#গোধুলীর_শেষ_প্রহরে
#পর্বঃ২১
#রাউফুন (ছদ্মনাম)
সারাফ কে আই সি ইউ তে নেওয়া হয়েছে একটু আগে। সাহিরা স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। মুহু কে কুহু সামলাতে ব্যস্ত। থেকে থেকে মেয়েটা বুবুকে ধরে ডুকরে কাঁদছে। শাম্মীকে প্রিতি সামলাতে পারছিলেন না জন্য ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুম পারিয়ে দিয়েছে। এতো বছর পর ছেলেটা কে পেয়েছেন তিনি। অথচ তার এরকম শোচনীয় অবস্থা। কোনো মা ই কি মেনে নিতে পারবে? ঘন্টা দুয়েক এভাবেই কেটে গেছে। এ-র মধ্যে শৈবালের জ্ঞান ফিরে আসে। সাহিরা একবার দেখা করে এসেছে। শৈবাল মুখ অন্য দিকে ফিরে ছিলো। এখনো কি রাগ? নাকি অন্য কোনো কারণ? শৈবালের মুখ ঘুরিয়ে নেওয়া দেখে সাহিরা বেরিয়ে আসে। বেরিয়ে আসার সময় শৈবাল শুধু সারাফের কথা জিজ্ঞেস করেছিলো কিন্তু তিনি উত্তর দিতে পারেনি। ছুটে চলে আসেন মুখে কাপড় চেপে। প্রান প্রিয় ভাইয়ের কথা যদি জানতে পারে তবে কে জানে শৈবাল আবার কোন পাগলামি শুরু করে?
সারাফের অপারেশন চলছে। কি হয়েছে এখনো সকলের কাছে পরিষ্কার না। যতক্ষণ না সাহিরা কিছু বলছেন ততক্ষণ সবকিছুই ধোঁয়াসা থাকবে। সবকিছু কেমন নিস্তব্ধতায় ছেঁয়ে গেছে। কারোর মুখেই কথা নেই। মুহুর বাঁধনহারা কাঁন্না থামাতে সক্ষম হয়নি কুহু। ওর মুখ টা এর মধ্যেই শুকিয়ে মলিন হয়ে গেছে। চোখের নিচে কালি বসে গেছে। চোখ গুলো কোটরে চলে গেছে। তার ছোট্ট বোন টাও যে এভাবে কারোর জন্য দিশেহারা হবে সে ভাবতে পারেনি। কত বড় হয়ে গেছে মুহুটা। সে যথেষ্টই শান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে কিন্তু কোনো কিছু তেই আটকানো যাচ্ছে না। কুহু সহাস্যে অনুনয় করে বলে,
‘মুহু বোন আমার আর কাঁদিস না। সারাফ ঠিক হয়ে যাবে একদমই চিন্তা করিস না তুই! ওর কিছুই হবে না। আল্লাহ সহায় হবেন নিশ্চয়ই! অনেক হয়েছে এবার চুপ কর বোন আমার!’
