#কাঞ্জি
#পর্ব-২১
নাক দিয়ে চুইয়ে রক্তের ধারা গড়িয়ে আসছে।মাথাটা কেবল ঝিম ঝিম করছে না, সাথে দু চোখেও ব্যথা হচ্ছে তার। দুই ফোঁটা রক্ত শাড়িতে পরতেই যেন হুশ ফিরলো তার। দূর থেকে আলো অন্ধকারে দৌড়ে আসছে শাহরিয়ার।তার দিকে হাত বাড়িয়েও তাকে ধরতে পারলো না আবৃতি। কিন্তু শাহরিয়ার তাকে ধরে ফেলল।তার বাহুতে মাথা রাখতে রাখতে আবৃতি কেবল শুনতে পেল তার নাম।
অনেকে বলে ভালোবাসাটা হচ্ছে অনুভূতি আবার কেউ বলে ভালোবাসাটা বোকামী।কারোর কারোর মতে তো ভালোবাসা বলতে কিছুই নেই,যা আছে কেবল মোহমায়া৷ কিন্তু হোক সেটা মোহমায়া কিংবা ভালোবাসা, তার রঙ কেমন?কখনো কি কেউ খুঁজে পেয়েছে সেই রঙটাকে?যে রঙের হয় ভালোবাসা কিংবা কোন আকৃতির? বঙ্কিমচন্দ্রের সেই বিড়াল গল্পের মতো বলতে ইচ্ছে হয়, “আমি চোর বটে কিন্তু আমি কি সাধ করিয়া চোর হইয়াছি?”
ভালোবাসলে চোর হতে হয় রে। চোর হতে হয়।এই যে তাকে এক পলক দেখে তার সেই ছবিটা মনের ফ্রেমে সাজিয়ে রাখার চোর কিংবা নানান বাহানায় তার থেকে তার নিজস্ব সময় চুরি করে নিজের নামে লিখে নেওয়াটা। আবৃতির প্রতি শাহরিয়ারের ভালোবাসাটাও ঠিক এমন।কিছু সময় পূর্বে আবৃতি যখন গেটের বাইরে গিয়েছিল ফুলের জন্য ঠিক সেই মুহুর্তে একটা বল এসে লেগেছে তার নাক বরাবর। এলাকার বাচ্চারা খেলছিল, সেখান থেকেই বলটা এসে লেগেছে আবৃতির মুখে। আগ পিছ কিছু বুঝে উঠার আগেই জ্ঞান হারিয়েছে আবৃতি। তাকে বাড়ির ভিতরে না নিয়ে রিক্সায় করেই হাসপাতালের দিকে রওনা দিয়েছে শাহরিয়ার।ইমারজেন্সী রুমে দায়িত্বরত ডাক্তার জানালেন ভয়ের কিছুই নেই।আবৃতি ঠিক আছে কিন্তু আচমকা ভয়ের কারণে জ্ঞান হারিয়েছে। অল্প সময়ের মাঝেই জ্ঞান ফিরবে।তবুও শাহরিয়ারের মনের ভয় গেল না।সে একটা কেবিনে আবৃতিকে শিফট করার অনুরোধ করলো।হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলল।তার মনের ভয় এবং আবৃতির অসুস্থতার কথা জানালো।প্রবীণ ডাক্তার প্রেমিক শাহরিয়ারের কথায় স্মিত হাসলেন। তাকে আশ্বাস দিয়ে বললেন,
“এমন কিছু হলে রোগীর আরো লক্ষণ দেখা দিবে মি.শাহরিয়ার।”
“কিন্তু এর জন্য তো আমরা অপেক্ষা করতে পারি না।কবে নাগাদ লক্ষণ দেখা দিবে এরপর আমরা চিকিৎসা নিবো?”
“সেটা অবশ্যই না।তবে রোগ না থাকলে কি চিকিৎসা দিবো।”
“কোনো চিকিৎসা না দিন,পরীক্ষা করতে তো সমস্যা নেই।”
“বেশ, আমি বলে দিচ্ছি।আপনার স্ত্রীর সকল পরীক্ষা করিয়ে দেখুন।আশা করছি আপনার ভয়টা অহেতুক।”
“সেটা হলে আমার থেকে অধিক খুশি আর কেউ হবে না।”
পরীক্ষার জন্য আবৃতির ব্লাড নেওয়া হলো। জ্ঞান ফেরার পর আবৃতি দেখতে পেল সে হাসপাতালে শুয়ে আছে।তার ডান হাত থেকে রক্ত নেওয়া হচ্ছে। পাশে শাহরিয়ার কে দেখে সে বলল,
“হাসপাতালে কেন?”
