খড়কুটোর বাসা ২ পর্ব -১১

#খড়কুটোর_বাসা_২
#পর্বঃ১১
#Jhorna_Islam

তাছলিমা বানু আর লিমার ন’জর ইরহানের হাতে রাখা সেই বাক্সের দিকে। কি সুন্দর গয়না। চকচক করছে বাইশ কেরেটের পিউর গোল্ড তাছলিমা বানুর জহুরি চোখ দূর থেকেই চিনে ফেলেছে।

ইরহান তার হাতের বাক্স টা বন্ধ করে বিছানার মাঝে রাখে।এতে তাছলিমা বানুর মন ক্ষু’ন্ন হয়।ঐখানে রেখে দিচ্ছে কেন? দিয়ে দিলেই তো হয়।

লিমা ও চাইছে ভাসুর যেনো গয়না গুলো তাকে দেয়।ছোট ভাইয়ের বউয়ের একটা অধিকার আছে না? এই গয়না গুলো উপহার হিসেবে দিতেই পারে। সে তো কল্পনা ও করে ফেলেছে গয়না গুলো পরলে তাকে কেমন লাগবে।

ইরহান একটা লাগেজ ইমন, ইশান আর তার বাবার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে এতে তোদের জন্য কিছু শার্ট, প্যান্ট, তিনজনের জন্য তিনটা ঘড়ি আর সে’ইন্ট এর বোতল আছে।
ইশানের মুখ দেখে বোঝা গেলো ভাইয়ের কাছ থেকে এগুলো পেয়ে অনেক খুশি। ইরহানের বাবা নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। উনার এসবের প্রতি তেমন কোনো লোভ নেই।উনার তো টাকা হলেই চলে,,টাকা দিয়ে কিছু মা’ল,পানি কিনে খেতে পারে। আর ইমনের মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে এসবে খুশি হয় নি।তবুও ইরহান কে তো আর কিছু বলতে পারবে না। ছোট থেকেই ইরহানের সাথে তেমন ভাব,বা কথা বলা নেই। তাই সে চুপ ই আছে।

তারপর ইরহান অন্য লাগেজ বের করে বিভিন্ন প্রসাধনী, চকলেট, সাবান,শ্যাম্পু এগুলো দাদির কাছে বুঝিয়ে দেয় সবাই কে দেওয়ার জন্য। আরেকটা লাগেজ নিজের কাছে রাখে।সেটায় কি আছে কেউ ই জানে না। সেটা ইরহান খুলেও নি। ঐটা নিয়ে কারো তেমন মাথা ব্যাথা নেই।হয়তো যুথি ও নিজের জন্য সাবান, শ্যাম্পু এসবই এনেছে।

সবাই কে সব কিছু বুঝিয়ে দিয়ে স্বস্থির নিশ্বাস নেয় ইরহান।

এর মধ্যে তাছলিমা বানু ইরহান কে বলে উঠে,, সবই তো দিলি। কিন্তু কিছু একটা মনে হয় তুই ভুলে যাচ্ছিস ইরহান।

ইরহান ব্রু কোচকে তাছলিমা বানুর দিকে তাকায়। তারপর জানতে চায় কি ভুলে গেছি?

আমায় কিছু দিবি সেটা ভুলে গেছিস।

বুঝলাম না কি দিবো? আর দিলাম তো আপনাকে। আর কি ভুলে যাওয়ার কথা বলছেন?

সবার পর আমাকে দেওয়ার জন্য যেটা রাখলি সেটা।

সকলের দৃষ্টি ই তাছলিমা বানুর উপর কি বলছে কারো মাথায় ই ধরছে না।

বুঝতে পারছিস না তাই না?

ইরহান মাথা নাড়িয়ে না বোঝায়।সে সত্যি বুঝতে পারছে না কি বলছে তাছলিমা বানু। কি দিতে ভুলে গেছে। আর কি দেওয়ার জন্য রেখেছে সবই তো দিলো।

তাছলিমা বানু আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলে ঐ যে ঐ গয়নার বাক্স টা আমাকে দিতে ভুলে গেছিস।আমি তো তোর মা হই তাই না? মায়ের জন্য আলাদা করে এনেছিস এটা।আমি দেখেই বুঝতে পেরেছি। চমকে দিতে চেয়েছিলি আমাকে তাই না? আমি সত্যি ঐটা দেখে চমকে গেছি।এবার দিয়ে দে বাপ। সকালের খাবার খেতে হবে তো নাকি? অনেক বেলা হয়ে যাচ্ছে।

সকলেই তাছলিমা বানুর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এটা যে উনার জন্য না সেটা তো দুই বছরের বাচ্চা ও বুঝতে পারবে।না বুঝে ই কি এমন করছে নাকি।

এর মধ্যে ইশান বলে উঠে মা এসব কেমন কথা ওটা তো তো,,,

তুই চুপ কর।দেখছিস না আমি তোর ভাইয়ের সাথে কথা বলছি।ইশান কে কিছু বলতে না দিয়ে তাছলিমা বানু ধমক দিয়ে থামিয়ে দেন।

ইরহান নিজের ব্রু চুলকে বলে উঠে,, ঐটা তো আপনার জন্য না।আর আপনার কেনো মনে হলো ঐটা আমি আপনার জন্য এনেছি? আপনার জন্য যেইটা আনলাম সেইটা তো আপনাকে দিলাম ই।

তাহলে ঐটা তুই কার জন্য এনেছিস ইরহান?

তাছলিমা বানুর বোকা বোকা প্রশ্নে ইরহানের দাদি রে’গে যায়। চাপা ধমকে বলে উঠে বুঝতে পারছো না কার জন্য এনেছে? তুমি কি বাচ্চা? ফিডার খাও নাকি?

