#কি_ছিলে_আমার
-রূবাইবা মেহউইশ
পর্ব-২৮
মেহের মাত্রই স্কুলে যাওয়ার জন্য বের হয়েছিলো। সদর দরজা পেরিয়ে গাড়ির সামনে যেতেই তার চোখে পড়লো গেইট দিয়ে ঢুকছে গাঢ় সবুজ আর কালোর মিশেলে সেলোয়ার-কামিজ পরা এক মেয়ে। মেয়েটিকে চিনতে তার একদমই সময় লাগেনি৷ মেয়েটি মৈত্রী আর সে ঘুম থেকে উঠেই জরিনার সোর্স থেকে জানতে পেরেছে কাল রাতে ইরশাদ মৈত্রী রওনা দিয়েছে এ বাড়ির উদ্দেশ্যে। মিনিট গড়াতেই গেইটের ভেতর প্রবেশ করলো ইরশাদ পাশেই গেইটের দারোয়ান তার হাতে ব্যাগ। মেহেরের চোখ সব ছেড়ে থেমে রইলো ইরশাদের গলায় ঝুলানো শাল আর মৈত্রীর গায়ের জ্যাকেটে।দু জনের প্রেম যেন সামান্য জ্যাকেট পাল্টাপাল্টিতেই তার চোখে স্পষ্ট হয়ে ধরা দিলো। তারা যখন দু তিন পা এগিয়ে এলো মেহের সরে পড়লো জায়গাটা থেকে বাগানের দিকটায়। তারা ভেতরে যেতেই মেহের গাড়িতে গিয়ে বসলো। মনে মনে বলতে লাগলো, বাড়ি ফেরা না হোক আমার।
ময়ূখ কাল রাতে নিজের ঘরেই থেকেছে আর নোরা ছিলো মেহেরের পাশের ঘরটিতে। এত সকালে দুজনেরই ঘরের দরজা বন্ধ হয়তো গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তারা। আবরার সাহেব একা একা নাশতা করছিলেন আর জরিনাকে ডেকে বলছিলেন, “নোরাকে ডেকে বলো ময়ূখের ঘরে শিফট হতে৷ দ্রুত ঘর গোছায় ইরশাদ, বউমা যে কোন সময় পৌঁছে যাবে।”
আবরার খন্দকার এর কথা শেষ হওয়ার বোধহয় সেকেন্ড পার হলো তারই মাঝে দরজায় এসে দাঁড়ালো ইরশাদ। ভাগ্নে আর নতুন বউয়ের উপস্থিতি দেখেই আবরার আনন্দিত হলেন। বাড়িতে কত যে অ-ঘ-ট-ন ঘরটছে তার মাঝে নতুন বউয়ের আগমন এইটুকুই আনন্দের। মামা শ্বশুর হিসেবে প্রথমেই মৈত্রীকে সালামী দিলেন। চোখের ইশারায় জরিনাকে পাঠালেন নোরাকে জাগাতে। দূরের জার্নি করে এসে নিশ্চয়ই রেস্ট দরকার তাদের! জরিনা কথামত কাজ করলো। নোরা উঠে বাথরুমে ঢুকতেই জরিনা বেড কভার বদলে ঘরটা ঝাড়ু দিলো৷ দ্রুত হাতে ড্রেসিংটেবিল আর বারান্দাটাও সাফসুতরা করে বেরিয়ে এলো। নোরা ততক্ষণে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে গেছে ঘর থেকে৷ ইরশাদ মৈত্রীর সাথে খানিকটা আলাপ করে নাশতা সারলো। মৈত্রীকে নিয়ে যাওয়া হলো মামী শ্বাশুড়ির ঘরে৷ মেহেরের মা খুব একটা সুস্থ স্বা-ভা-বিক না হলেও কিছুটা হাঁটাচলা, কথা বলা সবই পারেন৷ তাই মৈত্রীর সাথে খানিক সময় কথাবার্তা বলে তাকে রেস্ট করতে পাঠানো হলো৷ ইরশাদ আগেই রুমে ঢুকে ঘুমিয়ে পড়েছিলো মৈত্রীও এবার ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করলো। ইরশাদের পাশে বসে থেকে ভাবছিলো ঘুমাবে কিনা এমনিতেও রাতভর সে ঘুমিয়েই কা-টি-য়ে-ছে। ইরশাদ বাসে বসে যখন বলল, “শীত লাগছে খুব একটু জড়িয়ে ধরবে?”
