৬+৭
ক্যাকটাস 🌵
পর্ব ০৬
Writer Taniya Sheikh -Tanishq
শেষরাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে খালা বেঘোরে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। আমি শিওরে বসে তাকে দেখছি। কী নিষ্পাপ মানবী মুখ অথচ একটু আগেই বিধ্বংসী হয়ে উঠেছিল। খালা যা বললো সেসবের কী আদৌ কোনো ভিত্তি আছে? নাকি সব তার মাথা খারাপের বহিঃপ্রকাশ! আহনাফের সাথে তার সম্পর্ক স্বাভাবিক। আপাতদৃষ্টিতে দেখলে বাদ বাকি সবার সাথেও। তবে এমন কেন বললো খালা? এমনিতেই শরীর বেজায় খারাপ। তারউপর এতো চিন্তা নিতে পারছি না। মাথার ব্যাকসাইড মনে হয় কেউ খামচি দিয়ে ধরেছে এমন অনুভূত হচ্ছে। বাইরে বেরিয়ে ওয়াশরুমে এলাম৷ শাওয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম কতক্ষণ হুশ নেই। যখন সেন্স ফিরল বাথরুমের এককোনে পড়ে আছি কাকভেজা হয়ে। বহুকষ্টে নিজেকে দাঁড় করিয়ে রুমে চলে এলাম। কাপড় ছেড়ে শুয়ে রইলাম খালার পাশে।
কখন ভোর গড়িয়ে দুপুর হলো টেরও পেলাম না। খালা স্বাভাবিক মুখে বসে আছেন শিওরে। আমাকে চোখ খুলতে দেখে বললেন,
” নীরা, এই নীরা, কেমন ঠেকছে এহন?”
” ভালো না খালা। চোখের সামনে আজরাইল দেখছি। মরার আগে একবার মাকে দেখতে ইচ্ছা করছে খুব। মা কী আসবে খালা?” মৃদু স্বরে বললাম। খালার শীতল কোমল হাতটা আমার কপালে রাখল। বললো,
” সব ঠিক হইয়া যাইব। কান্দিস না। তোর মা বাপে কেমনে আইব? এরা তো হুমকি দিছে তোর লগে যোগাযোগ করলে তোরে মাইরা ফেলব। তোর মায়ে পরশুদিন আমার হাত ধইরা কী কান্দন! তোর বাপটাও শুকাইয়া গেছে চিন্তায় চিন্তায়। তুই এমনে ভাইঙ্গা পড়লে তাগো কী হইব? জোর রাখ মনে ছেরি। সময় ঠিক ঘুরব দেখিস। সেদিন চলনের লাইগা তো জোর লাগব নাকি? ওঠ কিছু খাইয়্যা ল।”
” আমার কিছুই ভালো লাগে না খালা। মরে যেতে ইচ্ছা করে। তুমি ঠিক বলছিলে খালা। আমার আর কিছুই নাই অবশিষ্ট। আমি কী নিয়ে বাঁচব বলো? আমার মরাই উচিত খালা। মরাই উচিত।” অসুস্থ আমি টেনে টেনে বললাম কান্নার সংমিশ্রণে। খালা ধমক দিল এবার। বললো,” আমার কী মাথা ঠিক থাকে সবসময়? কী বলতে কী বইল্যা ফেলছি। সেটাই মনে ধইরা আছিস। কী নাই তোর? মনে জোর ছাড়া সবই আছে তোর। এতো ছোট ভাবোস কেন নিজেরে তুই? ফারদার এমন কথা মুখে আনবি তো চোপার মধ্যে দিমু একটা। উইঠা ব। খাওন লইয়া আইতাছি।”
খালা উঠে গিয়ে খাবার নিয়ে আসে আমার জন্য। আমি কিছুই খেতে পারলাম না। তরকারির গন্ধে বমি করে দিলাম। খালা উপায়ন্তর না দেখে ভাতে পানি মিশিয়ে চটকে মুখে তুলে দিল। এবার জোর করে কিছুটা খেয়ে নিলাম আমি। তবুও দুই গালের বেশি খেতেই পারলাম না। খালা বমি পরিষ্কার করে খাবার প্লেট উঠিয়ে চলে যাবে তখনই বললাম।
” গতকাল রাতে কী হয়েছিল তোমার খালা?”
খালা সচকিত হয়ে আমার দিকে তাকাল। আমি দূর্বলতায় ভালো করে তাকাতেও পারলাম না খালার দিকে। তবুও বুঝলাম খালা রেগে গেছে আমার কথা শুনে৷ খালা যেতে যেতে কঠিন গলায় ছোট্ট করে জবাব দিল,
” কিছুই না।”
রাফসান একহাতে সিগারেট অন্য হাতে ভার্জিনিয়া উলফের লেখা মিসেস ডালওয়ে নভেলটা পড়ছিল। গভীর মনোযোগে সাথে বইটি পড়ছিল রাফসান। সিগারেট পুড়ে পুড়ে অর্ধেক, তখন টেনে নিল এক নিঃশ্বাসে। নাসিক্যছিদ্র হয়ে ধোঁয়া কুন্ডলী পাকিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো। সম্পূর্ণ ডুবে গিয়েছিল বইয়ের পাতায় সে। রাফসানের মনোযোগ ভঙ্গ হলো মায়ের আগমনে।
” কী করছিস বাবু?”
