#কিশোরী_কন্যার_প্রেমে
#সুমাইয়া_সিদ্দিকা_আদ্রিতা
#পর্ব_১৮
.
দুটো আইসক্রিম, বইয়ের কার্টন আর নীরদের দেওয়া ঝুড়িটা নিয়ে রুমে এসে নিধিকে টেবিলে বসে বইয়ের ভেতরে মুখ গুঁজে থাকতে দেখে বিরক্ত হলো অর্ঘমা। এত পড়ার কী আছে অর্ঘমা সেটাই ভেবে পায় না। ঝুড়িটা জায়গা মতো রেখে হাতের একটা আইসক্রিম নিয়ে এগিয়ে গেল নিধির দিকে।
-“বই রাখ এখন। এই নে আইসক্রিম খা।”
মুখ তুলে অর্ঘমার দিকে তাকিয়ে আইসক্রিমটা নিয়ে মুচকি হাসল নিধি। বই বন্ধ করে বলল,
-“নীরদ ভাইয়া এনেছে এগুলো?”
-“হ্যাঁ।”
-“ভাইয়া আমাকেও একটা গিফট বক্স দিয়েছেন। যদিও এখনো খুলে দেখিনি কী দিয়েছে।”
-“তাই নাকি? কোথায়? এখনই খোল। আমিও দেখব।”
ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে একটা মাঝারি সাইজের গিফট বক্স এনে রাখল পড়ার টেবিলের উপর। অর্ঘমার হাতে আইসক্রিম দিয়ে বক্সটা খুলল। ভেতরে দেখে অবাক হয়ে গেল নিধি। একটা হাতঘড়ি, একটা ডায়েরি সাথে কলম আর কিছু চকলেট রয়েছে বক্সে। নিধি এত বেশি খুশি হলো যা বলার মতো না। কিন্তু খুশিটা প্রকাশ করল না। মুচকি হেসে বলল,
-“নীরদ ভাইকে আরও একবার থ্যাংক ইউ বলতে হবে। গিফট আমার পছন্দ হয়েছে।”
___
অভ্র অর্ঘমার রুমের সামনে এসে নক করল। দরজা খুলল অর্ঘমা। ভাইকে দেখে হেসে জিজ্ঞেস করল,
-“কিছু বলবে?”
-“তোর বান্ধবী কই?”
-“ওয়াশরুমে গিয়েছে। কেন?”
-“আজ তো ওরও রেজাল্ট দিয়েছে। তাই ওকেও কিছু দেওয়া উচিত ভাবলাম।”
হাতের বক্সটা এগিয়ে দিল অর্ঘমার দিকে। বলল,
-“এটা ওকে দিয়ে দিস।”
-“আচ্ছা।”
মৃদু হেসে বক্সটা নিয়ে ভেতরে চলে গেল অর্ঘমা। সেই মুহূর্তে ওয়াশরুমের দরজা খুলে বের হলো নিধি। অর্ঘমার হাতে আবারও গিফট দেখে মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। কিন্তু তাকে চমকে দিয়ে অর্ঘমা বক্সটা তার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
-“এটা তোর। ভাইয়া দিয়ে গেল।”
বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বক্সটা নিয়ে প্রশ্ন করল,
-“এটা কেন?”
-“ভাইয়ার তরফ থেকে তোর গিফট।”
হতভম্ব নিধি বক্স হাতে নিয়ে তাকিয়ে রইল কিছু সময়। বিছানায় গিয়ে বসে আস্তে আস্তে সময় নিয়ে মাঝারি সাইজের গিফট বক্সটা খুলল। আরেক দফা অবাক হলো নিধি। বক্সের ভেতরে রয়েছে খুব সুন্দর একটা জামা। সাথে কিছু অর্নামেন্টস। হাসি ফুটে উঠল নিধির মুখে। বাবার বাসায় আজ পর্যন্ত একটা দামী ভালো জামা তার কপালে জোটেনি। তাই অভ্রর দেওয়া উপহারের জামাটা দেখে খুশিতে চোখে জল চলে এলো নিধির। কৃতজ্ঞতায় ভরে উঠল মন।
___
কলেজের প্রথম দিন অভ্র আর নীরদ গিয়েছিল অর্ঘমা আর নিধির সাথে। এর আগে ভর্তি হওয়ার সময় এসে পুরো কলেজ ঘুরে ঘুরে দেখে গিয়েছিল তারা। নিধির পড়াশোনার সম্পূর্ণ খরচ বহন করছেন অর্ঘমার বাবা। অর্ঘমার আবদার ছিল এটা। যেহেতু তাদের আর্থিক অবস্থা যথেষ্ট ভালো তাই আর আপত্তি করেননি অর্ঘমার বাবা। নিধি প্রথমে একটু ইতস্তত করলেও অর্ঘমা তাকে বুঝিয়ে মানিয়েছে। নিধিও আর কিছু বলতে পারেনি কারণ এছাড়া তার আর কোনো গতি নেই।
