কৃষ্ণবতীর মায়ায় পর্ব -০৬

#কৃষ্ণবতীর_মায়ায়
#পর্ব_৬
#লেখিকা_সাদিয়া_জান্নাত_সর্মি

ডক্টরের কথা গুলো শুনে আমিন চৌধুরীর আয়ানের জন্য খুব খারাপ লাগলো। একেতো এক্সিডেন্টে এই অবস্থা হয়েছে তার, আবার যদি শোনে যে তসলিমের সবকথা মানার পরেও ওর পরিবার কে তসলিম ছাড়েনি তাহলে না জানি আয়ানের কি অবস্থা হবে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমিন চৌধুরী আই সি ইউ তে ঢুকলেন,ঢুকে দেখেন হসপিটালের নীল পোশাকে আয়ান বেডে শুয়ে আছে। মাথায়, পায়ে ব্যান্ডেজ করা। আয়ানের কাছে গিয়ে বসলেন উনি, তার পর জিজ্ঞেস করলেন,

এখন কেমন আছো আয়ান?
আয়ান আমিন চৌধুরীর কথার উত্তর না দিয়ে জিজ্ঞেস করল, আঙ্কেল আমার পরিবার কে তসলিম আঙ্কেলের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন?
আমিন চৌধুরী আয়ানের প্রশ্ন শুনে চুপ করে রইলেন, আমিন চৌধুরী কে চুপ করে থাকতে দেখে আয়ানের আর কিছু বুঝতে বাকি রইল না যে ও ওর পরিবার কে চিরতরে হারিয়ে ফেলেছে। মাঝে মাঝেই হুমকি দিতো তসলিম আহমেদ আয়ানের পরিবার কে কখনো ছাড়বে না। আমিন চৌধুরী কিছুক্ষণ পর বললেন,দেখো আয়ান তোমাকে এখন নিজেকে,,
আমিন চৌধুরীর কথা শেষ হওয়ার আগেই আয়ান বললো, আমার পরিবার কে তসলিম আঙ্কেল মেরে ফেলেছে এটাই বলবেন তো?
আমিন চৌধুরী মাথা নাড়লেন শুধু। আয়ানের চোখের কোণে পানি জমতে শুরু করেছে, এতো কিছু করলো নিজের পরিবারের জন্যে, একটা নির্দোষ মেয়ে কে দিনের পর দিন কষ্ট দিয়ে গেল তার পরেও বাঁচাতে পারলো না তাদের কে। কাঁদতে লাগলো আয়ান, আয়ান কে কাঁদতে দেখে আমিন চৌধুরী আয়ানের মাথায় হাত রাখলেন, কিছু বললেন না তাকে,কিই বা বলবেন তাকে।
__________________________
আমার মামনি টা এখানে একা একা বসে কি করছে, এমন একটা কথা শুনে নীর চোখ খুলে তাকালো। তাকিয়ে দেখে ফুপা হাসি মুখে সামনে দাঁড়িয়ে আছে,নীর ফুপাকে দেখে খুব খুশি হলো,ফুপির থেকে ফুপা কে বেশি ভালোবাসে নীর।

ফুপা তুমি? তুমি বাসায় কখন এলে?
তসলিম আহমেদ হাসি মুখে বললেন, এই মাত্র এলাম আমি। তুমি কখন এসেছ মামনি?
নীর বললো,
আমি তো অনেক আগেই এসেছি।
নীর কে দেখে তসলিম আহমেদ মনে মনে হাসলেন, ওনার কাজ তো আরো অনেক সহজ হয়ে গেছে।নীর কে এখান থেকেই সরিয়ে নিতে হবে এখুনি নাহলে আমিন যেকোনো সময় নীর কে নিতে চলে আসবে। আমিন এখন সবকিছু জেনে গেছে তাই মেয়ে কে এইখানে রাখবে না আর কিন্তু তাহলে যে আমিন কে তার যোগ্য শাস্তি দেওয়া হবে না,ও যেই পাপ করেছে তার শাস্তি যে ওকে দিতেই হবে তার সাথে নীর কেও জানাতে হবে ওর বাবার আসল সত্যি টা।তাই তিনি নীর কে বললেন,
মামনি তোমার ফুপি আমাকে ফোন করে বলেছিল যে তুমি আজ এসেছো।তাই আমি ভাবলাম তুমি এতো দিন পরে যখন আমাদের বাসায় এসেছো তখন তোমাকে আমি একটা নতুন জায়গায় ঘুরাতে নিয়ে যাবো। তুমি যাবে কি?
নীর তো সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গেল। তসলিম আহমেদের আর কোনো সমস্যাই রইলো না, উনি নীর কে সাথে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন।