” তেমন কিছুই না মা। এই একটা বই পড়ছিলাম। বসো।” বইটা একপাশে রেখে মা’কে বসতে বললো রাফসান। ততক্ষণে সিগারেটের শেষ অংশটুকু ফুঁকে অ্যাশট্রেতে ঠেঁসে নিভিয়ে ফেললো সে। রাহেলা বানু চোখ কপালে তুলে অ্যাশট্রের দিকে তাকিয়ে বললো,
” এতো সিগারেট খেয়েছিস তুই? এতো কেউ খায়?”
রাফসান জবাব দিল না। শুধু একচিলতে হেঁসে মায়ের কোলে মাথা রাখল। মায়ের হাতটা মাথার উপর রেখে বললো,
” একটা কথা বলি মা!”
” বল।” ছেলের চুলে বিলি কাটতে কাটতে জবাব দিলেন রাহেলা।
” আমরা কালই চলে যাব এখান থেকে।”
” কেন? কিছু হয়েছে কী?”
রাফসান বললো,
” আমার এদের একটুও পছন্দ হয় না। একপ্রকার ঘৃণা হয় সবগুলোকে দেখলে। প্লীজ মা! চলো কালই চলে যাব। তুমি ফুপিকে কিছু একটা বুঝিয়ে বলো।”
” আচ্ছা ঠিক আছে। আমি বলব আঞ্জুকে। তার আগে আমাকে এটা বল। কাল সারাদিন কিছু খেলি না কেন?”
” খেয়েছি তো। বাইরে খেয়েছি।”
” কেন? বাইরে খেলি কী কারনে ? কতো যোগাড়জান্তি করেছিল তোর জন্য। অথচ তুই ছিলিই না। রাতেও খেয়ে এলি।পছন্দ করিস না ভালো কথা। সেটা বুঝানোর প্রয়োজন কী। হাজারহোক মুরুব্বি তো? এমন করাটা উচিত হয়নি তোর।” রাহেলা বানু গম্ভীরমুখে বললেন।
রাফসান এবারও জবাব দিল না। দু’হাতে মাকে জড়িয়ে মায়ের কোলে মুখ লুকিয়ে নিল। রাহেলা ছেলের নিরুত্তরে মনে মনে রাগ করলেন। তিনি জানেন রাফসান যা বলতে চাইবে না। হাজার জোর করলেও সে বলবে না। মাঝে মাঝে ছেলের এমন ঘার ত্যাড়ামি স্বভাবে দারুন বিরক্ত হোন তিনি। অনেক সময় রাগ প্রকাশ করলেও এখন করলেন না। চুপ রইল মা ছেলে দু’জনই।
আজ যেতে চেয়েও যাওয়া হলো না রাফসানের। সকাল থেকেই ঝড়বৃষ্টি হচ্ছে। রাফসান করিডোরে হেলান দিয়ে সিগারেট টানছিল। সেই সময় একটা বাইক এসে থামল বাড়ি সংলগ্ন সরু রাস্তাটায়।কালো,নীল মিশেলের বাইকটা রাফসান আগেও দেখেছে। হ্যাঁ এ সেই অগ্নিশিখা মুগ্ধ কন্যার বাইক। কিন্তু এখানে থামল কেন?
মেহের গোপন সূত্রে অবশেষে জানতে পেয়েছে মেয়েটির ঠিকানা। এই সেই বাড়ি! প্রচন্ড বৃষ্টি উপেক্ষা করে ছুটে এসেছে সে এই বাড়িতে। আজই ভেতরে যাবে না। আগে শিওর হতে হবে তাকে। এই বাড়িই সেই বাড়ি কিনা! হেলমেট খুলে পড়নের ওয়াটারপ্রুফ জ্যাকেটের হুডি পড়ে নিল মেহের। প্রচন্ড বৃষ্টি মাথায় করে বাইক থেকে নামল। সতর্কতার সাথে ঘুরে ঘুরে দেখছিল প্রাচীরে ঘেরা বাড়িটি। তখনই চোখে পড়ল দোতলায় দাঁড়ানো পুরুষটিকে। বৃষ্টি তোড়ে দূরের মানুষটাকে ঠিকমতো দেখতে পেল না মেহের। লোকটা তার দিকেই তাকিয়ে আছে। পাছে সকল শ্রম পন্ডুর হবে ভেবে দ্রুত চলে যাওয়ার মনস্থির করল সে। বাইক দাঁড় করিয়ে অনেকটা দূর চলে এসেছিল মেহের। দ্রুত পা চালিয়ে বাইকের কাছে এসে, ফের বৃষ্টি মধ্যে পিটপিটিয়ে উপরে তাকায় মেহের। না লোকটি সেখানে আর নেই। যাক বাবা! স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বাইকে চড়ে বসল মেহের। নেক্সট টাইম আরেকটু প্রস্তুতি নিয়ে আসতে হবে এখানে।
” হ্যাঁলো মিস লেডি জেমস বন্ড। এই তো এলেন। এখনই চলে যাচ্ছেন যে?”
