#গল্পটা_আমারই
পর্ব : ২০
(সুরমা)
আমার খুশি কে দেখে? মনে হয় পৃথিবীর সমস্ত সুখ আজ আমার। আমার ফ্যামিলি আমাকে ভালোবাসে। তাঁরা মন থেকে চায় আমি হেপি থাকি।
ভাইয়াও আমাকে খুব ভালোবাসে। আমি খুশির ঠ্যালায় আব্বুকে জড়িয়ে ধরলাম। আব্বুকেও খুশি খুশি লাগছে। এমনটা নয় যে আমি এই বিয়েটা করবো না বলে আব্বু কষ্ট পেয়েছে। বরং আমি খুশি জেনে আব্বুও খুশি।
আমি রুমে এসেই অর্ণবকে কল করি। মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখি অর্ণবের টোটাল ৬৪টা কল। ইশ বেচারা মনে হয় অস্থির হয়ে গেছে। আমার কল ঢুকতে দেরি অর্ণবের রিসিভ করতে দেরি হয়নি।
অর্ণব হয়তো মোবাইলটা হাতে নিয়েই বসে ছিল। আমি কিছু বলার আগেই অর্ণব বলে,,,
-কতো গুলো কল করলাম? একটা কলও রিসিভ করার সময় নেই? অর্ণবের কণ্ঠে স্পষ্ট রাগ দেখতে পাচ্ছি । অর্ণবের কথা শোনে আমার মুখের হাসি উদাও। ওও সহজে রাগ করে না।
আমার উপর তো কখনই করে না। আমি ভুল করলে অর্ণব আমাকে ঠাণ্ডা মাথায় বুঝায়। যখন আমি নর্মাল থাকি তখন বলে আমি আসলে কি ভুল করেছি। তখন আমিও বুঝতে পারি আমার ভুলটা। ওর কথা শোনে এখন কেমন ভয় ভয় লাগছে। আমি আমতা আমতা করে বললাম,,,,,
-ই,য়ে মা,নে আ,স,লে আমি আব্বু আম্মু,,,,,
-বাসায় গেছো ভালো কথা আমাকে তো একবার বলা যেতো নাকি?
– বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তোমার ফোনতো অফ ছিল। আর বাসায় আসার পর থেকেই,,,,,,,,
-একটা এসএমএস করা যায় নি? আমার টেনশন হয়না? তুমি জানো আমি এক্সাম শেষ করে তোমাকে কল করবো? হুটহাট করে একজন মানুষ কল রিসিভ করছে না। সেই মুহূর্তে তার অবস্থা কেমন হতে পারে তোমার আইডিয়া আছে??
আমার কান্না আসছে। তাঁর জন্য আমার উপর দিয়ে কতো ঝড় তুফান যাচ্ছে। আবার সেই আমাকে কন্টিনিউয়াস কথা শোনিয়ে যাচ্ছে। আমি কান্নাভরা কণ্ঠে বললাম,,,
-সরি। অর্ণব আমার কণ্ঠ শোনেই বুঝতে পেরেছে এবার হয়ত আমি কান্না করে দিবো। অর্ণব শান্ত কণ্ঠে বলে,,,,
-আচ্ছা ঠিক আছে। আর কাঁদতে হবে না।
-তুমিতো আমাকে বকছো।
-বকলাম কই? আচ্ছা সরি। আসলে খুব টেনশনে আছি। এতো এতো পড়াশোনা করলাম তাও আমি একটা জব পাচ্ছি না।
তুমি বুঝতে পারছো আমি কি অবস্থায় আছি? তার উপর তুমিও ফোন রিসিভ করছো না। তাই রাগ উঠে গেছে।
-হুম।
– কি করছো এখন? খেয়েছো? আন্টি আঙ্কেল কেমন আছে? হঠাৎ এভাবে বাসায় গেলে কেন? অর্ণবের এতো প্রশ্ন শোনে আমার চোখ কপালে। কোনগুলোর উত্তর দিবো বুঝতেছিনা। আমি ছোট্ট করে বললাম,,,,
-সবাই ভালো আছে। আব্বু আমাকে ফোন করে বললো তাড়াতাড়ি বাসায় আসতে। আমি বলেছিলাম দুদিন পর আসবো। কিন্তু আব্বু বললো আজকেই আসতে। তোমারও ফোন অফ তাই বলে আসতে পারিনি।
-ঠিক আছে। পরে তন্বী আমায় কল করে বলেছে তুমি বাসায় চলে গেছো। কিন্তু কি এতো ইমারজেন্সি যে এভাবে যেতে হলো? বাসায় কিছু হয়েছে কি?
