#খড়কুটোর_বাসা
#পর্বঃ৪
#Jhorna_Islam
“কিছু মানুষের জীবন যায় অন্যের জন্য ত্যা’গ করতে করতেই” ইরহান ও তাদের মধ্যে একজন।
যুথি ইরহানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দেখে মেজাজ তার প্রচুর খারাপ।ভিতরে দুই রকম অনুভূতি হচ্ছে। একে তো ইরহানের উপর প্রচন্ড রা’গ হচ্ছে লোকটা এদের কে কিছুই বলল না। এমন মানুষ আছে দুনিয়ায়? নিজের রোজগারের টাকা দিয়ে যেই সংসার চলে সেই সংসারে তার খাওয়া জোটে পাতিলের ঝোল।লোকটা এতো বোকা কেন। নিজে বলেছেনা কিছু ঠিক আছে।
যুথি বলতো।তাকে কেনো কিছু বলতে দিলো না।ইরহান খাওয়ার প্লেটের দিকে তাকিয়ে ছিল যখন তখন তার মুখ টা দেখে যুথির ই কান্না পেয়ে গেছে।
আবার দেখো খু’দা পেটে নিয়ে কি সুন্দর বলল খিদে নেই। আবার নিজের প্লেটের মাংস ওর প্লেটে তুলে দিয়ে গেছে খাওয়ার জন্য।
লোকটা কি বুঝতে পারলো না যেই খাবার তার মুখে ঢুকলোনা সেই খাবার যুথির মুখে ও জোটবে না।
ইমন ইশান আর তার বউদের দিকে তাকালো যুথি কি সুন্দর একমনে খেয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে ওদের একমাত্র কাজই হচ্ছে খাওয়া। দুনিয়ার অন্য কিছুতে ওদের মন নেই।
তাছলিমা বানু আবার দুই ছেলেকে জিজ্ঞেস করছে কিছু লাগবে কিনা। লাগলে যেনো বলে।
বাহ্ মানুষ কতো অদ্ভুত। আজ ইরহান নিজের ছেলে না বলে সে যে খাবার রেখে চলে গেছে একটাবার বললও না খেয়ে যেতে।অথচ মায়েরা নাকি তাদের পেটের সন্তান না হলেও মুখ দেখে কিছু টা হলেও আন্দাজ করতে পারে সত্যি নাকি মিথ্যা বলছে। অথচ এই মহিলা ইরহান যে সারাদিন ও ভালো করে খায় নাই সেটা জেনেও চুপ রইলো।
যুথি রা’গে দাঁত কিরমির করতে করতে সকলের দিকে তাকায়। এই রা”ক্ষস গুলোর এখনো অর্ধেক খাওয়া ও হয়নি।মনে হচ্ছে পুরো পৃথিবীই এরা খেয়ে ফেলতে পারবে। তাছলিমা বানু ও ততক্ষণে নিজের জন্য খাবার নিয়ে বসেছে।পাতিলের সব গুলো মুরগির মাংস নিজের প্লেটে ঢেলে নিয়ে বসেছে। কোন লেভেলের খাদক হলে এতো পরিমাণ খাবার একা নিয়েই বসে খেতে। একটার থেকে একটা কম যায় না।
যুথির এদের খাওয়া দেখে সহ্য হলো না।এমনিতেই তার শরীর জ্বলতে আছে কিছু বলতে পারলোনা এদের।তার উপর এদের খাওয়া।নিজেদের জন্য সব রেখে তার আর তার স্বামীর ভাগ্যে কিনা জুটলো আলু, ঝুল আর দুই টুকরো মাংস?
