গোধূলি বেলায় তুমি এসেছিলে ২ পর্ব ১২+১৩

#গোধূলি_বেলায়_তুমি_এসেছিলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ১২ (২য় খণ্ড)

নির্ণিমেষ এবং দুর্বল দৃষ্টিপাত করে রূপা বেশ কিছুটা সময় কাটিয়ে দিলো। অভিরূপের কথার মানে তার বোধগম্য হলো না কিছুতেই। আশপাশের জায়গাটি না চিনতে পেরে হুট করে বলতে লাগল…
“আমি…”

পুরো বাক্য সম্পূর্ণ করা হলো না রূপার। তার আগেই মনে হুটোপুটি করে আরেক প্রশ্নের উদ্ভব ঘটল। অভিরূপ কি কোনোভাবে তাকে চিনে ফেলেছে? তৎক্ষনাৎ নিজের চুলে হাত রেখে দেখল রূপা। তার খোলা ছোটো চুল অগোছালো এবং স্পষ্ট হয়ে মেলে রয়েছে। তার ভাবভঙ্গি দেখে অভিরূপ কিছু একটা আন্দাজ করতে পেরে বলল,
“বহুরূপী! আসল নাম তো জানি না তোমার। আমার মনে হলো এই নামটা সবচেয়ে বেশি তোমায় মানাবে তাই বহুরূপী ডাকলাম।”

রূপাঞ্জনা চমকে ওঠে। গলা শুকিয়ে আসে। তাহলে সবটা অভিরূপের অবগত। তবে কি লোকটি তাকে পু’লিশের কাছে ধরিয়ে দেবে? এখন রূপার কী করা উচিত? অভিরূপকে অনুরোধ করা? না, সে মোটেও মাথা নুইয়ে মিনতি করার মতো মেয়ে নয়! রূপা তেজি সুরে বলে ওঠে,
“আমারও নিজের একটা চেহারা ছিল! সেটা হয়ত রাগিনীর মতো মাধুকরী সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ ছিল না। কিন্তু আমারও একটা রূপ ছিল।”

“তবে বদলাতে হলো কেন? নিজেদের মি*শন কমপ্লিট করতে?”

অভিরূপের এমন কথায় যেন রূপাঞ্জনার মুখশ্রী আরো বিবর্ণ হতে শুরু করল। ফ্যাকাশে ভাবটা প্রগাঢ় হলো। অভিরূপ এখনো দূর থেকে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ছে। রূপা এবার উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতেই অভিরূপ চেঁচিয়ে বলে উঠল,
“ওখানেই বসে থাকবে তুমি। নড়ার চেষ্টাও করবে না।”

রূপা জুবুথুবু হয়ে বসে ভীরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। অভিরূপ সেই জানালার কাছ থেকেই দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
“কী পাও মানুষকে জ/খ/ম করে?”

বেশ প্রতাপ নিয়ে করা অভিরূপের প্রশ্নে মাথাটা আপনাআপনি যেন নিচু হয়ে গেল রূপাঞ্জনার। তার কাছে উত্তর নেই। সে এসব কিছু করে কী পেয়েছে সে নিজেও জানে না। কোথাও একটা লক্ষ্য পূরণ হওয়ার আনন্দ খুঁজে পেয়েছিল। কিন্তু আদেও কি সেটা তার জীবনের লক্ষ্য ছিল? অভিরূপের উদাস কণ্ঠ শোনা গেল এবার।
“যদি বুঝতে পারতে কাউকে বাঁচতে সাহায্য করলে কতটা আনন্দ পাওয়া যায়! যদি নি’ষ্ঠুরতা কাটিয়ে উঠে নিজেকে নতুনভাবে সাজাতে তাহলে বুঝতে পৃথিবীতে আ/তঙ্কে না বেঁচে আনন্দেও বাঁচা যায়। নিজেদের কর্মকান্ড নিয়ে তোমরাও আত/ঙ্কে থাকো সেই সাথে আমরাও। লাভটা কীসে?”

রূপা তবুও নীরব এবং নির্জীব! নিস্ক্রিয় তার ভূমিকা। মাথাটা ছিঁ/ড়ে যাচ্ছে যন্ত্র/ণায়। দোটানায় পড়েছে প্রবৃত্তি। তার কি জানানো উচিত অভিরূপকে তার পালিয়ে আসার কথা? তার চুপ থাকাটা সহ্য হচ্ছে না কোনোমতেই অভিরূপের। রাগে চিল্লিয়ে বলে ফেলল,
“যদি এমনটা না করতে, যদি এমন কাজে না জড়াতে তুমি আর আমি একসাথে থাকতাম। একসাথে থাকা মানে বোঝো? বুঝবে কী করে? তোমার এসব তো বোঝার কথাও না। আমিই পা/গলের প্রলাপ বলছি তোমায়। ড্যাট ইট!”

