ক্রমশ ব্যভিচার পর্ব ৩

গল্প :- ক্রমশ
ব্যভিচারী..
পর্ব :- ০৩
Writer :- Kabbo Ahammad
.
.
.
-: পাঁচদিন পর……….

~রিচা মেঝের উপর হাত পা ছড়িয়ে বসে আছে।
রক্তে ভেসে যাচ্ছে চারদিক। অলরেডি পুলিশ এসে পড়েছে। অনেক উৎসুক লোক জমা হয়েছে। সবাই ভয়ে ভয়ে দেখছে। এগিয়ে যাওয়ার সাহস কেউ পাচ্ছেনা কিন্তু দেখার ইচ্ছেটাও ছাড়তে পারছেনা কেউ। খুন তো রোজ রোজ দেখা যায়না। কিছু কনস্টেবল তাদের ঠেকিয়ে রেখেছে। ঘর তছনছ হয়ে গেছে। এদিক-ওদিক সবকিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ম্যাসাকার পুরো। একপাশে বিছানার উপর রিচার ব্যাগ। বাপের বাড়ি থেকে ফেরার পর যেমন অবস্থায় ছিল তেমন অবস্থাতেই রয়েছে। সবার দৃষ্টি চুরি করে রক্তের সমুদ্রের মাঝে শুয়ে আছে কাব্য চৌধুরী। তার রক্তশূন্য মুখ দেখে যে, কেউ বলে দিতে পারে, ও দেহে প্রাণ নেই।

পুলিশ অফিসার দেবোপম বাবু একহাতে নাকে রুমাল চেপে ধরে কুঁজো হয়ে কাব্য চৌধুরীর অবচেতন শরীরের উপর ঝুঁকে কিছুক্ষণ দেখলেন। মাথায় পিছনে কিছু একটা দিয়ে আঘাত করা হয়েছে বোঝা যাচ্ছে।হয়তো ভোঁতা কিছু দিয়ে। ওখানেই ক্ষতটা স্পষ্ট। তবে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট না পেলে বলা যাবেনা আঘাতটা ওইকারনেই হয়েছে কিনা, নাকি অন্য কোন ভাবে।যেটাকে আড়াল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। দেবোপম বাবু তখন ডাক দিলেন।

–“পরিতোষ!

ততখন পরিতোষ নামে একজন কনস্টেবল এগিয়ে এসে স্যালুট ঠুকে জিজ্ঞেস করল।

–“হ্যাঁ স্যার বলুন।

–“লাশটা পোস্টমর্টেম এ পাঠানোর ব্যবস্থা করো।

–“আচ্ছা স্যার।

–“আর হ্যাঁ শোনো ওই ভিড় সরাও। বিরক্তিকর লাগছে।

–“হ্যাঁ স্যার।

–“দাঁড়াও। কে প্রথম লাশ দেখেছে!

–“স্যার ওই ওনার স্ত্রী আর প্রতিবেশী তিনজন। যারা দরজা ভেঙে ঢুকেছিল।

–“আচ্ছা কেবল তাদের বাদ দিয়ে বাকি যেকটা দাঁড়িয়ে আছে, তাদের নাম ঠিকানা লিখে নিয়ে আপাতত বিদায় করো।

–“আচ্ছা স্যার।

–“আর!

–“কি স্যার!

–“কিছু না বাদ দাও। আমি দেখছি। তুমি ওগুলোই করো আপাতত।

–“ইয়েস স্যার”

তখন কনস্টেবল আর একবার স্যালুট ঠুকে পরিতোষ বেরিয়ে গেলো।

দেবোপম চাইলেই সেকেন্ড অফিসার কে পাঠাতে পারতেন, কিন্তু কি একটা মনে হতেই নিজেই এলেন ক্রাইম সিনে। খুনের হার রিসেন্টলি এতই বেড়েছে যে খুনের খবর শুনলে খুব একটা বিচলিত হন না তিনি।বরং কোনোদিন কোথাও একটাও খুন না হলে অবাক হন। তখন উঠে ঘরের চারিদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিলেন। একপাশে রিচা জড়পদার্থর মতো বসে আছে।ওর মুখ থেকে রঙ উড়ে গেছে। চোখ দুটো ভয়ে মাখামাখি। সেই পাংশুটে মুখের দিকে তাকিয়ে দেবোপম মনে মনে বললেন।

“শকড! আশ্চর্য নয়। তোমার কাছে পরে আসছি!