মুহুর কান্নার বেগ বাড়লো বয় কমলো না। বুবুকে শক্ত হাতে জড়িয়ে ধরে শব্দ করে কান্না করে দিলো সে। এতক্ষন কান্নার শব্দ ছিলো না। কিন্তু এখন কষ্ট গুলো শব্দ আকারে বেরিয়ে এলো। হতে পারে সারাফের সঙ্গে তার অল্প দিনের পরিচয় কিন্তু ভালোবাসা টা তো মিথ্যা না। মনে হয় যেনো ভালোবাসা টা বহুদিনের। এই ভালোবাসা টা যেনো হওয়ার ই ছিলো। শব্দ করে কাঁন্নার জন্য কথা বের হচ্ছে না মুখ থেকে। এখন শব্দ হচ্ছে না কান্নার। থেকে থেকে হেঁচকি তুলছে কান্নায়। নিরবে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে সে আর মনে মনে আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করছে। যাতে তার ফুলবাবুর কিছু না হয়। সে যেনো সুস্থ হয়ে যায় খুব তারাতাড়ি।
শাম্মীর ঘুম ভেঙেছে। ঘুমের ওষুধ কড়া ছিলো না জন্যই তারাতাড়ি ঘুম ভেঙেছে তার। হসপিটালের ক্যাবিনের ব্যাড থেকে নেমে তিনি আলতো পায়ে হেঁটে আসলেন দেয়ালে হাত ঠেকিয়ে ঠেকিয়ে। উদ্ভ্রান্ত হয়ে সাহিরার সামনে এসে দাঁড়িয়ে পরলেন। চাহনি তার সু’চে’র মতো ধারালো! তিনি ক্রূর্ধ নয়নে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
‘আমার ছেলের এই অবস্থা কেন হয়েছে সাহিরা? ওর কি হয়েছে যার জন্য ওর নাক থেকে র’ক্ত পরছিলো? বলো আমাকে! আমিও একজন ডক্টর। বড় কিছু না হলে তো এরকম টা হওয়ার কথা নয়?’
প্রিতি এগিয়ে এলেন অস্থির হয়ে বলেন, ‘একি! শাম্মী আপা আপনি কেন এগিয়ে এলেন? আপনার রেস্ট নেওয়ার প্রয়োজন। প্লিজ আপনি শান্ত হোন। উত্তেজিত হবেন না!’
শাম্মী কিছু টা চাপা, খড়খড়ে আওয়াজ,
‘আপনি বুঝবেন না প্রিতি। একজন মায়ের মনে এই মুহুর্তে কি হচ্ছে আপনার ধারণা হবে না। আপনি ততক্ষণ কারোর মনের দুঃখ পুরো পুরি বুঝবেন না যতক্ষণ না সেইম ঘটনা আপনার সাথে ঘটছে। আপনি হইতো আমার কষ্ট টা উপলব্ধি করতে পারছেন কিন্তু পুরো পুরি না। আঠাশ বছর পর পেয়েছি আমি আমার ছেলেকে তাও এই অবস্থায় দেখতে হচ্ছে আমার ছেলেটা কে। এরকম একটা সময় একজন মায়ের কি অবস্থা হতে পারে সেটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন?’
কথা গুলো বলেই কান্নায় বিজড়িত হয়ে পরলেন শাম্মী। প্রিতি দুহাতে আগলে নিয়ে সামলানোর ব্যর্থ প্রয়াস চালাচ্ছেন। সারাফ তো তার হবু জামাতা হতে যাচ্ছে। তার কি কষ্ট হচ্ছে না! তার বাচ্চা মেয়েটা কেঁদে টেদে বুক ভাসাচ্ছে। এতে কি তার কষ্ট হচ্ছে না? জীবনে যে মেয়ের চোখে এক ফোঁটা জল দেখেন নি তিনি সেখানে তার মেয়েটা আধ ম’রা হয়ে গেছে কেঁদে কেঁদে।
সাহিরা মেঝেতে থেকে উঠে শাম্মীর মুখোমুখি হলেন। হাতের উল্টো পাশ দিয়ে চোখের পানি মুছে বলেন,
‘আমি সব বলছি। তুমি তো সারাফ কে জন্ম দিয়েছো কিন্তু ওঁকে মানুষ তো আমিই করেছি আপা। আমার যে বক্ষস্থল অজানা ব্যথায় চৌচির হয়ে যাচ্ছে গো আপা। তার আভাস কি তুমি পাচ্ছো? নাহ পাচ্ছো না। একমাত্র ওঁদের জন্য আমি কখনো মা হওয়ার সাধ নেইনি। যেনো ওঁদের মনে না হয় আমি ওঁদেরকে ভালোবাসি না।’
‘ওতো কিছু জানতে চাই না। কি হয়েছে বলো সাহিরা। মুল ঘটনা কি? আমি তোমার কাছে আমার ছেলে মাহেত কে দিয়ে জরুরি একটা অপারেশনে গেছিলাম। তুমি ছিলে আমার বাসার ভাড়াটিয়া। তোমাকে বিশ্বাস করে আমার ছেলেকে রাখতে দিলাম আর তুমি তাকে নিয়ে পালালে! তোমার বিবেকে বাঁধলো না!এরকম একটা নিচু কাজ করার আগে মনে হয়নি ওই টুকু বাচ্চা ছেলে মাকে ছাড়া কীভাবে থাকবে? তোমার মন সায় দিলো একজন মায়ের কোল শুন্য করতে?’
