঠিক হবে। এখন যা, ফ্রেস হয়ে আয়। আহনাফ এসেছে! ওর সাথে বেরুতে হবে তোর। জলদি কর! ”

মায়ের মুখে আহনাফের কথা শুনে আভার হুট করে মনে পড়লো, আহনাফ ওদের বাসায় কি করছে? আভা একবার মায়ের দিকে তাকালো। চোখে বিস্ময় নিয়ে বললো,
— ” আহনাফ? উনি এখানে কি করছেন? উনার না হসপিটাল আছে। আজ যান নি? ”
আভার মা ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ফেলে বললেন,
— ” আহনাফ ডাক্তার তাই তোর অ্যাডমিশন সম্পর্কে তারই ভালো আইডিয়া থাকবে। আহনাফ নিজেই তো তোর বাবাকে এসব বুঝিয়ে রাজি করিয়েছে। ও বললো, তোকে বাসায় দিয়েই তারপর হসপিটাল যাবে।এখন সময় নষ্ট না করে, জলদি তৈরি হ! কতক্ষণ ধরে বসে আছে বেচারা। খারাপ লাগবে ওর! জলদি যা! ”
আভা মায়ের এমন আহাজারি শুনে যারপরনাই বিরক্ত হলো। মাঝেমধ্যে আভার মনে হয়, আহনাফ’ই বোধহয় মায়ের আপন ছেলে! নাহলে, নিজের মেয়ে জামাইকে নিয়ে এত আদিক্ষেতা কে করে? এই আহনাফ মানুষটার হাতে কি কোনো জাদু আছে? কেমন করে সবাইকে হাত করে নেয় সে? আভা সেই উদ্ভট প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে যাবে, তার আগেই মায়ের আরো একটা ধমক শুনে চুপচাপ মাথা হেলিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। আভা পড়ার টেবিল ছেড়ে উঠে পড়তেই আভার মা অগোছালো পড়ার টেবিল গুছিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে বসার ঘরে চলে গেলো। মেয়ে জামাই এসেছে! আরো কি খাবার বানানো যায় এবং তা মেয়ে জামাইকে ঠুসেঠুসে খাওয়ানো যায়, আপতত তার চিন্তা এসব’ই। কিন্তু তিনি কি ভুলে গেছেন, আহনাফকে ইতিমধ্যে তার হাতের বানানো চার প্রজাতির নাস্তা জোর করে খাইয়েছেন?
_________________
সোহওয়ার্দি মেডিকেলের সামনে একপাশে আহনাফ গাড়ি থামালো। আহনাফ গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ করে আভার দিকে তাকালো। এখনো বসে আছে কেনো মেয়েটা? আভা দাঁত দিয়ে নখ কাটছে। বসে, বসে গভীর কোনো চিন্তা করছে। আহনাফ আভার এই অস্থিরতা দেখে ছোট্ট করে শ্বাস ফেললো। অতঃপর আভার দিকে একটু ঝুঁকে আভার গালে হাত রাখলো। আহনাফের স্পর্শ পেয়ে আভা চকিতে তাকালো আহনাফের দিকে। আহনাফ আভার গালে হাত রেখে আদুরে কণ্ঠে বললো,
— ” ভয় পাচ্ছো? নার্ভাস টাইপ ফিল হচ্ছে? ”
আভা চোখ বুজে লম্বা শ্বাস টানলো। কোনক্রমেই নিজের অন্তঃস্থলে প্রবাহিত নার্ভাসনেস দূর করতে পারছে না ও। আহনাফ আভার অবস্থা দেখে হাসলো। কিন্তু, আচমকা সবচেয়ে অবাক কাজ করে বসলো ও। আভার কপালের ঠিক মধ্যখানে নিজের ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দিলো। খুব সময় নিয়ে, শুদ্ধতম ভালোবাসার বহিঃপ্রকাস্বরূপ। আহনাফের ঠোঁটের স্পর্শ আভা যখন তার কপালে অনুভব করলো, আভা তাৎক্ষণিক কেঁপে উঠলো। মনে হলো, একটা চিকন বৈদ্যুতিক প্রশান্তি তার কপাল বেয়ে মস্তিষ্কে প্রবেশ করলো। এই প্রথম আহনাফের আভাকে স্পর্শ করলো। আহনাফের এই সামান্য স্পর্শ আভার নিউরন অব্দি কাঁপিয়ে তুললো। আহনাফ ধীরে ধীরে সরে এলো আভার থেকে। আভার চোখে চোখ রাখলো সে। কিন্তু, আভা সেই নেশালো চোখে চোখ রাখলো না। সত্যি বলতে, ও সক্ষম হলো না। আহনাফের ছুঁয়ে দেওয়া জায়গাটা যেনো অবশ হয়ে যাচ্ছে। মনের মাঝে এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। কিন্তু, কেনো এমন হচ্ছে? আহনাফ আভার গালে হাত রেখে নরম গলায় সুধালো,
— ” দেখো আভা, অ্যাডমিশন এক্সাম কোনো ভয়ের বিষয় না। তুমি যদি এটাকে অনেক বড় কিছু ভেবে নিয়ে ভয় পাও, তবে সেই ভয় তোমাকে প্রতিক্ষণ তাড়া করবে। কিন্তু, যদি তুমি একে একটা কুইজ প্রতিযোগিতা হিসেবে ধরো, দ্যান ইউ’ল ইনজয় ইট। প্রতিটা এমসিকিউ তুমি একটা কুইজ হিসেবে ধরো, দেখবে মজা পাবে। তখন ভয়’ই তোমার থেকে পালাবে। গট ইট ? ”
আভা অবাক চোখে আহনাফের দিকে তাকিয়ে আছে। এত সুন্দর করে আহনাফ আভাকে বুঝালো, আভা ভাবতেই পারলো না। এই মুহূর্তে তার অ্যাডমিশন নিয়ে একটা ফ্যান্টাসি কাজ করছে। মুহুর্তেই যেনো সব ভয়, সব নার্ভাসনেস কেটে গেলো। আহনাফের মুখের কথায় সত্যিই কি জাদু আছে? অদ্ভুত!
আভা গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো। আহনাফ আভার পাশ গেসে দাঁড়ালো। চোখের সামনে হাজারো স্বপ্নদেখা শিক্ষার্থী নিজের স্বপ্ন পূরণে এখানে জড়ো হয়েছে। আভা হেঁটে গেটের সামনে এসে দাঁড়ালো। আভা গেটের ভিতর প্রবেশ করবে, তার আগেই সে আহনাফের দিকে আরও একবার তাকালো। আহনাফ আভার এমন করে থেমে যাওয়া দেখে ভ্রু কুচকালো। জিজ্ঞেস করলো,
— ” হোয়াট? দাঁড়িয়ে পড়লে কেনো? যাও ভিতরে। ”
আভা মাথা চুলকে বোকার মত প্রশ্ন করলো,
— ” উম..ঘাসফড়িং যেনো কোন পর্বের প্রাণী? ”
মানে? এতদিন পড়াশোনা করে এই প্রশ্ন? আহনাফ আভার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো। আহনাফের এমন রাগ করা চাহনি দেখে আভার মুখখানা ফুটো বেলুনের মতন চুপসে গেলো। মেকি হেসে বললো,
— “সরি, সরি! ওকে, বাই। ”
আভা তরিগরি করে ভিতরে চলে গেলো। আহনাফ বাইরে দাঁড়িয়ে থাকলো কিছুসময়। হুট করে আভার বলা প্রশ্ন মনে পড়ে হেসে দিলো ও। পাগল একটা! আহনাফ হেঁটে গাড়ির কাছে এলো। গাড়িতে উঠে ইঞ্জিন চালু করে ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে এলো। একটা কাজ আছে ওর। সেটা শেষ করে আবার আসতে হবে এখানে। এখন ভালোই-ভালোই পরীক্ষাটা শেষ হলেই হয়!
#ওয়েডিং_স্টোরি
#পর্ব_২৬
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

