#জানি_দেখা_হবে ❤
Israt Jahan Tanni ✍
#Part_13
…
– আমার কথায় যে চলে যাচ্ছো এটা যেনো তোমার আর আমার মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে। কোনো কাকপক্ষিতেও যেনো টের না পায়।
ধ্রুবর কথায় কোনো উত্তর দিলনা তারা। শুধু অশ্রু বিসর্জন দিলো নিরবে। ধ্রুব চলে গেলো। একবার ফিরেও তাকালোনা তারার চোখের দিকে।
..
সারারাত কেদেছে তারা। কোথায় যাবে , কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা ও। কিন্তু যেতে তো হবেই।
ফজরের আযান দেওয়ার সাথে সাথেই ঘুম ভেঙ্গে গেলো তারার। যদিও সারারাত ঘুমাইনি। একটু চোখ টা লেগে আসছিলো । উঠে অযূ করে নামাজ পরে নিলো। কয়েকটা পরনের কাপড় আর কিছু টাকা আর আর বাবার দেওয়া কিছু গয়না নিয়ে বেরিয়ে পরলো এক অজানার উদ্দেশ্য। শাশুড়ি এক জোড়া বালা, আর কানের দুল দিয়েছিলো, সেগুলো খোলে বিছানার উপর রেখে গিয়েছে ও। বাড়িটা আরেকবার ভালো করে পরখ করলো। রাস্তায় নেমেই ভাবতে লাগলো কোথায় যাবে ও। বাবার বাসায় যাওয়া যাবেনা। মামা মামীকে আর যন্ত্রণাও দিতে চায়না ও। তাহলে কোথায় যাবে?
.
সকাল ৮:০০ বেজে গেছে। এখনো তারা উঠছেই না। এটা খুব ভাবাচ্ছে ধ্রুবর মাকে। ধ্রুবর বাবা বললো__
– কিগো, বউমা আজ ঘুম থেকে উঠছেনা এখনো। কিছু হয়েছে?
– কই, কিছু হয়নি তো। কিন্তু উঠছে না কেন এখনো সেটা আমিও বুঝতে পারছিনা। যে মেয়ে সবার আগে উঠে নামাজ পড়ে, কুরআন তেলাওয়াত করে, সারা বাড়ি মাতিয়ে রাখে তার এখনো উঠার খবরই নেই।
– অসুখ করেছে কিনা একটু দেখে আসোতো।
– যাচ্ছি।
.
তারার রুমের দরজার কড়া নাড়তেই অবাক হয়ে গেলো ধ্রুবর মা। কারণ দরজাটা খোলা। শুধূ ভিড়ানো ছিলো। ভিতরে ঢুকে তারাকে পেলেন না উনি। কয়েকবার ডাকাডাকির পরেও যখন তারার কোনো খবর পেলেন না তখন ফিরে আসতে গেলেই বিছানায় চোখ আটকে গেলো তার। তারাতাড়ি ডাক দিলেন ধ্রুবর বাবাকে। ধ্রুবর বাবা ছুটে এসে বললেন..
– কি হয়েছে?
– দেখো খাটের উপর।
ধ্রুবর বাবা খাটের দিকে তাকিয়ে বললেন
– এগুলো তো বউমার গয়না। এখানে কেন এগুলো? বউমা কোথায়?
– চলে গেছে। ছলছল চোখে আনমনা হয়ে বললেন ধ্রুবর মা।
– চলে গেছে মানে? কি বলছো তুমি এইসব? উৎকন্ঠা হয়ে বললেন ধ্রবর বাবা।
ধ্রুবর মা সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে ধ্রুবকে ডাকলেন। কিছুক্ষন আগেই ঘুম থেকে উঠেছে ধ্রুব। উঠেই ফ্রেশ হতে গেছিল। মাত্রই ফ্রেশ হয়ে এলো সে। মায়ের ডাকে ইচ্ছা না থাকা সত্বেও তারার রুমে এলো ও। তারা নিশ্চয়ই বাবা মায়ের কাছে রাতের বলা সবগুলো কথা বল দিয়েছে। যদি এমন হয় তাহলে তারাকে মেরেই ফেলবে ও। এইসব ভাবতে ভাবতেই তারার রুমে এলো ধ্রুব।
.
