কলেজের বড় আপু
Sumon Al-Farabi
১৫ তম পর্ব
⬇⬇
⬇
– প্লিজ এমন করে দাড়িয়ে থেকো না। একবার শুধু একবার আমায় একটু জড়িয়ে ধরো।
ওর কথা গুলো শুনে আর এসব ভাবতে ভাবতে আমারই চোখে পানি চলে আসলো। হাতগুলো উপরের দিকে তুললাম জড়িয়ে ধরার জন্য । কিন্তু তার আগেই
– আম্মু আম্মু দাদু ডাকে
অধরা চলে আসলো। তাই ও তাড়াতাড়ি করে আমায় ছেড়ে দিলো। আমিও হাতগুলো আবার নিচে নামালাম । …
– তুমি যাও আম্মু আমি আসছি ।
– আচ্ছা ।
– তুমি প্লিজ আমাদের ছেড়ে যেও তুমি এবার ছেড়ে গেলে আমরা কেউ বাঁচবো না
কথা গুলো বলে ও আম্মুর রুমে চলে গেল । আমিও বসে বসে ভাবতে লাগলাম । ও তো ওর ভুল বুঝতে পারছে তাহলে আমি কেন ওর সাথে এমন বাজে ব্যবহার করছি ? মানুষ মাত্রই তো ভুল করে । তাই জন্য ওর সাথে আমার এমন ব্যবহার করা উচিত হয় নি। এখন ওর আর আমার মাঝে তো কোনো পার্থক্য নেই । । । ।
এসব ভাবতে ভাবতে আমার মাথা টা কেমন যেন ব্যাথ্যা করতে শুরু করলো তাই একটু শুইলাম ।
শোয়ার কিছুক্ষন পর আমি ঘুমিয়ে গেলাম । একটু ঘুমানোর পর হঠাৎ কেউ আমার সামনে মনে হয় কাঁদছে ।
চোখ টা খুলে দেখি অধরা কাঁদছে । অধরা কে কাঁদতে দেখে অনেক টা অবাক হয়ে গেলাম
– কি হইছে আম্মু
– বাপি আম্মু আম্মু
– কি হইছে তোমার আম্মু র
অধরা কান্নার মধ্যে কথা বলতে পারছে না । কিন্তু হাত দিয়ে বাথরুমের দিকে দেখাচ্ছে ।
তাড়াতাড়ি উঠে বাথরুমে গিয়ে দেখি নীলাদ্রি পরে আছে কপাল টা হয়তো ফেটে গেছে তাই রক্ত ঝড়ছে ।
তারপর তাড়াতাড়ি করে ওকে কোলে তুলে হাসপাতালে নিয়ে গেলাম । সাথে আম্মু আব্বু ও আসলো।
ডাক্তার বললো ঠিক মতো খাওয়া না করার কারনে শরীর দুর্বল হয়ে গেছে তাই পরে গেছে । তারা মাথাটা ভালো করে ব্যান্ডেজ করে দিলো আর বললো আপনারা চাইলে রোগীকে বাসায় নিতে পারেন ।
– বাসায় নিয়ে যাবি?
– বাসায় নিয়ে কি করবো এখানে দুই দিন থাক
– না আম্মু আমি বাসায় যাবো।
– কিন্তু
– না আম্মু আমি বাসায় যাবো ।
– তুই কি বলিস সুমন
– ও যদি যেতে চায় তো নিয়ে যাও।
– আচ্ছা ।
আমি আর অধরা আগেই বাসায় চলে আসি। পরে আম্মু আব্বু আর নীলাদ্রি বাসায় আসে ।
বাসায় এসে সবাই বসলাম । আম্মু আর নীলাদ্রি একসাথে বসলো
– আম্মু আমাদের বাসায় কি খাদ্য সংকট দেখা দিছলো
– মানে
– ডাক্তার কী বললো শোনো নাই ।
– আমি কি বলবো ও যদি নিজেই না খায়
– তোমাকে কি মুখে তুলে খাওয়াতে হবে ?
