#গ্যাংস্টার_লাভ (সিজন ২)
#নুসরাত_জাহান_অংকুর
||পার্ট_৬||
রিহা সোফায় বসে ফুসছে ।রেহান চুপ করে শুধু রিহা কে দেখছে।আজ যে বড়ো একটা ভূমিকম্প হবে সেটা রেহান খুব ভালো করে বুঝতে পারছে।
রেহান এপাশ ওপাশ করে রিহার দিকে হালকা হেসে বলে
_”ওমন করে তাকিয়ে কি দেখছো ?মনে হচ্ছে খেয়ে ফেলবে।
রিহা এখনো এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রেহান আবার একটু হেসে বলে।
_”ওমন করে তাকিও না। দেখছো না আমার শরীর খারাপ। কোথায় একটু আদর করবে তা না করে।লুচির মত বসে ফুসছে
রিহা এবার মুখ খুলে
_”আদর তাই না? এই তোর কি জানের মায়া নেই?নিজের টা না হয় বাদ দিলাম মামনির কথা তো ভাবতে পারিস।এইসব কাজ তোকে কে করতে বলে?বল?
রিহা চিল্লিয়ে কথাগুলো বলে।রিহা চুপ করে আছে জানে এখন কিছু বললে ঝগড়া হবে আর এই অবস্থায় ঝগড়া করার শক্তি নেই।
রেহান কে চুপ থাকতে দেখে রিহা রেহানের কাছে এসে বলে
_”ওই উত্তর দে ?তুই কি আর কোনো কাজ কাম পাশ নি?
রেহান আস্তে করে বলে
_”এই অবস্থায় ও ঝগড়া করবে
রিহা শুনে রেহানের ব্যান্ডেজের উপর চেপে ধরে বলে
_”তো তোকে নিয়ে কি করবো ?না আমায় বল কি করবো? তুই বাইরে #গ্যাংস্টার গিরি করে হাত পায়ে ব্যান্ডেজ করে আসবি আর আমি সেবা করবো।কেন রে আমার কোনো কাজ কাম নেই নাকি?বিয়ে করেছিস বলে সব শুনতে হবে।ওই তুই আমায় বিয়ে করলি কেন সেটা বল?
কথায় কথায় রিহা যে রেহানের কলার ধরছে সেটা রিহার খেয়ালে নেই।রেহান আস্তে করে কলারে রাখা হাতে একটা চুমু দিয়ে বলে
_”এটা আমার ভালো লাগে আর আমি কাউকে বিনা কারণে মারিনা।
রিহা হাত সরিয়ে চিল্লিয়ে বলে
_”তাহলে ওরা তোকে কি কারণে মারলো?এখন নিশ্চয় অনেক গল্প শুনিয়ে আমার মন ভুলাবি তাই না?একে তো এইসব করিস আবার বাঁধন ভাইয়া কে বারণ করছিলি যেনো আমায় কিছু না বলে।আমি জানলে তো তোর সর্বনাশ। ইউ চিটার।
ফ্ল্যাশব্যাক
রেহান রিহা কে কফি আনতে বলে।রিহা কফি আনতে গেলে রেহান বাধনকে কে বলে
_”শুন ওকে কিছু বলিস না।এমনিতেই আমাকে সহ্য করতে পারে না তারপর এইসব শুনলে প্রেম হবার আগেই ডিভোর্স হয়ে যাবে।
রেহান ব্যার্থ চোখে বাঁধনের দিকে তাকায়।বাঁধন কিছুটা সংকোচ নিয়ে বলে
_”তোকে আমি বার বার বলি গার্ড রাখতে কিন্তু তুই তো শুনিস না।আজ কি হইছিলো ক্লিয়ারলি বল তো
রেহান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে
_”আমি যখন রিহা কে রেখে অফিসে যাচ্ছিলাম তখন রাস্তায় একটা মেয়ে বলে হেল্প করতে।আমি গাড়ি থেকে নেমে মেয়েটাকে অ্যাড্রেস বলে দিচ্ছিলাম হটাৎ পিছন থেকে কে আমার মুখে কাপড় দিয়ে মারতে থাকে।সম্ভবত অনেক লোক ছিল হটাৎ এমন আক্রমণের জন্য আমি রেডি ছিলাম না। ওখান দিয়ে পলিশ যাচ্ছিল বলে বেচে গেলাম নাহলে আজ হয়তো
বাঁধন সব শুনে হ্ন হা করে হেসে দেয়।রেহান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।বাঁধন নিজের হাসি থামিয়ে বলে
_” #গ্যাংস্টার_রেহান কে ও কেউ মারতে পারে সিরিয়াসলি? আমার কি মনে হয় জানিস যে এমন করছে সে আসলে জানে না তুই কে ।আর বড়ো দলদের মধ্যে কেউ হলে জানে মেরে দিতো
রেহান অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে।রেহানকে এমন ভাবে হাসতে দেখে বাঁধন কপাল চুলকিয়ে বলে
_”আমি কি কোনো জোকস বলছি ?