নবীন বরণের দিন সকালে নিধি অনেক চিন্তাভাবনা করে অভ্রর দেওয়া জামাটা পরল। এছাড়া তার ভালো কোনো জামা নেই। অর্ঘমা ভেবেছিল শাড়ি পরে যাবে। কিন্তু নিধি শাড়ি পরবে না দেখে সে-ও শাড়ি পরার চিন্তা বাতিল করল। অনেক খুঁজে ধূসর রঙের একটা জামা বের করল। জামাটা সিম্পলের মধ্যে গর্জিয়াস। এটা অভ্র কিনে দিয়েছিল তাকে প্রায় বছরখানেক আগে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত একবারও পরা হয়নি। এটাই আজ পরে যাবে বলে ভাবল।
অর্ঘমা নিজের মেকআপ দিয়ে নিধিকে সাজিয়ে দিল। নিজেও কিছুটা সাজল। ভেবেছিল শাড়ি পরে একটু গর্জিয়াসভাবে সাজবে। নীরদের মাথাটা হালকা করে ঘুরিয়ে দিবে। কিন্তু সে গুড়ে বালি দিল নিধি। ঠোঁটে লিপস্টিক লাগিয়ে গলায় ওড়না ঝুলিয়ে নিজেকে আয়নায় ঘুরে ঘুরে দেখল। তাকে দেখতে সুন্দরই লাগছে। আয়নার দিকে তাকিয়ে কিছুটা ঢং করে বলল,
-“ও মাই গড! এই সুন্দর মেয়েটা কে? আরেহ্! এটা তো আমি। হায়.. কারও নজর যেন না লাগে।”
চুলগুলো হাত দিয়ে পেছন দিকে ঠেলে দিয়ে মিষ্টি হেসে বলল,
-“মে ইতনি সুন্দার হু মে ক্যায়া কারু?”
নিধি এতক্ষণ যাবৎ বিছানায় বসে অর্ঘমার ঢং দেখছিল। এবার সে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
-“হয়েছে তোর ঢং? আর কতক্ষণ লাগাবি? বিগত দুই ঘন্টা ধরে তো শুধু ঢং-ই করে যাচ্ছিস। এবার চল নাহলে অনুষ্ঠানই শেষ হয়ে যাবে।”
-“আগে বল আমাকে কেমন লাগছে?”
-“পরী লাগছে পুরা। এবার চল না রে মা।”
-“হায়.. আমি তো জানি আমি পরী। শাড়ি পরিনি তো কি হয়েছে? এভাবেও আমি নীরদ ভাইয়ের মাথা ঘুরিয়ে দিব দেখিস। নিচে নাম শুধু, দেখবি কীভাবে হা করে তাকিয়ে থাকে।”
-“ভাই, তুই কী বলতো? ভাইয়ার সামনে গেলে লজ্জায় চোখ তুলে তাকাতে পারিস না। অথচ ঘরে বসে মুখে ফটর ফটর করিস।”
-“ও তুই বুঝবি না। এবার কি বের হবি? কখন থেকে শুধু কথাই বলে যাচ্ছিস। তোর জন্য কত দেরি হয়ে গেল।”
অর্ঘমা ফোন আর পার্স নিয়ে বেরিয়ে গেল রুম থেকে। নিধি ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়ল। এতক্ষণ যাবৎ নিজে বকবক করে, রং-ঢং করে দেরি করে এখন তাকে দোষ দেওয়া হচ্ছে? নিধি নিজের পার্সটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ল।
অর্ঘমা হিল জুতো জোড়া হাতে নিয়ে খালি পায়ে দৌড়ে নিচে নেমে এলো। গেইট দিয়ে মাথা বের করে উঁকি দিয়ে দেখল নীরদ গেইটের ঠিক পাশে দাঁড়িয়ে আছে। তার মনোযোগ হাতে থাকা ফোনের দিকে। হিল জুতো জোড়া পায়ে দিয়ে, চুল ঠিক করে হালকা করে গলা ঝেড়ে নিয়ে বের হলো। গলা ঝাড়ার শব্দ শুনেই গেইটের দিকে তাকিয়ে ছিল নীরদ। অর্ঘমাকে বের হতে দেখে মুখটা হা হয়ে গেল। হাত থেকে ফোনটা প্রায় পরেই যাচ্ছিল এমন সময় নিজেকে সামলে নিল। ফোন পকেটে ঢুকিয়ে আবারও তাকাল অর্ঘমার দিকে। শুকনো ঢোক গিলে বিরবির করে বলল,
-“নির্ঘাত আজকে আমাকে মারার প্ল্যান করে এসেছে।”
-“কিছু বললেন?”
-“কই? না তো। নিধি কোথায়?”
