#খড়কুটোর_বাসা
#পর্বঃ১৮
#Jhorna_Islam
ইশানের একটা কথাই ছিলো তাছলিমা বানুর কানে ব’জ্রপা’ত সৃষ্টি করার জন্য। তাছলিমা বানু কিছু সময়ের জন্য হ্যাং হয়ে যায়। কানের পাশে একটা কথাই বার বার প্রতিদ্ধনিত হচ্ছে ইরহান আবার বিদেশ উড়াল দেওয়ার চিন্তা ভাবনা করছে।
ইরহানের বিদেশ যাওয়ার কথাটা তাছলিমা বানু হ’জম করতে পারছে না। মাথা চ’ক্ক’র মারছে।পড়ে যেতে নিলে ইশান তারাতাড়ি করে ধরে নিয়ে বসায়। তারপর পানি পান করতে দেয়।
তাছলিমা বানু মুহূর্তের মধ্যে গ্লাস টা এক নিশ্বাসে ফাঁকা করে দেয়। কিছু সময় নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে,,, তুই ঠিক শুনেছিস ইশান? ঐ ইরহান আবার বিদেশ যাবে?
— তো আমার কি কানে সমস্যা আছে বলে তোমার মনে হয় মা? যা শোনার নিজ কানে শুনেছি। ছুটি বাতিল করে বাইরে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে সে।
— আমি এতো করে বললাম।এতো বোঝালাম কই তখন তো সে দেশের বাইরে যেতে রাজি হয় নি। এখন ঠিক ই যেতে চাচ্ছে।
— সেটাইতো কথা মা।তোমার কথায় যদি তখন রাজি হয়ে যেতো তাহলে কি আর এতো ঝামেলা হয়? না বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে হতো।সেইতো এখন ঠিক ই যেতে রাজি হয়ে গেছে।
সব ঐ চ’তুড় মেয়েটার জন্য হচ্ছে বুঝলি ইশান?
— ঠিক বলেছো মা ঐ মেয়েটাকে সুযোগ মতো হাতের কাছে পাই জন্মের শিক্ষা দিয়ে দিবো।
আমি মানুষ চিনতে ভুল করে ফেলেছি ইশান।ঐ মেয়েটাকে আমি চিনতে পারি নি। মুখোশ পরে ছিলো। দেখ পড়াশোনা জানে এটাও আমাদের থেকে লুকিয়ে গেছে। এখন সে দিব্যি বাচ্চাদের পড়াচ্ছে। ঐ মেয়েটার খ’প্প’রে পরে বো’কা ইরহান চা’লাক হয়ে গেছে।
ঐ মেয়েটার কাছ থেকে এসব কিছুর হিসাব আমি নিবো মা।আমার পায়ে ধরিয়ে ছাড়বো ঐ মেয়েকে আমি।
এসব কথা ছাড় এখন ঐ ইরহানের বিদেশ যাওয়া নিয়ে কি করবি? এটা হতে দেওয়া যাবে না কিছুতেই না। ইরহান দেশের বাইরে গেলে ওদের সু দিন ফিরে আসবে। তুই ভাবতে পারছিস ইশান ইরহানের যা বেতন তাতে বেশি দিন লাগবে না ওদের ঘুরে দাড়াতে। যে কোনো মূল্যে এটা হতে দেওয়া যাবে না।
এতোদিন যখন আমার কথাতে যায় নি।এখন আর যেতে দেওয়া যাবে না।
তুই কিছু একটা কর ইশান।ওর বিদেশ যাওয়া আটকা।যেনো যেতে না পারে। ওর এই অভাবের সংসার দেখে আমার তৃপ্তি হয়।আমার কথা শুনেনি তাই এখন ওর দূ’র’ব’স্থা দেখে কি যে ভালো লাগে।
এখন ইরহান কে কিছুতেই আমি বিদেশ যেতে দিবো না। ইশান তুই আর ইমন মিলে কিছু একটা কর।ইরহান যেনো না যেতে পারে।
কি করবো মা? মাথায় তো কিছুই ঢুকছে না। কি করলে ইরহানের বিদেশে যাওয়া আটকাতে পারবো।
