#জীবনের_থেকেও_বেশি
#পর্বঃ১২
#লেখাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
ঐশী বলল “ওনি তো আপনারও অপেক্ষায় আছেন। ওনাকে বলবেন কল দিতে। আমি জানিনা আমার কি অবস্থা হবে। ফোনটাও আমার কাছে থাকবে নাকি জানিনা। আর শেষ একবার ওনাকে বলে দিবেন আমি ওনাকে অনেক ভালোবাসি।”
নিলয় বলল “তুমি এগুলো কি বলছো তুমি যাও তো।”
নোমান আবার বলে উঠলো “আমি দশ পযর্ন্ত গুনবো তার আগে আমি তোকে আমার পাশে চাই।”
ঐশী নিলয়ের পাশ থেকে বেরিয়ে এলো। ধীর পায়ে সামনের দিকে এগোতে লাগলো। পিছন থেকে নিলয় ডেকেই চলছে ঐশীকে। ঐশী পুনরায় নোমানের দিকে তাকাতেই নোমানের পাশে তামিমকে দেখে প্রথমে খুশি হলেও পরে তামিমকে এখানে দেখে ভয় পেল। এতো লোক আছে তারমধ্যে তামিম একা কিভাবে সামলাবে।
তামিম এসে বন্দুক ধরলো নোমানের মাথার পিছনে। নোমান চমকে উঠলো। পরক্ষণেই হো হো করে হেসে বলল “আমার এখানে একশ লোক আছে আর তুই একা এসে আমাকে মারবি। হাস্যকর না বিষয়টি।”
তামিমও হো হো করে হেসে উঠলো। ঐশী অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। নোমান ও অবাক হয় তামিমের হাসি দেখে। সে বলে উঠে
পাগল হয়ে গেলি নাকি ভয়ে। এমন করে পাগলের মতো হাসতেছিস।
তামিম হাসি থামিয়ে কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে দাঁত পিষে পিষে বলল “তুই কি মনে করেছিস আমি দুর্বল। তামিম চৌধুরী এতো সহজে তার প্রিয় মানুষদের মরে যেতে দেখবে। তুই হয় তো এখনো আমাকে চিনতে পারিসনি।” তামিম তুরি বাজাতেই মুহূর্তের মধ্যেই দুইশ লোক এসে হাজির হলো সেই জায়গায়। ঘিরে ফেলে নোমানের সব লোককে। নোমানের মুখটা চুপসে গেল। ঐশীর মাথায় ঢুকছে না কি হচ্ছে এসব। নিলয় এগিয়ে তামিমের পাশে এলো। তামিম বলে উঠলো
“কিরে এখন চুপসে গেলি কেন? এতোদিন চুপ করে ছিলাম বলে ভাবিস না যে আমি ঐশীকে অন্যজনের হাতে তুলে দেব। তোর মতো বেইমান অন্ততপক্ষে আমি না বুঝলি।”
নোমান লাল চোখে তামিমের দিকে তাকালো। তামিম বলল “ভালোই ভালোই আমাদেরকে আমাদের মতো থাকতে দে তাছাড়া আমার মতো খারাপ আর কেউ হবে না কেউ না।” বলেই নোমানকে ছেড়ে দিয়ে একটু দূরে দাড়িয়ে পরলো আর বলল “যাহ চলে যাহ এখান থেকে।”
নোমান একবার তামিমের দিকে আর একবার ঐশীর দিকে তাকিয়ে চলে গেল তার সব লোক নিয়ে।
নিলয় তামিমের কাধে হাত রেখে বলল “ছেড়ে দিলি যে। এই প্রথম তুই কাউকে ছেড়ে দিলি।”
তামিম ছলছল নয়নে নিলয়ের দিকে তাকিয়ে বলল “কিভাবে মারি ওকে বল ও যে একসময় আমার প্রিয় মানুষের মধ্যে একজন ছিলো।”
ঐশী থ মেরে এতোক্ষণ দাড়িয়ে ছিলো। হুট করে ঐশী দৌড়ে এসে ঝাপিয়ে পর তামিমের বুকে। তামিম টাল সামলাতে না পেরে দুই পা পিছিয়ে গেল। ঐশী হাউমাউ করে কান্না করছে।
তামিম ঐশীর মাথায় হাত রেখে বলল “ওই পাগলি কান্না করছো কেন কি হয়েছে!”