-হুম। আব্বু আমার জন্য ছেলে দেখেছে। আজকে ছেলে পক্ষ আমাকে দেখতে এসেছিল। আমি এসব কিছুই আগে জানতাম না। বাসায় আসার পর শোনলাম। আমার কথা শোনে অর্ণব অনেকটা হাইপার হয়ে বলে,,,
-কিহহহহহ। বিয়ে? এখন?? তোমারতো এখনও পড়াশোনা শেষ হয়নি। তাহলে?
-হুম। আসলে ভাইয়াকে বিয়ে করাতে হবে। আব্বু চায় আমার বিয়েটা আগে দিতে। তারপর ভাইয়াকে বিয়ে করাবে।
-এটা কেমন কথা? তোমাকে কি পরে বিয়ে দেওয়া যাবে না কি? এটা কি কোনো নিয়ম আছে? তুমি কি ছেলের সামনে গেছো নাকি?
– হুম। আমি কিছুতেই যেতে চাইনি। কিন্তু আমার ইচ্ছে না থাকার সত্ত্বেও ওদের সামনে যেতে হয়েছে। এমনকি ওরা আমাকে পছন্দও করে গেছে।আমার কথা শোনে অর্ণব চুপ হয়ে যায়। ওও কিছুই বলছে না দেখে আমিই বললাম,,
– কিন্তু আমি আব্বুকে তোমার কথা বলেছি। আব্বু বলেছে তোমার সাথেই আমার বিয়ে দিবে। তাদের আপত্তি নেই। আমার ফ্যামিলির সবাই রাজি।
বলেছিলাম না আমার আব্বু আম্মু আমাকে খুব ভালোবাসে। আমি যা চাইবো তাই। আব্বু বলেছে তুমি আন্টিকে নিয়ে খুব শীঘ্র আমাদের বাসায় আসতে। আব্বু আমাদের বিয়ে নিয়ে আন্টির সাথে কথা বলবে।
আমার কথা শোনে অর্ণব এবারও চুপ। ওকে চুপ করে থাকতে দেখে আমি বললাম,,,,,
– কি হলো? কথা বলছো না কেন? তুমি আন্টিকে নিয়ে কবে আসবে?? অর্ণব আবারও চুপ। আমার এখন রাগ লাগছে। এতো ভালো একটা খবর দিলাম আর ও কিনা চুপ। আমি একটু রেগে বললাম,,,,
– মুখে কি টুই লাগিয়েছো? কথা বলছো না কেন? হ্যালো?
– বলো,
– আন্টিকে নিয়ে কবে আসবে আমাদের বাসায়??
– বললেই আসা যায়?
– কেন আসা যায় না? আর বিয়ের কথা শোনে তুমি এভাবে চুপসে গেছো কেন? তোমার মতলব কি বলতো? এবারও অর্ণব চুপ। ওর চুপচাপ আমাকে আঘাত করছে। মনটা কেমন টিপটিপ করছে। আমি কাঁপা কণ্ঠে বললাম,,,
– অর্ণব তুমি কি চাও আমাকে পরিষ্কার করে বলো।
– কি বলবো?
– তোমার কি আমাকে বিয়ে করতে কোনো সমস্যা আছে?? তুমি কি আমাকে পেতে চাও না?
