কি ছিলে আমার পর্ব -১৩

#কি_ছিলে_আমার
-রূবাইবা মেহউইশ
পর্ব-১২

শীত পড়েছে জাঁকিয়ে; সকালসন্ধে কুয়াশায় চারপাশ বড় ঘোলাটে দেখায় এখন। মৈত্রীর ক্লাস আজ নয়টায় কিন্তু এক ভার্সিটি ফ্রেন্ড সুমির বিয়ে ঠিক হয়েছে হুট করে। আজ রাতেই আকদ তাই সকালেই বাড়ির লোকজন হলুদ, মেহেদী পরাবে তাকে। মৈত্রী ক্লাস মিস দিতে চায়নি বলেই তাকে সকালে গিয়ে মেহেদী দিয়ে দিতে হবে বলে আবদার জুড়ে দিলো বান্ধবীটি। তবে সে রাতের বেলায় যাবে না আগেই বলে রেখেছে। মৈত্রীর কাছে খুব বেশিই ঘনিষ্ঠ কেউ নেই তবুও বান্ধবীটির মন রাখতেই সে বাবাকে বলে সকাল সকাল তৈরি হলো। হলুদ আর গোলাপির মিশ্রণে সুতির মধ্যে চমৎকার একটি জামা পরেছে। দু হাতেই গোলাপি রঙের চুড়ি আর কানে ঝুমাকো দুল। এমনিতেও ক্লাসে যাওয়ার সময় সে চুড়িগুলো খুলে ব্যাগে পুরবে সেই পরিকল্পনা করাই আছে কিন্তু মুখটা একদম প্রসাধনবিহীন ভালো লাগবে না বলে হালকা মেকআপ করেই নিলো। ঠোঁটে গোলাপি লিপস্টিক লাগিয়ে আবার ভাবলো মুছে ফেলবে পরমুহূর্তেই মনে হলো থাক টুকটাক মেহমান থাকবে বলেছে সুমি৷ চোখে কাজল আঁকতেও ভুল করল না মৈত্রী । কিন্তু বাড়ি থেকে বের হবে ভাবতেই কেমন লজ্জা লাগল। এত সকালে এমন মেকআপ নিশ্চয়ই হাসবে সবাই! আবার মনে হলো নিজেকে ভালো লাগছে এমন সাজগোজে দেখতে। নিজের ভালো লাগার উর্ধ্বে আর কি হতে পারে! ওড়না মাথায় দিয়ে পেঁচিয়ে তার ওপর শাল জড়িয়ে নিয়েছে মৈত্রী। বসার ঘরে ঢুকতেই দেখলো মিশু নাশতা করছে স্কুলে যাবে বলে। সেও গিয়ে পাশাপাশি বসতেই শেলি এলো রান্নাঘর থেকে। সেতো দেখেই চেঁচিয়ে উঠলো, ” হেব্বি লাগতাছে কিন্তু আফা। বিয়াতে কি সত্যিই যাইতাছেন?”

“চুপ কর তো এত চেঁচিয়ে কথা কেন বলিস শেলি?এতোটাও সাজিনি কিন্তু… ”

“এইটুকুনই ভাল্লাগতাছে মৈত্রী আপা। আপনের বেশি সাজ ভালা দেহায় না।” ফট করে মুখের ওপর কথাটা বলেই শেলির মনে হলো কাজটা ঠিক হয়নি। মৈত্রী আপা হয়ত ক-ষ্ট পেয়েছে তাই আঁড়চোখে তাকালো মৈত্রী আপার মুখের দিকে। না সেদিকে কোন চিহ্ন নেই রা-গ, দু-ঃখের। এএাই বড় কনফিউজড করে সবাইকে। মেয়েটার অভ্যন্তরীন অনুভূতির ছাপ কখনো তার চোখে মুখে পড়ে না৷ মৈত্রী চুপচাপ প্লেট টেনে টেবিলে থাকা দুটো পরোটা নিলো। নিঃশব্দে খাবার খেয়ে সে একটু জোরেই বলল, “আমি গেলাম সুমিকে মেহেদী দিয়ে দিতে। সেখান থেকে ভার্সিটিতে চলে যাব।”