তারপর পাশের ঘরের দিকে এগিয়ে গেলেন। ঘর তছনছ হয়ে আছে পুরো। ড্রেসিংরুমের ড্রয়ার গুলো মাটিতে লুটোপুটি খাচ্ছে। আলমারির দরজা হাট করে খোলা। এদিক ওদিক কাগজ, জামাকাপড় এবং টুকিটাকি জিনিসপত্র ছড়িয়েছিটিয়ে রয়েছে। দুজন কনস্টেবল সেগুলোই গুছিয়ে তুলে তুলে দেখছে।দেবোপম কে দেখে তাদের ই একজন এগিয়ে এসে বলল।

–“স্যার লকার ভাঙা। ভিতরে কিছু নেই। রবারির কেস মনে হচ্ছে।

দেবোপম তখন ভুরু কুঁচকে বললেন।

–“দেখে তো তাই মনে হচ্ছে। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি কিছু বলা ঠিক হবেনা।

“তারপর ছড়ানো-ছেটানো কাগজপত্র গুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একটা কাগজের উপর এসে থামলেন। এগিয়ে গিয়ে হাতে তুলে নিলেন। ওখানে বড়ো বড়ো হরফে লেখা আছে ”নিউ লাইফ ফার্টিলিটি ক্লিনিক”

লেখাটা পড়ে একটু থমকে রইলেন দেবোপম। তারপর কাগজটাকে ভাঁজ করে পকেটে ভরে রাখলেন। আর একবার ঘরটার এদিক-ওদিক চোখ বুলিয়ে পাশের ঘরে ফিরে এলেন। বডি সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ততক্ষণে। রিচা বিছানার উপর উঠে বসেছে। মাথা নামানো। মুখে কোনো কথা নেই। দেবোপম সেদিকে এগিয়ে গিয়ে প্রশ্ন করলেন।

–“আপনি কাব্য চৌধুরীর স্ত্রী, রিচা!

রিচা মুখ তুলে ওর দিকে তাকালো। কথা বললনা। ঘাড় নাড়ল স্রেফ। তখন অফিসার আবার বললো।

–“হুম আপনি কোথায় গিয়েছিলেন!

–“বাবা মার কাছে!

–“আচ্ছা কোনো বিষয়ে ঝগড়া হয়েছিল না এমনি গেছিলেন?

–“এমনি। ও ই আমাকে যেতে বলেছিল। (রিচা দাঁতে দাঁত চেপে উত্তর দিল)

–“হু, আচ্ছা তাহলে কাব্য চৌধুরী আপনাকে যেতে বলেছিল।

–“হ্যাঁ। ও বলেছিল। আমি অনেক দিন যাইনি আর ও বলেছিল ওর ছুটি আছে। ও বাড়িটা সামলে নেবে। আমি যেন ঘুরে আসি।

–“আর আপনি চলে গেলেন। ভালো। ফিরলেন কখন?

–“আজ সকালে। নটার সময়।

–“ফেরার পর কি কি হল একটু বলুন।

রিচা তখন একটু নড়েচড়ে বসল, তারপর বলল।

–“আমি ফেরার আগেই ওকে ফোন করছিলাম। কিন্তু ও ফোন তুলছিলনা। প্রথমে ভাবলাম হয়ত সারারাত কাজ করে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। তাই সকালে ঘুমোচ্ছে। আমি তাই আর ফোন করিনি। এখানে আসার পর কলিং বেল বাজালাম। বেশ কয়েকবার। ফোন ও করলাম। কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে……..

রিচার কথা শেষ হবার আগেই দেবোপম তাকে থামিয়ে প্রশ্ন করলেন।

–“আপনাদের সদর দরজার স্পেয়ার কি নেই!

–“আছে। কিন্তু আমার কাছে ছিলনা সেসময়।

–“কেন?

–“নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন ছিলনা। ও বলেছিল ও বাড়িতেই থাকবে। নিয়ে যেতে হবেনা। তাই আমি নিয়ে যাইনি।

–“আচ্ছা তারপর কন্টিনিউ করুন।

–“হ্যাঁ তো আমি অনেকবার ডাকার পর সাড়া না পেয়ে নাইম ভাই এবং আসিফ ভাই কে ডাকলাম। ওনারা এসে বার কয়েক ডাকলেন। তারপরেও কোন সাড়া না পেয়ে দরজা ভাঙা হয়। আর তারপর…………

“রিচা কথা শেষ করতে পারলোনা। ওর গলা জড়িয়ে এলো। দুহাত দিয়ে চোখদুটো ঢেকে নিলো। দেবোপম তখন মুখ গম্ভীর করে বললেন।

–হ্যাঁ “বুঝলাম। আচ্ছা এই নাইম ভাই এবং আসিফ ভাই কারা?

তখন ঘরে কনস্টেবল দের সাথে দুজন দাঁড়িয়েছিলেন।তারা এগিয়ে এলেন। দেবোপম তাদের দিকে মুখ করে দাঁড়ালেন।

–“আপনারা!

তখন দাঁড়িয়ে থাকা ওই দুজন ব্যক্তির একজন বললো।

–“স্যার আমার নাম আসিফ। ভাবি আমাকে প্রথম ডেকেছিলেন।

–“আচ্ছা আর আপনি! +দেবোপম অন্য একজনের দিকে প্রশ্ন করলেন)

–“আমার নাম নাইম শেখ। আসিফ ভাইয়ের সাথে আমাকেও ডেকেছিলেন ভাবি।

–“আচ্ছা তা কি হয়েছিল বলতে পারবেন?