লজ্জায় মুখ তুলতে পারছিলো না সে৷ তা দেখে ইরশাদ নিজেই মৈত্রীর শালের ভেতর নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছিল। দু জনের দেহের উষ্ণতা আরাম দিচ্ছিলো মৈত্রীকে খুব৷ কখন যে চোখ বুঁজেছে মনে নেই তার ভোরে ঘুম ভাঙতে দেখেছিল সে লেপ্টে আছে ইরশাদের বুকের ওপর। তখনও লজ্জায় র-ক্তি-ম হয়ে উঠেছিল তার গাল। কিন্তু এখন ঘুমন্ত ইরশাদকে দেখে লজ্জা সরে অন্য এক অনুভূতি জেগে উঠলো সেই সাথে তীব্র এক বাসনা। কম্বলে গা ঢাকা ইরশাদের কম্বলের নিচে নিজেও ঢুকে গেল। সতর্কতার সাথে একটা হাত তার বুকের ওপর দিয়ে জড়িয়ে ধরার চেষ্টায় বাড়িয়ে দিচ্ছিলো মৈত্রী। কে জানতো ঘুমন্ত মানুষটা একটুতেই সজাগ হয়ে যাবে! মৈত্রীর সতর্ক হাতকে শ-ক্ত করে ধরেই উল্টো বিছানায় চেপে ধরলো। কম্বলখানা এবার মাথাসহ ঢেকে মৈত্রীর অধরে নিজ ওষ্ঠের ছাপ ফেলল। প্রথম ওষ্ঠচুম্বন বড় ক-ঠি-ন আর শ্বাসরুদ্ধকর হলো মৈত্রীর জন্য । লজ্জায় সে চোখ খুলতেও ভুলে গেল সেসময়। ইরশাদের খুব হাসি পেল তার নব্য বিবাহিত বধূটির এই আ-র-ক্তি-ম অপ্রস্তুত অবস্থা দেখে। একের পর এক ওষ্ঠ ছোঁয়া সে চালিয়ে গেল অনেকটা সময় থেমে থেমে। মৈত্রীর তখন আচমকা ঝড়ের কচি ডালের নুয়ে পড়ার মতই অবস্থা। পুরুষের দৈহিক স্পর্শও সুন্দর হয় তাতে যদি লালসার ছোঁয়া না থাকে। ইরশাদের স্পর্শে মৈত্রী প্রেম -ভালোবাসা না পেলেও তাতে স্ত্রীর প্রতি সম্মানের ছোঁয়া টের পায়। তার মন বলে এই মানুষ অল্প সময়েই তাকে অগাধ ভালোবাসায় ডুবিয়ে দেবে। মন আরও অনেক কিছু বলে যা সবসময় সত্যি হয় না কিন্তু মৈত্রী এ কথা সত্যি হোক দোয়া করে মনে মনে। ইরশাদ তাকে খুব খুব খুব ভালোবাসবে একদিন।
সন্ধ্যের দিকে মুখোমুখি হলো দু ভাই। বাড়ির ছাঁদে মুখ ভার করে বসেছিলো নোরা। সকালে ইরশাদদের জন্য ঘর খালি করে দিয়ে সে মেহেরের ঘরে ঢুকেছিল আবারও ঘুমানোর জন্য কিন্তু তা বেশি সময় স্থায়ী হতে পারেনি। মেহের দু ঘন্টার মাঝেই বাড়ি ফিরে এলো ক্লাস না করে। নিজের ঘরে নোরাকে দেখে বি-ক্ষি-প্ত মেজাজটা আরও চ-টে গেল যেন। নোরাকে সে বোন হিসেবে কখনোই অপছন্দ করতো না কিন্তু ভাবী হিসেবে গ্রহণ করতে পারেনি কিছুতেই৷ তারওপর ইরশাদের সাথে মৈত্রীকে দেখে যে প্রতিক্রিয়া সে লুকিয়ে রাখছিল তাই যেন ভ-স্ম করলো নোরাকে। চেঁচামেচি করে ডেকে তুলে ঘর থেকে বের করে দিলো তাকে। নোরা হতবা-ক তার আকস্মিক আচরণে সেই থেকে ছাঁদে বসেছিল সে বাকিটা দিন। ময়ূখ ঘুম থেকে উঠে খোঁজ করেছিল কিন্তু কেউ বলতে পারেনি নোরা কোথায়। ফোনে ট্রাই করতেই বুঝতে পারলো ফোন ইরশাদ যে ঘরে আছে সেখানে। অনুমান করে নিলো ছাঁদে আছে নোরা। ময়ূখ গিয়ে ডাকার পরও সে আসেনি তখন মৈত্রী বলল, “আমি ডেকে আনি?”