ওরা দুইজন যখন না খেয়ে থাকবে ওরা কেন পেট পুরে খাবে? এটাতো যুথি হতে দিবে না কখনো হতে দিবে না।তার স্বামী মহান হতে পারে সে একদম না।
এতো রা’গ আর কষ্টের মাঝে যুথির মাথা কাজ করে না।এখন যেমন ভেবেও পাচ্ছে না কি করে ওদের খাওয়া প’ন্ড করবে। মাথা ঠান্ডা করে ভাবতে লাগলো যুথি।
আশেপাশে তাকিয়ে ভাবনার মাঝেই কিছু একটা দেখে মাথায় বুদ্ধি এসে গেছে কি করবে।মুখে হাসি ফোটে উঠে। পেয়ে গেছে এদের খাওয়া বন্ধ করার উপায়। তোদের জন্মের মতো খাওয়া সাধ মিটাচ্ছি আমি দাড়া বলেই, আগে ইরহানের প্লেট থেকে মাছের লেজ টা ও নিজের প্লেট এ তুলে নেয়।তারপর কাঙখিত বস্তু টা পাটির কিনারা থেকে বাম হাত দিয়ে ধরে নেয়। তারপর কৌশলে নিজের খাওয়ার প্লেট টা পাশে রাখা একটা মোড়ার উপর রাখে।
নিজের সামনে ইরহানের প্লেট টা রাখে তারপর ভাত মেখে এমন ভাব করছে সে যেনো খাচ্ছে। ওদের যুথির দিকে মনোযোগ ও নেই ওরাতো খাওয়া নিয়ে ব্যস্ত।
যুথি বাম হাতে রাখা কাঙ্ক্ষিত জিনিস টা এবার নিজের প্লেটে রাখে তারপর আবার ভাত নাড়াচাড়া করতে থাকে যেনো মনে হয় এটা তরকারিতে ছিলো প্লেটে ঝুল থাকায় যুথির আরো সুবিধা হয়েছে।
সবার মুখের দিকে তাকিয়ে একটা চিৎকার করে বলে ওওওও নকল শ্বাশুড়ি আম্মা গোওওও এইডা আমি কি দেখলাম গো।
হায় হায় এইটা কি আমারতো কেমন যেনো লাগতাছে।
সকলে যুথির চিৎকার শুনে নিজেদের খাওয়া রেখে যুথির দিকে তাকায়।
তাছলিমা বানু বলে উঠে কি হয়েছে এমন চেচাচ্ছ কেন মেয়ে?
আজকের খাবার কে রান্না করছে নকল শ্বাশুড়ি আম্মা?
ইমন আর ইশানের বউ দুই জন একটু ভাব নিয়ে বলে,,আমরা রান্না করেছি।খুব ভালো হয়েছে রান্না তাই না? দেখতে হবে না কে রান্না করেছে।
এরকম রান্না জীবনে খেয়েছো কখনো?
নাহ আর জীবনে খেতেও চাই না।
চাইবা কিভাবে কু’কু’রের পেটে ঘি হজম হয় নাকি! সারাজীবন যার শাক পাতা খেয়ে অভ্যাস সে কি বুঝবে মাংসের স্বাদ।
তাছলিমা বানু কটমট করে তার বৌমাদের দিকে তাকায়। তাছলিমা বানুর তাকানো দেখে দুইজন ই চুপ হয়ে যায়। এবার তাছলিমা বানু যুথিকে উদ্দেশ্য করে বলে,,,
কি হয়েছে বলোতো? খাওয়ার টাইমে কেউ এমন চিৎকার চেচামেচি করে? শান্তিতে খেতে বসেছিলাম তো নাকি?
আর শান্তি নকল শ্বাশুড়ি আম্মা! এখন আপনারে একটা গুপ্তধন বের করে দেখাবো।
গুপ্তধন মানে?