তখন আসিফ বললেন। “আমাদের ডাকার পর আমরা এসে কয়েকবার কাব্য ভাইয়াকে ডাকলাম। কিন্তু কোন উত্তর পেলাম না। তারপর ভাবি বললেন দরজা ভেঙে ফেলতে। তো আমরা দরজা ভেঙে ফেললাম।

–“আচ্ছা ভাবি বললেন দরজা ভাঙতে। তা আপনাদের মধ্যে কে থানায় খবর দিয়েছিল? (দেবোপম জড়িপ করে নিলেন দুজনকে)

–“আমি স্যার। (নাইম উত্তর দিলেন)

–“আচ্ছা। আপনারা কাল সন্ধ্যে বা রাতে কোন আওয়াজ পাননি কোনোকিছুর? চিৎকার বা অন্যকিছুর!

আসিফ কিছুক্ষণ ভেবে উত্তর দিল।

–“উঁহু তেমন কিছু তো মনে পড়ছেনা! স্বাভাবিক যেমন শুনি রোজ, তার বাইরে আলাদা কিছু কানে আসেনি।

–“আর আপনি?

(দেবোপম নাইমের দিকে তাকালেন। লোকটার মধ্যে একটু জড়োসড়ো ভাব। তখন নাইম ও একটু ভেবে উত্তর দিলেন।

–“আমারও তেমন কিছু মনে পড়ছেনা। তবে কাল রাত নটার দিকে একটা ভারী কিছু পড়ে যাওয়ার আওয়াজ পেয়েছিলাম। আমি ভাবলাম তেমন কিছু না হয়ত।

–“আচ্ছা আপনি শুনতে পাননি তেমন কিছু!

(কথাটা বলে দেবোপম আযিফের দিকে ঘুরলেন)

আসিফ তখন একগাল বোকা বোকা হাসি মুখে উত্তর দিলো।

–“কই! সেরকম তো কিছু শুনেছি বলে মনে পড়ছেনা।

–“স্ট্রেঞ্জ পাশের বাড়িতে মার্ডার রবারি হয়ে যাচ্ছে আর আপনারা কেউ কিছু টের ই পাচ্ছেন না।

(দেবোপম চোখ দুটো দিয়ে মেপে নিলেন দুজনকে।একটা অসংলগ্নতা যে আছে সেটা পরিষ্কার। তখন কথা ঘোরালেন)

–“আচ্ছা দরজা তো বন্ধ ছিল বললেন। তাহলে লক করলো কে! মানে চাবি তো কেবল কাব্য চৌধুরীর কাছেই ছিল।

রিচা এবার বিছানা থেকে জবাব দিল।

–“এই দরজাটা অটোলক। টেনে দিলেই আটকে যায়।

–“আই সি। (দেবোপম মুখ গম্ভীর করে বললেন)

–“বেশ আপনাদের এখন আর কিছু বলতে হবেনা।থানায় গিয়ে একবার স্টেটমেন্ট গুলো দিয়ে আসবেন।আর হ্যাঁ এখন আপনাদের কেউই আউট অফ স্টেশন যাবেন না। যদি দরকার পরে আপনাদের থানায় আসতে হবে।

আসিফ তখন ভুরু কুঁচকে প্রশ্ন করলেন।

–“আমাদের আর কাজ কি! না মানে আমরা আর কি করবো!

দেবোপম তখন আসিফের কাঁধে হাত রেখে বললেন।

–“সে তো আমি বুঝবো। যা বললাম সেটুকু করুন। নাহলে ধরে নিতে হবে। এই ঘটনার জন্য আপনি দায়ী।

তারপর বেরিয়ে যেতে যেতে দেবোপম একজন কনস্টেবল ডেকে কানে কানে বললেন।

–“এই তিনজনের উপর একটু নজর রাখো। এরা কোথায় যাচ্ছে। কার সাথে দেখা করছে!

কনস্টেবলটি তখন –“ইয়েস স্যার” বলে সম্ভাষণ জানালো।

–“আচ্ছা কাব্য চৌধুরীর ফোন টা পেয়েছো!

–“না স্যার। দুটো ঘর তন্নতন্ন করে খোঁজা হয়েছে। কোথাও পাওয়া যাইনি।

–“হু ইন্টারেস্টিং। বাড়ির এদিক-ওদিক একবার খুঁজে দেখো তাও।

বলেই দেবোপম বাইরে বেরিয়ে এলেন। তারপর উপরের দিকে মুখ তুলে নাক চোখ কুঁচকোলেন। বড্ড রোদ।
.
.
চলবে……………..♥
.
আজ শুক্রবার এজন্য ছোট করে দিলাম। আর গল্পটা কেমন হচ্ছে জানান, আর রহস্য কি মনে আপনাদের?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here