কৃষ্ণচূড়ার রং লাল পর্ব ২৬+২৭

কৃষ্ণচূড়ার রং লাল-২৬.🎈
@হাফসা আলম
_____________________
পরন্ত বিকেলের রোদ মিষ্টির মত মধুর হয়।তুতুলের শরীরে তাপ দিচ্ছে সেই মিষ্টি রোদ।সূর্যের আলোর এই টুকুনি রোদ এখন অনেক প্রয়োজনীয়।ঠান্ডা পানি বাতাসে শুকিয়ে গেছে।কিন্তু শরীর এখনো হিমশীতল হয়ে আছে।রিঝ তীর্যক চোখে তাকিয়ে আছে।চোখেমুখে চাপা রাগ।রামিম রিঝের পাশে।জিপের সামনের সিটে বসে ড্রাইভ করছে উথৌয়।তারপাশেই আকাশ।বাকিরা পিছনে।সামনাসামনি সিট।এক পাশে বসেছে তুতুল আর আসমা।অপর পাশে রিঝ আর রামিম।রোদ দৌড়ে এসে ঢুকছে গাড়ির পিছনের অংশ দিয়ে।সবার ভেজা জামাকাপড় নিজেদের শরীরেই শুকিয়ে গেছে।আকাশ একটু কাত হয়ে উথৌয়কে প্রশ্ন করে,
“ ভাই ইঞ্জিনিয়ার গো চাইতে আর্মি বেশি জনপ্রিয় কেন??কইতে পারো??”

উথৌয় শব্দ করে হাসে।মেয়েরা উৎসুক হয়ে তাকায়।রিঝ প্রচন্ড বিরক্ত।উথৌয় বললো,
“ স্মার্ট ন্যাসের ব্যাপার আছে।আর্মিদের সবচাইতে আকর্ষনীয় জিনিস তাদের ফিটন্যাস।আমাদের প্রতিদিন ভোরে উঠেই কয়েক কিলোমিটার দৌড় লাগাতে হয়।নিজের বর্ডি ফিট রাখা খুবই প্রয়োজনীয়।তবে ড্রেসটাও খুবই নজরকাড়া।কিন্তু আর্মি জনপ্রিয় এটা কে বললো তোমাকে??”

আকাশ মনযোগ দিয়ে শুনলো।তারপর মুখটা ভতা করে বললো,
“ অবশ্যই জনপ্রিয়।তা না হলে এই দুই মহা নারীকে তুমি তোমার এক কথায় রাজি করাতে পারতে না।”

আসমা পিছন থেকে উঠে দুজনের মাঝে মাথাটা ডুকিয়ে বললো,
“ আপনার কি গার্লফ্রেন্ড আছে??”

উথৌয় অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে হাসলো।রামিম ক্ষিপ্ত চোখে তাকিয়ে আছে।আসমার ভারী উৎসাহিত চোখ।উথৌয় বললো,
“ অবশ্যই আছে।এই যে তুমি!!”

আসমার চোখ বড় হয়ে যায়।রামিম রাগি কন্ঠে বলে উঠে,
“ মুখ সামলে কথা বলো।আর গাড়ি থামাও।আমরা যাবো না।মজা পাইছো না কি??যা তা বলবা।এরা তোমাদের পাহাড়ি মেয়ে না।আমাদের ঘরের মেয়েদের নিয়ে মজা করলে কিন্তু খারাপ হয়ে যাবে।হাত তুলতেও কিন্তু থামবো না।বেয়াদপ ছেলে।ফ্লাটিং করার জায়গা পাচ্ছো না আর?অসভ্য।”

রিঝের মুখটা লাল হয়ে গেছে।তুতুল বিস্মিত চোখে তাকিয়ে আছে রিঝের দিকে।রামিম বলছে রিঝ কড়া চোখে তাকিয়ে আছে।উথৌয় দ্রুত গাড়ি থামিয়ে পিছনে তাকায়।বিনিত কন্ঠে বলে,
“ স্যরি স্যরি।আসলে আমি ওভাবে বলিনি।মজা করছিলাম।”

“ মজা করার কি দেখলে তুমি??” রিঝের কন্ঠে ঝাঁঝালো রাগ।
“ আসলে গার্লফ্রেন্ড মানে মেয়ে বন্ধু।আর তাই মজা করে বলেছি আসমা আমার মেয়ে বন্ধু।এতে অন্য কিছু মনে করার মতো আমি কিছুই বলিনি।তবুও স্যরি।”