ধ্রুবকে দেখামাত্রই মা বললেন
– তারা কোথায়?
– মানে?
– কাল রাতে ওর সাথে তুই ঝামেলা করিছিলি। আর আজ সকাল থেকে তারাকে দেখছিনা। গয়নাগুলো এখানে পরে আছে। তারা কোথায় বল?
ধ্রুব ঠিক বুঝতে পারলো তারা চলে গেছে। তবুও বাবা মায়ের সামনে বললো
– ও কোথায় আমি কি করে বলবো? হয়তো কোথাও গিয়েছে।
– কোথায় গিয়েছে সেটাই জানতে চাচ্ছি আমরা। চেচিয়ে বলে উঠলেন ধ্রুবর বাবা।
– আশ্চর্য, আমি কি করে জানবো ও কোথায় গিয়েছে। আর যেখানেই যাক, আমার কিছু যায় আসেনা। ও চলে গিয়েছে মানে আমাদের ফ্যামিলিতে শান্তি নেমে আসছে। ধ্রুবর কথায় বাবা মা দুজনই বেশ অবাক হয়ে গেলো। কি বলছে তাদের ছেলে। বাবা স্পষ্ট বলে দিলো..
– এটা তোমার ওই মডার্ন বউ এর চাল তাইনা?
– কি বলছো বাবা, এইসবের মধ্যে ওকে টানছো কেন?
– জানোনা কেন টানছি? তবে মনে রেখো, ভুল করেছো, খুব ভুল করেছো। পস্তাবে বলে দিলাম।
..
ট্রেন চলছে আপন গতিতে। কোন স্টেশনে নামবে সেটাও জানেনা তারা। ট্রেনে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। যে দৃষ্টিতে হাহাকার আর কষ্ট ছাড়া আর কিছু নেই। দুটি চোখ খুব ভালোভাবেই পরখ করছে তারাকে। তার দৃষ্টি যেনো এ উদাশ দৃষ্টির ভাষা খুব ভালোকরেই পড়ে নিয়েছে। সিলেট গিয়ে ট্রেন থেকে নামলো তারা। স্টেশনের একটা চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলো ও। চোখদুটো বন্ধ হয়ে আসছে। হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে তারা। মনের মধ্যে নানা চিন্তা ঘোরপাক খাচ্ছে। কোথায় যাবে এ অচেনা শহরে? বুঝতে পারছেনা তারা।
কারো হাতের স্পর্শে তাকালো তারা। একজন মধ্য বয়সী মহিলা, বয়স বড়জোর ৩৮/৪০ হবে। ওর ঘাড়ে হাত দিয়ে পাশের চেয়ারে বসলো।
তারা অবাক হয়ে বললো..
– আপনি? আপনাকে তো ট্রেনে দেখেছিলাম।
মহিলাটি হেসে দিলো। বললো..
– হ্যাঁ, তুমি যেখান থেকে এসেছো, আমিও সেখান থেকেই এসেছি।
– ঢাকা থেকে?
– হ্যাঁ রে মা। তোমাকে পুরোটা রাস্তাই দেখলাম বেশ উদাশ হয়ে আছো। কয়েকবার চোখ মুছতেও দেখলাম। কিছু হয়েছে তোমার?
তারা এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো
– কপাল পুড়েছে।
মহিলাটি আর কিছু বললো না সে ব্যাপারে।
– কোথায় যাবে তুমি?
– জানিনা।
– মানে?
– অজানা গন্তব্যে যে পা বাড়ায় তার তো কোনো গন্তব্য থাকেনা। আমিও সেই পথেরই পথিক।
.
– তার মানে, এখানে তোমার কেউ নেই?