-“ওই তো আসছে।”
বলতে না বলতেই নিধি চলে এলো। কলেজ বাসা থেকে প্রায় আধঘন্টার দূরত্বে। একটা সিএনজি ভাড়া করল তারা। সিএনজিতে নীরদ অর্ঘমার পাশে বসে একটু পর পর আড়চোখে অর্ঘমার দিকেই তাকাচ্ছে। এই পর্যন্ত দুটো বিয়েতে অর্ঘমাকে দেখেছে সে। কিন্তু সেই দু’দিন আর আজকের দিনের অর্ঘমার ভেতরে কিছু একটা তফাত আছে। আজ মেয়েটাকে হুট করেই কেমন যেন বড় বড় লাগছে। এর কারণটা বুঝতে পারল না। পকেট থেকে কলম বের করে আঙুলে গোল গোল ঘুরাতে লাগল। অর্ঘমা তা খেয়াল করে বলল,
-“কী করছেন? হাতে কালি লাগাচ্ছেন কেন?”
নীরদ কোনো জবাব দিল না। কলম পকেটে ঢুকিয়ে হাত উঠিয়ে অর্ঘমার কানের পিঠে কালি লাগিয়ে দিল। অর্ঘমা অবাক হয়ে বলল,
-“এটা কী করলেন?”
-“আমার কাছে কাজল নেই। আর তুমিও কাজল পরোনি। তাই কলমের কালি দিয়ে নজর টিকা দিয়ে দিলাম।”
মুখ টিপে হাসল অর্ঘমা। নিধি জানালার দিকে তাকিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখছে আর নীরদের কথা শুনে হাসছে। এই দু’জনকে তার ভীষণ ভালো লাগে। একে অপরকে মনের কথা না বলেও কি সুন্দর একে অপরের মনের ভাব বুঝে নেয়। অর্ঘমা প্রশ্ন করল,
-“কেন দিলেন?”
-“যাতে কারো নজর না লাগে। দেখতে তো আস্ত একটা পুতুলের মতো লাগছে। যদি কেউ নজর দিয়ে দেয়? সাবধানের তো আর মার নেই। তাই এই ব্যবস্থা।”
নীরদের সরল স্বীকারোক্তি শুনে মনটা প্রশান্তিতে ছেয়ে গেল অর্ঘমার। গাল দু’টো লজ্জায় উঁচু হয়ে গেছে বুঝতে পেরে অন্য দিকে ঘুরে গেল। গালের গরম আভা সে অনুভব করতে পারছে। নীরদের প্রশংসাই তার জন্য যথেষ্ট। আর কে তার সাজ দেখল না দেখল তা দিয়ে তার কিছুই যায় আসে না।
কলেজে পৌঁছে অর্ঘমা আর নিধিকে ভেতরে পাঠিয়ে দিল। নীরদের বন্ধুরা আশেপাশেই আছে। অর্ঘমা যতক্ষণ অনুষ্ঠানে থাকবে ততক্ষণ বন্ধুদের সাথে এদিকেই ঘুরাঘুরি করবে নীরদ। তাছাড়া এদিকে একটা কাজও আছে তার। সেটাও সেরে নিবে। অর্ঘমা, নিধি ভেতরে ঢুকে যাওয়ার পরও নীরদ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল সেখানে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব শিক্ষার্থীদের পর্যবেক্ষণ করতে লাগল। কলেজ আর ভার্সিটি একসাথে হওয়ার সুবাদে শিক্ষার্থী একটু বেশিই দেখা যাচ্ছে। ছেলেদেরকে তীক্ষ্ণ নজরে দেখে নিয়ে মনে মনে বলল, ‘এখানের সব মেয়েদের সাথে তোরা লাইন মার, ফ্লার্ট কর আমার কোনো সমস্যা নেই। শুধু আমারটার দিকে নজর দিস না।’ পরক্ষণেই আবারও ভাবল, ‘জলজ্যান্ত পুতুলটার দিকে আজ কেউ তাকাবে না এমনটা হতেই পারে না। হে আল্লাহ্! তুমি দেখে রেখো আমার পুতুলটাকে। সবার বদ নজর থেকে ওকে দূরে সরিয়ে রেখো।’ নীরদের একবার মন চাইল অর্ঘমাকে গিয়ে বলতে যে, ‘চলো এখান থেকে। আমাকে চিন্তায় রেখে তোমাকে নবীন বরণের অনুষ্ঠানে থাকতে হবে না। তোমার সাজ দেখে আমিই পাগল হয়ে যাচ্ছি। তাহলে তোমাদের নবীন বরণে আসা ছেলেগুলো যে পাগল হবে না তার গ্যারান্টি কী?’ পরক্ষণেই এই ভাবনা বাতিল করে গোমড়া মুখে চলে গেল সেখান থেকে। এবার শুধু অর্ঘমার নজর কোনো ছেলের দিকে না পড়লেই হয়।