এভাবে একদম আমার সাথে এই বলবেন না। এখানে মা আর ছেলের মাঝে কথা হচ্ছে। আপনি কেন কথা বলছেন শুনি?

তুমি এসবেরই যোগ্য। ইশান তোর মাকে নিয়ে যা।আর সবাই এসো যার যার টা বুঝে পেয়েছো রুম খালি করো এখন বলেই ইরহানের দাদি সকলকে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়।

তাছলিমা বানু কে ইশান আর একটা কথা ও বলতে দেয়নি।টেনে নিয়ে গেছে রুম থেকে।

যুথি এতোসময় বিছানার এক কোণে বসে সবই নীরব দর্শকের মতো,দেখে গেছে।

এবার ইরহান ও বিছানায় বসে স্বস্থির নিশ্বাস নেয়। তারপর যুথির দিকে তাকিয়ে দেখে একই ভাবে বসে আছে।

ওখানে ওভাবে বসে আছো কেনো? এদিকে এসো এখানে এসে বসো।বলেই হাত দিয়ে ইশারা করে নিজের পাশে দেখিয়ে দেয়।

যুথি আস্তে করে ইরহানের পাশে এসে বসে। তবুও কিছু টা দূরত্ব রয়েছে। ইরহান যুথির হাত ধরে টেনে সেই দূরত্ব টা ও ঘুচিয়ে দেয়।

খা-খাবার খাবেন না? আমি যাই গিয়ে দেখি।

এখন দেখতে হবে না। পরে খাবো বলেই ইরহান গয়নার বাক্স টা হাতে তুলে নেয়।

প্রথমে চুড়ি দুটো নেয়। যুথির হাত টেনে যত্ন সহকারে পরিয়ে দিতে থাকে।

কি- কি করছেন? এগুলো পড়াচ্ছেন কেন? এগুলো আমার,,,,

হ্যা এগুলো তোমার। কাকে পড়াবো? চুপচাপ বসে থাকো তো দেখতে দাও আমার বউ কে আমার পছন্দের গয়নায় কেমন লাগছে। চুড়ি পড়ানো শেষ করে যুথির কানের ছোট্ট রিং গুলো খুলে ইরহান ঝুমকো পরিয়ে দেয়।গলায় হার পরিয়ে দেয়।

এতোসব আনার কি দরকার ছিলো? এখন তো স্বর্ণের দাম অনেক।

সেটা নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না। তোমার বর আল্লাহর রহমতে ভালো রোজগার করতে পারে। দেখি এবার আমার দিকে তাকাও তো একটু।

যুথি ইরহানের দিকে তাকায়।

মাশাআল্লাহ ! খুব সুন্দর লাগছে আমার যুথি রানী কে।

যুথি ইরহানের কথায় লজ্জা পায় চোখ ঘুরিয়ে এদিক ওদিক তাকায়। ইরহান তা দেখে হাসে। হয়েছে আর লজ্জা পেতে হবে না। কে যেনো আমাকে বলতো আপনি শুধু একবার দেশে আসেন আপনাকে সারাক্ষণ জড়িয়ে ধরে বসে থাকবো। কোথাও যেতে দিবো না। আর এখন আমি একটু কাছে যাবো দূরে থাক বউ আমায় দেখলেই কাঁপা কাঁপি শুরু।

লজ্জা দিচ্ছেন কেন? একটু সময় দেন দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে।

হু দিলাম সময়। এবার গিয়ে খাবার হয়েছে কি না দেখো তো খুব খিদে পেয়েছে।

আমি এক্ষুনী খাবারের ব্যবস্থা করছি বলে দৌড়ে বের হয় যুথি।

যুথির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ইরহান হাসে।মনে মনে বলে পা’গলি আমার। তারপর অন্য সব জিনিস গুলো আলমারিতে গুছিয়ে রাখতে থাকে।

———————————–

দিনা চেইন টা গলায় দিয়ে নিজেকে ঘুরে ঘুরে আয়নায় দেখছে।

বাহ্ খুব মানিয়েছে তো গলায়।অনেক সুন্দর লাগছে।

হুট করে এমন কথা শুনে থতমত খেয়ে যায় দিনা। আয়নার থেকে চোখ সরিয়ে দেখে ইশান দেয়ালে হেলান দিয়ে দুই হাত বুকে গুঁজে তার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর মিটমিটিয়ে হাসছে।

আপনি? এখানে কি করছেন? কেউ দেখে ফেললে কি হবে ভাবতে পারছেন?

কি হবে বলেই ইশান দিনার কাছে এগিয়ে আসে।

সবাই খারাপ ভাববে।প্লিজ এখান থেকে যান।

কেউ দেখেনিতো।

যদি এখন কেউ দেখে ফেলে।আপু এখনই আসবে খাওয়ার জন্য ডাকতে।প্লিজ যান না। আমার ভ’য় করছে।

আচ্ছা বাবা যাচ্ছি আমি। ভীতুর ডিম একটা।

ইশানের যাওয়ার কথা শুনে স্বস্তির নিশ্বাস নেয় দিনা। কিন্তু হুট করেই গালে হাত চলে যায়। ইশান ততক্ষণে রুম থেকে ঝড়ের গতিতে বের হয়ে গেছে। কি করে গেলো লোকটা? এমন কেউ করে?

দিনার যে এখন সব কিছু এলোমেলো লাগছে। গালে হাত দিয়েই দিনা বিছানায় শুয়ে পরে। লজ্জা লাগছে খুব। লজ্জায় মুখ ঢেকে ফেলে দুই হাত দিয়ে।

#চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here