রামিম রিঝ ধপ করেই নিভে গেলো।তুতুল বললো,
“ সমস্যা কি আপনাদের??অনেকক্ষণ থেকে দেখছি রেগে আছেন।আর উনি তো মজা করেই বলেছে।এতো রাগার মতো কিছু হয় নি।সো রাগার কারণ কি?যতসব।উথৌয় আপনি কিছু মনে করবেন না।উনাদের মনে হয় অন্যকোনো কারণে মন খারাপ।চিল।চলেন।”

তুতুল হাসলো।সেই সাথে উথৌয়ও।রিঝ কিছু বললো না।শুধু তুতুলের দিকে তাকিয়ে আছে।তুতুল পাত্তাই দিলো না।সে ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরে।ভাইকে বাবাকে কল করে তাদের সাথে কথা বলে।গাড়ি এসে থামে বাস স্টেশনের একটু আগের গলির মোড়ে।উথৌয় সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“ বাকি পথ হাঁটতে হবে।”

তুতুল বললো,
“ পাহাড় কই??”
“ সামনে হাঁটো।দেখতে পাবে।”

উথৌয় তুমি করেই বললো।রিঝ কপাট রাগ নিয়ে তাকায়।চোখ মুখ শক্ত করে রাখে।তুতুল কিছু বললো না।হাসি মুখে এগিয়ে গেলো।সবাই তার পিছনে পিছনে।সরু পথ ধরে হাঁটছে সবাই।চারপাশে অনেক ছোট ছোট ঘর।সাধারণ ঘর।তুতুলের মনে হচ্ছে না এখানে কোনো পাহাড় আছে।হাঁটাই যেনো এখানের কাজ।সরু পথ পেরিয়ে বাঁকা পথ।তারপর বিশাল সিঁড়ি।পাঁচজনের দল বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে থাকে।তুতুলের আগ্রহ আগে থেকেই বেশি।সেই বললো,
“ এই সিঁড়ি বেয়েই পাহাড়ে উঠতে হবে??”

উথৌয় উপরের দিকে উঠতে উঠতে বললো,
“ আগে উঠা তো শুরু করেন।তারপর দেখতে পাবেন।”

একবার তুমি আবার আপনি।রিঝের যেনো রাগ ধরছে না।সবাই উঠা শুরু করে।যতসহজ মনে হয়েছে তার ধারে কাছেও এই সিঁড়ি নেই।পঞ্চাশটা সিঁড়ি বেয়েই মেয়েরা হাঁপিয়ে উঠে।আসমা সিঁড়িতেই বসে পড়ে।তুতুলের মাথা ঝিমঝিম করে।হঠাৎ সিঁড়িতে উঠেতে গিয়ে পড়তে নেয় সে।পিছনে আকাশ ছিলো।সে দু হাতে ধরে।পা উপর নিচ সিঁড়িতে পরে পা মুচকে গেছে তুতুলের।চিৎকার করে উঠে সে।রিঝ আরো উপরে উঠে গিয়েছিলো।চিৎকার শুনে আবার দৌড়ে নিচে আসে।সাথে বাকিরা।তুতুল পা ধরে বসে বসে কাঁদছে।আকাশ ধরে উঠাতে পারছে না।রিঝ দ্রুত পায়ে কাছে এসে দেখে।তুতুলের পায়ে হাতে দিতেই সে চেঁচিয়ে উঠে বললো,
“ আমার পা!!অনেক ব্যাথা।প্লিজ রিঝ ভাই ধরবেন না।”
“ ভাঙ্গেনি এখনো।ভাবছি ভেঙ্গে গলায় ঝুলিয়ে দিবো।বেপরোয়া মেয়ে একটা।”

তুতুল চুপসে যায়।সে অনেক বেশি উৎসাহ দেখিয়ে এখানে এসেছে।রিঝ ভাই আগেই রেগে ছিলো।এখন যদি বেশি কথা বলে তাহলে দেখা যাবে সত্যিই পা ভেঙ্গে দিবে।রিঝ তুতুলের পাটা ভালো করে দেখে বললো,
“ সবাই নিচে চলো।আর যাবো না।”
“ না আমি যাবো।”
“ এই পা নিয়ে??” রাগে সমস্ত মুখ লাল হয়ে আছে রিঝের।তুতুল জিদ করে বললো,
“ যাবো মানে যাবো।”
“ ওকে যাও।এই কেউ ওকে হেল্প করবে না।তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।”
“ দরকার নাই হেল্প।আমি একাই যাবো।আকাশ ভাইয়া একটু ধরেন।” রিঝ চোখ বাঁকিয়ে তাকায়।তুতুল দ্রুত আবার বলে,
“ লাগবে না।আমি নিজে নিজেই উঠতে পারবো।”
“ ওকে উঠো।আমরাও দেখি।”

