#জানি_তুমি_ফিরবে
[পর্ব- ১২]
লেখক -শহীদ উল্লাহ সবুজ
ধ্রুব তিশার শাড়ির আঁচল টেনে ধরছে ভেবে তিশা লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।
তিশা ধ্রুবর দিকে না তাকিয়ে বলল — কি করছেন ছাড়ুন আমাকে রান্না করতে হবে।
ধ্রুব তিশার কথা শুনে হা হয় গেলো। এবার ধ্রুব তাকিয়ে দেখে তিশার শাড়ির আঁচলটা খাটের সাথে আটকে আছে। এটা দেখে ধ্রুব বলল — নিজের আঁচল নিজে ছাড়িয়ে নিন।
— না আমার লজ্জা লাগছে। প্লিজ ছাড়ুন কেউ এসে দেখলে কি বলবে? ইসসস ছাড়ুন না প্লিজ।
— আমাকে ছাড়তে বলছেন কেন? আমি কি ধরে রেখেছি নাকি?
ধ্রুবর কথা শুনে তিশা পিছনে তাকিয়ে দেখে তার শাড়ির আঁচল আটকে আছে খাটের সাথে। এবার তিশা তাড়াতাড়ি করে আঁচল ছাড়িয়ে নিয়ে এক দৌড় দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলো। আর ধ্রুব বসে বসে মুচকি হাসছে আর বলছে কি পাগলি একটা মেয়ে।
তিশা রান্না করতে গিয়ে এসব মনে পড়তেই মুচকি মুচকি হাসছে। এটা তিশার শ্বাশুড়ির নজরে পড়লো। এবার তিশার শ্বাশুড়ি তিশার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল – কিরে মা কি হইছে তোর?
— কই মা কিছু হয়নি তো!
–কিছু তো একটা হইছে তোকে অনেক খুশি খুশি লাগছে আজকে।
— তেমন কিছু না মা।
রান্নাবান্না শেষ করে তিশা রুমে গিয়ে দেখে ধ্রুব বসে আছে। তিশা গিয়ে ধ্রুবর জন্য খাবার নিয়ে আসে। আর তিশা নিজের হাতে ধ্রুবকে খাইয়ে দিতে থাকে। এই ভাবে অনেক দিন পার হয়ে গেলো। ধ্রুব এখন অনেকটা সুস্থ। ধ্রুব এখন একাই চলাফেরা করতে পারে। ধ্রুবর বন্ধু জয় আর সিয়াম ধ্রুবকে দেখতে আসলো।
সিয়াম বলল — কিরে তোর এখন কি অবস্থা?
— ভালো আছি এখন।
ওদের কথার মধ্যে তিশা নাস্তা নিয়ে চলে আসলো সবার জন্য। তিশাকে দেখে সিয়াম আবার তিশার দিকে তাকালো। তিশা সবাইকে নাস্তা দিয়ে বেরিয়ে চলে গেলো। সিয়াম ধ্রুবকে বলল — দোস্ত এই মেয়েটাকে একদিন আমাদের ক্লাবে নিয়ে আসিস তো।
— হুম নিয়ে যাবো ভাবছিলাম। তোদের জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।
— কিসের সারপ্রাইজ দোস্ত?
— সেটা পরে জানতে পারবি। আর কাল সবাইকে ক্লাবে থাকতে বলবি আমি কাল ক্লাবে যাবো।
— তাহলে তো ভালোই হবে দোস্ত। অনেক দিন হলো এক সাথে আড্ডা দেওয়া হয়না।
— হুম।
— এবার তাহলে উঠি। কাল দেখা হচ্ছে। আর ওই মেয়ে টাকেও নিয়ে আসিস।
ধ্রুব কিছু বুঝতে পারছেনা। সিয়াম বার বার তিশাকে নিয়ে যেতে বলছে কেন? তবে ধ্রুব ওই দিকে বেশি খেয়াল দিলো না।
দেখতে দেখতে রাত হয়ে গেলো। রাতের খাবার শেষ করে তিশা আর ধ্রুব রুমে চলে আসলো। ধ্রুব তিশাকে বলল — তিশা কাল তুমি আমার সাথে এক যায়গায় যেতে হবে রেডি হয়ে থাকবে।
–কোথায় যেতে হবে?
