গোধূলী_বেলার_স্মৃতি পর্ব ১

ঘাড়ে কোনো পুরুষের হাতের স্পর্শ পেতেই আমি পিছনে তাঁকিয়ে দেখি আমাদের ভার্সিটির ভিপি রাফসিন শেখ রুদ্রিক। উনি আমাকে নিজের সাথে মিশিয়ে আমার গালে স্লাইড করতে করতে বলে উঠেন,”বার বার তোর বিয়ে ভেঙেছি বলে কী ভাবিস তুই?এই রাফসিন শেখ রুদ্রিক তোর মতো ড্রাইভারের মেয়েকে ভালোবাসে হুহ”।কথাটা বলেই উচ্চস্বরে হেঁসে উঠেন ছোট সাহেব ও তার বন্ধুরা। আমি নিজেকে উনার থেকে ছাড়ানোর চেস্টা করলে উনি আমাকে আরো চেপে ধরে। লোকটার এইসব কান্ড আমার মোটেও সহ্য হয়না। আমি রাগান্বিত কন্ঠে বলে উঠি,

“আপনার এইসব অসভ্যতা কোনোদিন শেষ হবে নাহ তাইনা? আমি কী একবারোও বলেছি আমি ভাবছি আপনি আমাকে ভালোবাসেন। আমি শুধু এই কথায় জিজ্ঞাসা করতে আপনাদের ক্লাবে এসেছি আমার বিয়ে বার বার কেনো ভাঙছেন? এই নিয়ে আমার গুনে গুনে তিনটে বিয়ে আপনি ভেঙ্গেছেন। আমরা গরীব বলে কী আমাদের দিয়ে যা খুশি তাই করা যায়? আচ্ছা আপনি কী বুঝতে পারেন নাহ? আমাদের সমাজে মেয়েদের পর পর বিয়ে বেঙে যাওয়াটা ঠিক কোন চোখে দেখে? ”

উনি একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে উঠলেন,

“তো? আমি কী করবো? ”

উনার এইসব ডোন কেয়ার ভাব দেখে আমার গা যেনো জ্বলে যায়।

আমি কিছুটা রেগেই বলে উঠলাম,

“এইসব এর কারণটা কী? ”

আমার প্রশ্নের উত্তরে ছোটসাহেব অর্থাৎ রাফসিন শেখ রুদ্রিক আমার দিকে ঝুঁকে বলে উঠে-
“তুই তো একটা ইডিয়েট। তাই এখনো বুঝিস নি আর ভবিষ্যৎ ও বুঝবি নাহ। তুই কেন আমাকে আমি নিজেও বুঝতে পারি নাহ রে। ”

উনার কথার কিছুই বুঝতে পারলাম নাহ আমি। বলতে গেলে আপাতত বুঝতে চাইছি নাহ। উনি ঠিক কী বুঝাতে চাচ্ছেন।
তখনি “বেবি ” কথাটি বলেই দৌড়ে আসে নিয়না আপু। পড়নে তার ছোট ছোট জামাকাপড়। নিয়না আপু ছোট সাহেবের ঠিক কত নাম্বার জিএফ তা আপাতত গুনে ঠিক বলতে পারবো নাহ। কেননা ছোট সাহেবের ঠিক কয়টা গার্লফ্রেন্ড তা মনে হয় উনি নিজেও জানেন নাহ। অতিরক্তি মাত্রায় সুদর্শন হওয়ায় উনার গার্লফ্রেন্ডের অভাব পড়েনা। নিয়না আপুকে দেখে আমি কিছুটা জোড় লাগিয়েই ছোট সাহেবের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম। নিয়না আপুকে দেখে মুচকি হেঁসে বলে উঠলাম,
“নিয়না আপু! আপনি কোথায় ছিলেন বলুন তো? জানেন ছোট সাহেব আপনার জন্যে কত্ত অপেক্ষা করছিলো। বার বার আপনি কখন আসবেন তার প্রহর গুনছিলো বেঁচারা।”

আমার কথা শুনে ছোটসাহেব আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাঁকায় যার অর্থ সে আবার কখন এইসব বললো? বলেনি তো কি হয়েছে উনাকে বাশ তো আমার দিতেই হবে। ভেবেই মনে মনে হেঁসে উঠলাম আমি।

আমার কথায় নিয়না আপু লাফিয়ে উঠে উনাকে গিয়ে সোজা ঝাপটে ধরে বলে উঠে,

“রুদ্রিক! তুমি আমাকে এত্তো ভালোবাসো। ওলে আমার বাবুটা। আজকে তোমাকে তো আমি ছাড়বোই নাহ। আজ শুধু আমি আর তুমি লং ড্রাইভে। ”

রুদ্রিক পড়েছে বেশ মুশকিলে এই আপদটাকে এখনি টুপ করে পড়তে হলো। সব হয়েছে ওই বদমাইশ মেয়েটার জন্যে।
উনি আমার দিকে ক্ষুদ্ধ দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছেন। আমার কী তাতে? আমি কি উনাকে ভয় পাই নাকি?
ডজন ডজন গার্লফ্রেন্ড বানাবে অথচ প্যারা নিবে তা কী করে হয়?