– নাহ,
– তুমি আমার সাথে যাবে আমার বাসায়?
তারা অবাক হয়ে তাকালো মহিলাটির দিকে। মহিলাটির কি উদ্দেশ্য একটু বুঝার চেষ্টা করছে।
তারার মনের কথা আন্দাজ করতে পেরে মহিলাটি বললো
– ভয় করছে? অজানা কারো সাথে গেলে ভয় একটু করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এখানে একা থাকাটা আরো বেশি ভয়ের। তুমি যুবতী একটা মেয়ে, তার পর এখানকার কিছু চিনোনা জানোনা। আর তাছাড়া সন্ধ্যে ও হয়ে গেছে। এখন ভেবে দেখো কি করবে।
তারা কিছুক্ষন কি যেনো ভাবল। তারপর বললো..
– যাবো।
মহিলাটি হেসে দিয়ে বললো..
– তাহলে চলো আমার সাথে।
..
সারাদিন অফিস শেষে বাসায় ফিরলো ধ্রুব। সবেমাত্র ৮:০০ বাজে। কলিংবেল বাজালে মা গিয়ে দরজাটা খোলে দিলো। দরজাটা খোলে দিয়ে মা আর দাড়ালো না। যেনো ওর সামনে দাড়ালেই পাপ হবে। ধ্রুব মায়ের যাওয়ার দিকে একনজর তাকিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। তুরিন ওয়াশরুম থেকে বেরিয়েছে মাত্র। ধ্রুবকে দেখে বললো..
– কখন এলে?
– মাত্রই এলাম। তুরিন এসে ধ্রুবর পাশে বসলো। ধ্রুব তুরিনকে জড়িয়ে ধরে বললো..
– কি কি করেছো সারাদিন?
– জানো, সারাদিন আমি খুবই বোর থাকি। কিছুই ভালো লাগেনা। ন্যাকামি করে বললো তুরিন।
– মায়ের সাথে একটু কাজে সাহায্য করো, দেখবে আর বোর হবেনা।
– তুমি পাগল নাকি? কাজ করবো? তাও আমি? তুমি এতোবড় বিজনেসম্যান। আমি তোমার ওয়াইফ হয়ে যদি কাজ করি, তোমার সম্মান থাকবে? মানুষই বা কি বলবে?
ধ্রুব অবাক হয়ে বললো
– আমাদের ঘরের কথা মানুষ জানবে কি করে?
– জানিনা। যাই বলো, আমি এটা পারবো না। তোমার সম্মান না থাকতে পারে কিন্তু আমার আছে। আমার পার্সোনালিটি বলে একটা জিনিস আছে।
তুরিনের কথায় বেশ অবাক হলো ধ্রুব। তারপর কথা কাটিয়ে বললো..
– আচ্ছা বাদ দাও, খুব খিদে পেয়েছে। খাবার দাও।
– খাবার দিবো মানে?
– খাবোনা? আর তুমি আসছো পরে কিন্তু একদিন ও আমাকে খাওয়াও নি। আজ তুমি আমাকে খাবার পরিবেশন করাবে।
– কিছুক্ষন আগে কি বললাম শুনতে পাও নি তুমি? আমি এই ঘরের মেইড নাকি যে আমি খাবার সার্ভ করবো?
– আমাকে খাওয়ালে তুমি মেইড হয়ে যাবে?
– উফফফ, ভাল্লাগছেনা। ইচ্ছে হলে খাও, নাহলে বাদ দাও। বলেই তুরিন মোবাইল নিয়ে ফেইসবুকিং করতে লাগলো।
ধ্রুব কিছু বুঝতে পারছেনা। এতোটাও আশা করেনি ধ্রুব।
.
দোতলা একটা বাসায় তারাকে নিয়ে গেলো মহিলাটি। চারটা বেডরুম নিয়ে বাসাটি । ব্যস্ত শহরের মাঝে এমন একটা নিরিবিলি বাসায় গিয়ে বেশ স্বস্তি লাগছে তারার। যদিও মনের মধ্যেও কিছুটা ভয় কাজ করছে। মহিলাটি তারাকে উদ্দেশ্য করে বললো.
