#ক্যাসিনো ©লেখিকা_(মায়া)
#পর্ব_৩১
নিশানের ফোন টা বার বার রিং হচ্ছে কিন্তু নিশান কল রিসিভ করছে না। ৮বার রিং হয়ে কেটে গেল তবু ও কল না রিসিভ হওয়ায় কোন নাম নেই। পরবর্তী তে আর কোন কল আসলো না। নিশানের মুখো শ্রী কেমন ভাড় হয়ে আসলো। মেহমেত কিছু বুঝতে পারলো না নিশানের ফোনে কল এসেছে,কারন তার ফোন সাইলেন্ট মোডে ছিল।
।
।
নিশান রুম থেকে বের হয়ে বারান্দায় চলে গেল। মেহমেত অবলার মত নিশানের ভঙ্গি ভাব বুঝার চেষ্টা করলো। প্রায় আধা ঘন্টা পর মেহমেতের ফোনে কল আসে। তখন মেহমেত নিশান কে নিয়ে মেসের বাইরে যায়। রাত ৯টা বাজার ৫মিনিট বাকি। দাড়োয়ান তো বের হতেই দিবে না। মেহমেত পকেটে ৫০টাকা ধরিয়ে দিয়ে বের হয়েছে। নিশান নিজেও কোথাও যেতে নারাজ। কিন্তু মেহমেত নাছোরবান্দার মত নিশান কে নিয়ে বের হয়েছে। বেশ কিছু দূরে হেঁটে যাওয়ার পর। রাস্তার ল্যাম্পপোস্ট থেকে কিছু টা দূরে এক ছায়া মূর্তি দেখা যায়। নিশান আর মেহমেত কে দেখে ছায়ামূর্তি টি ক্রমশো এগিয়ে আসতে আরম্ভ করে। ল্যাম্পপোস্টের হলদে আলোয় দেখা যায় এক রাগান্বিত চেহারা। যা দেখে নিশানের আত্মাপুরি শুঁকে যায়। শুকনো এক ঢুক গিলে কাঠের মতো শক্ত হয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। মেহমেত নিজে কিছু টা দূরে সরে যায়। নিশানের কাছে চলে আসে শাহানা। কাছে আসতেই নিশানের গাল বরাবর থাপ্পর বসে দেয় সে। ঝংকার গলায় রাগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে বলে। গুনে গুনে ৮বার ফোন দিয়েছি আমি। এক বারো আমার ফোন উঠাওনি কেন??? তোমার সমস্যা কি হয়েছে?? ফোন ধরো না, ঠিক মতো দেখা করো না, ভার্সিটিতে যাও না। আমার সাথে দেখা অব্দি করো না। হয়েছে টা কি তোমার বল আমায়?? নিশান অপরাধীর মত মুখ করে নরম স্বরে বলে কিছু হয়নি !!
শাহানার রাগ যেন আগুনের শিখায় ঘি দেওয়ার মত হয়ে উঠলো নিশানের কিছু হয়নি এমন জবাবে!! নিশান কে ধাক্কা দিতে দিতে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে পিছনে আর রাগি গলায় গজগজ করতে করতে বলছে! কিছু হয়নি মানে ?? মস্করা মনে হচ্ছে আমাকে? বিয়ে করা বউ আমি তোমার , দুই দিনের প্রেমিকা পেয়েছো আমায়? যে ইচ্ছে মত অবহেলা করবে ??? শাহানা এবার ধাক্কা দেওয়া বন্ধ করে নিশানের কলার চেপে ধরে বলে তোমার প্রয়োজন আমার! কোন কিছুর বদলেও তোমার প্রয়োজন আমার। আমি ভালোবাসি না প্রয়োজন কেন বলি তোমায় তুমি কি বুঝতে পারো??? মানুষ ভালোবাসা কে কে নিয়ে secrefise করে compromise করে। কিন্তু প্রয়োজন কে কখন ও কেউ পরিত্যাগ করে না। প্রয়োজন মানে এটা আমার secrefise এর তালিকা তে পড়ে না। বুঝেছো তুমি?? নিশানের ভয়ার্ত দৃষ্টিতে ছলছল করছে চোখ কি উত্তর দিবে শাহানা কে সে!! কি করে বুঝাবে তার জিবনে এক বিশাল ঝট ধরে গেছে যে ঝট