পরীক্ষা শেষ হলো দশমিনিট আগে। আভা হল ছেড়ে বাইরে বেরিয়েছে। তার চোখ’দুটো আহনাফকে খুঁজছে। এখানেই তো ছিলেন, এখন আবার কোথায় গেলেন? হঠাৎ আভার চোখ যায় রাস্তার এক পাশে। আহনাফের গাড়ি মাত্র এসে থামলো রাস্তার মোড়ে। আভা মুচকি হেসে দাঁড়িয়ে রইলো নিজ জায়গায়। আহনাফ গাড়ি থেকে নেমে এদিকেই আসছে। গায়ে নেভি ব্লু রঙের শার্ট। শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত গুটিয়ে রাখা। শার্টের সামনের দুটো বোতাম খুলে রাখা। যার কারণে, আহনাফের পুরুষালি বুক অনেকটাই দৃশ্যমান। আভা একনজর আহনাফকে আপদমস্তক লক্ষ্য করলো। আহনাফ হঠাৎ আভার দিকে তাকাতেই আভা চটজলদি নিজের নজর সরিয়ে ফেললো।এত দিনে বড়জোর আহনাফের দিকে মাত্র কয়েক মিনিট’ই তাকিয়ে থাকতে পেরেছে। সারাক্ষণ আহনাফ ঘুরেফিরে আভার দিকেই তাকিয়ে থাকে। যার কারণে, আহনাফকে প্রাণ ভরে দেখার তেমন একটা সুযোগ হয়না।
আভার এসব ভাবনার মাঝে আহনাফ আভার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। আভা অন্যমনস্ক। আহনাফ চারপাশে একবার সতর্ক চোখে তাকিয়ে আভার ডান হাত ধরলো। শক্ত করে, একজন দায়িত্বশীল প্রেমিকের মতন। আভার ধ্যান কাটলো। আহনাফের দিকে একবার তাকিয়ে, নিজের হাতের দিকেও তাকালো। ওর নরম হাতের পাঁচ আঙ্গুল আহনাফের শক্ত, পুরু হাতের মাঝে গুটিশুটি মেরে লুকিয়ে আছে। বড্ড ভালো লাগলো ব্যাপারটা! আহনাফ হাঁটা শুরু করলো হাঁটতে হাঁটতে একবার জিজ্ঞেস করলো,
— ” বউফ্রেন্ড, এক্সাম কেমন ছিলো? সব ঠিকঠাক আনসার করেছো তো? ”