– তোমার নাম যেনো কি?
– তারা।
– সুন্দর নাম। যাও, ওইদিকে ওয়াশরুম আছে। গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো। পরে কথা বলবো তোমার সাথে।
– আচ্ছা,
ফ্রেশ হয়ে এলে তারাকে নিয়ে ড্রেয়িংরুমে বসলেন মহিলাটি। বসার পরপরই আরেকটা মেয়ে এসে সোফায় বসলো। তারাকে দেখে বললো..
– মেয়েটা কে মা?
– ওর নাম তারা। বিপদে পরেছিলো তাই নিয়ে আসলাম। অচেনা শহরে যদি কোনো নতুন করে আবার কোনো বিপদে পরে।
মেয়েটি হেসে দিয়ে বলল
– ভালো করেছেন মা।
মহিলাটি তারাকে উদ্দেশ্য করে বললো
– ও সীমা, আমার বড় ছেলের বউ।
তারা মেয়েটির দিকে কৌতূহল দৃষ্টিতে তাকালো। কারণ, প্রথমে ভেবেছিলো মেয়েটি হয়তো উনার মেয়ে। সীমা বললো
– আপনারা গল্প করুন, আমি খাবার রেডি করছি।
.
সীমা চলে গেলে তারা মহিলাটিকে বললো
– আপনার ছেলে মেয়ে কয়জন আন্টি?
– আমার দুই ছেলে আর এক মেয়ে। বড় ছেলে আহাদ, ওর বউ সীমা। মেঝো ছেলে আকাশ, MBA কম্প্লিট করেছে। এখন দুইভাই মিলে বিজনেস সামলাচ্ছে। আর ছোট মেয়ে আশা। অনার্স ফার্স ইয়ার।
– বাহ, খুব সুখী ফ্যামিলি। আংকেল কোথায়?
– উনি নেই, আনমনা হয়ে বললেন উনি।
– Sorry আন্টি।
– It’s Ok
– আপনার মেয়ে কোথায়?
– ওতো হোস্টেলে থাকে। যদিও প্রতি সপ্তাহে একবার আসে।
– আর আপনার ছেলেরা?
– ওরা বোধয় এখনো অফিস থেকে ফিরেনি। তবে চলে আসবে খুব শীঘ্রই।
এখন তোর কথা বল.. তারাকে উদ্দেশ্য করে বললেন উনি। তারা কিছু বলতে যাবে এমন সময় সীমা ডাকলো..
– মা, ওকে নিয়ে আসুন। খাবার রেডি।
– চল আগে খেয়ে নেই। পরে সব শোনা যাবে।
তারা মাথা নাড়িয়ে হ্যা বোধক সম্বোধন জানালো।
..
To be Continued….
জানি_দেখা_হবে ❤
Israt Jahan Tanni ✍
#Part_14
..
– মা, ওকে নিয়ে আসুন। খাবার রেডি।
– চল আগে খেয়ে নেই। পরে সব শোনা যাবে।
তারা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোধক সম্বোধন জানালো।
.
সীমা আর আন্টির কাছে সব খোলে বললো তারা। সব শুনে ওরা শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। আন্টি বললো..
– তাহলে তুই প্রেগন্যান্ট?
– হু, নিচের দিকে তাকিয়ে বললো তারা।
– কতোদিন হয়েছে?
– দেড় মাস হবে।
– ও কেমন স্বামী? নিজের গর্ভবতী বউকে রেখে আরেকটা বিয়ে করে এনেছে আবার তোমার এই অবস্থায় বের ও করে দিয়েছে। পাশ থেকে সীমা বললো।
– উনি তো জনলেন ই না এই বাচ্চার কথা।
– সে যাইহোক, চলে এসেছো ভালো করেছো। ওখানে পরে থাকলে ওরা তোমাকে তিলে তিলে মারতো।
তারা উদাশ নয়নে উপরের দিকে তাকিয়ে বললো..