যা ইচ্ছে কর।কিন্তু কোনো ভাবেই যেনো না যেতে পারে।বিদেশি টাকা যখন আমি আর ভোগ করতে পারিনি।ওকেও আর করতে দিবো না।
এখনই তো আর চলে যাচ্ছে না মা।কয়েকটা দিন সময় দাও ভেবে দেখছি কি করা যায়।
হুম ভাব মাথাটা কাজে লাগা। দরকার পরলে ওর পাসপোর্ট গায়েব কর। টিকিট কাটার জন্য যে টাকা জমাবে তা ছিনিয়ে নে কৌশলে। এসব না পারলে হাত পা ভেঙে দে।এটা করলে এই জীবনে বিদেশ কেন হাটতেই পারবে না।ভি’ক্ষা করে খেতে হবে। থালায় প্রথম পয়সাটা না হয় আমিই দিবো। আর ঐ পয়সা টা ও ওর রোজগারের ই হবে।
কথাগুলো বলেই তাছলিমা বানু উচ্চ স্বরে খিলখিল করে হেসে উঠে।
ইশান তার মায়ের দিকে তাকিয়ে কানে হাত চাপে।মনে মনে বলে,,উফফ মা আমার কানের পোকা সব নাড়িয়ে দিয়েছে।এমন ভয়ংকর ভাবে কেউ হাসে? মুখে কিছুই বলল না নয়তো ঝা’ড়ু দিয়ে দিবে।
——————————
ইরহান রাতে বাড়িতে এসেই যুথির সাথে বিদেশ যাওয়া নিয়ে কথাটা বলতে চেয়েও কোনো ভাবে পারছে না।
এসে থেকে উ’শ’খু’শ করছে কিন্তু মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না। বলতে গিয়ে যুথির মুখটা দেখলেই ক’লিজা মো’চড় দিয়ে উঠে। এই মেয়ে টা কে ছেড়ে চলে যেতে হবে। থাকবে কি করে ইরহান বুঝে পায় না। তাও কিছু করার নেই বিদেশে ইরহান কে যেতেই হবে তাছাড়া আর কোনো উপায় নেই। ইরহান তেমন পড়াশোনা ও জানে না যে ছোট খাটো একটা চাকরি এখন করলো পরে ভাগ্যের জোরে ও মেধা দিয়ে পরে ঠিক চাকরি পেয়ে যাবে।
ইরহানের ভাবনার মাঝেই যুথি তার হাত ধরে ঝাঁকি দেয়।
কি হয়েছে আপনার? কি ভাবছেন এতো? এসে থেকে দেখছি উ’শ’খু’শ করছেন।কিছু বলবেন?
এই বোকা পুরুষ আপনার শরীর ঠিক আছে? বলেই যুথি ইরহানের কপালে হাত দেয়।
কই নাতো জর নেই।ঠিকই আছে সব।কি হয়েছে বলেন না কেনো? আমার কিন্তু টেনশন হচ্ছে এবার।
ইরহান যুথির কথায় মুচকি হাসে। মেয়েটা তার একটু নীরবতা দেখে কতো টেনশনে পড়ে যায়। যুথিকে টেনে এনে নিজের পাশে বসায় ইরহান।তারপর হাত দুটি নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে চুমু একে দেয়। তারপর বলে,,,,
“আমার কিছু হয়নি যুথি রানী। আসলে একটা কথা বলার ছিল কিভাবে বলবো বুঝতে পারছি না। ”
কি বলবেন বোকা পুরুষ বলে ফেলেন তো দেখি।
এভাবে আর কতোদিন চলবে যুথি? আমাদের ও একটা সুন্দর ভবিষ্যত গড়তে হবে। এভাবে বড় জোর দুই এক মাস চলা যায় এর বেশি না। তারপর এক নিশ্বাসে বলে ফেলে,, তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি ছুটি বাতিল করে খুব শিঘ্রই চলে যাবো।
যুথি এখনো নিশ্চুপ। এক দৃষ্টিতে ইরহানের মুখের দিকে তাকিয়ে রয়।
ইরহান যুথির মুখ টা দুই হাতে আগলে ধরে। কি হলো যুথি চুপ করে আছো কেনো?