খোলার বদলে আরো বেশি করে পেকে যাচ্ছে। অসহায় সে কিন্তু শাহানা কে অতিরিক্ত অনাদর করা হয়ে গেছে। এই টুকু তার বুঝা উচিৎ ছিল যে মেয়ে টা বড্ড ভালোবাসে তাকে সব কিছুর চেয়ে। তার পরিবার সম্পর্কে কিছু টা ধারনা আছে যে তারা তাকে ভালো তো বাসে কিন্তু কেউ সময় দিতে জানে না। আর শাহানা বড্ড ভালোবাসার পিয়াশী। নিশান কিছু বলছে না দেখে এবার গলার স্বর খাদে ফেলে শাহানা বলে, কি হলো উত্তর দিচ্ছো না কেন?? আমাকে কি তোমার ভালো লাগছে না আর? ছেড়ে যেতে চাচ্ছো?? শেষের কথায় গলা কেঁপে উঠে শাহানার। ভিতর থেকে কান্না যেন সব দোলা পেকে বাইরে আসতে চাচ্ছে! ঠোঁট মুখ শক্ত করে চোখের নোনা জল আটকানোর চেষ্টা করছে সে। কিন্তু চোখে এক সাগর পানি এসে ধরা দিচ্ছে যা বহমান নদীর মত বয়ে যেতে চাচ্ছে। কষ্টের কান্না চেপে রাখার চেষ্টা শক্ত কোন নারী ও নেই। কারন কান্না নারীর মায়ায় এক জন পুরুষ কে আটকে রাখার মূল চাবিকাঠি যা দ্বারা তারা প্রমান করতে চায় তাকে ছাড়া সে থাকতে পারবে না। শাহানা ও পারলো না। টপ টপ করে গাল বেয়ে পানি গড়িয়ে পরতে লাগলো।
কাঁপা কাঁপা গলায় নিশান উত্তর দেয় কাঁদছো কেন?? আমি দুঃখিত। দেখো কান্না করো না, আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও চলে যাওয়ার কথা মাথা তেওঁ আনতে পারি না।আর তুমি এটা কি ভাবে বলতে পারছো?? শাহানা উমরি খেয়ে নিশান কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে। নিশান শান্তনা দিচ্ছে যে কোথাও তাকে ছেড়ে যাবে না,অযথা কাঁদছে সে। কিন্তু শাহানার কান্না যেন কমার বদলে আরো বেরে যাচ্ছে। নিশান কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা আর। মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিশান শাহানা কে।
মেহমেত রাস্তার উপর প্রান্তে এক বিল্ডিং এর দেওয়ালের সাথে পিঠ ঘেষে দুই হাত বেঁধে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিশান আর শাহানার এমন সুন্দর দৃশ্য দেখছে। আর মুচকি মুচকি হাসছে, ভালোবাসা সত্যিই সুন্দর সেটা হালাল ভাবে যেন আরো হাজার ও ভাবে সুন্দর।
রাত ১০:২৫ মিনিট শাহানা আর নিশান পাশাপাশি বসে আছে সেই টংয়ের দোকানে। যেখানে শাহানা চা খেয়ে এতো স্বাদ লেগেছিল যে সে মাঝে মাঝে আসতে চেয়েছিল। অবশ্য মাঝে মাঝে না আসলেও মাসে এক বার করে সে নিশানের সাথে প্রায় আসতো। আজো এসেছে। তবে আজ মেহমেত নিজেও আছে। তিন জনের হাতে রং চা। চায়ে চুমুক দিচ্ছে নিশান আর মেহমেত কিন্তু শাহানা মনমরা হয়ে বসে আছে। নিশান শাহানার এক হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে শাহানার চোখের দিকে তাকায়। মুচকি হেসে বলে, এমন আর কখনো হবে না। আমি এখন থেকে রোজ ভার্সিটিতে যাবো তোমার সাথে রোজ আলাদা সময় কাটাবো, ফোন আমি এবার নিজে থেকে দিবো। প্লিজ সরি!!
