কাছে দূরে পর্ব ৪৬

#কাছে_দূরে 🌺
#moumita_meher
#পর্ব___৪৬

মালি হন্নেহয়ে ছুটছে! চোখের সামনে কিছুই দেখছে তবুও ছুটছে। ছোট্ট হীরকে সে কিছুতেই হায়নাদের কাছে বলি হতে দিবেনা। কিছুতেই না। মনে মনে বারবার আয়তাল কুরসি সূরা পড়ছে। কনিকা বলতো, বিপদে এমন সূরা বারবার পড়লে বিপদ কেটে যায়। আল্লাহপাক সাহায্য করেন। রাস্তা বের করে দেন। মালির কনিকার কথা মনে পড়তেই যেন শক্তি শূন্য হয়ে গেলো। ওরা না জানি কত নির্যাতন করেছে কনিকার উপর। মালির পা থমকে গেলো। বুকের একপাশ থেকে গলগল করে রক্ত বয়ে যাচ্ছে। তার শরীরটাও অসার হয়ে আসতে চাচ্ছে। আত্নাটা কেবল ছটফট করছে তেড়েফুঁড়ে আসার জন্য। পা ভেঙে যাচ্ছে। দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি টুকুও যেন তার নেই।

_______________

আজ খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠেছে কনিকা। প্রতিদিনই ওঠে, তবে আজ যেন একটু বেশিই তাড়াতাড়ি উঠলো। ফজরের আজানও হয়নি এখনও। দু’দিন যাবত বেশ আনমনা চলাচল কনিকার। রিয়াদ খেয়াল করে কিন্তু আগ বাড়িয়ে কিছু জিজ্ঞেস করেনি। কারন সে খুব ভালে করেই জানে কনিকা নিজ থেকে যতক্ষন বলতে ইচ্ছুক না হবে ততক্ষণ কেউ গলায় ছুরি ধরেও সে কথা উদ্ধার করতে পারবেনা। রিয়াদ কনিকার আলাদা রুম। পাশের রুমে তাদের ছোট্ট রাজকুমারী ঘুমচ্ছে। কনিকা একবার পাশ ফিরে রিয়াদকে দেখল। বেঘোরে ঘুমচ্ছে সে। কনিকা উঠে মেয়ের ঘরে চলে গেলো। হীর গুটিশুটি মেরে ঘুমচ্ছে। কনিকা ছোট্ট করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেয়ের পাশে বসল। এসির পাওয়ার একদম লো করে দিয়ে গায়ের কাঁথা টা ভালো করে টেনে দিলো। মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে চুমু খেয়ে মেয়েকে আগলে ধরে তার পাশে শুইয়ে পড়ল। প্রকৃতির বুকে এখনও আলো ফুটেনি। সূর্যমামাও তার মেয়ে আর বরের মতো নাক ডেকে ঘুমচ্ছে। কনিকার বুক ভার হয়ে এলো। ভাবনায় ডুবে ভাবতে লাগলো,

—-‘ আজ যদি আমি আর রিয়াদ মরে যাই তাহলে আমাদের মেয়েটাকে কে দেখবে?’

কনিকা নিজের ভাবনায় নিজেই চমকে উঠলো। সে হঠাৎ এসব কেন ভাবছে! সকাল সকাল এসব অলক্ষুণে কথা ভাবলে সারাদিন এমনিতেও ভালো কাটেনা। আল্লাহ ক্ষমা করুন। কনিকা আপন মনে বকে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে চোখ বুঁজলো। কিছুক্ষণের মাথায় ফজরের আযান পড়লো। কনিকা উঠে গেলো নিজেদের রুমে। ফ্রেশ হয়ে ওযু করে রিয়াদের পাশে এসে বসলো। মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে ডাকলো,

—-‘ শুনছো? ওঠো এবার। আযান দিয়েছে
নামাজ পড়তে হবে।’

রিয়াদ কনিকার কোমল স্বরে ঘুমের ঘোরেই তৃপ্তিময় হাসলো। চোখ খুলে কনিকাকে পাশে দেখে মুচকি হেসে বলল,

—-‘ সুপ্রভাত পরীর আম্মু।’

কনিকা রিয়াদের ন্যায় হেসে বলল,

—-‘ সুপ্রভাত। ওঠো। ওযু করে এসো। আমি জায়নামাজ বিছাচ্ছি।’