___
কলেজের মেয়েগুলোকে দেখে অর্ঘমা ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়ল। এর থেকে তো স্কুলের মেয়েগুলোই ভালো ছিল। অন্তত এত ভাব তো আর দেখাত না। এক স্কুলেই সে টানা বারো বছর পার করেছে। ক্লাস ফোর থেকে ক্লাস টেন পর্যন্ত ক্লাস ক্যাপ্টেন ছিল। তার উপর ক্লাস টপার ছিল। সেই সুবাদে ক্লাসের সকলে তার সাথে সেধে সেধেই কথা বলত। আর এখানের মেয়েগুলোকে দেখো! নিজে থেকে সেধে কথা বলতে গেলেও ভাব এমন করছে যেন মহা অপরাধ করে ফেলেছে। একই ক্লাসের হয়েও এমন ভাব দেখানোর মানেটাই খুঁজে পেল না অর্ঘমা। এদের সাথে কীভাবে মানিয়ে নিবে দু’টো বছর সেটাই চিন্তা করতে লাগল।
একদম সামনের সারিতে বসেছেন সকল শিক্ষকরা। তার পেছন সারি থেকে শুরু হয়েছে ছাত্র-ছাত্রীদের বসার জায়গা। অর্ঘমা আর নিধি একদম সামনে গিয়ে দেখে কয়েকটা বসার জায়গা খালি। শিক্ষকদের পেছনে হওয়াতে কেউ বসেনি এখানটায়। অর্ঘমা আর নিধি সেখানে বসে পড়ল। পেছন থেকে কয়েকজন তাকাল তাদের দিকে। সেদিকে তাকাল না তারা। তবে অর্ঘমা বিরক্ত হলো এটা দেখে যে ছেলেমেয়েদের বসার জায়গা একসাথে করা হয়েছে। এখানে দু’টো সারি করা উচিত ছিল। এক সারিতে ছেলেরা বসবে, আরেক সারিতে বসবে মেয়েরা। ক্লাসে তো এই নিয়মটা আছে। তাহলে আজকে এই নিয়ম নেই কেন? আপাতত এসব চিন্তা বাদ দিয়ে স্টেজের দিকে তাকাল। অধ্যক্ষ মহোদয় বক্তৃতা দিচ্ছেন। নতুন ছাত্র-ছাত্রীদের শুভেচ্ছা বার্তা জানিয়ে কিছু কথা বলছেন। কথাগুলো অর্ঘমার ভালো লাগল। তাই সে মনোযোগ দিয়ে শুনতে লাগল।
চলবে…#কিশোরী_কন্যার_প্রেমে
#সুমাইয়া_সিদ্দিকা_আদ্রিতা
#পর্ব_১৯
.
অনুষ্ঠান যখন শেষ হলো তখন সময়টা সন্ধ্যা। ঝাঁকে ঝাঁকে ছেলেমেয়ে বের হচ্ছে কলেজ থেকে। মাঠ ভরতি গিজগিজ করছে ছাত্র-ছাত্রীদের বৈঠক। অর্ঘমার এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো এটা ঢাকার নিউমার্কেট। আর সে নিউমার্কেটের ভীড়ের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে। নিধির হাত ধরে একপাশে গিয়ে দাঁড়াল। ফোন বের করে নীরদকে কল দিল। একবার রিং হতেই কল রিসিভ হলো। অর্ঘমার মনে হলো নীরদ এতক্ষণ তার কলের জন্যই অপেক্ষা করে ফোন হাতে নিয়ে বসেছিল। নীরদকে কলেজে আসতে বলে কল কেটে দিল। নিধি বলল,
-“শুধু শুধু দাঁড়িয়ে থেকে কী করব? তার চেয়ে চল কলেজটা একটু ঘুরে দেখি।”
-“আর কী দেখবি? সবই তো দেখা শেষ।”
-“হাঁটাহাঁটি করতে তো আর সমস্যা নেই।”
-“এই ভীড়ের মাঝে? ভাই, তোর এত কারেন্ট থাকলে তুই একাই হাঁট। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে এত ভীড়ে। ভীড়টা একটু কমলে বাঁচি আমি।”
-“তাহলে চল, ওপাশের বট গাছটার নিচে গিয়ে বসি। এখানে দাঁড়িয়ে থাকার চেয়ে ওখানে গিয়ে বসা ভালো।”
-“হ্যাঁ, এটা করা যায়।”
বট গাছটা একদম কলেজের গেইটের সামনে। সেখানে বসলে এক হিসেবে সুবিধা হবে। নীরদ আসলেই তাদের দেখতে পাবে। হাঁটতে হাঁটতে বট গাছের সামনে আসতেই দেখতে পেল সেখানে ভার্সিটির একটা দল জায়গা দখল করে বসে আছে। তাই আর সামনে এগিয়ে গেল না। নিধির হাত ধরে উল্টো ঘুরে ভেতরে যেতে গেলে পেছন থেকে কেউ একজন ডাকল। তবে তাদেরই ডাকল কিনা বোঝা গেল না। কারণ নাম ধরে ডাকেনি। অবশ্য নাম জানারও কথা না। তবুও পেছন ঘুরে তাকানোর প্রয়োজন মনে করল না অর্ঘমা বা নিধি। কিন্তু তাদের অবাক করে দিয়ে পেছন থেকে সামনে এসে দাঁড়াল দু’জন ছেলে। অর্ঘমা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালে একটা ছেলে বলল,
-“তোমাদের ডাকা হলো উত্তর নিলে না কেন?”