শাহানা ছলছল আঁখি দ্বয় ছোট ছোট করে বলে মনে থাকবে তো??? হ্যাঁ থাকবে! এখন চা টা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে খেয়ে নাও। তার পর ফার্সমেসি থেকে ঔষধ এনে দাও। শাহানা জিজ্ঞাসা সূচক দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলে কেন? কিসের ঔষধ?? কিসের আবার যে জোরে থাপ্পর দিয়েছো নিশ্চয়ই আজ গায়ে জ্বর আসবে! আর শাহানা যে এতো ভয়ঙ্করি রূপ আছে তা আমার জানা ছিল না এখন তো ভয় করছে যখন এক সাথে থাকবো কতই না থাপ্পর পড়বে গালে। শাহানার পাহাড় সমান কষ্ট এক নিমিষে উবে গেল আর সে ফিক করে হেসে উঠে।
আকাশ টা রং দ্রুত পাল্টে কালো রঙের মেঘে ছেয়ে গেল পুরো টা। বাতাসের বেগ ও বাড়তে আরম্ভ করলো। মনে হয় এখনি বৃষ্টি হবে। নিশান আর মেহমেত কে মেসে ফিরতে হবে, শাহানা কেও বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসতে হবে এখন যদি বৃষ্টি নামে কি করে যাওয়া হবে। এই ভেবে শাহানা কে নিয়ে দ্রুত পায়ে হাঁটে নিশান সাথে মেহমেত পাশাপাশি। মেহমেত তখন জিজ্ঞেস করে শাহানা কে?? তুই বাসা থেকে আসলি কি করে এই রাতে?? গাড়ি ও তো নিয়ে আসিসনি সাথে?? শাহানা স্বাভাবিক গলায় জবাব দেয়,গাড়ি নিয়ে আসতে গেলে বাড়িতে বুঝতে পারতো আম্মু যে আমি বাইরে বের হয়েছি তাই চুপিচুপি বের হয়ে সদর রাস্তা থেকে রিক্সা তেই এসেছি।
।
।
রিক্সা স্ট্যান্ডে গিয়ে কোন রিক্সা পাওয়া গেল না। একে তো রাত ভালোই হয়েছে আর দুই এ আকাশের অবস্থা ভালো না বলে। অগত্যা হাঁটা ধরলো তারা। ৩০মিনিট লাগবে যেতে। মেহমেত বলল,যে ফোন করে বাসা থেকে গাড়ি পাঠাতে বলবে। কিন্তু শাহানা মানা করে দিল। তার যুক্তি এমন ছিল যে নিশানের সাথে এক মিনিট বেশি থাকতে পারলে সেটা তার কাছে সুখকর মূহর্ত। আর গাড়ি তে গেলে ১০মিনিটে চলে যাবে। নিশান যুক্তি শুনে ভ্রু কুঁচকে বলে,বাসা থেকে গাড়ি আসতে ও সম। লাগবে ততক্ষন তো তোর মহাশয়ের কাছে থাকতেই পারবি। হ্যাঁ সেটাও ঠিক বলেছিস। ঠিক আছে তাহলে ফোন কর। মেহমেত বাড়িতে ফোন করে। আর তারা ফুটপাত দিয়ে ধীরে ধীরে হাঁটতে থাকে। হঠাৎ আকাশ ভেঙে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি পড়তে শুরু করে আসে পাশে কোন ছাউনী যুক্ত জায়গাও পাচ্ছে না যে দাঁড়াবে তারা। অগত্যা সবাই দৌড় দিতে থাকে । নিশান নিজের পরনের শার্ট খুলে শাহানা আর তার মাথায় দিয়ে দৌড়াচ্ছে। আর টিপুনি কেটে বলছে। দেখছিস সালা বউ কে ভিজতে দিবে না বলে শার্ট দিয়েছে মাথায় আর বেচারা এক শার্টের অভাবে ভিজতেছি। শাহানা হাসতে হাসতে বলে তাহলে নিজের গেঞ্জি খুলে মাথায় দে। থাক দিবো না ভিজতেই বা লাগছে আমার। শাহানা দৌড়ানো ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। নিশান তারা দিতে দিতে বলে দাড়িয়ে আছো কেন?? চলো?? নাহ যাবো না!! কেন?? বৃষ্টি বিলাস করবো। নিশানের শার্ট সরিয়ে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে পড়ে ভিজার জন্য।
চোখ বন্ধ করে এক জোড়া দম্পতি বৃষ্টি বিলাস করছে। আর মেহমেত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসছে তাদের কার্যকলাপ দেখে। এরি মাঝে এক জোড়া চোখ রাগে ফেটে পড়ছে তাদের দেখে। অন্ধকার রাস্তার ফুটপাতে দাঁড়িয়ে। বিদ্যুৎ চমকানোর আলোয় দেখা যাচ্ছে সেই চোখ দিয়ে যেন আগুনের করে লেখিকার নাম কেটে দিতে লেলিহান শিখা উপচে পড়ছে। যেন চোখের ক্রোধেই ভৎস করে দিবে তাদের।
চলবে ____?????
সবাই কমেন্ট করে জানাবেন কেমন লাগলো এই পর্ব।