– চলে এসেই বা কি করতে পারলাম। না আছে থাকার জায়গা, আর না আছে কাজ করার মতো কোনো ব্যবস্থা।
– কেন, এখানে তোর কোনো সমস্যা হবে থাকতে?
– কি যে বলেন, আপনাদের এখানে নাহয় কিছুদিন থাকলাম, কিন্তু সবসময় তো থাকতে পারবোনা।
– সে পরে দেখা যাবে। এখন অনেক রাত হয়েছে। যা শুয়ে পর। উনার কথায় তারা কিছু বলছে না। আন্টি সীমাকে বললেন,
– সীমা, ওকে আশার রুমটা দেখিয়ে দাও তো। ওখানেই থাকুক ও।
– আচ্ছা মা।
তারাকে নিয়ে সীমা আশার রুমে গেলো। রুমটা ভালো করে দেখছে তারা। গোছালো একটা রুম। দেয়ালের অনেক জায়গাতেই একটা মেয়ের ছবি টানানো। ছবিগুলো দেখছে তারা। সীমা বললো,
– ওটাই আশা, আমার একমাত্র ননদী।
– খুব সুন্দর।
– হ্যাঁ, শুধু সুন্দরই না। অলরাউন্ডার ও বটে। যেমন রাধতে জানে, তেমন খোঁপাও বাঁধতে জানে।
তারা হাসলো। সীমা চলে গেলে তারা বিছানায় বসলো। মানুষের ভাগ্যটাই জানি এমন, গতকাল এমন সময় ও হয়তো জানতো না যে, ও আজ এখানে থাকবে।
..
পরেরদিন সকালে….
– মা, ও মা, কোথায় গেলে? ভাবী কোথায় তোমরা?
– কি হয়েছে কি? চিল্লাচ্ছো কেন?
– আমার ব্রেকফাস্ট কোথায়? কয়টা বাজে দেখেছো? আমি অফিস যাবো কখন?
আকাশের দিকে কপাল কুঁচকে তাকালো সীমা। সীমার এমন তাকানো দেখে আকাশ বললো..
– এভাবে তাকাচ্ছো কেন?
– কোনো দুনাম্বারি আছে কিনা বুঝার চেষ্টা করছি।
– মানে?
– শুক্রবারেও যে অফিস খোলা থাকে সেটা জানতাম না তো।
– আজ শুক্রবার?
– কি বার মনে হয় তোমার?
– ওহ শীট, আমি আরও আমার এতো স্বাধের ঘুমটা ছেড়ে উঠে এলাম। আগে বলোনি কেন?
– আমি কি তোমার চাকর?
– নাহ, চাকরানি..
– কিহ..
– জানিনা, আমি ঘুমোতে গেলাম। ১২ টার আগে যেনো কেউ না ডাকে আমাকে।
– খেয়ে ঘুমাও।
– আমার বদলে তুমি খেয়ে নাও। নিজের রুমে যেতে যেতে বললো আকাশ।
..
– কে ডাকছিলো এভাবে?
– আকাশ।
– আন্টির ছোট ছেলে?
– হ্যাঁ। কিন্তু তুমি কিচেনে আসলে কেন? যাও রুমে, তোমার রেস্টের প্রয়োজন।
– রুমে একা একা বসে থাকতে ভালো লাগেনা । আর রেস্ট কেন নিবো।
– বাহ রে, তোমার মাঝে এখন আরেকজন আছে। তোমার কষ্ট হলে তো ওর ও কষ্ট হবে।
– কোনো কষ্ট হবেনা ভাবী। আন্টি কোথায় দেখছিনা যে?
– মা তো প্রতিদিন সকালে হাঁটতে বের হয়। ডায়াবেটিস আছে তো। ডাক্তার বলেছে প্রতিদিন সকাল বিকাল যেনো নিয়ম করে হাটে।
– ওহ, আর ভাইয়া কোথায়?