ঐশী নাক টানতে টানতে বলল “আপনার কোনো খোঁজ খবর ছিল না কেন? ফোন কেন ধরেন নি। আমার বুঝি চিন্তা হয় না।”
তামিম ঐশীকে নিজের বুক থেকে তুলে ওর দুই গালে হাত রেখে মুচকি হাসি দিয়ে বলল
“আমার বউটা বুঝি আমাকে মিস করছিলো।”
ঐশী অভিমানী সুরে বলল “আপনি আমার সঙ্গে কথা বলবেন একদম।”
তামিম মুচকি হেসে বলল “হয়েছে এখন চল।” বলে হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলো। কিন্তু ঐশী নড়ছে না। গাল ফুলিয়ে আগের জায়গাই দাঁড়িয়ে রইলো সে।
তামিম বাঁকা হাসি দিয়ে ঐশীর কাছে এগিয়ে এসে ফট করে কোলে তুলে নিল ঐশীকে। ঐশী চোখ বড় বড় করে তামিমের দিকে তাকালো। তামিম সামনের দিকে তাকিয়ে বলল
“আগে বলেই হতো তুমি আমার কোলে করে যাবে। তা না পেকপেক করছিলে।”
ঐশী অবাক হয়ে বলল “কি বলছেন এগুলো আপনি সবসময় উল্টাপাল্টাই ভেবে থাকেন আর আপনার ক্ষত জায়গায় লাগবে নামান বলছি।”
তামিম আর কিছু বলল না চুপ করে রইলো। ঐশী তামিমকে চুপ থাকতে দেখে নিজে নিজেই মনে মনে বকতে লাগল তামিমকে। তামিম গাড়ির কাছে এসে নামিয়ে দিলো ঐশীকে।
তামিম ঐশী গাড়িতে বসতেই নিলয় গাড়ি চালাতে লাগল। নিলয়ের পাশের সিটে তাহিয়া বসে ছিল। নিলয় চোখ দিয়ে ইশারা করলো যে সব ঠিক আছে। তাহিয়াও একটা সস্থির নিশ্বাস ফেলল।তামিমের কাধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে আছে ঐশী। তামিম এক হাতে আগলে ধরে আছে ঐশীকে।
বাসার সামনে এসে গাড়ি থামলো। ঐশী গাড়িতেই ঘুমিয়ে গিয়েছে। তামিম ওকে কোলে করে রুমে চলে গেল। সযত্নে ওকে বেডে শুয়ে দিলো তামিম। তামিম ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে ঐশীকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো। তামিমের স্পর্শে ঐশী উঠে পরলো। চারপাশে ফজরের আযান দিচ্ছে।
ঐশী তামিমকে বলল “ওই উঠুন দেখি। এখন আর ঘুমাতে হবে না। নামাজ পরে তারপর ঘুমাবেন।”
তামিম আর কথা বাড়াল না। ওরা দুইজন মিলে ফজরের সালাত আদায় করে নিলো। নামাজ শেষে ঐশী তামিমের দিকে তাকিয়ে বলল
“আপনি ভাইয়াকে আগে থেকে কিভাবে চিনেন আর আমার সঙ্গে এই কয়েকদিন দেখা করেননি কেন!”