রেহান আরো জোড়ে হেসে দেয় নিজের হাসি থামিয়ে যেই কিছু বলতে যাবে তখন চোখ পড়ে দরজার ওখানে দাঁড়িয়ে থাকা রিহা কে।
রিহা জিজ্ঞেস করতে আসছিল কি কফি খাবে কিন্তু এদের কথা শুনে থেমে যায়।
রেহানের চোখ অনুসরণ করে বাঁধন তাকিয়ে দেখে রিহা।বাঁধন মুচকি হেসে বলে
_”তুই থাক আমি পরে আবার আসবো আর
all the best (রেহানের কানে কানে )
বাঁধন চলে যেতেই রিহা সোফায় বসে পড়ে।
বর্তমানে
রেহান রিহা কে শান্ত করাতে ব্যাস্ত কিন্তু রিহা নিজের মতো বকবক করেই যাচ্ছে
_”উফফ আল্লাহ আর কি কোনো ছেলে ছিল না।শেষে আমি যা পছন্দ করি না তাই কপালে জুটলো। এ তো দুইদিন পর মরবে তখন আমায় কে বিয়ে করবে
এইসব বলে রিহা নেকা কান্না জুড়ে দিছে।রেহান এখন না পেরে জোড়ে ধমক দিয়ে উঠে।রিহা কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বলে
_”আমাকে একদম ধমক দিবেন না।দোষ করবেন আপনি আর ধমক দেবেন আমায় সেটা তো হবে না। নারী নির্যাতনে কেস ঠুকে দেবো হ্ন
রেহান দুষ্ট হেসে বলে
_”কিছু করলাম না তাই কেস ঠুকে দেবে তাহলে কিছু করি
রিহার হাত ধরে নিজের আরো কাছে টেনে।রিহা কিছু বলতে যাবে তার আগেই রেহান বলে
_”কিছু বলার দরকার নেই।মাথা ব্যাথা করছে একটু টিপে দাও।টিপে দিতে না পারলেও মাথা খেয়ো না প্লীজ
রিহার ইচ্ছা করছে গলা টিপে দিতে কিন্তু নিজেকে সামলে রেহানের মাথা নিজের কোলে নিয়ে মাথা টিপে দিতে থাকে।
রেহানের ঘুম আসছে সেইসময় রিহা বলে
_” আচ্ছা আপনার কখনো গলা ব্যাথা করে না ?
রেহান ঘুমঘুম কণ্ঠে বলে
_” কেনো?