-“আমাদের ডাকা হয়েছে বুঝতে পারিনি। আসলে এখানে তো অনেকেই আছে। তাছাড়া আপনারা নাম ধরে ডাকেননি তাই বুঝিনি।”
-“ওখানে চলো।”
-“কেন?”
-“সিনিয়ররা ডাকছে তাই।”
কথা বাড়াল না অর্ঘমা। তবে ভেতরে ভেতরে সে প্রচন্ড বিরক্ত হলো। এরা আবার কেন ডাকছে? নীরদ কখন আসবে কে জানে। নিধির সাথে আবারও বট গাছের সামনে ফিরে গেল অর্ঘমা। সাথে আছে সেই দু’জন ছেলে। গাছের নিচে প্রায় দশ-বারোজন ছেলে-মেয়েদের একটা দল বসে আছে। সেখানে গিয়ে অর্ঘমা ভেতরে ভেতরে কিছুটা ঘাবড়ে গেলেও তা মুখে প্রকাশ করল না। স্বাভাবিক ভাবেই জিজ্ঞেস করল,
-“ডেকেছিলেন আমাদের?”
-“হ্যাঁ। কলেজে নতুন?”
-“জি।”
-“নাম কী?”
-“অর্ঘমা।”
-“পাশের জনের?”
নিধি মিনমিন করে বলল,
-“নিধি।”
-“কী?”
আওয়াজটা এতটাই আস্তে ছিল যে নিধি নিজে শুনতে পেয়েছে কিনা সন্দেহ। নিধিটা প্রচন্ড ভীতু স্বভাবের। তাকে দেখে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে সে ভয়ে অর্ধেক মরে গেছে ইতোমধ্যে। অর্ঘমা এত বিরক্ত হলো যা বলার মতো না। নিধির দিকে কঠিন দৃষ্টিতে একপলক তাকিয়ে আবারও সামনে তাকাল। সিনিয়রদের উদ্দেশ্যে বলল,
-“ওর নাম নিধি।”
-“ওর গলায় কী আওয়াজ নেই?”
-“আছে, কিন্তু অপরিচিত ব্যক্তির সাথে কথা বলতে অস্বস্তিবোধ করে।”
সিনিয়র এক মেয়ে কিছু একটা বলছিল কিন্তু সেটা কানে গেল না অর্ঘমার। তার দৃষ্টি ভার্সিটির গেইটের দিকে। অভ্র আর নীরদ ঢুকছে একসাথে। হাসি ফুটে উঠল অর্ঘমার মুখে। তার ভেতরে থাকা ভয়টা আর কাজ করছে না। অভ্র তার দিকে তাকিয়েই হাসল। অর্ঘমার হাসি আরও বিস্তৃত হলো। সে সিনিয়রদের দিকে তাকিয়ে বলল,
-“আমাদের অভিভাবক এসে গিয়েছে।”
কথাটা বলেই অর্ঘমা একগাল হেসে অভ্র আর নীরদের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলল,
-“ভাইয়া তুমি! আজ এত তাড়াতাড়ি?”
-“কাজ তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গিয়েছিল। অফিস থেকে বেরিয়ে নীরদকে কল করে জানলাম তুই কলেজে। আর নীরদও এখানেই আছে। তাই সোজা এখানে চলে এলাম।”
-“ভালোই হয়েছে। চলো সবাই মিলে ফুচকা খেয়ে আসি। সাথে আইসক্রিম।”
-“চল।”
অভ্র যেতে গিয়েও আবার পেছন ফিরে তাকাল। রিয়ার কয়েকজন বন্ধুদের এখানে দেখে বেশ অবাক হলো। তারা তার দিকেই তাকিয়ে আছে। অভ্র একবার ভাবল কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করবে ওরা এখানে কী করছে। পরক্ষণেই নিজের ভাবনা বদলে ফেলল। দরকার কী শুধু শুধু যেচে পড়ে কথা বলার। ওদের যা মন চায় করুক। তার কী? অর্ঘমার ডাকে হুঁশ ফিরল অভ্রর।
-“ভাইয়া! কোথায় হারালে?”
-“হুঁ! না, কোথাও না। চল।”
কলেজ থেকে বের হতে হতে অর্ঘমা মনে মনে বলল, ‘ভাগ্যিস ভাইয়ারা তাড়াতাড়ি চলে এসেছিল। নয়তো এই সিনিয়ররা যে আরও কী কী প্রশ্ন করত কে জানে?’