রিয়াদ আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলো। কনিকাকে মুগ্ধ নয়নে দেখতে দেখতে বলল,

—-‘ জানো তো গিন্নী, ঠিক এমন একটা মুহুর্তের জন্য আমার হাজার বছর বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে। রোজ ঘুম ভাঙবে এই মিষ্টি স্বরে। চোখ খুলেই দেখবো এই মিষ্টি মুখটা। মনপ্রাণ জুরিয়ে যাবে তার স্নিগ্ধ কোমল হাসিতে। তারপর তার থেকে সেই চিরচেনা লাইনটি শুনবো, ‘ওঠো। ওযু করে এসো। আমি জায়নামাজ বিছাচ্ছি।’ আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ। আমি এতো সুখী কেন বলো তো?’

কনিকা জায়নামাজ বিছাতে বিছাতে মুখ টিপে হাসে। রিয়াদ এই কথা রোজ বলবে। সাথে আরও কিছুক্ষণ বকবক করে উঠে যাবে ওযু করতে। ওযু করে এসে দু’জনে পাশাপাশি জায়নামাজে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়বে। তারপর কনিকা যাবে রান্না ঘরে আর রিয়াদ যাবে মেয়ের ঘরে। মেয়েকে কোলের মধ্যে নিয়ে ঠিক ৭টা অব্দি শুইয়ে থাকবে। তার ডিউটি থাকে ১০টায়। ৭টায় মেয়েকে নিয়ে উঠে পড়বে। হীরকে ফ্রেশ করিয়ে দিবে এবং নিজেও ফ্রেশ হবে। অতঃপর দু’জনে মিলে চলে যাবে নীচতলায়। ডাইনিং গিয়ে বসবে। কনিকা স্বামী আর মেয়ের সাথে বসে একসাথে নাস্তা করবে আর গল্প করবে। খাওয়া শেষ হতে কনিকা মালি আর ড্রাইভারের জন্য নাস্তা পাঠাবে। রিয়াদ মেয়েকে সাথে করে সেই নাস্তা নিয়ে যাবে। তাদের নাস্তা দিয়ে বাবা-মেয়ে গার্ডেনে হাঁটবে একঘন্টা। তারপর মালি আসবে। মালি বাগানের কাজ করবে আর বাবা-মেয়ে সেটা দেখবে। হীর খানিক বাদে মালির সাথে দুষ্টমিতে মেতে উঠবে। রিয়াদ আবার সেটা ক্যামেরা বন্দি করবে।

১০টা বাজতেই রিয়াদ চলে গেলো তার ডিউটিতে। হীরকে কনিকার কাছে রেখে গেলো। রিয়াদ মেয়ের কপালে চুমু খেয়ে বেরিয়ে পড়লো। বাবা বেরিয়ে যেতেই হীর মায়ের কাছে বায়না করতে লাগলো সে মালিকাকার কাছে যাবে। কনিকা রান্নার জোগাড়যন্তর করছে। মেয়ের বায়না শুনে বলল,

—-‘ আধঘন্টার মধ্যে টিচার আসবে। মনে থাকে যেন।’

হীর খুশিতে গদোগদো হয়ে হাত তালি দিয়ে ছুটে গেলো গার্ডেনের দিকে। কনিকা বিচলিত কন্ঠে বলল,

—-‘ হীর মা আস্তে যাও! পড়ে যাবে তো।’

মায়ের গলা হীরের কানে এসে পৌঁছালো না। সে মনের আনন্দে ছুটে গেলো গার্ডেনে। কনিকা কাজে হাত লাগালো। সকালের অস্থিরতা ভাবটা কিছুতেই কাটছেনা। কোনো কাজেই ঠিকঠাক মন দিতে পারছেনা সে। রিয়াদকে বলতে হবে মনের অস্থিরতার কথা। বারবার মনে হচ্ছে যেন বড় কোনো বিপদ হতে যাচ্ছে।

—-‘ আস্সালামু আলাইকুম আপা।’

পেছন থেকে কারোর কন্ঠ ভেসে আসছেই চমকে উঠলো কনিকা। বুকের ভেতরটা অজানা ভয়ে কেঁপে উঠলো। পেছন দাঁড়িয়ে থাকা আগন্তুক দু’পা এগিয়ে এলো তার দিকে। মুখ উঁচিয়ে কিছু দেখার চেষ্টা করে বলল,

—-‘ রান্না করছেন?’