আভা ঘাড় কাত করে আহনাফের দিকে তাকালো। লম্বা করে স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
— ” মোটামুটি ভালো হয়েছে। কিন্তু, চান্স পাবো কিনা বলতে পারছি না। ”

আহনাফ আভার হাত ধরে হেঁটে রাস্তার কাছ গেসে দাঁড়ালো। এখন রাস্তা পাড় হতে হবে। আহনাফ ডানে বামে একবার তাকিয়ে আভার হাত শক্ত করে ধরলো। তারপর সবদিক তাকিয়ে আভাকে নিয়ে রাস্তার মাঝেপথে হেঁটে রাস্তা পাড় হলো। আভাকে নিয়ে আহনাফের এমন সতর্কতা দেখে আভা একটু বেশিই অবাক হলো। বাবার সাথে বাইরে বেরোলে, বাবাও সবসময় এমন করে হাত ধরে রাস্তা পাড় করায়। বাবা তো মেয়েদের সবচেয়ে ভরসার স্থল, তবে কি আহনাফকেও আভা বাবার মতই ভরসা করতে পারে? বলা হয়, বাবার পর স্বামীর স্থান। তবে?

আহনাফ আভাকে গাড়িতে বসিয়ে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসলো। গাড়ির ইঞ্জিন চালু করতে করতে বললো,
— ” অ্যাডমিশন পরীক্ষা মোটামুটি হওয়া মানেই খুব ভালো। সো, ডোন্ট ওয়ারী! যেকোনো একটাতে চান্স হয়ে যাবে। কিন্তু প্রবলেম হচ্ছে, ঢাকা মেডিকেলে হলেই হয়। বাড়ীর মেয়ে বাড়িতে থাকবে তখন। ”

আভা চিন্তায় পড়ে গেলো। মুখখানা করুন করে বললো,
— ” কিন্তু যদি, ঢাকার বাইরে চান্স হয়, তবে? ”

আহনাফ আভার এমন কথা শুনে একটু চুপ করে রইলো। গাড়ি স্টার্ট করে ড্রাইভ করতে লাগলো। আভা আহনাফের এমন নিরবতা দেখে আবারও বললো,
— ” বললেন না যে, কি হবে? ”