— কাল দেখবে।
— আচ্ছা ঠিক আছে অনেক রাত হইছে এখন ঘুমিয়ে পড়ুন।
এই কথা বলে তিশা একটা কাথা আর বালিশ নিয়ে সোফায় চলে যাবে এমন সময় ধ্রুব তিশার হাত ধরে ফেললো। তিশা ধ্রুবর দিকে তাকাতেই রইলো। তখন ধ্রুব বলল — আর সোফায় ঘুমাতে হবেনা এবার থেকে তুমি খাটের উপরে আমার সাথেই ঘুমাবে।
ধ্রুবর কথা শুনে তিশা অবাক হয়ে ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে রইলো। ধ্রুব আবার বলল — এই ভাবে তাকানোর কিছু নাই। এমনি ঘুমাতে বললাম।
তারপর তিশা আর ধ্রুব খাটের উপরে শুয়ে পড়লো। ধ্রুব তিশাকে বলল — তিশা I’m sorry.
— সরি কেন?
— তোমার সাথে আমি অনেক খারাপ ব্যবহার করছি। তোমার সাথে অনেক অন্যায় করছি তার জন্য।
— সরি বলতে হবেনা। আমার কোনো কষ্ট নেই।
— তারপরেও আমি তোমাকে সবার সামনে অনেক অপমান করছি। কিন্তু তুমি কখনো আমার মুখের উপরে কোনো কথাই বলোনি। তোমার মতো একটা বউ পাওয়া সত্যিই ভাগের ব্যপার।
ধ্রুবর মুখে এসব কথা শুনে তিশা মনে মনে অনেক খুশি হয়ে গেলো। তিশা ধ্রুবকে বলল — আপনার মতোও মানুষ হয়না। আপনার মতো স্বামী পাওয়াও ভাগের ব্যাপার।
— তিশা আমি নিজের অজান্তেই তোমাকে ভালোবেসে ফেলছি। তোমার কেয়ারিং, তোমার আমার প্রতি ভালোবাসা দেখেই আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলছি।
— আমি কখন বলছি আমি আপনাকে ভালোবাসি?
— কিহ! তুমি আমাকে ভালোবাস না?
— নাহ।
— ওহ আচ্ছা।
এই কথা বলে ধ্রুব মন খারাপ করে অন্যদিকে ফিরে শুয়ে পড়ে। তখনই তিশা ধ্রুবর বুকের উপরে মাথা রেখে বলল — আমি সারাজীবন এই বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে চাই।
এবার ধ্রুব তিশাকে জড়িয়ে ধরে। তারপর তিশার কপালে একটা চুমু খায়। ধ্রুব তিশার মুখ তার মুখের সামনে নিয়ে আসে। সাথে সাথে তিশা লজ্জা পেয়ে নিজের চোখ বন্ধ করে ফেলে। আর ধিরে ধিরে তিশার শ্বাস নিশ্বাস বেড়ে যেথে থাকে। ধ্রুব তিশার নিশ্বাস অনুভব করতে পারছে। এবার ধ্রুব তিশার ঠোঁট নিজের দখলে নিয়ে নেয়। এই ভাবে কতক্ষণ ছিল তারাও জানেনা। তারপর দুজনেই হারিয়ে গেলো ভালোবাসার রাজ্যে। দুজন দুজনের মাঝে হারিয়ে গেলো। অনেক্ষন পরে তারা দুজনেই ঘুমিয়ে পড়ে। তিশা ধ্রুবর বুকের উপরে ঘুমিয়ে যায়। সকালে ধ্রুবর ঘুম ভেঙে যায় তিশার আগে। ধ্রুব দেখে তিশার মুখে সামনে তিশার চুল গুলো পড়ে আছে। চুলের কারণে তিশার মায়াবী মুখ টা দেখা যাচ্ছেনা। ধ্রুব নিজের হাত দিয়ে তিশার মুখের সামনে চলে আশা চুল গুলো সরিয়ে দেয়। চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে তিশার কপালে একটা চুমু খেয়ে আবার ঘুমিয়ে যায়। অনেক্ষন পরে তিশারও ঘুম ভেঙে গেলো। তিশা ঘুম ভেঙে দেখে ধ্রুব এখনো ঘুমিয়ে আছে। তিশা উঠে ফ্রেশ হয়ে আসে। তারপর ধ্রুবকে ডেকে ঘুম থেকে উঠালো।
— কয়টা বাজে এখনো ঘুমিয়ে আছেন আপনি? নাস্তা করবেন না?