ইরহানের কথায় যুথির হুঁশ ফিরে। এদিক ওদিক তাকিয়ে বলে,,এসব নিয়ে পরে কথা বলছি।আমার এখন খুব ঘুম পেয়েছে। ইরহান কে আর কিছু বলতে দেওয়ার সুযোগ না দিয়ে কাঁথা মুড়ি দিয়ে উল্টো দিকে ফিরে শুয়ে পরে যুথি।
ইরহান যুথির দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে। সে জানে যুথির ভিতর কি চলছে।একই কষ্ট যে তার ও হচ্ছে। কিন্তু কিছুই করার নেই।যতো কষ্ট হোকনা কেন এটা করতেই হবে। ভবিষ্যত সুন্দর করার জন্য বর্তমানে কষ্ট পেতেই হবে।
ইরহান জানে যুথি এখন মন খারাপ করে থাকলেও পরে ঠিক রাজি হয়ে যাবে। তাই আর কথা না বাড়িয়ে নিজেও শুয়ে পরে যুথির পাশে।
এইদিকে ওরা জানতেও পারলো না ওদের ঘিরে কতো বড় ষ’ড়য’ন্ত্র চলছে।
———————————————
প্রতি সপ্তাহের শনিবার ইরহানের ছুটির দিন।ঐদিন দোকান পাট সব বন্ধ থাকে। তাই আজ শনিবার ইরহানের ছুটির দিন।
এই শুক্রবার আর শনিবার যুথিও পড়াতে যায় না। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি।আর শনিবার ইরহান বাড়িতে থাকে বলে যুথি আগে থেকেই বলে নিয়েছে শনিবার যাবে না।
যুথি সকালে ঘুম থেকে উঠে রান্না করে নেয়।আজ ইরহান কে ডাকে নি একটু ঘুমিয়ে নেক তারপর ডাকবে। সকাল দশটার দিকে ইরহানের ঘুম ভেঙে যায়। উঠে তারাতাড়ি হাত মুখ ধুয়ে আসে। যুথি ততক্ষণে ইরহানকে উঠতে দেখে প্লেটে ভাত দেয়।
ইরহান বসতে বসতে বলে কতো দেরি হয়ে গেলো তুমি আমায় ডাকবে না? না খেয়ে আছো।
ইরহানের কথার কোনো জবাব দেয় না যুথি।চুপচাপ খেতে থাকে। তারপর খাওয়ার মাঝেই হুট করে বলে,,আপনি দেশের বাইরে যান বোকা পুরুষ আমার কোনো আপত্তি নেই।
ইরহান শুধু হুম বলে তারাতাড়ি খাওয়া শেষ করে উঠে পরে। তার যুথি রানীর যে মন খারাপ বুঝতে আর বাকি নেই।
যুথি থালাবাসন ও হাড়ি পাতিল নিয়ে পুকুর পাড়ে চলে যায় মাজতে।একেবারে মেজে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিয়ে আসবে।ঘাটে বসে এক এক করে মাজতে থাকে।
এরই মধ্যে পাশে কেউ বসেছে যুথি বুঝতে পারে। তাকিয়ে দেখে ইরহান। যুথি কথা না বলে চুপচাপ কাজ করে। তার মধ্যে পানির আওয়াজ শুনে পাশে তাকিয়ে দেখে ইরহান মেজে রাখা থালাবাসন ধুয়ে দিচ্ছে।
আরে এসব কি করছেন আপনি?
,– দেখতে পাচ্ছো না? থালাবাসন ধুচ্ছি!
— এগুলো আপনি কেন করছেন? মানুষ দেখে কি বলবে?
— ইরহান সরু চোখে যুথির দিকে তাকিয়ে টুপ করে গালে চুমু দিয়ে বসে। কি বলবে মানুষ? ইরহান ইচ্ছে করে যুথির সাথে এমন করছে যেনো তার মন ভালো হয়ে যায়।
— ইরহানের করা কাজে যুথি আ’হা’ম্ম’কের মতো তাকিয়ে বলে,,,, মাথা কি পুরাই গেছে আপনার? ঐ পাড়ে মানুষ জন রয়েছে দেখতে পাচ্ছেন? ছিঃ কি ভাববে লোকে?
— কিছুই ভাববে না। আমার থেকে দেখে শিখবে কি করে বউ কে ভালোবাসতে হয়।
— কচু শিখবে নি’র্ল’জ্জ লোক!
ইরহান যুথির কথায় পাত্তা না দিয়ে বলে,,
“তোর মনের গহীন জলে ফেলবো প্রেমের ব’রশি!