উথৌয় এদের কেমিস্ট্রি বুঝার চেষ্টা করছে।তুতুল উঠার চেষ্টা করে আম্মু গো করে চেঁচিয়ে আবার বসে পরে।রিঝ দীর্ঘশ্বাস ফেলে।এগিয়ে এসে কোলে তুলে নেয়।তুতুল হাত পা ছুড়াছুড়ি করছে।কপাট রাগ নিয়ে বলে,
“ আমি নিজেই যেতে পারবো।ছাড়ে দিন।ছাড়েদিন।”
“ ছেড়ে দিবো??”
“ দিন।”
রিঝ ঠোঁট কামড়ে ধরে।হেঁসে উঠে।একটু নিচের দিকে ঝুকাতেই তুতুল চেঁচিয়ে উঠে বললো,
“ না না ফেলে দিবেন না।কোলেই রাখেন।”

আকাশ সিঁড়ি গণনা করে।মোট মিলিয়ে দুইশতো বিশটি সিঁড়ি।যা বেয়ে তারা উপরে উঠেছে।তুতুল খুব আরামেই উপরে উঠেছে।রিঝ তাকে কোলে নিয়েই সম্পূর্ন্য সিঁড়ি পাড়ি জমিয়েছে।মাঝে অবশ্য এক দু’বার থেমেছে।এবার সাবাই হাঁপিয়ে উঠেছে।ক্লান্তিতে শরীর অবশ হয়ে আসছে। সবাই বসে পরে।উথৌয় এখনো চাঙ্গা।রিঝ নিজেই যখন হাঁপাচ্ছে তখন এই ছেলের এতো শক্তি কোথা থেকে আসছে সে বুঝতে পারছে না।উথৌয় আরো উপরের দিকে হাত উঠিয়ে বললো,
“ হ্যালো গাইস এতো তাড়াতাড়ি ক্লান্ত হচ্ছো কেনো??পাহাড় তো আরো উপরে।ওই যে দেখছো এই দিকে।চলো আবার হাঁটা শুরু করো।”

আসমা ক্লান্ত কন্ঠে বললো,
“ এই দিকে তো আর সিঁড়ি নেই।”
“ এবার পাহাড় বেয়ে উঠতে হবে।”
“ মানে কি??তুমি কি পাগল??” আকাশের ঝাঁঝালো কন্ঠ।উথৌয় হাসলো।বললো,
“ স্যরি ব্রো কিছুই করার নেই।উঠতেই হবে।এখন তোমার কাছে দুইটা অপশন আছে এই দুইশো সিঁড়ি পেরিয়ে আবার নিচে নামবা না হয় এই টুকু পথ পাড়ি দিয়ে উপরে উঠবা।চয়েস তোমাদের।”
“ তুমি কি আমাদের ফাঁসাতে চাইছো??” রামিম তেড়ে এসে বললো।উথৌয় উচ্চ স্বরে হেঁসে উঠে বললো,
“ আর্মি ভাই।বিশ্বাস তো করাই যায়।”
“ আর্মি হলে হবা।এদের মাঝেও অনেক গাফলা থাকে।শুধু এরা গোপনীয়তা রাখতে উস্তাদ।”
“ রামিম চুপ কর।চল উপরেই উঠি।দেখি কি আছে উপরে।” রিঝ উপরের দিকে পা বাড়ায়।তুতুল রিঝের গলা জড়িয়ে আছে।সে চুপ করে আছে।কথা বলছে না।শুধু রিঝকে দেখছে।রিঝের শরীর বেয়ে ঘাম ঝড়ছে।গলার হালকা সবুজ রগ গুলো উবো হয়ে উঠা নামা করছে।ঘাম বেয়ে পড়ছে সেই রগ বেয়ে।তুতুল হাত দিয়ে মুছে দেয়।ঠান্ডা হাতের ছোঁয়া পেয়ে কিছু সময়ের জন্য রিঝের হৃদস্পন্দন থেমে যায়।তুতুলের দিকে একপলক তাকিয়ে হাঁটা ধরে।