যুথি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তার প্লেট থেকে একটা তেলাপোকা বের করে নিয়ে আসে। তারপর সেটা সকলের সামনে ধরে ঘুরাতে ঘুরাতে বলে দেখেন এইটা কি।মুরগির মাংসের ঝোল থেকে পেয়েছি।
এইটাকি আপনারা মাংসের স্বাদ বাড়ানোর জন্য দিয়েছেন নাকি গো? ছিঃ ছিঃ এর থেকে তো আমাদের ছোটলোকদের ঘাস পাতা অনেক ভালো দাঁত চিবিয়ে চিবিয়ে কথাটা ইমন ও ইশানের বউয়ের দিকে তাকিয়ে বলে।
ইমন আর ইশানের বউ তেলাপোকা দেখেই ভয়ে চিৎকার করে উঠে । কিন্তু যুথি কোনো ভ’য় না পেয়ে কি সুন্দর তাদের সামনে ঘুরাচেছ।
তাদের ভ’য় পেতে দেখে যুথি ইচ্ছে করে আরো এগিয়ে নিয়ে যায় তাদের সামনে তেলাপোকা টা। তারা আরো চিৎকার করে। যুথি আর না ঘে’টে ফেলে দেয় তেলাপোকা।
আমার না কেমন ব’মি ব’মি পাচ্ছে বলেই ওয়াক ওয়াক করে ব’মির ভান করে যুথি। বসা থেকে উঠে গিয়ে সকলের প্লেটের সামনে গিয়ে প্লেটের দিকে তাকিয়ে ওয়াক ওয়াক করে বলে আল্লাহ আপনারা এগুলো কি করে খেলেন।
একেইতো মুরগির মাংসে তেলাপোকা পেয়েছে এটা শুনেই সকলের গা গোলাচ্ছে তার উপর যুথি আবার তাদের সামনে গিয়ে ওয়াক ওয়াক করায় তাদের ও গা গুলিয়ে ব’মি এসে পরবে এমন অবস্থা। ইমনের বউ লিমা তো সত্যি ব’মি করে দিবে। তাই দৌড়ে তারাতাড়ি বসার ঘরের ওয়াশরুমের ভিতরে ঢুকে পরে লিমা।
ইমন আর ইশান হাত ধুয়ে উঠে যায়। ঠিকঠাক ভাবে খেতে পারলোনা। তাছলিমা বানুর তো একেবারেই খাওয়া হলো না।প্লেটে হাত দিতে নিয়েছিলো মাত্র খাওয়ার জন্য। ভাগ্যিস
খায়নি। ভেবেই হাফ ছাড়ে তাছলিমা বানু। তারপর দুইজন কে এগুলো পরিষ্কার করার জন্য বলে।
ইচ্ছে মতো বকতে থাকে দুই বউকে রান্নার সময় মন কই থাকে।দেখেশুনে রান্না করতে পারেনা। বউদের এমন কান্ড জ্ঞানহীন হলে চলে না।নানান ধরনের কথা শুনাতে থাকেন।
লিমা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে শোনে তার শ্বাশুড়ি তাদের বকে উদ্ধার করছে।যুথির দিকে চোখ যায়। যুথি মিটমিট করে হাসছে।রা’গ হলেও চুপ থাকে।তারপর বলে কিছু সময় পর এসে সব করবে এখন এগুলো পরিষ্কার করতে গেলে দেখে আরো ব’মি পাবে।
তারপর একে একে সবাই খাওয়ার জায়গা থেকে চলে যায়। যুথি ভিতরে ভিতরে হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। সবাই চলে যাওয়ার পর যুথি ওয়াশরুমে গিয়ে ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে আসে।
তারপর ঐসময়ের মোড়ার উপর রেখে দেওয়া প্লেট টা হাতে নিয়ে ইরহানের রুমের দিকে যেতে থাকে।
———————————————–
তখন যুথি তেলাপোকা টা পেয়েছিলো পাটির পাশ থেকে। মনে হয় কারো পারা লেগে মরে গেছে। কেউ দেখেও নি।তেলাপোকা টা দেখেই যুথির মাথায় বুদ্ধি আসে এদের খাওয়া নষ্ট করার।যুথি আবার অন্যান্য মেয়েদের মতো এসব তেলাপোকা, টিকটিকিতে ভ’য় পায় না।তার সাহস বরাবরই একটু বেশি।
———————————————
খাবার নিয়ে ইরহানের রুমে এসে দেখে ইরহান বিছানায় আধশোয়া হয়ে চোখের উপর হাত দিয়ে শুয়ে আছে।
যুথি রুমের দরজাটা লাগিয়ে ইরহানের পাশে প্লেট টা নিয়ে এসে বসে।খাটের পাশের টেবিল টা তে আগে থেকেই পানি রাখা আছে।
যুথি ভাত মাখাতে মাখাতে বলে,,এই বোকা পুরুষ উঠে বসে হা করুন তো।
ইরহান চোখ থেকে হাত সরিয়ে যুথির দিকে তাকায় তারপর বলে, আমি খাবোনা যুথি তুমি আবার এগুলো নিয়ে এসেছো কেনো? তুমি গিয়ে খেয়ে নেও।আমার একদম খিদে নেই।
আপনি না খেলে আমিও একদম খাবো না।আমার কিন্তু প্রচুর খিদে পেয়েছে। এখন আপনি যদি চান আমি না খাই তাহলে আপনিও খেয়েন না।
ইরহান যুথির দিকে তাকিয়ে হা করে। যুথি হাসি মুখে ইরহানের মুখে খাবার তুলে দেয়।
কিসের চিৎকার শুনেছিলাম যুথি তখন?
