কিডন্যাপার (শেষ পর্ব)
#S_A_Priya
শেষ পর্যন্ত ব্যাটাকে থানায় যেতে হলো।টাকার জোর বড় জোর।এই হয়তো চলে আসবে।অঝথা টেনশান করার কোনো মানে হয় না।আর আমি তো এটাই চেয়েছিলাম, যে লোকটার মান সম্মান ধূলোয় মিশিয়ে দেই।তাহলে টেনশান করার কারণ?জানিনা।
এনিওয়ে,অপেক্ষা করতে করতে ২৪ ঘন্টা পার করেছি।লোকটার খোঁজ খবর নেই।টেনশান দ্বিগুণ বেড়েছে।স্যারকে কল দিবো?না থাক।স্যার নিজেও খোঁজ নেয়ার প্রয়োজন মনে করলেন না।কেটে পরলেন নাতো?মাথা কাজ করছে না।ভাবতে ভাবতে পুলিশ অফিসারকে কল করে বসলাম।ওপাশ থেকে হ্যালো বলতেই বললাম,
_নীলা চৌধুরী।
_’হ্যাঁ মি.আরহান চৌধুরী দোষ স্বীকার না করায় আমরা উনাকে রিমান্ডে পাঠাবো।
মনে হলো মাথায় বাজ ভেঙে পড়েছে।ইতস্তত ভাবে বললাম,
_’রিমান্ডে পাঠাবেন মানে?
_’হ্যাঁ সাহেব নিজ থেকে রিমান্ডে যেতে প্রস্তুত।
_’জ্বি আমি আসছি।এই পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।
দেরী না করে ড্রাইভার আঙ্কেল কে নিয়ে “আহসান মঞ্জিল” থেকে সোজা নিজ বাড়িতে পৌঁছালাম।দারোয়ান আঙ্কেল তাড়াহুড়ো করার রিজন জানতে চাইলে পরে বলবো বলে চালিয়ে দিয়েছি।তড়িগড়ি করে পঞ্চাশ হাজার টাকার চেক নিয়ে থানায় পৌঁছালাম।কেস তুলে নিলাম।লোকটাকে দেখে ভেতরটা কেঁপে উঠলো।নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে।
এনিওয়ে,থানা থেকে বেরিয়ে সোজা লোকটার কারে চড়ে বসলাম।লোকটা ও পেছন পেছন আসলো।কারে বসতে বসতে স্মিত হেসে বলল,
_হোয়াট হ্যাড ইউ থট?
অ্যান্সার না দিয়ে লোকটার দিকে তাকিয়ে রইলাম।কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না।ব্যাটা আবারো বলল,
_আই নো,ইউ লাভ মি।যার প্রোভ আজকে দিলেন।ইট অ্যাডমিটস অফ নো ডাউট।
।
আই থট দ্যাট,লোকটার উপর থেকে রিভেঞ্জ নিবো। বাট এটা কি হলো?রিভেঞ্জ আমি নিতে পারতাম।নেই নি। তারমানে কি দাড়ায়?আমি লোকটাকে,,,,,,?