সবেমাত্র বাইক স্ট্রার্ট দেবে তখনই পেছন থেকে সেই লোকটি কথা বলে উঠল। মেহের ভয় না পেলেও ঘটনার আকস্মিকতায় ঘাবড়ে গেল। একটু অদূরে ছাতা মাথায় দাঁড়ানো পুরুষটির আপাদমস্তক দেখে নিল এক লহমায়। সুপুরুষ বলতে যা বোঝায় লোকটা তাই। বাহ্যিক রূপের এমন অনেক সুপুরুষই মেহের দেখেছে জীবনে। যাদের বাহ্যিক রূপটাই শুধু সুন্দর। ভেতরটা ভয়ংকর অসুন্দরে ভরা। আর কে জানে এই সেই রেপিষ্ট হয়তো! মেহের রাফসানকে অগ্রাহ্য করে বাইক স্ট্রার্ট দিল। বাইকের ভটভট শব্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। রাফসান ছাতা মাথায় করে একদম বাইকের সম্মুখে দাঁড়িয়েছে। ঠোঁটে তার ভুবন ভোলানো মুচকি হাসি। ভুবন ভুললেও মেহের এই মুহূর্তে ভুললো না। বেশ রাগী গলায় বললো,
” সমস্যা কী আপনা? পথ আগলে দাঁড়িয়েছেন কেন?”
” ভয় পেলেন নাকি?” রাফসান বললো
” মেহের কাওকে ভয় টয় পায় না। পথ ছাড়ুন।”
” রেগে গেলেন দেখছি।”
” রাগার কথায় নয় কি? ওহ! আপনার কী ধারণা ছিল আমি লালালালা করব আপনার প্রেমে পড়ে। বিমুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকব আপনার দিকে। তারপর আমাদের মধ্যে হিহি হাহা হবে আর সবশেষে ভালোবাসা কাছে আসা তাই না?” মেহের কটমট করে তাকায়। রাফসানের খুব হাসি পেল এবার। কোনোমতে হাসি সংবরন করে বললো,
” এমনটা হলে কী দোষের কিছু হবে?”
” ঐ মিয়া ফাজলামি করেন ? সরুন বলছি নয়ত মেরে মুখের নকশা পাল্টে দেব। ক্যারাটেতে ব্লাক বেল্টধারি আমি৷ সো ভালোই ভালোই সটকে পড়ুন।” মেহের বাইকের সামনের চাকা এঁকেবেকে রাফসানের পায়ের উপর উঠিয়ে দিয়েছিল প্রায়। রাফসান চট করে পিছিয়ে বলে,
” আরে আরে করছেন কী? আমি জাস্ট ফান করছিলাম। রিলাক্স মিস লেডি জেমস বন্ড। রিলাক্স। ”
” রিলাক্স মাই গাড়ির চাকা। ঐ মিয়া কে আপনি? বিয়াই না আমার দুলাভাই?”
” কোনোটাই না।”
” তাহলে ফান করতে আসেন কোন অধিকারে? নাকি মেয়ে মানুষ দেখলে ফান করতে মন চায়। আপনার তো চারিত্রিক সমস্যা আছে দেখছি।”
” আপনি দেখছি মিসানড্রিস্ট। এতোটাও পুরুষ বিদ্বেষী হওয়া উচিত নয় ম্যাডাম। আর সবাইকে এক কাতারে তুলে ভুল বুঝাটাও ভারি অন্যায়।
” কোনো ভুলটুল বুঝছি না। আপনি মিয়া সুযোগবাদী নারী শিকারী। পথ ছাড়ুন। নয়ত একদম।” মেহের রেগে ঘুষি তুলে বলে। রাফসান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কপাল চুলকে বলে,
” আপনি দেখছি সাংঘাতিক ডেঞ্জারাস মেয়ে। আচ্ছা যা হোক। যেটা জিজ্ঞেস করতে এসেছি করে ফেলি। নয়ত ঘুষি টুষি মেরেও দিতে পারেন৷”
” দ্রুত বলুন।”
” মেয়েটিকে খুঁজে পেয়েছেন? ”
রাফসানের প্রশ্ন শুনে মেহের চমকে যায়। ভ্রুকুটি করে বলে,
” কোন মেয়ে?”
” ঐ যে ঐদিন থানায় যার ঠিকানা খুঁজতে গিয়েছিলেন। কনস্টেবলের সাথে তর্ক করতে দেখেছিলাম সেদিন আপনাকে মেয়েটার ব্যাপারটা নিয়ে। আর আজ এখানে দেখলাম। ভাবলাম জিজ্ঞেস করি মেয়েটার ব্যাপারে। বাই দ্য ওয়ে আমি মোটেও খারাপ প্রকৃতির পুরুষ নই। আমি রাফসান আহমেদ। পেশায় একজন ব্যারিস্টার। থাকি চিটাগং আর এটা হলো আমার ফুপার বাড়ি। এখনও নিশ্চয়ই আগের ধারণাটাই পোষন করবেন না আমার সম্পর্কে আশা করি। নাকি করবেন?” রাফসান ঠোঁট কামড়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেহের কিছুটা বিব্রতবোধ করল। হাসার বৃথা চেষ্টা করে বললো,
” আ’ম সরি। বাট দোষটা কিন্তু আপনারই ছিল। ওভাবে মজা কেন করলেন? আসলে আমার পেশাটায় এমন যে সবাইকে সন্দেহের চোখে দেখি। তারউপর আজকাল কী হচ্ছে মেয়েদের সাথে নিশ্চয়ই জ্ঞান রাখেন?”
