গল্প :- ক্রমশ
ব্যভিচারী..
পর্ব :- ০৬
Writer :- Kabbo Ahammad
.
.
.
-: “অনেক হয়েছে। গাঁজাখুরি গল্প। তোর মতো জানোয়ারের হয়ত যাই আসেনা, কিন্তু ওই রিচা মেয়েটির গর্ভে তোর মতো কুলাঙ্গারের সন্তান ছিল। তোকে ভালোবেসে নিজের স্বামীকে পর্যন্ত……..
আর তুই……..
কথা বলেই দেবোপম উঠে বেরিয়ে এলেন।
.
.
-: চারমাস পর………..
.
লোকাল কোর্টের রায় বেরিয়েছে। যা প্রমাণ পাওয়া গেছিল তা অরূপ কে দোষী সাব্যস্ত করতে বেশি সময় লাগেনি। এখানে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। পরিতোষ কোর্ট থেকে বেরোনোর সময় বলছিলো।
–“হাইকোর্টে যাবে হয়ত, কিন্তু সাজা কম হওয়ার সুযোগ দেখছিনা। আপনি না থাকলে স্যার..বেচারা আফিস হয়ত জেলের হাওয়া খেতো।
কথাটা শুনে দেবোপম দাঁড়ায়নি। আজ মেয়ে হোস্টেল থেকে ফিরেছে। তাই উনি দেরী করতে চাননি। বাড়ি তে ফিরে এলেন তাড়াতাড়ি। বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসে শেলি জড়িয়ে ধরল বাবাকে। কাব্য চৌধুরীর খবর সে পেয়েছিল। এবং ভীষণ ভাবে ভেঙে পড়েছিল। বাবাকে তো জানাতেও পারেনি। আর কোনোদিন জানাতেও পারবেনা। সময় লাগলেও এখন কিছুটা সুস্থ সে। নিজের মন কে বুঝিয়ে নিয়েছে। সবকিছু পাওয়া যায় না। সবকিছু পাওয়া সম্ভব নয়। এই পাওয়া না পাওয়ার নাম ই জীবন। তারপর দেবোপম এসে শেলি ওরফে শেফালির মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলেন।
–“কেমন আছিস মা!
–“ভালো আছি বাবা। (শেলি হাসল)
–“বেশ। যা কিছু খেয়ে নে। অনেক দূর থেকে এসেছিস।
–“হুম বাবা।
.
.
তারপর শেলি নিজের ঘরের দিকে এগিয়ে গেলে দেবোপম ছাদে এলেন। একটা সিগারেট ধরালেন। তারপর হাসতে লাগলেন। নিজের মনেই। ক্রুর হাসি। শয়তানের হাসি। ওই আননোন নাম্বারের কেসটা কি সুন্দর সাজিয়েছেন। ওদিকে ওকে পেমেন্ট সব কমপ্লিট। লোকটা,এমনিতেও ভয়ংকর সুন্দর ভাবে সব মিটিয়ে দিয়েছে। বিশেষত রিচাকে সরানোর সময়।আইডিয়া অবশ্য ওর ই ছিল। একটা সম্পূর্ন নতুন কোট আর গ্লাভসের উপরে অরূপের কোট আর গ্লাভসটা চাপিয়ে নেওয়া, যাতে কেবল অরূপেরই ডি.এন.এ পাওয়া যায়। দ্যাট ওয়াজ আউটস্ট্যান্ডিং। নিজের প্রশংসা না করে নিজেই পারলেন না। যাইহোক সেই ছায়ামানুষ এখন আবার ছায়াতেই সরে যাবে। কেউ জানবে না তার কথা। কেউ জানবে না এই গেমটার মাস্টার মাইন্ড কে!
আকাশের দিকে তাকিয়ে একরাশ ধোঁয়া ছেড়ে নিজেকেই বললেন।
“এ পৃথিবীতে সন্তানের থেকে মায়ার আর কিছুই নেই।কিছুই থাকতে পারেনা। তার একমাত্র মেয়ের জীবন শেষ করে দিয়ে কেউ বেঁচে থাকতে পারেনা। কারোর ই সেই অধিকার নেই” তখন পরিতোষের কল। বললো আগামীকাল……….ঠিকানা দেখা করতে..