— আরেকটু ঘুমাতে দাও।
— কেন সারারাত কি করছেন যে চোখে এতো ঘুম?
— জানোনা কি করছি?
— নাহ।
— ওকে দেখাচ্ছি তাহলে।
এই কথা বলে ধ্রুব তিশার হাত ধরে তিশাকে টান মেরে নিজের কাছে নিয়ে আসে। তিশা এসে ধ্রুবর বুকের উপরে পড়ে। ধ্রুব তিশার মুখের সামনে চলে আশা চুল গুলো হাত দিয়ে সরিয়ে দিয়ে তিশার ঠোঁট স্পর্শ করবে এমন সময় তিশা ধ্রুবর মুখের উপরে হাত দিয়ে বাধা দিয়ে বলল — কি করছেন? আমি মাত্র ফ্রেশ হয়ে আসলাম। ছাড়ুন তো।
— না সমস্যা কি দরকার হলে আবার ফ্রেশ হবে।
— ছাড়ুন দরজা খোলা কেউ এসে পড়লে কিন্তু কেলেংকারী হয়ে যাবে।
— কেউ আসলেই বা কি হবে হ্যাঁ? আমি আমার বউকে আদর করছি। তাতে কার কি?
— উফফ ছাড়ুন না। সবাই মনে হয় আমাদের জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে।
— থাকুক আমি আমার বউকে আদর করবো।
— মা এসেছে।
ধ্রুব মা এসেছে শুনে তিশাকে ছেড়ে দিলো। তখন তিশা খিলখিল করে হেসে দিয়ে বলল ভীতু হাহাহা।
এই কথা বলে তিশা রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পরে ধ্রুবও ফ্রেশ হয়ে চলে আসলো নাস্তা করতে। নাস্তা খেয়ে ধ্রুব রুমে গিয়ে বসে থাকে তিশার অপেক্ষা করে। কিন্তু তিশা আসছেনা। ধ্রুব মনে মনে ভাবতে থাকে যে তিশা এখনো আসছেনা কেন? কিছুক্ষণ পরে তিশা রুমে এসে দেখে ধ্রুব বসে আছে। ধ্রুব তিশাকে দেখে রাগী চোখে তিশার দিকে তাকিয়ে রইলো।
তিশা ধ্রুবর রাগী মুখ দেখে চুপসে গেলো। ভয়ে ভয়ে বলল — কি হয়েছে আপনার?
— এতক্ষণ কই ছিলে তুমি? তোমার জন্য কখন থেকে অপেক্ষা করে বসে আছি।
— কেন?
এবার ধ্রুব রুমের দরজা বন্ধ করে দিলো। তিশা বুঝতে পারছে তার আর রেহাই নাই। ধ্রুব তিশার দিকে এগুতে থাকে আর তিশা পিছিয়ে যেথেকে থাকে। একটা সময় তিশার ফিট দেওয়ালের সাথে ঠেকে যায়। ধ্রুব তিশার সামনে চলে যায়। একদম খুব কাছে চলে গেলো। ওখন ধ্রুব তিশার ঠোঁট স্পর্শ করবে তখনই দরজার ঠকঠক শব্দ শুরু হলো। এবার তিশা ধ্রুবকে ধাক্কা দিয়ে দরজার কাছে চলে গেলো। এই দিকে ধ্রুব রেগে তার শরীরে আগুন হয়ে গেলো। আর মনে মনে বলতে থাকে — কেউ আসার আর সময় পেলনা।
এই কথা বলে ধ্রুব খাটের উপরে গিয়ে বসে পড়ে।
চলবে??