নিয়না আপু আবারোও বলে উঠে,

“আজকে তোমাকে কোথাও ছাড়ছি নাহ। জান। ”

উনি আমার দিকে তাঁকিয়ে নিয়না আপুর কোমর জড়িয়ে বলে উঠলেন,

“ইয়াপ বেবী। আজকে সারারাত শুধু তুমি আর আমি। ”

এইসব ন্যাকামি দেখতে আমার ভালো লাগছে নাহ.। তাই আমি ক্লাবের বাইরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা রাখলে কেউ কর্কষ গলায় বলে-

“স্টোপ। এতো রাতে একা যাওয়ার দরকার নেই আমি তোকে পৌছে দিবে। ”

আমি উনার কথার সুরেই বলে উঠলাম,

“ছোট সাহেব বাচ্ছা নই আমি। যেতে পারবো আমি। ”

—–“এই মেয়ে তুই বেশি বুঝিস আমার থেকে? ”

——-“হুম কোনো কোনো সময় আপনার থেকেও ভালো বুঝি আমি। ”

ছোট সাহেব কিছু বলবে তার আগেই আমি বড় বড় পা ফেলে ক্লাব থেকে বেড়িয়ে যায়।

“ওহ শিট। স্টুপিড একটা মেয়ে। ” কথাটি বলে রুদ্রিক টেবিলে একটা পাঞ্চ মারে।

——“কি হয়েছে বাবু? তুমি এত্তো উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছো কেন? ”

—-“দেখো নিয়না তুমি আমার জিএফ কিন্তু আমার সব ব্যাপারে নাক গলানো আমি মোটেও পছন্দ করি নাহ। আশা করি তুমি বুঝবে। ”

রুদ্রিক কথাটা বলেই তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে গেলো।

নিয়না মুখটা ঘুমড়া করে ফেললো।

আমি বেড়োতেই ছোট সাহেব আমার সামনে এসে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

“তোকে একটা কথা বললে তোর মাথায় যায়না? গাড়িতে উঠ। ”

আমি মুখ ভেংচি কাটলাম। আমার মুখ ভেংচি দেখে উনি আরো রেগে গেলেন। দম ছাড়া কন্ঠে বলে উঠলেন,

“তোকে ভালোমতো বলছি উঠে পড়। রুদ্রিক শেখের গাড়িতে উঠা ভাগ্যের ব্যাপার।কত মেয়ে শুধু আমার গাড়িটাতে উঠার জন্যেই পাগল হয়ে থাকে আর তোকে অফার করছি ভেবে নিজের এতো দর বাড়ানোর কিছুই নেই। তুই আমাদের বাড়ির সামান্য ড্রাইভারের মেয়ে। ”

ছোট সাহেবের কথায় হেঁসে বললাম,

“বার বার ড্রাইভারের মেয়ে বলে কী বুঝাতে চান? আপনার দয়ায় বাবা এই চাকরী করে? উহু একদম-ই নাহ। বরং বাবা বড় সাহেবের আন্ডারে চাকরী করে আপনার আন্ডারে নাহ।”

আমার কথায় ছোট সাহেব আমার হাত চেপে বলে উঠলেন,

“বাহ ভালোই তো কথা বলতে শিখে গিয়েছিস। তুই জানিস নাহ আমার ক্ষমতা সম্পর্কে। আমি চাইলে এক্ষুনি তোর বাবাকে চাকরী থেকে বের করে দিতে পারি। তোর বড় সাহেব আফজাল শেখও কিচ্ছু করতে পারবে নাহ। ”

——–“কাজ জানলে ভাতের অভাব হবে নাহ। আশা করি আমার বাবারও হবে নাহ। এইসব চাকরীর ভয় আমাকে দেখাতে আসবেন নাহ।”

আমার সোজাসাপটে উত্তরে ছোট সাহেব মাথা গরম করলেন নাহ বরং কিছুটা হাঁসলেন। তার বাঁকা দাঁতের হাঁসিতে যেকোনো মেয়ে ফিদা হতে বাধ্য। আমি চোখ ঘুড়িয়ে নিলাম।

——“এম্নিতেই কেন তোর বিয়ে ভাঙে দিলাম তার শোক পালন করতে এতো রাতে ক্লাবে ছুটে চলে এসেছিস। তার মধ্যে এতো রাতে আবার একা একা বাড়ি ফিরতে চাস? ”

কথাটা বলেই ছোট সাহেব আমার কানের কাছে গিয়ে আস্তে করে বলে উঠে,

“দিনকাল বড্ড খারাপ! রাস্তার কুকুররা ছিড়ে খাবে তোকে। ”

আমি উনার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাঁকাতেই উনি বাঁকা হেঁসে বলে উঠে-

“মানুষরুপী। ”

