ক্রমশ ব্যভিচার পর্ব ৪

গল্প :- ক্রমশ
ব্যভিচারী..
পর্ব :- ০৪
Writer :- Kabbo Ahammad
.
.
.
-: আচ্ছা কাব্য চৌধুরীর ফোন টা পেয়েছো!

–“না স্যার। দুটো ঘর তন্নতন্ন করে খোঁজা হয়েছে। কোথাও পাওয়া যাইনি।

–“হু ইন্টারেস্টিং। বাড়ির এদিক-ওদিক একবার খুঁজে দেখো তাও।

বলেই দেবোপম বাইরে বেরিয়ে এলেন। তারপর উপরের দিকে মুখ তুলে নাক চোখ কুঁচকোলেন। বড্ড রোদ।
.
.
পরেরদিন……

~পোস্টমর্টেম রিপোর্ট টা হাতে পাবার পর ভালো করে পড়লেন দেবোপম। যেমন সন্দেহ করেছিলেন। ঠিক তেমন টাই। একটা ভোঁতা কোনো কিছু দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়েছে। কিন্তু মার্ডার ওয়েপন টা এখনও পাওয়া যায়নি। কাব্য চৌধুরীর ফোনটা ভাঙাচোরা অবস্থায় বাড়ি থেকে একটু দূরে রাস্তার পাশে পাওয়া গেছে। তখন পরিতোষ এসে ডাকলো।

–“স্যার। যেমন বলেছিলেন ভিক্টিমের ওয়াইফ, আর ওই দুই প্রতিবেশীর উপর নজর রাখা হয়েছিল।

–“হুম কিছু জানতে পেলে! (দেবোপম প্রশ্ন করলেন)

–হ্যাঁ স্যার, আসিফ এবং নাইম” এরা দুজন অফিস আর বাড়ি ছাড়া আর কোথাও যাননি, কিন্তু রিচা একজনের সাথে দেখা করেছে এর মধ্যে!

–“কোনো রিলেটিভ! (কথাটা বলে দেবোপম একটু নড়েচড়ে বসলেন)

–“না স্যার। ওনার এক বন্ধু। নাম অরূপ চৌধুরী।

–“স্বামীর মৃত্যুর শোক কাটতে না কাটতেই বন্ধুর সাথে দেখা করতে যাওয়ার মানে কি! সাসপিসিয়াস। রিচার ফোন কল ট্র‍্যাক করতে বলেছিলাম। করেছো?

–“হ্যাঁ স্যার। কিছু ফোন রিলেটিভস দের করা হয়েছে।
কাব্য চৌধুরী এবং রিচার। খোঁজ নিয়ে দেখেছি। আর একটা নাম্বারে বহুবার ফোন করা হয়েছে। সেই নাম্বার টা এই অরূপ চৌধুরীর।

–“বলো কি হে! এই বন্ধুটি ভরসার কাঁধ হয়ে দাঁড়িয়েছে নাকি! এই অরূপ চৌধুরীর সমস্ত ডিটেইলস আমাকে এনে দিও।

(বলেই দেবোপম টেবিলে হাত রেখে চিন্তা করতে লাগলেন। তখন পরিতোষ জিজ্ঞেস করলো)

–“আপনি কি এটা প্ল্যানড মার্ডার ভাবছেন স্যার!

(দেবোপম একটু চিন্তা করছিলেন, তারপর অবচেতন ভাবেই উত্তর দিলেন)

–“আমি কিছু ভাবছিনা পরিতোষ। কিন্তু আমাকে কয়েকটা ব্যাপার ভাবাচ্ছে। এই যেমন ধরো এই অরূপ
চৌধুরী। তারপর রিচা যে প্রেগন্যান্ট, ফার্টিলিটি ক্লিনিকে তার যাতায়াত এসব কথা উনি বেমালুম চেপে গিয়েছেন। কিন্তু কেন? তারপর বাড়ি থেকে চুরি গিয়েছে বলতে লকারে থাকা দশভরি সোনা আর কিছু টাকা। সবটা কেমন যেন নিখুঁত হয়েছে। রবারি অ্যান্ড মার্ডার। কিন্তু ব্যাপার টা সাজানো ও হতে পারে। তারপর ধরো রবারি করতে যে বা যারা এসেছিল তারা কাব্য চৌধুরীর ফোনটা ভেঙে কেন রাস্তার পাশে ফেলে দিয়ে গেলো। যদি কোনো ভাবে কাব্যর মাথায় আঘাত করে অজ্ঞান ই করে দেয়। ফোন টা ভাঙার কি দরকার ছিল! এটা আমাকে খুব ভাবাচ্ছে। আর যদি অচেনা কেউ ই হয় তাহলে কাব্য চৌধুরী দরজা খুলেই বা দিলেন কেন? আর চেঁচালেন ই বা না কেন! একমাত্র হতে পারে চেনাজানা বা কাব্য চৌধুরীর প্রয়োজনে আসা কোনো ব্যক্তি যদি এর পিছনে থাকে। তাহলে ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে যায়। সিন গুলো মিলে যায়।যাইহোক তুমি এই অরূপের খোঁজ এনে দাও।
.
.
তখন পরিতোষ বলল।