মৈত্রী আর ময়ূখ দুজনেই গেল। ইরশাদ একটু বেরিয়েছিল বলে দেখা হয়নি তখনো ময়ূখের সাথে। বাড়ি ফিরে জরিনার কাছে জানতে পারলো মৈত্রী ছাঁদে। ইরশাদও গেল সেখানে আর তখনই দু ভাই দেখলো একে অপরকে। ময়ূখ ভাইকে দেখতেই মাথা নিচু করতেই ইরশাদ এসে আচমকা থা-প্প-ড় বসালো ময়ূখের গালে। নোরা-মৈত্রী দুজনেই প্রথম থা-প্প-ড় দেখে হা হয়ে গেল পরক্ষণেই ইরশাদ যখন ঘু-ষি মে-রে বসলো চোয়াল বরাবর তখন সকলের হতভম্ব ভাবটা আর রইলো না৷ ইরশাদ দ্বিতীয়বার ঘু-ষি মা-রতে হাত উঠাতেই মৈত্রী চেপে ধরলো হাতটা।নোরাও এসে দাঁড়ালো সামনে অথচ ময়ূখ নির্বিকার। তার চোখ জলে টলমল অথচ দৃষ্টি তুলে দেখছে না সে।
“থামুন আপনি এভাবে মা-রছেন কেন ময়ূখ ভাইকে?”
মৈত্রীই মুখ খুলল প্রথমে। ইরশাদ সেদিকে পাত্তা না দিয়ে নোরাকে সরিয়ে ময়ূখের পরনের শার্ট চেপে ধরলো।
“খুব বড় হয়ে গেছিস? আম্মুর কথা, আব্বুর কথাও ভাবার নেই নিজের মনমতো কাজ করলেই হলো! বিয়ে করার শখ জেগেছে বলতে পারিসনি আমাকে আমি নিজে তোর বিয়ে দিতাম। আম্মুকে কেন বলিসনি , তোর সমস্যা কোথায় আগে সেটা বল। তুই পালিয়ে বেড়াচ্ছিস কেন বল” চেঁচিয়ে কথাগুলো বলেই আরও একটা ঘু-ষি মেরে দিলো ইরশাদ। তার চোখ মুখ শক্ত হয়ে আছে। নোরা, মৈত্রী দুজনেই টানাটানি করে দু ভাইকে দু দিকে সরালো।
“প্লিজ থামুন ইরশাদ ছোট বাচ্চা নাকি এভাবে মা-রছেন কেন?”
মৈত্রী ইরশাদকে বলছিলো নোরাও পাশ থেকে বলল, “কাম ডাউন ব্রো, ইফ ইউ ডু লাইক দিস দ্যান
ইউ উইল গেট হার্ট বোথ অফ ইউ”
অপরাধীর মত মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে ময়ূখ। ঠোঁটের কোণ ঘেঁষে লেগে আছে র-ক্ত-বিন্দু। তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে নোরা। ইরশাদ শুধু ময়ূখকে মা-রে-নি নোরাকেও কথা শুনিয়েছে কিছু। কিন্তু এই মুহুর্তে ইরশাদের মাথা প্রচণ্ড গরম হয়ে আছে বুঝতে পেরে মৈত্রীও নীরব। তার এখনও অবাক লাগছে ইরশাদের তখনকার আচরণ। এত শান্ত স্বভাবের লোকটা অত রে-গে গেল কেমন করে! তিনি কাউকে আ-ঘা-ত করতে পারে এ যেন অবিশ্বাস মৈত্রীর কাছে। ছাঁদ থেকে নামার আগেই ইরশাদ ঘোষণা দেওয়ার মত করে বলল, “নিচে গিয়ে তৈরি হয়ে নাও নোরা আর ওকেও বলো তৈরি হতে আমরা রাতেই রওনা দেব। ও আর ক’টা দিন দূরে থাকলে আম্মু এবার বিছানাবাসী হয়ে যাবে।”
রাতের খাবার খেতে বসে ইরশাদ তার মামাকে জানালো রাতেই তারা রাজশাহী ফিরে যাবে। মন মানসিকতা খুব একটা ভালো না থাকায় তিনি খুব একটা আপত্তি করলেন না তবুও যতটুকু না বললেই নয় তাই বললেন, “মেয়েটাকে নিয়ে এভাবে জার্নি করে এসে আজই ফিরে যাবে এ কেমন কথা? অসু-স্থ হয়ে পড়লে?”