দীর্ঘপথ শেষ করে সবাই এসে পৌছায় সেই প্রতিক্ষিত বসতিতে।সবার মুখটা হা হয়ে যায়।মাঝারি আকারের বসতি।সব উপজাতি মানুষ।ছোট ছোট মাচাং ঘর।বাচ্চারা ছুঁটা ছুঁটি করছে।দৌড়াচ্ছে।নিজেদের ভাষায় কথা বলছে কেউ কেউ।অদ্ভুত ব্যাপার কারো ঘরে দরজা নেই।সামনে খোলা বারান্দার মতো জায়গা।এদের মনে হয় চোর ডাকাতের ভয় নেই।সব বাঁশের তৈরি।বাঁশের তৈরি ঘর।লাঠির উপরে ভর করে আছে সব ঘর।দেখেই মনে হচ্ছে নতুন এক রাজ্যে এসে পরেছে সবাই।এদের দেখে একবারের জন্যেও মনে হচ্ছে না এরা মুসলিম।পাশের বাঁশের তৈরি মসজিদ থেকে ভেসে আসে আযানের সুর।বিকেলের সূর্য ডুবে যাচ্ছে লাল রস্মি ফেলে দিচ্ছে চারপাশে।হঠাৎ বাতাসের মতো ছুটে আসে একটা ধবধবে সাদা সুন্দরী মেয়ে।এসেই রামিমের উপরে পড়বে ভাব।রামিম সরে যায়।পিছনে থাকে আকাশ।মেয়েটা পরেএকদম আকাশের উপরে।আকাশ মাত্র পাহাড় বেয়ে উঠেছে।ধাক্কা সামলাতে না পেরে সে পড়ে যায়।পিছনে হেলে পড়ে ।মাটিতে ধপ করে পরে।মেয়েটা সহ সে দু’জনেই গড়িয়ে পড়া শুরু করে নিচে।মেয়েটা যেহেতু আকাশের বুকে সে হিসেবে সে ব্যাথা পাচ্ছে না।আকাশ চিৎকার করা শুরু করে।উথৌয় সহ কিছু লোক টেনে ধরে তাকে।আকাশের পিঠ ছিলে গেছে।উথৌয় মেয়েটাকে টেনে নিয়ে রাগি কন্ঠে তাদের ভাষায় বলে,
“ রূমাশ্রি এগুলো কি??এভাবে ছুট লাগালি কেনো??”
“ আমার দোষ নাই দা।উয়েংচু আমাকে ধাক্কা মেরেছে।”
“ কই ওই উয়েংচু??”
“ তুমি কি আর ওকে কিছু বলবা?” কথাটা বলেই যেনো রূমাশ্রি বেকুব বনে গেলো।তাড়াতাড়ি জিভ কেঁটে বললো,
“ না আসলে ও তো ভালো মেয়ে।”
“ যা ভাগ।”

উথৌয় আকাশের কাছে যায়।আকাশ রেগে আগুন হয়ে রূমাশ্রিকে উদ্দোশ্য করে বললো,
“ ও মেয়ে পাগল না কি তুমি??”

রূমাশ্রি প্রথমে ভয় পায়।পরে সাহস নিয়ে বললো,
“ পাগল বললেন কেনো??এতো বড় সাহস হলো কিভাবে??”
“ আমার সাহস বেশিই।বেয়াদপ মেয়ে।”
“ আপনি বেয়াদপ,আপনার চৌদ্দগোষ্টি বেয়াদপ।”

আকাশ তেড়ে যায়।বলে,
“ অসভ্য মেয়ে।”
“ আপনি অসভ্য ছেলে।”
“ আচ্ছা বেয়াদপ তো তুমি।মুখে মুখে তর্ক করো।”
“ আপনিও তো আচ্ছা বেয়াদপ ছেলে।চিনা নেই জানা নেই একটা মেয়েকে তুমি করে ডাকছেন।”

রাগে আকাশের শরীর কাঁপছে।আকাশ কখনো রাগে না।যদিও কোনো কথায় রাগে তাও এতো ভয়ঙ্কর না।কিন্তু আজ সে ভয়ংকর রাগে আছে।রামিম রিঝ দু’জনেই অবাক।আসমা আকাশকে থামাতে বললো,
“ আকাশ চুপ কর।তোর পিঠে অনেক চোট লেগেছে।চল।”

