#জাল(রহস্য গল্প)
পর্ব-৫
ওইদিন আমি আর কথা না বাড়িয়ে ফ্ল্যাটে ফিরলাম। আমি সবগুলো ব্যাপার দুইয়ে দুইয়ে চার মেলাতে শুরু করলাম। পর্নার কথা ঠিক কতটা সত্য সেটা যাচাই করার জন্য আমি পুলিশ কে হিমেলের কথা বললাম। হিমেল কে পাওয়া গেলে এই খেলাটা বন্ধ হবে।
একটা ব্যাপার ভেবে বারবার শিউরে উঠলাম যে, সহদের মতো একটা ভালো ছেলেকে কিভাবে সবাই ঠকাচ্ছিল! আর পর্না কি আদৌ ভালোবাসতো সহদ কে! নাকি সব ই তার ভালো থাকার প্ল্যান পরিকল্পনা!
আমি সহদ কে ফোন করে সকালে আসতে বললাম সবকিছু বলার জন্য।
আমি পর পর ঘটনাগুলো মেলাতে শুরু করলাম। পর্নার কথানুযায়ী ওকে তুলে নেয় হিমেল, কিন্তু সাথে আরও কিছু লোক ছিলো বাকীদের ভাষ্যমতে। সেই লোকজনের সাথে কী প্রবাল ও ছিলো!
সহদের কথা অনুযায়ী পর্নার ফ্যামিলি সহদের ব্যাপার টা জানতো। কিন্তু তারা কেন পর্নাকে সাপোর্ট করছে!
সহদ কে কী সত্যিই মেয়ের মান সম্মান বাঁচানোর জন্য মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে? নাকী অন্য কাহিনী!
আমি কিছু ব্যাপার মিলাতে পারছিলাম না। প্রথম থেকে যদি হিমেলের ব্যাপার টা পর্নার বাবা মা জেনে থাকে তাহলে কেন তারা সহদের বিরুদ্ধে কথা বলছিল! তাদের তো উচিত ছিলো সহদ কে সাপোর্ট করা। মেয়ের এতো বড় একটা দুর্ঘটনার পর তাদের মনে একটুও ভয় হলো না যে সহদ মেনে নাও নিতে পারে, উল্টো তারা ওকেই দোষারোপ করলো!
সব কেমন যেন একটা গোলক ধাঁধাঁর মতো! সবার মধ্যেই একটা কিন্তু লুকিয়ে আছে। আস্তেধীরে সব বের করলেই আসল সত্য উদঘাটন করা যাবে।
—————————————————
সকালে ঘুম ভাঙলো আমার একটু দেরীতে। সহদ এসে অনেকক্ষন বসে রইলো। আমি একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম নিজের ভুলের জন্য। ছেলেটা এই কয়দিনে আরও বেশী ভেঙে পড়েছে। আমি ওকে পর্নার বলা সবকিছু খুলে বললাম। সহদ যেন একটুও অবাক হলো না! হয়তো আগে থেকেই নিজেকে সামলে নিয়েছিল।
ছেলেটা বিষন্ন গলায় বলল, আই ওয়ান্ট টু জাস্টিস ফর মাই ওয়াইফ।
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, এরপরও তুমি পর্নাকে মেনে নিতে পারবে।
-আমি তো নিজের দিক থেকে হান্ড্রেড পার্সেন্ট অনেস্ট। আর বিয়েটাও তো মিথ্যে নয়।
আমি আর কিছু বললাম না। স্মিত হেসে বললাম, এজ ইউর উইশ। তবে পর্নার জন্য হয়তো আর আমাকে দরকার নেই। সে নিজেই যথেষ্ট শক্ত।
সহদ আর কিছু বলেনি। পরের দিন আবারও দেখা করবে বলে বেরিয়ে গেল।
সারাদিন আমার বিছানায় শুয়ে বসে দিন কেটেছে। বার বার শুধু ওই ঘটনাগুলো ঘুরে ফিরে ভাবনায় আসে। কেন যেন মনে হয় ওই কেসে কোনো একটা ফাঁক নিশ্চয়ই আছে যেটা আমার চোখে পড়ছে না।
বিকেলের দিকে একটু তন্দ্রাভাব এলো তাও কেটে গেল ফোনের শব্দে। পুলিশ অফিসার ফোন করে জানালো যে হিমেল নামে পুরান ঢাকায় কাউকে পাওয়া যায় নি। এমন কি প্রবালের বন্ধু মহলেও হিমেল বলে কেউ নেই।
আরও একটা ব্যাপার ঘটেছে যেটা শুনে আমার পায়ের তলার মাটি সরে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। পর্না নাকি সুইসাইড করার চেষ্টা করেছে কারণ আমি তাকে জোর করে হিমেলের গল্প বানাতে বলেছি।
আমি স্পষ্ট বুঝলাম যে সহদের জন্য তৈরী করা জালে এবার আমাকেও আটকে ফেলার চেষ্টা চলছে।
চলবে…….