“জ্ঞান ছিল তোমার?কে বলেছিল বাইরে যেতে?আমি না দেখলে পড়ে থাকতে রাস্তায়।কি হতো খেয়াল আছে?”
“আরে একটু বাইরে গিয়েছিলাম।কে জানতো বল এসে আমার মুখেই লাগবে?”
শাহরিয়ারের ইচ্ছে হলো আবৃতি কে তুলে একটা আছাড় দিতে কিন্তু সে দাঁতে দাঁত কামড়ে বলল,
“আচ্ছা সেটাই তো।আপনার মনে কখন কি চায় আপনি নিজেই জানেন না।বললেন অনুষ্ঠানে যাবেন না আবার শাড়ি পরে নিচে নেমেছেন।দুই বার শাড়ির সাথে প্যাঁচিয়ে পড়তে পড়তে বেঁচে গিয়ে এখন নাক ফাটিয়ে বসলেন।আমার বাচ্চারা বড় হলে কি জানবে?বিয়ের দিনই তার মায়ের নাক ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছিল?নাক ফাঁটা মা?”
একে তো শাহরিয়ারের সামনে বার বার নিজেকে এলোমেলো করে ফেলে আবৃতি নিজেকে এর মাঝে এসব শুনে লজ্জায় লাল হয়ে গেল সে। দুই হাতে ভর দিয়ে উঠে বসতে বসতে বলল,
“আপুর হলুদ ছিল।এখানে না থাকলেও হতো।”
“আপুর জন্য পুরো পরিবার রয়েছে।”
“আমার জন্যও থাকতো।”
“তুমি যেটা জানো না সেটা নিয়ে কথা বলবে না।আর ওয়াজিফার থেকে কিছুটা দূরে থেকো। মেয়েদের ইমোশনাল।ডিসটেম্পার বলেও কিছু আছে।আচ্ছা শরীর ভালো লাগলে এবার বাড়ি ফিরবে?”
রিক্সায় উঠে শাহরিয়ার ফোন হাতে নিয়ে দেখতে পেল প্রায় বিশ খানেক মিসড কল।তার মা এবং ওয়াজিফার।গেটের কাছে এসে আবৃতিকে হাত ধরে নামিয়ে অন্ধকারের দিকে এগিয়ে গেল শাহরিয়ার। কয়েক মুহূর্তে এলোমেলো অধর বর্ষণে সিক্ত করে ফিসফিস করে বলল,
“দাদীর বাসায় থাকার প্রয়োজন নেই।নিজ রুমে থাকবে।তোমার সাথে আমার আবার আগামীকাল কথা হবে।কাল কালো রঙের শাড়িটা পরবে।আর ফোনটা সাথে রেখো।”
নিমিষেই চলে গেল শাহরিয়ার। আবৃতি রুমে ফিরে শাড়ি বদলে ফেলল।হালকা গোলাপি রঙের জর্জেট শাড়ি, কপালে ব্যান্ডেজ এবং খোলা চুলে যখন নিচে নেমে এলো তখন তার দিকে তাকিয়ে দুই বার শ্বাস নিতে ভুলে গেছে বর্ণ। সে তো এমনটাই বলল। বয়সে ছোটো না হলে আজকেই বিয়ের প্রস্তাব দিতো। দীর্ঘশ্বাস ফেলে চেয়ারে বসতেই বর্ণ অনুনয়ের সুরে বলল,
“উইল ইউ বি মাই ডান্স পার্টনার আপু?”
আবৃতি হেসে তার হাতে হাত রাখতেই চোখ পড়লো শাহরিয়ারের দিকে।সে ভ্রু-কুঁচকে তাকিয়ে আছে।অথচ তার পাশে বসে ওয়াজিফা তখন ব্যস্ত পুরো রাজ্যের কথা বলতে।কিছু সময় পর একটা এনাউন্সমেন্ট হলো।সেখানে ওয়াজিফার বাবা জানালো খুব দ্রুত এক হতে চলেছে শাহরিয়ার এবং ওয়াজিফা। এই বিয়ের পরেই তাদের বাগদান সম্পন্ন করবে।আবার এমনটাও হতে পারে আগামীকালই।
আবৃতি কোনো কথা বলল না। সে কেবল অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তার ছোটো চাচার দিকে।অপর দিকে তার চাচা যেন দুই চোখ দিয়ে গিলে খাবে শাহরিয়ারকে।
চলবে(এডিট ছাড়া, যারা পড়েন তারা রেসপন্স করবেন।)
#ছবিয়াল:চিত্রমূহ