” ইটস ওকে। আ’ম সরি অলসো। আসলে আপনার পার্সোনালিটি প্রথমবার দেখেই মুগ্ধ আমি। কারণ আপনার মতো স্ট্রেইট ফরওয়ার্ড কিছুটা আমিও। নিজের মতো একজনকে দেখে পরিচিত হওয়ার লোভ দমন করে রাখতে পারলাম না। সেদিন মিস করলেও আজ আবার আপনাকে চোখের সামনে পেয়ে কথা না বলে ছাড়তে ইচ্ছা করল না। তাই মজাচ্ছলে পরিচিত হতে চাইলাম৷ এটা নিশ্চয়ই দোষের নয়।” রাফসান চোখ ছোট করে বলে। মেহের ঠোঁট টিপে হেঁসে বলে,
” দোষের আবার দোষের না।”
” সেটা কেমন?” মেহের কিছু বলবে তার আগেই রাফসান বলে,
” এই যা! এমন ঝুম বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে রেখেছি আপনাকে। যদি কিছু মনে না করেন তো প্লীজ কাম ইনসাইড। ভয় নেই বাড়িসুদ্ধ লোক আছে৷ যদিও জানি ভয় টয় মিস লেডি জেমস বন্ড মোটেও পায় না।” রাফসান মেহের চোখাচোখি করে সশব্দে হেঁসে ওঠে। মেহের হাসতে হাসতেই বলে,
” আপনার মতো স্পেশাল ব্যারিস্টার সাহেবের আতিথ্য বাতিল করে পরে আফসোস করতে চাই না। চলুন যাওয়া যাক।” রাফসান ছাতাটা এগিয়ে নিয়ে পাশাপাশি হাঁটছে মেহেরের। যেতে যেতেই রাফসান জিজ্ঞেস করল,
” মেয়েটার কী কোনো খোঁজ পেলেন?”
মেহের সত্যিটা বললো না। সে নিজে এতোসহজে রাফসানের আতিথ্য গ্রহণ করেছে শুধুমাত্র এ বাড়ির সত্যটা জানতে। রাফসান সেধে এসে পরিচিত হয়ে ভালোই হয়েছে। তবে কিছু কনফিউশনও কাজ করছে মেহেরের ভেতর। নিজের ভাবনা চিন্তা একপাশ করে রাফসানকে জবাবের অপেক্ষায় না রেখে মেহের বললো,
” না পাই নি। তবে খোঁজ চলছে।”
” হেল্প লাগলে বলবেন। আসলে আপনার সাথে যেচে পরিচিত হওয়ার এটাও একটা কারণ। মেয়েটার জন্য কেন যেন প্রচন্ড খারাপ লাগা অনুভব করছি সেদিন বিষয়টা জানার পর থেকে।” রাফসানকে গম্ভীর দেখাল এই মুহূর্তে।
” আমি তো ভেবেছিলাম আমার উপর ইম্প্রেস হয়ে পরিচিত হয়েছেন বুঝি৷ এখন দেখছি ব্যাপারটা ভিন্ন। ” মেহের কিছুটা মজা করে বললো।
” ব্যাপারটা তেমন হলে কী খুশি হতেন?”
” খুশি আর হতে পারলাম কই? আপনি তো সব খুশি মাটি করে দিলেন। ”
” ভারি হিংসুটে মেয়ে দেখছি আপনি।”
” তাই নাকি?” মেহের চমকিত হওয়ার ভান করল।
” অবশ্যই।” রাফসান হেঁসে বললো।
” হবোই বা না কেন বলেন? নারী বলে কথা। নারী কখনোই আপন ভালোবাসার পুরুষের ভাগ দেয় না।”
” আফসোস তেমন নারীর ভালোবাসা হতে পারলাম না এখন পর্যন্তও।”
” এখন পর্যন্তও?” মেহের চোখ ছোট করে তাকিয়ে মুচকি হাসে। রাফসান দৃষ্টি সামনে রেখে বলে,
” বললাম তো ওটা জাস্ট ইমপ্রেস। ইমপ্রেস আর প্রেমে পড়া কিন্তু এক নয় ম্যাডাম। দু’টো ভিন্ন।”
” ইশশ! ব্যাড লাক।” মেহের আবারও হাসে। রাফসান এবার লজ্জা পায় কিছুটা। দুজনে কথা বলতে বলতে বাড়ির ভেতরে চলে আসে। রাফসান ফুপি এবং মায়ের সাথে মেহেরকে পরিচয় করিয়ে দেয়। পরিচয় পর্বে রাফসান মেহেরকে ফ্রেন্ড বলে পরিচয় দেয় সবার সামনে। মেহেরও নির্দিধায় স্বীকার করে রাফসানের বন্ধুত্ব। রাফসানকে এইটুকু সময়েই দারুন লেগেছে তার। বন্ধুত্ব অস্বীকার করার প্রশ্নই ওঠে না। তার উপর কথা বলতে বলতে জানতে পেরেছে মেহের রাফসানের কলেজ ফ্রেন্ডের কাজিন৷ বয়সের দিক দিয়েও অনেকটা কাছাকাছি এজে তারা। সুতরাং অল্প সময়ের মধ্যেই ভালো একটা সম্পর্ক তৈরি হলো দুজনের মধ্যে।