আকাশ প্রকট রেগে আছে।রাগ তার তুঙ্গে।শরীরও যেনো কাঁপছে অনেক।আসমা পিঠে হাত রাখে।আকাশ “উ” করে শব্দ করে।পিঠ থেকে রক্ত ঝরছে তার।আসমা উথৌয় কে বললো,
“ আপনি ওকে একটু কষ্ট করে নিয়ে চলুন।ও প্রচুর ব্যাথা পেয়েছে।তাই রেগে আছে।আর তুতুলের পায়েও ঠান্ডাপানি দিতে হবে।”

আকাশ যাওয়ার সময় রূমাশ্রির দিকে তাকায় তেড়া চোখে।চোখ দিয়েই বুঝিয়ে দিচ্ছে দেখে নিবো।রূমাশ্রি মাছি তাড়ানোর মতো করে মুখের সামনে হাত নাচায়।
________________
এখানে সবচাইতে সুন্দর বাড়িটি উথৌয়ের।সাদা একতলা বিশাল বাড়ি।উথৌয়ের বাবা শৈয়াং মারমা যার নাম এখন পরিবর্তন হয়ে হয়েছে শৈয়াং ইসলাম।এখানের বেশির ভাগ মানুষ নামে মুসলিম।কাজে তেমন কেউই মুসলিম না।তবুও শৈয়াং ইসলাম সবার জন্য মসজিদ,মাদ্রাসা করার পরিকল্পনা করছে।সবছেলে মেয়েদের প্রতিদিন কোরআন শিখানো হয়।ছোট স্কুল আছে।মুল কথা ছোট একটা পাহাড়ি শহর।পাঁচ ছয়টা পাহাড় মিলে এই বসতি তৈরি হয়েছে।শুনা যায় এইসব পাহাড় কোনো একজন মুসলিম কিনে নিয়েছিলেন।তখন তিনি সবাইকে অফার করেছে মুসলিম হতে চাইলে হতে পারবে।উনিই সবাইকে এই ধর্মের দিকে টেনেছে।উনার কাছ থেকে ইসলাম সম্পর্কে ধারনা পেয়ে তাদের মনে হয়েছে এটি শান্তির ধর্ম এবং সবার উপরে এবং সর্বসেরা তাই সবাই দলে দলে এই ধর্মের দিকে এসেছে।কিন্তু মহিলাদের মাঝে এখনো সেই ধর্ম প্রান জাগেনি।তাই তারা এখনো আগের মতোই চলে।কিন্তু কেউ কেউ আবার পর্দা করে।নামাজ পড়ে।কোরআন শিখে এবং শিখায়।কিন্তু নামগুলো তারা তাদের নিয়মেই রাখে।পোশাকে পরিবর্তন করেনি।নিজেদের সংস্কৃতি ঠিক রেখে তারা নিজেদের মতো আছে।সব শুনে একটা অদ্ভুত অনুভুতি হয় সবার।উথৌয় উঠে যেতে যেতে বললো,
“ রেডি হয়ে থেকো সবাই।আজ রাতে উমের গায়ে হলুদ।তোমরা অনেক প্রোগ্রাম মিস করেছো।কালকে বিয়ে হলুদ আশা করি মিস করতে যাবে না।তবে হ্যাঁ তোমাদের একটা কথা বলে রাখি।ভুলে….”

কথা শেষ করার আগেই একটা মেয়ে উথৌয়ের সামনে এসে দাঁড়ায়।এদের মাঝে সবাই সুন্দর।কাউকে কম বা বেশি বলা যাবে না।মেয়েটিও মারাত্নক সুন্দর।সাদা ফুলা গাল।ছোট চোখ।গোল মুখ।লম্বা চুল।গায়ে নীল থামি।উপরে ফতুয়া।ঠোঁটে আঁকা হাসি।উথৌয় তাকিয়েই আছে।তার চোখ সরছে না।আজ অনেক দিন পরে সে বসতিতে এসেছে।কাজের জন্য তাকে নিচেই থাকতে হয় বেশির ভাগ সময়।আর্মি এড়িয়াতে।তার যুগ যদি চলতো তাহলে এই মেয়েটিকে সে প্রতিসকালে দেখতে চাইতো।নিজের ঠিক পাশে।
“ মেয়েটা কে??”

