#জাল (রহস্য গল্প)
পর্ব-২
আমার পরিচিত বন্ধুর মাধ্যমে যেহেতু সহদ ছেলেটা আমার কাছে এসেছে সেহেতু ফিরিয়ে দেয়া ঠিক হবে না ভেবে আমি ব্যাপার টা নিয়ে মাথা ঘামাতে শুরু করলাম। সহদের কাছ থেকে হসপিটালের এড্রেস নিয়ে ওইদিন সন্ধ্যায়ই আমি পর্নাকে দেখতে গেলাম।
হসপিটালে গিয়ে আমার প্রথমেই দেখা হলো পর্নার বাবা মা’র সাথে। আমি নিজের সঠিক পরিচয় ই দিলাম কিন্তু সহদের কথাটা চতুরতার সহিত চেপে গেলাম। কারণ সহদের ব্যাপার টা বললে পরিস্থিতি হয়তো আরও ঘোলাটে হবে।
পর্না মেয়েটাকে দেখার পর এক ধরনের বিষন্নতায় আচ্ছন্ন হয়ে রইলাম পুরোটা সময়। মেয়েটা যেন ঠিক পুতুলের মতো! স্থির চোখে তাকিয়ে আছে, থেকে থেকে চোখে পলক ফেলে। আমি কিছুক্ষণ মেয়েটার পাশে বসলাম। নাম ধরে বেশ কয়েকবার ডাকার পর মেয়েটা একবার আমাকে দেখলো। তারপর আবারও আগের মতো হয়ে গেল।আমার মনটা খারাপ হয়ে গেল। পর্নার মা অনবরত কেঁদেই যাচ্ছে, একমাত্র মেয়ের এই অবস্থা যেকোনো মায়ের জন্যই তীব্র যন্ত্রনার বটে। পর্নার মা কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলোও না। তাই আমি পর্নার বাবার সাথে কথা বললাম। পর্নার বাবার বয়ান অনুযায়ী এতোটুকু বুঝলাম যে বিয়ের প্ল্যান টা পর্না বাড়ি থেকে করে যায়নি, কারণ ও বাড়ি থেকে নরমাল সালোয়ার কামিজ পরে বেরিয়েছে। কিন্তু সহদ বলেছিল যে পর্না বাড়ি থেকে তৈরী হয়ে এসেছিল। এখানে নিশ্চয়ই কোনো একটা ঘাপলা আছে।
ঘন্টা দুয়েক আমি হসপিটালে থেকে বাসায় ফিরে এসেছিলাম। পর পর সবগুলো ব্যাপার মিলাতে চেষ্টা করলাম। বেশ কয়েকটা খটকা খুঁজে পেলাম।
প্রথম খটকা হচ্ছে, সহদ বলেছিল পর্নাকে মধুপুরের জঙ্গলে স্থানীয় লোকেরা খুঁজে পায়, গায়েব হওয়ার দুদিন পর। পুলিশ স্পটে এসে সহদের সাথে কিভাবে যোগাযোগ করে! যেখানে পর্নার সাথে কোনো ব্যাগ কিংবা মোবাইল ছিলো না!
দ্বিতীয় খটকা হচ্ছে, মেডিকেল রিপোর্ট অনুযায়ী পর্নার রেপিস্ট একজন। পর্না গ্যাং রেপড হয়নি। তাহলে সহদ কেন গ্যাং রেপ বলল!
তৃতীয় খটকা হচ্ছে, পর্নার রেপিস্ট কে পর্না চেনে। যেজন্য সে একদম চুপচাপ হয়ে গেছে। হতে পারে সেটা সহদ।
পরদিন আমি পর্নার বন্ধুদের সাথে দেখা করার জন্য হোস্টেলে গেলাম। যেহেতু রেপ কেস, তাই পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরও পুলিশি ঝামেলায় কেউ হোস্টেল ছেড়ে যেতে পারেনি।সবার সাথেই দেখা হলো।
টোটাল নয়জনের একটা গ্রুপ মাইক্রো ভাড়া করে যাচ্ছিলো চট্টগ্রাম। অন্ধকার আর নিরিবিলি জায়গা থাকায় গ্যাংটাকে ওরা দেখতে পায়নি। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো সবারই ধারণা এই ব্যাপারে সহদ যুক্ত আছে। আমি একে একে সবাইকে কারন জিজ্ঞেস করলাম, সবাই ই প্রায় একই কথা বলল যে, ইদানীং ওদের সম্পর্ক তেমন ভালো যাচ্ছিলো না, কিন্তু হঠাৎ বিয়েটা সবাইকে যেন বিস্মিত করলো।
সম্পর্ক ভালো না যাওয়ার কারণ হিসেবে ওরা বলেছে, সহদের মায়ের প্রতি পর্নার বিরুপ মনোভাব। যেটা নিয়ে দুজনের মনোমালিন্য হয়। সেখানে আকস্মিক বিয়ে সকলের জন্যই বিস্ময়কর।
————————————————————————————
সহদ পরদিন নিজে থেকেই আমার কাছে এলো। আমার ডাকতে হয়নি। আমি বললাম,
-আপনি নিজে থেকে এলেন যে?