রাহেলা বানু আড়াল থেকে একধ্যানে দেখে যাচ্ছে মেহেরকে। মেয়েটাকে তার বেশ মনে ধরেছে। তারউপর তার ছেলে যেভাবে হেঁসে হেঁসে কথা বলছে, তার পোক্ত বিশ্বাস তার ছেলেও এই মেয়েকে পছন্দ করেছে। রাহেলা বানুর আনন্দ দেখে কে আর! তার ছেলে অবশেষে সংসারি হবে। নাতি পুতিতে ঘর ভরে যাবে। তার সকল আশা পূর্ণ হতে যাচ্ছে অতি শীঘ্রই বুঝি।
চলবে,,,
ক্যাকটাস 🌵
Writer Taniya Sheikh -Tanishq
পর্ব ০৭
নীরার শয্যাশায়ী হওয়ার কথা শোনার পর থেকেই চটেছে আঞ্জু। এই নীরা এ বাড়ি আসার পর অব্দি অসুস্থ। এমন শুয়ারা কেন সে? তারাও তো বউ হয়ে এসেছে এ বাড়ি। একটা বাড়ির বউ হয়ে টিকে যাওয়া এতো সহজ? আঞ্জু জীবনে প্লেটটা পর্যন্ত ধুয়ে খেত না। এ বাড়ি এসে তাকে রান্না ঘর মোছা সব করতে হয়েছে। তাই কী সে ওমন রোগা পটকা হয়ে দিনরাত বিছানায় পড়ে থাকত নাকি? আফনাফের কর্মকাণ্ডে বেজায় নাখোশ আঞ্জু। বাপটা যেমন মেয়ে মানুষ দেখলে ছোক ছোক করত। ছেলেটাও ওমন করে। ওকিন্নি ফকিন্নি বাছে না। যারে পায় হামলায়া পড়ে। পড়ছে তো পড়ছে বউ করার কী দরকার? এই মেয়ের কিছুই আঞ্জুর পছন্দ না। বিয়ে হয়েছে অথচ তার ছেলের প্রতি বিন্দুমাত্র মোহাব্বত দেখে নি সে। সারাদিন মুখটা আঁধার করে রাখে। স্বামীরা হাজার বদ হোক সেটা সয়েই চলতে হবে। চলতে চলতে একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। সংসার ধর্মে ধৈর্য্য হচ্ছে খুঁটি। ধৈর্য্যের বালাই নেই আবার একটুর থেকে একটু হলেই অসুস্থ হয়ে পড়ে মরছে৷ এই মেয়ে কে বউ করে রাখা যাবে না। আহনাফকে কানপড়া টানপড়া যা দেওয়ার দিয়ে জলদি বিদায় করতে হবে। এমন রোগা শরীরের বউ সংসারের জন্য অলক্ষুণে। অলক্ষুণে বউ ঘরে পুষে সংসারের অমঙ্গল করবে এমন বোকা আঞ্জু না। সবচেয়ে ভালো হয় এ যাত্রায় নীরা মরে গেলে। ভালোই ভালোই আপদ বিদায় হলে আঞ্জু ফকির খাওয়াবে বলে মানত করে।
রাফসানের রুমে বসে গরম চায়ে চুমুক দিয়ে জানালার বাইরের বৃষ্টি উপভোগ করছিল মেহের। আটাশ বছরের জীবন তাকে অনেক কিছু দিয়েছে যেমন তেমনি কেড়েও নিয়েছে। আজ সে সফল সাংবাদিক। তাছাড়া টুকিটাকি লেখালেখিও করে সমাজের নানা অসংগতি নিয়ে৷ শারমিন বলছিল একটা উপন্যাস লিখতে এবার৷ উপন্যাসের জন্য কাহিনি ভাবছে তারপর থেকেই৷ বান্ধবী এবং রুমমেট শারমিনের কথা মনে পড়তেই সোজা হয়ে বসে মেহের। রাফসানের সাথে আড্ডায় মেতে সে আসল উদ্দেশ্যেই ভুলে বশেছিল এতোক্ষন। এই বাড়ি আসার উদ্দেশ্যে তো নীরা। তাকে তো খুঁজতে হবে আমাকে। না জানি মেয়েটা কী অবস্থায় আছে! শারমিনকে দেওয়া কথা আমাকে যে রাখতেই হবে। মেহের চায়ের কাপটা নামিয়ে রাখে সেন্টার টেবিলে। উঠে দাঁড়াতেই রাফসান রুমে ঢোকে।
” সরি এতোক্ষন তোমাকে একলা বসিয়ে রেখেছি।” রাফসান মৃদু হেসে বললো
” ইটস ওকে।”
মেহেরকে চিন্তামগ্ন দেখে এগিয়ে এলো রাফসান। ভ্রুকুটি করে বললো,
” এনিথিং রঙ মেহের?”
” উমম। ভাবছি বলব কি না? তুমি তো এখন দূরের কেউ না। আরিফের ফ্রেন্ডস মানেই আমার ফ্রেন্ডস তাছাড়া তুমি মানুষটা খুব ভালো।”
” এতো কম সময়ে ভালোর সার্টিফিকেট দিয়ে দিলে যে? মানুষকে চেনা কী এতোই সহজ?”
