ছুয়ে_দেখো_আমার_শহর পর্ব ২

#ছুয়ে_দেখো_আমার_শহর
#লেখিকা_হৃদিতা_আহমেদ

পর্ব-২

শব্দহীন পায়ে এগিয়ে দরজাটা হালকা খুলে বাবাকে দেখার চেষ্টা করে সূর্য।ফটো ফ্রেম গুলোর সামনে বাবাকে না পেয়ে একটু অবাক হয়।এখানেই তো থাকে বাবা, আজ নেই কেন? ভেবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে।তারপর কিছু একটা ভেবে দরজাটা খুলে ভেতরে আসে সূর্য।বাতি নেভানোর জন্য সুইচে হাত দিয়ে হঠাৎ বেডের দিকে চোখ যেতেই চোখ গুলো বড় বড় হয়ে যায় সূর্যর।সে কি পাগল হয়ে গেছে? ছোট বাবার ঘরে ক্রায়িং বিউটিকে দেখছে? লাইক সিরিয়াসলি? দু’হাত দিয়ে চোখ দুটো ভালো করে ডলে আবার তাকালো সূর্য।আবারও ক্রায়িং বিউটিকে দেখছে!! “উফফ…. আই থিংক আই নিড টু স্লিপ।” বিড়বিড় করে বলল সূর্য।তারপর বাতি নিভিয়ে ফটাফট রুম থেকে বের হয়ে যায়।

রুমে এসে অনেকক্ষণ হলো বিছানায় এপাশ ওপাশ করছে সূর্য। কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছে না।বার বার চোখের সামনে ভেসে আসছে কান্নারত মুখটা।

প্রত্যেক মিশনে টিম ওয়াইজ গেলেও তিন মাস আগে সূর্যকে একটা সিক্রেট মিশনে একলা পাঠানো হয় নিউইয়র্কে।এজেন্ট থেকে দরকারি ডেটা কালেকশানের জন্য প্লাটফর্মে দাড়িয়ে অপেক্ষা করছিল সূর্য।হঠাৎই কোথা থেকে একটা মেয়ে দৌড়ে এসে তার সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যায়।ছাব্বিশ বছর বয়সে প্রথম কোনো মেয়েকে দেখে থমকে গেছিল সূর্য। এলোমেলো চুল গুলো সরিয়ে প্রথম যখন মেয়েটা তার দিকে তাকিয়ে ছিল তার বুকটা ধিমধিম শব্দ করে উঠেছিল।মায়াবী চোখে পানি টইটম্বুর হয়ে বার বার গড়িয়ে পড়ছে,ফর্সা গাল আর হালকা ভোতা নাকটা গোলাপি হয়ে আছে।বার বার গোলাপি ঠোঁট জোড়া কেঁপে কেঁপে উঠছিল।কাঁদলে যে কাউকে এতো সুন্দর লাগে সেদিনই প্রথম দেখেছিল সূর্য।
সূর্যের ধ্যান ভেঙেছিল মেয়েটার আদুরে গলা শুনে।মেয়েটা উঠে তার পিছনে দাঁড়িয়ে তার টিশার্ট খামচে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে বলেছিল,”প্লিজ সেভ মি, প্লিজ হেল্প মি প্লিজ।” বলে আরো জোরে টিশার্ট খামচে তার পিঠে মুখ লুকিয়ে কেঁদে উঠেছিল।সূর্যের সামনে কিছু বখাটে ছেলে দাড়াতেই মেয়েটার কান্নার কারণ বুঝেছিল।কিন্তু বখাটে ছেলে গুলোকে বিদায় করে কোথাও খুঁজে পায়নি মেয়েটাকে।ইমপোর্টেন্ট ডেটা কালেক্ট করে সেদিনই দেশে ফিরে আসাতে হয়েছিল সূর্যকে কিন্তু সেদিনের পর থেকেই সমস্যার শুরু হয়।সিনেমার নায়কদের মতো সবসময় মেয়েটার কান্নারত মুখটা ভাসতে থাকে।মেয়েটার নাম না জানায় নিজে নিজেই নাম দিয়েছে ক্রায়িং বিউটি।বন্ধমহলে এ নিয়ে দফায় দফায় পচানি খেতে হয় তাকে।এসব ভাবতে ভাবতেই ঘুমপুরীতে পাড়ি জমায় সূর্য।

পুতুলের হাতে ভীষণ ব্যাথা লাগছে, কিন্তু কালো হুডি পড়া ছেলেটা কোনোভাবেই তার হাত ছাড়ছে না।পুতুল কাঁদতে কাঁদতে বার বার বলছে,
-“প্লিজ লিভ মি,প্লিজ লিভ মি” বলে ছেলেটার হাতে কামড় দিতেই ছেলেটা অন্য হাতে পুতুলের চুলগুলো শক্ত করে ধরে।পুতুলের মুখ তার মুখের সামনে নিতেই ‘মাম্মাহ’ বলে চিৎকার করে উঠে বসে পুতুল। সারা শরীর ঘেমে একাকার হয়ে গেছে।জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে সাথে থরথর করে কাপছে পুতুল।কাঁপা কাঁপা হাতে সাইড টেবিল থেকে পানির গ্লাস টা নিয়ে পুরো পানিটুকু একনিশ্বাসে খেয়ে নেয় পুতুল।সকালের মিষ্টি আলো পর্দা ভেদ করে ঘরের মধ্যে আসাছে, পুতুল বিড়বিড় করে অস্পষ্ট ভাবে বলল,
-” মাম্মাহ আমার ভয় করছে মাম্মা।”

