কাঞ্জি পর্ব -১২

#কাঞ্জি
#পর্ব-১২
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)

ওয়াজিফার কথায় ভিতরটা শেষ হয়ে গিয়েছিল আবৃতির।নেহাৎ তার দিকে নজর দেওয়ার মানুষ নেই বলে কেউ দেখতে পেল না মেয়েটা দুই চোখে পানি টলমল করছে।সে প্রেমে প্রত্যাখিত হয় নি, ভালোবাসাটা খুব কাছ থেকে পেয়ে হারিয়ে যাওয়াটা দেখতে কোনো মানুষের যেমন মৃত্যু সম যন্ত্রণা হয়,তার তেমন হচ্ছে।ওয়াজিফার সাথে শাহরিয়ারের বিয়ের কথা অনেক আগে থেকেই জানে আবৃতি। তার মনের অনুভূতি ভালোবাসায় রূপ নেওয়ার আগ থেকে জানে।ওয়াজিফা কতোটা ভালোবাসে শাহরিয়ারকে। শাহরিয়ারের পছন্দ,অপছন্দের সব কিছুই মেয়েটা নিজের জীবন বানিয়ে নিয়েছে। এমনকি শাহরিয়ার যে রঙ পছন্দ করে না সেই রঙের কোনো কাপড় অবধি নেই ওয়াজিফার কাছে।শাহরিয়ারের পছন্দের রঙ শ্বেত শুভ্র সাদা রঙ। এই যে আজ ওয়াজিফা পরেছে সেই রঙটা।দুজনকে পাশাপাশি কতোটা সুন্দর লাগছে।আর আবৃতি? তার গায়েও তো শাহরিয়ারের অপছন্দের বেগুনী রঙটা! সে কীভাবে ভালোবাসতে পারে তাকে?

আবৃতি কান্না গিলে ফেলার চেষ্টা করে।কত সময় পার হয়েছে? কত যুগ?শাহ্ কেন এখনো জবাব দিচ্ছে না ওয়াজিফার প্রশ্নের? কেন এতো যুগ ধরে হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে দুজনে?সময় কি থেমে গেছে? আবৃতির মনে হলো সময় থেমেছে অনন্ত কালে।যার কোনো সীমারেখা নেই।

শাহরিয়ার ধীরে সুস্থে ওয়াজিফার থেকে হাত ছাড়িয়ে নিলো।ওয়াজিফা মেয়ে হিসেবে অনেক ভালো কিন্তু শাহ্ যে তার মনে আবৃতির রাজত্ব মেনে নিয়ে তার কিঙ্কর হয়ে আছে।একজন সামান্য কিঙ্কর, যে কেবল আবৃতি নামক রাজতন্ত্রের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে।তার কাছে যে আবৃতি বাদে পৃথিবীর সকল প্রেয়সী নারীর জাতটা ভীষণ কুৎসিত।

“ওয়াজিফা বোসো।কখন এলে? ”

“মাত্র এসেছি আমরা।তুমি মাত্র ফিরলে?”

“হ্যাঁ।আচ্ছা বোসো আমি নিচে যাবো।আবৃতির ইনজেকশনের সময় হয়েছে। হাসপাতাল থেকে লোক আসবে।”

“ওর কি হয়েছে?”

“টাইফয়েড।”

পিছন ফিরে ওয়াজিফা আবৃতিকে খুঁজে।আবৃতি চায় দূরে চলে যেতে।দ্রুত পা চালায় রান্না ঘরের দিকে।দুপুরের খাওয়ার সময় পেরিয়েছে অনেক আগেই।বাসায় চলে যেতে ইচ্ছে হয় তার।সুফিয়া খাতুনের নিষেধ তাছাড়া রত্না বেগম গতকালের ঘটনার পর তাকে যদি আবার মারে? শাহরিয়ারের মা যে রত্না বেগমকেও অনেক কথা শুনিয়েছলেন।এই ভয়ে আর যাওয়া হয়নি। কিংবা শাহরিয়ারের ভালোবাসি বলাতেই সময় চলে গেছে।প্রচন্ড ক্ষুধা নিয়ে রান্না ঘরে খাবার গরম করতে এসেছিল। মাছ খেতে ইচ্ছে করছে না বলে ডিম ভাজার প্রস্তুতি নিচ্ছে সেই মুহুর্তে ওয়াজিফা এসে তার পাশে দাঁড়ালো।

“তুমি বোসো আবৃতি আমি ভেজে দিচ্ছি।”

“না আপু লাগবে না।আমি করে নিতে পারবো।”

“আরে আমিও পারবো। তুমি টুলটায় বোসো।আর হ্যাঁ ঝাল কেমন খাচ্ছো?”

“মোটামুটি। কেমন আছো?”

“আমি ভালো কিন্তু তোমাকে দেখে ভয় পেয়েছি।এতো শুকিয়েছো কেন?”