রিহা আমতা আমতা করে বলে
_”না মানে মাথার সাথে গলা ও টিপে দিতাম
রেহান বিরক্ত নিয়ে বলে
_”রিহা প্লীজ ঘুমাতে দাও।মাথায় অনেক পেইন হচ্ছে
রিহা গাল ফুলিয়ে মাথা টিপে দিতে থাকলো কিছুক্ষণের মধ্যে রেহান ঘুমের দেশে।রেহানকে দেখে রিহার ও ঘুম আসছে ।
রেহানের মাথা টিপতে টিপতে একসময় নিজেও ঘুমের দেশে রওনা দেয়।
★
একটি লাশের সামনে দাড়িয়ে আছে ব্যাক্তি।চোখ দুটো তার লাল হয় আছে।যেনো এক্ষুনি কাউকে খুন করবে।
লোকটা লাশটার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে কাউকে ফোনে করে।দুইবার রিং হতেই ওপাশ থেকে ফোন ধরে।
লোকটা গম্ভীর কণ্ঠে বলে
_”তুমি কবে আসছো ? এদিকে আমাদের একটা করে লোক মারা যাচ্ছে।তুমি আসলে রেহানকে জব্দ করা যাবে।
ওপাশ থেকে কিছু একটা বলাতেই লোকটা অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে।নিজের হাসি থামিয়ে বলে
_”ডোন্ট ওয়ারি! শেষ গুটিতা এখনো আমার হাতে।যতই পাখি লাফালাফি করুক আসল গুটি তো আমার হাতে ।
ফোনটা কেটে লোকটা আবার হাসিতে মেতে উঠছে।মনে সব রাজ্য জয় করে নিয়েছে।
প্রায় সন্ধ্যার দিকে রেহানের ঘুম ভেংগে যায়। আশে পাশে তাকিয়ে রিহা কে খুঁজছে হটাৎ মাথার কাছে কিছু অনুভব হওয়ায়।রেহান হালকা উঠে তাকিয়ে দেখে রিহা ঘুমিয়ে আছে।
আনমনে রেহানের মুখে হাসি ফুটে উঠে।রিহা উঠাতে গেলে রিহা নড়ে উঠে।রেহানের এমন শক্তি নেই যে রিহা কে কোলে নিবে।রেহান কম্বল এনে রিহার গায়ে দিয়ে নিজে ফ্রেশ হতে যায়।
একটু পর বেরিয়ে সার্ভমেন্ট দের দিয়ে খাবার খেতে যায়।
রিহার ঘুমটা অনেকটা হালকা হয়ে আসছে।অনেকক্ষণ ধরে ফোন বেজেই যাচ্ছে।রিহা বিরক্তি নিয়ে ফোনটা ধরতে গেলে ওর হাত থেকে কেউ কেড়ে নেয়।
রিহা চোখ খুলে দেখে রেহান ফোন নিয়ে বারান্দার দিকে যাচ্ছে ।
রিহা আবার চোখ বন্ধ করতে গেলে হটাৎ ওর মনে পড়ে
_”আচ্ছা এমন কার কল যে আমার সামনে ধরতে পারলো না।কোনো চক্কর না তো ?
রিহার ঘুম সম্পূর্ণ ভেঙ্গে গিয়েছে ।বিছানা থেকে উঠে সোজা বারান্দায় গিয়ে রেহানের পিছনে দাড়ায়।
বাঁধন ফোন করেছে রেহানের খোজ নিতে।বেশ কিছুক্ষণ কথা বলে পিছনে ফিরতেই কিছুটা চমকে যায়।
রিহা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।রেহান নিজেকে স্বাভাবিক করে প্রশ্ন কর
_”তুমি এইভাবে কি দেখছো ?আমাকে কি মারবে ?এভাবে কেউ দাড়ায়
রিহা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে
_”কেনো আমি দাড়ালে বুঝি সমস্যা।আর আমার বাড়ি আমি যেখানে খুশি দাড়াতে পারি আপনার কি?হ্ন!
