#ক্যাসিনো ©লেখিকা_(মায়া)
#পর্ব_২৯
মেহমেত এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,যদি আমি জানতাম আমার একটা সিদ্ধান্তে তাদের জীবনে এমন বিপর্যয় নেমে আসবে তাহলে কখনোই তাদের কে হলিডের জন্য তাদের কে সাথে নিয়ে যেতাম না।
ভার্সিটি থেকে রাঙামাটি ট্যুর প্রোগ্রাম করা হয়েছিল। সবাই আমরা বের হয়েছিলাম তার উদ্দেশ্য কিন্তু আমরা বাস ঢাকা থেকে বের হওয়ার আগে নেমে পড়ি যাবতীয় কিছু জিনিষ পত্র নেওয়ার জন্য। আমি আর নিশান আরো অনেক ছাত্র ছাত্রীরা নেমেছিল। তার পর আবার বাসের উদ্দেশ্য রওনা দেয়। সব কিছুই ভালোই চলছিল। দুই দিনের ট্যুর ছিল। দ্বিতীয় দিন আমরা সবাই মিলে পাহাড়ে যায়। তার মধ্যে নিশান ক্যামেরা দিয়ে সব কিছু রেকর্ড করছিল। শাহানা আর আমরা গল্প করতে করতে সবাই পাহাড়ের চূড়ায় ওঠার চেষ্টা করি।
নিশান প্রকৃতি কে ক্যাপচার করাই এমন মত্ত ছিল যে সে খেয়াল করেনি যে সবাই তাকে ছেড়ে চলে গেছে। পাহাড়ে উঠার রাস্তা দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। যখন নিশান বুঝতে পারে সবাই তাকে ছেড়ে চলে গেছে। তখন সে দৌড় দেয়। কিন্তু পাহাড়ে উঠার রাস্তায় গিয়ে দেখে পথ দুই টা । সে ভাবতে থাকে কোন রাস্তা দিয়ে তারা গেছে। পকেটে থেকে ফোন বের করে শাহানা কে কল দেয়। কিন্তু তার নাম্বার বন্ধ বলছে। কিছু ক্ষন পর ভাবলো হয়তো পাহাড়ে উঠার জন্য নেটওয়ার্ক পাচ্ছে না। নিশান কিছু না ভেবে ডান দিকের রাস্তা ধরে এগিয়ে যায়। শাহানা যখন মাঝপথে অব্দি যায়। তখন নিশান কে খোঁজতে লাগে । এতো ক্ষন সে ভেবেছিল নিশান হয়তো পিছনে পিছনে আসছে। ক্যামারা দিয়ে ভিডিও রেকর্ডিং করছে। কিন্তু এই সবার মাঝে যখন নিশান কে খোঁজে পাওয়া গেল না। তখন বেশ ভয় পেলো শাহানা। মেহমেত কে নিশান এর কথা জিজ্ঞেস করলে সে বলে তাকে তো পাহাড়ে উঠার আগে পিছনে একটা বড় বট গাছের রেকর্ডিং করতে দেখেছিল। বট গাছ অনেক পুরনো হবে হয়তো। খুবই বড় আর মোটা মোটা শিকর ঝুলে ছিল। সবাই আগ্রহ সহকারে গাছ টাকে দেখছিল। আর নিশান গাছের চারদিকে ঘুরছিল ক্যামারা হাতে।
স্যার এবং সব ছাত্র ছাত্রী দের নিশানের কথা জিজ্ঞেস করলে তারা বলে পাহাড়ে উঠা নিয়ে বেশ excited ছিল যার কারণে কারো প্রতি খেয়াল ছিল না কারোরই। স্যার মেডামরা সবাই বলল হয়তো পিছনে আছে চলে আসবে
আর নিশান এমন এক কান্ড কেন করতেই বা যাবে। অপরিচিত অচিনা এক জায়গা। বের হওয়ার আগে সবাই কে বলা হয়েছিল যে কেউ যেন গ্রুপ ছেড়ে একা একা কোথাও যেন না যায়। কারন গত কয়েক মাস ধরে গুজব শোনা যাচ্ছে রাঙামাটির পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে ১৭_১৮ বছরের মেয়ে হারাচ্ছে । আর সাথে ছোট বাচ্চা ও। কথা টা এক প্রকার গুজবই মনে হচ্ছে। কারণ পুলিশ এ ব্যাপারে সন্ধান করতে এসে কারো মুখে থেকেই তেমন কিছুই পাইনি। তার পর ও সতর্ক থাকতে বাধা নেই।
নিশান পিছনে আসবে ভেবে মেহমেত আর মিনাল কে পিছনের দিকটাই ঘুরে আসতে বলা হয়। কিন্তু তারা যেয়েও কোন ফিরে আসার নাম নেই