আহনাফ গাড়ীর সামনের গ্লাসের বাইরে তাকিয়ে গম্ভীর সুরে বললো,
— ” হলে হবে। চান্স যেখানেই হোক, পড়তে যাবে সেখানে। নিজের ক্যারিয়ারটা সবার আগে! ”

আহনাফের কথায় কোনো সংকোচ না থাকলেও আভা খুব করে বুঝতে পারলো, আভা দূরে চলে গেলে আহনাফ কষ্ট পাবে। কথাগুলো আহনাফ আভার ক্যারিয়ারের কথা ভেবে বলেছে। মন থেকে মোটেও বলেনি! আভা কিছুক্ষণ চুপ থেকে নরম কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
— ” আমি ঢাকার বাইরে চলে গেলে,আপনি থাকতে পারবেন? ”

আহনাফ চুপ করে রইলো। এক হাত দিয়ে গাড়ি চালাতে শুরু করলো। অপর হাত দিয়ে একবার কপাল ঘষছে, তো আরেকবার শার্ট কাধের পিছনে ঠেলে দিচ্ছে। আহনাফের এহেন কাণ্ডে আভা বুঝতে পারছে, আহনাফ মুখে যতই বলুক, আভা দূরে গেলে আহনাফ কখনোই সেটা অ্যালাও করবে না। আভা আর কোনো কথা বললো না! ও নিজেও চুপ করে বসে রইলো।
গাড়ি চলছে নিজ গতিতে। গাড়ির পথ সোজা থাকলেও বেসামাল হলো আহনাফ। আভা দূরে চলে গেলে, সে কি করবে? যাকে সপ্তাহে একবার না দেখলে আহনাফের চলে না, সে কি করে মাসের পর মাস আভাহীন থাকবে? কিন্তু আভার ক্যারিয়ারটাও আগে! আভার ক্যারিয়ার কি করে সে নিজ হাতে নষ্ট করবে? আহনাফ অনেক কিছু ভাবছে, কিন্তু দিনশেষে একটা কথাতেই এসে থমকে যাচ্ছে, ‘ আভাহীন সে কি করে থাকবে? ‘

হঠাৎ গাড়ি থেমে গেলো। মাঝরাস্তায়, ফুটপাথের পাশ ঘেঁষে! আভা অবাক চোখে তাকালো আহনাফের দিকে। আহনাফ গাড়ি থামিয়ে চোখ বন্ধ করে সিটে গা এলিয়ে বসে আছে। নিশ্বাসের বেগ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। আভা মুখ ফুটে কিছু বলতে যাবে, তার আগেই আহনাফ হুট করে আভার হাত ধরে হেচকা টান দিয়ে আভাকে নিজের একদম কাছে নিয়ে এলো। আভা বিস্ময় ভাব অনুভব করার আগেই আহনাফ আভাকে আচানক জড়িয়ে ধরলো। খুব জোড়ে, শক্ত করে। আচমকা আহনাফের এমন ব্যাবহারে আভা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো। আহনাফ আভার পিঠে হাত রেখে, ওর চুলে মুখ ডুবিয়ে দিলো। বস্তুত, নিজেকে সামলানোর ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা! আভা কিছুক্ষণ থম মেরে বসে থাকলো। এই মুহূর্তে কি করা উচিত, আভা জানে না। আভা নিজের অজান্তেই আহনাফের পিঠে নিজের ডান হাত রাখলো। অন্যহাতে নিজের জামা মুঠি করে বসে রইলো ও। আহনাফ কিছুক্ষণ পর নিজেকে সামলে নিয়ে সরে এলো আভার থেকে।
কয়েকটা বড় বড় শ্বাস ফেলে গাড়ির ইঞ্জিন চালু করলো। গাড়ি ইতিমধ্যে চলতে আরম্ভ হয়েছে। আভা যখন এক চমকে আছে, তখন আহনাফ গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে টিপ্পনী কেটে বললো,
— ” সামান্য জড়িয়ে ধরাতে এই অবস্থা! তাহলে, বিয়ের দিন রাতে তো তোমায় খুঁজে’ই পাওয়া যাবে না। ভাবতেই নিজের জন্য দুঃখ দুঃখ লাগছে। ”