– কোন ভাইয়া?
– আপনার হাজবেন্ড।
– ও ঘুমাচ্ছে। আজ ছুটির দিন তো।
..
ধ্রুবর মা একা একা কাজ করে হাপিয়ে গেছে। সেই সকাল থেকে রান্নাবান্না করা, ঘর পরিষ্কার করা, ধোয়ামুছা করতে করতে বেশ ক্লান্ত হয়ে গেছেন উনি। চুলোয় তরকারির পাতিল টা বসিয়ে ডাইনিং স্পেসের একটা চেয়ারে এসে বসে আচলে ঘাম মুছতে লাগলো।
ধ্রুব সকালে উঠে বাইরে গিয়েছিলো। বাসায় ফিরে দেখে মা চেয়ারে বসে ঝিমুচ্ছে। বেশ অসুস্থ লাগছে মাকে। মায়ের কাছে গিয়ে মায়ের কাধে হাত রেখে বললো.
– মা, মা কি হয়েছে?
– কিছু হয়নি। এই একটু ক্লান্ত লাগছে। কাঁপাকাঁপা গলায় বললেন উনি।
– তুমি তো অসুস্থ দেখছি। চলো রুমে চলো।
মাকে ধরে মায়ের রুমের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো ধ্রুব। এমন সময় কিছু পুড়ার গন্ধ নাকে এলে ধ্রুব বললো..
– কেমন পোড়া পোড়া গন্ধ আসছে।
ধ্রুবর কথায় মায়ের হুস এলে তারাতাড়ি কিচেনে দৌড়ে গেলেন উনি। তরকারিটা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
মা তারাতাড়ি করে চুলা টা অফ করে তরকারির পাতিল না নামালেন। ধ্রুবর দিকে হতাশ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন..
.
– সবটা পুড়ে গেছে। কি দিয়ে খাওয়াবো এখন সবাইকে। এতো কষ্ট করে রান্না করলাম।
– এতো চিন্তা করোনা তো না। আমি বাইরে থেকে খাবার কিনে নিয়ে আসবো। কিন্তু মা, তুমি এতো ঘামছো কেন?
– এতোদিন পর রান্না করছি তো। তারা আসার পর তো রান্নাঘরে ঢুকতেই দেয়নি মেয়েটা। নিজেই একা একা সব সামলে নিয়েছে। কিচ্ছু করতে দেয়নি। এতোদিন পর সব করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছি।
মায়ের মুখে তারার কথা শুনে কিছুটা নড়ে উঠলো ধ্রুব। তারাকে তো বের করেই দিয়েছে। কিন্তু কোথায় গিয়েছে সেটা তো জানা হয়নি। একবার খবর নিয়ে দেখা উচিৎ। মা বললো
– তোর বউ কখন বলেছিলো এক কাপ চা দেওয়ার জন্য। কিন্তু শরীরে কুলাচ্ছে না। কি যে করি।
ধ্রুব অবাক হয়ে বললো..
– তুরিন তোমাকে বলেছে চা করে দেওয়ার জন্য?
– বলবেই তো। ওতো আর তারা না যে নিজে করে আমাদের খাওয়াবে। ওতো বড়লোকের বউ। অর্ডার দেওয়াই ওর কর্ম।
মা চলে গেলো। ধ্রুবর মেজাজটাই বিগড়ে গেলো । মা বাবার সাথে রাগারাগি করে মানে এই না যে মা বাবাকে দিয়ে কাজ করাবে। অসম্মান করবে ওদের।
ধ্রুব নিজের রুমে গেলো। তুরিন পায়ের উপর পা তুলে টিভি দেখছে। ধ্রুব রিমোট টা নিয়ে টিভিটা অফ করে দিলো। তুরিন রেগে গিয়ে বললো..
– কি হলো এটা? দেখছো না আমি টিভি দেখছি?
– তুমি কি দেখতে পাও নি মা একা একা রান্নাবান্না করছে?