আমিন চৌধুরী যতো দ্রুত পারছেন গাড়ি ড্রাইভ করছেন। একটু আগেই হসপিটাল থেকে বেরিয়ে এসেছেন তিনি,পথ যেন ফুরোচ্ছে না ওনার। টানা দুঘন্টা ড্রাইড করার পর বোনের বাসায় পৌঁছালেন তিনি, গাড়ি থেকে নেমে সোজা বাসায় গিয়ে আমেনা বেগম কে জোরে জোরে ডাকতে লাগলেন। এই অসময়ে ভাইয়ের ডাক শুনে আমেনা বেগম তাড়াতাড়ি করে নিচে এলেন,
কি হয়েছে ভাইজান? তুমি হঠাৎ এই সময়ে আমার বাসায় কেন?
আমিন চৌধুরী হন্তদন্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
নীর কোথায়, ওকে এখনি ডেকে নিয়ে আয়।
আমেনা বেগম অনেকটা অবাক হয়ে বললেন,
কেন নীর কে এখন কি দরকার তোমার? সকালেই তো দিয়ে গেলে ওকে।
আমিন চৌধুরী চেঁচিয়ে উঠলেন,,
তোকে সবকিছুর হিসেব দিতে হবে আমাকে? তোকে বলেছি নীর কে ডাকতে তুই নীর কে ডাক। আমাকে প্রশ্ন করছিস কেন?
আমেনা বেগম মাথা নিচু করে বললো,
নীর এখন বাসায় নেই ওর ফুপার সাথে একটু বাইরে ঘুরতে বের হয়েছে।
আমেনা বেগমের কথা শুনে আমিন চৌধুরী চমকে উঠলেন। তসলিম তাহলে ওর আসার আগেই নীর কে নিয়ে গেছে। প্রচন্ড রেগে গেলেন তিনি,,
কীহ? তুই নীর কে তসলিমের সাথে কেন পাঠিয়েছিস?
আমেনা বেগম ভাইয়ের রাগের কারণ বুঝতে পারলো না। নিজের ফুপার সাথে একটু ঘুরতে বেরিয়েছে নীর এতে এতো রাগের কি আছে। অবাক হয়ে বললো,
তুমি এতো রাগ করছ কেন ভাইজান?নীর তো ওর ফুপার সাথেই গিয়েছে এতে এতো রাগ করছ কেন। আমিন চৌধুরী রাগে ফুঁসছেন কিন্তু রাগ টাকে কন্ট্রোল করে বোনের বাসা থেকে বের হয়ে এলেন তিনি। গাড়িতে উঠে বসে ড্রাইভ করতে করতে তসলিম আহমেদ কে ফোন করলেন তিনি। কিন্তু নাম্বার টা বন্ধ দেখালো, আমিন চৌধুরীর মনে ভয় হলো তসলিম আবার নীর কে মেরে ফেলবে না তো?উনি কি করবেন বুঝতে পারছেন না,নীর কে নিয়ে খুব চিন্তা হচ্ছে ওনার।

তসলিম আহমেদ নীর কে নিয়ে একটা বাসার সামনে এলেন।নীর এখানে আসার কারণ বুঝতে না পেরে ফুপা কে জিজ্ঞেস করল,
ফুপা তুমি আমাকে এটা কোথায় নিয়ে এসেছো? তুমি তো বলেছিলে আমাকে ঘুরাতে নিয়ে যাবে।
তসলিম আহমেদ নীর কে বললেন,
এখানেই তো তোমাকে ঘুরাতে নিয়ে এসেছি, ভিতরে চলো অনেক কিছু জানতে পারবে।নীর কিছু না বলে ফুপার সাথে বাসার ভিতরে গেল, ভিতরে গিয়ে নীর চমকে গেলো।এ কি দেখছে সে?
তসলিম আহমেদ নীরের দিকে তাকালেন,নীর চোখ কপালে তুলে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। সামনে একটা ছবি ঝুলিয়ে রাখা আছে, সেটা হচ্ছে নীরের মা আর বাবার ছবি।না সেটা ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে কোনো ছবি নয় আমিন চৌধুরী নীরের মাকে মারছেন তার ছবি। তসলিম আহমেদ নীর কে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, দেখেছো তুমি তোমার বাবার আসল রুপ?
নীর তসলিম আহমেদের দিকে তাকিয়ে বলল, বাবা মা কে মারছে কেন? আর এই ছবি কে তুলেছে?
তসলিম আহমেদ বললেন সে অনেক কাহিনী,যদি তুমি শুনতে চাও তাহলে বলছি শোনো,,,

(চলবে………… ইনশাআল্লাহ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here