আহনাফের কথা শুনে আভার জড়তা ভাব কেটে গেলেও, সেখানে জন্ম নিলো লজ্জার হরেক লাল-নীল প্রজাপতি। আভা লজ্জা আড়াল করতে জানালায় মুখ লুকিয়ে বসে রইলো। হঠাৎ আহনাফ গম্ভীর সুরে বলে উঠলো,
— ” তোমার ঢাকার বাইরে যাওয়ার দরকার নেই। ঢাকা মেডিকেলে চান্স পেলে তো ভালো, আর না পেলে প্রাইভেট পড়বে। তবুও, ঢাকার বাইরে যাওয়া চলবে না। গট ইট? ”

আভা অবাক হলো। বললো,
— ” প্রাইভেট পড়বো? বাবা জানলে মেরে ফেলবেন। প্রাইভেটে কত টাকা লাগে আপনি জানেন। টাকা থাকলেও বাবা প্রাইভেট পড়তে দিবেন না। বাবা এ ব্যাপারে অনেক স্ট্রিক্ট! ”

আহনাফ ভ্রু কুঁচকালো। বললো,
— ” টাকা তোমার বাবা না দিলেও আমি দিবো। বউকে প্রাইভেট পড়ানোর জন্যে এনাফ টাকা আমার আছে। তাও, তোমার ঢাকার বাইরে যাওয়া চলছে না। ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে নাও কথাটা! ”

— ” কিন্তু… ”

আভার কথার পিঠে আহনাফ কড়া সুরে বলে উঠলো,
— ” নো মোর ওয়ার্ডস!আমি যেটা বলেছি সেটাই করবো। যদি আমার শশুরমশাই আমার একাজে বাঁধা দেন, তাহলে তার ঘর থেকে আমার রিজার্ভ করা বউ একেবারে তুলে নিয়ে আসবো। তবুও, আমার লাভ স্টোরিতে তাকে হ হিটলারগিরি করতে দিবো না। বলে দিও! ”

আহনাফের মুখে বলা ছোটখাটো আগ্নেয়গিরির বার্তা শুনে আভা চুপটি মেরে বসে রইলো। মুখে আর ‘ রা ‘ কাটার জো রইলো না। আহনাফের মুখের উপর কথা বলা মানে, নিজের পায়ে নিজে কুড়াল দেওয়া। সেইসাথে, নিজের মান-সম্মান খোয়ানো। নাহ! দরকার নেই সেটার!
__________________
গাড়ি থামলো একটা রেস্টুরেন্টের সামনে। আভা এতক্ষণ ধরে কিছুই খায়নি। না খেলে কোনসময় মাথা ঘুরাতে পারে, বলা যায়না। আভা প্রথম মানা করেছিল, কিন্তু আহনাফের তীক্ষ্ম চোখের সামনে আর কথা বলার সাহস হয়নি। আহনাফ আভাকে নিয়ে রেস্টুরেন্টের দিকে এগিয়ে গেলো।

রেস্টুরেন্টে বসে আহনাফ খাবার ওর্ডার দিলো। কাচ্চি বিরিয়ানি, বোরহানি, কাবাব আর কোল্ড ড্রিংকস। আভা এত খাবারের আইটেম শুনে হতবাক। এত খাবার কর খাবে! ও কখনোই এক প্লেটের বেশি ভাত খেতে পারে না। আর, এখন?
একে, একে সব খাবার টেবিলে রাখা হলো। আভা অসহায় চোখ করে খাবারগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে। আহনাফ আভার দিকে এক প্লেট ভর্তি কাচ্চি বিরিয়ানি এগিয়ে দিলো। আভা নিজের প্লেটের দিকে একবার তাকিয়ে আহনাফের দিকে তাকালো। বললো,
— ” আমি এত খাবার খেতে পারবো না। কমান একটু! ”

আহনাফ ইতিমধ্যে চামচ নেড়ে কাচ্চি বিরিয়াী খাওয়া শুরু করেছে। আভার একথা শুনে আহনাফ টেবিলে হাত রেখে আভার দিকে তাকালো। স্বাভাবিক সুরে বললো,
— ” বিয়ের পর বাচ্চা কয়টা নিবে, বউফ্রেন্ড? ”

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here