–“স্যার আপনার বলার পর এখন আমারও মনে হচ্ছে। এই অরূপ টাকে আমারও সন্দেহ হচ্ছে। ওর সাথে রিচার কিছু একটা কেস আছে বুঝলেন।

–“এতো আগে থেকে বলা ঠিক হবেনা। হতেও পারে তেমন কিছু না। তুমি ওর ডিটেইলস টা এনে দাও তো।তারপর বলছি। আমি এর মাঝে কিছু কাজ সেরে রাখি।

–“আচ্ছা স্যার। আসছি।

বলে স্যালুট ঠুকে পরিতোষ বেরিয়ে গেল। দেবোপম আবার চিন্তা করতে বসলেন। আর মনে মনে বললেন, “এক্সটা ম্যারিটাল অ্যাফেয়ার্স। বড্ড সহজ হয়ে যাচ্ছেনা! রিচাকে দেখে মনে হয়না সে এত কাঁচা কাজ করতে বা করাতে পারে। উঁহু আরও খবর আনতে হবে।দেবোপম তখন উঠে পড়লেন।
.
.
.
তারপর কাব্য চৌধুরীদের পাড়ায় ঢুকে কিছুক্ষণ চুপচাপ তাকিয়ে থাকলেন দেবোপম। তারপর কি একটা ভেবে প্রথমে নাইম শেখের বাড়িতে ঢুকলেন। ভদ্রলোক চেয়ারে বসেছিলেন। ওর স্ত্রী দরজা খুলে দিলো। দেবোপম কে দেখে উঠে এল আর বললো।

–“স্যার আরে আপনি! বসুন বসুন।

দেবোপম হাত দেখিয়ে তাকে বাধা দিয়ে সরাসরি বাণ নিক্ষেপ করলেন।

–“বসতে আসিনি। একটা কথা বলার ছিল। কাব্য চৌধুরীর প্রি প্ল্যানড মার্ডার হয়েছে। আপনাদের আসিফ সাহেবের বাড়িতে গিয়েছিলাম। উনি বললেন আপনার সাথে নাকি কাব্য চৌধুরীর ঠিক বনতো না। কি একটা ঝামেলা হয়েছিল।

কথাটা শুনে সাথে সাথেই নাইমের চোখ দুটো জ্বলে উঠল। সে প্রতিবাদ করল।

–“একদম ই না স্যার। আমার সাথে কাব্য ভাইয়ের খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। উনি মাঝে-মাঝেই আমাদের বাড়িতে আসতেন। আমিও যেতাম। ঝামেলার তো কোনো প্রশ্নই ওঠেনা। কিন্তু আপনি বললেন বলেই একটা কথা বলছি ওই আসিফ সাহেবের সাথে
কাব্য চৌধুরীর একটা ঘটকা আছে!

“মানুষ কত বোকা বোকা কথায় ধরা দিয়ে দেয়, দেবোপম মনে মনে হাসলেন। মুখে কিছু বুঝতে পারিনি এমন ভাব এনে বললেন।

–“কি বলুন তো!

–“কি তো ঠিক বলতে,পারবোনা। তবে ধার টার নিয়ে বোধহয়। কাব্য চৌধুরীর সাথে মাঝে মাঝেই চোটপাট লেগে থাকতো। একবার তো প্রায় হাতাহাতিও হয়ে গিয়েছিল কি একটা ব্যাপার নিয়ে। আমরা গিয়ে আটকেছিলাম।

–“আচ্ছা এরকম ব্যাপার নাকি! তাহলে ওনাকে একবার ক্রশচেক করতে হয়। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

বলেই দেবোপম উঠে দাঁড়ালেন।

–“চা খেয়ে যাবেন না স্যার!