নিজের ক্রো/ধ অবরোধ করতে পারল না অভিরূপ। বেশ জোরেশোরে পা দিয়ে একটা লা/থি মে/রে বসল সামনে থাকা সুন্দর চেয়ারে। তা গিয়ে লাগল সোজাসুজি আলমারিতে। উদ্ভট শব্দের সৃষ্টি এবং অভিরূপের রোষানলের স্বীকার হওয়া রূপাঞ্জনার শ্বাস-প্রশ্বাস ঘন হতে থাকল। তৎক্ষনাৎ দরজার ওপার থেকে নোমানের আওয়াজ এলে যেন নিজের হুঁশে ফিরল অভি। চোখ বড়ো বড়ো করে রূপার দিকে তাকিয়ে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে দিলো যেন সে চুপ থাকে।
“অভি! কী করছিস ভেতরে? এমন শব্দ এলো কেন? দরজা খোল।”

অভিরূপ এবার নিজে স্থানচ্যুত হলো। গিয়ে দাঁড়াল একেবারে দরজার কাছে। কান লাগিয়ে দিলো দরজায়। নিজের সমস্ত রা/গ চাপা দিয়ে ব্যস্ত গলায় বলার চেষ্টা করল,
“কিছু হয়নি। কী হবে আবার? হাত লেগে ড্রেসিংটেবিল থেকে কিছু জিনিস পড়ে গিয়েছে।”

“তাহলে দরজা খুলছিস না কেন? আমার তোর কথা বিশ্বাস হচ্ছেনা। দরজা খোল তো তুই।”

নোমানের কণ্ঠে শোনা যায় ব্যাকুলতা। অভিরূপ বিরক্ত হওয়ার ভান ধরে বলে,
“আশ্চর্য! শাওয়ার নিয়েছি ড্রেস চেঞ্জ করছি। এই অবস্থায় দরজা খুলব?”

নোমান হতবাক হলো।
“তুই কবে থেকে এত লজ্জা পাস?”

“জন্মের পর থেকে। তুই যা তো!”

যাচ্ছি, যাচ্ছি। এমনিতেও বাহিরে যাচ্ছিলাম। উর্মিলাকে দেখতে। তুই যাবি?”

অভিরূপ একঝলক রূপাকে দেখে নিলো। মেয়েটা চুপই আছে। তারপর আবার বলল,
“আমি তোদের মাঝে হাড্ডি হয়ে করব টা কী? তুই যা।”

“হাড্ডি মানে কী?”

“তর্ক করবি নাকি যাবি? দেরি হয়ে যাচ্ছে তোর।”

নোমান এবার হার মানে। হাফ ছেড়ে বলে,
“যাচ্ছি, যাচ্ছি।”

ওপাশ থেকে শব্দ শোনার জন্য কান লাগিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে অভিরূপ। বেশ কিছুক্ষণ পর বুঝল নোমান সত্যি চলে গিয়েছে। স্বস্তির শ্বাস নিয়ে রূপার দিকে ফিরে তাকাল সে। রূপা গোলগোল চোখে তার দিকে চেয়ে। যেন প্রচন্ড ভাবনা ঘিরে ধরেছে তাকে। এবার কৌতূহল ধরে রাখতে না পেরে প্রশ্ন করেই বসল,
“এখানকার কেউ জানে না আমি এখানে রয়েছি?”

“জানলে কি এই বিছানায় বসে থাকার ভাগ্য হতো তোমার? পুলিশ হাতকড়া পরিয়ে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যেত।”

“তাহলে সবাই যদি আমায় পুলিশের হাতে তুলে দিতে চায় তবে আপনি আমায় আগলাচ্ছেন কেন এভাবে? আমি তো আপনাকেও মা/রার মি/শনে নেমেছিলাম সেটা বোধহয় আপনি জানেন। তবুও কেন এই প্রচেষ্টা?”

দরজার সঙ্গেই হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল অভিরূপ বুকে দুটো হাত জড়িয়ে। মলিন হাসল।
“কাউকে আগলানোর চেষ্টা করেছ কখনো? কাউকে কোনো বিপদের হাত থেকে বাঁচিয়েছ?”

রূপা ফট করেই উত্তরটা দিয়ে ফেলল এবার।
“হ্যাঁ। আপনাকে বাঁচিয়েছি তো। যদিও মা/রার চেষ্টা আমিই করেছিলাম তবে…”

“তবে?”

অভিরূপ সূক্ষ্ম চোখে দৃষ্টিপাত করল উত্তর পাওয়ার আশায়। রূপাঞ্জনাও জবাব দেওয়ার প্রস্তুতিই নিচ্ছিল তবে তার বদলে মা/রাত্ম/ক কাশি উঠে গেল তার। বুকে হাত দিয়ে কাশি রোধ করার চেষ্টায় থাকতে থাকতে র/ক্ত উঠে গেল মুখ দিয়ে। থুঁতনি সহ জামা এবং কিছুটা বিছানায় পড়ে গেল সেই র/ক্ত। অভিরূপ তা দেখে হকচকিয়ে উঠল প্রথমে। কী করবে দিশেহারা না পেয়ে সবটা ভুলে এগিয়ে এলো রূপার দিকে। তার মাথায় হাত দিয়ে আস্তে আস্তে করে বুলিয়ে দিতে দিতেই কাশি থামল। তারপর টেবিল থেকে দ্রুত হাতে টিস্যু নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ল রূপাঞ্জনার মুখ খানা মুছতে। বিচলিত হয়ে প্রশ্ন করল,
“কী করে হলো এমন? হঠাৎ র/ক্ত পড়ছে কেন?”