আমার দাদি একটা প্রবাদ বলতো জানেন ” এ’ছ’ড়ার সাথে তে’ছ’ড়া মিলে বেগুনের সাথে শুটকি মিলে।”
আপনার মা যেমন তার বউমা হিসেবে আমিও ঠিক তেমন।দুইজন ই নিজের স্বার্থটা বুঝে বুঝলেন?
শ’য়’তা’নের সাথে শ’য়’তানি না করলে হয় না। যারা ভালোবাসার মর্ম বুঝে না তার প্রতি কিসের ভালোবাসা?
আপনি বাঁচলে বাপের নাম। আপনার এই ভালোমানুষির না কোনো দাম নেই। আপনার ভালোবাসার সুযোগ নিবে।ভালোবাসা ফিরতি দিবে না। আজ কাল নিজের বাপ মা ই আপন না। এরাতো আপনার পর। কথায় আছে নিচ দিক দিয়েই সব সময় পানি যায়।আপনি ওদের যতো মাথায় তুলবেন ওরা ততো আপনার মাথায় চড়ে বসবে। দুনিয়ায় ভালো মানুষ রা ভালো থাকে না খারাপরাই ভালো থাকে।
পুরুষ মানুষ কে এমন মানায় না।আপনি কেন ওদের জন্য নিজের হ’ক ছাড়বেন? এই যে না খেয়ে এসে পরলেন আপনার কথা কি ভেবেছে? একবার মুখের কথাটা বলেছে? আপনি পারতেন এমন করতে ওদের মধ্যে থেকে কেউ না খেলে? নিজের মধ্যে রাগ আনুন প্রতিবাদ করতে শিখুন।যে যেটার যোগ্য না তাকে সেটা দিবেন না।
কিছু মানুষের স্বভাব খুবই খারাপ এদের বসতে দিলে খেতে চায়।আপনি যতো দিবেন আরো চাইবে।আপনার কথা আর ভাববে না।
আরে বোকা পুরুষ আপনি কার থেকে কি আশা করেন? যেখানে নিজের আপন ই এই দুনিয়ায় আপন না আর এরাতো সৎ ই। আপনি এদের ক’লিজা কেটে ভুনা করে দিলেও বলবে লবণে কম পরেছে।
#চলবে,,,,,,
বিঃদ্রঃ গঠন মূলক মন্তব্য করবেন।আপনাদের মন্তব্য আমাকে উৎসাহ যোগায়।#খড়কুটোর_বাসা
#পর্বঃ৫
#Jhorna_Islam
যুথি ইরহান কে কথা গুলো বলতে বলতে প্লেটের প্রায় অর্ধেকের বেশি খাবার খাইয়ে ফেলেছে।ইরহান যুথির বলা সবগুলো কথা মনোযোগ সহকারে শুনেছে। পাল্টা কিছু বলেনি।
যুথির কথাগুলো চিরন্তন সত্যি ইরহান ও মানে। কিন্তু এতোদিন যে সে এদের আসল রুপটা দেখতে পায় নি। এদের জন্য এতোকিছু করে গেলো আর এরা এতোদিন মুখোশ পরে ছিলো।
এইযে এদের আসল মুখোশ ধীরে ধীরে সামনে আসছে ইরহান চেয়েও কিছু বলতে পারছে না। ইরহান বরাবর ই শান্তি প্রিয় লোক।ঝু’ট ঝামেলা থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করে। ইরহানের বাবা মারা যাওয়ার আগে বলেছিলো ইরহান যেনো ওদের খেয়াল রাখে। ইরহান ভেবে পায়না এতোদিন কিছু না করে এখন কেনো তারা এমন করছে। তাকেই বের করতে হবে এর আসল কারণ।
এতোদিন ইরহানের সাথে এরা এমন ব্যবহার করেনি।ওদের সাথে সম্পর্কটা এতোটা কাছের না হলেও এমন আচরণ করে নি কেউ।ইরহানের মাথায় আসছেনা এদের এমন আচরণেের কারণ। ইরহান ঐসময় ওদের কথা গুলো শুনে চাইলেই প্রতিবাদ করতে পারতো কেন জানি মন সায় দেয়নি।
ইরহানের ভাবনার মাঝেই যুথি ইরহানের মুখের কাছে আবার খাবারের লোকমা তুলে ধরে।ইরহানের ধ্যা’ন ভাঙে।
এই দেখো যুথি তোমার কথার তালে পরে সব আমি একাই খেয়ে ফেলতেছি। তুমিতো এখনো এক লোকমা ও মুখে নাও নি।
আমি আর খাবোনা বাকি টুকু তুমি খাও।পেট ভরে গেছে আমার।
জানা আছে এই অল্প কয়টা খেয়ে কি পেট ভরেছে আপনার। চুপচাপ খেতে থাকেন।