তখনি কেউ বলে উঠলো,

“রুদ্রিক তুই বরং তোর গার্লফ্রেন্ডদের সামলা। আমি নাহয় কাজলকে সামলিয়ে নিবো…।

কথাটা বলেই সাদি ভাইয়া হাঁসিমুখে এগিয়ে আসলো।

সাদিকে দেখে কিছুটা বিরক্ত হলো রুদ্রিক। সাদি রুদ্রিকের বন্ধু হলেও এখন এই ছেলেকে তার মোটেও সহ্য হয়না। নিজের বন্ধু ঠিক আছে কিন্তু কাজলের পাশে সবসময় ঘুড়ঘুড় করে যা বড্ড কাজ লাগে রুদ্রিকের কাছে। কিন্তু কেনো লাগে তা স্বয়ং রুদ্রিক নিজেও জানে নাহ।

সাদি এগিয়ে এসে বলে,

“আমি কাজলকে নিয়ে যাচ্ছি তোকে এতো চিন্তা করতে হবে নাহ। তুই ক্লাবে যা। ”

সাদির কথার সুরে আমিও তাল মিলিয়ে বলি,

“হু হু ছোট সাহেব আপনি বরং আমি আপাতত সাদি ভাইয়ের সাথেই যাবো। আমার আবার বড়লোকের বিগড়ে যাওয়া ছেলের গাড়িতে উঠতে গেলে সমস্যা হবে। বলতে গেলে একপ্রকার এলার্জি আছে আমার।

আমার কথা শুনে সাদি ভাইয়া না পেরে হেঁসে দেয়। ছোট সাহেব বলে উঠে,

“তুই আমাকে বড়লোকের বিগড়ে যাওয়া ছেলে বলছিস? এত্তো বড় সাহস তোর? ”

তখনি নিয়না বাইরে এসে বলে,

“আচ্ছা রুদ্রিক, এখন তো সাদি চলে এসেছে। তাই সাদি কাজলকে রেখে আসবে। তুমি বরং চলো আমার সাথে।

সাদি ভাইয়া নিয়না আপুর কথায় বলে উঠে,

” হ্যা তুই এখন যা। নিয়নাকে টাইম দে। রিলাক্স! আমি আছি তো।”

ছোট সাহেব কিছু বলতে গিয়ে বললেন নাহ। শুধু দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে। আমার দিকে রক্তচক্ষু দিয়ে তাঁকিয়ে গটগট করে নিয়না আপুর সাথে চলে গেলেন। যার অর্থ আমাকে তিনি দেখে নিবেন।

__________________________________
সিথি একপ্রকার নাঁচতে নাঁচতেই বাড়িতে ঢুকলো।শেখ বাড়ির সবথেকে আদুরে বলতে গেলে। হবে নাহ বাড়ির সব থেকে ছোট মেয়ে বলে কথা।

মিসেস জেসমিন শেখ মেয়েকে দেখে কিছুটা ধমকের সুরে বলে-

” কোথায় ছিলি তুই? ”

সিথি বলে উঠে,

“মেরি মা, আজকে আমার বান্ধুবীদের সবাই মিলে জাস্ট একটু ক্লাবে গিয়েছিলাম। বাট ট্রাস্ট মি কোনো ড্রিংক করেনি আমি। ”

জেসমিন শেখ বলে উঠে,

“সিথি তুমি জানো এইসব আমার পছন্দ নাহ। তাও কেনো যাও এইসব জায়গায়? ”

সিথি কিছু বলবে তখনি উপর থেকে কেউ কর্কষ কন্ঠে বলে উঠে,

“জেসমিন! তুমি কী সবাইকে নিজের মতো গাইয়্যা ভাবো? ”

এদিকে,,,

ছোট সাহেব চলে যেতেই সাদি ভাইয়া আমি দিকে দিকে হাঁসতে হাঁসতে বলে উঠলেন,

“সত্যি কাজল। তোমার তুলনা হয়না। রুদ্রিক ব্যাটা বেশ জব্দ হয়ে গেছে। আমার এই বিগড়ে যাওয়া বন্ধুকে তুমিই ঠিক পথে ফিরিয়ে এনে দিতে পারবে।”

সাদি ভাইয়ের কথায় আমি কিছুটা হেঁসে বললাম,
“সাদি ভাইয়া আমি জানি নাহ আমি কতটুকু পারবো কিন্তু আমি সর্বদা চেস্টা করবো। ”

আরেকদিকে,

ক্লাবে ঢুকেই রুদ্রিক সোজা বারে গিয়ে একের পর এক ওয়াইন এর গ্লাস শেষ করছে। তখনি সেখানে….

#গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected story)
#পর্ব- ১
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)

আআসসালামু আলাইকুম 💙
নতুন গল্প নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হয়ে গেলাম।
আশা করবো গল্পের প্রথম পর্ব পড়ে, কেউ গল্পের ভালো মন্দ বিচার কিংবা গল্পের থিম এইটা সেইটা ভেবে নিবেন নাহ।

(নামায কায়েম করুন 💙)

Stay Home stay Safe…💙

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here