কথাটা কার উদ্দেশ্যে বলা তা কেউ বুঝলো না৷ রোকসানার মনে হলো কথাটা হয়ত তাকে শুনানোর জন্যই জোরে বলল। জানিয়ে বের হলো এটাও ভালো।

“তুই এখন এই অবস্থায় যাবি মাছ আনতে?” ইরিন ছেলেকে প্রশ্ন করেই বাজারের ব্যাগটা তার হাতে দিল। আজও ইরশাদের বাবা মাছ কিনে বাড়ি আসতে পারছেন না৷ তাই ছেলেকে ফোন করে বললেন নিয়ে আসার জন্য কিন্তু ময়ূখ এখনো বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে ঘুমাচ্ছে। ইরশাদ ভাবলো মাছ নিয়ে বাড়ি ফিরে আবার তৈরি হয়ে লাইব্রেরির জন্য বের হতে হয়ত দেরি হয়ে যাবে। তাই একদম তৈরি হয়ে বের হচ্ছে তা দেখেই ইরিন তাকে না পাঠিয়ে ময়ূখকে পাঠাতে চাচ্ছিলো। ইরশাদ জাগাতে চাইলো না ভাইটাকে এজন্য নিজেই বের হলো। ব্যাগটাকে গুটিয়ে একদম ছোট করে পকেটে ঢুকিয়ে ঘরের বাইরে যেতেই দেখা হলো মৈত্রীর সাথে।

“হাই, কেমন আছো?”

“জ্বী! ভালো।”

হঠাৎ ইরশাদকে পাশে দেখে হ-ক-চকিয়ে গেছে মৈত্রী। নিজেকে অ,-প্রস্তুত সে কখনোই হতে দেয় না কারো সামনে কিন্তু ভেতরটা তো তেমন না। ভেতরে ভেতরে ঠিকই অ-প্রস্তুত হয়ে পড়ে, আ-তংকিত হয়, আনন্দে প্রফুল্লও হয় কিন্তু তার যে সেই প্রকাশ ক্ষমতা নেই এখন আর! ইরশাদের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়েও সে অপ্রস্তুত হয়ে গেছে। ইরশাদ তার লম্বা লম্বা পা ফেলে মৈত্রীর আগেই বাড়ির সীমানা পার করতেই মৈত্রীর মনে হলো ভদ্রতা দেখিয়ে তাকেও পাল্টা প্রশ্ন করা যেত, আপনি কেমন আছেন? কিন্তু না এতটুকু বিনয়ীও নয় সে। তারপরই মনে হয় ইরশাদ তাকে প্রশ্নটা করার সময় কি একবারও তাকায়নি? মনের ভেতর একটা খুঁতখুঁত রয়ে গেল ইরশাদ কি তাকে একদমই চোখে মেলে দেখেনা! মন থেকেই জবাব এলো, কেন দেখবে?

ফখরুল সাহেব আজ অফিসে যাওয়ার সময় বাজারে একবার মাছের আড়তে ঢু মেরেছিলেন। সেখানেই হলো অ-ঘ-টনটা। না চাইতেও চোখ আটকে গেল বড় মাপের একটা বোয়াল মাছে৷ এখন এটা যতক্ষণ না কিনবেন মনটা পড়ে থাকবে এখানেই। তাই মনকে খুশি করতে মাছটা কিনেই ফেললেন এবং আরও বড় এক ভু-ল করলেন সেটা না কা-টি-য়ে। তিনি ভাবলেন ছেলেরা এত বড় বোয়াল মাছ আগে কখনও দেখেনি৷ ইরশাদ এলেই তিনি মাছ হাতে দিতেই বড় বড় চোখে তাকালো বাবার দিকে। ফখরুল সাহেব ছেলের চোখ দেখে অর্থ পড়ে নিলেন, “এত বড় মাছ নিলে আম্মু মাছের আগে আমাকে আর তোমাকেই কে-টে ফেলবে আব্বু।”