তামিম তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল “ওকে চিনবো না। যাকে ছোট বেলা থেকে দেখছি তাকে ভুলি কি করে। আর ও যা অপরাধ করছে।”
ঐশী বলল “মানে”
তামিম বলল “কফি বানিয়ে আনবে একটু কফি খেতে খেতে না হয় বলি।”
ঐশী কিছুক্ষণের মধ্যেই দুই মগ কফি নিয়ে এসে হাজির হলো। সে দেখল তামিম বারান্দায় দাড়িয়ে আছে আকাশের দিকে তাকিয়ে। বারান্দায় থাকা ছোট টেবিলটাতে কফির মগগুলো রাখতে রাখতে বলল
” মন খারাপ মনে হচ্ছে কি হয়েছে বলবেন আপনাকে।”
তামিম ঐশীকে টেনে ওর পিঠ ওর বুকের সঙ্গে লাগিয়ে ওর থুতনি রাখলো ঐশীর ঘাড়ে আর বলল
“জানো তো আমি ধোকা খেতে খেতে বিরক্ত হয়ে গেছি। আমি যাকেই বিশ্বাস করি সেই বেইমানি করে। হয় তো আমার ভাগ্যটাই এমন।”
ঐশী অনুভব করলো ওর ঘাড়ে উষ্ণ পানি গড়িয়ে পরছে। ঐশী ফট করে তামিমের দিকে ফিরে তামিমের চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বারান্দায় থাকা দোলনায় ওকে বসিয়ে দিয়ে বলল
“খবরদার নিজের ভাগ্যকে দোষ দিবেন না। কিছু কিছু মানুষের জন্য নিজের ভাগ্যকে দোষ দিবেন না। নিলয় ভাইয়ের মতো একটা ভাই ও বন্ধু পেয়েছেন। আবার তাহিয়ার মতো মিষ্টি একটা বোন পেয়েছেন। তারপর ও নিজের ভাগ্যকে দোষ দিচ্ছেন কেন বলেন তো।”
তামিম ঐশীকে নিজের পাশে বসিয়ে দিয়ে বলল “আমরা ছোট থেকে তিন ফ্রেন্ড ছিলাম। সব জায়গায় আমাদের দেখা যেত। সবাই বলতো এই বিচ্ছুগুলো কখনো আলাদা হওয়ার নয়।” বলেই হাসলো তামিম হয় তো অতীতে কথা মনে পরেছে তার। জানো তো আম্মু যখন মারা গেলেন তখন সবচেয়ে বেশি সাপোর্ট করেছে ওরাই। আমি একদম ভেঙে পরেছিলাম আম্মু মারা যাওয়ার পর। আমি আম্মুকে ছাড়া একদিনও থাকতে পারতাম না। তাই আর আম্মুর কবরটা বাড়ির ভেতরেই রাখি। আর এইদিকে বাহিরে সব মানুষ মনে করে আমি আমার আম্মুকে খুন করেছি। কারণ আমার আম্মু খুন হয়েছিলেন। আর এমন করে বিষয়টি সাজানোও হয়েছিল যাতে মনে হয় আমি আমার আম্মুকে খুন করেছি।”
ঐশী বলল “মানে কি বলছেন এগুলো। আর তিনজন মানে আরেকজন কে?”
#জীবনের_থেকেও_বেশি
#পর্বঃ১৩
#লেখাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
তামিম বলল “হুম আমার আম্মুকে ওরা আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে। কেড়ে নিয়েছে ওরা।” বলেই ঐশীকে জরিয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো। হাউমাউ করে কান্না করছে তামিম। ছেলেরা সহজে কান্না করেনা। যখন তাদের সহ্যেরসীমা তখনই কান্না করে। ঐশী থামনোর চেষ্টা করলো না। কারণ ও জানে এই চাপা কান্না সহজে কারো কাছে প্রকাশ করা যায় না। যার কাছে সেটা প্রকাশ করা যায় সেই প্রিয়মানুষ।
তামিম কিছুক্ষণ পর নিজেকে সামলিয়ে দুইজন মিলে কফিটা খেয়ে নিলো। তারপর আবার তামিম বলল “জানো আরেকজন কে ছিলো।”
ঐশী প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তামিমের দিকে তাকিয়ে বলল “কে সে আর আপনাকে সে ছেড়ে গেল কেন!”
তামিম বলল “জানো তো আমার ওই প্রিয় বন্ধুর বাবা নাকি আমার আম্মুর মৃত্যুর জন্য দায়ী। এটা যখন আমি জানতে পারলাম তখন আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল যেন। এটা যখন আমি জানতে পারি তখন আমি একদম পাথর হয়ে যাই। আমি তোমার সঙ্গে দেখা করতে যেতে পারিনি এই কারণে। কারণ আমি দুই দিন আগেই এই কথা জানতে পারি।”
ঐশী বলল “কিন্তু ওনি আপনার আম্মুকে কেন খুন করেছেন।”
তামিম বলল “জানো ছোট থেকে আমরা দুইজন প্রায় কম্পিটেটর ছিলাম। প্রায় সবসময় আমি প্রথম আর ও দ্বিতীয় হয়ে এসেছে। এই নিয়ে ওর আব্বু আমার উপর রেগে ছিলেন। এমনই কলেজে এবং ভার্সিটিতেও এই রকম হয়ে এসেছে। আমার একমাএ দুর্বল পয়েন্ট ছিল আমার আম্মু। কারণ তিনি সবসময় আমাকে উন্নতির পথ দেখাতেন। ওর আব্বু সেটা বুঝেই খুন করেছেন। জানো তো বিজনেস লাইফেও এখন আমরা কম্পিটেটর।”
ঐশী কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বলল “মানে আচ্ছা ওই ছেলেটার নাম কি ছিলো।”
তামিম আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল “ছেলেটা আর কেউ না নোমান।”
ঐশী ছলছল নয়নে তামিমের দিকে তাকালো। আর বলো “এটা কি বলছেন আপনি!”