তোমার না প্রচুর খিদে পেয়েছে? আমি আর খাবো না এবার তুমি খাও।
— নানা আপনি আরেকটু খান।
— এখানে অল্প খাবার আছে যুথি এটুকু তে তোমার পেট ভরবে না। তুমি খাও।
— আচ্ছা ঠিক আছে। দুইজন একসাথে খাবার টুকু শেষ করি।আপনি একবার আমি একবার।
— একদম না। এইটুকু খাবারে বাচ্চাদের ই পেট ভরবে না। আবার আমাকে কেনো জোর করছো? আমিতো খেয়েছি।তুমি একটুও খাওনি।
— আপনি আমার কথা শুনবেন না?
— নাহ্।
— দুইজন এক প্লেট থেকে একসাথে খেলে এইটুকুতেই পেট ভরবে। আমার কথা বিশ্বাস না হলে খেয়ে দেখেন।
ইরহান কে যুথির সাথে অগত্যা খেতেই হলো।কি সুন্দর করে যুথি নিজের মুখে একবার খাবার দিচ্ছে আবার ইরহানের মুখে একবার পরম যত্নে তুলে দিচ্ছে। ইরহানের জানা নেই কবে কেউ এতো যত্ন সহকারে তাকে খাইয়ে দিয়েছে। মা মারা গেছে সেই ছোট্ট বেলা ঐসময়ের তেমন কিছুই মনে নেই।শুধু মাঝে মাঝে অনেক চেষ্টা করলে ঝাপসা স্মৃতি ভেসে ওঠে চোখে।
যুথির এতো যত্ন সহকারে খাওয়ানো দেখে কেন জানি ইরহানের চোখ দুটি ছলছল করে উঠে। ইরহান খুব ভালোবাসার কাঙাল।নিজের মা কে ছোট বেলা হারিয়েছে। বাবা কাজের জন্য বাইরে থাকতো বেশি সময় দিতে পারতো না। তাছলিমা বানু ইরহানের ব্যাপারে সব সময় উদাসীন থাকতো।তাও ইরহান একটু ভালোবাসা পেতে কতো কি করতো। পিছন পিছন ঘুরতো মা মা করে।
এই যে নিজের সব শখ আল্লাদ বাদ দিয়ে প্রবাস পারি জমিয়েছিলো ভেবেছিলো এবার মা কাছে টেনে নিবে আঁচল তলে একটু ঠাঁই দিবে। প্রতিবার যখন মায়ের ফোন থেকে কল যেতো বা ভাইদের ফোন থেকে কল যেতো ইরহান কি খুশি হতো। কিন্তু ওরা ওদের প্রয়োজনে কল দিতো ইরহানের খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য না। তাছলিমা বানু যা বলতো ইরহান তাই করতো মনে মনে আশা ছিলো একদিন না একদিন ঠিক একটু ভালেবাসা দিবে কাছে টেনে নিবে।
কিন্তু আজ সকালে নিজের কানে সব শোনার পর ইরহানের সব ধারণা ভুল হয়ে গেছে।
ইরহান মুখে খাবার তুলতে তুলতে যুথির মুখের দিকে তাকায়। যুথি অতটা সুন্দরী না সাধারণ একটা মুখ অথচ ইরহানের কি যে ভালো লাগছে দেখতে। নিষ্পাপ মুখ’শ্রী।
যুথির দিকে তাকিয়ে তাকিয়েই ইরহানের মনে হলো ও এই মেয়েটাকে ঠকিয়েছে।চরম ভাবে ঠকিয়েছে। স্বামীর দায়িত্ব তো ইরহান পালন করতে পারেনি। প্রতিটা মেয়েরই স্বামী শ্বশুর বাড়ি নিয়ে হাজারো স্বপ্ন থাকে।যুথির ও নিশ্চই আছে।
খাবার আর গলা দিয়ে নামলো না ইরহানের।যুথি খাবারের লোকমা মুখের সামনে নিলে না করে দেয়।যুথি আর জোর করে নি।
নিজেও খাবার তারাতাড়ি শেষ করে হাত ধুয়ে প্লেট টা খাটের নিচে রেখে দেয় কাল সকালে নিয়ে জায়গা মতো রাখবে।এখন ঐ লোক গুলোর মুখোমুখি হওয়ার একটু ও ইচ্ছে নেই। ইরহানের মুখে টা ধুয়ে দিয়ে নিজের ওড়না দিয়ে মুছে দেয়।
যুথি তোমার এখানে এইভাবে এসে পরা একদম ঠিক হয়নি।
হুট করে ইরহানের এমন কথায় যুথি কিছুটা চমকে ইরহানের দিকে তাকায়।
মানে?