তাই নিজেই এবার আমতা, আমতা করে বললেন, “দ্যাখ কত বড় আর টাটকা মাছটা। তুই আর ময়ূখ তো কখনো দেখিসনি এমন৷”

“তাই বলে না কে-টে নেব? আম্মু এটা তুলে ধরতে পারবে না কাটবে তো দূরর।”

“আরে নে না বাবা অত কথা বলিস না। তুই বাড়িতে রেখে চলে যাস নিজের কাজে তারপর তোর আম্মুই বুঝবে বাকিটা।”

ইরশাদও বাবার কথামতো বাড়ি গিয়ে মাছটা রেখেই চুপচাপ বেরিয়ে এলো। মনের মনে ভয় ঠিকই রইলো আজ আম্মু বাপ- ছেলেদের কি যে হাল করবে কে জানে! ইরশাদের ভয় সত্যি হলো। সে বাড়ি ফিরল দুপুর দুইটারও কিছুক্ষণ পর। এসেই সে উঠোনের এক পাশে ছোট্ট একটা জটলা দেখতে পেল। অবাক হয়ে সেদিকে পা বাড়াতেই তার চক্ষু ছানাবড়া। ময়ূখ বসে আছে ছোট পিঁড়িতে, তার সামনে রাখা মাংস কা-টা-র চা-পা-তি পাশেই বড় বোল, পানি মানে পুরো বিশাল আয়োজন নিয়ে বসেছে যেন মাছ নয় সে বড় কোন গরু জ-বা-ই করে বসেছে এখন মা-ংস কা-ট-তে। তার আশপাশে এখন ভীড় জমেছে শিপলু আর শেলির৷ আম্মু কোমরে হাত রেখে রা-গী চোখে তাকিয়ে তাকে ধ-মকে যাচ্ছে সমানে, ” ঠিক করে ধর, বড় কা-টাটা আগে কেটে নে।”

রোকসানা বেগম, শিপলুর মাও আছে তাদের পাশে। রোকসানাকে বলতে শোনা গেল, “আহা ভাবী ছেড়ে দেন ছেলেটাকে ফখরুল ভাই বোধহয় শখ করে পাঠিয়েছেন।”

“না ভাবী ওর শখ আজ আমি বের করে ছাড়ব। সাথে ছেলেদেরও। আরে এ্যাই তুই কখন এলি যা কাপড় পাল্টে আয় দুটো মিলে কা-ট-বি এটা আজ পারলে তোর বাপকেও নিয়ে আয়। কত্ত বড় ফাইজলামি করে এই বয়সে! মাছওয়ালারাই তো বললে কে-টে দিত তা না উনি ফোন করে বলে কিনা, ছেলে দুটোকে দেখানোর জন্য কিনেছে।”

ইরিন থামছেনই না। ইরশাদের বোঝা হয়ে গেল আজ মাছের একটা রফাদফা না করে আম্মু থামবে না। সে দ্রুত ঘরে গিয়ে শার্ট বদলে টি শার্ট গায়ে দিয়ে লুঙ্গি পরে বেরিয়ে এলো ঘর থেকে। তাকে দেখতেই ময়ূখের মুখ এবার উজ্জ্বল হয়ে গেছে। ভাই এসেছে মানে তার আর চি-ন্তা-র কিছু নেই। সত্যিই ইরশাদ এসে চা-পা-তি নিয়ে ময়ূখকে বলল সরে যেতে। সকলের মাঝে দাঁড়িয়ে শেলি বিড়বিড় করলো, “আল্লাহগো কেরাশে আবার লুঙ্গি পিন্দাই আইয়া পড়ছে হের কি এট্টু শরম করে না!”

