গোধূলি বেলায় তুমি পর্ব -০১

১.
অন্ধকার একটি রুমে হাত-পা চেয়ারের সাথে বাঁধা অবস্থায় অজ্ঞান হয়ে আছে বউয়ের সাজে একটি মেয়ে। মেয়েটির ঠিক সামনে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে আভিয়ান।মুখে তার পৈশাচিক হাসি। ফোনের ফ্লাস লাইট অন করে ধরে মেয়েটির মুখের দিকে। তাতে মেয়েটির কোন হেলদুল নেই। প্রায় ৩ ঘন্টা যাবত অজ্ঞান অবস্থায় আছে সে। আভিয়ান এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে মেয়েটির মুখের দিকে।তার কপালের উপর পরে থাকা ছোট ছোট চুল গুলো এক হাত দিয়ে কানের পিছে গুজে দিয়ে তাকিয়ে আছে সে মেয়েটির দিকে। যতোই মেয়েটির মুখের দিকে তাকাচ্ছে ততোই সে তার মায়ায় পরে যাচ্ছে।নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করছে কি আছে ওই চোখের মাঝে?? কেন আমি এই চোখের দিকে তাকিয়ে হারিয়ে যাই।কেন আমি ওর মুখের দিকে তাকালে বাকি সব কিছু ভুলে যাই। এই প্রথম কোন মেয়ের জন্য এই আভিয়ান চৌধুরী এতটা পাগল হয়ে আছে।ওকে আমার চাই ই চাই। তা যে কোন মূলেই হোক।ও যদি স্বেচ্ছায় আমাকে মেনে নেয় তবে ভালো আর তা যদি না পারে তবে,,,, এইটুকু বলে রহস্যময় হাসে। হঠাৎ করে কল আসায় আভিয়ান কিছুটা বিরক্ত হয়। সে বিরক্তির সাথে ফোন রিসিভ করে রুক্ষ স্বরে বলে,’বলছিলাম না আমাকে আজকে ডিস্টার্ব করবি না। তবুও কেন ফোন করেছিস্????’

আভিয়ানের এমন কন্ঠ স্বর শুনে ফোনের ওই পাশের লোকটি ভয়ে ঢোক গিলে। লোকটি আমতা আমতা করে বলে,,, স্যার এই দিকে সমস্যা হয়ে গেছে। মেয়ের পরিবারের লোক পুলিশে খবর দিয়েছে আর পুলিশও এসে গেছে। তারা যদি এখন সি.সি,টি.ভি ফুটেজ চেক করে তবেই সব বুঝে যাবে।

লোকটির কথা শুনে আভিয়ান ধমকের স্বরে বলে,,, তোদের টাকা দিয়ে পুশি কি এই জন্য।পুলিশ সি.সি,টি.ভি ফুটেজ দেখার আগে তা নষ্ট করে দে। আর কিভাবে করবি তা কি আমিই বলে দিবো নাকি নিজের বুদ্ধি খাটাবি,,,,,

স্যার আমি সব বুঝতে পেরেছি। আপনি কোন চিন্তা করবেন না। এইদিকে আমি সব সামলে নিবো।
আভিয়ান কিছু না বলে ফোন কেঁটে দেয়।

পুলিশকে নিয়ে কোন চিন্তা নেই আভিয়ানের। সে জানে এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে তাই আগে থেকেই সে সব কিছু ব্যবস্থা করে রেখেছে। পুলিশ যদি সি.সি.টি.ভি ফুটেজ চেক করে তবুও তাতে কোন ক্লু পাবে না।