পরিশেষে শাহানা এক হুলস্থূল কান্ড করে। তার মন টা খুব কু ডাকছে। নিশান কে কেন একা রেখে আসলো এই নিয়ে অস্থির হয়ে পড়ে। সেখানেই কিছু ক্ষন পায়চারি করে। ফোনে কোন নেটওয়ার্ক নেই। ইচ্ছে করছে ফোন টা ভেঙে ফেলতে। তার পর কিছু না বললেই সেও পিছনের দিকে ছুট লাগায়। এই দিকে স্যার মেডাম ও শাহানা কে যেতে বারণ করে। অগত্যা এক স্যার বাকি দের চলে যেতে বলে। আর শাহানাদের নিয়ে সে যাবেনি। তাঁর পর স্যার নিজেও শাহানার পিছনে যেতে আরম্ভ করে ।
মেহমেত আর মিনাল গিয়ে দেখে সেই বট গাছের ওখানে নিশান নেই। তার পর তার মনে পড়ে হয়তো দ্বিতীয় পথে নিশান গেছে। এবং তারা সেই পথে রওনা হয়। কিছু দূর যাওয়ার পর দেখে নিশান হন্তদন্ত হয়ে দৌড়ে আসছে।
নিশান মেহমেত কে দেখে যেন প্রান ফিরে পায়। তাদের কাছে এসেই হাঁপাতে আরম্ভ করে। চোখে মুখে ভয়ের ছাপ। মনে হচ্ছে খুব ভয় পেয়েছে নিশান। নিশান কাছে আসতেই মেহমেত ধমক দেয় তাকে। আর বলে শাহানা তার জন্য ভিষন চিন্তা করছে তারাতারি চল সবাই তোর জন্য অপেক্ষা করছে। মেহমেতের কোন কথায় নিশানের কর্ণগোচর হচ্ছে তা মিনালের মনে হচ্ছে না। কেমন যেন আতংকিত হয়ে আছে। মিনাল ভ্রু কুঁচকে জিঙ্গাসা করে। এই দিকে থেকে এমন দৌড়ে কেন আসছিলে আর এমন ভয় কেন পেয়ে আছো??
নিশান তেমন কোন উত্তর না দিয়ে বলে তারাতারি এই পথ থেকে বের হতে। কথা শেষ করেই তাড়া দিতে থাকে চলে যাওয়ার জন্য। মেহমেত নিজেও খেয়াল করলো। নিশান স্বাভাবিক আচারন করছে না। কেমন ভীতু নজরে জোর পায়ে হাঁটছে আর পিছনে তাকাচ্ছে বার বার। মেহমেত সন্দিহান দৃষ্টিতে নিশান কে বলে নিশান! সব ঠিক আছে তো?? তুই এমন ভয় পেয়ে আছিস কেন?? কি হয়েছে??
নিশান কি বলবে ভেবে পায়না। বার বার শুকনো ঢুক গিলছে। নিশান তার হাতের ক্যামারা টা শক্ত করে ধরে বলে, আমাদের আজকেই এখান থেকে চলে যাওয়া উচিত আর এখনি চলে যাওয়া উচিত। নিশান কি হয়েছে বল আমায়?? ঐ রাস্তায়…দ্বারা আমি দেখাই তোদের বলেই। যখনি ক্যামারা টা অন করতে যাবে নিশান তখনি ঝড়ের গতিতে শাহানা এসে নিশান কে জরিয়ে ধরে। শাহানা কে দেখে নিশান আরো যেন ঘাবড়ে যায়। এই দিকে মিনাল এমন কিছুর জন্য প্রস্তুত ও ছিল না। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে চোয়াল শক্ত হয়ে যায় তার।
শাহানা অভিমানী স্বরে বলে, তুমি আমাদের ছেড়ে একা কোথায় চলে গেছিলে। আমার কত চিন্তা হচ্ছিল জানো?? নিশান কাঁপা কাঁপা গলায় বলে আমি দুঃখিত। শাহানা কে নিজের মাঝে থেকে ছাড়িয়ে নেই তার পর বলে আমর ভালো লাগছে না। আমরা কি হোটেলে ফিরে যেতে পারি। শাহানা নিশানের কপালে হাত ছুয়ে বলে জ্বর টর আসলো না কি?? নাহ আমি ঠিক আছি। তুমি না হয় যাও ওদের সাথে আমি হোটেলে ফিরে যায়?? নাহ আমি ও তোমার সাথে ফিরে যাবো সমস্যা নেই। মেহমেত তখন বলে উঠে নিশান কি হয়েছে বল তো তোর পাহাড়ে উঠা নিয়ে সব থেকে বেশি excited তুই ছিলি আর এখন যেতে চাচ্ছিস না। আজব তো!! আর তুই যেন কিছু বলছিলি ঐ পথের বিষয়ে?? নিশান বেশ খানিকটা সময় নিয়ে ধীর কন্ঠে বলে নাহ কিছু না। রাস্তা টা অনেক শুনশান,তাই একটু ঘাবড়ে গেছি। আর শরীর টা ভালো লাগছে না আমি গিয়ে একটু বিশ্রাম নিবো। মেহমেত তখন আর কিছু ঘাটাইনি । নিশান সেই পথে কি