অভিরূপের এমন ব্যাকুলতা বেশ ভাবিয়ে তুলক রূপাকে। এই মানুষটার অন্তরের ভাষা বুঝে উঠতে পারছে না। ভাবনাশক্তি লোপ পাচ্ছে যেন। মুখ দিয়ে র/ক্ত ওঠার পর ঝিমঝিম করছে মাথা। কথা বলার মতো অবস্থায় নেই সে। তার এমন পরিস্থিতি বুঝতে পেরে অভিরূপ ফের বলল,
“থাক কথা বলতে হবে না।”

আলতো স্পর্শে ঠোঁটের আশেপাশে সেই লাল তরল পদার্থ মুছতে বেশ মনোযোগী হয়েছে অভিরূপ। টিস্যুর প্রতিটা অংশ এমনভাবে রূপার ত্বকে লাগিয়ে যাচ্ছে যেন একটু জোরে লাগিয়ে দিলেই ব্যথা পাবে মেয়েটা। এই বাহানায় অনিচ্ছাকৃতই আবারও কাছাকাছি এসেছে দুজন। অভির নিজের ক্রো/ধটা যেন মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে পরাজিত হয়ে। তার প্রতিটা গরম শ্বাস যখনই রূপার গলায় গিয়ে পড়ছে আন্দোলিত হচ্ছে রূপাঞ্জনার সর্বাঙ্গ। এমন আদুরে স্পর্শ সে তো পায়নি আগে। এই প্রথম কোনো পুরুষ আ/ক্রো/শ ব্যতীত সেবা এবং যত্নের উদ্দেশ্যে স্পর্শ করল তাকে। এই কোমল ছোঁয়া যেন যেখানে যে কারোর হৃদয়ে তড়িৎ পরিবহন করতে ব্যর্থ সেখানে রূপাঞ্জনা তো একজন নারী! নারী সামান্যতম যত্নেও গলে যায় কঠিন বরফ থেকে পানি হওয়ার মতো। এরইমাঝে অভিরূপের খেয়াল হলো সে আবেগে ভেসে কী করে ফেলেছে! সরে এলো। উঠে দাঁড়াল। রাগের সাথেই বলল,
“শুয়েই থাকো তুমি। ওঠার দরকার নেই। আমি বাহিরে থেকে আসছি। দরজা লাগিয়ে দাও।”

দরজা খুলে হনহনিয়ে বেরিয়ে যেতে যেতেই হুট করেই সামনে এসে হাজির হলো রাগিনী। ধা/ক্কা খেতে খেতে বেঁচে গেল দুজন। সামলে নিলো নিজেদের। রাগিনী ধাতস্থ করে স্বস্তির শ্বাস ফেলে বলল,
“এভাবে হন্তদন্ত হয়ে কোথায় যাচ্ছিলেন? ওদিকে কিছু হয়েছে নাকি?”

অভিরূপ মাথা চুলকে নির্বোধের মতো বলল,
“না! আসলে ওর কাছাকাছি চলে গিয়েছিলাম। কীভাবে যে সব এত তাড়াতাড়ি ভুলে যাই!”

হাসতে গিয়েও হাসল না রাগিনী। ঠোঁট চেপে হাসি নিবারণ করে খানিকটা এগিয়ে গিয়ে দরজার সামনে মাথা দিয়ে উঁকি দিতেই রূপাকে সজাগ দেখে তৎক্ষনাৎ সরে এলো সে। ভয়ই লাগছে মেয়েটার কাছে যেতে বা তাকে দেখতে। কখন কী করে দেয়! অভিরূপের দিকে প্রশ্ন ছ/ুঁড়ে দেয় রাগিনী।
“কেমন আছে এখন ও?”

“সেন্স তো এসেছে বাট হঠাৎ কেন যেন র/ক্ত বেরিয়ে এলো মুখ দিয়ে। বুঝতে পারছি ব্লি/ডিং এর কারণ।”

না চাওয়া সত্ত্বেও আঁতকে উঠল রাগিনী। চিন্তিত সুরে বলল,
“ওর জন্য কিছু খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। জানি না আমরা ওর কী হয়েছে। একটু হলেও তো যত্ন করতে হবে।”

“তুমি রান্না করে খাইয়ে দাও। আমি পারব না ওসব সেবা করতে।”

রাগিনী এবার ভ্রু উঁচিয়ে তাকিয়ে থাকে। যেন সে শুনে নিয়েছে, ভূতের মুখে রাম রাম! দুহাত ছড়িয়ে ব্যঙ্গ করে বলে দিলো,
“ওহ হো! এতক্ষণ বুঝি অভিরূপ চৌধুরীর ভূত সেবা করছিল? আবার শুনলাম কাছাকাছিও গিয়েছিল তারা।”

অভিরূও এবার অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। গলা খাঁকারি দিয়ে শ’ক্তভাবে বলে ওঠে,
“ধুর! আমি আসছি। তোমার যা ইচ্ছা করো।”

রাগিনীকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই চলে গেল অভিরূপ। তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রাগিনী গালে হাত দিয়ে বিড়বিড়িয়ে বলল,
“ভালোবাসার কত রূপ!”

“এক্সকিউজ মি! মে আই কাম ইন?”

কেবিনের দরজায় একগুচ্ছ তাজা গোলাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা নোমান বিনয়ী সুরে যখন কথাটি বলল বেডে আধশোয়া হয়ে থাকা উর্মিলা এবং উর্মিলার মা দুজনই তার দৃষ্টি আকর্ষণ করল। উর্মিলার মা তাকে চিনতে না পেরে প্রথমেই টুল থেকে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলেন,
“তোমায় তো ঠিক চিনলাম না!”

