জাল পর্ব ৪

৳#জাল(রহস্য গল্প)
পর্ব-৪
আমি শিওর যে এই খেলার মেইন খেলোয়াড় পর্না নিজেই। সে নিজেই মস্ত বড় এক জালে আটকে গেছে খেলতে গিয়ে। আমি ভাব করলাম যে কিছুই বুঝিনি। এবার আমি ডক্টরের সাথে কথা বললাম ডিএনএ টেস্টের জন্য। এদিকে সহদ ছেলেটা একদম মুষড়ে পড়েছে। সে পর্নার সামনে আসে না। হতে পারে ছেলেটা ঘৃনায় আসে না ওর সামনে। পর্না ফিজিক্যালি একটিভ অথচ সহদের সাথে সম্পর্ক নেই। ওকে ঠকানো হয়েছে।

পর্নার ব্যাপারে খোঁজ নিলাম ভালো করে। পর্নার কাছের বান্ধবীদের সঙ্গে কথা বলেও তেমন কিছু জানা যায় নি। মেয়েটা পাকা খেলোয়াড়! এ ব্যাপারে সন্দেহ নেই। আমার সন্দেহ ছিলো প্রবাল কে নিয়ে। কিন্তু ডিএনএ প্রবালের সাথে ম্যাচ হয় নি।

পুলিশ ও খড়ের গাদায় সূঁচ খোঁজার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের একটা রেপুটেড মেডিকেল কলেজের স্টুডেন্ট এর এই অবস্থা! দেশের বিভিন্ন চ্যানেল পত্রিকায় প্রতিনিয়ত এটা নিয়ে লেখালেখি হচ্ছে। আমি কোনো ক্লু পাচ্ছিলাম না। আমি এ ব্যাপারে পুলিশের সাথে কথা বললাম। পুলিশ অফিসার লোকটা আমার কথায় গুরুত্ব দিলো। তার বুদ্ধি কাজে খাটিয়ে আমি পর্নার পরিচিত বন্ধু, বান্ধব সবাইকে পর্নার সামনে আনলাম। পর্নার মুখের অভিব্যক্তি দেখার জন্য। মেয়েটার মধ্যে কোনো পার্থক্য দেখলাম না। একে একে সবাইকে সামনে আনা হলো। শুধু প্রবাল কে দেখেই পর্না চোখ বন্ধ করলো। হাত মুষ্টিবদ্ধ করলো। তার মানে প্রবাল জড়িত আছে!

প্রবাল কে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য নেয়া হলো। কিন্তু সে কিছুতেই স্বীকার করছে না। আমি আবারও পর্নার সাথে দেখা করতে গেলাম। পর্না এবার আমাকে দেখে যে খুব বিরক্ত হলো সেটা আমি তার চেহারা দেখেই বুঝলাম। আমি হাসি চেপে পর্নার কানে ফিসফিস করে বললাম, তোমার চালাকি ধরা পড়ে গেছে মাই ডিয়ার! তোমার প্রবাল দাদা তো সব টা বলে দিয়েছে।
পর্নার চোয়াল শক্ত হতে লাগলো। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা হচ্ছে। আমি বুঝলাম যে আমার চালাকিতে কাজ হয়েছে।
আমি আবারও বললাম, পর্না শোনো আইনি মারপ্যাঁচ খুব ঝামেলার। আর সেই ঝামেলা এড়াতে মানুষ মাঝে মাঝে মিথ্যেকেও সত্যি বানিয়ে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করে। তোমার প্রবাল দাদাও কিন্তু সেরকম টাই করবে বলে আমার বিশ্বাস। আর এর ফলাফল কি হবে জানো? ইউ আর টোটালি ফিনিশড!

পর্না এবারে নরম হলো। চোখের পাতা কাঁপছে। হাত ও শিথিল করেছে। কাঁপা গলায় বলল, আমি আপনাকে সব বলবো। কিন্তু আপনি কথা দিন যে আমাকে আপনি বাঁচাবেন??
—————————————————

পর্না বলতে শুরু করলো, আমার বাবার অবস্থা নুন আনতে পান্তা ফুরোয় এমন। এরকম জীবন আমি চাইনি, তবুও এরকম মেনে নিতে হয়েছে দিনের পর দিন। বন্ধুদের সাথে পাল্লা দিয়ে চলতে গিয়ে অনেক বার বাবার পকেট থেকে টাকা চুরি করে মার ও খেয়েছি। এক ধরনের ডিপ্রেশনে ভুগছিলাম এই অভাব নিয়ে। আমি একটা উপায় খুঁজছিলাম একটা ভালো জীবন কাটানোর জন্য। সেরকম ই এক সময় আমার দেখা হয় প্রবাল দাদার বন্ধু হিমেলের সাথে। তখন আমি ও লেভেলে পড়তাম। হিমেল পড়াশোনা বেশী করেনি ।ঢাকায় বাবার বিজনেস দেখে। ও ছিলো আমার সোনার ডিম পাড়া রাজাহাঁস। আমার সবরকম চাহিদা মেটাতো। যার জন্য আমি ওর সাথে ফিজিকালি ইনভলভ হই। এরপর মেডিকেল কলেজে পড়তে গিয়ে সহদের সাথে আলাপ হয়। আমি চেয়েছিলাম আস্তে আস্তে হিমেল কে জীবন থেকে সরিয়ে দেব কিন্তু ও যেন জোঁকের মতো আমাকে আঁকড়ে ধরেছিল। কিছুতেই ছাড়তে চাইছিলো না। বাধ্য হয়ে ওর সাথে আমার সম্পর্ক টা চালিয়ে যেতে হচ্ছিলো। একটা সময় টের পেলাম যে আমি প্রেগন্যান্ট। নিজের অসাবধানতার জন্য ব্যাপার টা ঘটেছে। আমি এবোর্শন করার পর হিমেল ব্যাপার টা জেনে গেল। সে প্রচন্ড রাগ হলো। এরকম অবস্থায় নিজেকে বাঁচাতে আমি সহদ কে বিয়ে করা ছাড়া আর কোনো অপশন খুঁজে পেলাম না। আমি ভেবেছিলাম একবার বিয়ে হয়ে গেলে সব সমস্যার সমাধান হবে। তাই একরকম প্রেসার দিয়ে এই বিয়েটা করেছিলাম। কিন্তু ট্যুরে যাওয়ার দিন হিমেল আমাকে তুলে নিয়ে গেল। এরপর ওর কথামতোই পরবর্তী সব কাজ করেছি।

আমার কেন যেন মনে হলো পর্নার সব কথা সত্যি না। হয় কিছু সত্যির সাথে মিথ্যে যোগ করেছে। নাহলে কিছু সত্যি ও লুকিয়ে গেছে।

চলবে……
(ব্যস্ততার জন্য পর্বটি বেশী ছোট হলো)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here