___
ফুচকা খাওয়ার মাঝে অভ্রর কল আসায় উঠে গেল সে। কথা বলার একফাঁকে অর্ঘমাদের দিকে তাকাল। অর্ঘমা আর নীরদ কথা বলার পাশাপাশি ফুচকা খাচ্ছে। পাশেই নিধি বসে আছে। মাঝে মাঝে দু’একটা কথা বলছে সে। তার দৃষ্টি সামনে কি যেন দেখছে। অভ্র চোখ ঘুরিয়ে সেদিকে তাকাল। বছর সাতেকের এক মেয়েকে নিয়ে তার বাবা-মা এসেছে ফুচকা খেতে। বাচ্চা মেয়েটা খিলখিল করে হাসছে। একবার বাবার কোলে চড়ছে তো আরেকবার মায়ের কোলে চড়ছে। বাবা-মা দু’জনই প্রচন্ড ভালোবাসেন মেয়েটিকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। অভ্র বুঝতে পারল নিধির মনের অবস্থাটা। দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া তার আর কিছু করার নেই। কল কেটে সবার সাথে গিয়ে বসল।
-“আরও এক প্লেট ফুচকা খাব আমি। এমন সুযোগ রোজ রোজ আসে নাকি?”
-“পরে পেট ব্যথা করবে অর্ঘ। আর খাওয়ার দরকার নেই।”
-“ভাইয়া প্লিজ, আর এক প্লেট খাব।”
অর্ঘমা ঠোঁট উল্টে তাকাতেই অভ্র, নীরদ দু’জনেই রাজি হয়ে গেল। অর্ঘমা হাসল। সে ভালো মতোই জানে কীভাবে এই দু’জনকে মানানো যায়। অভ্র নিধির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
-“তোমার জন্যও অর্ডার করি আরেক প্লেট?”
-“আমি আর খাব না।”
-“কেন?”
-“আমার একটুতেই পেট ব্যথা করে। বেশি খেলে অবস্থা শোচনীয় হয়ে যায়।”
মিথ্যে কথাটা বলে অর্ঘমার দিকে আড়চোখে তাকাল নিধি। অর্ঘমা বুঝল ব্যাপারটা। গতকাল থেকে নিধির পিরিয়ড শুরু হয়েছে। এই সময়ে বাইরের খাবার নিধির পেটে সয় না। তবুও আজ খেয়েছে। সবার সাথে এসেছে। কিছু না খেলে তো অভ্র আর নীরদ তাকে প্রশ্ন করে মেরে ফেলবে। রাগও করতে পারে। এই ভেবে খেয়েছে। এর বেশি খাওয়া তার পক্ষে আসলেও সম্ভব না। নীরদ এক প্লেট ফুচকার অর্ডার দিতে উঠে গেল।
অভ্র তাকাল নিধির দিকে। নিধি এখনো সেই ছোট্ট পরিবারের দিকে তাকিয়ে আছে। অভ্র একটু ভালো করে খেয়াল করতেই দেখল নিধির গায়ে তার দেওয়া জামাটা। খুশি হলো এই ভেবে যে জামাটা নিধির পছন্দ হয়েছে। সে খুঁটিয়ে দেখল নিধিকে। অতি সাধারণ একটা মেয়ে। প্রথম যখন তাদের বাসায় আসলো তখন দেখতে এক রকম ছিল, এখন দেখতে আরেক রকম হয়েছে। তখনকার চেহারা ছিল ভেঙে যাওয়া ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত। কাজের চাপে আর মার খেয়ে চেহারায় ভর করেছিল মলিনতা। কিন্তু এখন নিধির চেহারার লাবণ্য যেন ঠিকরে বের হচ্ছে। একটু আদর-যত্ন মেয়েটাকে যেন একদম পালটে দিয়েছে। দেখে মোটামুটি পছন্দ হওয়ার মতো মেয়ে। এই বয়সের ছেলেমেয়েরা কত প্রাণোচ্ছল থাকে। কিন্তু নিধির উচ্ছলতা সব ভাঁটা পড়ে গিয়েছে বাবা আর সৎ মায়ের অত্যাচারে। নীরদের ডাকে হুঁশ ফিরল অভ্রর। নিধির দিক থেকে চোখ সরিয়ে নীরদের দিকে তাকাল। এরপরের পুরোটা সময় অভ্র একটু পর পর আড়চোখে নিধিকে দেখে গেল। এই বয়সটা হৈচৈ করে কাটানোর বয়স। সেখানে নিধিকে এত চুপচাপ দেখে কেন যেন মানাচ্ছে না বলে মনে হলো অভ্রর।
___
সময়টা গ্রীষ্মকাল। প্রকৃতিতে ছড়িয়ে আছে প্রচণ্ড দহনজ্বালা। মনে হচ্ছে যেন সূর্য মাথার উপরে অগ্নিরশ্মি ঢালছে। হাওয়ায় ভেসে আসছে আগুনের হলকা তাপ। চারদিকে নিস্তব্ধ নিঝুম ভাব। অর্ঘমা কপালের ঘাম মুছে আবারও রাস্তার দিকে তাকাল। জনমানবহীন শূন্য রাস্তা। কলেজ ছুটি হয়েছে আধঘন্টার কিছু সময় বেশি হয়েছে। সবাই যে যার মতো চলে গেছে। বাকি আছে শুধু সে আর নিধি। গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে মন। আজকে তাদের ক্লাস টেস্ট ছিল। অর্ঘমার টেস্ট তেমন একটা ভালো হয়নি। মন মেজাজ এমনিতেই খারাপ। আর এখন তো রাগে মাথার ভেতরটা দপদপ করে জ্বলছে। এমন ফাজলামোর কোনো মানে হয়? এই গরমে আধঘন্টার বেশি সময় দাঁড়িয়ে থাকা কম কথা নয়। যেকোন সময় সে সানস্ট্রোক করতে পারে। হাতঘড়িতে সময় দেখে নিয়ে নিধিকে উদ্দেশ্য করে বলল,