“উনিই সে যে আমায় জুতো মে/রে গরু দান করে বারবার।”

উর্মিলার কড়া কণ্ঠ বুঝিয়ে দেয় নোমানকে সে এখনো কতটা ক্ষুব্ধ হয়ে রয়েছে তার উপর। তবে নোমান নিজের হাসিটা বজায় রাখে। উর্মিলার মা কিছুটা বুঝতে পেরে বলে,
“উর্মি! যখন তখন যা ইচ্ছা তাই বলার স্বভাব তোর যাবে না? কথায় শেখাতে পারলাম না তোমায়। আর তুমিই বুঝি আমার মেয়েকে হসপিটাল অবধি নিয়ে এসেছিলে?”

শেষ কথাগুলো নোমানকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়ে নোমান নম্র সুরে জবাবে বলে,
“জি, হ্যাঁ। আর ওর রা/গ করাটা স্বাভাবিক আন্টি। আমিই ওকে রাগিয়ে দিয়েছিলাম রাস্তার মাঝখানে সেকারণেই ওর এমন অঘ/টন ঘটে গেল।”

“ওসব কিছু না। মূল কথা হচ্ছে আমি ওকে বিয়ের কথা বলেছিলাম তো তাই ক্ষে/পে ছিল। বিয়ের কথা যেন সহ্যই হয় না তার। তুমি ভেতরে এসো।”

নোমান ভেতরে এলো। উর্মিলার নিকটে গিয়ে নিজের হাতের ফুলগুলো দিতে গেলে মুখ ঘুরিয়ে নিজের হাত গুটিয়ে অকপটে রইল উর্মিলা। নোমান কিছু না বলে মেয়েটার পাশেই রেখে দিলো ফুলগুলো। বিয়ের কথাটি শুনে মনটা উটকো চিন্তায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ততক্ষণে। প্রফুল্ল সজীব মনটা যেন নিমিষে শুকনো পাতার ন্যায় হয়ে গেল। তবুও মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল,
“বিয়ের কথায় রাগার কী হলো মিস. উর্মিলা? বিয়ে করা তো ভালো ব্যাপার।”

“সেটাই তো ওকে বোঝাতে পারি না। এখন এত এত সম্মন্ধ আসে ওকে নিয়ে। সবসময় তো ভালো ছেলে পাওয়া যায় না। এটা ও বুঝতেই চায় না।”

নোমান নীরবে হেঁসে খানিকটা ঝুঁকে উর্মিলাকে প্রশ্ন করল,
“তা বিয়ের দাওয়াত কবে দিচ্ছো আমায়?”

এবার আরো মেজাজ খারাপ হয় উর্মিলার। রে/গেমেগে চোখ রাঙিয়ে তাকায় নোমানের দিকে। ইচ্ছে করল ঠা/স করে একটা থা/প্পড় বসিয়ে দিতে। কী করে পারে একটা মানুষ কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দিতে সেটা এই লোকটার থেকেই যেন শিখতে হয়। উর্মিলা এবার তার মায়ের দিকে তাকিয়ে জে/দ ধরে বলল,
“মা! তুমি থামবে? তোমরা দুজন মিলে বিয়ে বিয়ে শুরু করলে কেন? এত শখ হলে তুমি আবার বাবাকে বিয়ে করে নাও আর এই লোকটাকেও একটা পাত্রী খুঁজে দাও বিয়ের জন্য। আমাকে জ্বালিয়ো না তোমরা।”

রাগ ফোঁসফোঁস করে কথাটা অনর্গল বলে থামল উর্মিলা। তার মাও তেতে উঠলেন এবার।
“দিনকে দিন লাগামছাড়া হয়ে যাচ্ছিস!”

নোমান শান্ত সুরেই বলল,
“আমার পছন্দ মতো কাউকে পেলে তো বিয়ে করেই নেব। সমস্যা নেই। তুমি সবার আগে দাওয়াত পাবে। এখন আমি আসি।”

“এখনি চলে যাবে?”

নোমান প্যান্টের পকেটে হাত গুঁজে নিলো। মাথা দুলিয়ে বলল,
“হ্যাঁ আন্টি আমি আসি। কাজ আছে।”

নোমান আর কথা বাড়াল না। উর্মিলার লাল হয়ে যাওয়া চেহারার দিকে তাকিয়ে বেরিয়ে এলো। করিডর দিয়ে যেতে যেতে অনর্থক ভাবনায় পড়ল নোমান। তার তো হাতে কোনো কাজ নেই। তবে বেরিয়ে এলো কেন বাহানা দিয়ে? কীসের এত অমায়িক চাহিদা?

বসে বসে এক অদ্ভুত চিন্তায় নিজেকে মাতিয়ে তুলেছে রূপাঞ্জনা। সেই চিন্তার মাঝে হা/না দিলো কারোর উপস্থিতি। হালকা ফাঁক রাখা দরজায় উঁকি দিচ্ছে দুটো সুন্দর আঁখি জোড়া। ভ্রু কুঁচকে তাকাল রূপা। চিনতে খুব একটা ভুল হলো না তার। অভিরূপ তাকে দরজা লাগাতে বলেছিল। কিন্তু সে ভুলে গিয়েছে। দুর্বল এবং নিচু সুরে সে বলে,
“রাগিনী!”

রাগিনী হুড়মুড়িয়ে দরজা খুলে ফেলল একহাত দিয়ে। যেন সে বেশ ভয় পেয়েছে। বাধ্য মেয়ের মতো উত্তর দিলো,
“হ্যা়ঁ। কিছু বলবে?”