মামার কথা শুনে ইরশাদেরও মনে হলো রেস্ট নেওয়া উচিত কিন্তু তার ঢাকায় আসার উদ্দেশ্যই ময়ূখকে যত শিগ্রই সম্ভব বাড়ি নিয়ে যাওয়া। সে তো জানে ময়ূখের জন্য তার মায়ের ঠিক কতখানি পোড়ে! ময়ূখের এই হঠাৎ বিয়ের পেছনে অন্য কোন কারণ অবশ্যই আছে যা তার আম্মু আন্দাজ করেই এমন ভে-ঙে পড়েছেন। শুধুমাত্র না জানিয়ে বিয়ে করাটা এই অসুস্থতার কারণ নয়৷ সে জানে তার আম্মু কতোটা আধুনিকা তিনি ছেলেদের পছন্দে বিয়ে করলে কখনোই দ্বিমত করবেন না। যেমনটা তার বেলায় করেনি তেমনটা ময়ূখের বেলায়ও করতেন না কিন্তু ময়ূখ কি লুকিয়ে রাখছে!
আজ আর বাসে ফেরার সুযোগ হলো না ইরশাদদের। আবরার খন্দকার ভাগ্নে ডেকে বললেন, তোমাদের নিয়ে ভাবার প্রয়োজন বোধ করছি না কিন্তু বউমার প্রতি স্নেহ থেকে বলছি বাড়ির গাড়ি করে যাও। তোমার মামীর গাড়ি তো বড় সেটাতে যাও ড্রাইভারকে কল দিয়েছি আমি। রাতে যেখানে সেখানে ব্রেক নিও না দেশের পরিস্থিতি ভালো নয়।”
ভরাট, গম্ভীর কণ্ঠে কথাগুলো বললেও মনে মনে চিন্তিত আবরার খন্দকার তা প্রকাশ করলেন না। রাত দশটার পরই সবাই প্রস্তুত হয়ে গাড়িতে বসলো৷ নোরা আর ময়ূখ পাশাপাশি বসেছে। তাদের পেছনে বসেছে ইরশাদ মৈত্রী। ময়ূখ ড্রাইভারকে গাড়ি স্টার্ট দিতে বলে নোরার দিকে তাকালো। বিয়ের প্রায় চল্লিশ ঘন্টা পেরিয়ে গেছে অথচ দুজনে কোন কথা হয়নি আন্তরিকতার কিংবা সম্পর্কের দায়বদ্ধতার। দু জন কাজী অফিসে বিয়ে করে বাড়ি ফেরার পর থেকেই যে যার মত ছিল৷ ছাঁদে যখন ইরশাদের সাথে কথা হলো তখনও তাদের পারষ্পরিক কোন বাক্যলাপ হয়নি৷ এই প্রথম ময়ূখ কথা বলল, ” তুমি ঠিক আছো?”
“হুম ”
“কিছু লাগলে বোলো মানে পথে..”
“বলবো”
“ওটা হাতে কেন পরে নাও রাত বাড়তেই বাতাস, ঠান্ডা বেশি লাগবে।”
“এখন স্বাভাবিক লাগছে পরে নেবো। তুমি জ্যাকেট নাওনি কেন?”