সহদ বিনয়ী গলায় বলল, আমার মনে হয়েছে যে আপনার আমাকে দরকার হতে পারে।
আমি একটু হেসে বললাম বেশ! আমার কিছু প্রশ্ন আছে ঠিকঠাক উত্তর পেলে আপনার জন্যই ভালো হবে।
-জ্বী বলুন।
-পর্নাকে রেপ করেছে একজন। গ্যাং রেপ হয়নি ব্যাপার টায় আপনি কি অবগত নন?
-হ্যাঁ। আসলে আপনাকে তাড়াহুড়ায় ভুল বলে ফেলেছি।
-এতোবড় ভুল?
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম। সহদ একটুও বিব্রত না হয়ে বলল,সত্যিই ভুল ছিলো।
-আচ্ছা মানলাম। মধুপুরের জঙ্গলে পর্নাকে যখন খুঁজে পাওয়া যায় তখন পর্না অচেতন অবস্থায় ছিলো তাহলে
আপনার মোবাইল নাম্বার কিভাবে পেল?
-এই ব্যাপার টাই আমি বুঝে উঠতে পারছি না ম্যাম। আমার ফোন নাম্বার আর নাম পর্নার হাতের মুঠোয় পাওয়া যায়। যেকারণে আমার বেঁচে থাকা হারাম হয়ে গেছে।
– আপনার মায়ের সাথে পর্নার ঝগড়া কি নিয়ে?
-আমার মায়ের পর্নার আধুনিক চলাফেরা পছন্দ না। মা চাইছিল পর্না নিজেকে পাল্টে ফেলুক। কিন্তু পর্না শুনতে নারাজ। সেটা নিয়ে মা মিসবিহাভও করেছিল, পর্নাও তখন কাটাকাটা উত্তর দিয়ে ঝগড়ার সৃষ্টি করে। এই ব্যাপারে প্যাচ আপ ও হয়ে গিয়েছিল আমাদের।
ব্যাপার টা নিয়ে আমি অনেক ভাবলাম। পরদিন আবারও পর্নাকে দেখতে গেলাম। মেয়েটা আগের মতোই। আমি আরও খোঁজ খবর করলাম। মেয়েটা পড়াশোনায় খুব ভালো, বাসা থেকে কলেজ দুরে থাকায় হোস্টেলেই থাকতো। কারও সাথে ঝামেলা নেই, সহদের সাথেও তেমন ঝামেলা নেই যেমন টা ওর বন্ধুরা বলছে। কিন্তু হঠাৎ বিয়েটা একটু খটকা হয়ে গেছে। কোনো কারণ ছাড়া কেন এতো তাড়াহুড়োয় বিয়ে করতে হলো!
ওর মা, বাবা ছাড়াও ফ্যামিলির অন্য সবার সাথেও কথা বলে কোনো কিছু জানতে পারিনি। সহদ ছেলেটাকেও সন্দেহ করতে কষ্ট হচ্ছে, কারণ ছেলেটা কথা বলার সময় চোখে চোখ রেখে কথা বলে। যার মনে পাপ থাকে সে সবসময় নিজেকে আড়াল রাখার চেষ্টা করে। আর তাছাড়া ছেলেটার রেকর্ড খুব ভালো।
আমি ডক্টরের সাথে কথা বলে পর্নার ট্রিটমেন্টের দায়িত্ব নিলাম। পর্নার ফ্যামিলি বিষয় টা নিয়ে তেমন উচ্চবাচ্য করলো না। তাদের কাছে সবকিছুর উর্ধ্বে ছিলো পর্নার ভালো হওয়া। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, পর্নার আপন চাচাতো ভাই প্রবাল আমার উপর ক্ষুব্ধ হলো। সে কিছুতেই চায় না আমি পর্নার ট্রিটমেন্ট করি। আর সে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে আছে সহদ কে জেলের ভাত খাওয়াবে।
তখন আমার কাছে একটা ব্যপার পরিষ্কার হলো যে পর্নার মা বাবাকে উষ্কে পুলিশ কমপ্লেইন প্রবাল ই করিয়েছে।
চলবে…….