রূপাঞ্জনা বেশ ভালো করেই বুঝে নেয় মেয়েটা ভয় পাচ্ছে। পাওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। তার নিজের কারণে এই মেয়েটার ওপর দিয়ে অনেক কিছুই বয়ে গিয়েছে সেটা বেশ ভালো করেই বোঝা যায়। আর সে তো নিজেই একটা আ/তঙ্ক। তবে রূপা ভালো করে সোজা হয়ে বসে আশ্বাস দিয়ে বলল,
“ভয় পেও না। আমি সত্যিই এখানে কোনো উদ্দেশ্যে আসিনি। এখানে এসো।”

রাগিনী স্যুপ নিয়ে এসেছিল। তবে ঘরে প্রবেশ করার সাহসটা পাচ্ছিল না। দুরুদুরু বুকে এলোমেলো পায়ে রূপার থেকে কিছুটা দূরত্বে এসে বসল সে। স্যুপ এগিয়ে দিয়ে বলল,
“এটা খেয়ে নাও।”

রূপা হাত বাড়াতে গিয়েও বাড়াল না। তার হাতে র/ক্ত শুঁকিয়ে গিয়েছে। সেটা খেয়াল করে রাগিনী ভয়ে ভয়েই বলল,
“আমি খাইয়ে দেব?”

“তুমি?”

এক আকাশ বিস্ময় নিয়ে বলল রূপা। রাগিনী হালকা মাথা দুলাতেই রূপা আরো গুটিয়ে নিলো নিজেকে। মিনমিন করে বলল,
“কেন এমন যত্ন করছ আমার? করো না এত যত্ন! এসব সেবা আমার মধ্যে আরো বেশি অপরাধবোধ জাগিয়ে তুলছে।”

চলবে…

[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক।]#গোধূলি_বেলায়_তুমি_এসেছিলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ১৩ (২য় খণ্ড)

“অভিরূপ তোমার যত্ন করতে বলে গেলেন যে। না করলে আবার মনঃক্ষুণ্ন হবেন।”

অক্ষিগোলক আকারে বৃহৎ হলো রূপাঞ্জনার। রাগিনীর মাত্র বলা কথাটি তার কাছে অবিশ্বাস্য লাগছে বটে। যেই মানুষটি ভ/য়াবহ রাগ দেখিয়ে কিছুক্ষণ আগে চলে গেল সেই মানুষটি কিনা তার যত্ন নিতে বলেছে ভাবতেই পারছে না সে। রাগিনী এবার সাহস করে হাতে স্যুপের বাটি ধরল। চামুচ দিয়ে নাড়িয়ে বেশ যত্নের সঙ্গে ফুঁ দিতে আঁড়চোখে তাকাল রূপার পানে। এতক্ষণ সে কথা বলে যাচাই করে দেখছি রূপার হাবভাব। মেয়েটিকে এখন ঠিকঠাক লাগছে তার। ভয় লাগছে না। তার চোখ এবং কথার বলার ধরণে সে বুঝে নিয়েছে সে আসলেই অসুস্থ। চামুচ দিয়ে স্যুপ তুলে রূপার মুখের দিকে ধরতেই আবারও আগের মতো অবাক চোখে তাকাল রূপা। তার সবটা অবিশ্বাস্য লাগছে। তবুও সে হা করে চুপ মুখে নিয়ে গিলে বলল,
“উনি বলেছেন আমার যত্ন নিতে?”

“বলেছেন তো। এমনিতেই তো কম বিরহে ভোগেন নি।”

“বিরহ? কীসের বিরহ?”

মুচকি হাসে রাগিনী। রূপার প্রশ্নের উত্তরটা সে তো নিজেই। এই ভেবে আরো হাসিটা প্রগাঢ় হয়। ক্ষীণ সুরে প্রশ্ন করে,
“কখনো কাউকে ভালোবেসেছ?”

রূপার কপালে ভাঁজ পড়ল এবার। সময় না নিয়ে নির্লিপ্তে বলে দিলো,
“না।”

“তাহলে বাদ দাও। উনার বিরহ তুমি বুঝবে না।”

রূপা দম ফেলে ফেলে খেতে থাকল। সামান্য স্যুপ গিলতেও তার ক/ষ্ট হচ্ছে। বেশ সময় নিয়ে কিছু একটা ভেবে ফট করে বলে উঠল,
“উনি বোধহয় তোমার প্রেমে পড়েছিলেন আর তুমি তো ওই অফিসারকে ভালোবাসো। তোমাদের তো বিয়ে হওয়ারও গুঞ্জন উঠেছিল। এখনো গুঞ্জনটা সচল। তুমি বিয়ে ভে’ঙে দিয়েছ। সেকারণেই উনার মন খারাপ তাই না?”

এমন বোকা কথায় এবার বেশিই হাসি পেয়ে যায় রাগিনীর। বাটিটা হাত থেকে নামিয়ে খিলখিলিয়ে হেঁসে দেয় সে। রূপার বেশ লাগে তার হাসির শব্দে। মেয়েটার হাসি দারুণ সুন্দর। একপলক দেখেই কোনো পুরুষ প্রেমে পড়া কোনো ব্যাপারই নয়। রাগিনী হাসতে হাসতেই ফের খাওয়াতে ব্যস্ত হয়ে বলে,
“বোকা মেয়ে তুমি।”

“ওহ এই ব্যাপার নয়?”

রাগিনী মাথা এপাশ-ওপাশ নাড়াল। খাওয়ানোর মাঝে রাগিনী আগ্রহের সাথে জিজ্ঞেস করল,
“তোমার নামই তো জানা হলো না। কী নাম তোমার? এবার প্লিজ সত্যিটা বলবে।”

“রূপা আমার নাম। রূপাঞ্জনা।”

“পুরো নাম? মানে পদবী নেই?”