(নাইম জিজ্ঞেস করল! এখন তার মুখে একটা হাসি)

দেবোপম ও হেসে উত্তর দিলেন।

–“পরে কোনোদিন হবে। কেস টা মিটে যাক।

তারপর দেবোপম বেরিয়ে যাচ্ছিলেন তখন নাইম ইতস্তত করছে দেখে প্রশ্ন করলেন।

–“নাইম সাহেব আরও কিছু বলবেন!

নাইম তখন দাড়ি চুলকে উত্তর দিল।

–“না তেমন কিছু না। তবে একটা কথা বলা দরকার মনে হয়। জানিনা কতটা হেল্প হবে আপনার কেস এ। তারপরেও বলছি, রিচা ভাবি খুব একটা সুবিধের নয়।

দেবোপম তখন ভুরু কুঁচকালেন।

–কেন বলুন তো!

নাইম তখন ম আবার ইতস্তত ভাবে জবাব দিলো।

–“না মানে। কাব্য ভাই যখন ট্যুরে যেতেন তখন ভাবির কাছে কে একজন মাঝে মাঝেই আসতো।

দেবোপমের তখন চোখ দুটো জ্বলজ্বল করে উঠল, তিনি নাইমকে তা বুঝতে না দিয়ে বললেন।

–“অনেক ধন্যবাদ নাইম সাহেব। আপনি অনেক হেল্প করলেন।

তারপর ওখান থেকে বেরিয়ে আর আসিফ সাহেব বা রিচার কাছে গেলেন না। একটা তৃতীয় মানুষের গন্ধ এখন পাচ্ছেন দেবোপম। সেটা অরূপ কি!
সে ও হতে পারে। আবার নাও। আচ্ছা আসিফের সাথে কাব্যর ঝামেলাটা কি নিয়ে হয়েছিল!
তারপর আবার হাতাহাতি! নাহ এখানে থেকে আর কিছু হবেনা। তারপর থানায় ফিরে এলেন। ওনার মাথায় অনেক অঙ্ক ঘুরছে এখন। ঠান্ডা ভাবে বসে ভাবতে হবে।
.
.
.
এদিকে রিচার কয়েকটা দিন খুব দিশেহারা ভাবে কেটেছে। সবকিছু সামলে উঠতে উঠতে। কাজ শ্রাদ্ধ। লোকজনের হাঙ্গামা। তারপর পুলিশ স্টেশনেও বেশ কয়েকবার ছুটতে হয়েছে। কোথা থেকে কি হয়ে গেল! কিন্তু যা হল সেটা ভালোর জন্যই হলো বোধহয়। এমনিতেও সে পালাতো। কারন কাব্য চৌধুরী একটা ক্রুর শয়তান। একদম শেয়ালের মতো। দেরীতে হলেও সে বুঝেছে। কিন্তু তা কাব্য চৌধুরীর জন্য না। যে মানুষটাকে সে স্কুল জীবন থেকে ভালোবেসে এসেছে তার জন্য। হয়ত বাবার বিরুদ্ধে গিয়ে যদি সেদিন তাকেই বিয়ে করতো এই দিন দেখতে হতোনা। কিন্তু উপায় ছিলনা তখন। একজন বেরোজগারী ছেলের সাথে কোনো বাবা ই তার মেয়ের বিয়ে দেবেনা। যাইহোক। ওসব ভেবেও লাভ নেই আর। অনেক দূর এগিয়ে এসেছে সে। কিন্তু একটা ব্যাপার তাকে কদিন ধরে ভাবাচ্ছে। অরূপের ব্যবহারে কয়েকদিন ধরে বেশ পরিবর্তন এসেছে। কেন কে জানে! কেমন একটা ঘোরের মধ্যে থাকে। আপন মনে চিন্তা করে। অসংলগ্ন কথা বলে। একবার বলছে কাজ টা ও করেছে, একবার বলছে করেনি। একবার বলছে গয়না গুলো ওর কাছেই আছে, একবার বলছে নেই। অদ্ভুত তো। ওকে সন্দেহ করার কোনো কারন নেই। কারন ভালোবেসে যখন ওর জন্য সব ছাড়তে পেরেছে। তাকে অবিশ্বাস করার কোনো মানে হয়না। চোখ বন্ধ করেই ভরসা করা যায়।কারন সবাই স্বেচ্ছাচারী, ব্যভিচারী কাব্য চৌধুরীর মত হয়না। এই পৃথিবীতে অরূপের মতো ভালো মানুষ রা আজও আছে। যারা ভালোবাসার ভাষা জানে। যারা ঠকাতে জানেনা। সেই ভালোবাসার জন্য কাঙাল হয়ে যেতে পারে রিচা। এমনকি!