অরুণিমা শুনলো শেলির বিড়বিড় সে ধ-ম-কে বলল চুপ কর তো! শেলি চুপ করলো কিন্তু থেমে থাকলো না। সে দৌড়ে দোতলায় গিয়ে মৈত্রীকে ডাকতে লাগলো।
“আপা গো জলদি সোফার ঘরের জানালায় খাঁড়ান মজার জিনিস দেখতে।”

মৈত্রী সবেই গোসল সেরে এক হাতে চুল মুছতে মুছতে অন্য হাতে মোবাইল স্ক্রল করছিলো৷ শেলির হড়বড়িয়ে ডাক শুনে বসার ঘরে ঢুকতেই দেখলো মেয়েটা জানালায় কিছু দেখছে। কৌতূহল নিয়ে সেও তাকাতেই চোখ দুটো ছোট ছোট হলো। এক হাতে চাপা-তি অন্য হাতটা মাছের মাথায় ধরা। ভীষণ মনযোগে একটা একটা করে কো-প লাগাচ্ছে মাছটা ধরে। আনমনেই সে হাতে থাকা ফোনটার ক্যামেরা অন করে ফুল জুম করে ভিডিও করলো দৃশ্যটা। শেলি তো একবার মৈত্রীর দিকে তাকিয়ে বলেই ফেলল, “মৈত্রী আপা দেখেন কি সুন্দর দৃশ্য দেখেন না।”

“তুই-ই দ্যাখ।”

ইরশাদ সুন্দর করে মাছটা কে-টে ধুয়ে একদম রান্নার উপযোগী করে তবেই ছাড়লো। আর ময়ূখ ফোন করলো ফখরুল সাহেবকে। তিনি ফোন ধরতেই ময়ূখের প্রথম বাক্য ছিল, ” আজ বাড়ি আসো তুমি আম্মার সাথে আমিও তোমার খবর করব বলে রাখলাম।”

ফখরুল সাহেব তো বুঝে গেলেন আজ শ-নি আছে কপালে। মা ছেলেরা যে তাকে দেখে নেবে এক হাত ময়ূখের ফোন করাটাই তার প্রমাণ। ভদ্রলোক এবার শ-ঙ্কি-ত স্বরে বললেন, এত রে-গে কেন আছিস বলো তো। বাবা তো তোদের কথা ভেবেই অত বড় মাছ পাঠালাম।”

“আমরা বলেছি অত বড় মাছ এমন আস্ত রেখেই পাঠিয়ে দিতে!”

আর কিছু বলে লাভ নেই। ছেলের কথাও ঠিক এমনিতেই তো ইরিনের কোমরের হাড় ক্ষ-য় সে ওভাবে বসে বেশিক্ষণ কিছু করতেই পারে না।

রাতের খাবারে আজ ফখরুল সাহেব ভীষণ চুপচাপ। অন্যান্য সময় খাবার টেবিলে সবচেয়ে বেশি কথা বলে ফখরুল সাহেব আর ময়ূখ। আজ এ দুজনই বেশ চুপ কারণ একটু আগেই ইরিন চিৎ-কার চেঁ-চামেচি করেছে সেই সাথে বলেছে এক সপ্তাহ সকালের নাশতায় রুটি, পরোটা হবে না শুধু ভাত আর আলুর ভর্তা খেতে হবে। তাই মনের দুঃখে বাবা চুপচাপ খাচ্ছে কিন্তু ময়ূখ চুপ একটু আগেই মেহের বলেছে ছোট চাচা আর নোরা দেশে আসবে। নোরা দেশে আসা মানে তাকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও কত জায়গায় যে ঘুরতে যেতে হবে ঠিক নেই। ইরশাদ বরাবরই চুপচাপ খেতে পছন্দ করে সে নিজের মত খাচ্ছে এদিকে হাতও কে-টে গেছে অনেক জায়গায় সেটার জ্বলাও উপেক্ষা করছে জো-র করে। খাওয়া পর্ব চুকে যেতেই ইরশাদ চশমাটা চোখে এঁটে ল্যাপটপ নিয়ে বসেছিল৷ ছোট মামার মেয়ে নোরা অনলাইন দেখতেই নক দিলো,