মাছের মতো ঠো’কড় দিবি দেখুক পাড়া প’রশি।”
#চলবে,,,,,,,#খড়কুটোর_বাসা
#পর্বঃ১৯
#Jhorna_Islam
দুইজন অহংকারী মানুষ কখনো এক সাথে মিলে মিশে থাকতে পারে না। কেউ কারো একটু শান্তি সহ্য করতে পারে না। তেমনটার বে’তি’ক্র’ম নয় ইমন ও ইশানের বউ লিমা ও দিনা।
একজন আরেকজনের বসে থাকা বা কাজ না করা সহ্য করতে পারে না। প্রথম প্রথম খুবই মিল মো’হা’ব্ব’ত ছিলো দুইজনের মধ্যে। মানুষ লিমা আর দিনা কে দেখলে মনে করতো দুই বোন ওরা।দুইজন দুইজন কে চোখে হারাতো প্রায়।
ধীরে ধীরে দুইজনের আসল রূপ বেরিয়ে আসছে।এটা ওটা নিয়ে সারাদিন ই দুইজনের মধ্যে ত’র্কা’ত’র্কি লেগে থাকে। সংসারের কাজ নিয়ে প্রতিদিন দফায় দফায় ঝগড়া বিবাদ লেগে থাকে।
এই যেমন আজকে ও তার বে’তি’ক্র’ম হয় নি।লিমা আজ ঘুম থেকে একটু সকালে উঠে গেছে। কিন্তু দিনার উঠতে অনেকটাই দেরি হয়ে গেছে। দিনা ঘুম থেকে উঠেনি দেখে লিমা সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেও একটা কাজ করেনি।এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই দিকে যে সকালের খাওয়ার সময় চলে যাচ্ছে সেটা দেখার প্রয়োজন মনে করছে না।
লিমার কথা হলো সে কেনো একা একা সব কাজ করবে? সংসার টা তো তার একার না।সে এদিকে গরুর মতো খাটবে আর দিনা ঘুম থেকে উঠে খাবে সে এটা কখনোই হতে দিবে না। সংসারটা দুইজনের তাই দুইজন ই সমান সমান কাজ করবে।
তাছলিমা বানু ঘুম থেকে উঠে এসে দেখে বসার ঘরে লিমা মনের সুখে গুনগুন করে গান গাইছে আর নখ কাটছে।তাছলিমা বানু লিমার দিকে সরু চোখে তাকিয়ে থাকে কিছু সময়। লিমার এদিকে হুঁশ নেই সে তার কাজে ব্যস্ত।
লিমা কে কিছু বলতে গিয়ে ও থেমে যায় তাছলিমা বানু। সকাল সকাল ঝামেলা চাচ্ছে না।পেটে প্রচুর খিদে। তাই চুপচাপ রান্না ঘরের দিকে চলে যায়।
রান্না ঘরে গিয়ে দেখে এখনো পর্যন্ত রান্না হবে দূরে থাক চুলায় আগুন ও জ্বলে নি।
তাছলিমা বানু রান্না ঘর থেকে রা’গে ফুসতে ফুসতে বেরিয়ে আসে। লিমা এখনো গুনগুন করছে। তাছলিমা বানু যে পাশে এসে দাড়িয়ে আছে দেখেনি।লিমার কান্ড দেখে আগুনে ঘি ঢালার মতো অবস্থা হয়। তাছলিমা বানু কিছু না বলে টেবিলের উপরে রাখা স্টিলের গ্লাস ঠাস করে নিচে ফেলে।
হঠাৎ করে হওয়া শব্দে লাফ দিয়ে বসা থেকে উঠে পরে লিমা।নিচে গ্লাস গড়াগড়ি খেতে দেখে স্বস্থির শ্বাস নেয়।ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম বুকে থুথু দিয়ে সামনে তাকাতেই দুটো ভয়ংকর চোখের দিকে দৃষ্টি মিলিত হয়ে যায়।
“রান্না বাড়া বাদ দিয়ে র’ঙ্গ’লি’লা করতেছো বসে বসে?”
মা আসলে,,,,
কয়টা বাজে জমিদারের মেয়ে? বাড়ির কাজ কাম ফেলে সংগীত গেয়ে আসর জমানোর জন্য এ বাড়ি এসেছো নাকি?
ততক্ষণে বসার ঘরে সকলেই উপস্থিত হয়। দিনা ও এসে দাঁড়ায়।
লিমার কাচুমাচু মুখ দেখে মনে মনে দিনা পৈ’শা’চি’ক আনন্দ পায়।বেশ হয়েছে আরো বকুক।
ইমন বলে,,কি হয়েছে মা লিমা কে বকছো কেনো? কি করেছে ও?
আমাকে জিজ্ঞেস করছিস কেন? তোর আদরের বউকে জিজ্ঞেস কর।
ইমন এবার লিমা কে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে লিমা? কি করেছো তুমি মা এতো রে’গে আছে কেনো তোমার উপর?