কনিকা তড়িঘড়ি পেছন ফিরে কিছু একটা বলতে নিলেই থমকে গেলো। সে অযথাই ভয় পাচ্ছিলো। তার পেছনে তো হীরের নাচের টিচার তাইয়্যেবা। কনিকা জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করলো। কনিকার অদ্ভুত আচরনে তাইয়্যেবা অবাক হলো। চিন্তিত কন্ঠে বলল,

—-‘ কি হয়েছে আপা? আপনার কি শরীর খারাপ?’

কনিকা ঢোক গিলে গলা ভেজালো। কথা এড়ানোর জন্য বলল,

—-‘ ত..তুমি! তুমি কখন এলে? সাড়ে দশটা বাজে?’

তাইয়্যেবা মৃদু হেসে বলল,

—-‘ না আপা। সাড়ে দশটা বাজতে এখনও দেরি। আজ আমি একটু তাড়াতাড়িই এলাম। আপা, আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে। যদি বড় বোনের মতো অভয় দেন তাহলে বলবো।’

তাইয়্যেবা বেঁটে খাটো ছোট্ট একটা মেয়ে। দেখলে মনে হয় বাচ্চা। বয়স বিশ কি একুশ।পরিবার বলতে তার দাদী আছে। বাকিরা সব মরে ভূত। ছোট থেকে দাদীর কাছেই তার বড় হওয়া। পরিবারে অনাটন আছে। তাই পড়াশোনার পাশাপাশি বেশ কয়েকটা টিউশনি করিয়ে তার সংসার চলে। তবে কনিকার থেকে সে যেমন বড় বোনের স্নেহ পায় তেমন আর্থিক ভাবে অনেক সাহায্য পায়। কনিকা তাইয়্যেবাকে নিজের ছোট বোনের চোখেই দেখে। ভীষণ আদরও করে।

কনিকা আঁড়চোখে তাকালো তাইয়্যেবার দিকে। তাইয়্যেবা লজ্জা পাচ্ছে। কনিকা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। বলল,

—-‘ কি হয়েছে? কোনো সমস্যা?’

তাইয়্যেবা না সূচক মাথা নেড়ে বলল,

—-‘ জাফর স্যার গতকাল রাতে আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন।’

কথাটা শুনতেই চোখ জোড়া চকচক করে উঠলো কনিকার। খুশিতে ফেটে পড়ে তাইয়্যেবাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো। গদোগদো করে বলল,

—-‘ কি বলছো? ফাইনালি তবে কাজ টা হয়েই গেলো।’

তাইয়্যেবা লজ্জায় মুখ লুকালো। কনিকা আবারও বলল,

—-‘ জাফর ভাইয়ের এই সামান্য কথাটা বলতে এক বছর লেগে গেলো।’

জাফর ইকবাল। রিয়াদের টিম মেম্বার। বছর খানিক আগে তাইয়্যেবা যখন হীরকে প্রথম নাচ শেখাতে আসে তখনই দেখা হয় দু’জনের। জাফর ইকবাল দেখতে সুপুরুষ। আর তাইয়্যেবা শ্যামতবী। তাইয়্যেবা নাচের সাথে সাথে গানটাও খুব ভালো করে। জাফর ইকবাল তাইয়্যেবার কন্ঠে পাগল প্রায়। তারউপর তার অসাধারণ নৃত্যের তাল। জাফর অনেকবার চেষ্টা করেছে তাইয়্যেবাকে তার মনের কথা জানাতে। কিন্তু কখনও সফল হতে পারেনি।

—-‘ হয়তো কালও বলতে পারতো না আপা। সবটাই হয়েছে রিয়াদ স্যারের জন্য। স্যার নাকি জাফর স্যারের মাথায় বন্দুক তাক করে এই কথা স্বীকার করিয়েছেন।’

তাইয়্যেবা লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে বলে। কনিকা তার কথা শুনে হৈহৈ করে হেসে উঠলো। তাইয়্যেবাকে জড়িয়ে ধরে বলল,

—-‘ জাফর ভাই ভীষণ ভালো মানুষ। সে তোমাকে খুব সুখে রাখবে।’