” একদম না৷ মানুষ আকাশের মতো। ক্ষণে ক্ষনে বদলায়। আকাশ পূর্বাভাস দিলেও মানুষ তেমনটা দেয় না। নিষ্ঠুরভাবে বদলে যায় হঠাৎ করেই। তুমিও বদলাবে। তবে সেই বদলানোটা আমি ঠিক ধরে নেব দেখো। আর শোনো ব্যারিস্টার সাহেব, মানুষ চিনতে পারা যেমন দুরূহ ঠিক তেমনি আপন মানুষ চেনাটা মোটেও সময়সাপেক্ষ নয়। অন্তত তোমার ক্ষেত্রে তো নয়ই।” মেহের বললো
” যাক অবশেষে কোনো নারীর আপন তো হলাম৷ এই বা কম কিসের?” রাফসানের মুচকি হাসি দেখে মেহের হাসে। বলে,
” আমি কিন্তু এখনও ব্যাড লাকেই বসবাস করছি মি. ব্যারিস্টার!” রাফসানকে কথার খোঁচা দিল। রাফসান কথা ঘুরিয়ে বললো,
” আচ্ছা তাহলে তোমার বায়োডাটা টা দিয়ে যাও। দুদিনের মধ্যেই যোগ্য গুড লাক খুঁজে তোমার হাতে তুলে দেব।”
” তবুও নিজের কথা বলবেই না? কেমন নিষ্ঠুর তুমি ব্যারিস্টার। ” কপট রাগ দেখাল মেহের
” নিষ্ঠুরতার অপবাদ দিয়ে আমাকে বদনাম করো না ললনা। শেষে বউ খুঁজে পাবো না। বেচারী আমার মা বউ দেখবে বলে কতো বাসনা মনে বেঁধেছে। তোমার বদনামে তার সব বাসনা তছনছ হয়ে যাবে।” মেহের চোখ ছোট করে তাকিয়ে ঠোঁট টিপে হাসছে। রাফসান সে দৃষ্টি উপেক্ষা করে গিয়ে বসল বিছানায়। মেহের সেখানে দাঁড়িয়ে দু’হাত ভাঁজ করে বললো,
” আন্টিকে কী বলব? তার ফিলিংস নিয়ে মজা করা হচ্ছে এখানে।”
” কী বলবে মা?”
আচমকা রাহেলা বানুর রুমে প্রবেশে মেহের রাফসান দু’জনই চোখাচোখি করে। দুটোকে চোখাচোখি করতে দেখে রাহেলা বানু ভ্রুকুটি করে ফের জিজ্ঞেস করে,
” কী হলো বললে না আমাকে কী বলবে?”
” তোমার বউ খোঁজার মিশন নিয়ে কথা হচ্ছিল আমাদের মধ্যে।” মেহেরকে ইতস্তত করতে দেখে রাফসান জবাব দিল
” ওহ! আর বলিস না রে মা ওর বিয়ের কথা। এতো মেয়ে দেখালাম তবুও ওর পছন্দ হয় না। আল্লাহ জানে মৃত্যুর আগে ওর বিয়েটা দেখে যেতে পারব কিনা।” হাপিত্যেশ করতে করতে রাফসানের পাশে বসে রাহেলা বানু। মেহের রাফসানকে এক চোখ টিপে মা ছেলের মাঝে বসে পড়ে। রাহেলা বানুকে জড়িয়ে ধরে বলে,
” ডোন্ট ওয়ারি আন্টি। এতোদিন আপনি একা যা পারেন নি এখন আমরা দুজনে মিলে তা সম্ভব করবোই করব কী বলেন?
” আমার আর বলা না বলা রে মা। ঐ তো মন থেকে রাজি হয় না।”
” ব্যাপার কী রাজি হও না কেন বিয়েতে? সেক্সুয়াল প্রবলেম টবলেম আছে নাকি? থাকলে বলো? কলিকাতা হারবাল অর্ডার করি। এক ফাইলই যথেষ্ট। ” রাফসানের কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলে ঠোঁট টিপে হাসে মেহের। রাফসান শকড হয়ে বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে থাকে ওর দিকে। তা দেখে হাসতে হাসতে পেট ব্যথার উপক্রম মেহেরের। রাহেলা বানু অবাক চোখে দেখছে ছেলে এবং ছেলের হবু বউকে। এই মেয়েকেই তিনি ছেলের বউ বানিয়ে দম ছাড়বেন বলে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেন। তাতে দুনিয়া উলোট পালোট করা লাগলে তাও করবেন। এমন খোশ মেজাজি একটা বউমা পেলে তার ঘর আলোয় আলোয় ভরে উঠবে। রাহেলা বানু দিবাস্বপ্ন দেখতে আরম্ভ করলেন ওদের দুজনকে পাশাপাশি দেখে।
নিজেকে সামলে নিয়ে চাপা স্বরে বলে,
” এখন কিছু বললেই তো বলবে পুরুষ জাতের চরিত্রে দোষ আছে। তোমাদের বেলায় তো সাত খুন মাফ। মেয়ে বলে কথা হুমম।”
রাফসানের কথার ইঙ্গিত বুঝে লজ্জা পায় মেহের। সে ছেলেদের সাথে উঠাবসা করতে করতে ভুলেই গিয়েছিল সব কথা সব জায়গায় এবং সবার জন্য না। প্রসঙ্গে এড়াতে মুখ নিচু করে বললো,