রূপার মুখে ফ্যাকাশে আভা দেখা দিলো এবার। কিঞ্চিৎ সময় আগে এক অন্যরকম উজ্জীবিত চেহারা কালো হয়ে এলো। তাকে এমন চুপচাপ দেখে খাওয়া থামাল রাগিনী। রূপা থেমে থেমে বলল,
“আমার কোনো পদবী নেই। কোনো বেজ* বাচ্চার পদবী থাকে কখনো? আমারও ঠিক তেমনই নেই।”

“তোমার মা-বাবা নেই?”

ঢক গিলে জিজ্ঞাসা করে রাগিনী। রূপা প্রতিত্তোরে থমথমে সুরে বলে,
“না। আমি আদেও জানি না কারা আমায় জন্ম দিয়েছিল। আর কারাই বা রাস্তার ডাস্টবিনে ফে/লে দিয়েছিল। হবে হয়ত কোনো প/তিতা বা যেই সম্পর্কের কোনো নাম নেই সেই সম্পর্ক থেকে জন্ম নেওয়া এক সন্তান। যার হাত ছড়িয়ে বাঁচার অধিকার নেই। হয়ত বাঁচতামও না। যদি গবেষক বাবা না বাঁচাতেন।”

“গবেষক বাবা?”

“হ্যাঁ। তিনি আমায় রাস্তার ওই ডাস্টবিন থেকে উদ্ধার করেছিলেন। বড়ো করলেন। আমাকে উনিই বলেছিলেন জানো তো! যে মানুষের ক/ষ্ট এবং লাল র/ক্ততে আলাদা শান্তি মেলে। আমি খুব ছোটোবেলায় সবার আগে একটা ছোটো বাচ্চাকে মে/রে তার মাথা ফ/টিয়ে ফেলেছিলাম। তাও উনার কথায় সাহস করে। আর সত্যি বলতে ওইদিন ওই কান্না আর র/ক্ত দেখে অন্যরকম একটা আনন্দ কাজ করছিল আমার। গবেষক বাবা আমায় আরো বেশি উৎসাহ দিতো। আমি সবাইকে সামান্য কারণে মা/রতাম। বড়ো হতে হতে উনি হঠাৎ মা/রা গেলেন। মা/রা যাওয়ার আগে শেষ মেসেজ ছিল আমি যেন তার তৈরি করা প্রতিটা সদস্যদের পরিচালনা করি। শক্তহাতে তার প্রতিজ্ঞা করা পূরণ করতে সাহায্য করি। তার প্রতিজ্ঞা ছিল তিনি একদিন পুরো দে/শে আ/তঙ্ক সৃষ্টি করে সকলের রাজা হয়ে উঠবেন। উনার এই অদ্ভুত চাহিদা কেন ছিল জানি না। সবার ইচ্ছে তো একরকম থাকেনা। অনেকেই অনেক ভ’য়ঙ্কর ইচ্ছে মনে পোষন করে। উনিও তেমন ছিলেন।”

রাগিনী তেমন কিছু বলল না এবার। মনোযোগ দিয়ে শুনে থম মে’রে বসে রইল। খাওয়ানোটাও বন্ধ হলো তার। কী বলবে বুঝে উঠতে পারল না। একটা অবহেলিত সদ্য জন্মানো সন্তানের জায়গা যখন হয় রাস্তার ডাস্টবিনে তখন তার ভবিষ্যৎ যে খুব একটা ভালো হয় না সেটা রাগিনীর অবগত। একটা বাচ্চা বড়ো হয়ে মানুষের মতো মানুষ হওয়ার জন্য সঠিক শিক্ষার পাশাপাশি সে যেই পরিবেশে বেড়ে ওঠে সেই পরিবেশটা সুন্দর এবং সৎ হওয়া ভীষণ প্রয়োজন। পৈশা/চিক এবং ভ/য়ানক পরিবেশে বেড়ে উঠলে শিশুটার মনোভাবও একইরকম হতে থাকে। তার হরমোনে সেইসব কার্যক্রম জায়গা করে নেয়। বেশ ভাবনাচিন্তা করে রাগিনী বলল,
“প্রাণ নেওয়াতে কোনো আনন্দ নেই রূপা বিশ্বাস করো। একটা মানুষের প্রা’ণ নিলে সেই পরিবার বি/ধ্বস্ত হয়। সেই পরিবারের প্রধান সদস্য সে হয় তবে তো কথায় নেই। এভাবে কত পরিবার ধ্বং/স হয়েছে তার ঠিক নেই।”

রূপাঞ্জনা যেন মানতে চাইল না রাগিনীর কথা। কিছুটা শক্ত চাহনিতে তাকাল সে। কড়া গলায় জবাব দিয়ে উঠল,
“তাতে আমার কী? আমার তো পরিবার নেই। তবে অন্যদেরটা কেন দেখতে যাব আমি?”