নিজের পেটের উপর হাত বুলিয়ে নিজের মনেই হাসল রিচা। সেই হাসি একসময় অট্টহাসিতে পরিণত হল। তুমি হেরে গিয়েছো কাব্য চৌধুরী। তোমার অতিরিক্ত অহংকার তোমাকে ডুবিয়ে দিয়েছে। তোমাকে তোমার ঠিকানায় পৌঁছে দিয়েছে।
.
.
.
এতক্ষণ চিন্তার মধ্যে ডুবে গিয়েছিল রিচা। রাত দশটা বাজছে। বেল বাজতে টনক নড়ল। উঠে দরজা খুলতে গেল। হয়ত অরূপ। ওর আসার কথা ছিলনা। কিন্তু ও বলছিল আসতে পারে। ও ই হবে হয়ত। উত্তেজনা মিশ্রিত ভয় নিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেল রিচা।শরতের রাতে, দরজাটা খুলে কিছু বোঝার আগেই অন্ধকার থেকে একটা হাত এসে ওর চোখ মুখ চেপে ধরলো। মরিয়া হয়ে সেই হাত টা মুখ থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে রিচা অনুভব করল ওর পেটের চামড়া ভেদ করে একটা কিছু ঢুকে গেল শরীরের ভিতর। গলগল করে গরম রক্ত বেরোচ্ছে। আর কিছু বোঝার আগেই আরোও কয়েকবার সেটা পেটের এদিক-ওদিক ছুটে গেল। রিচার চোখ ভারী হয়ে এলো। সবকিছু কেমন অন্ধকার হয়ে এলো। সেই অন্ধকার থেকে একটা পিশাচের হাসি কানে এলো! রিচা মানসচক্ষে দেখতে পেলো কাব্য চৌধুরী হাসছে।একটা বিকট শব্দে।
.
.
চলবে……………♥
.
গল্পটাগল্প :- ক্রমশ
ব্যভিচারী..
পর্ব :- ০৪
Writer :- Kabbo Ahammad
.
.
.
-: আচ্ছা কাব্য চৌধুরীর ফোন টা পেয়েছো!

–“না স্যার। দুটো ঘর তন্নতন্ন করে খোঁজা হয়েছে। কোথাও পাওয়া যাইনি।

–“হু ইন্টারেস্টিং। বাড়ির এদিক-ওদিক একবার খুঁজে দেখো তাও।

বলেই দেবোপম বাইরে বেরিয়ে এলেন। তারপর উপরের দিকে মুখ তুলে নাক চোখ কুঁচকোলেন। বড্ড রোদ।
.
.
পরেরদিন……

~পোস্টমর্টেম রিপোর্ট টা হাতে পাবার পর ভালো করে পড়লেন দেবোপম। যেমন সন্দেহ করেছিলেন। ঠিক তেমন টাই। একটা ভোঁতা কোনো কিছু দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়েছে। কিন্তু মার্ডার ওয়েপন টা এখনও পাওয়া যায়নি। কাব্য চৌধুরীর ফোনটা ভাঙাচোরা অবস্থায় বাড়ি থেকে একটু দূরে রাস্তার পাশে পাওয়া গেছে। তখন পরিতোষ এসে ডাকলো।

–“স্যার। যেমন বলেছিলেন ভিক্টিমের ওয়াইফ, আর ওই দুই প্রতিবেশীর উপর নজর রাখা হয়েছিল।

–“হুম কিছু জানতে পেলে! (দেবোপম প্রশ্ন করলেন)

–হ্যাঁ স্যার, আসিফ এবং নাইম” এরা দুজন অফিস আর বাড়ি ছাড়া আর কোথাও যাননি, কিন্তু রিচা একজনের সাথে দেখা করেছে এর মধ্যে!

–“কোনো রিলেটিভ! (কথাটা বলে দেবোপম একটু নড়েচড়ে বসলেন)

–“না স্যার। ওনার এক বন্ধু। নাম অরূপ চৌধুরী।

–“স্বামীর মৃত্যুর শোক কাটতে না কাটতেই বন্ধুর সাথে দেখা করতে যাওয়ার মানে কি! সাসপিসিয়াস। রিচার ফোন কল ট্র‍্যাক করতে বলেছিলাম। করেছো?