‘আমি তোমার ছেলেকে নিয়ে পালাই নি আপা। সেদিন তোমার কথা মতো আমি তোমার ছেলে মাহেত কে নিয়ে তোমার বাড়িতেই ছিলাম। কিন্তু হঠাৎই দরজায় টোকা পরে। আমি জিজ্ঞেস করি কে? কিন্তু জবাব আসেনি। পরে আমি দরজা না খুলে ঘরে চলে আসি। পুরো বাড়ি টা ছিলো ফাঁকা। কোনো একজন মানুষ নেই। ভয় পাচ্ছিলাম খুব। সন্ধ্যার পর! রাত বাড়ছে। একা এতো বড় বাড়িতে ভয় করবে এটাই স্বাভাবিক। আমি মাহেত কে দোলনায় শুইয়ে রেখে ওর জন্য খাবার বানাচ্ছিলাম। হঠাৎ অনতিপ্রবল ভাবে কেউ তীক্ষ্ণ আঘাত হানে আমার মাথায়। কোনো রকমে পিছনে ঘুরে দেখি একটা পরিচিত মুখ। আমি জানতাম ওর কাজ কি। ছোট বাচ্চাদের কে পাঁ’চা’র করা। তার কূ-কীর্তির প্রমাণ ছিলো আমার কাছে। তাছাড়া ওর উদ্দেশ্য শুধু আমার কাছ থেকে প্রমাণ নেওয়ার ছিলো না। মাহেত কেও নেওয়ার ছিলো ওর। আমি আমার প্রান থাকতে মাহেতকে ওর হাতে পরতে দিতে চাই নি। আমার মাথায় উড়না বেঁধে দুই বছরের মাহেত কে নিয়ে ছুটলাম। রাস্তায় অন্ধকারে দিক বেদিক হয়ে দৌড়াচ্ছিলাম। দৌড়াতে দৌড়াতে পুলিশের গাড়ির সামনে পরি আমি। তাদের কে যেনো খবর দিয়েছে আমি বাচ্চা পাঁ’চা’র-কারীদের সঙ্গে যুক্ত আছি। তাই সেদিন পুলিশ আমাকে ধরে নিলো। আমি না করলেও তারা শুনেন নি আমার কথা। কারণ সে সময় মাহেত ছিলো আমার কোলে। সেটা দেখেই পুলিশ ধরে নিলেন আমি সত্যিই বাচ্চাদের কে পা’চা’র চক্রে যুক্ত আছি। তাছাড়াও আমার বিরুদ্ধে নাকি তাদের কাছে অনেক প্রুফ আছে। আদালত থেকে আমাকে আট বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হলো।
বাড়ির সবাই আমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিলো। আব্বা, চাচারা, মামারা, সবাই আমার মুখ দেখা তো দূর কথাও বলেনি। আম্মা আসতেন মাঝে মাঝে আমার সঙ্গে দেখা করতে। জ্বেল থেকে বেরোনোর পর খোঁজ খবর নিতে থাকলাম মাহেতের। মাহেতকে হন্নে হয়ে খুঁজলাম। কিন্তু পেলাম না৷ এরপর সাইফের সাথে দেখা হলো। ওর থেকে জানতে পারলাম ও নাকি জানে মাহেতকে কোথায় রাখা হয়েছে। সাইফকে দেখেই পুরনো রাগ মাথা চেপে বসেছিলো। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে ছিলাম আমি।’
এতটা বলে সাহিরা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। চোখ থেকে নির্গত পানির ছটা কাপড় দিয়ে মুছলেন। সবাই কেমন আগ্রহী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। যেনো এরপর কি হবে সেটা জানার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে। শাম্মী ধপ করে ব্রেঞ্চে বসে পরলেন। প্রিতিও শাম্মীর পাশেই বসলেন। এতো কিছু ঘটে গেছে অথচ সে কি না সমানে ভুল বুঝে যাচ্ছিলেন সাহিরাকে। এরপর কি হয়েছে জানার জন্য উৎকন্ঠায় হৃদয় টা ছলাৎ করে উঠছে। শাম্মীর দিকে তাকালো কুহু। এরপর সাহিরা কে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করলো,
‘তবে সারাফ মানে মাহেতের নাক দিয়ে রক্ত পরার কারণ কি খালা মনি? কি হয়েছিলো ওর সঙ্গে?’