বলেই নিজের মাথাটা চেপে ধরল সে। তার মাথাটা এমন চাপে হঠাৎই অসহ্য য/ন্ত্ণা শুরু করে দিয়েছে। যেন চিন্তাশক্তি কাজ করছে না। লোপ পাচ্ছে ভাবনাগুলো। তবে তার এমন দৃঢ় কণ্ঠেই রাগিনী হুট করেই ভড়কে গেল। হুড়মুড়িয়ে উঠে যেতে লাগলে রূপা এবার জোর গলায় বলল,
“প্লিজ বসো। আমার ভালো লাগছে না। মাথাব্য/থা করছে।”

রাগিনী ঘর থেকে বেরিয়ে না গেলে উঠে দাঁড়িয়ে রইল। রূপার হুটহাট এমন ব্যবহার তার মনে ভীতি তৈরি করছে। এরপর আরেকটা কথা বলে বসে রূপা। মাথার চুল ধরেই অনুরোধ করে বলে,
“আমি পালিয়ে এসেছি ওই দল থেকে। প্লিজ আমায় পুলিশে দিও না। আমি বাঁচতে চাই তোমাদের মতো।”

রাগিনী বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ়। তার হঠাৎ এমন কথার তার মস্তিষ্ক ফাঁকা করে দিয়েছে। সে রূপার পাশে বসতে চাইলেও বসল না। ভয় ভয় করছে ভীষণ। রূপা আবারও বিরতি নিয়ে বলে,
“আর ওই অভিরূপ চৌধুরী বলে দেবে উনাকে মা/রার জন্য আমাদের টিম ওত পেতে আছে। জাস্ট একটা সুযোগ চাই তাদের। তাহলেই ওরা উঠেপড়ে লাগবে। আমি প্রথমবার উনাকে এয়ারপোর্টে শে/ষ করে দিতে উপস্থিত ছিলাম। কিন্তু ওইবার সফল হইনি। এরপর উনার সাথে দেখা হয় এক জঙ্গলে। আমি কিছু ব/খাটে ছেলের খপ্পরে পড়েছিলাম। উনি আমাকে রাগিনী মানে তুমি মনে করে বাঁচিয়েছেন। এরপরও আমি প্ল্যানিং করা থামাই নি। তোমাদের ঘুরতে যাওয়ার দিনও আমি উনার সঙ্গে যাই। কিন্তু উনি আমায় সেদিন বাঁচিয়ে মনে যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করেন সেটা আমি অতিক্রম করতেই পারিনি। আমি উনার মৃ;ত্যু দেখার আগে ম/রে যাব। তাও উনাকে ম/রতে দেখতে পারব না। উনাকে পারলে উনার দেশে চলে যেতে বলো।”

রাগিনী নীরব রইল বেশ কিছুক্ষণ। কেন যেন তার মনটা পু/ড়ছে এই মেয়েটির কথায়। কোথাও একটা বি;ষাক্ত অনুভূতি ছেয়ে গিয়েছে কিছু মুহূর্তেই। সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠছে পলকে পলকে। ঢোক গিলে নিজেকে ধাতস্থ করার প্রচেষ্টায় সে বলল,
“তুমি যদি এই পুরো ক্রা/ইম টিমকে ধরিয়ে দিতে সাহায্য করো তাহলে তোমার শা/স্তি হয়ত কমে যাবে। তুমি কি বলতে পারো না? ওরা এখন কোথায় আছে? ওদের নেক্সট প্ল্যানিং কী?”

এলোমেলো চুলে অবসাদগ্রস্ত মুখে রাগিনীর পানে তাকায় রূপা। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
“আমি পারব না বলতে। ওরা যেখানে ছিল এতক্ষণে তারা নিজেদের জায়গায় পরিবর্তন করে নিয়েছে আমি পালানোর খবর পেয়ে। ওখানে গিয়ে লাভ হবে না। আর গত কয়েকদিন ওরা আমায় অসুস্থ করে রেখেছিল। প্ল্যানিং-এ অংশগ্রহণ করা তো দূর আমাকে ওরা নিজেদের পরিকল্পনা জানতেও দেয়নি।”

রাগিনী আরো কিছু বলতে চায়। তবে পেরে ওঠে না। মাঝখানে হাজির হয় অভিরূপ। দরজাটা ঠা/স করে খুলতেই ঘরে থাকা দুজনই চকিতে তাকায়। ঘরে গাম্ভীর্যের সাথে প্রবেশ করে বলে,
“দরজাটা লাগিয়ে কথা বলা উচিত ছিল রাগিনী। কেউ যদি চলে আসত। আর ওকে দেখে ফেলত?”

রাগিনী মাথা নুইয়ে মিনমিন করে বলে,
“সরি। খেয়াল করিনি।”

“আমার ওর সঙ্গে কিছু কথা আছে সো…”

রাগিনী অভিরূপের কথা শেষ হওয়ার আগেই বুঝে নিয়েই মাথা দুলিয়ে বলে,
“কিপ ইট আপ। কিন্তু সাবধান। ওকে বেশিক্ষণ লুকিয়ে রাখা সম্ভব হবেনা। সৈয়দ কাকা আমায় জিজ্ঞেস করছিলেন কেন আমি হঠাৎ স্যুপ বানাতে গিয়েছি। এমন হলে ধরা পড়ে যাব। সো প্লিজ…”

অভিরূপ দুটো চোখ বন্ধ করে আবার খুলে রাগিনীকে আশ্বস্ত করে। আর কোনোরকম বিলম্ব না করে বেরিয়ে যায় রাগিনী। সঙ্গে সঙ্গে দরজা আঁটকে দেয় অভিরূপ। সরাসরি এসে রূপাঞ্জনার মুখোমুখি বসে।