লিমা এবার ইমনের উপর রা’গ ঝাড়ে।সেটা আমাকে কেনো জিজ্ঞেস করছো তুমি? তোমার মাকে জিজ্ঞেস করো গিয়ে আমার উপর কেনো উনি রা’গ দেখাচ্ছে।
ইশান বলে আরে আজব বলবা তো কি হয়েছে একজন আরেকজন কে দেখিয়ে দিচ্ছে জিজ্ঞেস করার জন্য বলবাতো হয়েছে টা কি।
তাছলিমা বানু দুই ছেলের দিকে তাকিয়ে বলল,,তোরা এখন এই সময় কি করতে এসেছিস এখানে?
কি করতে আবার বেলা কি কম হয়েছে নাকি? অবশ্যই খেতে এসেছি। তোমাদের ঝামেলা রাখো এখন পরে আবার শুরু কইরো।আগে খেতে দাও তো প্রচুর খিদে লেগেছে।
কি খাইবা আব্বারা? তোমাদের ন’বাবজা’দা শ্বশুরের আদরের রাজ কন্যারা এখনো চুলায় আগুন ও জ্বালায়নি।
কি? বলেই ইমন লিমার দিকে তাকায়।
লিমা ইমনের তাকানো দেখে বলে,,আমার দিকে এমন ভাবে তাকাচ্ছো কেনো? এই বাড়ির বউ কি শুধু আমি একাই? নাকি আমাকেই শুধু সংসারের ঘা’নি টানার জন্য এনেছো।আমি সকাল সকাল সব কাজ করবো আরেক জন বেলা পর্যন্ত ঘুমিয়ে উঠে শুধু খাবে বাহ কি দারুণ। আজ থেকে আমি একা একা কিছু করবো না।দুইজন সমান কাজ করবো।কেউ কারো থেকে কম খায় না।
দিনা লিমার কথা শুনে বলে উঠে ভাবি আমাকে খোঁচা মেরে একদম কথা বলবেন না।আমি কিন্তু সহ্য করবো না।
তুই আবার কবে সহ্য করিস ছোটো। এতোদিন অনেক করে খাইয়েছি আর না।
কে আপনাকে বলেছে করে খাওয়াতে?
দুই জা এর মধ্যে তুমুল ঝগড়া লেগে গেছে। মাঝখানে ইমন আর ইশান নীরব দর্শক।কিছু বললে যে সব এসে দুইজনের উপর পরবে তা আর বুঝতে বাকি নেই। তাই চুপচাপ দাড়িয়ে আছে।
তাছলিমা বানুর আর এসব অশান্তি সহ্য হলো না। জোরে এক ধমক মারে দুটোকে। চুপ একদম চুপ।আর একটা কথা বললে দুটোকে ঘার ধাক্কা দিয়ে এই বাড়ি থেকে বিদায় করবো।
তাছলিমা বানুর কথা শুনে দিনা মুখ সামলাতে পারে নি।বলে ফেলে কেন বাড়ি থেকে বের করবেন? আপনি যেমন আপনার স্বামীর বাড়ি তেমনি আমরাও আমাদের স্বামীর বাড়ি ই।
কি বললে তুমি?