–“হ্যাঁ স্যার। কিছু ফোন রিলেটিভস দের করা হয়েছে।
কাব্য চৌধুরী এবং রিচার। খোঁজ নিয়ে দেখেছি। আর একটা নাম্বারে বহুবার ফোন করা হয়েছে। সেই নাম্বার টা এই অরূপ চৌধুরীর।

–“বলো কি হে! এই বন্ধুটি ভরসার কাঁধ হয়ে দাঁড়িয়েছে নাকি! এই অরূপ চৌধুরীর সমস্ত ডিটেইলস আমাকে এনে দিও।

(বলেই দেবোপম টেবিলে হাত রেখে চিন্তা করতে লাগলেন। তখন পরিতোষ জিজ্ঞেস করলো)

–“আপনি কি এটা প্ল্যানড মার্ডার ভাবছেন স্যার!

(দেবোপম একটু চিন্তা করছিলেন, তারপর অবচেতন ভাবেই উত্তর দিলেন)

–“আমি কিছু ভাবছিনা পরিতোষ। কিন্তু আমাকে কয়েকটা ব্যাপার ভাবাচ্ছে। এই যেমন ধরো এই অরূপ
চৌধুরী। তারপর রিচা যে প্রেগন্যান্ট, ফার্টিলিটি ক্লিনিকে তার যাতায়াত এসব কথা উনি বেমালুম চেপে গিয়েছেন। কিন্তু কেন? তারপর বাড়ি থেকে চুরি গিয়েছে বলতে লকারে থাকা দশভরি সোনা আর কিছু টাকা। সবটা কেমন যেন নিখুঁত হয়েছে। রবারি অ্যান্ড মার্ডার। কিন্তু ব্যাপার টা সাজানো ও হতে পারে। তারপর ধরো রবারি করতে যে বা যারা এসেছিল তারা কাব্য চৌধুরীর ফোনটা ভেঙে কেন রাস্তার পাশে ফেলে দিয়ে গেলো। যদি কোনো ভাবে কাব্যর মাথায় আঘাত করে অজ্ঞান ই করে দেয়। ফোন টা ভাঙার কি দরকার ছিল! এটা আমাকে খুব ভাবাচ্ছে। আর যদি অচেনা কেউ ই হয় তাহলে কাব্য চৌধুরী দরজা খুলেই বা দিলেন কেন? আর চেঁচালেন ই বা না কেন! একমাত্র হতে পারে চেনাজানা বা কাব্য চৌধুরীর প্রয়োজনে আসা কোনো ব্যক্তি যদি এর পিছনে থাকে। তাহলে ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে যায়। সিন গুলো মিলে যায়।যাইহোক তুমি এই অরূপের খোঁজ এনে দাও।
.
.
তখন পরিতোষ বলল।

–“স্যার আপনার বলার পর এখন আমারও মনে হচ্ছে। এই অরূপ টাকে আমারও সন্দেহ হচ্ছে। ওর সাথে রিচার কিছু একটা কেস আছে বুঝলেন।

–“এতো আগে থেকে বলা ঠিক হবেনা। হতেও পারে তেমন কিছু না। তুমি ওর ডিটেইলস টা এনে দাও তো।তারপর বলছি। আমি এর মাঝে কিছু কাজ সেরে রাখি।

–“আচ্ছা স্যার। আসছি।

বলে স্যালুট ঠুকে পরিতোষ বেরিয়ে গেল। দেবোপম আবার চিন্তা করতে বসলেন। আর মনে মনে বললেন, “এক্সটা ম্যারিটাল অ্যাফেয়ার্স। বড্ড সহজ হয়ে যাচ্ছেনা! রিচাকে দেখে মনে হয়না সে এত কাঁচা কাজ করতে বা করাতে পারে। উঁহু আরও খবর আনতে হবে।দেবোপম তখন উঠে পড়লেন।
.
.
.
তারপর কাব্য চৌধুরীদের পাড়ায় ঢুকে কিছুক্ষণ চুপচাপ তাকিয়ে থাকলেন দেবোপম। তারপর কি একটা ভেবে প্রথমে নাইম শেখের বাড়িতে ঢুকলেন। ভদ্রলোক চেয়ারে বসেছিলেন। ওর স্ত্রী দরজা খুলে দিলো। দেবোপম কে দেখে উঠে এল আর বললো।