.
.
পরের দিন…..
.
দেবোপম চিন্তিত মুখে পরিতোষ কে প্রশ্ন করলেন।
–“হঠাৎ অফিসের বাইরে এখানে ডাকলে কেন?
পরিতোষ শুকনো হাসি হেসে বললো।
–“আপনার সাথে কিছু জরুরি কথা ছিল স্যার।সেইজন্য। আর এই ক্যাফেটা বেশ ফাঁকাই থাকে।আপনি বসুন না।
দেবোপম ভুরু কুঁচকালেন, সরাসরি আর কিছু না বলে সামনের চেয়ার টা টেনে বসে পড়লেন। তারপর পরিতোষ সামনের চেয়ারে বসে ওয়েটার কে ডাকলো।ওয়েটার এলে একবার দেবোপম কে জিজ্ঞেস করলো।
“আপনি কফি খাবেন তো! দেবোপম মাথা নেড়ে সম্মতি জানালে পরিতোষ ওয়েটার কে দুকাপ কফি আনার অর্ডার দিয়ে, ভালো করে নড়েচড়ে বসল। তার চোখ কিছুক্ষণ চুপচাপ স্থির থাকল দেবোপমের উপর। এই দৃষ্টিতে দেবোপম অভ্যস্ত নন। কারণ এই দৃষ্টিতে মুগ্ধতা নেই, কাউকে ছোঁওয়ার কামনা নেই, বরং এক অদ্ভুত রকমের করুণা আছে, যেটা বড্ড চোখে লাগে।দেবোপম গলা খাঁকারি দিয়ে প্রশ্ন করলেন।
–“হ্যাঁ কি বলবে বলো!
পরিতোষ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল।
–“স্যার, কাব্য চৌধুরী এবং রিচার মার্ডার কেসটা নিয়ে আমি অনেকদিন ধরেই ভাবছিলাম।
দেবোপমের হঠাৎ বুকটা ধড়াস করে উঠল, তারপরেও নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন।
–“হ্যাঁ বেশ ইন্টারেস্টিং এবং ডিফিকাল্ট কেস ছিল। খুব খারাপ লাগে এখনও রিচা মেয়েটার জন্য। এত কম বয়েসেই..যাকগে সে তো মিটে গেছে মাস ছয়েক হল।কেসটা বোধহয় এখন হাইকোর্টে চলছে। কিন্তু তুমি হঠাৎ!
পরিতোষ তখন জোর করে হাসল, তারপর বলল।
–“হঠাৎ মানে আসিফের অ্যাক্সিডেন্টে ডেথ হয়েছে শুনেছেন তো!
কথাটা হঠাৎ মনে পড়ল এমন একটা মুখ করে দেবোপম বললেন।
–ও হ্যাঁ। নাইম বলছিল। আমি তখন বোধহয় পুরীতে ছিলাম তখন।
–“হ্যাঁ আপনি ফ্যামিলিকে নিয়ে ভ্যাকেশনে গিয়েছিলেন।(পরিতোষ বলল)
–“হ্যাঁ। তা আসিফের অ্যাক্সিডেন্টের সাথে এই কেসের কি হল? (দেবোপম প্রশ্ন করলেন)
–“বলছি স্যার। তার আগে কয়েকটা কথা বলতে চাই, যেটা আমাকে কয়েকমাস ধরে ভাবাচ্ছিল।
–“বেশ বলো শুনি। (দেবোপম একটু নড়েচড়ে বসলেন)
–“প্রথমত আমাকে যে জিনিস টা বেশি ভাবায় সেটা কেসটার ল্যাক অফ মোটিভ। মানে অরূপের কাব্য চৌধুরী কে খুন করার বা করানোর মোটিফ থাকতে পারে, কিন্তু রিচাকে খুন করার কি মোটিফ থাকতে পারে! গয়নাগুলো তো নয় ই। কারণ রিচা অরূপকে ভালোবাসতো। সে চাইলেই রিচা ওকে সব দিয়ে দিতো।
–“গুড পয়েন্ট। কিন্তু ভেবে দেখো যদি এমনটা হয় অরূপ রিচার সাথে টুটাইমিং করছিল। অন্যকারোর সাথে পালিয়ে যাবার জন্য। রিচার কেসটা একেবারে মিটিয়ে দিতে চেয়েছে। ওর কাছ থেকে রাজধানীর টিকিট ও পাওয়া গেছিল, ভুলে গেলে।
(দেবোপম নিজের মতো কারণ সাজানোর চেষ্টা করলেন)