রিহা চলে যেতেই রেহান অবাক হয়ে নিজেকে নিজের প্রশ্ন করছে
_”এই মেয়ের হলো কি ? এমন ভাবে বলছে যেনো
রিহা
ঘরে এসে দেখে রিহা নেই।নিচে গিয়ে দেখে টেবিলে বসে খাচ্ছে।রেহান খাবার অর্ধেক রেখে উঠে গিয়েছিল ।
রিহার পাশের টেবিলে বসে খাবার খায়।রিহা একবার তাকিয়ে নিজের খাওয়ায় মনোযোগ দেয়।
একটুপর ডোরবেল বেজে উঠে।রিহা বিরক্ত নিয়ে রেহানের দিকে তাকাতেই রেহান যেতে গেলে।রিহা হাত দিয়ে আটকে দেয়।
হাত না ধুয়ে দরজা খুলতেই সামনে অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তিকে দেখে কিছুটা চমকে না।
অবাক হয়ে বলে
_”তুই এখানে ? আর উনি ?
লামিয়া মুচকি হেসে বলে
_”সব প্রশ্ন কি বাইরে দাঁড়িয়ে রেখে করবি ?ভিতরে তো আসতে দে
রিহা দরজার সামনে থেকে সরে যেতে বাঁধন আর লামিয়া রেহানের কাছে যায় ।
রিহা অবাক হয়ে ওদের কাছে বসে।রিহার মুখ দেখে লামিয়া হেসে বলে
_”কি রে মুখ ওমন করে আছিস কেনো ?মনে হচ্ছে আমাদের আসাতে খুশি না
রিহা লামিয়ার প্রশ্নে হতভম্ভ হয়ে পড়ে।রেহান বলে
_”বেচারি চমকে গেছে।তোমরা এভাবে আমার বউকে বলতে পারো না (ঢং করে)
লামিয়া আর বাঁধন এক সাথে ওহ হো কর উঠে।রিহা চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই রেহান চোখ টিপ মারে।
রিহা লামিয়ার দিকে তাকাতেই লামিয়া বলে
_”বাঁধন বাসায় যেয়ে বললো ভাইয়া অসুস্থ্য তাই চলে আসলাম।
রিহা রেগে বলে
_”কোনো অসুস্থ্য না গুন্ডামি করতে গিয়ে এই অবস্থা।ইচ্ছা তো করছে আরো কয়টা দি
রেহান চোখ ছোট ছোট করে তাকায়।রিহা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে লামিকে বলে
_”তুই বাঁধন ভাইয়া চিনিস ?
লামিয়া বাঁধনের দিকে তাকিয়ে বলে
_”তুই বাধনকে ভুলে গেছিস।কতবার যে তোকে পিক দেখিয়েছিলাম।
রিহার সেই সময় বাধনকে চেনা লাগছিল কিন্তু রেহানের অবস্থা দেখে রিহার আর খেয়াল ছিল।
লামিয়া আরো কিছু বলতে যাবে তার আগেই আবার ডোরবেল বেজে উঠে ।রিহার এখন ইচ্ছা করছে দরজা নষ্ট করে দিতে।
রফিক চাচা দৌড়ে এসে বলে
_”আমি খুলতেছি বউ মনি।আপনারা গল্প পড়েন
রিহা এবার লামিয়ার কথাগুলো শুনায় মনোযোগ দিলো
_”তুই তো জানিস আমার বাড়ির অবস্থা।আমি পালিয়ে এসে যখন বাধনকে বলি তখন বাঁধন ভাইয়ার কাছে নিয়ে যায় আর ভাইয়া আমাদের বিয়ে দেন।নিজের ছোট বোনের মতো সাপোর্ট করেছেন।বাঁধনের কেউ নেই কিন্তু ও মনে করে ওর একটা ভাই আছে।তখন থেকে আমরা ভাইয়ার ঠিক করা ফ্ল্যাটে থাকি।কিন্তু এখন থেকে আমরা তোদের সাথে থাক
বাকিটা বলার আগেই রফিক চাচা বলে
_”বউ মনি দেখো কে আসছে
রফিক চাচার কথা অনুসরণ করে সবাই সামনে তাকায়।
সবাই এগিয়ে গেলেও রিহা স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বসে আছে যেনো ওর কিছু হচ্ছে না।আফজাল সাহেব রিহার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে রিহা উঠে চলে যায়।
চলবে
(