“ইম্পসিবল”আর যাই হোক কিডন্যাপারকে ভালোবাসা যায় না।আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল।নন অফ ইয়োর লিটল গেইমস।ডিভোর্স আমার চাই চাই।
।
সেদিনের পর থেকে নিজ বাড়ি অর্থাৎ “চৌধুরী নিবাস”এ চলে আসি।ব্যাটা আটকায় নি।মেমি মেয়েটা সেদিন বাঁধা দিতো। ঘুমিয়ে ছিল।এককথায় ওর কাছ থেকে পালিয়ে এসেছি।আর মি.আরহান চৌধুরী নিজেই ড্রাইভ করে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছিল।ব্যাটা সিসি ক্যামেরা ফিট করেছিল।নিয়ে যেতে বললাম। ভাগ্যিস বেডরুমে ফিট করে নি।নাহলে ব্যাটার মাথা ফাটিয়ে দিতাম।বাড়িতে সিসি ক্যামেরা ফিট করা কিভাবে জানি? ব্যাটা জানতে চাইলে সাদিক স্যারের কথা বলে দেই।বলে দেই বলতে,ন্যাগেটিভ কিছু বলিনি।
এনিওয়ে,”আহসান মঞ্জিল” থেকে চলে আসার পর মিস করা কাকে বলে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি।৬ মাস পেরিয়ে আজ পনেরো দিন।বারান্দায় রকিং চেয়ারে বসে কফি খাচ্ছিলাম।হঠাৎ গাড়ির আওয়াজ শুনে ভেতরটা কেঁপে উঠলো। কে হতে পারে?চাচা?দারোয়ান আঙ্কেল গেট খুলে দিতেই গাড়িটা দেখে চমকে উঠলাম।কারটা মি.আরহান চৌধুরীর।ব্যাটা আসে নি।ড্রাইভার আঙ্কেল হাতে ফাইল আর লাকেজ নিয়ে এগিয়ে আসলেন।আঙ্কেল কে বসতে বলে চায়ের ব্যাবস্থা করালাম।দ্যান ফাইল টা নিয়ে সোজা চলে আসলাম বেডরুমে।আমার সিক্সথ সেন্স বলছে,ব্যাটা ডিভোর্স লেটার দিয়েছে।ভাবতে ভাবতে ফাইলটা খুলে ফেললাম। শুরুতেই চোঁখ গেলো একটা খামের উপর।হ্যাঁ একটা চিটি।খুলা মাত্রই পড়তে শুরু করলাম।
“ম্যাম শুরুতেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।আপনার সাথে যেটা হয়েছে সেটা অন্যায়।আপনাকে ফলো করছি বিয়ের ৪মাস আগে থেকেই।
তারপর সিসি ক্যামেরা থেকে শুরু করে কিডন্যাপড, সুযোগ বুঝে বিয়ে করা ইত্যাদি ক্লায়েন্ট এর অর্ডার অনুযায়ী করেছি।সেদিন মামলা আপনি এমনি এমনি করেন নি।সাদিক আপনার ব্রেইন ওয়াশ করেছিল।দেশের একজন নামকরা ব্যাক্তি কে পুলিশ ধরে নিয়ে যাবে?রিজন সামান্য কয়েকটা পিকচার।তার উপর রিমান্ডে পাঠাবে? আপনি ভাবলেন কি করে?মনে আছে সাদিক আপনাকে প্রোপোজ করেছিল?ম্যাম এসব আমার পার্ট অফ প্লেন ছিল।সাদিক এর তরফ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।আর আপনি জানতে চেয়েছিলেন না যে,ওঠা লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট ছিল?নাকি চ্যালেঞ্জ? ম্যাম অ্যান্সার এই দু’টোর কোনোটাই না।বলছি।