২.
একটু পরেই আদ্রিজার বিয়ে তাও আবার ঠিক তার ভালোবাসার মানুষের সাথে কিন্তু বিয়ের ঠিক কিছুক্ষন আগেই পাত্রী নিখোঁজ। খবরটা ঝড়ের গতিতে পুরো বিয়ে বাড়ি ছড়িয়ে গেছে।বিয়ে বাড়িতে যারা এসেছে তারা মেয়ের চরিত্র নিয়ে নানা বাজে কথা বলতে লাগলো। কিছুক্ষনের মধ্যে বরপক্ষও উপস্থিত হয়ে পড়লো। চারিদিকে থমথমে পরিবেশ।আকাশে চাঁদটাও মেঘের সাথে লুকোচুরি খেলছে।হঠাৎ করে ঝড়ো হাওয়া বইছে। বাড়ির সবার চোখ মুখে চিন্তার ছাপ। কেউ ভাবতেই পারছে না বিয়ের কিছুক্ষন আগে পাত্রী কিভাবে নিখোঁজ হতে পারে। আর এত পাহারার মধ্যে কেইই বা তাকে কি করে কিডন্যাপ করতে পারে। আদ্রিজার মা মেয়ের জন্য প্রায় পাগল হয়ে উঠেছে। মেয়েকে ওনি নিজের থেকে বেশি ভালোবাসে। আহসান হোসেন (অদ্রিজার বাবা) নিজের স্ত্রীর দিকে ক্রোধের দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। এমনিতেই মেয়ের জন্য এত মানুষের সামনে মাথা নিচু হয়ে গেছে তার উপরে স্ত্রীর এই নেকা কান্না তিনি একদম সহ্য করতে পারছেন না।

তোফা হোসেন স্বামীর দৃষ্টি উপেক্ষা করে বলে, ‘ আমার মেয়েকে যেখান থেকে পারেন এনে দিন। আপনি এখনো কিছু করছেন না কেন??? তাড়াতাড়ি পুলিশে খবর দিন।স্ত্রীর মুখে এই কথা শুনে মুহূর্তেই আহসান হোসের রাগটা আরোও বেড়ে যায়। তিনি রাগে ভ্রু কুচকে বলেন,’ওই মেয়ের নাম আজ থেকে মুখে নিবে না। আজ থেকে আমার শুধু একটাই ছেলে আর সে হলো আয়ান। যেই মেয়ে আমাদের সম্মানের কথা চিন্তা না করে বিয়ের আগের মুহূর্তে পালিয়ে যেতে পারে এমন মেয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো।

তোফা হোসেন কাঁদতে কাঁদতে বলেন,’তুমি কি পাষান। বাপ হয়ে কি করে মেয়ের মৃত্যু কামনা করতে পারো। আমার বিশ্বাস আমার মেয়েটা নিশ্চয়ই কোন বিপদে আছে। ও কখনো এমনটা করতে পারে না। আর তাছাড়া আমরা তো জোর করে তার বিয়ে দিচ্ছি না তার পছন্দের ছেলের সাথেই তো দিচ্ছি তবে সে কেন পালাবে। নিশ্চয়ই কেউ জোর করে তাকে তুলে নিয়ে গেছে।স্ত্রীর কথা শুনে আহসান হোসেনের ধারণার পরিবর্তন হয়। তিনি নিজেই চিন্তায় পরে যান। এখন তিনি কি করবেন তাই ভেবে পাচ্ছেন না।পাত্রপক্ষ যদি সব কিছু জেনে যায় তবে বিয়েটা কি করে হবে???

আদ্রিজার মা-বাবার কথাগুলো শুনেই একরাশ হতাশা আর রাগ চেপে ধরলো সাফিনের পরিবারকে। আদ্রিজার মা-বাবা সামনের দিকে তাকাতেই ওনাদের খেয়াল করলেন। লজ্জায় আহসান হোসেন অন্যদিকে ফিরে তাকালেন। সাফিন স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আদ্রিজার সাথে তো তার রাতেও কথা হয়েছে।তখন তো কোন ভাবেই তার এটা মনে হয়নি আদ্রিতা বিয়ে করতে চায় না। সে তো এই বিয়ে নিয়ে অনেক আনন্দিত ছিল তবে। তাদের এতদিনের ভালোবাসা আজ পূর্ণতা পেতে যাচ্ছিল হঠাৎ করে আদ্রিতা কোথায় হারিয়ে যেতে পারে তার কিছুই সে বুঝতে পারছে না। অনেক বার ফোন করেছে সে তাতে কোন লাভ হয়নি। ফোনটা ঘরের মধ্যেই আছে। সাফিনের বাবা রুক্ষ স্বরে বলে,’আমাদের এভাবে অপমান করার কি মানে??? আপনাদের মেয়ের বিয়েটে মত নেই তা আমাদের আগে জানালে হতো আমরা আসতাম না। সমাজে আমাদের একটা মান-সম্মান আছে। আজ আপনাদের জন্য মানুষের কাছে মুখ দেখাতে পারবো না।