দেখেছিল তা এখনো সবার অজানা। নিশান ট্যুর থেকে আসার পর থেকেই কেমন অন্য মনস্ক হয়ে পড়ে। যে ছেলেটা পড়া শুনা নিয়ে এতো সচেতন সে দিনের পর দিন ভার্সিটি তে যায় না। শাহানার সাথে ও কেমন যেন দূরত্ব বজায় রাখছে সে। কারো তেমন কথা বলে না প্রয়োজন ছাড়া। শাহানাকে নিশানের এই ব্যাবহার ভিষন ভাবে পীড়া দিচ্ছে। শাহানা ফোন দিলেও। অল্প একটু কথা বলেই নানা বাহানায় ফোন কেটে দিচ্ছে। এভাবে পুরো একটি মাস কেটে যায়। নিশান কোন স্বাভাবিক আচারন করছে না। ঘুমের মধ্যেই ভয় পেয়ে চিৎকার করে উঠছে। মেহমেত নিশানের এমন হাল মেনে নিতে পারছে না। গত কাল ভিসি নিজে এসে নিশান কে দেখে গেছে। তার মত এমন ট্যালেন্ট ছাত্র যে কখনো ক্লাস মিস করে না সে গত এক মাস ধরে ক্লাস করছে না বিষয় টা খুব হতাশা জনক। ভিসি বার বার বলেছে তাকে কাল যেন ক্লাসে দেখা যায়। নিশান বাধ্য ছেলের মত সম্মতি জানিয়েছে।
মেহমেত নিজেও বার বার নিশান কে জিজ্ঞেস করেছে কি সমস্যা হচ্ছে তার তাকে খুলে বলতে কিন্তু তার এক বুলি যে এমনিই শরীর ঠিক লাগছে না তার। পরের দিন ভার্সিটি তে যায় নিশান। এবং সকলের সাথে খুব স্বাভাবিক আচারন করে। ক্লাস শুরু হবে কিন্তু নিশান শাহানা কে খোঁজছে। আজ আসেনি নাকি?? গত কাল রাতে তো নিশান ফোন দিয়ে বলেছিল আজ ভার্সিটিতে আসতে। নিশান আর মেহমেত ক্যাম্পাসে আসে আবার তখনি সাদা রঙের একটা কার সদর গেট দিয়ে প্রবেশ করলো। নিশান এবং বাকি রা উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখে কে নামে গাড়ি থেকে। তখন দেখে শাহানা এবং এক ভদ্রলোক গাড়ি থেকে নামছে। ভদ্রলোক কে দেখেই নিশান চোখ বড় বড় করে নেয় এবং ঘন ঘন শ্বাস নিতে থাকে। মেহমেত ভদ্রলোকের কাছে গিয়ে কুশল বিনিময় করে। কেমন আছেন আংকেল?? আর দেশে ফিরেছেন কোন দিন?? দাওয়াত ও দেননি দেশে ফিরেছেন!! আমি ভালো আছি, তুমি ও ভালো আছো দেখেই বুঝা যাচ্ছে। আর দেশে ফিরলেই যত রকমের কাজের মাঝে পড়ে যায় আর বলো না বাবা। কি সময় দিবো ফ্যামিলি দের। শাহানা নিশান কে দেখতে মত্ত। ছেলেটার চেহারার কি হাল বানিয়েছে এই এক মাসে। আর এই দিকে নিশান, আফজাল শরীফ কে দেখে ভয়ে কুকড়ে যাচ্ছে। অজানা এক আতংক মনের ভিতর গেথে বসেছে। কেন যে ভার্সিটিতে আসলো এই নিয়ে দুঃখ বিলাস করছে। তো হঠাৎ ভার্সিটিতে কেন আংকেল?? শাহানা তখন উত্তর দেয়,ভিসির সাথে নাকি কি যেন দরকারি কাজ আছে। তাই এসেছে। ওহহ আচ্ছা, তো আবার কোন দিন যাবেন আংকেল?? আজই যেতে হবে আবার। ওহহ ঠিক আছে। আফজাল শরীফ নিশানের দিকে তাকিয়ে আগাগোড়া পর্যবেক্ষণ করে বলে ছেলেটি নিশান রাইট??
হ্যাঁ নিশান তুমি কি করে চিনলে?? শাহানা সন্দিহান দৃষ্টি আকর্ষণ করে তার বাবার উদ্দেশ্য বলে!!!
আরে অনার্সে টপ রেজাল্ট করেছে চিনবো না কেন?? আর্টিকেল পড়েছি তো পেপারে। হ্যালো ইয়াং ম্যান!! আফজাল শরীফ নিশানের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়!! নিশান ভিষন ঘামছে অজানা এক ভয়ে । আফজাল শরীফ রহস্যময় এক হাসি দিয়ে বলে, দোয়া করি জীবনে অনেক বড় হও আর ভালো করে পড়া শুনা করো!!!
চলবে ______????
গঠন মূলক মন্তব্যের আশাবাদী 🙂🙂