তুতুলের প্রশ্নে উথৌয়ের ধ্যান ফিরে।মেয়েটা মুখের উপরে হাত রেখে হেসে উঠে।উথৌয় মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো,
“ আমার তুমি।”

রিঝ রামিম উঠে দাড়ায়।আসমা হতাশ চোখে তাকিয়ে থাকে।উথৌয় দরজার কাছে ছিলো।মেয়েটা সচেতন চোখে চারপাশে একবার তাকিয়ে নিয়ে উথৌয়কে দু হাতে জড়িয়ে ধরে।উথৌয়ও জড়িয়ে ধরে একদম শক্ত করে।কিছুক্ষণ পরে ছেড়ে দেয় আবার।মেয়েটা লাজুক হাসে।রিঝ নিজের কার্যকলাপে হাসে।উথৌয় বুঝতে পেরে রিঝের পাশে এসে আস্তে করে বললো,
“ ব্রো আমি অন্যের সম্পদে হাত দি না।নিজের সম্পদ আগলে রাখতে পারি।দেশের সেবোক বলে কথা।বেইমানি রক্তে বা ঘামে কোনোটিতেই নেই।”

রিঝ নিচু কন্ঠে বললো,
“ স্যরি ভুল বুঝার জন্য।একজন আগলে রাখার মানুষ হিসেবে তুমি আমারটা বুঝবে।”
“ অবশ্যই অবশ্যই।কিন্তু রামিম ব্রো এমন করলো কেনো বুঝলাম না।”
“ এতো সহজে বুঝবে না।ও গভীর জলের মাছ।”

রামিমের দিকে তাকিয়ে রিঝ বললো।রামিম বুঝলো।গোপনে শ্বাস নেয় সে।
_______________________
বাড়ির সামনে বিশাল বড় রাইফেল ধারি বাহিনি দেখে রিঝ প্রশ্ন করে,
“ উথৌয় তোমার বাবা কি মাফিয়া ডন??”

উথৌয় হেঁসে উঠে বলে,
“ না।তবে এই গ্রামের প্রধান রাজা তিনি।সেই হিসেবে তার নিজেরই একটা শক্তিশালি বাহিনী আছে।”

রিঝ হাসলো।চারপাশ ঘুরে দেখতে শুরু করলো।রামিমও আছে।আকাশ ঘুমাচ্ছে।তার প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছিলো।হয় তো ব্যাথার জন্য।এই গ্রামে সব আছে।ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার,সবজির বাজার,দোকান।ছোট খাটো মার্কেটও আছে।রামিম অনেকক্ষণ পরে মুখ খুললো।সে বললো,
“ ব্রো তোমার গ্রাম তো পুরাই একটা শহর।”
“ বলতেই পারো।”
“ চাইতাছি তোমাদের গ্রামেই থেকে যাই।কি বলো??”
“ অবশ্যই।আমার দরজা খোলা সব সময়ই।”

সবাই ঘুরে দেখা শেষ করে একদম পাহাড়ের কিনারে এসে দাড়ায়।দূরে ঘন জঙ্গল দেখা যাচ্ছে।উথৌয় সতর্ক করে বললো,
“ ভুলেও এই জঙ্গলের দিকে যাবে না কেউ।এটা আর্মি এড়িয়ার বাহিরে।বিপদ মুখিয়ে থাকে এই দিকে।”
“ কেনো??” রিঝ প্রশ্ন করলো।
“ বাদ দাও।আর চলো।সন্ধ্যা হয়ে আসছে।”
“ তুমি এড়িয়ে যাচ্ছো??” রিঝের তিক্ষ্ন চোখ দেখেই উথৌয় সাবধান হয়।সরে যেতে যেতে বলে,
“ কিছু জিনিস এড়িয়ে যাওয়া ভালো।এখন চলো তাড়াতাড়ি।তোমাদের জন্য এবারের পোশাক আমার পক্ষ থেকে।”