সাহিরা লম্বা দম ফেলে আবার বলতে শুরু করলেন,
‘এরপর আমাকে শৈবালের বাবা জোর করে বিয়ে করলো। যদি ওঁকে বিয়ে না করি তবে মাহেতের খবর পাবো না। বিয়ের পর জানলাম মাহেত কে একটা এতিম খানায় রাখা হয়েছে। আমি সাইফকে বন্ধু ভাবতাম কিন্তু ওই আমার পিঠে ছু’ড়ি টা বসিয়েছিলো। সেদিন কিন্তু আমার মাথায় আঘাত টা আর কেউ করে নি সেটা ছিলো শৈবালের বাবা। ওর বিশ্বাস ঘাতকতা মানতে পারিনি আমি। ওঁকে বিয়ে করার কথা আমি ভাবতেও পারিনি। যে-কোন ভাবে মাহেতের খোঁজ আমার জানার ছিলো। আরও হুমকি দিলো ওঁকে যদি বিয়ে না করি তবে সে আমাকে আবার ফাসিয়ে দেবে শিশু পা’চা’র চক্রে। বিয়ের পর জানতে পারি আমাদের বিয়ের কয়েক মাস আগেই শৈবালের মা আ’ত্ম-হ’ত্যা করে মারা গেছে। এরপর শৈবালকে অনাথ আশ্রম রেখে আসা হয়েছিলো। সেই অনাথ আশ্রম থেকে শৈবাল আর সারাফ মানে মাহেত কে নিয়ে এলাম একই বাড়িতে। আমাদের মধ্যে এটাই ডীল হয় যে মাহেত কেও নেওয়া হবে। সাইফ রাজি ছিলো না কিন্তু ওর ছেলে শৈবাল জেদ ধরে বসে মাহেত কে ছাড়া যাবে না সেখান থেকে। বাধ্য হয়ে ওঁকেও সাথে নিলো সাইফ।’
‘এরপর কেন জানালে আমাকে সবটা? এরপর তো তুমি সবটা জানাতেই পারতে।কোনো বাঁধা তো ছিলো না?’