আলতাফ আঙ্কেল বাবার বিজনেস পার্টনার।আর মা বাবা তাদের একমাত্র ছেলের পাত্রী খুঁজছেন।তো দাওয়াতাক্রমে আঙ্কেলের বাড়িতে যাওয়া।ফ্রেমে আঙ্কেলের ছেলে মেয়ের সাথে আপনি ছিলেন।মায়ের চোঁখ আটকে যায় আপনাকে দেখে।টিক করলেন পাত্রী হিসেবে আপনাকে ওদের চাই।তো আপনার ডিটেলস জেনে মা-বাবা আঙ্কেলের কাছে প্রস্তাব দিয়ে বসলেন।আঙ্কেল মানা করলেন। বললেন, আপনি ডিপ্রেশন এ আক্রান্ত। আই মিন আপনার মা-বাবা চলে যাওয়ার পর থেকে।তো শপথ করলাম একজন সাইক্রিয়াটিস্ট হিসেবে আপনাকে ডিপ্রেশন থেকে মুক্ত করবো।বলেছিলাম না,ক্লায়েন্ট এর অর্ডার অনুযায়ী করেছি?ক্লায়েন্ট কিন্তু আপনার চাচা।আলতাফ চৌধুরী।ভেবেছিলাম ৬মাসের মধ্যে আপনার মনে জায়গা করে নিবো। বাট তার আগেই রিজেক্টেড হলাম।ম্যাম ডিভোর্স লেটার, দেনমোহর সব পাঠিয়ে দিয়েছি।আর আঙ্কেল যা করেছেন আপনার ভালোর জন্যই। ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখুন।কেনো করেছেন?আপনি কিন্তু ইন্টিলিজেন্ড।কৌশলে এক্স গার্লফ্রেন্ডের তথ্য জেনে নিলেন।প্রোভ করিয়ে ছাড়লেন যে,ওঠা লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট ছিলো না।আই রিপেন্ট হোয়াট আই হ্যাভ ডান।
এনিওয়ে, চলে যাচ্ছি আমরা।আজকেই ফ্লাইট।শেষবারের মতো মেমি আপনাকে দেখতে চায়।রিকোয়েস্ট মঞ্জুর হলে ঘন্টা খানেকের মধ্যে চলে আসুন।ম্যাম আবারো ক্ষমা চেয়ে বিদায় নিচ্ছি।
চিটি টা পড়া শেষ করলাম মাত্র।ব্যাটা ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দেখা করতে বলছে।তাও আবার বলল, “মেমি আপনাকে দেখতে চায়”।তারমানে কুমিরটা চায় না।যাবো কি যাবো না?এরই মধ্য মস্তিষ্ক স্মরণ করিয়ে দিলো,ক্লায়েন্ট কিন্তু আপনার চাচা।হঠাৎ ফোনটা বেঁজে উঠলো। হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে,
_যদি পারিস ছেলেটাকে আটকা।জোর করছি না। তর মন যা বলে তাই কর।
এই বলে ফোন কেটে দিলেন।বুঝলাম ক্লায়েন্ট এর সাথে পেরে উঠা মুশকিল।কুমিরটা ঘন্টা খানেকের মধ্যে যেতে বলল।তড়িগড়ি করে পরনের ড্রেস চেঞ্জ করে নতুন থ্রি-পিচ পরলাম।দ্যান ড্রাইভার আঙ্কেল কে নিয়ে বেড়িয়ে পরলাম।এয়ারপোর্ট এ পৌঁছে গাড়ি থেকে নেমে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকালাম।মনে হল, মাথায় বাজ ভেঙে পড়েছে।দ্যা টাইম ইজ ওভার।এই মুহূর্তে ব্রেইন স্টোক করবো মনে হচ্ছে।ড্রাইভার আঙ্কেল ব্যাপারটা লক্ষ্য করে ব্যাটাকে কল করলেন।সুইচড অফ।আই সি দ্যা ড্রাকনেস অ্যারাউন্ড। সেন্স হারাতে হারাতে লক্ষ্য করলাম পিচ্ছি মেয়েটা এদিকে আসছে।
ড্রাইভার আঙ্কেল আর কুমিরটা ডানা ধরে তুলতেই সেন্স ফেরে।ব্যাটা কিডন্যাপার বলল,
_ইউ অকে?
অ্যান্সার না দিয়ে মেমিকে নিয়ে সোজা গাড়িতে বসে দরজাটা লাগিয়ে দিলাম।কুমিরটা আবারো বলল,
_’ম্যাম বোডিং রুমে বসে ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষা করছিলাম তার আগেই এতকিছু?এখন কিন্তু একেবারে চলে যাচ্ছি?
স্মিত হেসে বাম হাতে গাড়ির দরজাটা খুলে দিলাম।যেতে দিচ্ছি না আর ব্যাটাকে।
” সমাপ্ত “
Taslim di golpta onek bhalo hoyche
প্রতিদিন আরো চমৎকার গল্প আপলোড দেওয়া হবে দাদা সবসময় ভিজিট করুন গল্পের ঠিকানায়