আহসান হোসেন শান্ত স্বরে বলে, ‘ আমাদের মেয়ে এমন না। সে কখনো এমন কোন কাজ করতে পারে না যাতে আমরা ছোট হই। সমাজের সবার কাছে আমাদের মাথা নিচু হয়।আমরা তাকে এমন শিক্ষা দেই নি। নিশ্চয়ই তার কোন বিপদ হয়েছে। আমাদের সবার উচিত মাথা ঠান্ডা রেখে এই পরিস্থিতির মোকাবেলা করা।

মেয়ে বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে গেছে তার পরেও আপনি কোন মুখে এই কথা গুলো বলতে পারছেন।এখন এই বড় বড় কথা আপনাদের মুখে মানায় না। আপনাদের কি একটু লজ্জা করছে না। সাফিনের বাবা আরও কিছু বলতে যাবে তার আগেই সাফিন তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,’আঙ্কেল ঠিক বলছেন। আদ্রিজা কখনো এমটা করতে পারে না। এর পিছনে বড় কোন চক্রান্ত আছে।

সাফিনের কথা শুনে তার মা রাগে বলে, ‘ এখনো তুই সেই মেয়ের পক্ষে কথা বলবি। আমি আগেই বলেছিলাম মেয়েটা ভালো না। তুই তাকে বিয়ে করিস্ না। কিন্তু তুই আমার কোন কথাই শুনলি না। মেয়েটা কি এমন জাদু করলো তোকে যে এত সব কিছুর পরেও তুই তার হয়ে কথা বলছিস্????

সাফিন বিরক্ত হয়ে বলে,’ মা তুমি আবার শুরু করো না। দেখছোই তো পবলেমের মাঝে আছি। আমি আদ্রিজাকে ভালোবাসি আর যে কোন মূল্যে তাকে আমার চাই ই। আর আদ্রিজাও আমাকে ভালোবাসে সে কখনো পালিয়ে যেতে পারে না। নিশ্চয়ই সে কোন বিপদে আছে। সে আর দেরি না করে পুলিশে ফোন করে। কিছুক্ষনের মধ্যেই পুলিশ এসে হাজির হয়। পুলিশকে তারা সব কিছু খোলে বলে। পুলিশ যখন জানতে পারে বাড়িতে সি.সি.টি.ভি ক্যামেরা লাগানো আছে তারা সেই ফুটেজ দেখতে চায়। আদ্রিজার বাবা তাদের সেই ফুটেজ দেখায় কিন্তু তাতে কোন ক্লু পাওয়া যায় না। এখন থেকে ৩ ঘন্টা আগের কোন কিছু রেকর্ড করা হয়নি। পুলিশ তাদের আশ্বাস দিয়ে বলে আদ্রিজাকে খুব তাড়াতাড়ি খোঁজে বের করবে।পরে তারা চলে যান।

সবাই যার যার মতো আদ্রিজাকে খুঁজে যাচ্ছে কিন্তু কেউ তাকে পাচ্ছে না। সাফিনও চেষ্টা করছে। আশেপাশের সব জায়গা খুঁজে দেখছে। সে নিজের ফোন বের করে একজনকে ফোন করে আদ্রিজাকে খুঁজে বের করতে বলে। সাফিনের আদেশ শুনে লোকটি তার কাজ শুরু করে। সাফিন ঠোঁটের কোনায় একটু হাসি এনে বলে, ‘তুমি যেখানেই থাকো না কেন আদ্রিজা জাহান বন্যা তোমাকে এই সাফিনের কাছেই ফিরতে হবে। এখনো যে অনেক হিসেব বাকি আছে।এত অপেক্ষার পরে আমি কখনোই হেরে যেতে পারবো না।তার জন্য তোমাকে আমায় পেতে হবেই বলে রহস্যময় হাসে।
.
..

চলবে,,,,,,,,,

#গল্প_গোধূলির_বেলায়_তুমি
#Writer_Ritu_Bonna
#সূচনা_পর্ব
)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here