তাইয়্যেবা ভেজা কন্ঠে বলল,

—-‘ আপনাদের থেকে কম আপা।’

কনিকা আবারও হাসলো। তাইয়্যেবার গালে আলতো করে হাত রেখে আদুরে গলায় বলল,

—-‘ তুমি একটু বসো আমি তোমার জন্য একটা জিনিস আনবো।’

তাইয়্যেবা কনিকাকে বাঁধ সেধে বলল,

—-‘ না আপা। আপনারা আমাকে অনেক দিয়েছেন। আজ আমার দেওয়ার পালা। আপনাদের থেকে এতো নিতে নিতপলে আমি কিন্তু লোভী হয়ে যাবো।’

কনিকা হেসে পড়ে বলল,

—-‘ লোভী হলে হবে। সবসময় ভালো থাকতে হয়না। মাঝেমধ্যে একটু লোভীয় হতে হয়।’

—-‘ না আপা-

—-‘ চুপ করো। কোনো কথা না। আমি যাবো আর আসবো। তুমি এখানেই দাঁড়াও। আর হ্যাঁ, আজ দুপুরে কিন্তু আমাদের সাথেই খাবে। আমি ফোন করে তোমার স্যারকে বলে দিচ্ছি জাফর ভাইকে নিয়ে যেন দুপুরে বাসায় আসে। বিয়ের ডেট নিয়ে কথা বলবো।’

তাইয়্যেবা লজ্জায় মাথা নুইয়ে নিলো। কনিকা বলতে বলতে চলে গেলো। নিজের রুমে যাওয়ার আগে মেয়ের রুমে গেলো কনিকা। হীরের রুম থেকে গার্ডেনের সব কিছু দেখা যায়। মেয়েকে একনজর দেখার জন্যই হীরের রুমের ব্যলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো। হীর মালির সাথে খেলছে। কনিকা কিছুক্ষণ দেখে চলে গেলো নিজের রুমে। ঘর থেকে কেমন অদ্ভুত বিশ্রী এক গন্ধ আসছে। ঘরে পা রাখতেই কনিকার কপালের মাঝে চিন্তার সুক্ষ্ম ছাপ ফুটে উঠলো। কিরকম আঁশটে গন্ধ। কনিকা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো চারপাশে। এরকম গন্ধ কিসের হতে পারে? তার বুক কাঁপছে। অদ্ভুত রকমের অস্থিরতা কাজ করছে। মনে হচ্ছে ঘরে কেউ প্রবেশ করেছে। কারোর কুটিল দৃষ্টি পড়ে আছে কনিকার উপর। কনিকার মস্তিষ্ক বারবার বিপদ সংকেত দিচ্ছে। সাবধান হতে বলছে। এখনি বিপদ হামলে পড়বে তার উপর। ঘরে কেউ প্রবেশ করেছে কেবল এটাই নয় ঘরে কেউ এখনও আছে। কনিকা থমকে থমকে এগোচ্ছো। মনেমনে প্রস্তুত হচ্ছে হামলার মোকাবিলা করার। বিছানার পাশে তার ফোন। ঝুঁকে ফোনটা উঠাতে গেলেই কেউ লাঠির আঘাত করতে উদ্যত হয়। কিন্তু কনিকার সুক্ষ্ম মস্তিষ্ক ব্যাপার টা আন্দাজ করতে পেরেই ছিটকে পড়ে পাশে। অমনি সঙ্গে সঙ্গে রুমের আনাচে কানাচে থেকে বেরিয়ে আসে দানবের মতো দেখতে ৮জন। কনিকার শরীর শীতল হয়ে আসে তাদের দেখে। এই দানব গুলোর যেকোনো একজনের সঙ্গেই মোকাবিলা করতে তার সাতবার জন্মাতে হবে। তবুও মনোবল হারালো না কনিকা। হাতের মুঠো শক্ত করে নিলো। তাকে এদের বিরুদ্ধে লড়তেই হবে। পেছন থেকে দু’জন হড়বড় করে দৌড়ে এলো কনিকার দিকে। তাদের হাতে বড়বড় রামদা। কনিকার গলা শুঁকিয়ে কাঠে পরিনত হলো। আঘাতের জন্য প্রস্তুত হতেই একজন কোপ বসালো। কনিকা নীচু হয়ে সরে যেতেই কোপ গিয়ে লাগলো দেয়ালের বুকে। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে ক্ষয়ে গেলো বালু সিমেন্ট। কনিকা ঢোক গিলল। জ্বলন্ত চোখে তাকালো সবার পানে। পাশের জন আবারও কোপ বসালো। কনিকা পেছনে লেপ্টে যেতেই তার গলার ছুঁই ছুঁই করে বেরিয়ে গেল রামদা। পেছন থেকে হুংকার করে বলে উঠলো কেউ,