-“আর দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব না আমার পক্ষে। আমার সাথে গেলে চল। নাহলে দাঁড়িয়ে থাক তোর নীরদ ভাইয়ের জন্য।”
কথা শেষ করে এক মুহূর্তও দাঁড়াল না অর্ঘমা। হনহন করে হাঁটা শুরু করল। নিধি কী করবে বুঝতে না পেরে একবার অর্ঘমার দিকে তাকিয়ে আবার রাস্তার দিকে তাকাল। তারপর কোনো কিছু না ভেবেই দৌড় লাগাল অর্ঘমার পেছনে।
হাঁটতে হাঁটতেই অর্ঘমার মাথায় এলো একটু আগের ঘটনা। কলেজ ছুটির পর অর্ঘমা নিধির ব্যাগ নিয়ে করিডোরের একপাশে দাঁড়িয়ে ছিল। নিধি ওয়াশরুমে গিয়েছে। ফ্লোর পুরোটা খালি হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। এমন সময় ছেলেমেয়েদের হাসাহাসির শব্দ শুনে পেছনে সিঁড়ির দিকে তাকাল। কলেজ বিল্ডিং আর ভার্সিটি বিল্ডিং একসাথে জয়েন্ট করা। তাই খুব সহজে ভার্সিটির স্টুডেন্টরা কলেজ বিল্ডিংয়ে আর কলেজের স্টুডেন্টরা ভার্সিটি বিল্ডিংয়ে যাতায়াত করতে পারে। সিঁড়িতে সেদিনের সিনিয়রদের দেখে অর্ঘমা সাথে সাথে মাথা ঘুরিয়ে নিল। অর্ঘমার কেন যেন এদের চাহনি একদমই ভালো লাগে না। ছেলেগুলো কেমন করে যেন তাকায়। গা ঘিনঘিন করে উঠে অর্ঘমার। আর মেয়েগুলো তো কলেজ শুরুর প্রথম দিন থেকেই কেমন যেন খোঁচা মেরে মেরে কথা বলে। অর্ঘমা বুঝে না এদের সমস্যা কী? ভার্সিটি লেভেলের ছাত্র-ছাত্রীরা ইন্টারের এক ছাত্রীর পেছনে এভাবে হাত ধুয়ে কেন পড়ে আছে ভেবে পায় না অর্ঘমা। ছেলেমেয়েগুলো হয়তো তাকে দেখে ফেলেছিল তাই সিঁড়িতেই দাঁড়িয়ে ছিল। নিজেদের মাঝে কথা বলে জোরে জোরে হাসাহাসি করছিল। এক পর্যায়ে কথার ধরন এমন নিম্নপর্যায়ে পৌঁছাল যে কান গরম হয়ে উঠল অর্ঘমার। এত বিশ্রী ভাষা এদের? বুঝতে বাকি থাকে না যে কথাগুলো তাকে উদ্দেশ্য করেই বলা হচ্ছে। নিধি আসতেই এক মুহূর্ত সময়ও ব্যয় না করে নিধির হাত ধরে দ্রুত পা চালিয়ে সেখান থেকে চলে আসে। নিধি কিছুই বুঝেনি অর্ঘমার এমন ব্যবহারের মানে। জিজ্ঞেস করলেও অর্ঘমা কোনো জবাব দেয়নি।
সারা রাস্তা অর্ঘমা এটা ভাবতে ভাবতেই এলো যে এই ছেলেমেয়ে গুলোর সাথে তার কীসের শত্রুতা? শত্রুতার কথা তো পরে আসছে, অর্ঘমা তো এদের চেনেই না। আর এত বিশ্রী ভাষা এদের মুখে এলোই বা কীভাবে একটা মেয়ের ক্ষেত্রে? ছিঃ! অর্ঘমার অন্যমনস্ক ভাব লক্ষ্য করেছে নিধি। কিন্তু কিছু জিজ্ঞেস করল না। জানে লাভ নেই। নিজে থেকে কিছু না বললে নিধি হাজার চেষ্টা করলেও কিছু জানতে পারবে না। মাঝরাস্তায় নীরদকে দেখা গেল। সে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসছিল। হয়তো কলেজেই যাচ্ছিল তাদের আনতে। কিন্তু তাদের রাস্তায় দেখে দাঁড়িয়ে গেল। অর্ঘমা তখনও অন্যমনস্ক। প্রথমত তার টেস্ট ভালো হয়নি। দ্বিতীয়ত সিনিয়রদের বাজে ভাষা। এসবই ভাবতে ভাবতে তার ধ্যান আশপাশ থেকে সরে গেছে।
অর্ঘমা যখন নীরদকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল তখন নীরদের মুখটা হা হয়ে গেল। সাথে সাথেই নিজেকে সামলে নিল। ভাবল হয়তো দেরি করার জন্য অর্ঘমা রাগ করেছে। তাই সে সামনে এগিয়ে যেতে গেলেই পেছন থেকে নিধির ডাক শুনে থেমে গেল।
-“আজ এত দেরি হলো কেন ভাইয়া?”