আমি অন্য কিছু ভেবে রেখেছিলাম যুথি তুমি এখন এখানে এসে একদম ঠিক করোনি। তুমি পরিস্থিতি টা বুঝতে পারছোনা। তোমাকে আমি বলতেও পারবো না।
যুথি ইরহানের চোখে চোখ রেখে বলল আপনি যে কোন পরিস্থিতি তে আছেন সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি। আপনি না বললেও এই বাড়ির প্রতিটা লোক কেমন আমার জানা হয়ে গেছে। আর আপনার সাথে কি করেছে তা ও।
ইরহান কিছু টা অবাক হয় যুথির কথায়। তুমি জানো? না মানে কিভাবে?
সকালে যে আপনি আমার সাথে কথা বলতে বলতে আপনার মায়ের রুমে যাচ্ছিলেন সেটা নিশ্চই মনে আছে? আর ওদের কথা শুনে আপনি ভুলেই গিয়েছিলেন আমি অপর পাশে ছিলাম।কল টা কিন্তু না আপনি কেটেছিলেন না আমি।ওদের সব কথা শুনে তারপরই আমি কল কেটেছি।
আমি যুথি যেখানে অন্যের উপর করা অ’ন্যায় অ’ত্যা’চার সহ্য করতে পারিনা একদম সেখানে কি করে আমার নিজের মানুষটার উপর হওয়া অন্যায় মুখ বুজে মেনে নেবো,?
ঐ স্বা’র্থপর মানুষ গুলো দিনের পর দিন একজন মানুষ কে ঠকিয়ে যাচ্ছে। তার সুযোগ নিচ্ছে জেনেও আমি চুপ থাকবো?
আপনাকে আমার ভালো করেই চিনা হয়ে গেছে। আর আমি যে এভাবে আসা ছাড়া এই বাড়িতে সহজে পা রাখতে পারবো না সেটাও বোঝা হয়ে গিয়েছিলো আমার।
হ্যা আমি মানছি আমার এভাবে আসা উচিৎ হয়নি। কোনো মেয়েই হয়তো এমন করে তার শ্বশুর বাড়িতে পা রাখে না। আমি কি করতাম? ওদের কথা গুলো শুনে আমার মাথা ঠিক ছিলো না। এখন আমি এমন ভাবে আসায় আপনার কি খুব অসুবিধা হচ্ছে? আপনি চাইলে আমায় শাস্তি দিতে পারেন।
আমি ওদের অন্যায় একদম মেনে নিবো না।আপনি মহান হতে পারেন আমি না।
এখন ওদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করার জন্য আপনি কি আমায় তাড়িয়ে দিবেন?