“ওই আর কি।”

“খুব ক্ষুধা পেয়েছে? না হলে অন্য কিছু একটা করে দেই?এই অসময়ে ভাত খেলে তুমি আবার রাতে কিছু খাবে না।”

“সমস্যা নেই আপু।এখন যা রাতেও তাই।”

একটা কমলা আবৃতির হাতে দিয়ে ওয়াজিফা তার জন্য চিকেন স্যালাড বানানো শুরু করলো। ওয়াজিফা সবার সাথেই এমন।সরলতা বজায় রাখে, ছোটোদের ভীষণ আদর করে,যত্ন নিতে জানে।দশ মিনিটের মাঝে খাবার তৈরী করে আবৃতির হাতে দিলো।ততক্ষণে বাহিরে থেকে সিজাদ ডাকছে আবৃতিকে।হাসপাতাল থেকে লোক এসেছে। খাবারটা মুখে দিয়ে দুই চোখের পানি হাত দিয়ে মুছলো আবৃতি। ওয়াজিফা যখন জানতে পারবে তার শাহরিয়ার তাকে নয় বরঙ যে মেয়েটাকে ওয়াজিফা ভালোবেসে খাবার তৈরী করে দিচ্ছে তাকে ভালোবাসে,তখন কি এই খাবারের খোটাটা তাকে দিবে?অভিশাপ করবে?

করবে,কারণ মেয়ে মানুষ সব কিছুর ভাগ করতে পারবে তবে নিজের ভালোবাসা নয়।প্রয়োজনে খু’নী হবে কিন্তু দ্বিতীয় ব্যক্তি না। আবৃতি সব বুঝে, জানে। তাই সে সিদ্ধান্ত নিলো শাহরিয়ারকে বুঝাবে।হয়তো সে রাগ করবে, বকাঝকা করবে,কষ্ট পাবে কিন্তু তবুও বুঝাবে।

রাতে ছাদে বসে চাঁদ দেখছিল আবৃতি। আজ তার মা-বাবার বিবাহ দিবস।বাবা বেঁচে থাকলে এই দিনটা কতোটা আনন্দ করতো তারা? নিশ্চয়ই মা লাল রঙের শাড়ি পরতো, ভালো মন্দ রান্না হতো। একটা কেক আনা হতো আর বাবা গাছ থেকে গোলাপ ছিড়ে এনে বলতো,

“দেখেছো?একদম ভুলে গেছি।”

আর মা রাগ করলে পকেট থেকে উপহার বের করে দিতো।এসব ভাবতেই তার ভীষণ কান্না পেল।সব কিছুর মাঝে এই চোখের পানিটা আর কান্নাই সব মনে হচ্ছে।এতো এতো যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে থাকাটা কতোটা মুশকিল সেটা কেবল সে জানে। শাহরিয়ার কল দিয়েছে, স্ক্রীণে নাম্বার না দেখেই রিসিভ করলো আবৃতি।

“বলুন শাহ্।”

“ভালোবাসি।”

“হুম।”

“ভালোবাসি।”

“শুনেছি।”

“ভালোবাসি।”

আবৃতি বুঝতে পারলো তার সাথে ফাজলামো করছে। সে ফোন কেটে দিতে চাইলো কিন্তু না দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

“আজ কি হয়েছে?এতো বার ভালোবাসি বলছেন?”

“ইচ্ছে হচ্ছে।তাই, বলা নিষেধ না কি।”

“আমরা ভুল করছি শাহ্।ওয়াজিফা আপু অনেক ভালো একটা মেয়ে।আপনাকে আজ আটটা বছর ধরে সে চেয়ে এসেছে। আজ তার থেকে আমি আপনাকে নিতে পারি না।এটা অন্যায়।”

“আমি তো তাকে ভালোবাসতে বলিনি।”

“নিষেধও তো করেন নি।একটা মেয়ে যখন আপনাকে ভালোবেসে নিজের জীবনের তিন ভাগের এক ভাগ কাটিয়ে দিতে পারে সে মেয়ের থেকে অন্য কাউকে ভালোবেসে সুখী হতে পারবেন?”

“পারবো আবৃতি। তুমি ওর আট বছর দেখলে অথচ আমার চেষ্টাটা দেখলে না? আমি কি তোমায় জোর করছি?”

আর কোনো কথা হয়নি দুজনের।আজ মায়ের বড্ড অনুভব হচ্ছে আবৃতির। নিজের ফ্ল্যাটে ফিরে গেল সে। রত্না বেগমের ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কিছু সময় অপেক্ষা করলো।দুই মন দুই দশায় টিকে গেল স্নেহের লোভী মনটা।আস্তে-ধীরে দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করলো সে।রত্না বেগম ঘুমাচ্ছে।আলো আধারিতে রত্না বেগমের গায়ে থাকা ওড়নার একটা পাশ ধরে ফ্লোরে বসে রইল আবৃতি। ভালো লাগছে তার। ভয় করছে না, দুই চোখে নেমে আসছে গভীর ঘুম।

#চলবে(এডিট ছাড়া।যারা পড়বেন তারা রেসপন্স করবেন।)

#ছবিয়ালঃankitaww

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here