” তুমি ব্যারিস্টার ভারি বেরসিক। যাও কথা নেই তোমার সাথে।” রাফসানে দিকে ভেংচি কেটে রাহেলার কাঁধে মাথা রাখে মেহের। রাফসান উঠে জানালায় পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়ায়। রাহেলা পরম আদরে মেহেরের মাথায় হাত বুলিয়ে ছেলের নজর পর্যবেক্ষণ করে। তার ছেলে মেহেরকে দেখেই মুচকি হাসছে। রাহেলা পুনরায় হাজারটা স্বপ্ন বোনে মেহের এবং রাফসানকে স্বামী স্ত্রী জ্ঞান করে।
তিনজনে গল্প করার এক ফাঁকে রাহেলা মলিন মুখে বললো,
” আমার ননদ দুঃখ করছিল তোমাকে তেমন আদর আপ্যায়ন করতে পারল না বলে। বলি কী আজ রাতটা থেকে যাও। কাল কাজের মেয়েটা বোধকরি সুস্থ হয়ে যাবে৷ মেয়েটার হাতের রান্না দারুন বুঝেছ? কাল বরং পিঠা পুলি বানাতে বলব।”
” না থাক আন্টি। আমি নেক্সট টাইম চিটাগং গেলে সেখানেই কিছু দিন বেরিয়ে আসব। অফিশিয়াল কাজে মাঝে মধ্যে ঐদিকটাই যাওয়া হয়। এবার না হয় আপনাদের উদ্দেশ্য করেই যাব।”
” তা তো যাবে অবশ্যই। কিন্তু তোমাকে তেমন আদর যত্ন করতে পারলাম না আজ। এই নীরার অসুখ হওয়ার আর সময় পেল না।” রাহেলা মুখ কালো করে বললো।
নীরা, নামটা শোনামাত্রই মেহের চমকিত হয়ে তাকায় রাহেলার দিকে। বিস্মিত হয়ে বলে,
” নীরা কে আন্টি?”
” কে আবার? এই বাড়ির কাজের মেয়ে।”
” ও কী গতমাস থেকে এখানে আছে?”
” তাই তো বললো আঞ্জু। কেন বলো তো?” মেহেরের উদ্বিগ্ন চেহারা দেখে রাহেলা বানুর সাথে সাথে রাফসানেরও কৌতূহল জন্মে। মেহের কোনোদিক খেয়াল না করে মোবাইলে অন করে। ঘরময় পায়চারি করছে মোবাইল কানে নিয়ে। প্রচন্ড অস্থির দেখাচ্ছে এই মুহূর্তে তাকে। যাকে মোবাইল করেছে সম্ভবত তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। রাফসান এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে,
” কী হয়েছে মেহের?”
মেহের মোবাইল কান থেকে নামিয়ে ঘুরে দাঁড়ায় রাফসানের দিকে। অস্থিরতা কিছুতেই কমছে না তার। রাফসানকে কী করে বলবে ভেবে পাচ্ছে না সে। এদিকে রাফসান এবং রাহেলা বানু তাকে অস্থির হতে দেখে চিন্তিত। মেহের ঠোঁট সরু করে শ্বাস ছেড়ে নিজেকে শান্ত করার আপ্রাণ চেষ্টা করে। পুরোপুরি শান্ত না হতে পারলেও, সে থেমে থেমে সব খুলে বলে রাফসান এবং রাহেলা বানুকে। সব শুনে রাফসান থমকে যায় একেবারে। রাহেলা সুর টেনে বলে,
” তাই তো সেদিন ওমন করে জবাব দিল আমাকে মেয়েটা। আহারে বেচারী। আমার তো সেদিনই সন্দেহ হয়েছিল ওর বিষয়ে। এই আঞ্জুর ছেলেটা এতো হাড়ে বজ্জাত! তা এখন কী করতে চাও তুমি? ”
” আন্টি আমি বনানী থেকে এখানে এসেছি শুধুমাত্র নীরাকে উদ্ধার করবো বলে। ওর আপন খালাত বোন আমার রুমমেট প্লাস বান্ধবী। ঐ আমাকে বলেছে নীরার বিষয়ে। খুব কাঁদছিল বোনের জন্য আমার বান্ধবীটা। আন্টি প্লীজ আমাকে হেল্প করুন। নিয়ে চলুন ওর কাছে।”
” আমি! আমি কিভাবে,,,!” রাহেলা কথা সম্পূর্ণ না করেই রাফসানের দিকে তাকায়। রাফসানের যেন কোন হুশজ্ঞান নেই এই ক্ষণে। ভুল ধারণা পোষন করে কিসব ভেবেছিল সে মেয়েটি সম্পর্কে। কতো মন্দ কথায় না মনে মনে বলেছিল। সত্য যে এতোটা বিভৎস হবে কে জানত? রাফসান যাকে না দেখেই যার কষ্টে কষ্ট অনুভব করছিল সে যে এই নীরায়! নীরা তার চোখের সম্মুখে অত্যাচারিত হলো, নিগৃহীত হলো আর সে কিনা ছিঃ। রাফসান অনুতপ্তের দহনে জ্বলছে। তারই আপনজন দ্বারা কোনো মেয়ে ধর্ষিত। প্রতিনিয়ত তাকে সয়তে হচ্ছে অমানুষিক যন্ত্রণা। লজ্জা হলো আহনাফের কাজিন হওয়ায় আজ রাফসানের।দৃষ্টি জানালার বাইরে রেখে থমথমে গলায় মেহের কে বললো,
” তুমি যা চাও তাই হবে মেহের। নীরা যদি তোমার সাথে যেতে চায় অবশ্যই যাবে। আমি সে ব্যবস্থা করে দেব৷ চলো!”