– তো আমি কি করবো?
– মাকে একটু সাহায্য করতে পারতে। তা না করে সকাল সকাল টিভি দেখতে বসে গেছো?
– এখানে আমি চাকরানির মতো কাজ করতে আসিনি বুঝলে। চিৎকার করে বললো তুরিন। ধ্রুব অবাক হয়ে বললো..
– তুমি আমার সাথে রাগ দেখচ্ছো? আমার সাথে?
– হ্যাঁ দেখাচ্ছি। এতো যে মা মা করছো, তোমার মা কতোটা কাজের তা তো দেখেই নিয়েছি। এক ঘন্টা আগে বলেছিলাম চা দিয়ে যেতে, কই এখনো তো দিলোনা। আর দিবেই বা কি করে, কাজে ফাঁকি দিলে কোনো কাজ কি ঠিকমতো হয় নাকি।
তুরিনকে একটা সজোরে থাপ্পড় দিলো ধ্রুব। বললো..
– তোমাকে বিয়ে করে এনেছি আমার মাকে দিয়ে কাজ করানোর জন্য না। তোমার সাহস হয় কি করে আমার মাকে হুকুম করার।
তুরিন গালে হাত দিয়ে কাঁদছে আর রাগে ফেটে যাচ্ছে। কিন্তু কিছু বলেনি। সব হজম করে গেলো।
.
১২ টার দিকে ঘুম ভাংলো আকাশের। ঘুম থেকে উঠেই ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে। ওয়াশরুমটা ওর রুমের সাথে এটাচ করা। ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িংরুমে এসে সোফায় বসে সীমাকে ডাকলো আকাশ।
– ভাবী..
– কি হয়েছে?
– খাবার দাও
– নামাজে যাবেনা?
– খেয়ে তারপর যাবো। খুব খিদে পেয়েছে।
– কখন খেয়েছিলে খবর আছে? সেই রাতে খেয়েছিলে। খিদে তো পাবেই।
– ধুর, আগে খাবার দাও।
– দিচ্ছি।
– ভাবী ..
– আবার কি?
– মা কোথায়? দেখছিনা যে..
– রুমেই আছে।
– ওহ…
.
খাবার খেয়ে মসজিদে চলে গেলো আকাশ। জুম্মার নামাজ বলে কথা। নামাজ শেষে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে বিকেলে বাসায় ফিরলো ও। ড্রয়িংরুমে এসেই সোফায় বসে থাকা তারাকে দেখে ওর দিকে সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষন। আকাশের এভাবে তাকিয়ে থাকাতে তারা কিছুটা অস্বস্তিকর অবস্থায় পরে গেল। কোনো কথাবার্তা না বলেই তারার পাশে গিয়ে ধপ করে বসে পরলো আকাশ। ডানহাতটা দিয়ে থুতনিতে ভর দিয়ে তারার দিকে কিছুটা ঝুঁকে বসলো আকাশ। অপরিচিত কারো পাশে এভাবে কেউ বসে পরতে পারে সেটা জানা ছিলোনা তারার। আকাশ অপলক ভাবে কিছুক্ষন তারার দিকে তাকিয়ে থেকে তারপর নিজে নিজেই বলতে লাগলো..
– ইশশশ… স্বপ্নে কতো সুন্দর সুন্দর মেয়েরা আমার চোখের সামনে আসে। বাস্তবে কেন আসেনা?
আকাশের কথায় কিছুটা অবাক হয়ে গেলো তারা। বললো..
– স্বপ্নে মানে? কি বলছেন আপনি?
– হ্যাঁ স্বপ্নই তো। তুমি জানো, আমি প্রায়ই স্বপ্নে দেখি তোমার মতো সুন্দরি মেয়েরা আমার চোখের সামনে বসে থাকে, ঘুরাফেরা করে। আজও তাই হচ্ছে।
– কিন্তু আমিতো আপনার স্বপ্ন না, আমি বাস্তব।
– তাই? আমি ভাবলাম স্বপ্ন। আসলে আমাদের বাড়িতে আশা আর ভাবীকে ছাড়া সচরাচর কোনো মেয়েকে দেখিনা তো, তাই হজম করতে কষ্ট হচ্ছে।
– কি?