তামিম তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল “থাক না বাদ দেও এসব।”
ঐশী হুট করে তামিমকে জরিয়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো।
তামিম বলল “জানো তো আম্মু খুন হওয়ার পর থেকে আমি আর চুপচাপ থাকিনি। যে আমার সঙ্গে লাগতে এসেছে অন্যায় ভাবে তাকে আমি আর ছেড়ে দেইনি। তারপরই লোকজন আমাকে খারাপ বলতে লাগলো। তাদের ধারণা হয়ে গেল আমার সঙ্গে লাগতে আসলেই সে শেষ। আমি সাইকো। আমি খারাপ। আমি খুনি ইত্যাদি ইত্যাদি।”
ঐশী বলল “আমি জানতাম না ভাইয়ার সেই শত্রু আপনি। সে যাইহোক আর যেই ধোকা দিক বা বেইমানি করুক আপনার সঙ্গে। আমি কোনোদিন আপনার সঙ্গে এমন কিছু করবো না যাতে আপনি কষ্ট পান।”
তামিম শক্ত করে জরিয়ে ধরলো ঐশীকে নিজের বুকে আর বলতে লাগলো “ভালোবাসি জান। অনেক অনেক অনেক ভালোবাসি নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসি তোমাকে জান।”
ঐশী লজ্জামাখা মুখে মুচকি হাসি দিয়ে বলল “আমিও আপনাকে অনেক ভালোবাসি।”
——————–
কেটে গেছে কয়েক মাস। এই কয়েকমাসে ঐশী আর খোঁজখবর নেয়নি তার বাবা ভাইয়ের কিন্তু তার মন কাঁদে তার মায়ের জন্য। সেইদিনের পর আর কথা হয়নি তার মায়ের সঙ্গে। তামিম আর ঐশীর ভালোবাসা দিন দিন যেন বাড়ছে। দুইজন দুইজনের কেয়ারের কোনো কমতি রাখেনি। তামিমের দুঃখকে ভাগ করে নিয়েছে ঐশী। এখন আর কোনো দুঃখ না কোনো কিছু হারানোর আফসোস নেই। তামিমের সব নেশা ছাড়িয়েছে ঐশী। এখন আর ড্রিংকস করে না তামিম। দরকারি পরেনা তার। ঐশী প্রতিটা ওয়াক্তের নামাজ পরায় তামিমকে। এখন তামিমের ও অভ্যাস হয়ে গিয়েছে নিয়মিত নামাজ পরার। ভালোই চলছিলো দিন। তামিম ক্লান্ত হয়ে অফিস থেকে এসে ঐশীর হাসি মাখা মুখ দেখে সব ক্লান্তি দূর করতো। প্রতিদিন অফিস থেকে এসে একটা মিষ্টি হাসি উপহার দিতো ঐশীকে। কিন্তু আজকে তামিমের মুখে সেই হাসি না দেখে ঐশীর মনটা কেমন যেন কু ডেকে উঠলো।
ঐশী তামিমের কাছে গিয়ে বলল “কি হয়েছে আপনার। এমন দেখাচ্ছে কেন আপনাকে।”
তামিম লাল চোখ নিয়ে ঐশীর দিকে তাকালো। দেখে বোঝা যাচ্ছে ছেলেটা হয় তো কান্না করেছে।
তামিমকে সোফায় বসিয়ে ঐশীও পাশে বসিয়ে বলতে লাগলো “কি হয়েছে আপনার বলেন আমাকে।”
তামিম বলল “জানো তো নিজের মাকে হারিয়ে এমন একজনকে পেয়েছিলাম যে কিনা আমার মুখ দেখেই বুঝে গিয়েছিল আমি খেয়েছি কিনা। মায়ের মতো মমতা নিয়ে আমাকে খাইয়ে দিয়েছিলো। ওরা আমার কাছ থেকে তাকেও কেড়ে নিয়েছে।”