-“আমি ভার্সিটি গিয়েছিলাম প্রজেক্ট জমা দিতে। তাই আসতে দেরি হয়ে গিয়েছে।”
-“ওহ আচ্ছা।”
-“অর্ঘমা নিশ্চয়ই রাগ করেছে?”
-“রাগ করেছে এটা জানি। কিন্তু কেন রাগ করেছে সেটা বুঝতে পারছি না। আসলে আমি ছুটির পর একটু ওয়াশরুমে গিয়েছিলাম। ও বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল। আমি ওয়াশরুম থেকে বের হতেই আমার হাত ধরে হনহনিয়ে হাঁটা ধরল। তখন থেকেই ওর মুখটার দিকে তাকানো যাচ্ছে না। আমি বেশ কয়েকবার জিজ্ঞেস করেছিলাম ‘কী হয়েছে?’ কিন্তু কিছুই বলল না।”
নীরদ কিছু না বলে অর্ঘমার দিকে তাকাল। মেয়েটার মন খারাপ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। নীরদ চুপচাপ এগিয়ে গিয়ে অর্ঘমার পাশাপাশি হাঁটতে লাগল।
বাসার সামনে পৌঁছাতেই অর্ঘমা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে পাশে তাকাল। নিধিকে এই পাশে না দেখে অপর পাশে তাকাতেই নীরদকে দেখে চমকে উঠল। পেছন থেকে নিধি এসে হেসে টাটা দিয়ে উপরে চলে গেল। সেদিকে তাকিয়ে অর্ঘমা প্রশ্ন করল,
-“আপনি কখন থেকে আছেন আমার পাশে?”
-“অনেকক্ষণ; তুমি কলেজ থেকে বের হওয়ার পর পরই আমি এসেছি।”
-“ওহ!”
অর্ঘমা চলে যেতে গেলে নীরদ তার হাত ধরে ফেলল। ভড়কাল অর্ঘমা। পেছন ঘুরে তাকাতেই নীরদ জিজ্ঞেস করল,
-“কী হয়েছে তোমার? এমন অন্যমনস্ক হয়ে আছ কেন? এত কী ভাবছিলে যে আশেপাশের কোনো দিকে তোমার ধ্যানই ছিল না?”
-“কিছু হয়নি। এমনি একটু ক্লান্ত তাই।”
-“মিথ্যে কেন বলছ? আমি এতদিনে তোমাকে ভালো মতোই চিনেছি অর্ঘ। কিছু না হলে তুমি এমন করার মেয়ে না।”
-“আমি শুধু ক্লান্ত, তাই হয়তো এমন লাগছে।”
নীরদ কিছু সময় চুপ করে তাকিয়ে রইল অর্ঘমার দিকে। অর্ঘমা মাথানিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নীরদ বলল,
-“ঠিক আছে, বাসায় গিয়ে বিশ্রাম নাও। আর যদি কখনো কথাটা শেয়ার করতে মন চায় তবে ডেকে নিয়ো আমায়।”
নীরদ চলে যেতে গিয়েও দাঁড়াল। কিছু একটা মনে পড়ার ভঙ্গিতে বলল,
-“আর কখনো একা একা বের হবে না কলেজ থেকে। এরপর থেকে আর কখনো তোমায় দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না। আমি তাড়াতাড়ি না আসতে পারলে ভাইয়াকে বলে দিব। তার বন্ধু তোমাকে নিয়ে আসবে।”
চলে গেল নীরদ। ছেলেটা মন খারাপ করেছে বুঝতে পারছে অর্ঘমা। তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে আস্তে আস্তে পা চালিয়ে বাসার ভেতরে ঢুকে গেল। শুধু শুধু এসব বলে নীরদকে রাগিয়ে দেওয়ার মানে হয় না। পরে কলেজে গিয়ে যদি ওই ছেলেমেয়েদের সাথে ঝামেলা করে তখন! ছেলেমেয়ে গুলো গোল্লায় যাক। যদি ঝামেলার মাঝে হাতাহাতি শুরু হয়ে যায় আর যদি নীরদ ব্যথা পায়! এই ভেবেই সে বলেনি কথাটা।
চলবে…