—-‘ এই শুয়ো**বা*** মা**রে ধর। কি করছিস! দু’জন গিয়ে চেপে ধর। তারপর বলি দে!’

পুরুষালী কন্ঠ। ভীষণ পরিচিত। কনিকা তাকে দেখার চেষ্টা করলো। কিন্তু দেখতে গিয়ে হলো বিপদ। লোক দুটো হাতের রামদা ফেলে তাকে দুইদিক থেকে চেপে ধরলো। কনিকা তেজ নিয়ে ছিটকে উঠলো। তার শক্তির কাছে লোক দুটো ব্যর্থ হলো। কনিকা তাদের ধাক্কা দিয়ে দৌড় দিতেই কেউ একজন কনিকার পিঠের মাঝে কোপ বসিয়ে দিলো। কনিকা তীব্র যন্ত্রণায় চিৎকার করে পড়ে গেলো। কনিকার চিৎকার ভেসে আসলো তাইয়্যেবার কানে। সে চমকে উঠে দোতলার দিকে তাকালো। দৌড়ে গেলো সেদিক পানে। কনিকা নীচে পড়েতেই হামলে পড়লো হায়ানার দল। তাকে খুবলে খুবলে ছিঁড়ে খেতে লাগলো। তার চিৎকারে বাড়িময় কাঁপতে লাগল। পরিচিত কন্ঠটি আবারও কথা বলল,

—-‘ এসবের কি দরকার ছিলো? মেরে দিলেই তো হতো?’

মেয়েলি কন্ঠে পৈশাচিক হাসলো কেউ। হাসতে হাতসে বলল,

—-‘ রিয়াদের অহংকার ভাঙতে না পারলে আমার শান্তি হবেনা। ওকে এই শাস্তি পেতেই হবে।’

আর কোনো শব্দ পাওয়া গেলো না তাদের। তাইয়্যেবা দৌড়ে এসে কনিকার এই অবস্থা দেখে ‘আল্লহরে’ বলে চেঁচিয়ে উঠলো। লোকগুলো শকুনের নজরে তাকালো তাইয়্যেবার দিকে। সেই সুযোগেই কনিকা তাদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো। তাইয়্যেবা হামলে পড়লো কনিকাকে বাঁচাতে। তাকে টেনে দাঁড় করিয়ে কাঁপা কাঁপা স্বরে বলল,

—-‘ আপাগো আপনার একি অবস্থা হলো।’

কনিকা দুর্বল চাহনিতে দেখলো তাইয়্যেবাকে। তার হাত দুটো শক্ত করে চেপে ধরে বলল,

—-‘ আমি এঁদের হাত থেকে আজ রেহাই পাবোনা তাইয়্যেবা! তুমি আমার মেয়েটাকে নিয়ে এখান থেকে পালিয়ে যাও। পালিয়ে যাও। ওকে ওর বাবার কাছে পৌঁছে দাও বোন।’

তাইয়্যেবা ফোপাঁতে ফোঁপাতে বলে,

—-‘ না আপা আমি আপনাকে ছেড়ে কিছুতেই যাবোনা।’

—-‘ ঐ দেখছিস কি ওটাকেও শেষ কর।’

মেয়েলি কন্ঠে বিষ বান ছুড়লো।লোকগুলো তেড়ে গেলো তাইয়্যেবার দিকে। কনিকা ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিলো তাইয়্যেবাকে। তাইয়্যেবা ছিটকে পড়লো দূরে। কনিকা চিৎকার পেড়ে বলল,

—-‘ খোদার কসম তাইয়্যেবা আমার মেয়েটাকে বাঁচাও তুমি।’

