#গল্প_গোধূলি_বেলায়_তুমি
#Writer_Ritu_Bonna
#পর্ব_১৩
আভিয়ানের কথা শুনে আমার সারা শরীর কাঁপতে লাগলো । রাগে আর ঘৃণায় আমার সারা শরীর রি রি করছে। আমি আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারি নি,,,,নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে আভিয়ানের গালে চর মারলাম,,,,,,,
আমার করা কাজে মুহূর্তের মাঝেই আভিয়ানের মুখের রঙ পাল্টে গেলো৷ রাগে তার চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। সে চোখ লাল করে ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকায়,,,,,,,
আমার মনে বিন্দু পরিমাণ ভয় নেই। আমি রাগে চিল্লিয়েই বললাম,,,, আপনার সাহস কি করে হলো আমার ভালোবাসা আর বিশ্বাস নিয়ে খেলার। কি করে পারলেন আমার সাথে এত বড় একটা মিথ্যা নাটক করতে?কি ক্ষতি করেছিলাম আমি আপনার?
আভিয়ান বাঁকা হেসে বলে,,, তুমি আমার কোন ক্ষতি করো নি বেবি। আমি তো তোমার সাথে কিছু করেই নি। শুধু একটু নাটক ছাড়া। আমি তোমাকে ঠকায় নি। তুমি আমাকে চিনতে ভুল করেছো। ভুল মানুষকে বিশ্বাস করেছো, তাকে ভালোবেসেছো।
আভিয়ানের কথা শুনে আদ্রিজার রাগটা আরোও বেড়ে যায়। সে আভিয়ানের শার্টের কলারে ধরে বলে,,, আমার নিজের উপরই এখন ঘৃণা হচ্ছে আপনার মতো মানুষকে আমি ভালোবেসেছি। বিশ্বাস করেছি। আপনার মতো নিকৃষ্ট লোক আমি আর কখনোই দেখি নি। এই মুহূর্তে আমার চোখের সামনে থেকে চলে যান নয়তো আমি আপনাকে খুন করে ফেলবো।
আদ্রিজা শার্টের কলার ধরায় আভিয়ানের রাগ উঠে যায়। সে আদ্রিজার থেকে নিজের শার্টের কর্লার ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,,,, তুমি মেয়ে না হয়ে যদি ছেলে হতে তবে বুঝতে পারতে এই আভিয়ান চৌধুরীকে অপমান করার ফল কি হতে পারে। আর কিছু না বলে আদ্রিজাকে ফ্লোরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে আভিয়ান হনহন করে চলে যায়৷ আভিয়ানের পিছনে পিছনে নয়নাও দৌঁড়ে চলে যেতে থাকে,,,,,
যেখানে নতুন জীবনে পা বাড়ানোর কথা।নিজের স্বপ্ন ভালোবাসাকে নিজের করে পাওয়ার কথা৷ সেখানে এমন একটা সত্যি জানতে পেরে আদ্রিজার পায়ের নিচের থেকে যেন মাটিই সরে গেছে। সে কোন ভাবেই আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলো না। চিৎকার করে কান্না করতে করতে সে ফ্লোরে বসে পড়লো। নিজেকে ঘৃণা হতে লাগলো তার। শেষে কিনা এমন একটি ছেলেকে ভালোবাসলো যে কিনা মেয়েদের শরীর ছাড়া অন্য কিছু বুঝে না। তাদের সম্মান করতে পারে না।
এতক্ষনে সবাই চলে গেছে। পুরো বাড়িতে পিনপন নিরবতা। সবাই আমাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমি পারছি না নিজেকে শান্ত করতে। চোখের সামনে শুধু কিছুক্ষন আগের দৃশ্যটি ভেসে উঠছে,,,,,,
বাবা আমার মাথায় হাত দিয়ে শান্ত স্বরে বলে,,, শান্ত হও আদ্রিজা। এখন তুই যদি এভাবে কান্না করিস্ তোবে আমাদের ভিতরটা কেমন লাগবে বল্।একদম কষ্ট পাবি না। এমন একজনের জন্য তো নয় -ই যে তোর বিশ্বাস আর ভালোবাসা নিয়ে খেলেছে। কোন চরিত্রহীনের জন্য চোখের পানি ফেলানোটা বোকামি ছাড়া আর কিছু না। তোকে নিজের শক্ত করতে হবে৷ আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় কর্ যে বিয়ের আগেই সব জানতে পেরেছিস্ যদি বিয়ে হয়ে যেতো তবে তোর জীবনটা ধ্বংস হয়ে যেতো। তুই আমাদের মেয়ে। যে কোন পরিস্থিতিতে কি করে নিজেকে ঠিক রাখতে হয় তা আমি তোকে শিখিয়েছি। কিছুতেই নিজেকে দুর্বল মনে করবি না। ভেঙে পরবি না ,,,,
আদ্রিজা তার বাবাকে জরিয়ে ধরে আরো জোরে জোরে কান্না করতে করতে বললো,,,,, আমাকে ক্ষমা করে দাও বাবা। আমার জন্য তোমার এতদিনের মান- সম্মান সব ধূলোয় মিশে গেছে। সব আমার দোষ।আমি পারি নি তোমাদের বিশ্বাস আর ভালোবাসার মর্যাদা রাখতে,,,,,,,