–“স্যার রিচার মতো একজন সুন্দরি মেয়ে যদি অরূপ কে সবকিছুর থেকে বেশি ভালোবাসতো, এমনকি গর্ভে তার সন্তান কে আশ্রয় দিতে পারতো সেই মেয়েকে ছেড়ে যাওয়ার স্বভাবতই কোনো কারণ থাকতে পারেনা। আমি অরূপের বাড়ির চারপাশে খোঁজ নিয়েছি। সবাই বলেছে অরূপ খুব শান্ত এবং ভালো স্বভাবের ছেলে। কারোর ক্ষতি করা তো দূর কারোর দরকার পড়লে অন্যসবার আগেই ঝাঁপিয়ে পড়ত। কিন্তু সেটা থাক। মানুষ বাইরে একটা মুখোস এঁটে ঘুরতে পারে। আমরা অনেকেই ঘুরি। আপনার যুক্তির খাতিরে ধরেই নিলাম অরূপ টু-টাইমিং করছিল। রিচাকে সরিয়ে দিলেই সুবিধা হতো ওর। কিন্তু তাও ওর অত হঠকারিতায় রিচাকে খুন করার কি প্রয়োজন ছিল?
ও তো চাইলেই বেশ কিছুদিন অপেক্ষা করতে পারতো। অন্য কোথাও নিয়ে গিয়ে রিচাকে মারতে পারতো। আর যদি ওকে মারার এতই তাড়া থাকতো তাহলে কাব্য চৌধুরীকে যেভাবে মারল সেভাবেই করতে পারতো যাতে কেউ ওকে ধরতে না পারে। কিন্তু ওভাবে জলজ্যান্ত প্রমাণ ফেলে আসার কোনো মানে হয়? মানে এমনি ই ভেবে দেখুন। আমি তো কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছিনা। এত বোকা বোকা ভুল কেউ করতে পারে!
পরিতোষ বলে যাচ্ছিল তখন দেবোপম ওকে থামিয়ে বলল।
–“সেতো ও ভেবেছিল আসিফকে ফাঁসাবে..
পরিতোষ কথা শেষ হবার আগেই হেসে উঠল।
–“ফাঁসানো বলছেন স্যার? আপনার কথা মতো মেনেই নিলাম মানুষ মাঝেমাঝে বোকা-বোকা কাজ করে ফেলে, কিন্তু অরূপ যদি আসিফ কে জোর করেই ফাঁসাতে চাইতো, তাহলে আরো ভালো প্ল্যান করতো। মানে যে কাব্য চৌধুরী কে এত নিখুঁত ভাবে খুন করলো, সে রিচাকে খুন করার সময় নিজের কোট গ্লাভস সব ফেলে এলো একজনকে ফাঁসানোর জন্য যেখানে তার ডি.এন.এ পাওয়া যেতে পারে কি না আর একজন কে লোকে ক্রাইম সিনে দেখতে পেলে আর কোনো প্রমাণ ছাড়া তাকেই খুনী ভেবে ফেলবে? মানে এটা কোনো যুক্তি হল! আর ধরেই নিলাম আসিফকে ক্রাইম সিনে দেখলে আসিফ কে তর্কের খাতিরে ধরেই নিলাম ফাঁসানো যেতো, কিন্তু আসিফ এত বোকা নই যে চোখের সামনে রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখে ও ওখানেই বসে থাকবে কতক্ষণ পুলিশ আসবে এই আশায়? আমরা যতই তাড়াতাড়ি যাইনা কেন স্যার সেদিন, আসিফের কাছে অঢেল সময় ছিল ওখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার মতো। আর এই ফোন করে আসিফের ওখানে পৌঁছানোর খবর টা ভীষণ ফিসি…কেমন জোর করে ঢোকানো একটা স্ক্রিপ্ট এর মতো”
–“তাহলে তুমি কি বলতে চাইছো! (দেবোপমের গলার স্বর বড্ড রুক্ষ শোনালো)
–“স্যার আমি বলতে চাচ্ছিলাম যে আসিফ সেদিন ক্রাইম সিনে নিজের ইচ্ছেতেই ছিল যাতে সবার সাসপিশন ওর দিকে যায়, কারণ ওখানে যদি শুধুই অরূপের কোট বা গ্লাভস টা পাওয়া যেতো বড্ড বেমানান লাগতো। ব্যাপার টা খুব সহজ হয়ে যেতো লোকে সন্দেহ করতো। তাই কেসটাকে একটু ওজন দিতেই আসিফের ব্যাপার টা সাজানো হয়েছে।আপনাকে…….