নোরা প্রশ্ন করলো ময়ূখকে। সত্যিই ময়ূখ গরম কোন কাপড় গায়ে দেয়নি৷ শুধুই গায়ে একটা সি গ্রীণ রঙের শার্ট গায়ে। পেছন থেকে ইরশাদও শুনলো সে কথা। সেও জিজ্ঞেস করলো তার জ্যাকেট কোথায়? ময়ূখ বললো ব্যাগে আছে। ব্যাগ একদম পেছনে ইরশাদদের দিকে৷ ইরশাদ নিজের গায়ের জ্যাকেট খুলে সামনে দিয়ে দিলো ময়ূখকে।
“ভাই লাগবে না আমার শীত লাগছে না। তুমি ব্যাগটা দিয়ে দাও আমি নিয়ে নেব।”
” বা গাল ফোলেনি তোর তাই না! এরপর সেটাও ফুলবে আর একটা কথা বাড়ালে।” ধ-ম-কির ওপর ময়ূখকে সে জ্যাকেট ধরিয়ে দিলো। মৈত্রী তাড়া দিলো ইরশাদকে পেছন থেকে ময়ূখের জ্যাকেট পরতে।
“এক চাদরে হবে না আমাদের?” ফিসফিস করে বলল ইরশাদ। মৈত্রী বুঝলো মানুষটা মজা করার জন্য মুখিয়ে আছে৷ সে ধীরস্বরে জবাব দিলো, “আজ শীত প্রচণ্ড”
“আচ্ছা! কিন্তু আমি শুনেছি বউ পাশে থাকলে আর শীত লাগে না।”
“ভুল শুনেছেন।”
“ওহহহ! আফসোস করার মত করে বলল ইরশাদ তারপরই মনে পড়লো, ” ওহ স্যরি তোমাকে তো জিজ্ঞেসও করলাম না। এভাবে এসেই আবার ফিরে যাচ্ছি তোমার কি খুব বেশি খারাপ লাগছে? একটু ভালো জিরিয়ে নেওয়ার সুযোগও দিলাম না।”
গাড়ির বাতি নেভানো কিন্তু পথের অন্যান্য গাড়ির এক চিলতে যে আলো ছিটকে এসে পড়ছে তাতে মৈত্রী দেখছে ইরশাদকে৷ প্রথম দেখা শীতল দুটো বিড়াল চোখ, গম্ভীর চোয়ালের মানুষটা এত নরম স্বরে কথা বলে কি করে! এত যত্নশীল একটা পুরুষ কি করে হতে পারে! সবসময়ই নিজেকে দূর্ভাগা ভাবা মৈত্রীর হঠাৎই মনে হলো তার মত সৌভাগ্য নিয়ে এ জগত সংসারে আর কেউ আসেনি৷ এই মানুষটার এত আদর-যত্ন তাকে মাত্র ক’দিনেই তৃপ্ততার স্বাদ দিচ্ছে। এই তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতেই তাকে প্রতি মুহূর্তে রবের শুকরিয়া আদায় করতে বাধ্য করবে, করছেও। ইরশাদ নিজের প্রশ্নের জবাব না পেয়ে মৈত্রীকে আবারও প্রশ্ন করেছে৷ মৈত্রী মুচকি হেঁসে জানালো একটুও খা-রা-প লাগছে না এই জার্নি বরং উপভোগ করছে। ভোরের দিকে তারা যখন পৌঁছে গেল বাড়ির সামনে তখন নোরা, মৈত্রী দু জনেই ঘুমিয়ে ছিল ইরশাদ, ময়ূখের কাঁধে। ভোরের কুয়াশামাখা আবছা আলোয় দৃশ্যটা ইরশাদই খেয়াল করেছে পেছন থেকে। সে মৈত্রীকে আলতো ভাবে গালে হাত রেখে ডেকে তুলল। মৈত্রী জেগে কাঁধ থেকে মাথা তুলতেই যাচ্ছিলো তখন ইরশাদ বলে উঠলো, “দু জন মিলে ভালোই তো রাত কাটালে আমাদের দু ভাইকে বালিশ বানিয়ে।”
মৈত্রী হা হয়ে গেল এ কথা শুনে। এই লোকটা এত কথা জানে! তার দেখা ইরশাদ তো কথাই বলতো না সবসময়। গাড়ি থেকে ময়ূখ নোরা নেমে যেতেই মৈত্রী তার স্বভাবসুলভ নিস্তেজ কণ্ঠে বলল, “ছোট ভাই আর তার বউয়ের ঘুমের দিকে তাকানো উচিত নয়।”
“আমি তো গাড়ির সামনের যাত্রীদের দেখেছি। বাই দ্য ওয়ে, তোমার মুখে আমার নামটা কিন্তু দারুণ লাগে।”
“জ্বী!”
চলবে
(