কাঞ্জি পর্ব -২০

#কাঞ্জি
#পর্ব-২০

আবৃতির গায়ে জ্বর। তার কপালে হাত রেখে চমকে উঠেছে শাহরিয়ার।মেয়েটাকে দেখেই ক্লান্ত মনে হচ্ছিলো।তাইতো তখন জোর করে ঘুমাতে বাধ্য করে।কিন্তু ভাবেনি এতো দ্রুত সে ঘুমিয়েও পড়বে। আরো এক বার ফোনটায় রিং হয়ে কেটে গেল। শাহরিয়ারের মা কল দিচ্ছে। নাম্বারটায় এবার রিডায়াল করে শাহরিয়ার বলল,

“আমি ব্যস্ত আছি মা।”

“নিজের বোনের হলুদের অনুষ্ঠান থেকে অন্য কিছু অধিক গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে কি?”

” আমাদের জীবনে সব কিছুই নির্দিষ্ট জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ। তাই একের সাথে অন্যের তুলনা না করাই ভালো।”

“শাহানারা তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।বাকীটা তোমার ইচ্ছে এবং ব্যস্ততা।”

“ওকে বলো স্টেজে যেতে। আমি চলে আসবো সময় মতো।”

আবৃতির অসুস্থতা নিয়ে ইদানিং ভয় হয় শাহরিয়ারের। এমন হালকা পাতলা লক্ষণ নিয়েই ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেল তার বন্ধু।শুরুর দিকে তেমন কোনো লক্ষণ দেখা দেয়নি।কেবল জ্বর ও মাথা ব্যথা ছিল। মাঝে মাঝে তার ভীষণ জ্বর হতো আবার দুদিন পরেই সুস্থ হয়ে যেত। খাবারে অরুচি আর দিন দিন রোগা হয়ে যাওয়ার কারণে পরিবার থেকে যখন বিষয়টা আমলে নিলো ততদিনে দেরী হয়েছে অনেকটা।চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেল সে। আবৃতির শরীরের জ্বর এবং হুট করেই তার ওজন হ্রাস ভয়ে ফেলে দিয়েছে তাকে।একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলল শাহরিয়ার।আবৃতির চুলে হাত বুলিয়ে দিতেই ঘুম থেকে জেগে উঠেছে সে। ঘুম জড়ানো গলায় ফিসফিস করে বলল,

“কখন উঠেছেন?”

“অনেক সময় হয়ে এলো। তুমি বিশ্রাম নিবে?না কি যাবে অনুষ্ঠানে?”

“যেতে ইচ্ছে করছে না।”

“তবে ঘুমাও। আমি আসছি।”

আবৃতি আপত্তি না করে পাশ ফিরে ঘুমিয়ে গেল পুনরায়।তার দুই চোখে অসম্ভব জ্বালা করছে। বালিশের নিচে মাথা রেখে সে ডুবে গেল পুনরায় ঘুমের দেশে।

——————————

কোনো একটা কাজে ফ্ল্যাটে ফিরছিল ওয়াজিফা।সে লিফটের জন্য অপেক্ষারত অবস্থায় ছিল তখন নিচে নেমে এলো শাহরিয়ার। শাহরিয়ার তার উপর যতোই রাগ দেখাক না কেন, ওয়াজিফা মেয়েটা দারুণ ভালোবাসে এই মানুষটাকে।সময়ে অসময়ে কল্পনার জগতে বিচরণ করতে ভালো লাগে। কল্পনায় তাদের সেই কথোপকথন হয় যেটা শাহরিয়ার কোনো দিন তাকে বলবে না। কল্পনার শাহরিয়ার তো ওয়াজিফা বলতে পাগল।এক মুহুর্ত তাকে না দেখলে সে অস্থির হয়ে যায়।সে সকালে উঠে তার সাথে বাগানে হাঁটতে যায়, তার হাতের চা ভীষণ পছন্দ করে, খাবার খেয়ে হাত মুছে তার ওড়নায় কিংবা এক সাথে রাতে ছাদে বসে জোৎস্না বিলাশ করে। শাহরিয়ার পাশ কাটিয়ে যেতেই ধ্যান ভাংগলো ওয়াজিফার।নিজেকে ভীষণ ছোটো লাগে। সে কোথাও একটা পড়েছিল,

“যদি তোমার হৃদয়কে কিছু আঘাত করে তবে সেই জানালাটা বন্ধ করে দাও, বাইরের দৃশ্যটা যতোই সুন্দর হোক না কেন!”