– এই যে, তোমার মতো একজন মেয়ে আমাদের বাসায়, তাও আমার সামনে বসে আছে। যাইহোক কে তুমি? নাম কি তোমার?
– আমি তারা। শান্ত গলায় উত্তর দিলো তারা।
– wow, তুমি তারা, আর আমি আকাশ.. কি সুন্দর কম্বিনেশন আমাদের মাঝে তাইনা?
– মানে?
– কিছুনা। আমাদের বাসায় কার কাছে এসেছো?
আকাশের এই কথায় তারা কিছু বললোনা। নিচের দিকে তাকিয়ে আছে ও।
আকাশ বললো..
– ওহ বুঝেছি।
– কিহ..??
– টপ সিক্রেট, , আমাকে বলা যাবেনা তাইতো?
বিনিময়ে তারা মুচকি হাসলো… কিছু বললো না।
আকাশ আবারও বললো..
– আকাশের তারা আকাশে জ্বলজ্বল করতে দেখেছি.. কিন্তু আকাশের তারাকে কখনো হাসতে দেখিনি আমি। কিন্তু আজ দেখলাম।
আকাশের কথা যতো শুনছে ততোই অবাক হচ্ছে তারা। একটা মানুষ কিভাবে এতো তারাতাড়ি মানুষের সাথে মিশতে পারে?
..
রাতে খাবারের সময় ডাইনিং টেবিলে সবাই এক এক করে বসলো। মা বললো..
– সীমা, তারা কোথায়? ও এলোনা যে..
– ও রুমে আছে মা। আমি ডেকে আনছি।
– তারা কে? সীমাকে উদ্দেশ্য করে ওর স্বামী আহাদ জিজ্ঞাসা করলো।
– ওই আকাশের তারা এখনো আছে আমাদের বাসায়? আমিতো ভাবলাম চলে গেছে। পাশ থেকে আকাশ বলে উঠলো।
– আকাশের তারাটা আবার কে? অবাক হয়ে বললো মা।
– ওহ মা, ওই মেয়েটা বলেছিলো মেয়েটার নাম তারা। আর তারা কোথায় থাকে? আকাশেই তো থাকে তাইনা? তো আমি ভুলটা বললাম কোথায়?
– তুমি কিছু ভুল বলোনি আকাশ। এখন মুখটা অফ করে খাও তো। (সীমা)
– বাহ রে, তোমার বরের কারনেই তো আমার মুখটা খোলেছে। তোমার বর যদি কোয়েশ্চন না করত তাহলে আমিও রিপ্লাই করতাম না।
সীমা কোনো উত্তর না দিয়ে তারাকে ডাকতে চলে গেলো। সীমা যাওয়ার পর মাকে আহাদ জিজ্ঞাসা করলো..
– মেয়েটা কে মা?
মা কিছু বলতে যাবে তখনই দেখলো গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে আসছে তারা। ওদেরকে দেখে মা আস্তে করে বললো..
– ও আসছে। এখন সবাই খাওয়া দাওয়া শেষ করি, পরে সব সীমার কাছ থেকে শুনে নিস।
– কিন্তু আমাকে কে বলবে? আমার তো বউ নেই যে আমাকেও পরে সময় করে বলে দিবে।
আশাহত দৃষ্টিতে বলে উঠলো আকাশ।
মা আকাশের দিকে কিছুটা রাগী চোখে তাকিয়ে বললো..
– এখন কি এই কথাটা বলার জন্য তোকে একটা বউ এনে দিতে হবে?
– এই না না.. একদমই নাহ। এটা কখন বললাম।
– খাবি তুই?
– খাচ্ছি। মুখে ভেংচি কেটে বললো আকাশ…
.
To be Continued …..