তোর জন্য কিছু হয়নি মা। দেখিস্ একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। এখন আগের সব কথা ভুলে গিয়ে সবকিছু আবার নতুন করে শুরু করো। জানি এত দ্রুত কোন কিছু ভুলা সম্ভব নয় কিন্তু চেষ্টা করলে সব কিছু সম্ভব আর আমি জানি তুই পারবি,,,,,
কি করে ভুলে যাবো বলো। আমি যে পারছি না। সব কিছু অসহ্য লাগছে আমার।যেই মানুষটা আমাকে ভালোবাসতে শিখিয়েছে সেই আমার থেকে আজ সব কিছু কেড়ে নিয়েছে। একা ছেড়ে চলে গেছে আমাকে। আমাকে স্বপ্ন দেখিয়ে মাঝ পথে একা করে দিয়েছে আমাকে। আমি কি করে নতুন করে বাঁচবো আবার, কি করে আবার নুতন করে অন্য কাউকে বিশ্বাস করবো,,,,,,
আমার মেয়ে এত দুর্বল না। আমি জানি সে পারবে। আল্লাহর উপর ভরসা রাখ্ দেখবি একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।
আদ্রিজা গম্ভীর স্বরে বলে,,,, আমার যে মানুষের উপর থেকে বিশ্বাসই উঠে গেছে। কি করে আবার নুতন কাউকে বিশ্বাস করবো,,,,,
সাফিন আদ্রিজার সামনে এসে বসায় আদ্রিজা অবাক হয়ে তার দিকে তাকায়। সে আদ্রিজার হাত ধরতে নিলে আদ্রিজা হাত দূরে সরিয়ে নেয়। তা দেখে সাফিন নিজের হাত সরিয়ে নেয়,,,, এক পলক আদ্রিজার দিকে তাকিয়ে বলে,,,, আমি তোমাকে সাহায্য করবো এইসব থেকে বেরিয়ে আসতে। সেদিন পার্টিতে তোমাকে প্রথম দেখাই তোমাকে আমি ভালোবেসে ফেলি কিন্তু তোমাকে বলার মতো সাহস আমার ছিলো না। পরে যখন জানতে পারি তুমি আভিয়ানকে ভালোবাসো তখন একবার মন বলেছে স্বার্থপর হতে। নিজের ভালোবাসাকে ছিনিয়ে আনতে। কিন্তু ভালোবাসা তো আর জোর করে পাওয়া যায় না তাই আমি সব কিছু থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছি। আমি জানি এই মুহূর্তে হয়তো এই কথা গুলো বলা আমার ঠিক হচ্ছে না। কিন্তু আজকে যদি আমি তোমাকে কিছু না বলি তবে আর কখনোই বলতে পারবো না। আমি তোমার বিষয়ে সব জানি,,,, আমি তোমাকে কখনো ছেড়ে যাবো না। সারাজীবন তোমার সব সুখে – দুঃখে তোমার পাশে থাকতে চাই। দিবে কি আমাকে সেই অধিকার?
আদ্রিজা বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়,,, সে গম্ভীর স্বরে বলে এইসব কি বলছেন সাফিন ভাই। মানে কি এইসবের,,,,
সাফিনও দাঁড়িয়ে যায়,,,, আমি জানি আমি যা বলছি এই পরিস্থিতিতে তোমার পক্ষে তা বিশ্বাস করা সম্ভব নয়। কিন্তু আমি যা বলছি তার প্রত্যেকটা কথা সত্যি। আমি বিয়ে করতে চাই তোমাকে। আমি তোমাকে জোর করবো না৷ তুমি সময় নাও। যত সময় চাও তুমি পাবে আমি অপেক্ষা করবো তোমার জন্য । আমি তোমাকে নিজের ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখতে চাই। ভালোবাসতে চাই তোমাকে নিজের থেকেও বেশি,,,, তুমি দিবে কি আমাকে সেই অধিকার?
সাফিনের কথায় সবাই অবাক হয়ে যায়। ইকরা অবাক হয়ে তার ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে।
একদিনের মাঝে এত কিছু হয়ে যাচ্ছে তা আদ্রিজা মেনে নিতে পারছে না। সে স্তব্ধ হয়ে গেছে। অবাক হয়ে শুধু সাফিনের দিকে তাকিয়ে আছে,,,,,,
আদ্রিজাকে চুপ করে থাকতে দেখে সাফিন আবারও বলো,,,, কি হলো কিছু তো বলো???
আদ্রিজার এখন রাগ উঠে যায়,,, সে রাগে চিল্লিয়েই বলে,,, আপনারা ছেলেরা আমাকে পেয়েছেনটা কি? আমি কি খেলার পুতুল যে মন চাইলো খেলবেন আর মন চাইলো না ছোঁড়ে ফেলে দিবেন। একজন এক বছর আমার সাথে প্রেম করে বলে আমাকে কখনোই নাকি ভালোবাসে নি। যা ছিল সব কিছুই অভিনয়। আর আপনি বলছেন আমাকে ভালোবাসে। বিয়ে করতে চান?? কি করে বলতে পারেন এগুলো আপনারা। মেয়েদের মন নিয়ে খেলতে কেন এত ভালোবাসেন? আন্সার মি,,,,,,
…
..
.
চলবে,,,,