–“স্যার আরে আপনি! বসুন বসুন।

দেবোপম হাত দেখিয়ে তাকে বাধা দিয়ে সরাসরি বাণ নিক্ষেপ করলেন।

–“বসতে আসিনি। একটা কথা বলার ছিল। কাব্য চৌধুরীর প্রি প্ল্যানড মার্ডার হয়েছে। আপনাদের আসিফ সাহেবের বাড়িতে গিয়েছিলাম। উনি বললেন আপনার সাথে নাকি কাব্য চৌধুরীর ঠিক বনতো না। কি একটা ঝামেলা হয়েছিল।

কথাটা শুনে সাথে সাথেই নাইমের চোখ দুটো জ্বলে উঠল। সে প্রতিবাদ করল।

–“একদম ই না স্যার। আমার সাথে কাব্য ভাইয়ের খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। উনি মাঝে-মাঝেই আমাদের বাড়িতে আসতেন। আমিও যেতাম। ঝামেলার তো কোনো প্রশ্নই ওঠেনা। কিন্তু আপনি বললেন বলেই একটা কথা বলছি ওই আসিফ সাহেবের সাথে
কাব্য চৌধুরীর একটা ঘটকা আছে!

“মানুষ কত বোকা বোকা কথায় ধরা দিয়ে দেয়, দেবোপম মনে মনে হাসলেন। মুখে কিছু বুঝতে পারিনি এমন ভাব এনে বললেন।

–“কি বলুন তো!

–“কি তো ঠিক বলতে,পারবোনা। তবে ধার টার নিয়ে বোধহয়। কাব্য চৌধুরীর সাথে মাঝে মাঝেই চোটপাট লেগে থাকতো। একবার তো প্রায় হাতাহাতিও হয়ে গিয়েছিল কি একটা ব্যাপার নিয়ে। আমরা গিয়ে আটকেছিলাম।

–“আচ্ছা এরকম ব্যাপার নাকি! তাহলে ওনাকে একবার ক্রশচেক করতে হয়। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

বলেই দেবোপম উঠে দাঁড়ালেন।

–“চা খেয়ে যাবেন না স্যার!

(নাইম জিজ্ঞেস করল! এখন তার মুখে একটা হাসি)

দেবোপম ও হেসে উত্তর দিলেন।

–“পরে কোনোদিন হবে। কেস টা মিটে যাক।

তারপর দেবোপম বেরিয়ে যাচ্ছিলেন তখন নাইম ইতস্তত করছে দেখে প্রশ্ন করলেন।

–“নাইম সাহেব আরও কিছু বলবেন!

নাইম তখন দাড়ি চুলকে উত্তর দিল।

–“না তেমন কিছু না। তবে একটা কথা বলা দরকার মনে হয়। জানিনা কতটা হেল্প হবে আপনার কেস এ। তারপরেও বলছি, রিচা ভাবি খুব একটা সুবিধের নয়।

দেবোপম তখন ভুরু কুঁচকালেন।

–কেন বলুন তো!