নীলাদ্রি মাথা নিচু করে শুভ শুনছে ।
– যে মেয়েটার স্বামী তাকে রেখে চলে যায় সে কিভাবে খায় বলবি আমায়? দিনের পর দিন মেয়েটা না খেয়ে শুধু তোর জন্য অপেক্ষা করছে। ওর বাব ওকে নিতে আসছিলো কিন্তু ও যায় নি। কেন যায় নি জানিস? তুই জানবি কি করে কারণ ওটা জানতে গেলে তোর সেই আগের মনটার দরকার । যেটা তুই অনেক আগেই হারিয়ে ফেলেছিস। ওর বাবার মৃত্যুর আগে সব সম্পত্তি নীলাদ্রির নামে দিতে চেয়েছিলো কিন্তু নীলাদ্রি সেগুলো সব তোর নামে উইল করে । ওর বাবা যখন বলে কেন দিলো তখন ও কি বলছে জানিস? আমার সব জিনিস ওর কাছে সব থেকে বেশি নিরাপদ । আর আমার মানেই তো সব ওর। আমার উপর রাগ করে দূরে গেছে হয়তো কিন্তু ফিরে এসে তো আবার আমাকেই বুকে টেনে নিবে । আর তুই ? তুই কি করছিস? এই ফুলের মতো মেয়েটাকে তীলে তীলে কষ্ট দিচ্ছিস। তোকে এসব বলে কি লাভ
আব্বু নীরব হলো। আমিও নিচের দিকে মাথা করে শুনছি ।
আব্বু আবার বলা শুরু করলো
– তুই শুধু ভাবলি তোকে তাড়িয়ে দেওয়ার পর শুধু তুই একাই কষ্টের মাঝে ছিলি। তুই কি ভাবছিস একটা বারও আমরা কেমন ছিলাম ? আমরা যাকে দেখে আমাদের সকাল শুরু করতাম এখন তাকে দেখতে পাই না। কতো টা কষ্ট নিয়ে বেঁচে আছি বমরা জানিস। আমার কথা বাদ দে তোর আম্মুর কথাই বলি এমন একটা রাত নাই যে রাতটা তোর জন্য কান্না করে নি। ওর কান্না সহ্য করতে না পেরে আমি রুম থেকে বের হয়ে যেতাম । কেন কান্না করতো জানিস? কারণ তুই রাগ করে চলে গেছিস বলে তুই বাসায় নাই বলে। কিন্তু তুই বাসায় আসার পরও তোর আম্মু রোজ কাঁদে । কেন জানিস? তুই বদলে গেছিস বলে। তুই না থাকতে কাদতো সেটা শইতে পারতাম কিন্তু তুই থাকতে যদি রোজ কান্না করে তবে সেটা কিভাবে সহ্য করি বলতো । এতে তুই থাকার থেকে তো না থাকাই ভালো
মাথা তুলে যে কিছু বলবো সেটা পারছি না । কারণ আমি আমার চোখের পানি কাউকে দেখাতে চাই না ।
আব্বু আবার বলতে শুরু করলো
– যে মেয়েটাকে তুই কষ্ট দিচ্ছিস তুই জানিস ও কতো রাত দরজায় কাটিয়েছে। একবার শুধু একবার মন থেকে ভাব তো কাউকে কতোটা ভালবাসলে তার জন্য এভাবে রাতের পর রাত দরজায় কাটানো যায় ? আর সেই ভালোবাসাকে তুই অপমান করছিস? তুই না থাকায় একদিন ও নীলাদ্রি কে আমি তিন বেলা খেতে দেখিনি । হয়তো দুই বেলা খেয়েছে নয়তো একবেলা । কিন্তু তুই আসার পর গতকাল থেকে মেয়েটা না খেয়ে আছে । তাহলে তুই এসে আমাদের কি লাভ হলো যদি কষ্ট আরো বেরে যায়। তুই না আসাটাই ভালো ছিলো না?
কেউ কোনো কথা বলছে না । আব্বু কথা গুলো বলেই নীলাদ্রি আর আম্মু কে নিয়ে রুমে গেল । আমি একাই বসে থাকলাম । একটু পরে অধরা আমার সামনে আসলো
– বাপি, বাপি
– হ্যা আম্মু
– কন্না কলছো কেন তুমি ?
– কই আম্মু আমি কান্না করছি না তো
– তাহলে তোমাল চোখে পানি কেন
– এমনি আম্মু ।
অধরা কে বুকে জরিয়ে নিয়ে অনেক কান্না করলাম । আসলেই তো আব্বু ঠিকই বলছে আমি না থাকতে সবাই কান্না করতো কিন্তু আমি আসার পর ও যদি কান্না করতে হয় তবে আমি এসে কি লাভ হলো?
– আম্মু তুমি তোমার আম্মুর কাছে যাও
– তুমি যাবে না
– আমি পরে যাবো আম্মু
– আচ্ছা ।।
আমি অধরাকে ওর আম্মুর কাছে পাঠিয়ে দিয়ে বাসা থেকে বের হলাম ।
বাসা থেকে বের হয়ে একবারে রাতে বাসায় ফিরলাম । ফিরে দেখি বাসার দরজা খোলা কিন্তু কেউ নেই । হয়তো সবাই রুমে ঘুমাইছে। আমি দরজা বন্ধ করে রুমে গেলাম। গিয়ে দেখি নীলাদ্রি আর অধরা ঘুমাইছে।
আসলেই মেয়েটা অনেক মায়াবী। ওর সাথে এমন করা আমার মোটেও উচিত হয় নি ।
একটা মেয়ে যে আমায় এতোটা ভালোবাসে তাকে কিনা আমি এভাবে ? সি সি এটা আমি কিভাবে করতে পারলাম ? মনে হচ্ছে আমি কোনো মানুষ না জঙ্গলের একটা জন্তু যার কোনো বোধ বুদ্ধি নেই । যে শুধু শিকার করতেই জানে । এতো মায়াবী কাউকে সে এভাবে কষ্ট দিতে পারে …..
আমি শুধু নীলাদ্রি র দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি । শুধু মাত্র আমার জন্য না খেয়ে না খেয়ে শরীরের কি অবস্থা করছে …. …… …..
…………
………..
……….
………
……..
…….
……
…..
….
…
..
.
To be continue