বিছানার উপর ফোন হাতে ভীষণ চিন্তিত হয়ে বসে আছে মিসেস প্রীতি জামান খান।তার জীবনে মিহিরের দেওয়া সবথেকে দামী উপহার হলো পুতুল।সতেরো বছরে কখনো মেয়েকে কাছ ছাড়া করেননি, একদম বুকে আগলে বড় করেছেন।মেয়েটা নিজের কোন কিছু ঠিক মতো করতে পারে না।হাতে পায়ে বড়ো হলেও বুদ্ধিসুদ্ধি বাচ্চাদের মতো।মেয়েটা একদম তার মতোই ইমোশনাল ফুল হয়েছে,বাবার মতো স্ট্রং হলে কোনো টেনশনই করতে হতো না। ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে মিসেস প্রীতি। তখনই অর্ক হাতে পায়ে বেন্ডেজ নিয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে এসে তার পাশে বসে বলল,
-“খালামনি, পুতুল কি আর ফোন করেছিল তোমাকে?”
-“উহুম”
-” টেনশন করো না সময় হলে ঠিক ফোন করবে। এখন চলো তো খেতে চলো।”
-“পুতুলকে দেশে পাঠিয়ে আমি কি ভুল করলাম অর্ক? যদি কিছু হয়ে যায় ওর?”
-” তুমি নিজেই বললে পৃথিবীর সবথেকে নিরাপদ জায়গায় পাঠাচ্ছো পুতুলকে আর এখন নিজেই এসব বলছো খালামনি।”

সকাল সকাল বাজে স্বপ্ন দেখে পুতুলের মাথাটা ঝিমঝিম করছে।তাই মাথা ঠান্ডা করতে ব্যাগ থেকে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।আধাঘন্টা মতো সাওয়ার নিয়ে একটা বেবি পিংক কালারের ফ্লোরা প্রিন্টের সেমি লেং ফ্রক পড়ে বের হয়। বের হতেই দেখে ছন্দ তার বিছানায় বাবু হয়ে বসে আছে।পুতুলকে দেখে ছন্দ লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নেমে তার সামনে এসে দাঁড়ায়।ছন্দর লাফানো দেখে একটু চমকে উঠে পুতুল।ছন্দ পুতুলের দিকে ভাবুক স্টাইলে তাকিয়ে বলল,
-” পুতুল আপু, তোমার নাম পুতুল না রেখে বারবি ডল রাখা উচিত ছিল ?”
পুতুল হেসে কিছু বলতে যাবে তার আগেই কেউ চিৎকার করে ডেকে উঠে,
-” টুকটুকি!টুকটুকি!”
নামটা শুনতেই ছন্দ আনন্দে লাফিয়ে বলে উঠলো,
-“ভাইয়া! ভাইয়া এসছে!” বলেই দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে যায় ছন্দ।পুতুল ছন্দের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে বলল,
-” টুকটুকি”

সূর্যের রুমে ঢুকেই ছন্দ লাফ দিয়ে ভাইকে জড়িয়ে ধরে। সূর্য ব্যাগ থেকে ছন্দের জন্য চকলেট বের করছিল, পেছন থেকে হঠাৎ জড়িয়ে ধরায় পড়ে যেতে গিয়েও নিজেকে সামলে নেয়।সূর্য রাগী কন্ঠে বলল,
-” টুকটুকি, কতদিন বলেছি ব্যাঙের মতো লাফালাফি করবি না।”
ছন্দ ভাইয়ের কথা পাত্তা না দিয়ে ভীষণ এক্সাইটেড হয়ে বলল,
-” উফফ, ভাইয়া আমার না খুশিতে ধেইধেই করে নাচতে ইচ্ছা করছে।”
বোনের দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,
-” সারাদিন তো এমনিতেই ধেইধেই করিস আবার নাচার কি দরকার?”
ছন্দ ভাইয়ের কথায় একটু রেগে গেলেও সাথে সাথেই দ্বিগুণ এক্সাইটেড হয়ে বলল,
-“উফফ ভাইয়া শুনো না, তোমার জন্য না ইয়া বড়ো সারপ্রাইজ আছে। আমি তো ভাবতেই পারিনি তুমি আজই আসবে।ইসস, আমার যে কি মজা হচ্ছে না!”
ছন্দর কথায় সূর্য ভ্রু কুঁচকে বলল,
-” টুকটুকি তুই কি আবারও রান্না করেছিস? যদি করিস তাহলে আগেই বলছি, আমি একদম খাব না।” ছন্দ রেগে বলল,
-” ভাইয়া…..!!” ( চেচিয়ে)
-“ঠিক আছে নিও না সারপ্রাইজ, কিন্তু পরে সারপ্রাইজ দেখে একদম টুকটুকি, টুকটুকি করবে না।” বলেই দুমদাম পা ফেলে রুম থেকে বের হয়ে যায় ছন্দ। বোনের রাগ দেখে হুহা করে হেসে ওয়ান,টু,থ্রি কাউন্ট করতেই ছন্দ আবার রুমে হাজির হয়। ছন্দকে দেখে সূর্য আরো জোরে হাসি শুরু করে দেয়।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here