” কিন্তু বাবু,,,”
” তুমি কী কিছু বলতে চাও মা? যা খুশি বলো আমি মেনে নেব। শুধু এই কাজে আমাকে বাঁধা দিও না মা। লজ্জায় আমার শিরনত হয়ে যাচ্ছে। এই লজ্জা কেন পেলাম আমি মা? কেন আহনাফের পাপ আমাকে লজ্জিত করল? অবশ্য আমারও তো কিছু দোষ আছে। আমিও দোষী নীরার কাছে। আজ সব দোষের বিচার হবে। কঠিন বিচার।মেহের! ”
রাফসানের কঠিন দৃষ্টি, কঠিন গলার স্বর উপেক্ষা করার সাহস রাহেলা বানুর হলো না৷ তিনি দমে গেলেন। রাফসান কালবিলম্ব না করে দ্রুত পায়ে বেরিয়ে এলো রুম ছেড়ে। পিছু পিছু মেহের এবং রাহেলা বানুও। আঞ্জু বসার ঘরে বসে পা তুলে টিভি দেখছিল। রাফসান সহ বাকি দুজনকে হন্তদন্ত হয়ে নিচে নামতে দেখে সোজা হয়ে বসলেন। কিছু জিজ্ঞেস করার সময় না দিয়ে ঘৃণার দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বেরিয়ে গেল রাফসান, মেহের। আঞ্জু ভ্রুকুঞ্চিত করে রাহেলা দিকে তাকিয়ে রইল। রাহেলা ধীর পায়ে এগিয়ে এলো তার কাছে। আঞ্জুর কেমন কেমন যেন লাগছে এদের চোখের চাহনী। মনে খুট করে খোঁচা লাগল কেন যেন। রাহেলা যতো এগোচ্ছে ততোই তার উদ্বেগ বাড়ছে।
রাফসান জরিনা খালার রুমের বাইরেই দাঁড়িয়ে রইল। ভেতরে ঢুকে মেয়েটির মুখোমুখি হতে তার খুব বেশি অস্বস্তি লাগছে। অপরাধবোধ খুব করে ধরেছে তাকে। মেহের রাফসানের নিরব, নিশ্চলতার কিছু একটা কারণ আন্দাজ করে ভেতরে ঢুকে গেল। নীরা দুহাতে পেট চেপে শুয়ে ছিল জবুথবু ভঙ্গিতে। মেহের ছুটে গিয়ে শিওরে বসল। মৃদু স্বরে ডাকল,
” নীরু!”
নীরা পেট এবং মাথার যন্ত্রণায় চোখ বন্ধ করে দাঁত কামড়ে পড়েছিল বিছানায়। নীরু ডাকটা বহুদিন পর শুনে সচকিত হয়ে ঘার ফিরাল সে। যাকে দেখার আশা প্রায় নিভেই গিয়েছিল অবশেষে সে এসেছে তার কাছে। নীরার শুষ্ক, পাংশু চোখজোড়া অশ্রুটলমল হয়ে উঠল। বহুকষ্টে বললো,
” মেহের আপু তুমি এসেছ?” দু’হাতে ভর দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠল সে। মেহেরকে দু’চোখ ভরে দেখে গলা জড়িয়ে ধরলো। কাঁদতে কাঁদতে বললো,
“তুমি এসেছ মেহের আপু? শারমিন আপু বলেছিল তুমি এসে নিয়ে যাবে আমাকে। তুমি কেন এলে না মেহের আপু? আমার তো সব শেষ। এরা আমাকে মৃত্যুর আগে আর ছাড়বে না। আমাকে বাঁচাও আপু। আমাকে বাঁচাও!”
মেহেরের কন্ঠ রোধ হয়ে গেল। একটা শব্দও সে বের করতে পারলো না গলা দিয়ে। দু’হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করছে নীরাকে। কিন্তু পারছে না। অসাড় অসাড় লাগছে সবকিছু। এই নীরাকে খুঁজবে বলে তো সে আসেনি? এই নীরা তার চেনা নীরা নয়! এ যে অর্ধমৃত এক মেয়ে। তার একটু হেলায় নীরা আজ অর্ধমৃত। কেন আরও আগে এলো না সে? কেন? মেহের কাঁদছে। নীরাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। কাঁদছে দু’জন তবে বাইরে দাঁড়ানো মানুষটা শুধু একজনের কান্নায় ক্ষত বিক্ষত হচ্ছে। শূন্য আসমানে চেয়ে ভেতরটা পুড়াচ্ছে অদেখা রমণীর দুঃখের আগুনে।
চলবে,,,,,
তাড়াহুড়ো করে দিলাম পর্বটা