“হাই শাদ ব্রো।”

“হাই নোরা।”

“আর ইউ ফ্রী ফর ফিউ মিনিটস, আই ওয়ান্ট টু টেল ইউ সামথিং সিক্রেট।”

“আ’ম ফ্রী নোরা।”

“ওকে দ্যান…”

নোরা কথা কমপ্লিট না করেই কল দিলো ইরশাদকে। নোরা বলেছে সিক্রেট কথা ইরশাদের মনে হলো ঘরে কথা বলাটা তবে সেফ নয়। সে আম্মুকে বলে ছাদের জন্য বেরিয়ে গেল। ফোন কানে ধরতেই ওপাশ থেকে নোরা বলে উঠল তার বাবা আর মা ডি-ভো-র্স নিয়েছে। ইরশাদ কথাটা শুনে ভাবল, অনেক বিলম্ব করে নিয়েছে। তাদের তো আরও বছর তেইশ আগেই নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নোরার সামনে সেসব কথা শুনল না৷ ময়ূখের মুখে শুনেছে নোরা দেশে আসবে সাথে মামাও। কিন্তু এখন বুঝলো হুট করে দেশে আসার পেছনের কারণ তবে এটা। কানাডিয়ান মায়ের রঙটা ছাড়া আর কিছুই পায়নি নোরা তার চেহারায় আর অনুভূতিতে। নোরা দেখতে হুবহু মেহেরের মতই মানে তার বাবা চাচার সাদৃশ্য। অনুভূতি আর আচার আচরণে তো সম্পূর্ণ ফুপুর পেয়েছে। ইরিনও এ নিয়ে খুব গর্ব করে তার ভাতিজীরা তার মত হয়েছে। ইরশাদ অনেকটা সময় নিয়ে নোরার সাথে কথা বলল ছাঁদে দাঁড়িয়ে। কথা শেষে নিচে নামার জন্য সিঁড়ির দিকে এগোতেই দেখা গেল মৈত্রী উঠে আসছে ছাঁদে।

“কেমন আছেন?”

ছাঁদে ভাঙাচোরা একটা চিলেকোঠার কামরা। তার দরজার সামনেই অল্প আলোর হলদে বাতিটা জ্বলে আছে। ইরশাদ সে আলোয় দেখলো মৈত্রীকে। মেয়েটার চোখে মুখে আন্তরিকতা প্রকাশ পাচ্ছে না প্রশ্নটার সাথে। তবে কি আজ ফরমালি দেখাতেই প্রশ্ন করলো? কারণ, ইরশাদ তো সবসময় দেখলেই জানতে চায় সে কেমন আছে? ইরশাদ জানতে চায় আন্তরিকতার সাথে, একই বাড়ির সদস্য বলে, একে অপরের পরিচিত বলে। তার সেই প্রশ্নে কোন লৌকিকতা, আনুষ্ঠানিকতা থাকে না৷ তবে সে মৈত্রীর লৌকিকতাকেও সম্মান করে জবাব দিলো, “ভালো আছি, তুমি কেমন আছো?”

“ভালো।”

“এত রাতে ছাঁদে! বাতাসে প্রচণ্ড শীতল ভাব ঠান্ডার সমস্যায় ভুগতে পারো।” স-ত-র্ক বাক্যটা বলেই ইরশাদের মনে হলো এই মেয়েটাকে কথাটা বলা উচিত হয়নি। তাকে অবাক করে দিয়ে মৈত্রী কথার জবাব দিলো, ” জ্বী, আজ শীত বেশি পড়েছে বলেই বের হয়েছি। ঘরে থাকতে ভালো লাগছিলো না একদম।”

“ওহ!” ইরশাদ আর কি বলবে বুঝতে পারছিলে না। মৈত্রী সহজ করে দিলো কথার পর্বটা। সেই আবার বলল, “আপনি কি নিচে চলে যাচ্ছেন?”