‘শাম্মী আপা জানানোর কোনো স্কোপই ছিলো। সেখান থেকে নিয়ে আসার আগে জানতে পারলাম মাহেত একবার পরে গিয়ে ব্যথা পেয়েছিলো মাথায়। সেখান থেকে ব্রেইনে ফ্র্যাকচার হয়েছে। মাথার যখম টা সারবে দিন দিন ওর বয়স বাড়ার সাথে সাথে। ওঁর ব্রেইন রক্ত জমাট বেঁধে আছে এখনো। মাথার আঘাত টা ছাড়লেও সেটা ঠিক হয়নি। ওতো অল্প বয়সে যদি ফ্র্যাকচার টা অপারেশন করা হতো তবে আরও ক্ষতি হতো ওর। ডক্টর বলেছেন যদি কোনো দিন মানসিক ভাবে বা কখনো আকস্মিক কোনো ঘটনা জানতে পারে এতে ওর অনেক বড় ক্ষতি হতে পারে। মানসিক ভারসাম্যহীন হতে পারে। কিংবা কোমায় চলে যেতে পারে। এই জন্য আমি ওঁকে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হতে দিতে চাইনি। এরপর বড় হওয়ার পর স্কলারশিপ পেয়ে জার্মানিতে পড়তে চলে গেলো। ওঁকে আমি জিজ্ঞেস করতাম যে ওর মাথা ব্যথা করে কি না। ও বলতো একটু আধটু মাথা করে ওষুধ খেলেই সেরে যায়। এতো বছরেও যে ওর মাথার সমস্যা টা দূর হয়নি পুরো পুরি সেটা জানতাম না। আজ ওর এই অবস্থা শুধু মাত্র আমার জন্য। ওর তো মাঝে মাঝে মাথা ব্যথা করতো আমি গুরুত্ব দেইনি। আবার যদি দেখাতাম ডক্টর তবে হয় তো ঠিক হয়ে যেতো। ডক্টর বলেছে মাথা ব্যথা হবে টুকটাক এতে চিন্তা করার কিছু নেই। তাই আমি চিন্তা করিনি। এখানে আসার পর তেমন ভাবে ওর মাথা ব্যথা ও দেখা যায়নি। তাই আমি ভাবলাম হইতো প্রব্লেম টা সেরে গেছে।’
‘পেশেন্টের বাড়ির লোক কে আছেন?’
ডক্টরের আগমনে সবার ধ্যান ফিরলো। এতক্ষনে গোগ্রাসে গিলছিলো সাহিরার সব কথা। সাহিরা এগিয়ে যাচ্ছিলেন কিন্তু শাম্মী তার আগে গিয়ে বলেন,
‘আমি পেশেন্টের মা। আমার ছেলের কি অবস্থা ডক্টর?’
ডক্টর মাথা নত করে নিলেন। উনার চোখ মুখে দুঃখের আভাস পাচ্ছে শাম্মী। ডক্টর এর মাথা নত করতে দেখেই কলিজা কেপে উঠলো মুহুর। ডক্টর কোনো দুঃসংবাদ দেবে না তো। সত্যিই যদি তার ফুলবাবু মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পরে তখন কি করবে সে?
‘আল্লাহ আপনি আমার ভালোবাসা কে রক্ষা করুন।’ (মনে মনে)
‘কি হলো ডক্টর কথা বলুন। কি হয়েছে আমার ছেলের?’
‘স্যরি মিসেস শাম্মী আমরা অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু****!’
মুহু আলতো পায়ে এগিয়ে এসে ডক্টর এর মুখো পানে তাকিয়ে বলে,
‘কিন্তু কি ডক্টর? বলুন। বলুন না?’
•
কুহুলতার বাড়ি তে তালা দেখে তৌহিদ চিন্তিত হলো। এদিকে আজ সারাদিনে একবারও কুহুলতা তাকে ফোন করেনি। ভেবেছিলো দুপুরে হইতো কল করবে কিন্তু সেটাও করেনি। তাই ভাবলো অফিস থেকে ফেরার সময় দেখা করে যাবে একবার। তাছাড়া সে ভেবে নিয়েছে যে আজ বলবে তার আর কুহুলতার সম্পর্কের কথা। সবাই মেনে নিলে ভালো না হলে পালিয়ে নিয়ে যাবে কুহুলতাকে। কিন্তু কুহুলতাকে অন্য কারোর হতে দেবে না। সাহস নিয়েই এসেছে সব কথা বলবে বলেই। কিন্তু এখানে এসে হতাশ হলো সে। সে আসার সময় দাড়োয়ান চাচাকে জিজ্ঞেস করলো,
‘চাচা কুহুলতা রা সবাই কোথায় গেছে?’