তাইয়্যেবা আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না। কনিকার কথা মতো ছুটে গেলো। সে জানে হয়তো সে নিজেও বাঁচবে না। কিন্তু হীরকে বাঁচাতেই হবে। তাইয়্যেবা ছুটে গেলে পুরুষালি কন্ঠ হুংকার ছেড়ে বলে উঠলো,

—-‘ ঐ জানোয়ারের বাচ্চারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মুখ দেখছিস কার। যা গিয়ে ঐ মা**কেও ধরে আন। আজ সব গুলোকে জবাই দিবো।’

কনিকা আবারও চমকে উঠলো। পরিচিত গলা বলে পেছন ফিরে দেখতে নিলেই কেউ ছুরির আঘাত বসায় তার পেটে। চামড়া কেটে সাদা মাংস বেড়িয়ে পড়ে। কনিকা আল্লাহরে বলে চিৎকার করে। কনিকার আর্তনাদে পৈশাচিক আনন্দ পায় হায়নারা। কনিকা ছুটে যেতে চায় রুমের বাইরে। কিন্তু পারেনা। আবারও ফ্যাচফ্যাচ করে শরীর কেটে যাওয়ার শব্দ হয়। প্রকৃতি বিষাক্ত হয়ে ওঠে এমন নির্মম অত্যাচারে। পুরুষটি এগিয়ে আসে কনিকার দিকে। চুলির মুঠি ধরে টানতে টানতে নিয়ে যায়। তাজা রক্ত ভেসে ওঠে কনিকা। অসহনীয় যন্ত্রণায় তাকে শুষে নিচ্ছে। ঠেলে দিচ্ছে মৃত্যু দুয়ারে। লোকটা কনিকাকে নিয়ে ছাদে উঠে। কনিকা ঘোলাটে চোখে গার্ডেনের দিকে তাকায়। মালি আর তার মেয়ে বাসার দিকেই যাচ্ছে। কনিকার মন ভেঙে যায়। এবার যে হায়নারা ওর মেয়েকেও রেহাই দিবেনা। কনিকা চিৎকার করে ওঠে মেয়ের নাম নিয়ে। কনিকার চিৎকার মেয়ের কানে পৌঁছাতেই গলার রগ কেটে দেয় লোকটা। পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় নীচে। শেষবারের মতো মেয়েকে আর কাছে পাওয়া হলোনা কনিকার। নীচে পড়তে পড়তে কলেমা পড়ে। মাটির বুকে তার নিথর দেহ পড়লে মাটিও আঘাতে চিৎকার করে ওঠে। কনিকার চুপিচুপি অভিযোগ আল্লাহ তায়ালার কাছে পৌঁছে দেয়।

_______________

না দেখেই কারোর সাথে ধাক্কা খেয়ে থমকে যায় মালি। আল্লাহর নাম নিয়ে কাঁপতে থাকে। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটার মুখ দেখছে না সে। বুকের অসহনীয় যন্ত্রণা তাকে অন্ধ করে দিয়েছে। তবে তার অবচেতন মন বলছে এ রিয়াদই হবে। কথাটা ভাবতেই তার শরীরে শীতল উষ্ণতা বয়ে গেল। মন যেন ক্ষনিকের জন্য শান্ত হলো। পেছন থেকে আরেকটা গুলি এসে তার ক্ষতস্থানের ক্ষত আরও বাড়িয়ে দিলো। সে শরীরের ভার ছেড়ে লুটিয়ে পড়লো। চোখের পলকে হীর আর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ টা উধাও হয়ে গেলো। হীরকে নিয়ে পালানোর শাস্তি স্বরূপ তাকেও শেষ পথে কোপানো হলো। ইচ্ছে মতো কোপালো। তবে তার শরীর আর সেই যন্ত্রণা উপলব্ধি করতে পারলোনা। তার আগেই তার আত্নাটা মুক্ত পাখির মতো উড়ে গেলো।

#চলবে_

[ বিঃদ্রঃ চরিত্র উপস্থাপনের খাতিরে কিছু অকথ্য ভাষার গালাগালি ব্যবহার করতে হয়েছে। তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। কেউ ব্যাক্তিগত ভাবে নেবেন না। ধন্যবাদ]

[ বিঃদ্রঃ এতদূর কষ্ট করে পড়ে আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করবেননা। যদি ছোট্ট একটা মন্তব্যে আপনার মতামত জানাতে কষ্ট হয়। ধন্যবাদ। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here