“কথা বলতে এসেছিলাম ফোনে একটু।”

“কথা শেষ?”

“হু”

“নিচে চলে যাচ্ছিলেন বোধহয়! ”

“হ্যাঁ একা ছাঁদে বসে কি করতাম? তাই!…”

“একটু কি বসবেন?”

ঠিক মুখোমুখি দাঁড়ানো নয় তারা তবুও দুজনের মুখটা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে তারা আবছা আলোয়। কুয়াশা এসে ধোঁ-য়ার মত চিলেকোঠার বাতিটাকে ঘিরে ধরেছে। সেই ঘের ছাড়িয়ে আলোটা স্পষ্ট হয়ে পড়ছে না তবুও দুজনের চোখ স্পষ্ট দেখছে। একজন চশমার আড়ালো তো অন্যজন খোলা চোখে। একজন হৃৎপিণ্ড কাঁ-পা-নো অনুভূতির সাথে অন্যজন কৌতূহলী মন নিয়ে। ইরশাদ কৌতূহলী হয়েই তাকায় মৈত্রীর দিকে। এ বাড়িতে আসার পর কে-টে গেল আজ কত গুলো মাস। বছর হতে বাকি নেই বেশি অথচ এই মেয়েটাকে সে কখনো দু ঠোঁট ছড়িয়ে হাসতে দেখেনি, নাকের পাটা ফুলিয়ে কখনো রে-গে যেতে দেখেনি এমনকি মেয়েটা কথা বলার সময় যে কথাই বলুক তাতে এক্সপ্রেশনের ছিটেফোঁটাও উপস্থিত থাকে না৷ মৈত্রী এই যে মাত্রই বলল তাকে বসার কথা তাতেও বোঝা গেল না মেয়েটা কি তাকে আদেশ করল, অনুরোধ করলো নাকি আবদার! তবে মন বলল একটু না হয় বসাই যাক!

ইরশাদ চারপাশে নজর বুলিয়ে ছাঁদের ফুলগাছ গুলোর দিকে তাকালো। এটা বাড়ির পেছন দিকে হওয়ায় রেলিং ঘেঁষে দাঁড়ালেও নিচ থেকে কারো দেখার সম্ভাবনা নেই। এ পাশে বাড়ির পরে মৈত্রীদেরই লেবু বাগান সাথে ঝোপঝাড়। ইরশাদ রেলিংয়ের গায়ে হেলে দাঁড়িয়ে বলল, এখানে তো বসার জায়গা নেই তাই দাঁড়ালাম। মৈত্রী কথাটা শুনে নিজেও একটু এগিয়ে গেল ইরশাদ যেদিকটায় দাঁড়িয়ে আছে। হাতের ফোনটার বারবার ফ্ল্যাশ অন অফ করতে থাকলো আর মনে মনে নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে চেষ্টা করল। নিজেই দাঁড়াতে বলে এখন বলার মত কিছু না পেয়ে অ-স্থির হয়ে উঠলো মৈত্রী। ইরশাদ নিজেই কি মনে করে কথা বলতে শুরু করল।

” কোন ক্লাসে যেন পড়ো? ইন্টারে!”

“অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ।”

ইরশাদের মনে পড়লো এমন করে বলল, “আচ্ছা তুমি যে এত চুপচাপ থাকো এর পেছনে কি কোন কারণ আছে?”

ইরশাদের প্রশ্নটা ভালো লাগেনি মৈত্রীর। এমনিতেই তো বুকের ধু-কপুকা-নি লুকিয়ে রেখে সে কথা বলছে তার সাথে! কত যে ছ-টফটা-নি, কত উথাল-পাথাল ঢেউ হা-ম-লা চালিয়ে যায় অন্তর গহীনে সে খবর তো কেউ জানে না৷

চলবে

( সারপ্রাইজটা এ পর্বে লেখা সম্ভব হলো না৷ ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন সকলে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here