নাইম তখন ম আবার ইতস্তত ভাবে জবাব দিলো।

–“না মানে। কাব্য ভাই যখন ট্যুরে যেতেন তখন ভাবির কাছে কে একজন মাঝে মাঝেই আসতো।

দেবোপমের তখন চোখ দুটো জ্বলজ্বল করে উঠল, তিনি নাইমকে তা বুঝতে না দিয়ে বললেন।

–“অনেক ধন্যবাদ নাইম সাহেব। আপনি অনেক হেল্প করলেন।

তারপর ওখান থেকে বেরিয়ে আর আসিফ সাহেব বা রিচার কাছে গেলেন না। একটা তৃতীয় মানুষের গন্ধ এখন পাচ্ছেন দেবোপম। সেটা অরূপ কি!
সে ও হতে পারে। আবার নাও। আচ্ছা আসিফের সাথে কাব্যর ঝামেলাটা কি নিয়ে হয়েছিল!
তারপর আবার হাতাহাতি! নাহ এখানে থেকে আর কিছু হবেনা। তারপর থানায় ফিরে এলেন। ওনার মাথায় অনেক অঙ্ক ঘুরছে এখন। ঠান্ডা ভাবে বসে ভাবতে হবে।
.
.
.
এদিকে রিচার কয়েকটা দিন খুব দিশেহারা ভাবে কেটেছে। সবকিছু সামলে উঠতে উঠতে। কাজ শ্রাদ্ধ। লোকজনের হাঙ্গামা। তারপর পুলিশ স্টেশনেও বেশ কয়েকবার ছুটতে হয়েছে। কোথা থেকে কি হয়ে গেল! কিন্তু যা হল সেটা ভালোর জন্যই হলো বোধহয়। এমনিতেও সে পালাতো। কারন কাব্য চৌধুরী একটা ক্রুর শয়তান। একদম শেয়ালের মতো। দেরীতে হলেও সে বুঝেছে। কিন্তু তা কাব্য চৌধুরীর জন্য না। যে মানুষটাকে সে স্কুল জীবন থেকে ভালোবেসে এসেছে তার জন্য। হয়ত বাবার বিরুদ্ধে গিয়ে যদি সেদিন তাকেই বিয়ে করতো এই দিন দেখতে হতোনা। কিন্তু উপায় ছিলনা তখন। একজন বেরোজগারী ছেলের সাথে কোনো বাবা ই তার মেয়ের বিয়ে দেবেনা। যাইহোক। ওসব ভেবেও লাভ নেই আর। অনেক দূর এগিয়ে এসেছে সে। কিন্তু একটা ব্যাপার তাকে কদিন ধরে ভাবাচ্ছে। অরূপের ব্যবহারে কয়েকদিন ধরে বেশ পরিবর্তন এসেছে। কেন কে জানে! কেমন একটা ঘোরের মধ্যে থাকে। আপন মনে চিন্তা করে। অসংলগ্ন কথা বলে। একবার বলছে কাজ টা ও করেছে, একবার বলছে করেনি। একবার বলছে গয়না গুলো ওর কাছেই আছে, একবার বলছে নেই। অদ্ভুত তো। ওকে সন্দেহ করার কোনো কারন নেই। কারন ভালোবেসে যখন ওর জন্য সব ছাড়তে পেরেছে। তাকে অবিশ্বাস করার কোনো মানে হয়না। চোখ বন্ধ করেই ভরসা করা যায়।কারন সবাই স্বেচ্ছাচারী, ব্যভিচারী কাব্য চৌধুরীর মত হয়না। এই পৃথিবীতে অরূপের মতো ভালো মানুষ রা আজও আছে। যারা ভালোবাসার ভাষা জানে। যারা ঠকাতে জানেনা। সেই ভালোবাসার জন্য কাঙাল হয়ে যেতে পারে রিচা। এমনকি!

নিজের পেটের উপর হাত বুলিয়ে নিজের মনেই হাসল রিচা। সেই হাসি একসময় অট্টহাসিতে পরিণত হল। তুমি হেরে গিয়েছো কাব্য চৌধুরী। তোমার অতিরিক্ত অহংকার তোমাকে ডুবিয়ে দিয়েছে। তোমাকে তোমার ঠিকানায় পৌঁছে দিয়েছে।
.
.
.
এতক্ষণ চিন্তার মধ্যে ডুবে গিয়েছিল রিচা। রাত দশটা বাজছে। বেল বাজতে টনক নড়ল। উঠে দরজা খুলতে গেল। হয়ত অরূপ। ওর আসার কথা ছিলনা। কিন্তু ও বলছিল আসতে পারে। ও ই হবে হয়ত। উত্তেজনা মিশ্রিত ভয় নিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেল রিচা।শরতের রাতে, দরজাটা খুলে কিছু বোঝার আগেই অন্ধকার থেকে একটা হাত এসে ওর চোখ মুখ চেপে ধরলো। মরিয়া হয়ে সেই হাত টা মুখ থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে রিচা অনুভব করল ওর পেটের চামড়া ভেদ করে একটা কিছু ঢুকে গেল শরীরের ভিতর। গলগল করে গরম রক্ত বেরোচ্ছে। আর কিছু বোঝার আগেই আরোও কয়েকবার সেটা পেটের এদিক-ওদিক ছুটে গেল। রিচার চোখ ভারী হয়ে এলো। সবকিছু কেমন অন্ধকার হয়ে এলো। সেই অন্ধকার থেকে একটা পিশাচের হাসি কানে এলো! রিচা মানসচক্ষে দেখতে পেলো কাব্য চৌধুরী হাসছে।একটা বিকট শব্দে।
.
.
চলবে……………♥
.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here