শাহরিয়ার তার সেই বাইরের সুন্দর দৃশ্য যা বার বার তাকে ক্ষত বিক্ষত করে চলেছে অথচ সে মনের জানালাটা বন্ধ করতে পারছে না।তার যে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।একজন মানুষকে কতোটা ভালোবাসলে এমন বেহায়া হতে হয়?ঠিক ততোটাই কি?যতোটা ওয়াজিফা ভালোবাসে শাহরিয়ারকে?

অনুষ্ঠানে আবৃতিকে না দেখে রত্না বেগম অদিতিকে জিজ্ঞেস করলো। শাহরিয়ার এবং আবৃতির বিয়ের কথাটা অদিতিও জানে।সে ভীষণ খুশি হয়েছে।ছোটো বেলা থেকে দুজন একসাথে বড় হয়েছে।সমাজের চোখে একে অপরের সৎ বোন হলেও তাদের মাঝে সম্পর্কটা বেশ ভালো। বোনের পাশে শাহরিয়ার কে দেখে বুঝতে পারলো বাসায় আবৃতি একা রয়েছে। মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই উপর থেকে ঘুরে এসে অদিতি তার মাকে জানালো আবৃতি ঘুমিয়েছে। রত্না বেগম কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালেন না।সে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন মেহমানদের সাথে।এক হিসেবে ভালোই হয়েছে, এখানে না এলে মেয়েটা কারোর সামনাসামনিও হবে না,আর কোনো কথাও হবে না।

শাহরিয়ার চলে যাওয়ার পর আবৃতি ঘুমানোর চেষ্টা করলেও আর ঘুমাতে পারেনি।ঘুমটা ছাড়াছাড়ি ভাবে জড়িয়ে আছে তার দুই চোখে। এক কাপ চা বানিয়ে সে বারান্দায় এসে বসলো।এখান থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে দূরের অনুষ্ঠানের সবকিছুই। শাহানারার চোখ মুখে আলাদা এক দ্যুতি দেখা দিচ্ছে, যে দ্যুতি দেখা দিচ্ছে সে দ্যুতি কি তার নিজের মুখেও রয়েছে? অজান্তেই হাতের দিকে চোখ গেল তার।অনামিকায় জ্বলজ্বল করছে একটা আংটি।আংটিটা সাক্ষী দিচ্ছে সে এখন অন্য কারো সম্পদ।শাহরিয়ার নামক মানুষটার সিল মোহর লেগেছে তার। দূরে দেখা যাচ্ছে ওয়াজিফা এবং শাহরিয়ার কে।তাদের একত্রে দাঁড় করিয়ে ওয়াজিফার বাবা কিছু একটা বলছে। লজ্জায় রাঙা হয়ে আছে ওয়াজিফার মুখ।বুকের ভিতরটা জ্বলে উঠলো আবৃতির। ওয়াজিফা যেন আরো কিছুটা ঘনিষ্ঠ হয়ে দাঁড়ালো। আর শাহরিয়ার?তাকে দেখে ফিক করে হেসে উঠলো আবৃতি। মনে হচ্ছে কেউ যেন এক দলা নিম পাতা তার মুখে জোর করে ঢুকিয়ে দিয়েছে।সেটা সে না পারছে গিলতে আর না পারছে ফেলে দিতে।গলার কাছটায় কিছু একটা কামড়েছে আবৃতির।আয়নায় দেখার জন্য রুমের ভিতরে এলে দেখতে পেল লাল হয়ে আছে ওখানটায়।দিব্যি প্রকাশ করছে কারোর ভালোবাসার চিহ্ন।ওখানে হাত বুলাতে বুলাতে জীবনের সবচেয়ে ভয়ংকর সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেলল সে। আলমারি থেকে বের করে আনলো শাহরিয়ারের পোশাকের সাথে মেলানো শাড়িটা। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে বলল,”দূরত্ব সইতে যখন কষ্ট হয় তখন রাখ ঢাক রাখাটা উচিৎ নয়।”

চলবে(এডিট ছাড়া।যারা পড়েন রেসপন্স করবেন।)

#ছবিয়াল:ankitaww

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here