এসব কি বলছো যুথি? আমি এসব ভেবে বলিনি। তোমারতো কতো স্বপ্ন ছিলো হয়তো শ্বশুর বাড়ি নিয়ে।খালি হাতে আসতে হয়েছে তোমাকে এখানে।এসেও তো কারো কাছ থেকে ভালো ব্যবহার পাওনি। ইমন আর ইশানের বউ তোমাকে অপমান করে চলেছে।
আমি ওদের কে গুনায়ই ধরি না। ওদের অপমানের যোগ্য জবাব দিতে জানি।কথাটা বলেই জুথি বিছানার এক পাশে গিয়ে শুয়ে পরে।
ইরহান ও বাতি বন্ধ করে অপর পাশে এসে শোয়।যুথি চুপচাপ শুয়ে আছে কোনো নড়াচড়া ও করছে না। ইরহান শুয়ে থাকলেও চোখে ঘুম নেই।তার মাথায় নানান চিন্তা। সে বুঝে গেছে তার এমনভাবে চুপ করে থাকলে চলবে না।
হঠাৎ করেই ইরহান ফোপানোর শব্দ শুনতে পায়। পাশ থেকেই আসছে যুথি হয়তো কাঁদছে।
— যুথি কি হয়েছে কাঁদছো কেনো?
যুথি কোনো সারা দেয় না। সে কেদেই চলেছে অপর পাশে ফিরে।
ইরহান এবার যুথিকে টেনে নিজের দিকে ফিরায়।কি হয়েছে কাঁদছো কেনো? আমার কথায় কষ্ট পেয়েছো? তাহলে আমি মাফ চাইছি কেঁদো না আর।
যুথি মাথা নাড়িয়ে জানায় সে ইরহানের কথায় কষ্ট পায় নি।
তাহলে কেনো কাদছো? বাড়ির কথা মনে পরছে? তোমার দাদির কথা?
যুথি হুট করে ইরহানের বুকে ঝাপিয়ে পড়ে আর হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে। এসব কিছু না বোকা পুরুষ।
ওরা আপনাকে ঠকিয়ে দিলো।সব দিক দিয়ে ঠকিয়েছে। আপনি তো এমন জীবন পাওয়ার কথা না।আপনার মতো মানুষের জীবন টা খুব সুন্দর হওয়ার কথা।ওরা কিভাবে পারে এমন করতে?
আমি এবার ভালো করে বুঝতে পারছি কেনো আমার মতো গরিব ঘরের একটা মেয়েকে আপনার সাথে জড়ালো।ওরা চায়নি আপনি ভালো কিছু পান। আপনার জীবনে আমাকে এনেও ঠকিয়ে দিলো ওরা।না পাবেন শ্বশুর বাড়ির আদর আপ্যায়ন না পাবেন শ্বশুর শ্বাশুড়ির ভালোবাসা।
আমি আপনার কষ্ট টা খুব ভালো করে বুঝতে পারছি।আমিও যে আপনার মতো একা কেউ নেই। আপনার ও কেউ নেই আমারও কেউ নেই। আমাদের কষ্ট এই লোক গুলো বুঝবেনা।
আপনাকে ওরা সব দিক দিয়ে ঠকিয়ে দিলো যে বোকা পুরুষ!
কে বলেছে আমি ঠকে গেছি? আমিতো মনে হচ্ছে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় জিনিস টা পেয়েগেছি। আমার মুখোশ দ্বারী মা আমার ক্ষতি করতে গিয়ে নিজের অজান্তেই আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহারটা আমার কাছে এনে দিয়েছে। জানো আমি যখন ওদের আসল রুপটা দেখলাম এতো কষ্ট হচ্ছিল ভেবেছিলাম আমার জীবনে আর ভালো কিছু নেই সব অন্ধকার দেখছিলাম।কিন্তু না আমি আমার জীবনের আলো পেয়ে গেছি।আমার যুথি রানীকে।বলেই ইরহান যুথিকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরে।
এবার আর কারো কথা ভাববোনা।এবার তোমার আর আমার জন্য যা করার করবো।ওদের জন্য তো অনেক করলাম।আশা করি ওদের আর অসুবিধা হবে না।
যুথি ইরহানের বুক থেকে নিজের মাথাটা একটু উচিয়ে বলে আপনি এতো ভালো কেনো বোকা পুরুষ?
#চলবে,,,,,,,
এর থেকে বড় করে প্রতিদিন গল্প দেওয়া সম্ভব না। আরো বড় চাইলে একদিন পর পর দেওয়া লাগবো। আর আপনাদের কয়েকজনের মন্তব্য দেখলে আমার লিখার আগ্রহই হারিয়ে ফেলি।🙂