কথাটা শেষ করতে গিয়েও থেমে গেল পরিতোষ। ওয়েটার এসে দুকাপ কফি রেখে দিয়ে গেল। তারপর সম্ভাষণ জানিয়ে প্রশ্ন করলো।
–এনিথিং এলস স্যার!
পরিতোষ শান্ত গলায় জবাব দিলো।
–“নো..
তারপর ওয়েটার চলে যেতেই আবার দেবোপমের দিকে ঘুরে বলতে শুরু করলো।
–“হ্যাঁ তো যেটা বলছিলাম। ধরুন গোটা কেসটার পিছনে কোনো তৃতীয় ব্যক্তি আছে যাকে আমরা ধরিইনি। সেই ধরুন সমস্ত ঘটনাটা ঘটিয়েছে। কোনো প্রফেশনাল দিয়ে প্রথমে কাব্য চৌধুরী কে খুন। তারপর তার বাড়ি থেকে দশভরি গয়না চুরি করে নিজের ঘরে বা কোথাও একটা লুকিয়ে রেখে দেয়। তারপর কিছুদিন যেতে না যেতেই অরূপকে ব্ল্যাকমেইল করে রিচার আর ওর ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি দেখিয়ে ওর কাছ থেকে কোট আর গ্লাভস কোথাও একটা পৌঁছে দিতে বলে। সামান্য কোট আর গ্লাভস দিয়ে কি হবে! এটা ভেবে আর কাব্য চৌধুরীর মার্ডার কেসে নিজেকে আর রিচাকে জড়িয়ে ফেলার ভয়ে অরূপ সেটা যথাস্থানে রেখে আসে। আর সেই সুযোগে সেই লোকটি অরূপের বাড়ি পৌঁছে ওর বাড়ির বাগানের মাটিতে ওই দশভরি সোনা পুঁতে রেখে আসে, যা অরূপের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। তারপরের কাজটা সহজ। অরূপের জ্যাকেট আর গ্লাভস পরে রিচাকে খুন আর জ্যাকেট টা জানলা দিয়ে গলিয়ে পাশের ড্রেনে ফেলে দেওয়া। আর বাকি কাজটা আসিফের। সে হয়ত টাকার লোভে কিম্বা অন্যকোনো ভয়ে একটা অভিনয়ের পার্ট করে। পুরো ব্যাপারটাই জাস্ট পুলিশকে গুলিয়ে দেওয়ার জন্য। পুলিশ ওকে এসে ক্রাইম সিনে দেখলো। তারপর মার্ডার ওয়েপন পাবে, ব্যস আর কি! পুলিশ যখন কনফিউজড হয়ে যাবে তখন মোক্ষম সময়ে ডি.এন.এ টেস্টের মাধ্যমে ওকে ফাঁসানো। তার মধ্যে যে এই গেমটার মাস্টার মাইন্ড তার আর একটা কাজই পড়ে থাকছে। অরূপকে ভয় দেখিয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য করা। যাতে সন্দেহ সম্পূর্ণ ভাবে ওর দিকেই চলে যায়। অরূপ একটা সাধারণ ছেলে তাকে যদি কেউ ফোন করে এটা বলে তার কোট আর গ্লাভস পড়ে কেউ তার প্রেমিকাকে খুন করেছে এবং পুলিশ তাকে খুঁজতে আসছে, আর পাঁচজন মানুষের মতো সে পালিয়ে যেতে চাইবে এটা সিম্পল সাইকোলজি।
.
.
চলবে……………….♥
.