রিঝের মন মানলো না।সে ঘন জঙ্গলের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ।রামিমের তাড়ায় পড়ে তাকে যেতে হয়।
_________________
সন্ধ্যার আমেজ এই পাহাড়দের ছুঁয়ে দিতে পারছে না।চারপাশ ঝাঁকঝমক পূন্য আলোয় ভরে উঠেছে।তারার মতো জ্বলছে লাইট।প্রতিটি ঘর সাজানো হয়েছে রূপ কথার গল্পের মতো।হাসলে সবাই এক সাথে কাঁদলে সবাই এক সাথে।এই বাক্য শুধু এই রাজ্যের জন্যেই।সবাই একুই রকমের পোষাক পড়েছে।তুতুলের গায়ে হলুদ থামি।মাথায় হলুদ কাঁচা ফুল।হাতে কাঁচা ফুলের তৈরি চুড়ি।সবার হাতে গলায় একুই ফুলের জিনিস।গায়ের ফতুয়া সবুজ।এক পাশে লতার কাজ।হাতে তৈরি ফুল যেমন হয় তেমনই।ঠোঁট জুড়ে লাল লিপ্টিক।তুতুল তেমন সাজতে পছন্দ করে না।তাই চোখে আর ঠোঁটেই কারুকাজ করা হয়েছে।চোখে সে আজ কাজল পড়েছে।কিন্তু চোখের উপরের অংশে।নিচের অংশ খালি।খোঁপা করা কোঁকড়া চুল।হাতে ফুলের ঝুঁড়ি।সবাই একুই রকমের সাজ সেজেছে।এখানের একটা খেলা আছে।গ্রামের মানুষের তৈরি করা খেলা।পাত্রের চোখ বাঁধা থাকবে।পাত্রীর সমপরিমান দশজন মেয়েকে দাড় করাতে হবে।পাত্রর কাজ এদের মাঝ থেকে নিজের পাত্রীকে খুঁজে বের করা।তুতুল দাঁড়াতে চায়নি।কিন্তু লম্বা মেয়ের কমতির কারণে উমের মা উখেংচিং অনুরোধ করে বলায় সেও দাড়িয়েছে।রিঝ পড়েছে লুঙ্গী।যা তাকে পড়াতে কম করে হলেও দুই ঘন্টা লেগেছে।জীবনে প্রথম সে লঙ্গী পড়েছে তা নয়।আরো একবার বাদ্ধ হয়ে পড়তে হয়েছিলো।তখন সে ছোট ছিলো।সে তো এটা পড়তেই চায়নি।রামিম আর আকাশ জোড় করে পড়িয়ে দিয়েছে।কখন যে খুলে যায় সে ভয়ে সে ভিতরে প্যান্ট পড়েছে।তবুও সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে।মেয়েরা তার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।সিল্কি চুল।সুঠাম বডি।তার সাথে হাফ হাতার ফতুয়া।তুতুল নিজেও বিস্মিত হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিলো।তারপর হুট করেই সবার সামনে হেঁসে উঠে।তার হাসির শব্দে রিঝ তাকায়।দেখে!একফালি আলো এসে পড়েছে তুতুলের মুখোমন্ডলে।রূপ যেনো আরো বাড়িয়ে দিয়েছে সেই আলো।লাল ঠোঁট,মোটা মোটা পাপঁড়ি।পাগল করা হাসি।সব মিলিয়ে এই রূপকথার মতো রাজ্যে নেমে এসেছে এক প্রকৃতি কন্যা।রিঝ বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে তাকিয়ে আছে।সত্যিই কি সে আবার প্রেমে পড়ছে??এই প্রেমে পড়তে পড়তেই কি তার জীবন শেষ হয়ে যাবে?কখনোও কি বলা হবে না,আমি তোমাকে ভালোবাসি!অসম্ভব ভালোবাসি।যার বর্ণনা আমার নিজের কাছেও নেই।
__________________
গল্পের সবচাইতে বড় ধামাকা পরের পর্বে।ইনশাআল্লাহ তাড়াতাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করবো।হয় কালকে।না হয় পরের দিন।কিন্তু এই দুই দিনের মধ্যেই দিবো ইনশাআল্লাহ সব ঠিক থাকলে।
কৃষ্ণচূড়ার রং লাল-২৭.🎈
@হাফসা আলম
_____
এই পর্ব অনেক বড়।তাই দুই অংশে দেওয়া হবে।ক অংশ আর খ অংশ।এক সাথে পোষ্ট করা হবে।দুই দিন পরে দেওয়ার কথা ছিলো।সে কথা রাখতে পারিনি।তাই দুটি অংশ এক সাথে দেওয়া হবে।এবং আজই দেওয়া হবে ইনশাআল্লাহ্।যারা অপেক্ষায় ছিলের তাদের জন্য দুঃখিত।
#চলবে…………
ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here