ইশান গিয়ে তারাতাড়ি দিনা কে আটকায়।নয়তো আজই বাড়ি থেকে চলে যেতে হবে। কেন যে বুঝতে পারছে না এই জায়গা সব মায়ের নামে।
তারপর দুই ভাই মিলে তাছলিমা বানুকে সামলিয়ে বলে,,দুইজন কে কাজ সমান করে ভাগ করে দেওয়ার জন্য তাহলে আর এসব কিছু হবে না।
তাছলিমা বানু সব কাজ দুইজন কে সমান ভাগে ভাগ করে দিয়ে রুমে চলে যায়। আজ সকালে আর খাওয়া হলো না।
ইমন আর ইশান ও বাইরে বের হয়ে যায় রোজ রোজ এসব অশান্তি আর ভালো লাগে না। এখন একটা হোটেলে গিয়ে আগে খাবার খাবে তারপর ইরহানের বিদেশ যাওয়া কিভাবে আটকাবে তার পরিকল্পনা করবে।
———————————
ছোট্ট দু- চালা ঘরটায় হয়তো খাবার আর পোশাকের অভাব হতে পারে কিন্তু ভালোবাসা আর বিশ্বাসের একটুও অভাব নেই। ঘরের প্রতিটি কোণায় কোণায় শান্তি বিরাজমান।
সত্যিকারের ভালোবাসা গুলো কখনো কমে না।দিনকে দিন বেড়েই চলে। সুখ দুঃখে এক সাথে পাশে থাকার নামই তো ভালোবাসা।
রাতের আকাশে অসংখ্য তারা জলজল করছে।জোসনা রাত চাঁদের আলোয় আলোকিত চারদিক।
রাতের খাবার খেয়ে দুইজন আজও ঠিক করে নেয় বাইরে হাটতে যাবে কিছু সময়।
যেই ভাবা সেই কাজ।ঘরে তালা মেরে চাবিটা দরজার নিচে রেখে বেরিয়ে পরে দুইজন।
ইশান আর ইমন এতোসময় ঘরের পিছনেই ছিলো।ওরা জানে ইরহান আর যুথি প্রায় সময়ই রাতে ঘুরতে বের হয়। আজ যখন ঘরের পিছনে দাড়িয়ে কান পেতে কিছু শুনতে চেষ্টা করে তখনই শুনতে পায় দুইজন আজও হাঁটতে বের হবে।
তালা মেরে চাবিটা কোথায় রেখেছে এটা ও দেখে নিয়েছে। যুথি আর ইরহান দেখতে পায়নি ঐদিকটায় অন্ধকার হওয়াতে।
যুথিরা বের হয়ে গেলে দুই ভাই দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়। ইমন ঠিক করে গেইটের পাশে দাড়াবে যেনো ওটা আসলে ইশান কে সাবধান করতে পারে। আর ইশান তালা খুলে ঘরে ঢুকবে। উদ্দেশ্য ইরহানের পাসপোর্ট গায়েব করা।
পরিকল্পনা মতো ইমন গিয়ে গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে পরে।আর ইশান তালা খুলে ঘরে ঢুকে। বাতি জালিয়ে এদিক ওদিক চোখ বোলায়।এই ঘরে আর আসা হয়নি ইশানের তাই কোথায় কি আছে কিছুই জানা নেই তার।প্রথমেই বিছানার চাদর ও বালিশের নিচে ভালো করে উলট পালট করে দেখতে থাকে না নেই। তারপর কাঠের আলমারির দিকে এগিয়ে গিয়ে খোলার চেষ্টা করে। আলমারিতে কোনো তালা দেওয়া নেই তবে বেশ পুরোনো দেখে খুলতে পারছে না। অনেক সময় নিয়ে চেষ্টা করার পর আলমারি খুলতে সফল হয়।
আলমারিতে রাখা জিনিস পত্র সব কিছু চে’ক করতে থাকে। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না। এই দিকে অনেক সময় হয়ে গেছে ওরা যে কোনো সময় এসে পরবে। আলমারি তে না পেয়ে মাথার চুল টানতে টানতে এদিক ওদিক চোখ বোলায়। তারপর চোখ যায় চকির নিচে রাখা একটা টিনের বাক্সে। বুঝতে আর বাকি নেই সব কাগজ পত্র এটাতেই রাখা।
বাক্স বের করে খুলতে নিবে এমন সময় কেউ ইশানের হাত চেপে ধরে।
ইশান ভ’য় পেয়ে যায়। হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায় মুহূর্তের মধ্যে। তারপর উপরের দিকে তাকিয়ে দেখে ইমন।
স্বস্থির শ্বাস ছাড়ে ইশান।
তারাতাড়ি বের হ।ওরা গেইটের কাছে চলে এসেছে।
কি বলছো? কাগজ পত্র এখনো নিতে পারিনি এইটাতেই আছে।
আরে রাখ।আগে ধরা পরার হাত থেকে বেঁচে নে।পরে নেওয়া যাবে। বলেই পায়ে ঠেলা দিয়ে বাক্স টা ভিতরে ঢুকিয়ে ইশান কে টানতে টানতে বের করে দরজায় তালা মেরে আড়ালে চলে যায়।
যুথির আজ কেনো যেনো বাইরে থাকতে ভালো লাগছিল না।মনটা উ’শখু’শ করছিলো।তাই ইরহান কে বলে তারাতাড়ি এসে পরে।
ঘরের সামনে এসে তালা খুলে ঘরে ঢুকে। এদিক ওদিক চোখ বোলায় যুথি।তারপর কি যেনো ভাবতে থাকে।
#চলবে,,,,,,,