নিজের ঘরে বসে বসে কিছু সিসিটিভি ফুটেজ মেলানোর চেষ্টা করছিল মেহরাজ আর কোহিনূর। ব্যস্ত হয়ে দুজনই ভ্রু কুঁচকে বারংবার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে চলেছে। আজ আরেকটা কয়েকটা বাচ্চা ছেলেমেয়ে অপ/হরণ হয়েছে। তাও আবার শপিংমল থেকে। খবরটা ছড়িয়ে পড়ার পর মিডিয়া বেশ গরম হয়ে উঠেছে। টান টান উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। বিষয়টা প্রথমে রায়ানকে সলভ করতে দিলেও পরবর্তীতে কোহিনূর শুনে মনে করে এটাও সেই আ;তঙ্কবা’দীদের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। তাই সেও পা/গলের মতো খুঁজে চলেছে যেকোনো এভিডেন্স! যাই হক ফুলের মতো বাচ্চাদের প্রা/ণ ঝরতে দেওয়া যায় না। কিন্তু এই ব্যস্ত সময়ে গুটিগুটি পায়ে কোহিনূরের ঘরের দরজার সামনে এসে দাঁড়াল নয়নতাঁরা। প্রথমে দেখে নিলো নিজের ভাইকে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে সাহস সঞ্চয় করে ঢক গিলে ডেকে উঠল,
“বিগ ব্রাদার!”

কোহিনূর দেরি না করে তৎক্ষনাৎ কড়া গলায় জবাব দিলো,
“আমার কাছে এখন টাইম পাস করার মতো সময় নেই নয়ন। নিজের ঘরে যাও। যা ইচ্ছা করো। ডোন্ট ডিস্টার্ব মি!”

“আমার কিছু ইম্পর্ট্যান্ট কথা ছিল।”

ল্যাপটপ থেকে চোখ তুলে তাকায় এবার কোহিনূর। এক রাশ বিরক্তি নিয়ে বলে,
“তোমার কথা তো সবসময় শুনি। বাচ্চাদের থেকে ইম্পর্ট্যান্ট নিশ্চয় নয়।”

“কথাটাও ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। বিলিভ মি!”

কোহিনূর কিছু না বলে বড়ো শ্বাস নিলো একটা। যখন তখন নয়নের এত আবদার শোনা তার পক্ষে সম্ভব নয়। সে কথার উত্তর না দিয়ে ল্যাপটপে মন দিয়ে স্ক্রিনে থাকা একটা লোককে দেখিয়ে বলল,
“এটাকে চেনা চেনা লাগছে মেহরাজ। একে কি আগেও কোথাও ধরেছিলাম?”

“চেক করতে হবে স্যার।”

মেহরাজের কথার মাঝে আবারও বাগড়া দিলো নয়নতাঁরা। চিল্লিয়ে বলল,
“বিগ ব্রাদার! লিসেন টু মি!”

“গো টু ইউর রুম নয়ন, ফর গড সেক!”

“ভাবিজানের বাড়িতে ওই বহুরূপী মেয়েটা অবস্থান করছে, বিগ ব্রাদার!”

কথাটা কানে পৌঁছানো মাত্র টনক নড়ল এবার কোহিনূরের। মেহরাজও হতবিহ্বল হয়ে তাকাল। ভুল শুনেছে কিনা ঠিক শুনেছে তা যাচাই করতে ব্যস্ত হলো। কোহিনূর উঠে দাঁড়াল। নয়নের দিকে এগোতে এগোতে বলল,
“কোন বহুরূপী? কার কথা বলছ?”

নয়ন মাথা নুইয়ে ফেলে এবার। সে বলতে চায়নি তার ভাইকে এসব কথা। ভেবেছিল রাগিনী নিজে এসে বলবে। কিন্তু তেমন কিছুই হয়নি। তাই নিজে বলতে এসেছে সকলের ভালো ভেবে তাদের ভালো করার প্রত্যাশায়। শীতল গলায় বলল,
“ভাবিজানের মতো দেখতে হুবহু যে! যাকে নিয়ে এত সন্দেহের সৃষ্টি। যাকে নিয়ে এত শোরগোল। তাকে ভাবিজান নিজে ওই বাড়িতে রেখেছে। সিঙ্গার অভিরূপ চৌধুরীর অনুরোধে সে কাউকে কিছু বলেনি।”

কোহিনূর অবিশ্বাস্য চোখে তাকায়। হতবাক হয়। নিজের কপালে হাত রেখে বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে কুঁচকিয়ে বিস্মিত হয়ে বলে,
“কী বলছ তুমি? তোমার ধারণ আছে তুমি কীসব বলছ? রাগিনী কেন এমন করবে? ওই অভিরূপ চৌধুরীই বা কেন এমন করবে?”

“আমি নিজে শুনেছি। আমি যখন তাদের বাড়ি যাই তখন ভাবিজানকে খুঁজতে গিয়ে আমি অভিরূপের ঘরের দিকে যাই। তাদের আড়ালে বলা কথোপকথন আমার কানে আসে। অভিরূপ অনুরোধ করছিলেন। আই এম সিউর ওই মেয়েটা ওখানেই আছে। আমি ভুল বলছি না।”

কোহিনূর নির্বাক হয়ে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকে। বাকশক্তি কেঁ/ড়ে নিয়েছে কেউ। মাথা প্রতিটা রগ যেন ফে/টে যাচ্ছে। বিশ্বাসযোগ্য লাগছে না কিছুই। আবার ভুলও মনে হচ্ছে না। কোনো পদক্ষেপ কি নেওয়া উচিত?

চলবে…

[বি.দ্র. গল্প দিতে দেরি হয়ে গেল। দুঃখিত। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here