ঐশী বসা থেকে দাড়িয়ে গেল। আর বলল “আপনি কি বলছেন ক্লিয়ার করে বলেন প্লীজ।”
এমন সময় নিলয় দৌড়ে এলো। আর বলতে লাগলো “তামিম ওদের ফেলে যাওয়া জায়গা থেকে উদ্ধার করে এনেছি ওনাকে। এখনো জীবিত আছেন তিনি। অনেক দিন না খাইয়ে আর বিভিন্ন নির্যাতনের ফলে ওনার নার্ভ কাজ করা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ওরা ঠিকমতো চেক না করে ফেলে দিয়ে গিয়েছিল জঙ্গলে।”
তামিমের চোখমুখ চিকচিক করে উঠলো। ও উঠে দাড়ালো। আর ঐশী একবার তামিমের দিকে আরেকবার নিলয়ের দিকে তাকাচ্ছে। কি হচ্ছে কিছু বুঝতে পারছেনা সে।
তামিম ঐশীর হাত ধরে দৌড়ে গাড়ির কাছে যেতে যেতে বলল “নিলয় আমরা হাসপাতালে যাচ্ছি ওনার সব চিকিৎসা আমার বাসায় হবে তুই ব্যবস্থা কর।”
নিলয়ের কোনো জবাব ঐশীর কর্ণপাত হলো না। তামিম ঐশীকে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে গাড়ি চালিয়ে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে চলে এলো।
ঐশী বুঝতে পারছেনা কি হচ্ছে। তামিম কি করছে।
তামিম এসে হুড়মুড়িয়ে একটা কেবিনে প্রবেশ করলো। ঐশী কেবিনের বেডে তাকাতেই থমকে গেলো। ও যেন পাথর হয়ে গেল। কি দেখছে সে। এমন দৃশ্য দেখে অজান্তেই ঐশীর চোখ বেয়ে নোনা পানি গড়িয়ে পরতে লাগলো।
তামিম ছুটে গিয়ে বেডের পাশের টুলে বসে বেডে থাকা মানুষটার হাত ধরলো। তার চোখ দুটোও লাল হয়ে আছে। হয় তো সে কান্না আটকানোর বৃথা চেষ্টা করছে।
ঐশী এখনো দাড়িয়ে আছে কেবিনের দরজায় পাথর হয়ে। তার মাথা কাজ করা বন্ধ হয়ে গিয়েছে যেন। মাথাটা খালি খালি লাগছে। কেমন যেন চারিদিক অন্ধকার হয়ে আসছে। ঝাপসা দেখছে সবকিছু। সবকিছু যেন ঘুরছে তার। গলা শুকিয়ে একদম কাঠ হয়ে গিয়েছে তার।
হঠাৎ করে ঐশী পরে গেল। তামিম দৌড়ে ঐশীর কাছে এসে ওকে ডাকতে লাগলো। ঐশী জ্ঞান হারিয়েছে। তামিম অস্থির হয়ে গেল। ফট করে ঐশীকে কোলে নিয়ে কেবিনের সোফায় ওকে শুয়ে দিলো। আর পাগলের মতো ডাক্তার ডাকার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেল। ডাক্তার এসে ঐশীকে চেকআপ করতে লাগল।
ডাক্তারের দিকে চিন্তিত মুখে তাকিয়ে আছে তামিম। চিন্তায় যেন শেষ হয়ে যাচ্ছে ছেলেটা। সে উতলা হয়ে ডাক্তারকে জিঙ্গেস করলো
“ডাক্তার ঐশী হঠাৎ এমন করে জ্ঞান হারালো কেন? কি হয়েছে ওর। আমারই দোষ হঠাৎ করে এমন শক দিয়ে দিয়েছি ওকে। আগে বুঝিয়ে বলতে হতো ওকে। মেয়েটা মনে হয় রাতের খাবার টাও খায়নি। শিট আমার দোষ। আমি এতোটা কেয়ারলেস হলাম কি করে।”
ডাক্তার তামিম কাধে হাত রেখে ওকে বলল….
#চলবে
(