– চাইবো না কেন? আমি মন থেকে চাই তোমাকে।
– তাহলে চুপ করে আছো কেন বিয়ের কথা শোনে? কথা বলছো না। মনে হচ্ছে তুমি খুশি হওনি।
– এই মুহূর্তে আমি তোমাকে বুঝাতে পারবো না মীরা। তুমি ভীষণ আবেগপ্রবণ। আমি এখনও কিছু করি না। টিউশনি করে খরচ চালাই। এই অবস্থায় বিয়ের কথা শোনে কিভাবে খুশি হবো বলো? আজকে যদি আমার একটা জব থাকতো তাহলে কোনো কথায় ছিল না।
আমি মাকে নিয়ে আজকেই তোমাদের বাসায় আসতাম। কিন্তু এভাবে খালি হাতে তোমার বাবার সামনে দাঁড়ানোর মতো যোগ্যতা আমার নেই।
– তুমি অযথাই এসব ভাবছো। তুমি জব করো না তো কি হয়েছে? আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমাকে তোমার চাওয়ার জন্য এইটুকু কারণেই যথেষ্ট। তাছাড়া আজ নয় কাল তোমার জব তো হবে।
– আমি কি এখন গিয়ে তোমার বাবার কাছে গিয়ে তোমাকে ভিক্ষা চাইবো? আমি গিয়ে বলবো আঙ্কেল আমি কিছু করি না। আমার বাবারও সম্পদ নেই। আমরা গরীব। আমি তবুও কথা দিচ্ছি আমি আপনার মেয়েকে সুখে রাখবো এসব কথা বলবো?
অর্ণবের কথা শোনে আমার কান্না আসছে। আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। আমি কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বললাম,,,,,
– তার মানে তুমি আমায় বিয়ে করবে না। এইতো?
– তুমি আসলেই পণ্ডিত। চার লাইন বেশিই বুঝ। আমি একবারো বলেছি আমি তোমায় বিয়ে করবো না? অগ্রিম এতো ফালতু কথা বলো কেন?
– তাহলে তুমি কি বলছো? তুমি নিজেই তো বললে তুমি আসবে না আমার বাসায়।
– বলেছি এখন আসবো না। আমাকে সময় দিতে হবে। আমি একটা জব পেলে আম্মুকে নিয়ে তোমাদের বাসায় যাবো। বুক ফোলিয়ে মাথা উচু করে তোমার ফ্যামিলির কাছে চাইবো। ততদিন আমার জন্য তোমাকে অপেক্ষা করতে হবে।
-তার মানে তুমি এখন আমায় বিয়ে করবে না তাই তো?
-বললাম তো, আমার জব না হওয়া পর্যন্ত তোমাকে অপেক্ষা করতে হবে। বিয়ের পর কি আবেগ দিয়ে পেট ভরাতে পারবে? আজ যদি আমার বাপের অঢেল থাকতো তাহলেও আমি রাজি থাকতাম। তুমি কল্পনাও করতে পারবে না মীরা, আমি আর আমার মা কতোটা কষ্টে চলি। তুমি এই কষ্ট সহ্য করতে পারবে না।
– আমার আব্বু কি বলেছে তোমার জব নেই বলে আমার মেয়েকে তোমার কাছে বিয়ে দিবো না?
– এই মেয়ে, তোমার মাথায় কিছু নেই? তুমি এমন আবুল কেন? ফোনটা রাখো। এখন তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই অর্ণব মোবাইলটা কেটে দেয়। ওর কথা শোনে আমি আরো কান্নায় ভেঙ্গে পড়লাম। আমার বুক ফেটে যাচ্ছে কষ্টে। আমি ওয়াশরুমে ঢুকে শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে কাঁদতে লাগলাম।
ও আমার সাথে এমনটা করতে কারলো? আমি আব্বুকে কি বলবো? কিভাবে বলবো? আমার কষ্ট হচ্ছে। খুব কষ্ট। যাদের ব্যক্তিত্ব বড় তাদের থেকে সত্যি কষ্ট পেতে হয়। তারা সব কিছুতে বেশি চিন্তা করে। আমার আব্বুর সাথে এসে কথা বললে তার কি এমন ক্ষতি হতো? কি হতো?
চলবে———