‘স্যার আপা মনি তো হাসপাতাল গেছে। ওই যে ছোট আপার যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে তার ভাই আবার বড় আপাকে বিয়ে করতে চাইছিলো। কিন্তু বাড়ি থেইকা মানে নাই। এরপর সেই পোলা নাকি বাড়ি গিয়া সু’ইসা’ই’ড করতে নিসিলো। কি এক যুগ আইলো কিছু একটা হইলেই ম’র’বা’র যায়। আল্লাহ রে ভয় পাই না এরা।’
তৌহিদ চিন্তিত হলো। এটা কেমন কথা? কুহুলতাকে কেন বিয়ে করতে চাইবো সে ছেলে। সে দারোয়ান চাচাকে ফের প্রশ্ন করলো,
‘চাচা কিন্তু আমি তো জানতাম কুহুলতার বিয়ের কথা পাকাপোক্ত হয়ে গেছে?’
‘হ্যাঁ তা তো হইছেই। কিন্তু কে জানতো এরুম অঘটন ঘটবো।’
‘ যে আত্ম’হত্যার চেষ্টা করেছে তার নাম কি?’
‘তা তো জানি না স্যার!’
দারোয়ান এর থেকে বিদায় নিলো তৌহিদ। চিন্তা আরও দ্বিগুন হলো। কোন ছেলে আবার কুহুলতার জন্য সু’ই’সা’ই’ড করার চেষ্টা করলো। কুহুলতার ফোন টাও বন্ধ দেখাচ্ছে। কিন্তু শান্তিও পাচ্ছে না সে। একটু যদি খোঁজ পাওয়া যেতো। সে ভাবলো একবার হসপিটালে যাবেই কি না। কিন্তু তানহা তো একা বাড়িতে। এদিকে সন্ধ্যাও হয়ে এসেছে। দু-টানার মধ্যেও সে সিদ্ধান্ত নিলো হসপিটাল যাবে। তানহাকে ফোন করে বলে দিলো আজ তার আসতে লেইট হবে। ঘরের দরজা, জানালা যেনো ভালো ভাবে আটকে বসে থাকে। সে কল দিয়ে দরজা খুলতে না বলা অব্দি যেনো ঘরের দরজা না খোলে। তানহাও তাই করলো। ঘরের দরজা বন্ধ করে বসে রইলো বই সামনে নিয়ে। তৌহিদ চললো হসপিটালের উদ্দেশ্যে। না জানি কি অবস্থা হয়েছে কুহুলতার। তাকে দেখে কে কি বলবে সেটা নিয়ে আপাতত মাথা ব্যথা নেই তার। কিন্তু এই মুহুর্তে তার মনে হ’য়েছে কুহুলতাকে দেখবে ব্যস দেখেই ছাড়বে। মনের সাথে যুদ্ধ করতে পারবে না আর। না দেখা অব্দি শান্তি মিলবে না সেটা ও বুঝতে পেরেছে। এটাই বোধহয় ভালোবাসা! এতোটা এগ্রেসিভ কবে হলো ও। নিজেই যেনো নিজেকে চিনতে পারছে না সে। সে বিরবির করে বলে,
‘ভালোবাসা সুন্দর! ভালোবাসা সুন্দর না হলে এমন সুখ সুখ অনুভূত হতো না আপনাকে দেখতে যাচ্ছি বলে। এই আপনাকে না দেখতে পেয়ে আমার বক্ষস্থলে যে অজানা দহনক্রিয়া হয়েছে সেটাও সুন্দর কুহুলতা। আপনি শুধুই এই আমি, মানে এই তৌহিদের জন্য সৃষ্টি হয়েছেন। উই আর মেইড ফর ইচ আদার!’
#চলবে